চাদর_জড়ানো_চিরকুট #পর্বঃ- ০৫

0
1736

#চাদর_জড়ানো_চিরকুট
#পর্বঃ- ০৫

লতা যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না যে তার বাবা তাকে মারার জন্য এতকিছু করতে পারে। টাকাপয়সা আর সম্পদের কারণে চেনা মানুষ কীভাবে অচেনা হয়ে যায়। পৃথিবীতে কতো মানুষ কতো ধরনের অভিনয় করতে পারে সৃষ্টিকর্তা ভালো জানেন।

লতার এবার চিৎকার দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু শোকের কারণে সে এতটা স্তব্ধ হয়ে গেছে, নিজের মুখ দিয়ে কিছুই বলতে পারছে না। শুধু চোখের কোন বেয়ে অশ্রু আর অপলক দৃষ্টি ছাড়া আর কিছু নেই।

বহুকষ্টে লতা বললো,
– বাবা আমাকে মারার জন্য আপনাদের এভাবে ভাড়া করে নিয়ে এসেছে?

সামনের সিটে বসে থাকা লোকটা আস্তে আস্তে বললো,
– ভাই কি করছেন? কার সঙ্গে কিসব বলছেন তার খেয়াল আছে আপনার?

– খেয়াল করে কি হবে? কিছুক্ষণ পর ওর লাশ বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেবো। যদি সবকিছু জেনে যায় তাতে সমস্যা কি?

এদের কথোপকথন শুনে লতা স্পষ্ট বুঝতে পারে যে তার জীবন এখানেই শেষ। মৃত মা-বাবার কথা স্মরণ করে মনে মনে বললো,
– তোমরা আমাকে কার কাছে রেখে গেলে? এমন পরিস্থিতি আসবে আমি তো কোনদিন বুঝতেই পারিনি।

রবিউলের বলা প্রতিটি কথা কানের বাজতে শুরু করেছে। লতা এই প্রথম অসহায়ের মতো সেই অদৃশ্য রবিউলের কথা ভেবে যাচ্ছে। আল্লাহর কাছে মনে মনে বলছে,
” হে আল্লাহ, ওই মানুষটাকে কি আরেকবার তুমি আমাকে বাঁচানোর জন্য পাঠাতে পারো না? ”

লতাকে আর অজ্ঞান করতে হলো না। লতা নিজে শোকের কারণে অজ্ঞান হয়ে গেল।

★★★

এসআই নিজামকে অজানা ঘটনাগুলো জানিয়ে দিলেন সাজু ভাই। রবিউলের চিঠিটাও নিজ হাতে নিয়ে তিনি কয়েকবার পড়লেন। তারপর সাজুর কাছ থেকে রবিউলের বিষয় একটু একটু করে জিজ্ঞেস করে জেনে নিলেন।

লতা চৌধুরী সম্পর্কে যতটুকু জানেন সেটুকুও বলে দিলেন সাজু ভাই। লতার জীবন সঙ্কটে আর তার স্বামী কে খুন করেছে সবকিছুই সাজু বলে দিল। সবকিছু শুনে এসআই বললেন,

– আপনি আমাকে আরো আগে যদি জানাতেন তাহলে আমি গোপনে কিছু লোক সেট করতাম। মেয়েটা এখন আবার যদি কোনো বিপদে পড়ে যায় তাহলে সেই দায়ভার আমাদেরও।

– রামিশা বললো, কিসের দায়বদ্ধতা? আপনি কি শুনতে পাননি যে ওই মেয়ে যাবার সময় সাজু ভাই কে কি বলে গেল। লাইসেন্সহীন গোয়েন্দা। আরে শুধুমাত্র লাইসেন্স দিয়েই কি সবকিছু করা যায়?

– সাজু বললো, রামু তুমি শান্ত হও। আমাদের সঙ্গে লতা চৌধুরীর মাত্র কয়েক ঘন্টার পরিচয়। সেখানে তিনি আমাদের বিশ্বাস করবেন না এটাই তো স্বাভাবিক তাই না?

– কেন স্বাভাবিক? পুলিশ প্রশাসন রয়েছে সেখানে অবিশ্বাস কেন আসবে সাজু ভাই?

– আজকাল আমাদের দেশের আইনের উপরল জনগণ বিশ্বাস করতে পারছে না। হাতেগোনা কিছু খারাপ পুলিশের জন্য সমগ্র পুলিশকে জনগণ অবিশ্বাস মনে করে। তাছাড়া নিজের বাবাকে সে বিশ্বাস করবে এতে অবাক হবার কিছু নেই।

– কিন্তু তার বাবার বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগ তখন তার উচিত ছিল সাবধান হওয়া। তাছাড়া উনি তো আসল বাবা নন।

– আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আমরা এসব নিয়ে কেন কথা বলছি বলো। এমন তো হতে পারে রবিউল যা বলেছে সবটাই মিথ্যা কথা। তার বাবা সত্যি সত্যি তাকে বাঁচানোর জন্য লোক পাঠিয়েছে।

– রামু বললো, একটা প্রশ্ন করবো?

– হ্যাঁ করো।

– আপনার সঙ্গে পরিচয় হবার পর থেকে আমি তো আপনার সঙ্গে প্রায় সব মামলার সঙ্গী ছিলাম।

– হ্যাঁ।

– আপনি যখন অনেক কিছু নিয়ে টেনশন করতে থাকেন তখন আমি আপনার মুখ দেখে বুঝতে পারি। আপনিও অনেক কিছু নিয়ে নিশ্চয়ই এখন টেনশনে আছেন।

সাজু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তার মনের মধ্যে সত্যি সত্যি অনেক টেনশন বাসা বেঁধেছে কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর আপাতত নেই। লতার কাছে তার বর্তমান বাবার কথা শুনে সাজু নিজেই খুব চিন্তার মধ্যে আছে। যেসব প্রশ্ন সাজুর মনে জাগ্রত হয়েছে সেগুলো জানতে হলে তাকে ঢাকায় গিয়ে খুঁজতে হবে।

কিন্তু ফিরোজ সাহেবের লাশ মর্গে। লতা এখানে আবার রবিউলও চট্টগ্রামে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সে চট্টগ্রামে এসেছে সপ্তাহ খানিক বেড়াতে। রামিশার সঙ্গে কিছুদিন ঘোরাঘুরি করবে সেজন্য মূলত চট্টগ্রামে আসা৷ আর এখনই যদি চট্টগ্রাম ত্যাগ করে তাহলে রামু কি ভাববে!

সাজুর হঠাৎ করে ডিবি হাসানের কথা মনে পড়ে গেল। রবিউল নাকি আরেকটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছিল, সেই মেয়ে আবার এক হাসপাতালের পরিচালক। সাজু ভাই তার মোবাইল বের করে প্রথমে লিয়াকত হাসানকে কল দিলেন।

– হ্যাঁ সাজু বলো।

– ভাই আপনি কি অফিস থেকে বের হয়েছেন?

– হ্যাঁ।

– আপনাকে একটা কাজ করতে হবে ভাই।

– কি কাজ বলো।

– লতা চৌধুরীর বাবার বিষয় সামান্য খোঁজখবর নিতে হবে। সবার আগে তার ব্যক্তিগত এসিস্ট্যান্ট এর সঙ্গে কথা বলতে হবে।

– আমি তো মোটামুটি তাদের নিয়ে বিকেলে একটু ঘাটাঘাটি করলাম। ওরা তো মোটামুটি অনেক ধনী পরিবার।

– আপনি যদি এখনই একটু বাসায় ফেরার পথে যোগাযোগ করে যেতে পারতেন তাহলে অনেক সুবিধা হতো ভাই।

– ঠিক আছে চেষ্টা করে দেখি। কেবল তো সন্ধ্যা হয়েছে, যদি দেখা করতে পারি তাহলে আমি কল দেবো তোমাকে।

– মেলা মেলা ধন্যবাদ ভাই।

– তোমার এই সংলাপটা তোমার ভাবি সবসময় আমাকে দেয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম সে বলে তোমার কাছ থেকে শিখেছে।

– হাহাহা, ভাই রাখলাম তাহলে!

– আচ্ছা ঠিক আছে।

হাসানের কাছ থেকে কল কেটে দিয়ে সাজু ভাই সেই অজ্ঞাত হাসপাতালের পরিচালকের নাম্বারে কল দিলেন। জানতে হবে রবিউলের সঙ্গে তার কিসের সম্পর্ক, কেন কল দিয়েছে রবিউল। হতে পারে তার সেই অসুস্থ বোনের খবরাখবর জানার জন্য কাউকে কল দিয়েছে। কিন্তু সেটাই যদি হয় তাহলে সেই মেয়ে হাসপাতালের পরিচালক কেন হতে যাবে?

মেয়েটা কল ধরলো। কণ্ঠ শুনে তাকে বেশি বয়স বলে মনে হচ্ছে না। সাজু বললো,

– আপনার নামটা জানতে পারি?

মেয়েটা শান্ত আর মিষ্টি কণ্ঠে বললো,
– আমার নাম পরিচয় না জেনে কীভাবে আমার নাম্বারে কল দিলেন সাজু ভাই!

সাজু চমকে উঠলো। মেয়েটা তার নাম জানে এটা কীভাবে সম্ভব? তারমানে কি মেয়েটা সাজুকে আগে থেকে চিনে। রবিউল কি তাকে সতর্ক করে দিয়েছে নাকি? যদি সত্যি সত্যি সতর্ক সংকেত দিয়ে থাকে তাহলে তো এই মেয়ে কিছু বলতে চাইবে না।

সাজু বললো,
– আজ বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে রবিউল নামের একটা ছেলে আপনাকে কল দিয়েছিল। আপনার সঙ্গে তার সম্পর্ক কি জানতে পারি?

– আমি তো এখনো আমার নাম বলিনি, আপনি মনে হয় আমার নাম জানেন না। তাই না?

সাজু আবারও অবাক। এই মেয়ে এভাবে ঘুরিয়ে কথা বলছে কেন? আর সাজুকে কথার প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা করছে কেন। আশ্চর্য!

– আমার নাম সাবরিনা আফরোজ মুন্নী।

– রবিউলের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কি? আপনি কি জানেন সে আজকে দুপুরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে ট্রেনের মধ্যে একটা খুন করেছে।

– হ্যাঁ জানি, লোকটার নাম ফিরোজ। তার স্ত্রীর নাম লতা চৌধুরী, সে নিজেও বিপদের মধ্যে আছে কিন্তু বোকা মেয়ে সেটা জানে না। রবিউল আমার কেউ না, আবার বন্ধুও বলতে পারেন

– ফ্রেন্ড? একজন খুনির সঙ্গে এক হাসপাতালের পরিচালকের বন্ধুত্ব, অস্বাভাবিক ব্যাপার।

– আপনি আর কিছু জানতে চান?

– হ্যাঁ চাই।

– বলেন।

– রবিউল ফিরোজ সাহেবকে খুন করেছে কেন? কি এমন অন্যায় করেছিলেন তিনি, যার কারণে তার স্ত্রী দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা জেনেও রবিউল তাকে খুন করেছে। কারণ কি?

– এই প্রশ্নের উত্তর আপনি রবিউলের কাছ থেকে জেনে নিবেন। এটা বলার পারমিশন আমার নেই সাজু ভাই।

– তারমানে এতক্ষণ ধরে যা কিছু বলছেন সব রবিউলের অনুমতি আছে তাই বলেছেন?

– হ্যাঁ। আপনি অন্য কাউকে দিয়ে কল দিয়েছেন বিকেলে তারপর আমি রবিউলকে জিজ্ঞেস করি ওই লোকটার কথা। রবিউল আপনার কথা বলে, এবং এটাও বলেন যে আপনি আমাকে কল দিতে পারেন।

– ওহ্।

– আমি চাইলে আমার নাম্বারও বন্ধ করে দিতে পারতাম। কিন্তু আপনার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে ছিল তাই বন্ধ করিনি। তবে এখন কথা শেষ হয়ে গেছে, কল কেটে দিয়ে নাম্বার বন্ধ করবো। কারণ আমি জানি আপনি আমার নাম্বার ট্রাকিং করে আপনি ওকে বের করতে চাইবেন।

সাজু দেখলো এখানে কথা বলা আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই মেয়ে ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছে। কিন্তু সাজুর মনের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ফিরোজ সাহেবকে খুন করার কারণ কি?

– আপনাকে যে কথাটা বলার জন্য বিশেষ কারণে কল করেছি সেটা শুনুন।

– বলেন।

– লতা চৌধুরীকে আপনি বাঁচানোর চেষ্টা করেন। রবিউলের পিছনে অযথা সময় নষ্ট করবেন না কারণ সে আপাতত আত্মগোপন করবে।

– আপনি তাকে বলবেন যে ফিরোজ সাহেবকে খুন করার কারণটা আমি জানতে চাই। ফিরোজ সাহেবকে কেন মারা হয়েছে সেটার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।

– আমি তাকে বলবো, সে যদি বলতে চায় তাহলে বলবে। আমি কি এখন রাখতে পারি?

– আপনার সঙ্গে আবারও কথা হতে পারে।

– নিশ্চয়ই, আমি দিনরাত হাসপাতালেই থাকি। হাসপাতালেই আমার থাকা খাওয়া সবকিছু। আপনার নিমন্ত্রণ রইল, রামিশাকে নিয়ে একদিন আসবেন। আপনার প্রিয় “এক কাপ ঠান্ডা কফি” খেয়ে যাবেন। রবিউল এলে আমি সবসময় তার জন্য এটা তৈরি করি।

কল কেটে দিয়ে সাজু ভাই একটু ভাবলো। ভালো করে বুঝতে পেরেছে সাবরিনা আফরোজ নামের এই মেয়ের সঙ্গে রবিউলের খুব ভালো বন্ধুত্ব। নাহলে এতকিছু তো তার জানার কথা নয়, কিন্তু কে এই মেয়ে?

হাসানকে বলে এই মেয়ের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। হাসপাতালের বিষয় খোঁজ নিতে হবে। কেমন হাসপাতাল এটা?

এসআই নিজাম বিদায় নিয়ে চলে গেল। সাজু আর রামিশা একটা সিএনজি নিয়ে তারাও রওনা দিল।

★★

রাত আটটার দিকে দিকে ডিবি হাসান সাহেব সাজুর কাছে কল দিলেন। সাজু এইমাত্র গোসল করে বের হয়েছে। সারাদিন অনেক পরিশ্রম করে এসেছে তাই রামিশা তাকে হোটেলে পৌঁছে দিয়ে নিজেও চলে গেছে তাদের বাসায়। সাজুর সপ্তাহ খানিকের জন্য হোটেল রুম রামিশা বুকিং করে রেখেছিল।

হাসান বললো,
– সাজু ঘটনা তো ভিন্ন ধরনের।

– কিরকম ভাই?

– লতা চৌধুরীর বাবা অসুস্থ হয়ে যখন বিদেশে চিকিৎসা করতে গেছেন তখন তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত এসিস্ট্যান্ট চাকরি ছেড়ে চলে গেছে।

– বলেন কি?

– হ্যাঁ সাজু, তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে তার সেই এসিস্ট্যান্টকে আর খুঁজে পাননি। লোকটা কেন যে হুট করে চাকরি ছেড়ে দিল সেটা কেউ জানে না। এমনকি লতা চৌধুরীর বাবাও জানে না।

– আপনি তো ভাই আরো ঝামেলার সৃষ্টি করলেন।

– কেন সাজু?

– ভেবেছিলাম নিজের ভেতরের কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিয়ে বের করবো। কিন্তু আপনি বরং আরো বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

– এখানে বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন?

– বহুদিন ধরে একসঙ্গে কাজ করে হঠাৎ করে তার চিকিৎসার সময় উধাও হওয়া চিন্তার বিষয় না? কিছু একটা গরমিল এখানে আছে হাসান ভাই। আপনাকে নতুন দুটো কাজ দিচ্ছি, আগামীকাল করতে পারবেন?

– কি কাজ?

– ওই এসিস্ট্যান্টের ডিটেইলস বের করবেন। তার ঠিকানা নিশ্চয়ই আছে, কোনো আত্মীয় স্বজনের কিংবা গ্রামের ঠিকানা। কেউ না কেউ অবশ্যই জানেন। অফিসের পিওন থেকে শুরু করে দারোয়ান পর্যন্ত সবাইকে জিজ্ঞেস করেন।

– আর দ্বিতীয় কাজটা?

– সেই হাসপাতাল সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে। কে সেই হাসপাতালের মালিক? কীভাবে চলে সেই হাসপাতালের কাজকর্ম, ইত্যাদি ইত্যাদি।

– আমি বিকেলে যেটুকু খবর নিলাম তাতে করে জানতে পেরেছি যে ওটা সম্পুর্ন একটা প্রাইভেট হসপিটাল। আর ওখানে সব চিকিৎসা ফ্রী ফ্রী করা হয়ে থাকে।

– বলেন কি?

– মালিক কে?

– ওই হাসপাতালের যাবতীয় খরচ ঢাকা শহরের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ীরা বহন করে।

– অবিশ্বাস্য।

★★★

লতার যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন সে অন্ধকার এক রুমের মধ্যে পড়ে আছে। তার বাবার সেই বন্ধু এখনো তার রুমের মধ্যে রয়েছে। জানালার থাই গ্লাস ভেদ করে যতটুকু আলো আসছে তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে লোকটাকে। আলোর রঙ হলদে, যার মানে হচ্ছে এটা চট্টগ্রাম বন্দরের বাতির আলো।

রুমের মধ্যে আরেকটা জানালা আছে। সেই জানালার কাছে বসে বসে কেউ একজন মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। লতার হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে কিন্তু চোখ কান তো খোলা। চোখে বাঁধলে হয়তো বন্দরের হলদে বাতি আর জানালার পাশে বসা লোকটাকে দেখা যেত না।

লোকটার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করে যাচ্ছে লতা চৌধুরী।

– হ্যাঁ ভাই আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। ঠিক যেভাবে বলেছেন সেভাবেই অভিনয় করেছি ভাই। গাড়ির ভিতর বসে তাকে এমন ভাবে বলেছি যে, সে তো তার বাবার কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে গেছে।

– [ ওপাশ থেকে কিছু বলা হচ্ছে ]

– না না ভাই, সে এখনো অজ্ঞান হয়ে আছে। ওই যে বুইড়া বেটা, মানে তার বাবার যে বন্ধু তাকে নিতে এসেছে তাকেও অজ্ঞান করে রাখছি।

– ****

– আপনি কোনো চিন্তা করবেন না রবিউল ভাই। এমন ভাবে বলেছি সে ১০০% বিশ্বাস করেছে যে আমরা তার বাবার লোক। কিন্তু সে তো আর জানে না যে আমরা রবিউলের লোক হাহাহা।

শিউরে উঠল লতা চৌধুরী। তাহলে তো তার সব ধারণা ঠিক ছিল, সবকিছুর পিছনে রবিউলের হাত রয়েছে। তার বাবা যদি তাকে মারতে চাইতো তাহলে তো এতক্ষণে তাকে মেরে ফেলতো এরা।
তারমানে ওই রবিউল তাকে বন্দী করে বিশাল কিছু করতে চায়। অনেক পরিকল্পনা করে সে কাজগুলো করেছে।
লতা আবারও কান সজাগ করলো, লোকটা বলছে,

– রবিউল ভাই, আমার টাকার বিষয়টা একটু বাড়িয়ে দিবেন৷ আজকে অনেক রিস্ক নিয়ে কাজ করতে হয়েছে ভাই। আর মেয়েটার বাবা যদি টাকা দিতে না চায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বলবেন। একে বস্তায় ভরে বঙ্গোপসাগরের মাছকে বিলিয়ে দেবো।

চলবে…

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here