#চাদর_জড়ানো_চিরকুট
#পর্বঃ- ১৭
লতাসহ গাড়ির মধ্যে মোট চারজন। লতা অজ্ঞান তবে বাকিরা সব হিংস্র ভয়ঙ্কর। তাদের প্রত্যেকের মনের মধ্যে ভয়ঙ্কর সব চিন্তা, এরা হয়তো ভালো কিছু ভাবতে পারে না।
গাজীপুরের পুবাইলে একটা পিকনিক এন্ড শুটিং স্পট আছে। গ্রাম অঞ্চলের সেই স্পটে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের শুটিং হয়। নাটক সিনেমা ইত্যাদি যেকোনো শুটিংয়ের জন্য বেশিরভাগ সময় এটা ব্যবহৃত হচ্ছে।
মাঝে মাঝে পিকনিকের জন্যও অনেকেই বুকিং করে থাকেন। বেশ সুন্দর করে গোছানো এই স্পট খুবই মনোমুগ্ধকর। গেইট দিয়ে প্রবেশ করে বড় মাঠ আর মাঠের পাশে রাস্তা। রাস্তার পাশে একটা বড় লেক।
পিকনিক স্পটের নাম ” মায়াজাল ”
মায়াজালের মালিক দাদাজান, এটাও কারো কাছ থেকে দখল করা হয়েছে বলে ধারণা করেন বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট। আপাতত লতাকে নিয়ে তারা সেখানেই যাচ্ছে।
বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট মদের বোতলটা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। গাড়ির মধ্যেই তিনি খাবার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো। হাইওয়ের বিশাল জ্যাম পেরিয়ে মায়াজালে পৌঁছাতে ঘন্টা তিনেক লাগবে সেটা প্রায় নিশ্চিত। তাই গাড়িতে করে যেতে যেতে একটু করে খাবেন আর নেশাটা জমবে।
এরকম পরিস্থিতিতে সবার মানসিকতা এমন হয় কিনা জানি না। কিন্তু বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট যেন একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। দাদাজানের মতো খুব ক্ষমতাবান মানুষের সঙ্গে কাজ করে সে। তাই যেন অহংকার একদম আকাশে উঠে গেছে।
গাড়ির মধ্যে ড্রাইভার ও আরেকজন ব্যক্তি মনে হচ্ছে একটু বিরক্ত হচ্ছেন। কিন্তু সাহসের অভাবে কিছু বলতে পারছে না।
রবিউলের দেওয়া সেই সিমটা যে মোবাইলে চালু করা হয়েছে সেখানে আরেকটা সিম আছে। যার মোবাইলে সিমটা চালু করা হয়েছে তার সেই সিমে কল এসেছে। বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট মোবাইল হাতে নিয়ে ভেবেছিলেন লতার সিমে কল এসেছে। কিন্তু সেভ করা নাম্বার দেখে যার মোবাইল তার হাতে দিয়ে বললেন,
– তোমার সিমে কল এসেছে।
লোকটা হাত বাড়িয়ে মোবাইল নিয়ে কলটা রিসিভ করেন। তারপর প্রায় ৭/৮ মিনিট একটানা কথা বলতে থাকেন। এই মুহূর্তে তাদের গাড়ি কুর্মিটোলা হসপিটালের সামনে দিয়ে বিমানবন্দর রোডে চলে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় সিমে কল আসার কারণে লতার ওই সিম নেটওয়ার্ক পাচ্ছিল না। ফলে অফিসে বসে হাসান সাহেবও আর কিছু দেখতে পাচ্ছিল না।
নেটওয়ার্ক বন্ধ হবার দুই মিনিট পরে তিনি সাজুর কাছে বলেন,
– সিম তো মনে হয় বন্ধ করে দিয়েছে।
– বলেন কি?
– হ্যাঁ।
– তাহলে কি করা যায়?
– গাড়ি কিন্তু চলমান অবস্থায় ছিল, আমার মনে হয় ওরা বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছে।
– ঠিক আছে আমি সেদিকে যাচ্ছি, আপনি নজর রাখেন। চালু হলেই আমাকে জানাবেন।
– কিন্তু যদি চালু না করে? ওই রাস্তার শতশত গাড়ির মধ্যে কোথায় খুঁজবে তাদের? তাছাড়া এই নাম্বারে জরুরি কিছু পাবে সেটাও তো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
– তা ঠিক বলেছেন। হতে পারে রবিউল নতুন করে কিছু করতে চাইছে আর সেজন্য হয়তো আমাদের সঙ্গে নতুন একটা নাটক করেছে।
– তাহলে?
সাজুর মোবাইলে ওয়েটিং এ আরেকটা কল এসে গেল। সাজু হাসানকে লাইনে রেখে কলটা রিসিভ করলেন,
– সাজু ভাই…
– কে? রবিউল?
– হ্যাঁ আমি। আপনাকে দুটো কথা বলার জন্য কল দিলাম ভাই।
– মিথ্যা কথা নাকি সত্যি কথা?
– আপনি আমার সঙ্গে রাগ করে থাকবেন না সাজু ভাই। আমি মিরপুরে একটা বাড়ির মধ্যে আটকা পড়ে গেছি। পুলিশ দুটো বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। ধরতে পারলে হয়তো মৃত্যু নিশ্চিত। মৃত্যুপথযাত্রী একটা মানুষের প্রতি রাগ করে থাকতে নেই।
– তুমি পুলিশের কাছে ধরা দাও। পালানোর কোনো চেষ্টা করো না তাহলে তো হবে তাই না?
– আমি আমাকে নিয়ে ভাবছি না সাজু ভাই। তবে আর মাত্র তিনটা খুন করার খুব ইচ্ছে ছিল আমার এটাই আফসোস তবে দুঃখ নয়।
– লতা কোথায়?
– লতাকে নেবার জন্যই আমি মিরপুরের এই বাড়ি এসেছি অনেক কষ্টে। কিন্তু আমি এখানে এসে তাকে পাইনি হয়তো আমি আসার কিছুক্ষণ আগে ওরা লতাকে মেরে লাশ নিয়ে চলে গেছে।
– কিহহহ? ও মাই গড।
– আমি এখনো জানি না সত্যি সত্যি লতাকে মেরেছে কিনা। তবে লতা ম্যাডাম যে রুমের মধ্যে ছিল সেখানে অনেক রক্তের দাগ। আর আপনার কাছে যে নাম্বারটা দিয়েছিলাম সেটা একটা বাটন মোবাইলে ছিল। মোবাইলটা লতা ম্যাডামের কাছে ছিল, সেই মোবাইলটা ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে আছে।
সাজু এবার অবাক হয়ে গেল। মোবাইল যদি সেই রুমে থাকে তাহলে সাজু কোন সিমের পিছনে পিছনে যাচ্ছে?
রবিউলের কলটা কেটে গেল। সাজু বারবার শুধু হ্যালো হ্যালো করতে লাগলো কিন্তু আর কিছু শোনা গেল না।
হাসান সাহেব আবারও কল দিলেন। সাজু কল রিসিভ করতেই তিনি বললেন,
– নাম্বার চালু করেছে, কুড়ল বিশ্বরোড পেরিয়ে সামনে যাচ্ছে। রাস্তায় জ্যাম আছে অনেক। সাজু আমরা কিন্তু একটা কাজ করতে পারি।
– কাজ করে লাভ নেই ভাই। আমার মনে হচ্ছে রবিউল ভুল নাম্বার দিয়েছে। কারণ সে লতাকে যে মোবাইল দিয়েছে সেটা নাকি লতার রুমে ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে আছে।
– রবিউল বলেছে?
– হ্যাঁ ভাই, তো সেই মোবাইল যদি রুমের মধ্যে হয় তাহলে এটা কিসের নাম্বার তাই না? হতে পারে একটা নাম্বার ভুল হয়ে গেছে।
– রবিউলের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখো সেখানে সিমকার্ড আছে নাকি?
– কল কেটে দিয়েছে, আবার কলব্যাক করলাম কিন্তু রিসিভ করে নাই। রবিউল মনে হয় আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ধরা পড়বে।
– তাই নাকি?
– হ্যাঁ, লতাকে যেখানে আটকে রেখেছিল সেখানে রবিউল পৌঁছে গেছে কিন্তু লতা নেই। রবিউলের ধারণা ওরা হয়তো তাকে খুন করেছে।
– সর্বনাশ।
– আমরা এখন একটা কাজ করতে পারি।
– কি কাজ?
– দ্রুত মিরপুরের ওই বাড়িতে চলে যাবো। রবিউল যেন কোনভাবে মারা না যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। রবিউল ছাড়া ওই দাদাজান ও তার সমস্ত খারাপ কাজের অস্তিত্ব খুঁজে বের করা কষ্টকর।
– ঠিক আছে আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি যে পুলিশ কোন বাড়িতে রেট দিয়েছে।
সাজু হতাশ হয়ে রাস্তার পাশে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতো এতো ঝামেলার সৃষ্টি হচ্ছে যে কিছু মাথায় নেয়া যাচ্ছে না। রবিউলের কথা যদি সত্যি হয়, লতা চৌধুরীকে যদি সত্যি সত্যি তারা খুন করে। তাহলে কি হবে? লতা খুন, রবিউল ও পুলিশের হাতে যাচ্ছে। মাঝখানে দাদাজান নামে সেই ভদ্রলোকের কিছুই হবে না?
অদ্ভুত! অবিশ্বাস্য ব্যাপার!
★★★
ছোট্ট একটা ঘটনা কেন্দ্র করে এতো পুলিশ এসে ভিড় করতো না। ছোট্ট ঘটনা বলার কারণ হচ্ছে বিষয়টা ঘোলাটে। দুজন লোক প্রবেশ করেছে সেখানে একজনকে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তাই বলে এতো এতো পুলিশ আসতো না।
তবে এই বিল্ডিংয়ে তৃতীয় তলায় একজন সরকারি চাকরিজীবী ভাড়া থাকেন। ৯৯৯ নাম্বারে কল দিয়ে কথা বলার পরে মালিকের স্ত্রী সেই ব্যক্তিকেও কল দিয়ে জানান। তাছাড়া ততক্ষণে হাসানের ফোনে রবিউলের নাম্বার পাওয়া গেছে। তাই আর বেশি পুলিশ আনা হয়েছে।
কিছু পুলিশ চলে গেছে লতা যে বিল্ডিং এ ছিল সেই বিল্ডিংয়ের মধ্যে। দারোয়ানের কাছে জিজ্ঞেস করে জানা যায় যে ওই ফ্ল্যাট ফাঁকা রয়েছে কারণ ওখানকার লোকগুলো কিছুক্ষণ আগে বের হয়ে গেছে।
কিন্তু তবুও পুলিশের দল লিফটে করে অষ্টমতলায় যেতে লাগলো। ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে যখন ভিতরে প্রবেশ করে তখন বেশ সতর্ক হয়ে যায় পুলিশ। হাবিবকে বারবার জিজ্ঞেস করেও জানা যায়নি এখানে কে আসছে আর তার উদ্দেশ্য কী?
কিন্তু হাবিব কিছুই বললো না।
পুরো ফ্ল্যাট খুঁজেও কাউকে পাওয়া গেল না। শুধুমাত্র দক্ষিণের বেলকনিতে জানালার গ্রীল কাটা আর পশ্চিমের রুমে আরেকটা জানালার গ্রীল কাটা হয়েছে। সুতরাং রবিউল এখান থেকে পালিয়ে গেছে।
|
|
সাজুর সঙ্গে কথা বলার সময় রবিউল ফ্ল্যাটের প্রতিটি রুমে হাঁটছিল। এখান থেকে বের হবার বিন্দু পরিমাণ সুযোগ যদি পাওয়া যায়। তাহলে কোনো বিলম্ব সে করবে না। অবশেষে খুব সুন্দর একটা পথ সে চোখের সামনে দেখতে পেল এবং সেজন্যই সাজুর কলটা কেটে দেয়।
ফ্ল্যাটের দক্ষিণ দিকের বিল্ডিং দিয়ে রবিউল এই বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেছে। মানে হলো, লতার যে বেলকনি সেটা হচ্ছে দক্ষিণে। লতার রুমটা থেকে বের হয়ে রবিউল পশ্চিম দিকের মাস্টারবেড রুমে গিয়ে দেখে সেখানে পশ্চিমে একটা জানালা আছে। রবিউল দ্রুত বেলকনি থেকে মেশিনটা নিয়ে এলো। ড্রইং রুম থেকে মাল্টিপ্লাগ খুঁজে নিয়ে সেটা দিয়ে মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ দিল। কারণ পাশের ছাদের সেই বৈদ্যুতিক তার সেখানেই সেভাবে ঝুলছে।
রবিউল খুব দ্রুত আবারও রড কাটতে লাগলো। সে জানে তার হাতে খুব অল্প সময় রয়েছে। কারণ যেকোনো মুহূর্তে এই পুলিশ ঢুকে পরবে ফ্ল্যাটে।
পশ্চিমের বিল্ডিংটা আট তলা। কাটার মেশিন টা সেখানেই রেখে দিয়ে রবিউল জানালা দিয়ে পাশের বিল্ডিংয়ের জানালার উপরে ৬” ইঞ্চি যে বিট থাকে সেখানে পা রাখলো। দুটো বিল্ডিংয়ের মধ্যে তিন ফিটের মতো ফাঁকা। বেশ সাবধান আর সতর্কতার সঙ্গে রবিউল বিটে পা রেখে রেখে উপরে উঠতে লাগলো। একবার তো হাত ফসকে পড়ে যাবার উপক্রম হলো। সর্বশেষ যখন ছাদের রেলিঙে হাত রাখলো তখন নিজের মধ্যে আলাদা একটা শক্তি অনুভব করলো।
ছাদে উঠে রবিউল বেশ হাঁপাতে লাগলো। এ যাত্রায় অনেক বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেল। কিন্তু এখনো তার বিপদ আছে, এই বিল্ডিং থেকে এখন বের হতে হবে। পুলিশ অবশ্য দুটো বিল্ডিং হয়তো ঘিরেছে, পশ্চিমের এই বিল্ডিংটা তারা হয়তো আপাতত তালিকার বাইরে রাখবে। তবে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে যখন ওই জানালার গ্রীল কাটা দেখবে তখন ঠিকই এটাও সীল করবে।
কিন্তু তার আগেই তাকে বের হতে হবে। ভরসার ব্যাপার হচ্ছে মেকআপ করে নিজেকে বদলে ফেলার জন্য তাকে রবিউল বলে চেনা যাচ্ছে না।
★★★
থমথমে অবস্থায় সামনাসামনি বসে আছে লতার বাবা ও দাদাজান সাইদুর রহমান। দাদাজানের হাতে বিশাল একটা ফাইল, লতার সমস্ত সম্পত্তির যাবতীয় কাগজপত্র।
নতুন করে তৈরি করা এই কাগজে স্বাক্ষর লাগবে লতা চৌধুরীর। সবকিছু আগে থেকে যোগাড় করে রেখেছিলেন দাদাজান। কিন্তু তার পরিকল্পনা ছিল লতা মারা গেলে তার বাবাকে নিজের হাতে রেখে আস্তে আস্তে সবকিছু দখল নিবেন৷
তবে রবিউল মাঝখানে ফিরোজদের খুন করতে গিয়ে সবকিছু উল্টাপাল্টা করে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে এখন সেই কাগজপত্র নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে এসেছেন দাদাজান।
পুলিশের কাছে শুনেছেন যে রবিউলকে মিরপুরের একটা বাড়িতে দেখা গেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পুলিশ সেখানে কি কি করছে তার প্রতিটি খবর পাঁচ মিনিট পরপর পেয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বৃদ্ধ এসিস্টেন্টকে দিয়ে লতাকে ঠিক সময়ে বের করে দিয়েছেন। নিজের বুদ্ধির প্রশংসা নিজেই করলেন মনে মনে। নাহলে রবিউল এতক্ষণে লতা চৌধুরীর কাছে পৌঁছে যেত৷ আরেকটা ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারতো।
রবিউল কখন ধরা পড়ে সেই খবরটা শোনার জন্য দাদাজান অপেক্ষা করছেন। হাবিব রবিউলের সঙ্গে ছিল এটা একটু ভাবাচ্ছে তাকে। রবিউলের পালানোর বিষয় এখন মোটামুটি বুঝতে পেরেছে। নাহলে বিকেলে রবিউল কীভাবে পালালো সেই চিন্তা তার মগজে ছিল।
লতার বাবা বললো,
– লতা যদি স্বাক্ষর করতে রাজি না হয় তাহলে কী করবেন তখন?
– জোর করে করাতে হবে। পুঁচকে মেয়েকে নিয়ে এভাবে সাপের খেলা আর ভালো লাগে না। যদি রবিউল ধরা পড়ে তাহলে আমি দেশে থাকবো, নাহলে লতার স্বাক্ষর নিয়ে আমি কদিন বাহিরে চলে যাবো।
– আপনি বিদেশে গেলে আমরা কী করবো?
– বাসায় থাকবে, আর রবিউলকে পুলিশ খুঁজে বের করবেই৷ যতদিন তাকে পাওয়া না যাবে ততদিন দেশের বাহিরে থাকবো।
– কিন্তু এরমধ্যে যদি রবিউল আমাদের কিছু করে তাহলে কী হবে?
– হাহাহা।
– হাসছেন কেন? আর লতাকে কী করবেন?
– স্বাক্ষর নিয়ে তাকে মেরে ফেলা হবে। ও বেঁচে থাকলে আমাদের সকলের গলায় রশি ঝুলবে৷ রবিউলের হাতে না মরলেও লতার কারণে তখন আইনের কাছে মরতে হবে।
– ইসস মেয়েটা কতো আদর করে বাবা ডাকতো।
– এতো দরদ কেন? সে কি তোমার নিজের মেয়ে নাকি যে মায়া হচ্ছে।
– তবুও বাবা বলে তো ডাকতো সবসময়।
– জীবন নিয়ে টানাটানি আর উনি মায়া প্রকাশ করে।
– লতা এখন কোথায়?
– গাজীপুরে নিয়ে যাচ্ছে ওকে। আমিও এখন সেই মায়াজালে যাচ্ছি। যা করার ওখানেই করবো।
★★★
লতাদের গাড়ি এখন টঙ্গী স্টেশন রোড দিয়ে ভিতরের দিকে যাচ্ছে। বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট ইতিমধ্যে নেশাগ্রস্থ হয়ে গেছে। তার ইচ্ছে করছে এখনই লতার উপর ঝাপিয়ে পড়তে। কিন্তু নেশা করলেও এখন পর্যন্ত নিজের জ্ঞান আছে যে এখানে কোনো কিছু করা যাবে না।
লতার নিস্তব্ধ দেহটা গাড়ির ঝাঁকুনিতে মাঝে মাঝে কাঁপছে। আশেপাশের কোনকিছুর হুঁশ জ্ঞান তার মধ্যে নেই।
গাড়ি থেমে থেমে চলছে। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে আর কতক্ষণ লাগতে পারে সেই আইডিয়া করে নিলেন বৃদ্ধ। তারপর ফার্মেসি থেকে কিনে আনা সেই ওষুধটা খেয়ে নিলেন।
একটু আগে তাকে দাদাজান কল দিয়ে বলেছেন যে তিনি নাকি রাতের মধ্যে মায়াজালে আসবেন। সুতরাং নিজের মনের ইচ্ছে দাদাজান আসার আগেই পূরণ করতে চায় বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট। দাদাজান এলে তখন আবার নতুন কোন ঝামেলা সৃষ্টি হয় কে জানে?
আর লতা তো অজ্ঞান। তাকে এখন গলা কেটে দিলেও সে টের পাবে না। সুতরাং শুধু মায়াজালে পৌছানোর অপেক্ষা করতে লাগলো বৃদ্ধ।
চলবে…
লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।