#চিরসাথী_তুমি_আমার – পর্ব ২০,২১
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
২০
“তোকে যদি কেও পিছন থেকে ধাক্কা দেয় তাহলে কি হবে?”
কথাটা শুনে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো আমার। সায়নের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তার গায়ে থাকা সোয়েটার খাম’চে ধরলাম। সায়ন কানে বলল, “যাবি ওখানে?”
আমি সাফ সাফ বলে দিলাম, “কালকে আপনাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমার জন্য। কোলে করে কতটা পথ হেটেছেন। আজকে আবার এমন কিছু হবেনা তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে?”
সায়ন আমার হাতটা ধরে বলে, “তুই আমার স্ত্রী সাথী। ধর দিনের পর দিন আমি অসুস্থ হয়ে আছি। প্রথমদিন সেবা করে পরদিন আমাকে বোঝা মনে করবি?”
“না না, এটা কি বলছেন আপনি! আপনি কখনো আমার কাছে বোঝা হবেন কেন সায়ন! তাছাড়া ওটার সাথে এটার কেন তুলনা দিচ্ছেন?”
সায়ন এবার হাসি মুখে শূন্যে তাকিয়ে বলল,”তাহলে তোমার জন্য কেন আমি একটু কষ্ট করতে পারবোনা?”
“আপনি প্লিজ তুমি করে কথা বলবেন না।”
সায়ন বলল, “আশ্চর্য! তুমি বললে ক্ষতি কি! তুই বললে তো সবাই বোন ভাবে। এখন থেকে ভাবছি তুমিই বলবো।”
আমি করুণ চোখে সায়নের দিকে তাকিয়ে বলি, “প্লিজ সায়ন আপনি আমাকে ‘তুমি’ বলবেন না। আপনার মুখে তুমি শুনলে আমার কেমন কেমন যেন হয়!”
“কেমন হয়, রোমান্টিক ফিল আসে? রাস্তা না হলে তো তোর কথা রাখা যেতো। সমস্যা নেই আগে লাচুং পৌঁছে নেয় সেখানে রোমান্স করা যাবে। এমনিতেই রোমান্স করা লাগবে বেশীবেশী, যে শীত ওখানে!”
আমি কিছু বলবো তার আগেই সুমনদা আর দিপা উপস্থিত। সুমনদা সায়নকে বলল,”দেরি করা ঠিক হবেনা, চলো। তাড়াতাড়ি ব্যাক করতে হবে।”
বুঝলাম সায়ন আগে থেকেই প্লান করে রেখেছে নিচে যাওয়ার। এই লোকটা আমার মনের ব্যক্তব্য কেন শুনে নেয় বারংবার। না না শোনে না, শুনলে বুঝতো আমি তাকে কতটা ভালোবাসি।
চারজন মিলে রাস্তার ধার ঘেঁষে নেমে যাওয়া পথ ধরে নামতে লাগলাম। পথটা আগের বারের মত অতোটা বেশী ঢালু না। তাই খুব একটা সমস্যা হলোনা নিচে নামতে। সায়নের হাত ছেড়ে নদীর দিকে ধেয়ে গেলাম। পিছন থেকে সায়নের কর্কশ আওয়াজ, ” এবার যদি পায়ে কিছু হয় তো এখানেই ফেলে যাবো বলে দিলাম।”
এই কথার কোনো গুরুত্বই নেই আমার কাছে। সায়ন নাকি ফেলে যাবে, তাও আমাকে!
আমি একটা পাথরের উপর বসতে যাবে তার আগেই সায়ন এসে আমার হাত ধরে নিলো। ধমক দিয়ে বলল, “ভিজে জায়গায় বসতে যাস কেন? পাগল-টাগল হয়ে গেছিস নাকি। কাপড় ভিজে যাবে।”
সুমনদা আর দিপা এগিয়ে এসে আমাদের কাছাকাছি দাড়ালো। সুমনদা বলল, “ওকে ওর মত থাকতে, ইনজয় করতে দাও সায়ন দা।
দিপা বলল, “সায়ন দা একটা কথা বলো তো, তুমি ওকে ‘তুই’ বলো কেন? আমরা তো সমবয়সী তাও তো ‘তুই’ বলিনা একে অপরকে।”
সায়ন উত্তর দিলো, “তুই বললে ওকে আমার সবচেয়ে আপন মনে হয়। তুমি বলার চেষ্টা করেছি তবে নিজের কাছেই অন্যরকম লাগে। আমি যখন ওকে ‘তুই’ বলি মনে হয় আমি পূর্ণ হয়ে গেছি। ও যেন আমার সবচেয়ে আপনজন।”
দিপা সুমনদাকে তিরস্কার করতে করতে বলল, “মাত্র কয়দিনের বিয়ে এদের, কিন্তু দেখেছো সায়নদা সাথীকে কতটা ভালোবাসে! তোমার মুখ থেকে ভালোবাসার কোনো কথায় শুনতে পাইনে কোনোদিন।”
আমি সায়নের দিকে তাকালাম। সায়ন আমাকে ভালোবাসে এই কথাটার প্রতিক্রিয়ায় সায়ন একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলো দিপাকে। আমি সায়নের হাত ধরে টান দিলাম। সায়ন আমার দিকে একটু ঝুকে গেলো। আমি বললাম, “চলুন না পানিতে পা ভিজাই। অনেক ভালো লাগবে।”
“না, এসব পানিতে একদম না। এখানে বিপদ হলে আমি একা তোকে সামলাতে পারবোনা। ঠান্ডা জ্বর আসলে কিন্তু ধরে আ’ছাড় মারবো আমি।”
আমি রাগ দেখিয়ে বলি, “আমার কিন্তু জেদ হয়ে যাচ্ছে! কেমনে আছাড় দিতে পারেন সেটা দেখার জন্য হলেও কিন্তু আমি পানিতে নামবো!”
সায়ন আর কথা বলেনা। আমি নিজেই একটার পর একটা পাথরের উপর দিয়ে অনেকটা ভিতরে চলে আসি নদীর। কিন্তু এরপর যা ঘটলো সেটা আমার চিন্তারও বাইরে ছিলো। চিৎকার করে উঠি আমি, এরপর ধপাস করে পানিতে পড়ে যাই। আশপাশের কিছুই আর দেখতে পাইনি, সাতার জানা সত্ত্বেও নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না আমি। হাবুডুবু খেতে খেতে স্রোতের সাতে চলতে থাকি। একবার ইচ্ছা হচ্ছিলো সায়নকে বলি আপনার মুখের ভালোবাসি না শুনেই মনে হয় ম’রতে হবে। কিন্তু না, বিধাতা আমার মৃত্যু লেখেনি। হাবুডুবু খেতে খেতে সামনে একটা বড় পাথরে চোখে পড়লো। কোনোরকমে পাথরটা ধরতে যাই আমি। কিন্তু সেখানে আরও এক বিপত্তি ছিলো। স্রোতে কারণে পাথরে আমার চোয়ালের ধাক্কা লাগে। হাত আলগা হতে আসে আবার। সত্যিই, এবার আর রক্ষা নেই মনে হলো। কিন্তু আমার ধারণা আবারও ভুল হলো, সায়ন ততক্ষণে ভাসতে ভাসতে চলে এসেছে আমার কাছে।
ডাঙ্গায় তুলে আমার গালে আলতো থাবা দিয়ে সায়ন ডাকছে। আমার অবস্থা বেশি খারাপ লাগছিলো না, তবে অনেক পানি খেয়ে ফেলেছি। জ্ঞান হারানোর মতকিছুই হয়নি। সুমনদাকে দেখলাম আমাদের ব্যাগটা উপর থেকে নিয়ে এসেছে। সায়ন ব্যাগটা সুমনদার হাত থেকে নিয়ে তাকে ধন্যবাদ দিলো। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো আমার কাপড় পালটানো নিয়ে। আশে পাশে কোনো বাড়িঘর কিংবা ঝোপঝাড় নেই যে নিজেকে ঢেকে কাপড় পাল্টাবো, এনার্জিও নেই। সায়ন গা থেকে খুলে নিলো ভিজা সোয়েটারটা। এরপর সুমনদা আর দিপা অনেকটা দূরে চলে গেলো। টাওয়াল দিয়ে আমার জামার ভিতর মুছিয়ে দিলো। ভিজে পোশাকের উপর তার পাশে রাখা শুকনা কোটটা পরিয়ে দিলো যাতে কারো সামনে যেতে লজ্জা না পাই।
সায়ন আমাকে আগলে নিয়ে সামনে যাচ্ছে আর বলছে, “বলেছিলাম তোকে, এতো বাড়াবাড়ি না করতে। আজকে খুব বড় বেচেছিস। একটুখানি আগের ঘটনা ভাবলেও আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে ভয়ে।”
আমি এবার সায়নের দিকে তাকালাম। ভিজে গেঞ্জি গায়ে দিয়ে আছে, প্রচন্ড কাপছে সে, ঠান্ডা যে একেবারেই পছন্দ না আমার মানুষটার। আমার জন্য কতই না কষ্ট করলো লোকটা।
করবেই তো, বউ না আমি তার!
আমি আলতো কন্ঠে বললাম, ” আমার কিছু হলে তো আপনি আছেনই আমাকে সাহায্য করার জন্য। তাই এখন আর নিজেকে নিয়ে কোনো চিন্তা হয়না।”
সায়ন আমাকে সামনে দাড় করিয়ে বলল,”আজকের পর থেকে তোর ইচ্ছামত কিছুই হবেনা দেখিস। আমার কথার বাইরে এক পাও ফেললে তোর পায়ে দড়ি দিয়ে বেধে রাখবো।”
“এখানে আসার কথা আমি কিন্তু বলিনি। আপনিই নিচে এনেছেন আমাকে।”
আচমকা সায়ন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “শুধু ভালোবাসি বললেই কি ভালোবাসা হয়ে যায় সাথী? ভালোবাসিনা বললে কি ভালোবাসা হয়না?”
“এভাবে ভিজে গায়ে জড়িয়ে ধরেছেন কেন? উপরের সবাই দেখলে কি ভাববে বলেন তো!”
সায়নের নির্লিপ্ত জবাব,”কেও কি দেখলো, কি ভাবলো তা আমার কাছে ম্যাটার করেনা সাথী। শুধু তুই থাকাটা আমার কাছে সবকিছু। তোর মনেতে আমার আশ্রয়।”
আমাকে ছেড়ে দিয়ে আবার আলতো সাপোর্ট দিয়ে সামনে আগাতে লাগলো। আমার ভ্রমণটা এতো খারাপ যাবে ভাবতেই পারিনি। কালকে একটা ঝামেলা আবার আজকে এমন ঘটনা। বিপদ যেন পিছুই ছাড়ছেনা আমার। আচ্ছা আমি সায়নের জীবনে এসে ওকে অনেক ঝামেলায় ফেলে দিলাম না তো! দিলামই বা, বউ ই তো আমি! নাতি নাতনির সাথে গল্প করার জন্য হলেও তো এমন ঘটনা দরকার। ইশ! একদিন আমি আর সায়ন বুড়ো হয়ে যাবো, সায়ন তখন সারাক্ষণ আমার সাথে থাকবে। কি যে ভালো হবে! কখনোই সে আমার থেকে দূরে থাকবেনা।
আমি আসলেই গধী, কোন পরিস্থিতিতে কি ভাবছি। মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসে বুড়ো বয়সের চিন্তা করছি।
,
,
চলবে ইনশাআল্লাহ
#চিরসাথী_তুমি_আমার – পর্ব ২১
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
“জানিস সাথী, কাওকে হারানোর ভয় না পেলে ভালোবাসাকে উপলব্ধি করা যায়না। আমি কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি। খুব ভয় হচ্ছে আমার কিন্তু বিশ্বাস কর আমি একটুও ভীতু না। তোকে হারানোর ভয়। তুই এতো লাফাঝাপা করবিনা প্লিজ। তুই আমার কাছে তোর বাবা-মায়ের আমানত। আমি সেই আমানতকে সারাজীবন রক্ষা করে যেতে চাই।”
“শুধু আমানত বলেই কি রক্ষা করবেন?”
সায়ন মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে নিজের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে হাটতে লাগলো। আনমনেই যেন বলল, “আগে বলতাম না মানুষের দেহে কোনো স্পেশাল ঘ্রাণ নেই! কিন্তু এখন বুঝি, এই যেমন রাতে তোর ঘ্রাণ না পেলে ইদানীং ঘুম আসেনা ঠিক মত।”
আমি তার বাহু জড়িয়ে রেখেই বলি, “আলগা পিরিত দেখাবেন না কিন্তু! আজকে থেকে আমিও কঠোর হবো সায়ন। হারানোর ভয় করবোনা। দেখি আপনি কিভাবে ধরা না দিয়ে থাকেন। এবার আমি উঠে পড়ে লাগবো। এই তুষারের দেশে আমার স্মৃতির চরম মুহুর্ত পেতে চাই আমি।”
সায়ন হালকা হেসে বলল, “আমি তোকে ভালোবাসি বললেও তুই আমার, না বললেও তুই আমার। কামনার থেকেই ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। এখন কামনা আছে তোর প্রতি, পরে ভালোবাসাও হবে।”
“আপনি একটা নির্লজ্জ। বউয়ের সাথে অস’ভ্য কথা বলছেন। আমি আপনার স্টুডেন্ট ছিলাম, আর এখন এসব বেহায়ার মত কথা বলছেন?”
“তখন কি আর জানতাম আমার হাতে লা’ঠির বা’ড়ি খেয়ে কান্না করা মেয়েটা আমার সন্তানের ভার নেবে। জীবনটা কি অদ্ভুত তাইনা সাথী! একসময় তোকে নিয়ে হয়তো কিছুই ভাবতাম না। আর আজকে আমার সমস্ত ভাবনায় তোকে ঘিরে। আমার স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন সবকিছুতেই যেন তুই আমাকে বশ করে রেখেছিস তোর কামুকতা দিয়ে।”
“ও আল্লাহ এই নির্লজ্জ লোকটা থেকে বাচাও আমাকে। রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে এসব কি বলছে! কামুকতা কামুকতা বলবেন না। আপনি কি ভুলে গেছেন একটু আগে যেটা ঘটেছিলো সেটার পরিনাম খুব ভয়াবহ হতে পারতো! আর আপনি এখন এসব বলছেন!”
“উপর থেকেই সব লিখে রাখা আছে রে। এমন ভাবেই উপরওয়ালা আমার মাধ্যমে আমার স্ত্রীর জীবন বাচিয়ে দিয়েছেন। এটাই নিয়তি, সেই নিয়তি যেটাকে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। সেই নিয়তি যার জোরে তুই আমার স্ত্রী। সবটাকে আমি বিশ্বাস করি, আর এই নিয়তির সবকিছু কেই আমি ভালোবাসি। আপসোস কথার ঈঙ্গিত তুই বুঝিস না।”
আসলেই তার কথাটা বুঝিনি, তাই চুপ রইলাম।
রাস্তায় উঠে আসি আমরা। উপরে একটা বড়সড় টিনের ছাউনির ভাতের হোটেল ছিলো। সায়ন সেখানে গিয়ে ভিজে পোশাক পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিলো। হোটেলের ভিতর কোনো আলাদা ওয়াশরুম নেই। কিভাবে ভিজে কাপড় পাল্টাবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন সায়ন একটা উপায় বের করলো। হোটেলের ক্যাশিয়ারকে বলল আমাদের সমস্যার কথা। তিনি রান্নাঘরের কর্মচারীদের বের করে আনলেন। আর আমাদের সেখানে গিয়ে পোশাক পালটে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন। সায়ন বলল,”যা পোশাক পালটে আয়।”
আমি পা বাড়াচ্ছিলাম হঠাৎ বয়স্ক বা রাধুনিদের প্রধান টাইপ মহিলাটি বলল, “বেটা, ইয়ে লাড়কি তোমহারা কেয়া লাগতিহে?”
সায়ন বলল, “বিবি হে মেরা।”
মহিলাটি আমার উদ্দেশ্য বলল, “রুকো বেটি। একেলে কিউ যা রেহি হো? (সায়নকে দেখিয়ে বলল) ইয়ে লাড়কা তোমহারা সোহার(স্বামী) হে। কাপড়ে তো একসাথ হি পালাট সাকতিহো তুম।
আমার চোখ বে’র হয়ে যাওয়ার উপক্রম। একসাথে কাপড় পাল্টাবো মানে! বলে কি মহিলা! এতো মানুষের ভিড়ে একসাথে কাপড় পাল্টাতে ঢুকবো কিভাবে আমি! সায়নের দিকে করুণ চোখে তাকালাম। সায়ন কিছু বলতে যাবে তার আগেই মহিলা বলল, “মুঝে শাখ হো রাহি হে কে তুমলোগ পাতি পাত্নি নেহি হো। আগার হোতে তো মেরে বাত বেশাক মান লেতে। (আমার সন্দেহ হচ্ছে যে তোমরা স্বামী-স্ত্রী না। যদি হতে তো আমার কথা কোনো সন্দেহ ছাড়াই মেনে নিতে)”
সায়ন কিছু না বলেই আমার হাত ধরে রান্নাঘরে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা আটকে দিলো। আমি কিছু বলতে গেলেই সায়ন বলল, “বিয়ের কাগজ সাথে আনিনি। এখন এরা ঝামেলা করলে পুলিশ-টুলিশের খপ্পরে পড়তে হবে। তুই এককাজ কর, আমার সামনেই পোশাক পালটে নে। এমনিতেই তো তোকে দেখা বাকি নেই!”
“আমার জীবনে আপনার মত অস’ভ্য লোক কোনোদিন দেখিনি। ওই জানালাটা দিয়ে দেন।”
“জানালার কোনো পর্দা নেই। এই দিকটা খোলায় থাকে এমন। তাছাড়া এদিকটায় নদী, তাও অনেক নিচে। তুই পোশাক পালটা কেও দেখবেনা।”
আমি সায়নের দিক থেকে ঘুরে অন্যদিকে ফিরলাম। আস্তে আস্তে নিজের একটা করে ভেজা পোশাক খুলতে শুরু করলাম। প্রথমে শুকনো সোয়েটার খুলে পাশে থাকা কাঠের একটা চেয়ারের উপর রাখলাম। দেহের উপর টাওয়াল জড়িয়ে জামাটা খুলে একবার লজ্জার দৃষ্টিতে পিছন ফিরে সায়নকে দেখলাম। তার দিকে তাকিয়ে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। সে চাইলেই আমাকে দেখতে পারতো, তার সে অধিকার আছে। এতে আমার চোখে তার সম্মান কমে যেতো না, তবে বাড়তোও না। তবে এখন বেড়েছে। লোকটা যে আমার দিকে তাকিয়ে নেই। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখছে। লোকটার কথাই শুধু নির্লজ্জের মত, কিন্তু আমার মতামতের সম্মান সে দিতে জানে, আমাকে আগলে রাখে। তার কথাতে কামুকতা থাকলেও কর্মে থাকে মাধুর্যতা, আমার জন্য একরাশ যত্ন। এই জন্যই লোকটাকে আমার সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসি।
এবার সম্পুর্ন তার দিকে ঘুরে আমার সমস্ত পোশাক পালটে ফেললাম। লোকটা একবারও এদিকে মাথা ঘোরাই নি। এমনকি আড়চোখেও দেখিনি আমার দিকে। আমি তাকে বললাম, “আমার হয়ে গেছে। আপনি পালটে নিন।”
সায়ন বলল, “খবরদার আমার দিকে একদম তাকাবিনা। আমি কিন্তু এক সেকেন্ডও তোর দিকে তাকাইনি। প্রতিদান দিবি আশাকরি।!”
আমি মাথা দুলিয়ে জানালার ধারে গিয়ে দাড়িয়ে বাইরে চেয়ে থাকি। হঠাৎ চেন খোলার শব্দ, এরপর খড়মড় শব্দ। আড়চোখে একবার তার দিকে তাকালাম হালকা মাথাটা ঘুরিয়ে। কোমরে টাওয়াল জড়িয়ে প্যান্ট খুলে ফেলেছে। গায়ে কোনো পোশকই নেই। ফর্সা পিঠ দেখা যাচ্ছে। পিঠের ঠিক বামপাশে, কোমর থেকে দশ আঙ্গুল মত উপরে একটা মোটাসোটা তিল দেখা যাচ্ছে। সম্পুর্ন কালোও না আবার লালও না তিলটা, বাদামী বলা যায়। আচ্ছা ওখানে কি চুম্বক লাগানো আছে নাকি! আমাকে ওখানে টানছে কেন। এই প্রথম এটা চোখে বাধলো, অথচ আগেও তো এটা চোখে বাধার কথা ছিলো। তখন দেখিনি কেন? সায়নকে কি তখন ঠিকভাবে ভালোবাসতে পারিনি আমি? সায়নকি তাহলে ঠিকই বলে? সে আমার আবেগ, যায়হোক সবচেয়ে বড় কথা সে শুধু আমার।
সায়ন তার দৃষ্টি সংযত রাখলেও আমি পারিনি। নির্লজ্জের মত তার দেহটাকে চোখে দিয়ে গিলে খাচ্ছিলাম যতক্ষণ না সে সমস্ত পোশাক পরিধান করে নিলো।
মনে মনে ঠিক করে নিলাম ওই তিলটাকে গভীর ভাবে ছুয়ে দেখবো কোনোদিন, ছুয়েই ছাড়বো। আচমকা সায়নে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। কেন ধরলাম জানিনা। হঠাৎ মনে হলো জড়িয়ে ধরি, তাই ধরলাম। সায়ন প্রথমে কিছু বললো না। মিনিট খানিক পর বলল, “যদি ওরা দেখে পোশাক পালটে এখন রোমান্সেও মন দিয়েছি আর ওদের কাস্টোমার না খেয়ে বসে আছে তাহলে লসের সব টাকা আদায় করে ছাড়বে কিন্তু।”
আমিও স্বাভাবিক জবাব দিলাম, “আমার স্বামীর কম আছে নাকি! এখানের সবার সব বিল একাই দিতে পারবে।”
সায়ন আর কিছু বললো না। আমিও তাকে ছেড়ে দিয়ে আমাদের ভিজা পোশাক নিয়ে বের হলাম। সায়ন আমার হাত তার পোশাক দিয়ে বলল গাড়িতে যেতে। আমি কি যেন মনে করে, কয়েকপা বাড়িয়ে আবার পিছনে ফিরে আসলাম। ওই মহিলাটিকে সায়ন কিছু টাকা দিলো মনে হলো। তার মানে মহিলাটা যা ভয় দেখাচ্ছিলো সেটা সায়নের কথায় নয়তো, যাতে আমরা একসাথে পোশাক পালটাই! আমার সামনে তো নির্লজ্জ, বাকিদের সামনেও কি নির্লজ্জ হওয়ার দরকার আছে?”
গাড়িতে বসতেই নাবিল ভাইয়ার মা বলল, “কি মেয়েরে বাবা! ভালোই হয়েছে এই মেয়ে আমার ছেলের বউ হবেনা। কি জেদ!”
সায়ন এবার আমাকে তার পাশে বসিয়ে নিলো। আমার অন্য পাশে বসলো আন্টি, সুমনদা আর দিপা পিছনের সীটে চলে গেলো। আন্টির বলা কথাটার কোনো উত্তর না দিয়ে সায়ন আমাকে বলে, “আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমা দেখি।”
লম্বা মানুষটার কাধ পর্যন্ত মাথা রাখতে পারবো কিন্তু আরাম পাবোনা তাই মাথাটা বুকে রাখায় সবচেয়ে সুন্দর সিদ্ধান্ত হবে ভাবলাম, তাই করলাম। সায়ন চাদরটা আমার আমারসহ তার গায়ে জড়িয়ে রাখলো। মাথাটাকে বুকের সাথে নিজের ডান হাত দিয়ে সাপোর্ট দিয়ে ধরলো যাতে ঘুমানোর সময় মাথা সরে যেয়ে ঘুম না ভেঙে যায়।
আন্টি বলল, “এই মেয়েটার এতো জেদ শোনো কেন তুমি?”
সায়ন বলল,”মা বলে দিয়েছে, ভ্রমণ থেকে ফিরে যদি তার বউমা আমার নামে তার কাছে নালিশ করে তাহলে দুইদিন ভাত দেবেনা।”
আন্টি বিরক্ত হয়ে বলল, “বেকার ছেলেদের এই এক সমস্যা, বাপের আছে বলে চলে যাবে জীবনটা। কিন্তু ফ্যামিলির মন জুগিয়ে চলতে হবে আজীবন। তোমার জন্য দুঃখ হচ্ছে, একটা চাকরি বাকরি তো করতে পারতে! এতে বউয়ের কাছে দাম থাকে।”
এই মহিলা সব নিজেই ভাবে নিজেই ঠিক করে নিজেই উত্তর দেয়। সায়ন নাকি বেকার!
সায়ন হাসি দিয়ে বলল, “বউয়ের কাছে আমার যথেষ্ট দাম আছে আন্টি। দেখলেন না কেমন ঘাড়ে মাথা না দিয়ে বুকে মাথা দিলো। আমি এটাই চাচ্ছিলাম। আমার দাম দিয়ে আমার মনের বলা কাজটাই করলো।”
“তোমার থেকে আমার ছেলেটাই ভালো। একটা জব করে। দেখো, কত সুন্দর বউমা আনি আমি। দাওয়াত দেবো তোমাদের চিন্তা করো না।”
সায়ন হাসি মুখে বলল, “ধন্যবাদ আন্টি। আমার বাচ্চা বউটা একটু ঘুমাবে। আমি বরং ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। আপনিও একটা ঘুম দেন।”
এই মহলা কি জানে আমার স্বামী একজন এএসপি! জানলে আমার স্বামীর সাথে আর নিজের ছেলের তুলনা দিতে পারবে!
এসব ভাবতে ভাবতেই চোখে ঘুম নেমে এলো। আসবেই না বা কেন! পানিতে নাকানিচুবানি খেয়ে যে একদম ক্লান্ত আমি।
,
চলবে ইনশাআল্লাহ