চুক্তির_বিয়ের_সংসার পর্বঃ০৫

0
2373

চুক্তির_বিয়ের_সংসার
পর্বঃ০৫

মৌ এর গর্ভের সন্তানটাকে নষ্ট করতে হবে। তা না হলে পরে তোমার সম্পত্তিতে ভাগ বসাবে।
– তাই তো এটাতো ভাবিনি। আচ্ছা কিভাবে নষ্ট করা যায়?
– শোনো তুমি ওর একটু টেক কেয়ার করবে। কাল আমি ওষুধ এনে দিবো। সেটা দুধের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দিবে। তারপর আর কোন ঝামেলা থাকবে না।
– যদি না খায়? না খেলে, অন্য পন্থায় হাটতে হবে।
– কেমন?
– শোন মেয়েরা গর্ভবতী থাকলে, তার তলপেটে যদি লাথি দাও তাহলে বাচ্ছা মরে যাবে। এতে অনেকটা রিক্স। বাদ দাও কাল আমি মেডিসিন নিয়ে আসবো। তুমি যেভাবেই হোক বাচ্চাটা নষ্ট করো।

– মৌ এসব শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। যদি গর্ভের সন্তানের কিছু হয়ে যায় তাহলে সে বাঁচবে কিভাবে।

-মৌ পাশের রুমে গিয়ে ভাবছে আজ তো টাকারো দরকার। এমন সময় রাজকে টাকার কথা কিভাবে বলি। হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠল। মৌ ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো’ আপনি কখন আসবেন? আর এদিকে অবস্থা বেশি ভলো না। বিকেলে টাকা নিয়ে আসবেন।

– মৌ ফোনটা রেখে দিতেই রাজ সামনে এসে দাঁড়ায়।
– ব্রেকফাস্ট রেডি করেছ?
– হ্যাঁ তোমরা টেবিলে আসো খাবার দিচ্ছি। মৌ টেবিলে খাবার রাখছে, এমন সময় সুমাইয়া আর রাজ এসে টেবিলে বসলো। মৌ খাবার পরিবেশন করতেই দু’জনেই খেতে বসে পড়ল। রাজ একটিবার বললোও না, মৌ তুমিও আমাদের সাথে বসো।
– রাজ যখন খাবার মুখে দেবে এমন সময় সুমাইয়া বলল’ জান তুমি খেয়ো না। ‘ আমি তোমাকে খাইয়ে দেয়?
– রাজ মুচকি হেসে বলল’ হ্যাঁ সুইর্ট হার্ট দাও। ‘

– সুমাইয়া রাজকে খাইয়ে দিচ্ছে। রাজ সুমাইয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে। মৌ অসহায় দৃষ্টিতে দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে।

– এই তুই আমাদের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
– নাকি জীবনে এসব ভালো খাবার দেখিস নি?
ওহ সরি, তুই তো এতিমখানায় বড় হয়েছিস? দেখ জান কিভাবে তাকিয়ে আছে।
– সুইর্ট হার্ট বাদ দাও। টাকার জন্য যেসব মেয়েরা নিজের দেহ বিক্রি করতে পারে তাকে এসব শুনিয়ে লাভ নেই।

– মৌ আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। রাজের কথায় মনে হচ্ছে কলিজাটা ফুঁর হয়ে এফোঁড় ওফোড় হয়ে গেছে। মনে মনে আল্লাহকে বলতে ইচ্ছে করছে, ও আল্লাহ কেন এতিম করে পাঠালে। এসব ভাবতে ভাবতে চোখের পানিতে বুক ভেসে যায়। চোখের পানি মনে হচ্ছে কোনদিন শেষ হবে না।

-রাজ আর সুমাইয়া খাওয়া শেষ করে যখন রুমে চলে গেল। মৌ না খেয়েই রাজকে ডেকে নিয়ে বললো’ রাজ আমার চুক্তি থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দাও।’
– আবারো টাকা দিয়ে কি করবে?
– আমার টাকাটা খুব দরকার।
– আচ্ছা, আর মনে রেখো, আমি যখনি বলবো তখনি চলে যাবে।
– হুম তা তোমাকে বলতে হবে না রাজ।

– আচ্ছা, তুমি দাঁড়াও আমি টাকা এনে দিচ্ছি।
– রাজ লকার থেকে টাকা এনে মৌ এর হাতে দিল। মৌ টাকাটা নিজের কাছে রেখে দিয়ে ফোনে কারসাথে যেন কথা বলছে এমন সময়, সুমাইয়া আর রাজ দু’জনেই চলে গেল।

– পরের দিন, সকালে ঘুম ভাঙতেই টের পেলো মৌ কারো বুকে। ঘুম জড়ানো আখি জোড়া টিপটিপ করে খুলতেই চমকে গেল মৌ। রাজ খুব সুন্দর করে তাকে জড়িয়ে রেখেছে। রাজ তাকে বুকে নিবে সেটা কল্পনাও করতে পারে নাই।
– রাজ মৌকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। মৌ রাজের বুকে অন্যরকম শান্তির ছোঁয়া খুঁজে পাচ্ছে। মৌ এর চোখ জোড়া আবার লেগে আসছে। কখন যে, আবার গভীর ঘুমে হারিয়ে যায় সে খেয়াল নেই।
– হঠাৎ মৌ টের পেল তাকে কেও ডাকছে ‘ এই মৌ, আর কত ঘুমাবে? দেখ সূর্য উঠে পড়ছে। এবার তো উঠো।
– মৌ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসতেই রাজ এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসে বললো’ এই নাও দুধটুকু খেয়ে নাও। আর তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য দুঃখিত। কি হলো কাঁদছো কেন?
– রাজ আমার তো মা নেই, কেউ কোনদিন এভাবে আদর করেনি। আমি তোমার ব্যবহারে কিছুই মনে করিনি। আমিই তোমার প্রতি অধিকার খাটাতে চেয়েছিলাম।

– মৌ এভাবে বলো না তো। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, যে কয়দিন তুমি আমার বাড়িতে আছো আমি আর কষ্ট দিবো না। এই পাগলী কাঁদছো কেন? কেঁদো না।

– মৌ এবার তো দুধটুকু খাও।
– আচ্ছা আমি খাইয়ে দিবো আমার বউকে?
– না তোমার কষ্ট করতে হবে না। কষ্ট কেন হবে মনে করো একটু প্রায়শ্চিত করে নেই।

– না দাও আমি খাচ্ছি। রাজ দুধের গ্লাসটা মৌ এর দিকে বাড়িয়ে দিল। মৌ খুশি মনে দুধের গ্লাসটা হাতে নিয়ে যখন মুখে দিবে এমন সময় কাল সকালের ঘটনাটা মনে পড়তেই মৌ চমকে ওঠলো। মনে মনে ভাবলো এ গ্লাসে তো আবার বাচ্চা নষ্ট করার ওষধ দেয়নি। না এ দুধ খাওয়া যাবে না। মৌ দুধ খেতে গিয়ে গ্লাসটা হাত থেকে ফেলে দিলো।
– গ্লাসটা হাত থেকে পরে যেতেই চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে গেল। এ কি করলে মৌ?
– রাজ মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে। তাই হাত থেকে গ্লাসটা পরে গেল। রাজ মনে মনে বললো’ এ প্ল্যানটাও ভেস্তে গেল।

– আমি তোমাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম তাই না?
– কি যে বলো, ব্যাপার না।
– তুমি নিশ্চয় মন খারাপ করেছো। তোমার দেয়া দুধটা হাত থেকে পড়ে গেল।
– আরে না মন খারাপ করবো কেন কালনাগিনী যদি পারতাম তোর মতো রক্ষিতার পেটে লাথি দিয়ে বাচ্চাটাকে বের করে দিতাম। কিন্তু তা তো পারছি না।

– কি হলো তুমি চুপ করে আছো কিছু বলছো না?
– কি বলবো? অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমি যাচ্ছি।
– রাজ অফিসে গিয়েই সুমাইয়াকে ফোন করে বললো’ মৌকে তো বাচ্চা নষ্ট করার ঔষধ খাওয়াতে পারিনি। ‘ মনে হয় আমাদের প্ল্যান বুঝে ফেলছে। কি করা যায় বলো তো? এ সন্তান পৃথিবীতে এলেই সমস্যা। ডির্ভোস দিলেও তো সন্তানের অধিকারে ঠিকই আসতে পারে কোন না কোনদিন? যে মেয়ে টাকার জন্য রক্ষিতা হতে পারে তার কাছে এসব কিছু না ।
– তুমি চিন্তা করো না, এভাবে না হলে অন্য পন্থায় হাটতে হবে। আর আমি অফিস যাচ্ছি। সুমাইয়া অফিসে গিয়ে দেখে রাজ ডেস্কে চিন্তিত মনে বসে আছে। সুমাইয়া রাজের পিছন দিক দিয়ে গিয়ো রাজকে জড়িয়ে ধরে বলল’ আমার জানটার মন খারাপ?

– হ্যাঁ খুব মন খারাপ!
– তুমি এখনো মন খারাপ করে আছো? আরে মন খারাপ করে থেকো না। যদি এভাবে না হয় তাহলে, সোজা উল্টাপথে হাটতে হবে। যদি বাচ্চা নষ্ট না করে তাহলে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো। এসব নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।
– মেরে ফেলবা?
– আরে না বাদ দাও। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। আগে বাচ্চা নষ্ট করার ঔষধ খাওয়ানোর চেষ্টা করো। যে মেডিসিন দিছি এক ডোসই যথেষ্ট।

– আচ্ছা চিন্তা করো না। খাওয়াবো যেভাবেই হোক।

– এদিকে মৌ তার পেটে হাত দিয়ে বলছে’ কিরে কেমন আছিস? ভুলে গেছিস আমায়? আচ্ছা তুই কি মন খারাপ করেছিস? তোর বাবাই তোকে মারতে চেয়েছিল বলে? শোন না, আল্লাহ তায়ালা সহায় হলে আমার দেহে প্রাণ থাকতে তোর কিছু হবে না। কি হলো তুই কাঁদছিস? কাঁদিস না, তোর বাবাই এর দোষ নেই। আমিই তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নিজের গর্ভে ধারণ করেছি। অভিশাপ দেস না মা কে কেমন? তুই একদম ভয় পাবি না। আমি আছি তোর সাথে তোর কিছুই হবে না। আমি তোর কিছুই হতে দিবো না। আবারো কাঁদছিস? কাঁদিস না, আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না। দেখিস না সবাই আমাকে কত ভালোবাসে। তুই ঘুমা। মৌ তার পেটে হাত রেখে এসব বলছে, আর অঝোর নয়নে কাঁদছে।

হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে ওঠল।
– মৌ চোখের পানি মুছে দরজা খুলে দিতেই দেখল, রিত্ত আর রাজের মা দাঁড়িয়ে আছে। মৌ রাজের মা’কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।
– কি হলো মা কাঁদছিস কেন?.
– মা আপনাকে অনেক মিস করছি। আমার তো মা নেই তাই।
– ধূর পাগলী কে বলছে তোর মা নেই? আমি কি মরে গেছি। আমার কাছে রিত্ত যেমন তুই ও সেরকম।
– তোর জন্য অনেক মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু কি করবো বল? ভাইটা যে অসুস্থ।

– সন্ধা বেলা, রাজ, রিত্ত আর মা বসে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই।
– রিত্ত বলে ওঠল, মা এদেরকে ক্ষমা করলে চরম অন্যায় হবে। ছি:ভাইয়া ছি, তুই এমন একটি কাজ করবি আমরা কল্পনাতেও ভাবিনি । আমাদের মানসম্মান আর কিছু রাখলি না। আমাদেরকে এতটাই পর করে দিলি?
– এতোবড় একটা সত্য গোপন করলি ক্যামনে?
– মা বিচারটা তুমি করো?
– রাজের আর বুঝতে বাকি রইলো না, তার আর মৌ এর ডির্ভোস পেপারটাই হয়তো তার মায়ের হাতে পড়েছে।
– কি হলো রাজ মুখটা ওভাবে করে রেখেছিস কেন?আর তুই এমন করবি কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। তুই আমার ছেলে না। এতোবড় ধোকা কিভাবে দিলি? আজকেই বাড়ি থেকে চলে যাবি।
– আর এই যে মৌ তোমাকে তো মেয়ের অধিকার দিয়েছিলাম। সে সুযোগে এতবড়ো একটা সত্য গোপন করে গেলে? আমার সত্যিই আজ মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কি অন্যায় করেছিলাম আমি। এতোবড় কথাটা গোপন রেখেছো? এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে তুমি আর রাজ বের হয়ে যাবে।

– মা কি করেছে আমি?
– কি করেছো দেখবে?
– মৌ ভয়ে কাঁপছে, এমন সময় রাজের মা একটা কাগজ বের করেই বললো’ এটা কি?

– মৌ কান্না করে দিয়ে রাজের মাকে জড়িয়ে ধরে বলল’ মা আমাকে ক্ষমা করে দেন। ‘

মা আমি আপনাকে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রাজ বলছে আপনাকে সারপ্রাইজ দিবে।

– রাজ বউমা কি সত্যি বলছে?
– রাজ মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।

– এই রিত্ত, সবাইকে জানিয়ে দে, আমাদের বাড়িতে নতুন মেহমান আসছে আর এজন্য কাল আমাদের বাড়ি অনুষ্টান হবে। আর মৌ মা আমার এখন থেকে আর কোন কাজ করবে না। মনে রাখবে তুমি শুধু রাজের বউ নও এখন। তোমার গর্ভে এ বাড়ির নতুন প্রদীপ জ্বলার অপেক্ষায়।
– কি হলো কাঁদছিস কেন? এই মৌ?
– মা আপনি আমাকে বকা না দিয়ে, আরো কত কি বলছেন! সত্যিই আমি অনেক ভাগ্যবতী।

– আরে কি বলছিস! তুই তো আমার মেয়ের মতো। বুকে আয় মা।
– মৌ রাজের মা’কে জড়িয়ে ধরে নিজের অজান্তেই মা মা বলে ডাকতে লাগল,আর আজ কেমন যেন মনে হচ্ছে মৌ তার নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে আছে।

– এদিকে রাজ কি করবে ভাবতে পারছে না। এখন বাচ্চাটা নষ্ট করা তো আরো কঠিন হয়ে গেল! কিসের জন্য যে এসব করতে গেলাম। এখন যদি মৌ না যায় বাড়ি থেকে! আমি তো সুমাইয়াকে ছাড়া বাঁচবো না। সুমাইয়াকেও কথা দিয়েছি ওকে বিয়ে করব। সুমাইয়া তো আমাকে ছাড়া বাঁচবে না। আমাদের ভালোবাসা কি হেরে যাবে। যে ভালোবাসাকে বাঁচানোর জন্য চুক্তির বিয়ে করলাম।

রাজ অফিসে গিয়ে এসবই ভাবতে লাগল।লাঞ্চের সময় রাজের ফোনটা বেজে ওঠল!
– ফোনটা ধরতেও ওপাশ থেকে সুমাইয়া বলল’ বাবু কি করো?’
– বাবু বাবু করো না তো! আমি আছি মহা ঝামেলায়। তুমি বিকেলেই একটু দেখা করো।

– আচ্ছা!

– বিকেলবেলা সুমাইয়া আর রাজ বসে আছে। কারো মুখেই কোন কথা নেই। সুমাইয়া নীরবতা ভেঙে বলল ‘ কি হয়েছে আমার জানের?’
– আর বলোনা মৌ এর প্রেগন্যান্সি রির্পোট মা দেখে ফেলেছে। এখন তো বাচ্চা নষ্ট করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে গেল। আর মা’কেই কি ভাবে বলবো যে আমি মৌকে চুক্তি করে বিয়ে করছি। আমি কি করবো বলো? বাচ্চাটা যেকোন মূল্যে নষ্ট করতেই হবে।

– রাজ, আমি কিছু জানি না। তোমাকে যদি না পায় তাহলে আমি বাঁচতে পারবো না। আমার মরার কথাটা শুনতে পারবে। সুমাইয়ার চোখে পানি টলমল করছে। দু’জন দু’জনকে সত্যিই অনেক ভালোবাসে।

– রাজ সুমাইয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল’ তাহলে কি করা যায় সুইট হার্ট?’

– শোন আগে বাচ্চাটাকে নষ্ট করো। আর একটা কথা বলি, মৌ যা করছে সব তোমার সম্পত্তির জন্য। এই জন্য বাচ্চা নষ্ট করতে চায়নি। যেন তুমি তালাক দিলেও সন্তানের দাবি নিয়ে এসে তোমার সম্পত্তিতে ভাগ বসাতে পারে। খুব সুন্দর করে নীলনকশা তৈরি করেছে। তুমি শুনো প্রথমে বাচ্চা নষ্ট করার কথা সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলবে মৌকে। আর তা যদি না মানে তাহলে আরো দু’লাখ টাকা চুক্তির চেয়ে বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলবে। আমি মনে করি যে মেয়ে টাকার জন্য রক্ষিতা হতে পারে সে মেয়ে সামান্য একটা বাচ্চা নষ্ট করতে পারবে না এমন তো কোন কথা নেই। আর যদি না নষ্ট করে তাহলে সিউর হয়ে নিবা, তোমার সম্পত্তি লাভের জন্যই গর্ভবতী হয়েছে। তুমি হাজারবার বললেও নষ্ট করবে না। এজন্য অন্য পথে হাটতে হবে। তুমি এককাজ করতে পারো, রাতে যখন ঘুমাবে তখন মুখে সেন্সলেন্স করার স্প্রে মেরে অজ্ঞান করে নিবে। তারপর পেটে একটা জোরে লাথি দিবে, তাতে কেস খতম। আর তাতেও না হলে গাড়ি একসিডেন্ট করিয়ে দিলেই হবে। তুমি চিন্তা করো না। এ পৃথিবীর বিনিময়ে হলেও আমি তোমাকে চাই। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না রাজ।

– রাজ পার্কে সুমাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলল’ সুইট হার্ট এভাবে কান্না করছো কেন? পৃথিবীর কোন শক্তি,বা ষড়যন্ত্র আমাদের আলাদা করতে পারবে না। তুমি আমার হার্ট যে!

– সুমাইয়া রাজকে জড়িয়ে ধরে এবার ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। রাজ জানো কখনো নামায পড়তাম না। কিন্তু তোমাকে পাওয়ার আশায় নামাযের মোনাজাতেও তোমাকে চাই। তুমি আমার জীবন। তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার আগে মেরে ফেলো তাতেও সুখী হবো তবুও কখনো ছেড়ে যেয়ো না। আমি তোমাকে দেহ -মন- প্রাণ সব দিয়ে দিয়েছি।
– তোমাকে ছেড়ে কিভাবে যাবো বলো?তুমি যে আমার নিঃশ্বাস। কেঁদোনা হার্ট!

– এদিকে রাত্রে রাজ বাসায় এসে দেখে তার মা মৌকে খাইয়ে দিচ্ছে।
– মৌ ছোট্ট বাচ্চার মতো খেয়েই যাচ্ছে। রাজ ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসতেই রিত্ত খাবার নিয়ে আসলো।

– রিত্তকে খাবার নিয়ে আসতে দেখে রাজ বলল’ রিত্ত তোর ভাবীকে দিয়ে না এনে তুই আনলি কেন?

– কেন তুমি জানো না, ভাবী মা হতে চলেছে তাই সবকাজ বন্ধ!

– ওহ্ আচ্ছা। খাওয়া শেষ করতেই রাজের চিন্তাটা আরো বেড়ে গেল।

– পরের দিন জাঁকজমক ভাবে বাড়িটা সাজানো হয়েছে। গ্রাম থেকে রাজের মামা-মামী এসেছে। এছাড়া বন্ধু-বান্ধব অনেকেই। সাথে সুমাইয়াও।
– মৌকে সাজানো হয়েছে নিপুণ ভাবে। আজ প্রথম রাজ মৌ এর দিকে সু-দৃষ্টিতে তাকালো। চোখের নিচে গাঢ় করে কাজল দেওয়া, কালো রঙের নীল পাড়ের তাতের শাড়িতে মৌকে মনে হচ্ছে স্বর্গের অর্পসরী! এতো সুন্দর কোন মেয়ে হতে পারে।

-হঠাৎ রাজের চোখটা সুমাইয়ার দিকে চলে যায়। সুমাইয়া চোখের পানিতে কাজল লেপ্টে গিয়েছে। রাজের বুকের ভেতর কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠল।
-বাড়িতে অনুষ্টান শুরু হয়ে গেছে। এদিকে রাজের চোখ শুধু সুমাইয়াকে খুঁজছে। কিন্তু সুমাইয়া কোথাও নেই। রাজের কিছুই ভালো লাগছে না প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। এদিকে অনুষ্টান শেষ হয়ে গেলে রাতে যখন রাজ আর মৌ একি বিছানায় শুয়ে আছে। এমন সময় রাজ রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বললো’ মৌ আমাকে তুমি স্বামী মানো?
– হঠাৎ আপনি এমন প্রশ্ন কেন করছেন?
– বলো আমাকে কি স্বামী হিসেবে মানো?
– হুম। যেদিন কবুল বলেছি সেদিন থেকেই আপনাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছি।
– রাজ মৌ এর কাছে গিয়ে, মৌ এর কপালে একটা চুমু দিয়ে মৌ এর মাথাটা কুলে তুলে নিল।

– মৌ ভাবতেও পারেনাই রাজ তার মাথাটা উড়ুতে রাখবে। বুকের ভেতর কেমন যেন করছে। মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।

– রাজ মৌ এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে ‘ জানো মৌ তুমি খুব সুন্দর। সত্যি আমি তোমাকে পেয়ে ধন্য। তবে কি জানো আমার এ মনটা আমি সুমাইয়াকে দিয়ে দিয়েছি। এবং প্রতিজ্ঞা করেছি তাকেই বিয়ে করবো। সুমাইয়া আমাকে ছাড়া বাঁচবে না।
– আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বলো!
– রাজ মৌ এর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো’ আমার বুকে আসবে মৌ? বুকটা খুব শূন্য শূন্য লাগছে। আসবে একটু বুকে?
– মৌ কিছু বলতে পারে না। রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে! মনে হচ্ছে রাজের বুকের ভেতরে ঢুকে যাবে। রাজ মৌ এর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কানের কাছে মুখটা নিয়ে বললো’ মৌ তোমার গর্ভের সন্তানটা নষ্ট করে ফেলো! কি লাভ, তুমি তো অর্ধেক ডির্ভোস দিয়েই দিছো। তোমার সন্তান যখন বড় হবে তখন তো আর বলতে পারবে না আমার সন্তান। তখন সবাই কি বলবে? জারজ সন্তান। আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তাই বলছি বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেল। তোমার সন্তানকে কেউ জারজ বলুক সেটা আমি চাই না।
– মৌ রাজের কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে কলিজাটা বুক ফেঁটে বেরিয়ে যাবে। পৃথিবীতে এতো কষ্টের কথা আছে? মনে হচ্ছে কলিজাতে কেউ ছুরি চালিয়ে দিলেও এতো কষ্ট হবে না। মৌ এর চোখের পানি কোন বাঁধা মানছে না। মৌ নিজেকে রাজের বুক থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো’ রাজ তুমি ভেবো না তোমার পরিচয়ে বড় করবো আমার গর্ভের সন্তানকে! না, তা ভেবোনা। আমার চুক্তি পূর্ণ হয়ে গেলেই চলে যাবো। আর হ্যাঁ প্লিজ তুমি আমার হাতে বিষের বোতল তুলে দিয়ো আমি হাসতে হাসতে পান করবো। তবুও গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করতে পারবো না।

– রাজ বিছানা থেকে উঠে গিয়ে লর্কার থেকে টাকা এনে মৌ এর বুকে ছুড়ে দিয়ে বললো’ এখন তো পারবে নষ্ট করতে। এমনেই এতক্ষণ সময় নষ্ট করলাম। এখানে দু’লাখ আছে। বলো কাল কখন বাচ্চা নষ্ট করতে যাবে?

– মৌ টাকাটা রাজের হাতে দিয়ে, সরাসরি রাজের পা দু’টি ঝাপটে ধরে বলল’ আপনি প্লিজ এসব আর বলবেন না। আমি এ শহর ছেড়ে চলে যাবো তবুও বাচ্চা নষ্ট করতে বলবেন না। আমি মা হয়ে কিভাবে তাকে হত্যা করবো? আল্লাহর কাছে কি জবাব দিব।
– রাজ ধাক্কা দিয়ে মৌকে সরিয়ে দিল।
– মৌ ফ্লরে পড়ে ঠিকমতো উঠে দাড়াতে পারছে না। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।
– রাজ বিছানায় বসে ভাবছে কি করবে। টাকা দেওয়াতেও তো রাজি হলো না, নষ্টাটা। হঠাৎ রাজের ফোনটা বেজে ওঠল।
– ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেঁদে কেঁদে কেঁদে মি:আরাফাত সাহেব বললো’ বাবা রাজ সুমাইয়া সুসাইড করতে গিয়েছিল। এখন হসপিটালে আছে। তুমি এখনি হসপিটালে আসো। ডাক্তার বলছে অবস্থা বেশি ভালো না। রাজ কাউকে কিছু না বলেই ‘গাড়ি নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

– এদিকে মৌ কোনরকম ফ্লোর থেকে উঠে দেখে রাত দু’টা বাজে। কনকনে শীত। মৌ এর বুঝতে বাকি রইল না, তার এ সন্তানকে রাজ যেকোন মূল্যে দুনিয়ার মুখ দেখতে দিবে না। এসব কথা তো আর কাউকে বলাও যাবে না। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ল নামায পড়ে আল্লাহর কাছে বাচ্চার হেফাজতের জন্য প্রার্থনা করা।

– মৌ সুন্দর করে ওযু করে যখন জায়নামাযে দাঁড়ায় এমন সময় শীতে তার সমস্ত শরীর কাঁপছে। নামায শেষ করে আল্লাহর কাছে দু’খানা হাত তুলে বললো’ হে রহমানুর-রাহীম। তোমার হুকুম ছাড়া তো গাছের একটি পাতাও নড়ে না। তুমি আমার গর্ভের সন্তানকে তোমার গায়েবী রহমত দ্বারা হেফাযত করো। আমি তো ইয়াতিম! ছোটবেলায় মা’কে হারিয়েছি। কখনো কোনদিন তোমার কাছে নালিশ করিনি। তুমিই একমাত্র পারো আমার সন্তানকে হেফাযত করতে। এসব বলে কান্না করতে থাকে।

– অন্যদিকে রাজ পাগলের মতো সুমাইয়ার কাছে ছুটে যায়।

– রাজ হসপিটালে গিয়ে দেখে সুমাইয়াকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে।
– সুমাইয়ার বাবা রাজকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। ছোট্ট বাচ্চার মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। বাবা রাজ আমার মেয়েটা তোমাকে ছাড়া বাঁচবে না। তুমি ওকে কখনো ছেড়ে যেয়ো না।

– না আঙ্কেল কখনো ছেড়ে যাবো না।

– এদিকে ডাক্তার এসে বললো’ রোগীর জ্ঞান ফিরেছে। রাজ দৌড়ে সুমাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো’ কেন এমন পাগলামী করতে গিয়েছিলে?তোমার কিছু হলে আমি কিভাবে বাঁচতাম?
– রাজ ওই মৌ এর গর্ভে তোমার সন্তান আমি কিভাবে সহ্য করবো। তোমার সন্তান শুধু তো আমার গর্ভে স্থান পাবে।
-তুমি কান্না করো না। তোমার মাথা ছুয়ে প্রমিজ করলাম। মৌ এর গর্ভের সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে না। এবার তো খুশি?
– আমায় বিয়ে করবে তো? না করলে আমি মরে যাবো।
– হুম! করবো। আর বাজে কথা বলো না।

– এদিকে যতই দিন যাচ্ছে ততই দুশ্চিন্তা বাড়ছে। রাজের মা আর বোন বাচ্চার নামও ঠিক করে ফেলেছে। বাড়ি ভর্তি বাচ্চার খেলনা। খুশি যেন আর ধরেনা। শহরের নামকরা ধনী পরিবারে নতুন অতিথি আসবে এতে করে বাড়িতে ইদের আমেজ চলছে।

– এদিকে সুমাইয়া অনেকটাই সুস্থ। রাজকে ফোন দিয়ে নিয়ে গিয়ে হাতে একটা স্প্রে দিয়ে বললো ‘ রাজ এটা মৌ ঘুমানোর পর মুখে স্প্রে করলেই অজ্ঞান হয়ে যাবে। এমন সময় তলপেটে লাথি দিবে। বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবে। আর শোন খালি পায়ে দিবে।

-রাজ স্প্রে নিয়ে বাসায় এসে পড়ল। রাতে যখন মৌ ঘুমিয়ে গেছে। এমন সময় রাজ মৌ এর মুখে স্প্রে করে! স্প্রে করার পর মৌকে ঝাঁকি দিয়ে দেখে সেন্স আছে কি না। কিন্তু সত্যিই সেন্স নেই। রাজ মৌ এর পেটের কাপড়টা সরিয়ে পা টা তুলে জোরে করে লাথি

চলবে

লিখা_রাইসা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here