চিরসাথী_তুমি_আমার – পর্ব ২২,২৩

0
347

#চিরসাথী_তুমি_আমার – পর্ব ২২,২৩
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
২২

সায়নের ডাকে ঘুম ভাঙলো। বুঝলাম বিশাল বড়সড় একটা ঘুম দিয়েছি। গাড়ি থেকে সবাই নেমে গেছে, শুধু সায়ন আর আমিই আছি।
“প্রচুর ঘুম হয়েছে এবার চল। খাওয়া দাওয়া করা লাগবে।”
আমি ঘুমের ঘোরেই সায়নের গায়ে ঢলে থাকি। একটু পর আবার ঘুমিয়ে পড়ি। এরপর বেশ কিছুক্ষণ পার হয়ে যায়। যখন চোখ মেলে দেখি নিজেকে খাটের উপর আবিষ্কার করি। সায়ন পাশেই বসে ছিলো। আমার ঘুম ভাঙা দেখে বলল, “আজকে দিনের বেলা যে ঘুম দিয়েছিস রাতে তো ঘুমই আসবেনা। বরং ভালো হলো বুঝলি সারারাত ডুবে ডুবে জল খেতে পারবো।”

“বর্ডার থেকে আসার সময় কি লজ্জা বেচে এসেছেন আপনি?” ঢুলুঢুলু কন্ঠে বললাম। সায়ন আমার হাত ধরে টেনে তুললো। শোয়া থেকে তুলে বসিয়ে বলল, “বসে থাক, শুয়ে থাকলে আবার ঘুমিয়ে পড়বি।”

আমি আড়মোড়া ভেঙে বলি, “ব্যাটারি ফুল চার্জ হয়ে গেছে আর ঘুম আসবেনা। আচ্ছা একটা কথা বলেন তো, হোটেলের এই রুমে আপনি আমাকে কোলে করে এনেছেন তাইনা?”

সায়ন ব্যাগ থেকে টাওয়েল বের করতে করতে বলল, “হাটিয়েই নিয়ে এসেছি, ঘুমের ঘোরে টলমলে এসেছিস এইজন্য বোধহয় ভুলে গেছিস।”

আমি ভাবলাম, হবে হয়তো। হঠাৎ পেটের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো। সায়নকে বললাম, “হঠাৎ পেটব্যাথা করছে। গ্যাসের ওষুধটা দেন তো।”

সায়ন আমার হাত ধরে উঠে দাড় করিয়ে টাওয়েল ঘাড়ে দিয়ে বলল, “ক্ষুধায় পেটব্যাথা করছে না। সকালে সেই রুটি আর চা খেয়েছিস, এখন রাত। এতোক্ষণ না খেলে কে সুস্থ থাকে শুনি!”

আমি অবাক হয়ে বললাম,”এতো লম্বা ঘুম দিয়েছি আমি?”

“সে আর বলতে। এসেই সুন্দর পরিবেশ মিস করলি তুই। কি সুন্দর তুষার উড়ে বেড়াচ্ছিলো দেখতেই পেলিনা।”

“এ আর নতুন কি, আজকে না হয় কালকে দেখবো।”

“জ্বি না ম্যাডাম, এটা সাইবেরিয়া না, ভারত। তুষার খুব কমই পড়ে এখানে। লোকজন বলছিলো বেশ কয়েকদিন পর তুষার পড়লো আজকে।”

আমি গাল ফুলিয়ে বললাম, “তাহলে আমাকে ঘুম থেকে তুললেন না কেন আপনি? জোর করেই তো তুলতে পারতেন। আপনার জন্যই আমার তুষারপাত দেখা হলো না।”

“তখন গাড়িতে ডাকিনি তোকে! তুই ই তো উঠলিনা, এখন সব দোষ আমার হয়ে গেলো! রাস্তার খাওয়ার জন্যও উঠলিনা। ঘুম ঘুম আর ঘুম।”

আসলেই আমি একটু বেশিই ঘুমাচ্ছি ইদানীং। বেড়াতে এসে এতো ঘুমাবোনা আমি। মনে মনে পণ করলাম। ফ্রেশ হয়ে আসতেই সায়ন আমার হাত ধরে রূম থেকে বের হলো। হাত ছেড়ে দিয়ে রুম লক করে দিলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “কয়টা বেজেছে?”

“৯টা ২৫।” হাতের ঘড়ি দেখে বলল।

“এতো তাড়াতাড়ি খাবেন নাকি আপনি? আমার নাহয় ক্ষুধা লেগেছে আপনি কেন এতো তাড়াতাড়ি খাবেন, আপনারও কি ক্ষুধা লেগে গেছে?”

সায়ন আমার হাতটা আবার ধরে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে বলল, “শীত প্রধান এলাকা এটা। এখানে খাবার একটু তাড়াতাড়িই দেয়। তাছাড়া ট্রাভেল এজেন্সি আমাদের বলেই দিয়েছে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিতে নাহলে ঠান্ডা ভাত খাওয়া লাগবে। শীতে ঠান্ডা ভাত খাওয়া যায় নাকি!”

বিষয়টা বুঝলাম সায়ন কেন এতো তাড়াতাড়ি খেতে চাচ্ছে। বাকিদের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলল, “তারা সবাই খেয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে এতোক্ষণে।”

“আচ্ছা রুম তো তিনটা ছিলো প্যাকেজে, তাহলে কিভাবে কি ম্যানেজ করলেন সব?”

“এজেন্সির সাথে কথা বলে একটা রূম বাড়িয়ে নিয়েছি। আমাদের বাম পাশের রুমে সুমনরা আছে ডানের রুমে আন্টি আর তার পরের রুমে নাবিল। একটা রুম বেশি নেওয়ার জন্য অবশ্য এজেন্সি ছয় হাজার টাকা বেশি চাচ্ছিলো। আমি সাড়ে তিন হাজারে ম্যানেজ করেছি। যদিও শুরুতে রাগ দেখাচ্ছিলো তবে শেষে রাজি হয়েছে।”

ডাইনিং এরিয়াটা একদম অন্যরকম। পাশেই রান্নাঘর আর খানা সার্ভ হচ্ছে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে। আমাকে বসিয়ে রেখে সায়ন খাবার আনতে গেলো। পকেট থেকে বের করে একটা স্লিপ তাদের দেখানোর পর তারা দুই প্লেটভাত আর দুইটা বাটিতে তরকারি দিলো। সায়ন সেটা নিয়ে এসে আমার মুখোমুখি বসলো। খাবারের একটা প্লেট আমার সামনে দিলো। বাটির তরকারি আমার প্লেটে ঢেলে দিলো।
আমি নিজেই তো ঢেলে নিতে পারতাম। বউকে এতো আগলে রাখা ঠিক না সায়ন বাবু। সায়ন চোখের সামনে তুড়ি মেরে বলে,”আনমনে কি ভাবছিস এতো? খাইয়েও কি আমাকেই দিতে হবে নাকি?”

“এই না না, আমি নিজেই খাচ্ছি। প্লেটের দিকে তাকিয়ে ছিলাম তবুও খেয়াল করিনি খাবার কি। এবার খেয়াল হলো। ডিম আর আলুর তরকারি। আমার সবচেয়ে অপছন্দ। ডিম সিদ্ধ করে রান্না করলে আমার বিশ্রি লাগে, তবে আলু রান্না বেশ পছন্দ। অবশ্য পেয়াজ দিয়ে ভাজি করলে অসাধারণ লাগে। মুখ কুচকে ডিমের দিকে তাকিয়ে রইলাম। একটু পর একটা ১০/১২ বছর বয়সী ছেলে ছোট্ট পিরিচে করে ডিম ভাজি দিয়ে গেলো। আমি কৃতজ্ঞ চোখে সায়নের দিকে তাকালাম। সায়নের সেসব ধ্যান নেই। আমার প্লেটের রান্না ডিমটা নিয়ে নিলো।

ডিমের লবণটা একটু কম হয়েছে। তবুও এই হিমশীতল এলাকায় এরকম গরম ডিম খেতে যে কি মজা লাগছে সেটা বলে বোঝাতে পারবোনা। সায়নকে বললাম, ” ডিমটা এতো বড় কেন?”

“এটা ঘোড়ার ডিম তাই এতো বড়।”

আমি গাল ফুলিয়ে তার দিকে তাকালাম। সায়ন বলল, “এভাবে পাব্লিক প্লেসে গাল ফুলাবিনা তো! কন্ট্রোল করতে কষ্ট হয়। বোকা মেয়ে ডাবল ডিমের অমলেট ওটা। দেখেও বুঝিস না?”

হুহ! অপমান, চুপচাপ খেতে লাগলাম। কিন্তু মেয়ে মানুষের পেট তো, একটু খেলেই ভরে যায়। অর্ধেকের একটু বেশি ডিম দিয়ে ভাত খেয়েই পেট ভরে গেলো। আলুর তরকারিটা খুবই মজার ছিলো, তবুও পেট ভরে গেলো অল্পতেই। সায়ন প্লেটেই হাত ধুতে বলল। তার কথায় হাত ধুতে যাবো, সায়ন বাধা দিয়ে বলল, “দাড়া তোর ডিমটা আগে নিয়ে নিই পরে হাত ধুয়ে নে।”

“এমনিতেই দুইটা ডিম নিয়েছেন। এবার এখানে প্রায় একটা ডিম আছে। এতো ডিম খেলে আপনার প্রেশার বাড়তে পারে। এটা খেয়েন না।”

আমার কথা যেন আমি তার সাথে না বলে অন্যকারো সাথে বললাম। ডিম নিয়ে নিজের মনমত খেতে লাগলো। খাওয়া শেষ করে সায়ন বলল, “তুই কি পারফেক্ট স্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করছিস? আমি ডিম বেশি খেলে বিপি বেড়ে যাবে, এসব নিয়ে চিন্তাও হচ্ছে তোর? আদর্শ বউ হওয়ার চেষ্টা করছিস নাকি?”

“যার আদর্শ স্বামী থাকে সে বউ আদর্শ হতে চায়না। তাহলে স্বামীর কাছে যত্ন পায়না। আমি অগোছালো হয়ে আপনার যত্নে থাকতে চাই আজীবন।”

“ভ্রমণে এসে কি তোর রোমান্টিকতা বেড়ে গেলো নাকি! পাব্লিক প্লেসও মানছিস না।”

ধুর, এই লোকের সাথে কথায় নেই।
“তাড়াতাড়ি চলেন তো। শীত লাগছে খুব।”

সায়ন হাত-মুখ ধুয়ে আমার সাথেই উঠে পড়লো। আমি কি মনে করে যেন সায়নের বাম হাতটা আমার দুইহাতে জড়িয়ে নিয়ে হাটতে লাগলাম। সেড়ে বেয়ে নামার সময় বললাম, “আমার সিদ্ধ ডিম পছন্দ না এটাও মনে আছে আপনার?”

“এটা এমন অবাক হওয়ার কি আছে! এইটুকু জিনিস তো যে কারো মনে থাকতে পারে।”

“যার তার মনে রাখা আর আপনার মনে রাখা এক না সায়ন। আমার ছোট্ট প্রয়োজন যখন আপনি মনে রাখেন তখন আমি পৃথিবী সমান খুশি হই।”

সায়ন একটু হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার একটু হাসিতে আমার পৃথিবী সমান খুশি লাগে তাকি জানো?”

তার হাত ছেড়ে আমার দুই কান দুই হাত দিয়ে চেপে রেখে বলি, “প্লিজ তুমি বলবেন না।”

আমার হাত কান থেকে সরিয়ে নিয়ে সে বলে বলে, “মাঝে মাঝে যখন বেশি রোমান্টিক হয়ে যাই তখন মুখ দিয়ে তুমি বের হয়ে যায় অটোমেটিক।”

“তুমি শুনলে আমার কাপুনি এসে যায়।”

“সমস্যা নেই আজকে গরম হওয়ার ব্যাবস্থা করবো। কাপুনি কময়ে দেবো একদম। সারারাত হলে চলবে তো!”

লজ্জা যার কথায় পাবো তাকেই জড়িয়ে ধরবো। আমার দুই হাত তার হাতে বন্দি থাকায় তার বুকে এলিয়ে নিজের মুখ ঢাকলাম। সায়ন নিজের হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। রুমের সামনের করিডোর, কেও নেই তাই এটা করতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না।

“বউকে জড়িয়ে ধরবা ঘরে গিয়ে ধরো। এভাবে রাস্তাঘাটে এসব করোনা। আজ-কালকার ছেলে-মেয়েরা কেমন যেন! যেখানে সেখানে জড়িয়ে ধরা তাদের কাছে কিছুই না। কিন্তু আমাদের আমলে স্বামীর ভয়ে বউয়ের পা কাপতো। আমার ছেলেটা একদম আদর্শ হবে। ও নিশ্চয় যেখানে সেখানে বউকে জড়িয়ে ধরবেনা। ছেলেটা মাস্টার মানুষ, কত সম্মান তার।”

আমি মনে মনেই বললাম, ‘কার মধ্যে কি, পান্তা ভাতে ঘি।’

সায়ন বলল, “বউ স্বামীকে ভয় পাবে এটা বাহবা পাওয়ার জায়গা না আন্টি। বাবা-মাকে ছেড়ে এসে একটা মেয়ে যদি নিজের সত্ত্বাকে হারিয়ে ফেলে তার জন্য দায়ী স্বামী নামক পুরুষটি। আমি আমার বউয়ের সব আহ্লাদ পূরণ করবো।”

“বউ যখন অন্যের সাথে ভেগে যাবে তখনও সেই আহ্লাদ পূরণও করো!”

মাথায় যেন র’ক্ত উঠে গেলো। এই মহিলা একটু বেশিই করছে যেন,আমি তার কোন পাকাধানে মই দিয়েছি। রাগে গা থরথর করে কাপছে। সায়ন একটু আগেই আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলো, কিন্তু আন্টির এই কথায় আমাকে আবার জড়িয়ে নিলো। আমার থরথর করে কাপার কারণ সায়ন বুঝতে পেরেছে।

“ও যদি আমাকে ফেলে চলে যায় তাহলে বুঝবো আমি ভালো পুরুষ ছিলাম না। আমি কেমন পুরুষ যে আমার বউয়ের মনে অন্য ছেলের জন্য জায়গা হবে! এর ব্যার্থতা শুধু আমার থাকবে। আর একটা কথা আন্টি, ওর থেকে আমার নাম মুছতে হলে এই পৃথিবীতে যে কাওকে হাজারবার জন্ম নিতে হবে। আল্লাহর কালেমা সাক্ষী করা বউ আমার। আমাকে ভালোবাসে ও। আরেকটা কথা, নিজের চরকায় তেল না দিয়ে অন্যের চরকার দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই।”

মন খারাপ করে শুয়ে ছিলাম অন্যদিকে ফিরে। সায়ন জোর করে আমাকে তার দিকে ফিরিয়ে নিলো। আমাকে আঁটোসাটো বন্ধনে জটিয়ে নিয়ে বলল, “অন্যের কথায় মন খারাপ করে পাগলে।”

আমি ফিচফিচ করে কাদতে কাদতে বললাম, “আমি নাকি আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো। ওই মহিলা জানে আমি আপনাকে কত ভালোবাসি। আপনাকে না দেখলে আমার কত কষ্ট হয় জানে ওই মহিলা। ওর কথা শুনে গা ঘিনঘিন করছে। ইচ্ছা করছিলো ঠাটিয়ে গালে একটা চড় মা’রি।”

“ছিঃছিঃ এসব কি কথা। আন্টি মায়ের বয়সী, এমন বলেনা। আগে জানলে আমি ওনাদের নিজের সাথে নিয়ে আসতাম না। আমারই ভূল, ভেবেছিলাম সাথে থাকলে ওনাদের ভালো লাগবে। কিন্তু জানতাম না তোর মন যে খারাপ হয়ে যাবে। কালকেই অন্য হোটেলে চলে যাবো। এজেন্সির সাথে সকালেই কথা বলবো।”

আমিও এবার সায়নকে টাইট করে জড়িয়ে ধরি। আমার অস্তিত্বকে আমি কিভাবে ছেড়ে যেতে পারি। যাকে দিয়ে পবিত্র ভালোবাসা নামক নতুন অনুভূতির শুরু তাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো!
,

চলবে ইনশাআল্লাহ

#চিরসাথী_তুমি_আমার – পর্ব ২৩
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী

“আজকে তোর ভিতর ডুবতে দিবি? শীতের এই রাতে কোনো আবদার না, শুধু একটা অনুরোধ করছি৷ বিশ্বাস কর আমার প্রতিটা ছোয়া তোকে সারাজীবন আমার কথা মনে করাবে। আমাকে ভুলতে গেলে তোর বুক কে’পে উঠবে। আজকে তোকে গভীরভাবে আমার রঙে রাঙাবো।”

সায়নকে জড়িয়েই ছিলাম। তার এমন কথা শুনে হাত আলগা হতে নিলে সায়ন বলল,”খবরদার, ছাড়বিনা।”

আমি জড়িয়েই বলি, “আপনার অধিকার আদায় করে নেবেন এতে অনুমতি পাওয়ার কিছু নেই। আমি সারাক্ষণ আপনার ছোয়া পেতে রাজি। আমার ভালোবাসার বাগানে নতুন নতুন ফুল ফোটে যখন আপনি ছুয়ে দেন। আমি বারবার রঙিন হতে চাই আপনার রঙে।”

সায়ন আমার কপালে গাঢ় একটা চুমু দিয়ে বলে,”তোকে পাওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দরতম ঘটনার একটি। তোকে দেখলেই মনে হয় তুই শুধু আমার জন্যই। আল্লাহ তোকে শুধু আমার জীবনসাথী হিসেবে পাঠিয়েছেন। আমার দেখা সবচেয়ে স্নিগ্ধ মেয়ে তুই। যার ছোয়া পেলে আমি পবিত্র থেকে আরও পবিত্রতম হয়ে যাই।”

“আপনার মত মানুষকে আমার জীবনে পেয়ে আমি সত্যিই ভাগ্যবতি সায়ন। আমার প্রতি আপনার কেয়ারগুলো আরও বিশেষভাবে আপনার প্রতি আমার আকর্ষণ বাড়ায়। সব শুনেছি আমি। দুপুরের খাওয়ার সময় আপনি খাননি। আমার ঘুম নষ্ট না হয় এই ভয়ে আমাকে জড়িয়েই রেখেছেন আপনি। দিপা আমাকে সব বলেছে। এতো মায়া কেন আপনার আমার জন্য। শুধু কি স্ত্রী বলেই? আমার কি মনে হয় জানেন সায়ন, আপনি আমাকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসেন। শুধু ইচ্ছা করে প্রকাশ করেন না। আজকে আমি আপনাকে আমার মত ভালোবাসবো সায়ন।”

সায়ন হঠাৎ আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট মিশিয়ে দিলো। আমি আবেশে চোখ বুঝে তার পোশাক খামচে ধরলাম। এতো জরে ধরলাম যেন সায়নের পিঠের ছালও হয়তো কিছুটা উঠে গেছে। সায়ন ‘উহ’ জাতীয় শব্দ করে উঠলো। আমি সরি বলতেই সায়ন বলল, “বলেছিলি নিজেই আমার কাছে আসবিনা। এখন এতো আবেগ চলে আসছে কেন। নাকি আমার মত হ্যান্ডসাম ছেলেকে দেখে নিজের লোলুপ দৃষ্টি সংযত করতে পারছিস না।”

আজকে এই কথায় আমি ন্যাকা রাগ দেখাবোনা। একদমই দেখাবোনা। সায়নের থুতনিতে চুমু দিলাম। এর থেকে আগানোর সাহস পাচ্ছিলাম না আমি। ইচ্ছা ছিলো নিজ ইচ্ছায় ঠোঁটে একটা চুম্বন দেবো, কিন্তু সেটা আমার দ্বারা হয়তো জীবনেও হবেনা।

সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখলাম সায়ন নেই। এতো সকালে কোথায় গেলো ভাবলাম। হঠাৎ মনে পড়লো নতুন হোটেল দেখতে যায়নি তো! কিন্তু ফোন না নিয়ে গেলে এজেন্সির দাথে যোগাযোগ করবে কিভাবে! ফোনটা হাতে নিয়ে সায়নের ফেসবুক আইডিতে ঢুকলাম। প্রফাইলে আমার আর তার বিয়ের দিনের ছবি রয়েছে। বাবা আমার হাত সায়নের হাতে তুলে দিচ্ছে এমন একটা ছবি। আমার মুখ দেখা যাচ্ছিলোনা যদিও।

কমেন্ট বক্সে হঠাৎ একটা কমেন্ট দেখে আমার চোখ বড় হয়ে গেলো। কমেন্টে লেখা ছিলো,”এটাই কি সেই মেয়ে যার জন্য আট বছর অপেক্ষা করেছিস?”

বুঝলাম লোকটা সায়নের বন্ধু হবে কোনো। সায়নের রিপ্লাই দেখে আমার হাত-পা কাপছে। ছোট্ট একটা উত্তর আমার মনের মধ্যে উথাল-পাথাল ঢেউ তুলে দিচ্ছে। “হ্যা” নামক উত্তরটাতে যে আমার ভিতর কি হচ্ছিলো সেটা শুধু আমিই জানি। সায়ন আমাকে মিথ্যা বলেছে তাহলে? সে আমাকেই ভালোবাসতো শুরু থেকে! কিন্তু তা কি করে হয়! সে না মেজ আপাকে ভালোবাসতো! এমনও হতে পারে ব্যার্ত প্রেমিক কমেন্টে নিজের হার স্বীকার না করেই হ্যা লিখেছে!

কি মনে করে, হঠাৎ মাথায় আসলো বড় আপার সাথে কথা বলি। সায়নের ফোনের লকটা খুলে বড় আপার নাম্বার কল দিলাম। আপা রিসিভ করেই ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা না করেই বলল, “তাড়াতাড়ি বল কি বলবি। বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি। আর শোন, সাথী কেমন আছে? কথাটা কি বলেছিস নাকি এখনও জানাসনি কিছু?”

আমি আর অপেক্ষা করতে না পেরে মুখ ফসকে বলে ফেলি, “কি কথা আপা, কি বলবে ও আমাকে?”

আপা থতমত খেয়ে বলল, “আরে কিছু না। সাজেক যাচ্ছি আমি আর তোর দুলাভাই সেটাই জানিয়েছে কিনা বললাম। কেমন আছিস তুই?”

“আপা কিছু লুকাচ্ছিস তুই।”

“আরে দূর, কি বলিস এসব। লুকাবো কি আমি! তুই অযথা কিছু ভাবিস না। ভালোভাবে ভ্রমণ পার কর। শোন না, তোকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। ভিডিও কল দিবি?”

“না দেবোনা। আসল কথা না বললে কল দেবোনা।”

“আরে এমন কিছুই না পাগল। তোকে মনে হচ্ছে কতদিন দেখিনি আমি। আচ্ছা সাথী তোর প্রতি আমার এতো টান কেন বলতো? বললে পাপ হবে, তবুও না বলে পারিনা। জীবিত সবার ভিতর তোকে আমি সবচেয়ে ভালোবাসি। কেন বলতো, র’ক্তের টান এজন্য নাকি! বাকিদের সাথেও তো র’ক্তের টান তাহলে তুই এতো স্পেশাল কেন?”

আমি মনে মনে হাজার দোয়া করি আমার বড় আপার জন্য। আল্লাহ যেন আমার আপাকে শতবছর বাচিয়ে রাখে৷ আমি তার থেকে মাত্র ছয় বছরের ছোটো কিন্তু আমাকে যেন নিজের সন্তানের মত ভালোবাসে। আমার আপা সবচেয়ে ভালো আপা।

ভিডিও কলে আপাকে দেখে আমার মন ভরবেনা, তার লাল লাল গাল ধরতে না পারলে আমার আপসোস থেকে যাবে তাই একেবারে দেশে গিয়েই তার সাথে দেখা করবো। নো ভিডিও কল।

আপার সাথে বেশ কিছুক্ষন কথা বলার পর সায়ন রুমে আসলো। আমি তখনও আপার সাথেই কথা বলছিলাম। সায়ন ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো কার সাথে কথা বলি। আমি শব্দ না করে ঠোঁট নাড়িয়ে বলি ‘বড় আপা’।

আরও কয়েক মিনিট কথা বলার পর ফোন রেখে দিই। সায়ন বলে, “তাড়াতাড়ি গোসল করে নে। আমরা বের হবো আধাঘন্টায়।”

আমি অবাক হইনি বরং আমিও চাচ্ছি এই হোটেল ছাড়তে। ওই মহিলাকে আর চোখের সামনে দেখতেও চাইনা আমি। সায়নকে জিজ্ঞাসা করলাম নতুন হোটেলে যাবো কিনা। সায়ন বলল, “নতুন হোটেল না। জানিস, বের হয়ে একটা ঘটনা ঘটেছে। আন্টি আমার হাত ধরে মাফ চেয়েছে আর এটাও বলেছে ছেলের হবু-বউ ভেবে ফেলেছিলো তোকে, সেটা হয়নি তাই রেগে যা ইচ্ছা তা বলেছে। কি করি বল, হোটেলটা ছাড়তে পারলাম না।”

“ওই মহিলাকে আমি কোনোদিন মাফ করবোনা বলে দিলাম। ওর সাথে ঘুরতে গেলে আমি যাবোনা।”

সায়ন আমার মাথার চুল এলোমেলো করতে করতে বলল, “আমার সাথী, সবাইকে মাফ করে দিতে পারে। তাহলে তাকে কেন মাফ করা হবেনা শুনি।”

“ওই মহিলা আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলেছে। আর তাকে আমি কিভাবে মাফ করি আপনিই বলেন। সায়ন, আমি আপনাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো বলেন তো? ওই মহিলা কাল ওসব কি বললো!”

সায়নের কলার ধরে কথাটা বলতেই গলাটা ধরে আসলো। সায়ন আমার কপালে চুমু একে বলল, “আমি জানি তো আমার সাথীর জীবন শুধু আমিময়। কে কি বললো তাতে আমার কিছু আশে যায় না। শোন, ভ্রমণটা হয়ে গেলেই তাদের সাথে আর আমাদের দেখা হবেনা। সো মাফ করিস বা না করিস কোনো ঝামেলা করিস না। তুই যদি একান্তই চাস একসাথে থাকবিনা তাহলে আমি এ নিয়ে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করবো না। এক্ষুনি হোটেল চেঞ্জ করে ফেলবো।”

আমিও আর কথা বাড়াই না। সিদ্ধান্ত নিলাম, মহিলাকে এড়িয়ে চলবো পুরোটা সময়। তবে হ্যা যদি হাজারবার আমার কাছে মাফ চায় তবুও মাফ করবোনা। একটা মেয়ের চরিত্রের উপর আঙ্গুল তুলবে আর একটা সরি বললেই মাফ হয়ে যাবে! এতো সহজ না সবকিছু।

গোসল সেড়ে বের হতেই সায়ন আমার কাছে শীতের বেশ কিছু পোশাক এগিয়ে দিলো। আমার পোশাকের সাথেও ভিন্ন কয়েকটা শীতের পোশাক দেখলাম। সায়নকে জিজ্ঞাসা করার আগেই ও বলল, “হোটেলের নিচ থেকে ভাড়া নিয়েছি। ইয়াংথাম ভ্যালিতে প্রচুর বরফ, শীতে অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই এই বড় বড় জুতা গুলোও নিয়েছি। একদম টাইট করে সব পরবি। যেন বাতাস একটুও দেহের ভিতর ঢুকতে না পারে।”

দরজায় নক পড়তেই সায়ন দরজা খুললো। দিপা আর সুমনদা রুমে প্রবেশ করে বলল, “তাড়াতাড়ি করো, ইয়াংথাম ভ্যালিতে যেতে প্রায় ২ঘন্টা সময় লাগবে। আজকে নাকি আবার তুষার পড়ার সম্ভাবনা আছে।”

তুষারপাতেএ কথা শুনে মুচকি হাসি দিলাম। আমার চাওয়া আল্লাহ অপূর্ণ রাখবেন না কোনোদিন! দিপা আর সুমনদা নিচে অপেক্ষা করছে বলে চলে গেলো। আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভালো করে আঁটোসাটো করে পোশাক পরছিলাম। সায়ন এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমি আয়নায় তার মুখের দিকে তাকালাম। কি স্নিগ্ধ সেই হাসি। আমি ভ্রু উচিয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। সায়ন বলল, “আল্লাহ আমার সাথী ইচ্ছাকে এভাবেই পূর্ণ করুক।”

“আমিন।” আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম।
,
ইয়াংথাম ভ্যালি,

“তুমি সেই মেয়ে যার জন্য আমি ৩ বছর অপেক্ষা করেছি। যার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাগলামি করেছি। যাকে ভালোবাসি না বলেও সবচাইতে বেশি ভালোবাসি। আজকে আমার ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দিও না। ম’রে যাবো।”

সবার উৎসাহে মেয়েটা ছেলেটার হাত থেকে বরফের দলা নিলো। এখানে ফুল নেই তাই এই পন্থায় পেয়েছে ছেলেটা। একটা লজ্জাবোধে মেয়েটা বা ছেলেটা একে অপরকে জড়িয়ে ধরতে পারলোনা। সায়ন আমার পাশে থেকে তাদের উদ্দেশ্যে বলল, “শীতে একটু জড়িয়ে ধরবিও না নাকি?”

তাদেরকে তুই সম্মোধন করছে সায়ন। একটু অবাক হলাম। প্রপোজ এক্সেপ্ট করা মেয়েটা হাসি মুখে এগিয়ে আসলো আমাদের দিকে। আমাকে হুট করে জড়িয়ে ধরলো। আমি কিছুই বুঝলাম না কি হচ্ছে আমার সাথে।

মেয়েটা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল, “তুমি সাথী আমি জানি। সায়নের মোবাইলে তোমার অনেক ছবি দেখেছি। ভার্সিটিতে থাকতেই সায়ন তোমার অজান্তেই তোমার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। ছেলেটা তোমাকে এতো………”

সায়ন থামিয়ে দিয়ে বলল, “আহ ফারিহা এসব বাদ দে।”
মেয়েটা ভালোবাসার কথায় বলতে চাচ্ছিলো মনে হলো। কিন্তু ভার্সিটি লাইফে তো সায়ন মেজ আপাকে ভালোবাসতো। তাহলে তার বন্ধুদের আমার ছবি দেখিয়েছে কেন? কি হতে পারে এর উত্তর?

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here