চাদর_জড়ানো_চিরকুট #পর্বঃ- ১২

0
1465

#চাদর_জড়ানো_চিরকুট
#পর্বঃ- ১২

মোবাইল হাতে নিয়ে লতা কাঁদতে লাগলো। এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে দেওয়াতে আরো বেশি ভয় হচ্ছে তার। লতা নিজের মায়ের কথা ভাবতে লাগলো, যেকোনো বিপদে সবসময় আল্লাহ ডাকতে বলত তার মা। লতা প্রাণপণে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলো।

মোবাইলে কোনো নাম্বার পাওয়া গেল না। সম্পুর্ন ফাঁকা নাম্বার লিস্ট। সাজু ভাইয়ের নাম্বার থাকলে তাকে হয়তো জানানো যেত। রবিউলকে এভাবে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে কতবড় বিপদ হয়ে গেছে সেটা ভেবে কান্না পাচ্ছে। ফিরোজ আর তার বাবার মুখ চোখের সামনে ভাসতেই ঘৃণায় বুকের মধ্যে তীব্র কষ্টটা জেগে উঠে।

অপেক্ষা, নিজের সঙ্গে খারাপ কিছু হবার জন্য অপেক্ষা করতে হবে তাকে৷

এমন সময় দরজা খুলে যাবার শব্দ পেল। লতা তাড়াতাড়ি চোখ মুছে হাতের মোবাইল লুকিয়ে বিছানায় বসে পড়লো। দরজা খুলে রুমের মধ্যে তার বাবার নতুন এসিস্ট্যান্ট প্রবেশ করলো। তার পিছনে পিছনে আরেকটা লোক এসেছে এবং তার হাতে খাবার।

সঙ্গের লোকটা খাবারগুলো বিছানায় একপাশে রেখে চলে গেল। লতার দিকে তাকিয়ে এসিস্ট্যান্ট বললো,

– হালকা খেয়ে নাও মা, আর মন খারাপ করে থেকো না। তোমার বাবা আসবে রাতের মধ্যে।

লতা চুপ করে রইল।

– কি হলো খাও মা, ফিরোজের লাশ এলে দাফন করার আগে তোমাকে দেখানো হবে।

– ঠিক আছে আপনি যান আমি খাচ্ছি।

লোকটা চলে গেল। লতা দরজা বন্ধ করে আবার তাড়াতাড়ি করে খাবারের ৫০% একটা কাপের পেঁচিয়ে বাথরুমের ছোট ছাদে রেখে দিল। আর বাকি খাবার হাত দিয়ে এমনভাবে নাড়লো যেন মনে হয় যে সে বাকিটা খেয়ে ফেলেছে।

বাথরুম থেকে হাত ধুয়ে দরজা খুলে বসে রইল। বাবার এসিস্ট্যান্ট আবার রুমের মধ্যে আসলো। তারপর সেই লোকটাকে ডাক দিয়ে বাকিগুলো নিয়ে যেতে হুকুম করলো।

তারপর লতাকে বিশ্রাম করার কথা বলে লোকটা আবার বেরিয়ে গেল। লতা তাকে কিছুতেই বুঝতে দিল না যে সে এদের মতিগতি বুঝতে পেরেছে। খাবারের মধ্যে কিছু মেশানো থাকতে পারে ভেবেই সে খাবার লুকিয়ে রেখেছে।

★★★

লতা কল দেবার পরপরই পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে নিজের চারজন লোককে তৈরি করেন দাদাজান। নাম পরিবর্তনের টেকনিক এই দাদাজানের কাছ থেকে শিখেছিল রবিউল ইসলাম। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে পরিচিত থাকলেও তাকে সচারাচর সবাই দাদাজান নামে চেনে। মূলত বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তার নাম সাইদুর রহমান টুকু।

পুলিশ যখন প্রস্তুতি নিয়ে রবিউলকে ধরতে গেছে সেখানেও এই দাদাজান নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন। উর্ধ্বতন এক অফিসারকে বলে সেখানে এমন কিছু পুলিশ পাঠানো হয়েছে যারা মূলত টেবিলের নিচে টাকা নিতে বেশি পছন্দ করে। তাই ওদের দিয়ে গ্রেফতার করে

চারজনের মধ্যে হাবিব ছেলেটা আসতে চায়নি। তার শরীর অসুস্থ, দুদিন ধরে জ্বর তবুও তাকে জোর করে আসতে হয়েছে। দাদাজানের কাছে যখন বলেছিল,

– অসুস্থ আমি না গেলে হয় না?

– দাদাজান বললো, রবিউলকে চিনিস না? ওকে তো ছোট করে দেখার কিছু নেই। এদের সঙ্গে গিয়ে যেভাবেই হোক নিয়ে আয়, তারপর মরিস।

গাড়ি নিয়ে বের হতে গিয়ে আরেক ঝামেলা হলো, গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না। বহু কষ্টে স্টার্ট দেওয়ার পরে তারা দ্রুত বের হয়ে গেল রবিউলকে নিয়ে আসার জন্য।

★★★

পুলিশের গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে রবিউল। তার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে না সে টেনশনে আছে কিনা। দুজন পুলিশ কৌতূহল নিয়ে এমন করে তাকিয়ে আছে যেটা রবিউলের কাছে কেমন অস্বস্তি লাগছে। রবিউলের ইচ্ছে করছে তাদের বলে যে এভাবে দেখার কি আছে?

কিন্তু তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। লতার মুখ বারবার মনে পড়ছে। লতা তাকে অবিশ্বাস করেছে এটা লতার অপরাধ নয় কারণ অপরিচিত কাউকে বিশ্বাস করা কঠিন। আর সেই মানুষ যদি হয়ে যায় সদ্য নিজের স্বামীকে খুন করা কেউ। তাহলে কোনো কথা নেই, বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই সেখানে।

রবিউল আফসোস করতে লাগলো। নিজের প্রতি করা শপথ রাখতে গিয়ে সে আর লতা দুজনেই এখন বিপদে আছে। নিজের জন্য রবিউলের কোনো টেনশন নেই। এই অপরাধ জগতে আসার পরে যেকোন সময় মরতে হবে সেই কথা মনপ্রাণ দিয়ে জানে।

আর সেই মৃত্যু হবে অনেক করুন এটাও রবিউল ভালো করেই জানে৷ কিন্তু তার সব চিন্তা আজকে লতাকে নিয়ে। মা-বাবা মারা গেছে, কতো টাকা পয়সার মালিক অথচ সেই সম্পদের কারণে আজ তার জীবন হুমকির মুখে।

লতাকে বাঁচানোর জন্য রবিউল নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিল। কিন্তু লতা যেটা করেছে সেটাই হয়ে গেল দুজনের জন্য বিপদের কারণ। লতা অবশ্য বাঁচার জন্য সবকিছু করেছে।

রবিউলের মনে ভয় জাগ্রত হলো। লতা যদি সেই মেমোরি না দেখে কিংবা ফেলে রাখে তাহলে তো কিছু জানতে পারবে না। লতা যত দেরিতে জানবে ততই বিপদ বাড়বে তার। নিজেকে পৃথিবীর সবচে বড় বড় বোকা মনে হচ্ছে তার। লতাকে ভিডিওটা দেখালেই সবকিছু স্বাভাবিক হতো।

নিজের জীবনের সবগুলো ভুলের মধ্যে এটাই তার সবচেয়ে বড়ো ভুল মনে হচ্ছে। কিন্তু এখন তো সে পুলিশের হাতে বন্দী। কিছু করার নেই, আর যেটা করার আছে সেটা হচ্ছে অপেক্ষা। মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে, এছাড়া কোনো উপায় নেই।

তাহলে লতা?
যাকে বাঁচানোর জন্য এতকিছু করেছে সেই লতা যদি মারা যায় তাহলে লাভ কি? নিজে মরবে এতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু লতাকে বাঁচাতে হবে। তিথি বিথির মৃত্যুর জন্য দায়ী বাকি দুজন এবং মূল দানব দাদাজানকে মারতে হবে।

রবিউল মরবে, কিন্তু এদের কাউকে পৃথিবীতে রেখে সে পৃথিবী ত্যাগ করবে না। চোখ বন্ধ করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে লাগলো। মাথা ঠান্ডা রেখে পালানোর পথে খুঁজে বেড়াচ্ছে সে।

থানায় গেলে তার আর পালানোর সুযোগ থাকবে না এটা নিশ্চিত। তাই তাকে এখনই যা করার কিছু একটা করতে হবে।

রবিউলের একমাত্র লক্ষ্য পালাতে হবে। তারপর লতাকে বাঁচাতে হবে। লতাকে মেরে ফেলার আগে তাকে বাঁচাতে হবে। লতা বাঁচবে, তার সন্তানকে নিয়ে সে পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে৷

রবিউল বেশ অবাক, তবে তার ধারণা অনুযায়ী হচ্ছে সবটা বোঝা যাচ্ছে। যাত্রাবাড়ী থেকে তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? থানায় নিশ্চয়ই না কারণ তাহলে এতক্ষণে থানায় নিয়ে যেত।

মালিবাগ মোড়ে এসে গাড়ি ব্রেক করলো। গাড়ির কাছে চারজন লোক এগিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে একজনকে রবিউল চেনে। পুলিশের গাড়িতে যে দারোগা ছিলেন তিনি বললেন,

– খুব ডেঞ্জারাস কিন্তু, উপর থেকে হুকুম এসেছে নাহলে থানায় নিয়ে মনের তৃপ্তি মেটাতাম। শালা কতগুলো যে খুন করেছে আল্লাহ ভালো জানে।

তাদের মধ্যে একজন বললো,
– আমাদের কাছে গেলে তো জামাই আদর করা হবে না তাই না? আমরা ঠিকই পেট থেকে সবকিছু বের করে নেবো।

রবিউলকে পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে সাদা একটা মাইক্রোতে ওঠানো হলো। রবিউল জানে এরা দাদাজানের লোক তারমানে সে এবার আরো বড়ো ঝামেলার মধ্যে যাচ্ছে।

পুলিশের মধ্যে একজন বললো,
– স্যার তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

– দারোগা বললেন, জানি না কোথায় নিচ্ছে। হুকুম এসেছে তাই করতে বাধ্য হয়েছি। নাহলে কি আর এভাবে তুলে দিতাম?

এখানকার কেউ আর কোনো কথা বললো না। মূলত এই পুলিশের মধ্যে যতজন আছে এদের সবাইকে বাছাই করে আনা হয়েছে। যারা টুকটাক পকেট ভারি করার সন্ধানে থাকে তাদের নিয়ে এই মিশন সাজানোর পরামর্শ দিয়েছে দাদাজান। লোকটা নিজের ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করেছে। অবশ্য বেশ কিছু টাকা তাকে গুনতে হবে।

রবিউল এবার কিছুটা স্বস্তিতে আছে। কারণ সে এবার সুযোগ পেলে কিছু করতে পারবে। এতক্ষণ যারা ছিল তাদের কাউকে মারলে পরিস্থিতি হতো খুব ভয়ংকর। তাছাড়া নিরপরাধ পুলিশদের সে কোনদিন মারতে পারতো না। কিন্তু এখন যাদের কাছে আছে তাদের সঙ্গে বাঁচার চেষ্টা করা যায় কারণ সবগুলো হারামির বাচ্চা।

গাড়ি চলছে তো চলছেই। কালো করে লোকটার মোবাইল বেজে উঠলো। সে মোবাইল রিসিভ করে বলছে,

– হ্যাঁ ভাই, আমি নিয়ে আসবো। আপনি ওখানে অপেক্ষা করেন।

– ,,,,,

– না না সমস্যা নেই, রাস্তায় হালকা জ্যাম তবুও আমরা দ্রুত আসতেছি।

– ….

– হ্যাঁ গাড়ি চলছে ভালোই।

মোবাইল রেখে দিয়ে ড্রাইভারকে আরো দ্রুত চালানোর নির্দেশ দিল কালো লোকটা। তারপর সে রবিউলের দিকে তাকিয়ে বললো,

– তোর তো জীবন শেষ রে ভাই। আমরা তো তোর আজরাইল, আইনের কোনো মানুষ আমরা নয়।

– রবিউল বললো, তোদের নিষ্পাপ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তোরা কারা। দাদাজান কিন্তু তোদের হাতে আমাকে দিয়ে ভুল করেছে।

– বুঝে ফেলেছিস তাহলে? কতদিন তার সঙ্গে দেখা হয়না তাই না রাব্বি? চল, দিয়াবাড়ি তোর জন্য দাদাজান অপেক্ষা করছে। আগামীকাল সকাল বেলা দিয়াবাড়ি তোর লাশ পাওয়া যাবে।

রবিউল চুপ করে রইল। গাড়ি প্রচুর গতিতে ছুটে যাচ্ছে সামনের দিকে। কালো লোকটা আবারও তাড়া দিয়ে গতি বাড়াতে বললেন। রবিউলের দুই পাশে দুজন বসে আছে আর কালো লোকটা বসে আছে আছে ড্রাইভারের পাশে। রবিউলের ডান দিকে বসেছে হাবিব, যার শরীর এখনো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। হাবিবের পকেটে রবিউলের হ্যান্ডকাফের চাবি। পুলিশ চাবিটা দিয়েছে কারণ রবিউলকে খুন করার পরে হ্যান্ডকাফটা খুলে নিয়ে যেতে হবে। নাহলে ঝামেলা হতে পারে।

নতুনবাজার জ্যামে আটকে গেছে গাড়ি। হাবিব তার পকেট থেকে চাবিটা বের করলো। রবিউল চোখ বন্ধ করে ঝিমাচ্ছে। হাবিব খুব সতর্কতার সঙ্গে রবিউলের হাতটা খুলে দিল। রবিউল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, কিন্তু হাবিব তাকে চুপ করে থাকার ইঙ্গিত করলো।

রবিউলের হাত এখন উন্মুক্ত। হাবিব তার পক্ষে এটা বোঝা যাচ্ছে সুতরাং বাকি আছে তিনজন। হাবিব তার হাতের পিস্তলটা রবিউলের দিকে এগিয়ে দিল। রবিউল এবার শক্তিশালী হয়ে গেল। কিছুক্ষণ আগেও বাঁচার জন্য পথ খুঁজে বেড়ানো রবিউল এখন একটু বাঁচার আশা পেল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পিস্তলে সাইলেন্সর নেই। রবিউল পিস্তলটা আবার হাবিবের কাছে দিল, সেটাও নিচ থেকে খুব সতর্কতার সঙ্গে।

রবিউল এবার হুট করে তার বাম পাশের সিটের লোকটার ঘাড় ধরে একটা মোচড় দিলেন। আর সেই মুহূর্তে সামনে ড্রাইভারের পাশে বসা কালো লোকটার মাথায় গুলি করলো হাবিব। সুতরাং সঙ্গে সঙ্গে দুজন শেষ। ড্রাইভার সিটে বসা লোকটা আকস্মিক বিপর্যয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাবিব তার মাথায় পিস্তল ধরে আত্মসমর্পণ করার ইঙ্গিত দিল। জ্যাম ছেড়ে গেছে, সবগুলো গাড়ি আস্তে আস্তে চলতে লাগলো। রবিউল তাদের গাড়ি সামনে গিয়ে সাইড করানোর নির্দেশ দিল।

গাড়ি থামতেই রবিউল আর হাবিব গাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। পিস্তল সবগুলো আগেই নিজের কাছে নিয়ে নিয়েছেন রবিউল। গাড়ি থেকে নেমে ওই লোকটাকে লাশ নিয়ে চলে যাবার তাড়া দিতে সে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।

রবিউল হাবিবের দিকে তাকিয়ে একটা কৃতজ্ঞতার হাসি দিল। সেই হাসির অর্থ হচ্ছে, আমি তোমার এই উপকার সারাজীবন মনে রাখবো।

হাবিব বললো,
– ভাই আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন?

– হ্যাঁ চিনতে পেরেছি। তোমার উপকারের কথা আমার মনে থাকবে।

– আপনি একদিন আমার জীবন বাঁচিয়েছেন। নাহলে সেবার RAB এর হাতে নির্ঘাত মারা যেতাম আমি।

– তোমার কাছে মোবাইল আছে?

– হ্যা আছে ভাই।

– মোবাইলটা দাও।

মোবাইলটা হাতে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে লতার কাছে যে মোবাইল আছে সেই নাম্বারে কল দিল রবিউল। লতা তখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। ঠিক সেই মুহূর্তে মোবাইল ভাইব্রেট হতে লাগলো। লতা অপরিচিত নাম্বার দেখলো, তবুও সাহস নিয়ে রিসিভ করে চুপ করে থাকলো।

দুজনের কেউ কোনো কথা বলছে না। কুড়ি সেকেন্ড পরে লতা আস্তে করে বললো,

– হ্যালো।

রবিউল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বললো,

– থ্যাংকস গড, আপনার কাছে মোবাইলটা আছে তাহলে। আপনি ঠিক আছেন তো? আমি রবিউল ইসলাম, রাফসান মাহমুদ।

লতার ইচ্ছে করছিল আনন্দে চিৎকার করতে। কিন্তু সে পারলো না। চোখের পানি আর বেশি বের হতে লাগলো। লতা বললো,

– আমাকে ক্ষমা করা যায় না রাফসান সাহেব?

– আপনি এখন কোথায়?

– ওরা আমাকে আটকে রেখেছে।

– কোথায়? আপনার বাড়িতে?

– না মিরপুরে, আমি এ বাসায় আগে আসিনি।

– কীভাবে গেছে সেটা বলেন। আমি আসছি।

– আপনি কি পুলিশের হাত থেকে পালিয়েছেন?

– হ্যাঁ, মনের মধ্যে সাহস রাখুন। আর কীভাবে কোথায় নিয়ে গেছে সবকিছু বলেন।

– আমি তো রাস্তা মুখস্থ করিনি। তবে আমি সেই বাসার আট তলায় আছি। লিফটে উঠে সাতে নেমেছি সুতরাং আমি অষ্টম তলায়।

– আপনি কি রুমের মধ্যে? মানে আপনার কাছে কেউ নেই?

– আমি একটা রুমের মধ্যে, কিন্তু ওরা বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে রেখেছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলছি।

– বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আশেপাশের বড় কোনো বিল্ডিংয়ের বর্ননা বলেন। যেটা দেখে আমি সহজে চিনতে পারবো।

– আমার পাশের বিল্ডিংটা মনে হয় ছয়তলা হবে। তার ঠিক পরেরটা আবার এই বিল্ডিংয়ের সমান। আর সেটা নীল কালার করা। ছাদে পানি রাখার যে ট্যাংকটা থাকে ওটা ছাতির আকৃতিকে সুন্দর করে ডিজাইন করা।

– ওকে আপনি অপেক্ষা করুর আমি এসে খুঁজে বের করবো। আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে রাখুন।

– ওরা যদি দরজা ধাক্কা দেয়?

– আপনি কি তাদের বুঝতে দিয়েছেন যে তাদের পরিকল্পনা আপনি জানেন।

– না বুঝতে দেইনি।

– তাহলে দরজা বন্ধ করে রাখুন। ধাক্কা দিলেও খুলবেন না একদম চুপচাপ থাকবেন। তাহলে তারা মনে করবে আপনি ঘুমিয়ে গেছেন। আর মানুষ সচারাচর ৩/৪ ঘন্টা এমনিতেই ঘুমায়। আমি এরমধ্যে আপনাকে খুঁজে বের করবো। আপনি মোবাইল চালু রাখবেন।

– রাফসান সাহেব।

– বলেন।

– আমি সত্যিই খুব লজ্জিত, আপনাকে আমি বুঝতে পারিনি।

– কোনো সমস্যা নেই।

★★★

রবিউলের কল কাটার পর লতা চৌধুরী আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইল। তার মনে হচ্ছে এবার সে বাঁচতে পারবে। আল্লাহ হয়তো তার ডাক শুনেছে তাই তাকে বাঁচার পথ করে দিচ্ছেন আল্লাহ।

কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর হঠাৎ করে দরজা বন্ধ করার কথা স্মরণ হলো। লতা তাড়াতাড়ি বেলকনি থেকে রুমের মধ্যে এলো। দরজা বন্ধ করার জন্য হাত দেবার আগেই দরজা খুলে গেল।

তার বাবার এসিস্ট্যান্ট দাঁড়িয়ে আছে, লোকটার পিছনে আরো দুজন লোক। তাদের দুজনের হাতে পিস্তল আর মুখ মাস্ক দিয়ে আবৃত করা। লতার গলা শুকিয়ে গেল, সে দরজা বন্ধ করার জন্য হাত বাড়াতেই তার বাবার এসিস্ট্যান্ট দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো।
লতা ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো। তার বাবার এসিস্ট্যান্ট তার দিকে তাকিয়ে পিশাচের মতো হাসতে শুরু করলো।
লতা মনে মনে বললো, ” হে আল্লাহ শেষ মুহূর্তে এসে কি আমাকে তুমি নিয়ে যাবে? মৃত্যুই যদি হবে তাহলে কেন আশা জাগ্রত করলে? ”

| | |

গতকাল এক প্রকাশক আমাকে মেসেজ দিয়ে বলেন যে আমি চাইলে সাজু ভাই সিরিজের এই গল্পটা মানে
” চাদর জড়ানো চিরকুট ” বই আকারে প্রকাশ করতে পারবো। কিন্তু তার শর্ত হচ্ছে গল্পের বাকি পর্ব গুলো পোস্ট করা যাবে না। কিন্তু আমি তাকে বললাম যে ” যেহেতু ফেসবুকে শুরু করেছি তাই সেখানেই শেষ করবো। কারণ সবাই ফেসবুকে এটা ভালোবেসেছে সুতরাং এখন এটা আরেকটু বড় করে বই বের করতে চাই না। পাঠক পাঠিকার ভালোবাসা আগে, তারপর নাহয় বই বের করা।

চলবে…..

লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here