#চাদর_জড়ানো_চিরকুট
#পর্বঃ- ১৮
ছাদ থেকে পাশের কোনো বিল্ডিংয়ে যাবার চিন্তা করতে লাগলো রবিউল। কারণ এই বিল্ডিংয়ের নিচে গিয়ে যদি বের হতে বিলম্ব হয় ততক্ষণে তো পুলিশ জেনে যাবে সে এখানে। কিন্তু যদি পাশের কোনো বিল্ডিংয়ে যেতে পারে তাহলে তো রবিউল কিছুটা সময় পাবে এখান থেকে বের হবার জন্য।
রবিউলের এখন সম্বল শুধু একটা পিস্তল আর তার নিজের পকেটের মোবাইল। রবিউল প্রথমে নিজের মোবাইল বের করলো। তারপর সেখানে সাজু ভাইয়ের বেশ কিছু কল দেখে রবিউল কি যেন মনে করে কলব্যাক করলো,
সাজু ভাই আর হাসান তখন একসঙ্গে ছিল। তারা এদিকেই আসছেন। হাসান সাহেব যখন বের হবেন তখন সাজু ভাই তাকে কল দিয়ে বললো,
– ভাই আপনি কি বের হয়েছেন?
– না এখনই বের হবো, তুমি কোই?
– বের হবার আগে ওই নাম্বারটা ট্রাকিং করার জন্য কাউকে রেখে আসা যায় না ভাই?
– হ্যাঁ যায়, কিন্তু তুমি তো বললে।
– ভাই পরে ওটা কাজে লাগতেও তো পারে।
– ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করছি।
তারপর হাসান সাহেব একটা জুনিয়র ছেলেকে সেখানে দায়িত্ব দিয়ে এসেছে। সাজু তার পকেট থেকে মোবাইল বের করলো। বাইক দাঁড় করিয়ে রবিউলের সঙ্গে কথা বলতে লাগলো,
– সাজু ভাই আপনি কি কল দিয়েছিলেন?
– হ্যাঁ, তুমি কি এখনো পুলিশের নাগালের বাইরে?
– আমি ওই বিল্ডিং থেকে পালিয়ে এসেছি। আর কিছু বলবেন?
– লতার যে নাম্বারটা তুমি আমার কাছে দিয়েছ সেই সিমটা এখন কোথায়?
– জানি না আমি। মোবাইলে একটা মেমোরি কার্ড ছিল সেটা আছে কিন্তু সিমটা পাইনি। কেন কি হয়েছে?
– তারমানে লতার বাবার নতুন এসিস্ট্যান্ট সেই সিম সঙ্গে করে নিয়ে গেছে?
– মানে?
– সেই নাম্বার অনেকক্ষণ আগেই চালু করা হয়েছে আর আমি সেটা ফলো করেছিলাম। কিন্তু তুমি যখন বললে যে ওই মোবাইল ভেঙ্গে ফেলেছে। তখন ভাবলাম যে হয়তো ভুল নাম্বার ছিল।
– সেটা কোনদিকে গেছে?
দুই মিনিট আগেই হাসান সাহেব লাস্ট আপডেট জেনেছেন যে সেই নাম্বারটা পুবাইলের দিকে যাচ্ছে। সাজু ভাই সেটাই বললো,
– টঙ্গী স্টেশন রোড দিয়ে পুবাইল যাচ্ছে।
রবিউল তখন আস্তে করে বললো,
– কু.ত্তা.র/বা.চ্চা.রা তোরা থাক তাহলে। আমি আসিতেছি মায়াজাল।
আর কিছু না বলে রবিউল কল কেটে দিল। কিন্তু সাজু বারবার হ্যালো হ্যালো করতে লাগলো তবু কিছু শোনা গেল না।
হাসান বললো,
– কি হয়েছে সাজু?
– রবিউল ওই বিল্ডিং থেকে পালিয়ে গেছে।
– জানতাম সে পালাবে, ওকে জব্দ করা এতটা সহজ নয়। এমনি এমনি তো আর ক্রসফায়ারের হুকুম আসেনি তাই না? আটকে রাখা যাবে না তাই দেখা মাত্র গুলি করতে বলা হয়েছে।
সাজু তার মোবাইল বের করে ডাটা চালু করলো। তারপর গুগলে সার্চ করে গাজীপুরের মায়াজাল খুঁজতে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গে গুগল তাকে জানিয়ে দিল যে মায়াজাল নামের একটা পিকনিক স্পট আছে গাজীপুরের পুবাইলে।
সাজু তাড়াতাড়ি সেই পিকনিক স্পটের ঠিকানা দেখে নিল। এরপর মোবাইল পকেটে নিতে নিতে সে বাইক ঘুরিয়ে দিল।
হাসান বললো,
– কোথায় যাচ্ছি আমরা?
– পুবাইলে, আপনার সঙ্গে পিস্তল আছে?
– হ্যাঁ আছে।
– আপনি অফিসে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেন সেই নাম্বারটা কোন যায়গা এখন। আমরা এখন সেই নাম্বার ধরতে যাবো। লতা সেখানে আছে।
– বলো কী?
– হ্যাঁ ভাই ঠিকই বলছি। লতাকে ওরা এখান থেকে গাজীপুর নিয়ে গেছে সম্ভবত। আপনিও আমার সঙ্গে চলেন, রবিউল এখর সম্ভবত সেখানেই যাবে। বিশাল গন্ডগোল হতে পারে, আবারও খুন হবে এটা নিশ্চিত।
– তাহলে আমরা কী ব্যাকআপ টিপ নিয়ে সেখানে যাবো? সেটা ভালো হয় না?
– আপনি তৈরি থাকতে বলেন। কিন্তু আপাতত আমাদের যেতে হবে, নাহলে তারা যদি টের পেয়ে যায় তবে সটকে পড়তে পারে।
– হুম বুঝলাম।
আর কোনো কথা না বলে সাজু ভাই সামনের দিকে তাকিয়ে বাইক চালাতে লাগলো। একটু পর পর হাসানকে কল দিচ্ছে তার সেই জুনিয়র ছেলেটা।
এদিকে রবিউল ছাদের এক কোনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ এইমাত্র কাছেই একটা মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে।
” সন্ত্রাসী রবিউল ইসলাম মিরপুরের এই এলাকায় রয়েছে। ইতিমধ্যে সে দুটো বিল্ডিং পার হয়ে চলে গেছে। সবাই যেন সতর্ক থাকে। প্রতিটি বাড়ির সদস্য ও দারোয়ান যেন সতর্ক থাকে। ”
★★★
লতাকে নিয়ে সবার আগে বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট মায়াজালে পৌঁছাল। গাড়ি সরাসরি ভিআইপি যে রুম গুলো রয়েছে সেখানে গেল। এসিস্ট্যান্ট গাড়ি থেকে নেমেই গরগর করে বমি করে দিলেন।
বিদেশি মাদ তার উপর আবার ওষুধ খেয়ে তার পেট সহ্য করতে পারেনি। বমি করতে করতে তিনি তার সঙ্গীদের নির্দেশ দিলেন লতাকে নিয়ে ভিতরে চলে যাবার জন্য। ওরা দুজন মিলে লতাকে ধরে ভিতরে নিয়ে গেল। এখানকার কেয়ারটেকার তো সবকিছু দেখে অবাক হয়ে গেছে।
লতাকে রুমের মধ্যে বিছানায় রেখে লোক দুটো বাহিরে এলেন। বৃদ্ধ এখনো সেখানেই বসে আছে।
দুজনের মধ্যে একজন বললো,
– মরার সময় হয়ে গেছে আর সেই বয়সে মেয়ের বয়সী মেয়ের দিকে তাকায়।
দ্বিতীয়জন বললো,
– স্বভাব কোনদিন ভালো হয় নাকি?
– এসব বাদ দাও, দাদাজান আসতেছে তাই তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আশেপাশে একটা চক্কর দিয়ে আসা দরকার, কখন কোনদিকে চলে যেতে হবে কে জানে।
|
দাদাজান সাইদুর রহমান টুকু যখন মায়াজালে এসে উপস্থিত হলেন তখন বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট একটা রুমের মধ্যে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।
দাদাজান গেইট দিয়ে ঢুকেই একজনকে বললো,
– রাজ্জাক কোথায়?
বৃদ্ধ এসিস্টেন্টের আসল নাম রাজ্জাক। যদিও তার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার জন্য সেখানে অফিসে সবাই অন্য নামে চিনে। কিন্তু দাদাজান তাকে রাজ্জাক বলে ডাকে।
ইসলামিক সুন্দর নাম আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু তার সকল কর্মকান্ড যেন তার নামটা সারাজীবন ধরে অপমান করেছে।
– রাজ্জাক ভাই তো দুর্বল হয়ে শুয়ে আছে।
– হারামজাদারে বলেছিলাম একটু ধৈর্য ধরতে। আমি মরি টেনশনে আর সে আছে আমোদফূর্তি নিয়ে।
দরজা ধাক্কা দিয়ে রাজ্জাকের রুমের মধ্যে গিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
– কি হয়েছে তোমার?
– দাদাজান, বিদেশি একটা জিনিস খেয়ে পেটে আর সহ্য হলো না। প্রেশার বেড়ে গেছে।
– রবিউল পালিয়ে গেছে সেই বিল্ডিং থেকে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে সে ওই বিল্ডিংয়ে কথা কীভাবে জানতে পেরেছে?
– হাবিব বলেছে মনে হয়।
– হাবিব জানতো নাকি? তুমি আর তোমার সঙ্গে যারা ছিল এরা ছাড়া আর কেউ জানতো না।
– তাহলে কীভাবে সম্ভব?
– লতার কাছে মোবাইল ছিল?
– একটা বাটন মোবাইল ছিল কিন্তু সেটা বন্ধ।
– কোথায় সেই মোবাইল?
– মোবাইল ভেঙ্গে ফেলেছি। তবে সেই মোবাইল দিয়ে সিম বের করে এনেছি।
– লতার কাছে বাটন মোবাইল কীভাবে এলো?
কথা বলতে বলতে তারা দুজনেই লতার রুমে এসে দাঁড়ালো। লতাকে বিছানায় সুন্দর করে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধ এসিস্টেন্ট রাজ্জাক সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তিনি বুঝতে পেরেছে তার ইচ্ছে আর পূরণ হবে না। এমনিতেই শরীর খুব অসুস্থ হয়ে গেছে, তাছাড়া দাদাজান এখন চলে এসেছে। তিনি তার কাজ শেষ করে লতাকে কী করবে কে জানে।
রাজ্জাক বললো,
– আমি জানি না, তবে একটা পুলিশ বলেছিল যে রবিউল যখন গ্রেফতার হয় তখন নাকি রবিউল লতাকে কিছু একটা দিয়েছে।
– তারমানে এই মোবাইল রবিউলের ছিল। একটা মেয়ে তার রুমে বসে রবিউলের কাছে কল দিয়ে ঠিকানা দিলো আর তোমরা টের পেলে না?
রাজ্জাক চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
– সেই সিমটা কোথায়?
– রতনের মোবাইলে চালু করা আছে। আমি সেই মিরপুর থেকে বের হয়ে অন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কল আসেনি। যদি রবিউল মোবাইল দিয়ে থাকে, আর সে যদি পুলিশের নাগালের বাইরে থাকে। তাহলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই লতার কাছে একবার হলেও কল দিত তাই না?
রাজ্জাকের কথায় যুক্তি আছে। কারণ লতার কাছ থেকে খবর নিতে নিশ্চয়ই রবিউল কল দিত। রবিউল যখন সেই বাসায় গিয়ে লতাকে পেল না তখন তো কল দেবার কথা।
– রতনকে ডাকো, মোবাইলটা নিয়ে আসো।
যে লোকটার মোবাইলে সিম চালু করা তার কাছ থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দাদাজান নাম্বার চেক করলেন। সিমটা অপরিচিত। তারপর তিনি উপরে একটা আনসিন মেসেজ নোটিফিকেশন দেখতে পেলেন। সেই মেসেজ সিন করে সেখানে শুধু তিনটা … দেখতে পলেন।
দাদাজান সঙ্গে সঙ্গে যে নাম্বার দিয়ে মেসেজ এসেছে সেই নাম্বারটা তার মোবাইলে তুলতে লাগলো। একটু পরে দেখলেন তার মোবাইলের স্ক্রিনে ” সাজু ” নামটা ভেসে উঠেছে।
সাজু সাহেব!
তারমানে এই নাম্বার সাজুর কাছেও রয়েছে। কিন্তু কীভাবে? লতা কি তাহলে সাজুকেও কল দিয়ে কথা বলেছিল নাকি। আর এরকম মেসেজ কেন পাঠানো হয়েছে সেটাই তো বোঝা যাচ্ছে না।
দাদাজান তাড়াতাড়ি করে সিমটা বন্ধ করে দিল। তারপর রাজ্জাকের দিকে তাকিয়ে বললো,
– এর জ্ঞান ফিরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর বাহিরে যারা আছে তাদের বলো চারিদিকে ভালো করে নজর রাখতে।
কিছুক্ষণ পর তার মোবাইল এক পুলিশ সদস্যের কল এলো। দাদাজান রিসিভ করতেই সেই পুলিশ সদস্য বললেন,
– রবিউলের গুলি লেগেছে, কিন্তু তবুও পালিয়ে গেছে। আমাদের দুজন পুলিশের পায়ে গুলি করে আহত করে সে পালিয়ে গেছে। কিন্তু ওর শরীর দুটো গুলি লেগেছে।
★★★
সাজু ভাই আর হাসান সাহেব মায়াজালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এখন নিস্তব্ধ রাত, তাছাড়া এটা একদম গ্রামাঞ্চল তাই সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে চারিদিকে। মীরার বাজার পার হয়ে সামনে এসে কলেজ গেট নামে একটা ছোট্ট বাজার। সেই বাজার থেকে বামদিকে ছোট্ট একটা রাস্তা দিয়ে চলে এসেছে তারা। এখানে বেশ কিছু শুটিংয়ের স্থান রয়েছে। ডাক্তার বাড়ি, হাসনাহেনা ইত্যাদি আরও বেশ কিছু শুটিং স্পট আছে।
অফিস থেকে জানানো হয়েছে যে ওই নাম্বারটা এই মায়াজালে এসেই থেমেছে। নাম্বারটা এখানেই অনেকক্ষণ স্থির ছিল, একটু টুকটাক নড়াচড়া করেছে কিন্তু বেশি নয়। তারপর কুড়ি মিনিট আগে নাম্বারটা বন্ধ হয়ে গেছে।
এখন চিন্তার বিষয় হচ্ছে এরা যদি বুঝতে পেরে যায় তাহলে কাজটা কঠিন হবে। কিন্তু যদি না বুঝে বন্ধ করে তাহলে তো সমস্যা নেই। বুঝতে পারলে তারা সতর্ক হয়ে যাবে, লতাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবারও সম্ভাবনা আছে।
হাসান বললো,
– সরাসরি বাড়ির ভিতরে যাবে নাকি পিছন থেকে গোপনে প্রবেশ করবে?
– আমার মনে হয় গোপনে প্রবেশ করা ভালো হবে কারণ আমরা তো মাত্র দুজন। কিন্তু ভিতরে তারা কতজন আছে কে জানে ভাই?
– কিন্তু বাইক কি করবে? দেখা গেল আমরা দুজন পিছনে গেলাম আর এদিকে চোর এসে বাইক নিয়ে চলে গেল।
– চলেন কোথাও লুকিয়ে রাখি।
বাউন্ডারির কাছ ঘেঁষে দুজন মিলে পিছনের দিকে যেতে লাগলো। পিছনে হচ্ছে ফসলের মাঠ। সেই মাঠের কাছ থেকে একটু উঁচু স্থান দেখে সাজু ভিতরে উঁকি দিলেন। ছোট ছোট কিছু ঘর চোখে পড়েছে। সাজু ভাই এগুলো দেখে বুঝতে পেরেছে এর সবগুলোই শুটিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।
তারা দুজনেই দেয়াল টপকে ভিতরে এলো। হাসান সাহেব বললো,
– এগুলো কিসের ঘর? পিকনিক স্পটের মধ্যে এগুলো দিয়ে কী করে?
সাজু বললো,
– এগুলো বিভিন্ন নাটকে সিনেমার মধ্যে বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমি সাইফুল ভাইয়ের সঙ্গে একবার পূর্বাচলে গেছিলাম তখন সেখানে এরকম দেখেছি।
– সাইফুল ইসলাম কে?
– সাজু ভাই সিরিজের সবগুলো গল্প যিনি লিখেন তার নাম সাইফুল ইসলাম। আপনি তো গল্প পড়েন না, জানবেন কীভাবে?
– তাও ঠিক, সারাদিন থাকি মামলা নিয়ে তাই মামলার রহস্য পড়বো কখন?
– এসব ঘরে কোনো মানুষ থাকে না। সামনের দিকে এগিয়ে চলেন সেখানে ভালো রুম আছে।
সাজু ভাই এখানে আসার আগে গুগল থেকে এই রিসোর্টের বিভিন্ন পিকচার দেখেছেন। কারণ তিনি জানেন যে এসব রিসোর্টের প্রচারের জন্য তারা সম্পুর্ণ রিসোর্টের ভিতরের সবকিছু ছবি তুলে গুগলে পোস্ট করে রাখে। সাজু সেখান থেকেই মোটামুটি অনেক কিছু ধারণা করে এসেছে। একটা সুইমিং পুল আছে। ছোট্ট একটা পুকুর আছে আর সেই পুকুরের সামনে আছে বেশ কিছু ভিআইপি রুম।
এমন সময় কারো পায়ের শব্দ পাওয়া গেল। সাজু ও হাসান দুজনেই একসঙ্গে লুকিয়ে পড়লো। একটা লোক এসে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। তার হাতে পিস্তল দেখতে পেয়েছে সাজু ভাই। রিসোর্টের সবজায়গায় বাতি জ্বলছে। তাই তাদের চোখে ফাঁকি দিয়ে একদম ভিতরে প্রবেশ করা খুব কষ্টকর হবে।
লোকটা কিন্তু যাচ্ছে না। সেভাবেই দু পা সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাজু ভাই ফিসফিস করে বললো,
– পিস্তলটা কোই?
– তুমি কি গুলি করবে?
– না, গুলি করলে শব্দ হবে। তখন সবাই ছুটে আসবে। আমি অন্য কিছু করতে চাই আপনি ওটা দেন আমার কাছে। আর পুলিশ ব্যাকআপ টিম তৈরি থাকতে বলেন। তারা যেন আশেপাশে এসে অবস্থান গ্রহণ করে। ভিতরে লতা কীভাবে আছে সেটা না জেনে সরাসরি আক্রমণ করবো না।
হাসান পিস্তল বের করে দিল। সাজু বললো,
– আপনি এখানেই দাঁড়ান আমি যাচ্ছি।
হাসান তাকে আটকালো না। সাজু ছোট ঘরগুলো থেকে পিছনে ঘুরে ঘুরে সেই লোকটার একদম কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালো। আরেকটু নজর দিয়ে অপেক্ষা করছে সাজু। লোকটাকে ধরার পড়ে কেউ ছুটে আসে কিনা সেজন্য।
সাজু এবার দ্রুত লোকটার পিছনে গিয়ে পিস্তল ঠেকালো লোকটার পিঠে। লোকটা ঘুরে তাকানোর আগেই সাজু ওই লোকটার হাত দিয়ে পিস্তলটা কেড়ে নিল। তবে একটা সমস্যা হয়ে গেছে।
লোকটা রাজ্জাক ভাই বলে একটা চিৎকার করেছে।
সাজু হাসানকে বের হতে বললো। হাসান তার আগেই চলে এসেছে। লোকটার কানের কাছে সাজু ভাই বললেন,
– ঘাড় ভেঙ্গে মেরে ফেলবো, কোনো শব্দ করবি না। যা জিজ্ঞেস করি উত্তর দে।
নিরস্ত্র লোকটা চুপ হয়ে গেল। সাজু তখন বললো,
– লতা চৌধুরী কোথায়?
লোকটা বললো,
– এখানেই ছিল, কিন্তু আধা ঘণ্টা আগে দাদাজান তাকে নিয়ে চলে গেছে। আমাদের বলেছে এখানে পাহারা দিতে।
★★★
প্রায় দু ঘন্টা আগে রবিউল সেই পশ্চিমের বিল্ডিং থেকে সাবরিনার কাছে কল দিয়ে বলেছিল তার জন্য একটা এম্বুলেন্স পাঠাতে। রবিউল তখন সুস্থ ছিল, কিন্তু সে ভেবেছিল ওখান থেকে বের হয়ে এম্বুলেন্স ব্যবহার করে মায়াজাল যাবে। কিন্তু তার আগেই গুলিতে আহত হয়। আহত হলেও সে বের হতে পেরেছে। রাস্তার পাশের নর্দমার মধ্য দিয়ে রবিউল অনেকটা ঘুরে তারপর বের হয়েছে।
সাবরিনার একজন বিশ্বস্ত ড্রাইভার তাকে নিয়ে যেতে এসেছে। ময়লাযুক্ত সেই কাপড়চোপড় অবস্থায় সে এম্বুলেন্সের মধ্যে বসে আছে। গুলির আঘাতের তীব্র যন্ত্রণায় তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সাবরিনা। রবিউল আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উপরের দিকে। সাবরিনা রবিউলের হাত শক্ত করে ধরে আছে। রবিউল আস্তে আস্তে বললো,
– আমি যদি মারা যাই তাহলে আমার গ্রামের বাড়িতে আমার কবরের ব্যবস্থা করবে।
চলবে….
মোঃ সাইফুল ইসলাম।