#চাদর_জড়ানো_চিরকুট
#পর্বঃ- ১১
রবিউলের মুখের উপর একদলা থুতু ফেলে লতা বললো,
– আমার চোখে দেখা নিকৃষ্ট মানুষের মধ্যে তুই আরও বেশি নিকৃষ্ট। জেলে গিয়ে অপেক্ষা কর, তোর এমন করুণ পরিণতি করবো যে তুই কল্পনা করতে পারবি না।
রবিউল সামান্য হাসলো, সেই সাথে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। যে হাসি ও দীর্ঘশ্বাসের অর্থ হচ্ছে লতা চৌধুরী আপনি জিততে পারেননি।
[ একটু পিছন থেকে জেনে আসি ]
বাস যখন দাউদকান্দি ব্রিজ পার হয় তার একটু পরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে রবিউল। অনেকটা সাহস নিয়েই লতা তার সামনের সিটের লোকটার কাছে ফিসফিস করে নিজের বিপদের কথা জানায়। লোকটা ছিল বুদ্ধিমান, তিনি তার মোবাইল বের করে লতার হাতে দেন। লতা সেখানে নোটপ্যাড দেখতে পায়।
নোটপ্যাডে লেখা ছিল, “কি করতে হবে লিখেন।”
লতা সেখানে লিখলো, ” ০১৭১১—- এটা আমার বাবার নাম্বার। আপনি তার কাছে কল দিয়ে শুধু বলবেন যে লতা বাসের ভিতরে আছে। আমরা ঢাকা নামবো। তারা যেন পুলিশকে বলে আপনার সিমের লোকেশন ট্র্যাকিং করে। তারপর পুরো বাস আটক করে আমাকে উদ্ধার করে। আপনি প্লিজ এই সাহায্যটুকু করেন। আমার পাশের সিটে যিনি বসে আছে তিনি বেশ বিপজ্জনক। ”
লতার লেখা নোটপ্যাড পড়ে লোকটা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। তারপর তিনি লতার বাবার নাম্বারে কল করেন। কল ধরে লতার বাবার নতুন এসিস্ট্যান্ট, এবং তিনি সবকিছু শুনে দ্রুত কাজ শুরু করেন।
ঢাকা পুলিশের কাছে কল দিয়ে ওই নাম্বার ট্রাকিং করতে বলেন। পুলিশ নিয়ে তারা অপেক্ষা করতে থাকে সুবিধামতো স্থানে।
পুলিশ তখন ওই নাম্বারে কল করেন। তারপর তারা বাসের ড্রাইভারের সাথে কথা বলতে চায়। লোকটা সিট থেকে উঠে বাসের ড্রাইভারের কাছে মোবাইল দিলেন। ড্রাইভারকে পুলিশ বললেন যেন যাত্রাবাড়ী জনপদের মোড়ে বাসা দাঁড় করান। পুলিশ সেখানে অপেক্ষা করছে।
নারায়ণগঞ্জ এসে চিটাগং রোড পার হয়ে রবিউল জাগ্রত হয়। কিন্তু ততক্ষণে সবকিছু শেষ। সে মনে মনে ঠিক করেছে আরামবাগ নামবে, তারপর সেখান থেকে যাবে ধানমন্ডি। কিন্তু তার আগেই যে সব পরিকল্পনা সমাপ্তি হবে কল্পনা করেনি।
জনপদের মোড়ে এসে বাস দাঁড়াতেই সাধারণ পোশাক পরে দুজন পুলিশ ভিতরে প্রবেশ করলো। তাদের হাতে অস্ত্র আছে। তাদের দেখেই রবিউল সন্দেহ করে কারণ পুলিশ দেখলে চেনা যায়।
লতা হাত দিয়ে ইশারা করতেই পুলিশ দুজন মিলে পিস্তল ধরে রবিউলের মাথায়। রবিউল সেদিকে না তাকিয়ে তার পাশের সিটে বসে থাকা লতার দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক।
রবিউল শান্ত ছেলের মতো পুলিশের সঙ্গে বাস থেকে নেমে যায়। লতা এরকম একটা কাজ করে দেবে সে ভাবতে পেরেছে কিনা কে জানে। লতা আর রবিউল নামার পরে বাস চলে গেল তার গন্তব্যে। লতা সেই সামনের সিটের লোকটাকে একটা ধন্যবাদ দেবার সুযোগ পেল না।
রবিউলের দুটো হাত পিছমোড়া করে হ্যান্ডকাফ লাগানো হয়েছে। রবিউল এখনো লতার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক তখনই রবিউলের মুখের উপর একদলা থুতু ফেলে লতা বললো,
– আমার চোখে দেখা নিকৃষ্ট মানুষের মধ্যে তুই আরও বেশি নিকৃষ্ট। জেলে গিয়ে অপেক্ষা কর, তোর এমন করুণ পরিণতি করবো যে তুই কল্পনা করতে পারবি না।
রবিউল সামান্য হাসলো, সেই সাথে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। যে হাসি ও দীর্ঘশ্বাসের অর্থ হচ্ছে লতা চৌধুরী আপনি জিততে পারেননি।
রবিউল আস্তে করে বললো,
– আমার পকেটে বাটন মোবাইলে একটা মেমোরি কার্ড আছে। এটা আপনার সঙ্গে করে নিয়ে যান। আমি জানি না আমার পরিণতি কি হবে। আপনার কাছে অনুরোধ রইল, মেমোরির মধ্যে থাকা একটা ভিডিও আরেকটা কল রেকর্ড আছে সেগুলো যত দ্রুত পারেন দেখে নিবেন।
পুলিশ বাঁধা দিতে চাইলো কিন্তু লতা বললো,
– ঠিক আছে নিয়ে যাচ্ছি আমি। কিন্তু তোর নতুন করে মিথ্যা কোনো কথা বিশ্বাস করার মতো আর কেউ নেই।
রবিউলকে পুলিশের গাড়িতে উঠানো হলো। লতা চৌধুরী তার বাবার পাঠানো গাড়িতে উঠে রওনা দিল। তার বাবার শরীর অসুস্থ তাই তিনি আসতে পারেননি। গতকাল থেকে মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে তিনি অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী।
★★★
দাদাজান নামের পরিচিত সেই লোকটার কথা শুনে সাজু ভাই বললেন,
– আপনার কথা শেষ হয়েছে?
– হ্যাঁ মোটামুটি শেষ।
– আমি আপনার কোনো কথা বিশ্বাস করতে পারি নাই, ক্ষমা করবেন। তবে ” যাহা কিছু রটে তার কিঞ্চিৎ পরিমাণ বটে ” সুতরাং আপনি যা বলছেন তার মধ্যে কিছু সত্য আছে।
– আশ্চর্য, আপনি বুঝতে পারছেন না রবিউলের এরকম আচরণের কারণ কি?
– হ্যাঁ পারছি, কিন্তু এরকম ছোটখাটো কারণে সে কোনদিনই এতবড় পরিকল্পনা করবে না। আর মুন্নীর মৃত্যুর জন্য কে দায়ী সেটা রবিউল অবশ্যই ভালো করে জেনে নিয়েছে।
– জানার মধ্যে ভুল থাকে না? মাইশাকে তো সে বিনা কারণে খুন করেছে, তার তো দোষ ছিল না।
– দুটো আলাদা বিষয়, একটা ব্যক্তিগত আর ওটা হচ্ছে চুক্তিগত৷
– আপনি কি রবিউলের কাছ থেকে লতাকে নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন না?
– করবো, কিন্তু সেটা আপনার সাজানো কোনো কথা শুনে নয়। তবে আপনি আমার সঙ্গে কথা বলাতে আমি একটা বিষয় নিশ্চিত হলাম।
– কি বিষয়? বলেন বলেন।
– লতার বাবার বা লতার সম্পত্তির সবকিছুর উপর আপনারও নজর রয়েছে। বিনা স্বার্থে কিছু করার মতো মানুষ আপনি নন।
– আমার বন্ধুর মেয়ে সেটাই আমার স্বার্থ।
– আচ্ছা বাদ দেন, আমি ঢাকা গিয়ে দেখি কার কোথায় স্বার্থ জড়িত আছে।
সাজু মোবাইল কেটে দিয়ে রামিশার দিয়ে তাকিয়ে রইল। রামিশা বললো,
– এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
– তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসলাম ঠিকই, কিন্তু এসব ঝামেলার মধ্যে গিয়ে আবার না জানি কত বিপদ আসে।
– কপালে থাকলে আসবে, সমস্যা কি?
সাজু কিছু বললো না। সাই সাই করে বাস এগিয়ে যাচ্ছে। বাসের ভিতরে বক্সে হালকা আওয়াজে রবীন্দ্রনাথ সংগীত চলছে।
ঘন্টা খানিক পরে ডিবি অফিসার হাসান কল দিয়ে জানালো যে লতাকে উদ্ধার করা হয়েছে। রবিউল এখন পুলিশের হাতে বন্দী।
★★★
লতাকে নিয়ে আসা হয়েছে মিরপুরে। লতা এখানে আগে কখনো আসেনি। এই বাড়িটা কার লতা সেটা জানে না। গাড়ি থেকে নেমে লতা চৌধুরী তার বাবার এসিস্ট্যান্টকে বললো,
– এখানে কেন আঙ্কেল?
– তোমার বাবা তোমাকে এখানেই থাকতে বলেছে মা। ওই ক্রিমিনালটা তো ডেঞ্জারাস, ওর কোথায় কোথায় লোকজন আছে কে জানে? তাই এখানে তোমাকে নিরাপদে রাখা হবে, কেউ জানবে না।
– এটা কি আমাদের বাসা?
– হ্যাঁ, দুটো ফ্ল্যাট আমাদের। অফিসের কাজের জন্য এই ফ্ল্যাট দুটো কেনা হয়েছিল। কিন্তু বিশেষ কারণে সেটা আর করা হয়নি তবে বাসার মতো করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
– ফিরোজের লাশ কখন আসবে?
– চট্টগ্রাম থেকে এম্বুলেন্স করে রওনা দিয়েছে। ৪/৫ ঘন্টার মধ্যে ঢাকায় আসবে। তুমি ততক্ষণে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নাও। মন খারাপ করো না মা, আল্লাহ ভাগ্যে যা লিখেছেন তাই হয়েছে।
– ওই রবিউল যেন কোনভাবেই ফাঁসির হাত থেকে বাঁচতে না পারে আঙ্কেল। ফিরোজকে মেরেছে, আমার চোখের সামনে চারজনকে খুন করেছে।
– সবকিছু হবে মা, তুমি এবার একটু শান্ত হও।
রুমে ঢুকে লতা গোসল করতে ঢুকে গেল। তার বাবা তার জন্য কাপড়চোপড় পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সে গোসল করতে ঢুকলো। গতকাল থেকে এ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে সব যেন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। একটা সময় তার মনে হচ্ছিল সে আর বাঁচতে পারবে না। অথচ সে কীভাবে যেন হঠাৎ করে বেঁচে ফিরে এসেছে। আসলেই আল্লাহ যাকে বাঁচান তাকে মারার মতো পৃথিবীতে কেউ নেই। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি চাইলে সবকিছুই করতে পারে, মানুষ পারে না।
গোসল করে বের হয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে হঠাৎ রবিউলের বাটন মোবাইলের কথা মনে পড়লো। মোবাইলটা তার কাছে আছে। সে বিছানায় বসে মোবাইলটা বের করে কি আছে সেটা খুঁজতে লাগলো।
সিম আছে, সঙ্গে একটা মেমোরি কার্ড আছে।
লতা দেখলো সেই মেমোরি কার্ডে শুধু একটা ভিডিও আর একটা ভয়েস রেকর্ড। রবিউল ঠিক এটাই বলেছিল তাকে, কিন্তু কেন?
লতা ভিডিও ওপেন করলো। ২৬ মিনিটের সেই ভিডিও দেখে লতার এই পৃথিবী যেন বদলে গেল।
একই বিছানায় দুটো মেয়েকে নির্মম ভাবে দুটো পশু অত্যাচার করছে। মেয়ে দুটোর হালকা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে তবে বেশি শব্দ হচ্ছে টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার মতো শব্দ। দুটো পশু মিলে এভাবে অত্যাচার করছে আর কেউ একজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিডিও করছে।
সবচেয়ে কষ্ট আর আফসোসের বিষয় হচ্ছে সেই দুটো পশুর মধ্যে একটা পশু হচ্ছে ফিরোজ। লতা যেন অজ্ঞান হবে আবারও, তাহলে কি এরাই সেই তিথি বিথি?
কিন্তু রবিউল তো বলেছিল ওটা বানানো মিথ্যা কথা ছিল। তাহলে এই মেয়ে দুটো কে? আর এই যে চোখের সামনে ফিরোজ উলঙ্গ অবস্থায় এদের অত্যাচার করছে এটাও তো সত্যি।
ভিডিওর ১৭তম মিনিটে ফিরোজ ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলেছে ” কিরে মিজান ভিডিও ঠিকমত হচ্ছে তো? কর কর ভালো করে কর। ”
মিজান! এই লোকটাকে তো রবিউল সেই চারজন এর সঙ্গে মেরে ফেলেছে। লতা আর দেখতে চাইল না, সে তাড়া রেকর্ড শুনতে লাগলো।
কণ্ঠটা রবিউলের নিজের।
ম্যাডাম…..
আমার বারবার মনে হচ্ছে আপনি আমার সঙ্গে দেওয়া কথা রাখতে পারবেন না। আপনার চোখে তাকিয়ে মনে হয় আপনি মনে মনে নিশ্চয়ই কোন বুদ্ধি পাকাচ্ছেন। হয়তো আমার হাত থেকে মুক্তি পাবার বুদ্ধি। আপনি যদি সফল হয়ে যান তাহলে আপনার জন্য বিপদের শেষ নেই।
আপনার সঙ্গে মিথ্যা বলার জন্য মাফ করবেন। আমি কি করতাম বলেন?
আপনি তো আমার কোনো কথা বিশ্বাস করেননি। নিজের বাবাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছেন। সবাই এটাই করবে কারণ বহুদিনের পরিচিতের মানুষ বিশ্বাস করবে, স্বাভাবিক।
আমি খারাপ আমি জানি। কিন্তু আমি আপনার ক্ষতি চাইনি। আপনার স্বামীকে মারার পরে দ্বিতীয় টার্গেট মিজানকে খুব সহজেই মারতে পারতাম। কিন্তু মাঝখানে আপনার বিপদের জন্য মনটা খারাপ হয়ে গেল। সিদ্ধান্ত নিলাম যে আপনাকে নিয়েই আমি ঢাকা ফিরবো। কিন্তু আপনি, সাজু ভাইসহ আপনারা কেউ আমাকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। তাই এরপর থেকে মুখে যা এসেছে তাই বলেছি।
আমি খুব যত্নে লেখা ” চাদর জড়ানো চিরকুট ” একটুও মিথ্যা ছিল না। আপনারা সবাই আমাকে অবিশ্বাস করার পর আমি সত্যি মিথ্যা দিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি বিভ্রান্ত করার জন্য।
আপনার সম্পত্তির উপর বিন্দু পরিমাণ লোভ আমার নেই। সম্পত্তির লোভ আপনার বাবার, আমার বিশ্বাস আপনি যদি আপনার বাবার কাছে ফিরে যান তাহলে খুব তাড়াতাড়ি সেটা জানতে পারবেন আপনি।
আমি রেকর্ডটা করে রাখছি কারণ আমার মন বারবার বলছে যে আপনি চলে যাবেন। তাই শুধু সামান্য সতর্ক করার জন্য এই বুদ্ধিটা করলাম তবে জানি না সেটা কতটুকু কার্যকর হবে। তবুও মানুষ তো চেষ্টা করবেই তাই না ম্যাডাম?
ভিডিওটা আমি মিজানের মোবাইলে পেয়েছি। একবার ভেবেছিলাম আপনাকে দেখাবো। কিন্তু হঠাৎ করেই মনটা পরিবর্তন হয়ে গেল। লোকটা এখন পৃথিবীতে নেই কিন্তু তার প্রতি রয়েছে আপনার অগাধ ভালোবাসা ও বিশ্বাস। তাই সদ্য মারা যাওয়া লোকটার প্রতি আপাতত ঘৃণার জন্ম দিতে চাইনি।
তাছাড়া আমি গতকাল বিকেলে শপথ করেছিলাম যে সাজু ভাই ও আপনার চোখে অপরাধী হয়েই আমি এই খেলা শেষ করবো। তারপর সবশেষে আমি যদি বাঁচতে পারি তখন তো নিজেরাই ভুল বুঝতে পারবেন। সেই আশায় আমি নিজ থেকে আর কিছু বলবো না ভেবেছিলাম। কিন্তু সত্যি সত্যি যদি আপনি চলে যান বা পুলিশের কোনো সাহায্য নেন। তাহলে আপনাকে আগেই সবটা জানানোর জন্য আমার এই রেকর্ড করা।
কারণ আমি জানি আমাকে গ্রেফতার করার পরে কোনো জেলের মধ্যে নেওয়া হবে না। আমাকে নিয়ে যাবে কোনো নদীর তীরে কিংবা অন্ধকার কোনো গোডাউনে। আইনি কোনো ঝামেলা ছাড়া আমাকে ওরা তাহলে মেরে ফেলবে।
ফিরোজ এবং মিরাজরা চারজন সবাই আপনার বাবার লোক ছিল। যদিও তাদেরকে ঠিক করেছে দাদাজান। হাসপাতালে আপনার সঙ্গে কথা বলে আমি যখন বুঝতে পেরেছি যে আপনারা কেউ আমাকে বিশ্বাস করবেন না। তখনই আমি মিজান আর তার দলকে ধরার পরিকল্পনা করি। মিজান এর বাসার ঠিকানা জানতাম। ওর বাসা গিয়ে তার মাকে জিম্মি করে মিজানকে আমার কথামতো কাজ করতে বললাম। মিজান রাজি হলো, আর আপনাকে আমার হাতে তুলে দিল। মিজানকে মেরে তারপর ওর পকেট থেকে মোবাইল বের আমি ভিডিওটা পেয়েছি। যদি আগে পেতাম তাহলে সেই চাদর জড়ানো চিরকুটের সঙ্গে এটা আপনাকে দিতাম।
উপযুক্ত কারণ ছাড়া আমি খুন করি না। আপনার মৃত্যুর জন্য আমাকে বলা হয়েছিল আপনি মুন্নীর খুনি। মুন্নীকে চিনতে পেরেছেন? আপনার খুব ভালো বান্ধবী ছিল। সে একটা ছেলের সঙ্গে প্রেম করতো মনে আছে?
আমি জানতাম মুন্নীর বিষয়টা মিথ্যা। তাই আর আপনার কাজটা নিলাম না। ছোট্ট বিষয়টা আমি সহজেই ভুলতে চাইলাম। এরপর তো তিথি বিথির করাণে আপনার সঙ্গে আবার পরিচয়। তখন আমি জানতে পারি ফিরোজ আপনার স্বামী।
এই রেকর্ড করার কোন গুরুত্ব আছে কিনা সেটা জানিনা। তবুও করে রাখলাম। নিজের কাছে যেহেতু শপথ করেছি যে এই খেলা শেষ করবো তারপর সবকিছু বলবো। তাই আগে থেকে আর কিছু সরাসরি বললাম না। তবে যখন সত্যি সত্যি আপনার হাতে এটা পৌঁছে যাবে তখন ভেবে নিবেন আমি শেষ। আর আপনিও তখন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে।
আমার যা কিছু হোক। আপনি যদি কোনমতে পালাতে পারেন তাহলে সাজু ভাইয়ের সাহায্য নিতে পারেন। তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন। আইনের মানুষ না হয়েও নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করা একটা মানুষ সাজু ভাই।
আমি চাইলে হয়তো আপনার ভুল ভাঙিয়ে দিয়ে সবকিছু ঠিক করতে পারি। কিন্তু নিজের কাছে করা শপথ ভঙ্গ হয়ে যাবে তাই মৃত্যু হবার আগ পর্যন্ত আপনার কাছে আর স্বীকার করবো না।
আমি যদি এই মেমোরি আপনাকে দেই আর সেটা যদি আপনি শুনতে পান। তাহলে ভেবে নিবেন আমি নেই। কারণ আমার মৃত্যুর উপস্থিতি ছাড়া এটা আমি আপনাকে দেবো না।
ভালো থাকবেন।
বেঁচে থাকবেন। দোয়া রইল।
|
|
লতার সমস্ত হাতপা ঠান্ডা হয়ে গেছে। ভিডিওটা না দেখলে সে রবিউলের কোনকিছু বিশ্বাস করতে পারতো না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি কিছু একটা ঝামেলা হচ্ছে।
লতাকে নতুন বাসায় নিয়ে আসার ব্যাপারটা লতা কল্পনা করতে লাগলো। লতা বিছানা থেকে উঠে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলতে গিয়ে দেখলো দরজা বাহির থেকে লক করা। বারবার চেষ্টা করে সে দরজা খুলতে পারলো না। আঙ্কেল আঙ্কেল বলে চিৎকার করেও কারো কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না।
চলবে…
লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।