চুক্তির_বিয়ের_সংসার পর্বঃ০৯

0
2050

চুক্তির_বিয়ের_সংসার
পর্বঃ০৯
.
– ম্যাডাম সরি, আমি বুঝতে পারিনি।
– মৌ রাজের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়।
– রাজ মাথা নিচু করে সরি বলে যাচ্ছে।
– চুপ এখন বের হয়ে যাবি। আর শোন তুই ৫০ কোটি টাকার প্রজেক্টের ডিলটা কেনসেল করলি। তোর সরিতেই সব শেষ হয়ে যাবে। আর মন কোথায় থাকে? সারাদিন মেয়েদের সাথে পটোর পটোর করলে তো এমই হবে। রাজ মৌ এর রুম থেকে বের হয়ে তার ডেস্কে যেতেই দেখতে পেল ‘ লাল গোলাপ সাথে চিরকুট। চিরকুট দেখে মনে মনে ভাবলো চিরকুট কার লেখা হতে পারে!
– চিরকুটটা পড়ে রাজ অবাক হয়ে যায়। মৌ তো আমাকে সত্যি সত্যি চিঠিটা দেখলে বের করে দিবে। কেন যে তিশা মেয়েটা পাগলামী করে। রাজ চিঠিটা যখন পকেট রাখতে যাবে এমন সময় মৌ খেয়াল করলো রাজের কেবিনে ফুল আর কি যেন একটা কাগজ পকেটে রাখছে।
– মৌ কিছু না বলে, রাজের ডেস্কে এসে বলল’ মিঃ রাজ আপনার কি আজ বার্থডে?
– না ‘তো ম্যাম।
– আপনাকে ফুল দিয়ে কেউ উইশ করছে, সাথে লেটার দিচ্ছে। শুনেন অফিসে কাজ করলে ভালো করে করবেন। লুচ্চামি করার জায়গা এই অফিস না।

– আচ্ছা ম্যাডাম।
– কি আপনি কখন থেকে আচ্ছা আচ্ছা করছেন? মনে রাখবেন কথাটা।
– মৌ চলে যাওয়ার পরপরই তিশা মেয়েটা রাজের কেবিনে এসে বললো’ আজ আমার সাথে একটু বাহিরে যেতে পারবেন?
– সরি, তিশা আমার একটু কাজ আছে।
– ওহ্ কাজ আবার কিসের? আপনি যাবেন এটাই শেষ কথা। আর ম্যাডাম আপনাকে কি বললো?
– কিছু বলেনি। আপনি যান তো। কাজ আছে আমার।

-আচ্ছা আসি। আবার কিন্তু আসবো।

-তিশা চলে গেলে রাজ আবার কাজে মন দেয়।

– রাজ কাজের ফাঁকে বারবার মৌ এর দিকে উঁকি দিয়ে তাকায়। রাজের চাহনীটা মৌ এর চোখ এড়ালো না।মৌ রাজকে কিছু না বলে মুচকি হেসে কাজ করতে লাগল।

– দিনগুলো ভালোই যাচ্ছিল। এদিকে রিত্তের জন্য ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ছেলে কলেজের প্রফেসর। রাজ খোঁজ খবর নিয়ে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। সামনের মাসের ২৮ তারিখ রিত্তের বিয়ে। রাজ অফিস থেকে কিছু টাকা নিয়েছে বিয়ের এরেঞ্জ এর জন্য।

– মৌকে বিয়ের দাওয়াত দেওয়ার জন্য বাসায় কার্ড নিয়ে যায়। রাজ বাসায় ঢুকে একটা কাজের মেয়েকে বলে ম্যাডাম কোথায়?
– মৌ ম্যাডাম?
– কাজের মেয়ের মুখে মৌ নামটা শুনেই রাজের বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। তার মানে কারিমাই তার হারিয়ে যাওয়া মৌ। কিন্তু মৌ কেন তার কাছে পরিচয় লুকালো।

– কি হলো সাহেব? কিসের জন্য আসছেন?
– ম্যাডামকে বিয়ের দাওয়াত দিতে আসছি। ম্যাডাম কোথায় আছে?
– ম্যাডাম উপরের রুমে আছে। আপনি উপরে যান।

– আচ্ছা।

– রাজ বিয়ের কার্ডটা নিয়ে সোজা উপরে চলে যায়। উপরে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতেই যা দেখে তা দেখে রাজ অবাক হয়ে যায়। মৌকে এভাবে দেখবে সে কল্পনাও করেনি। মৌ তোয়াল পড়ে আছে। মনে হচ্ছে এ মাত্র গোসল করে বের হলো। মৌ রাজকে দেখি চিৎকার দিয়ে উঠলো। মৌ চিৎকার দেওয়ার সাথে সাথেই ট্রায়ালটা মাটিতে পড়ে গেল। এই আপনি কেন ভেতরে এসেছেন। খোদা বাঁচাও আমারে সব দেখে নিয়েছে। কি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন? কোন দিন দেখেননি? বের হন লুচ্চা কোথাকার।
– ম্যাডাম নিচে। তাকান।

– নিচে মানে? ভালো হচ্ছে না কিন্তু। আপনি সবকিছু দেখে নিচ্ছেন আমার।

– ম্যাডাম নিচে দেখেন। রাজ দু’হাতে চোখ বন্ধ করে বললো।

– নিচে কি দেখবো?
– ম্যাডাম নিচে আপনার ট্রায়াল পড়ে গেছে।
– মানে?
– বুঝেন না, আপনি যে শাওয়ার নিয়ে ট্রায়াল পড়েছিলেন। সেটা খুলে ফ্লরে পড়ে গেছে। মৌ এবার ফ্লরের দিকে তাকিয়ে খুব জোরেসুরে চিৎকার দিল।
রাজ স্পর্ষ্ট দেখতে পেল মৌ এর পিঠের সাইডের কাটা দাগটা। ছোটবেলা রিক্সা থেকে পড়ে গিয়ে কেটে গিয়েছিল। রাজ দু’হাতে চোখ বন্ধ করে ফেলল। মৌ দৌড়ে চেঞ্জিং রুমে চলে গেল।

– রাজ রুম থেকে বের হয়ে বেলকণিতে দাড়িয়ে আছে। মৌ আজ সবুজ রঙের শাড়ি পড়েছে।
রাজকে দেখেই মৌ তার চোখটা নামিয়ে ফেলল।

– রাজ মৌ এর কাছে এসেই বললো’ ম্যাডাম সরি। ‘
– ঠাস! করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল লজ্জা করে না আপনার,ওভাবে রুমে ঢুকে অসভ্যতামি করতে? একটা মেয়ের কাছে তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ কি জানেন? মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে তার চরিত্র। আপনি সে মূল্যবান সম্পদটা দেখে নিয়েছেন। যে অধিকারটা শুধু আমার স্বামীর আপনার নয়। আর আপনি? আপনার বিপদের সময় চাকরিটা দিয়ে কি অন্যায় করেছি?
– ম্যাডাম অন্যায় আপনি করেননি। করেছি আমি। না জেনে আপনার রুমে ঢুকে পড়েছি। আপনার কাছে কড়োজুড়ো ক্ষমা চাচ্ছি। এ মাসের ২৮ তারিখ আমার বোনের বিয়ে। আমার তো কেউ নেই যদি আপনারা আসতেন তাহলে ভালো হতো।

– দেখি কার্ডটা! ওহ্ সুন্দর হয়েছে। আমি যাবো চিন্তা করবে না।

– ম্যাডাম আপনাকে একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বলেন।
– ম্যাডাম প্রথমেই বলে রাখি, আপনি মিথ্যা বলবেন না দয়া করে। আমি শুনেছি আপনার স্বামী আছে। তাই কথাগুলো বলা উচিত না তবুও বলছি। আপনি কি আমার মৌ? যাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করেছি? আর আমার সন্তানটা কেমন আছে বলবেন?
– প্লিজ মিথ্যা বলবেন না।
– কি হলো ম্যাডাম কথা বলছেন না কেন?
– আমি আপনার মৌ হতে যাবো কেন? আমি কারিমা। আমার স্বামী সন্তান সবই আছে।- ওহ্! ম্যাডাম মিথ্যাটা না বললেও পারতেন। আর হ্যাঁ বাড়িতে ঢুকতেই কাজের মেয়ে বলেছে আপনি কারিমা নন আপনি মৌ। আর রুমে আপনার পিঠে, কাটা দাগ দেখে বাকিটা শিউর হয়েছি। বলেন আপনি আমার মৌ?
– হ্যাঁ আমি কারিমা মৌ নয়। যেদিন আপনার বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছি সেদিনই আমি আমার মাঝে মৌকে মেরে ফেলেছি। সাথে অবৈধ সন্তানটাকে। আমার কাছে রাজ নামে কেউ মৃত। আমি নতুন করে সংসার করেছি। পেয়েছি স্বামীর হৃদয় নিংঙরানো ভালোবাসা। আর আপনি জায়নামাযের মাঝেও আমাকে রক্তাক্ত করেছিলেন। আমি অতীত ভুলে গিয়েছি। দয়া করে আমার সুখের সংসারে আগুন লাগাবেন না। আমি মৌ না, প্লিজ কারো সামনে মৌ ডাকবেন না। ম্যাডাম ডাকবেন। কারণ আপনার মতো অহংকারী আমার নাম ধরে ডাকার যোগ্যতাও রাখে না।

– ওহ্ আচ্ছা ম্যাডাম। ধন্যবাদ সত্যটা বলার জন্য। শুনেন সেদিন যা করোছিলাম সব ভুল ছিল আমার। ভুলটা বুঝতে পেরেছিলাম। তবে দেরী হয়ে গিয়েছিল। আর ভাববেন না আপনার সুখের সংসারে আগুন লাগাবো। আপনার সাথে আমার মালিক শ্রমিক সম্পর্কই থাকবে। আপনি সুখী হোন এটাই চাই।
– ধন্যবাদ বুঝার জন্য। আপনি থাকেন আমি রুমে যাচ্ছি।

– এমন সময়, রিচি কোথায় থেকে যেন দৌড়ে এসে বললো’ বন্ধু তুমি কখন এসেছো? আমার জন্য চকলেট নিয়ে এসেছো?
-রাজ পকেট থেকে চকলেট বের করে দিল। আসার সময় চকলেট নিয়ে এসেছিল। সেদিন অফিসে রিচি চকলেট চাওয়াতে। রিচি চকলেট পেয়ে রাজর দু’গালে চুমু দিয়ে বললো এবার তুমি দাও তো।

– রাজ রিচির কপালে চুুমু দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। রাজের মনে হচ্ছ বুকটা প্রশান্তিতে ভরে গেল।
– কিছুক্ষণ পর মৌ এসে বললো’ চলো অফিসে যাব। ‘ রাজ মৌ এর সাথে গাড়িতে উঠতে গেলে। মৌ বলল’ আপনি একটা টাক্সি করে আসেন। ‘

– রাজ কিছু না বলে রিক্সা করে অফিসে যায়।
– মৌ অফিসে বসে মনমরা হয়ে আজকের ঘটনাগুলি ভাবছে। চোখের সামনে অজস্র কাহিনী ভেসে উঠছে। রিত্তকে খুব মনে পড়ছে। মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে। এখনো রাজ আর সুমাইয়ার করার অত্যাচারের কথা ভাবলে শরীরটা কেমন যেন শিউরে উঠে। রাজকে দু’চোখে দেখতে মন চায় না। কথাগুলো মনে পড়লে। হঠাৎ মৌ দেখে রাজ তিশার হাত ধরে আছে। মৌ কিছু বললো না রাজের এখনো আগের স্বভাব যায়নি।

– কি হচ্ছে তিশা হাত ধরলে কেন?
– সারাজীবন ধরব তাই ধরলাম। রাজ তোমাকে প্রথমম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি।
– ওহ্ তাই বুঝি?
– হুম বিশ্বাস করো! কসম করে বলছি তোমায় ভালোবাসি।
– হুমম তিশা তুমি অনেক সুন্দর। তবে আমি যদি অন্য কাউকে ভালো না বাসতাম তাহলে তোমায় ভালোবাসতাম।

– তিশার মুখটা বাংলায় পাঁচ হয়ে গেল। মুখটা গোমড়া করে তিশা চলে গেল। এদিকে মৌ পিয়ন দিয়ে রাজকে ঢেকে পাঠালো। ভাবলো রাজকে একটা শিক্ষা দিবে। কলায় খোসা তার দরজায় সামনে এমন ভাবে রাখলো যেন রাজ রুমে প্রবেশ করেই সেখানে পা দিয়ে পিচলে পড়ে যায়।

– এদিকে মৌ তার রুমের দরজাটা লাগিয়ে রেখেছে। রাজ এসে দরজায় নর্ক করেই মৌ গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
– ম্যাম দরজা বন্ধ করে রেখেছেন কেন?
– এমনি ভিতরে আসেন। রাজ ভিতরে আসার সময় দরজায় রাখা কলার খোসার উপর পারা দিতেই স্লীপ খেয়ে মৌ এর উপর পড়ে। মৌ ফ্লরে পড়ে যায়। রাজ মৌ এর উপর পড়ে। রাজের ঠোঁট দু’টি মৌ এর ঠোট অনিচ্ছতাকৃত স্পর্শ করে। মৌ চোখ বন্ধ করে ফেলে। রাজ উঠতে পারছে না। হঠাত কে যেন পিছন থেকে রাজকে লাথি দিয়ে মৌ এর উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো’ কিরে তোর সাহস কি করে হয় আমার স্ত্রীর সাথে অসভ্যতামি করার।

-কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
– আর তুমি কেন যে এসব লোকদের চাকরী দাও বুঝিনা।

– তিশান শান্ত হও। আর রাজ তুমি তোমার রুমে যাও।
– রাজ কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল। রুম থেকে বের হওয়ার আগে, চোখের পানিটা শার্টের হাতা দিয়ে মুছে নিল।

– মৌ তিশানের দিকে তাকিয়ে বলল’ তুমি কখন আসলে?
– কেন এসে কী সমস্যায় ফেল্লাম? আর সরি এসব কিছু করার জন্য।
– না এটা তোমার দায়িত্ব। বরং আমি অনেক খুশি।

– তিশান চলে গেলে মৌ ভাবতে লাগে, কাজটা কি ঠিক হলো? রাজের তো কোন দোষ নেই তারপরেও রাজকে শাস্তি পেতে হলো। মৌ এর খুব খারাপ লাগছে কেন জানি। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। তাই পিয়নকে বলল রাজকে ডেকে দিতে। পিয়ন রাজকে গিয়ে বলল ‘ স্যার ম্যাডাম আপনাকে যেতে বলছে।
– আচ্ছা আপনি যান আমি যাচ্ছি।
– রাজ মৌকে বলল ‘ বসব ম্যাম?’

– হ্যাঁ বসো।
– রাজ সরি আজকের ঘটনার কথা ভেবে কষ্ট পেয়ো না ।
– না ম্যাম কিছু মনে করিনি!
– আসলে তিশান যে এমন করবে ভাবতে পারিনি। আর তিশান এমন না কিন্তু তোমাকে আর আমাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে নিজেকে কন্টোল করতে পারেনি। জানো তিশান আমাকে অনেক ভালোবাসে। সে চায়না অন্য কারো স্পর্শ আমার গায়ে লাগুক।

– ওহ্ আচ্ছা! ম্যাম আপনার এ নিয়ে ভাবতে হবে। আপনার স্বামীর জায়গায় আমি হলেও হয়তো তাই করতাম। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। আমি দরজা খুলতেই নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারিনি। মনে হয় পায়ের নিচে কিছু একটা পরেছিল।

– আচ্ছা যাও।
– ঠিক আছে। আর হ্যাঁ আপনার হাসবেন্ড অনেক সুন্দর। আমার থেকেও।

– হুম ধন্যবাদ। দোয়া করো ওর সাথে যেন সারাজীবন কাটাতে পারি।

– হুম অবশ্যই। কথাটা বলতে গিয়ে রাজের গলাটা কেমন যেন ধরে এলো। মৌ এর সামনে থাকলে রাজ কেমন যেন হয়ে যায়। রাজের খুব করে মন চাচ্ছে মৌকে বুকে টেনে নিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে। মৌকে যে সে বড্ডবেশি ভালোবেসে ফেলেছে।
– কি হলো রাজ মন খারাপ?
– না ম্যাডাম গরীবের আবার মন খারাপ! মন খারাপ না। আমি আসি ম্যাডাম।
– আচ্ছা।

– রাজ মৌ এর রুম থেকে বের হয়ে গিয়ে ডেস্কে বসতেই ‘ তিশা গিয়ে বলল, রাজ আমার সাথে বিকেলে এক জায়গায় যেতে হবে।
– কোথায় যাবো বলো তো?
– একটু শপিং এ যাবো।
– তো যাও আমাকে কেন নিচ্ছো?
– ধ্যাত! আমি বলছি তাই যাবে বুঝা গেল?
– যদি না যাই?
– জোর করে নিবো।
– তাই বুঝি।

– হুম তাই। এখন বলো যাবে কি না?
– আচ্ছা যাবো।
– সত্যি যাবা। এই বলে তিশা রাজকে জড়িয়ে ধরে বলে ‘ থ্যাংকু! অনেকগুলো।
– রাজ অনেকটা চমকে যায় তিশার কান্ড দেখে। তিশাকে বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে’তিশা কি হচ্ছে?’
– সরি রাজ! আমি এমনি খুশির কথা শুনলে জড়িয়ে ধরি।
– এই যে মিস! আপনার এ রোগ ভালো করেন। নয়তো মান সম্মান আর কিছুও থাকবে না। আর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করেন।

– আচ্ছা। আর হ্যাঁ রাজ তুমি কিছু মনে করো না । কেমন?

বিকেলবেলা তিশা রাজকে নিয়ে শপিং করতে বের হয়। এদিকে মৌ রিচিকে নিয়ে কেনাকাটা করতে বের হয়। তিশা একটা শাড়ি হাতে নিয়ে বলল’ দেখতো রাজ শাড়িটা কেমন লাগে?
– রাজ নীল একটা শাড়ি দেখিয়ে দিয়ে বলল’ তিশা তোমাকে নীল শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগবে।
– তাই বুঝি? আচ্ছা এটা তাহলে প্যাক করেন।
শাড়িটা প্যাক করেন। আর ওই যে নীল রঙের পাঞ্জাবিটা দেখান তো। তিশা পাঞ্জাবিটা নিয়ে রাজের গায়ে ধরে বলল তোমাকেও নীল পাঞ্জাবিতে সুন্দর লাগে। তাই বুঝি কিন্তু আমি তো তোমার দেওয়া পাঞ্জাবি নিব না।
– আচ্ছা নিয়ো না। না নিলে তোমাকে জড়িয়ে ধরবো। বলো নিবে কি না?
-আচ্ছা নিলাম। তবে এটা ঠিক না।
– ধ্যাত তুমি না আমার বন্ধু বন্ধুরটাই তো নিবে।

-হঠাৎ রিচি মৌকে বলল’ মম দেখ তো কে ওটা? মম ওটা আমার -বাকি কথা বলার আগেই মৌ রিচির মুখটা ধরে ফেলল।
– মামনি চুপ কোন কথা বলো না। মৌ রাজকে তিশার সাথে দেখার সাথে সাথেই কেমন যেন হয়ে গেল। বুকের ভেতর কষ্টটা যেন দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগল। তবুও কিছু বললো না। রিচিকে নিয়ে একেবারে বাসায় এসে পড়ল।
-বাসায় আসার পর বারবার রাজ আর তিশার কথা মনে পড়ছে। রাজের চরিত্র এখনো ঠিক হয়নি। সে আগের মতোই রয়ে গেছে। কিন্তু আমার কেন এতো কষ্ট হচ্ছে?

– এদিকে যতই সময় গড়াচ্ছে, ততই তিশা রাজের প্রতি উইক হয়ে যাচ্ছে। মৌ রাজকে একবারেই সহ্য করতে পারে না।

দিনগুলি ভালোই কাটতেছিল। একদিন হঠাৎ তিশা রাজকে সরাসরিই বলে ফেলল’ রাজ আমি তোমাকে ভালোবাসি। ‘

– রাজ কথাটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তিশার মুখে ভালোবাসা কথা শুনে রাজ তিশাকে বলল’ তিশা তুমি ভুল করছো। তোমার জন্য আমি না। আমার চেয়েও ভালো কেউ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
– আমি তো ভালো চাই না, তুমি আমার কাছে শেষ্ঠ।
– তাই বুঝি! আচ্ছা আমাকে কতটা ভালোবাসো?
– জানি না কতটা ভালোবাসি তোমায়, তবে আমার দিবানিশির ভাবনায় শুধুই তুমি।

– বাহ! ভালো তো। আচ্ছা তিশা তুমি কি জানো আমি বিবাহিত?
– মানে?
– মানে আমার বউ আছে।
– রাজ তুমি মিথ্যা বলছো। তোমার বউ থাকলে দেখাও?
– রাজ তিশাকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। কারণ মৌ এর কাছে প্রমিজ করেছে তাদের অতীত কাউকে বলবে না। এখন তিশাকে কিভাকে বুঝাবে যে রাজ মৌকে বিয়ে করেছিল। রাজের সবটা জুড়েই মৌ এর বিচরণ।
– কি হলো রাজ কথা বলছো না কেন?
– তুমি বিয়ে করেছো তো বউ দেখাও?
– তিশা পাগলামী করো না। তোমাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব না।
– আমি পাগলামী করছি না আমি সত্যি সত্যি তেমাকে ভালোবাসি। বিশ্বাস করো। যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি সেদিনই আমার মনে তোমাকে জায়গা দিয়ে ফেলেছি। তিশা যখন রাজকে এসব বলছে, মৌ তখন রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিশার কথা শুনে ফেলে। মৌ দরজাটা ধাক্কা দিতেই তিশা রাজের কপালে চুমু দিয়ে দেয়।
– মৌ কিছু না বলে, তার ডেস্কে এসে পড়ে।
– রাজ তিশাকে কষে থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগল’ কি তোমার লজ্জা নেই? বন্ধু ভেবেছিলাম তোমায় আর তুমি? ছি! লজ্জা করে না তোমার। আমার ঘৃণা লাগছে। আমি তোমাকে আর আমার সামনে দেখতে চাই না। প্লিজ আর আমার সামনে এসো না। আমি কতবার বলবো আমি একজনকে ভালোবাসি। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তাকেই ভালোবাসব। তিশা আর কিছু না বলে চোখের পানিটা মুছে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

– মৌ ডেস্কে বসে বসে বারবার সে দৃশ্যটা কল্পনা করছে আর রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত রাগ কন্টোল করতে না পেয়ে তিশানকে ফোন দেয়। তিশান ফোন রিসিভ করেই বলে, তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি।
– মৌ পিয়নকে দিয়ে রাজকে ডেকে পাঠায়।
– রাজ মৌ এর রুমে আসতেই, মৌ রাজকে বলে, রাজ এটা কি পার্ক না কি কোন সিনেমা হল?
– ম্যাডাম পার্ক হবে কেন? এটাতো অফিস।
– ওহ তা না হলে তাহলে কেন মাখামাখি করেন তিশার সাথে? আসলেই আপনার চরিত্রের সমস্যা আছে।
– ম্যাডাম কি বলছেন? প্লিজ চরিত্র নিয়ে কোন কথা বলবেন না।
– আপনি লুচ্চামি করবেন আর আমি বললেই দোষ?
– ম্যাডাম চুপ করেন। আর একটা কথাও না।
– কি চুপ করবো? আর চুপ না করলে কি করবি?
– চুপ না করলে ভালো হবে না কিন্তু।
– কি বললি? ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল’ তোকে অন্য মেয়ে কিস করবে তা আমি বসে বসে দেখবো? তুই ভাবলি কি করে? কুত্তা এখন বের হয়ে যাবি।

– মৌ রাজকে চড় দিবে, রাজ ভাবতেও পারেনি। রাজ মৌ এর দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ‘ কি হলো একটা মারলেন কেন? আরেকটা মারেন? কথাটা শেষ করতে না করতেই রাজের চোখ থেকে টপ করে জল গড়িয়ে মাটিতে পড়ল। রাজের অসহায় চাহনী আর কথাটা মৌ এর কলিজায় গিয়ে লাগল মনে হয়। মৌ নিজের ব্যালেন্স ঠিক করতে পারছে না। মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে লাগল। রাজ মৌকে ধরে ফেলল। মৌ এর আপত্তিকর জায়গায় রাজের হাতটা স্পর্শ করলো। এমন সময় তিশা আর তিশান রুমে ঢুকেই দেখে মৌ এর কোমড়ে রাজের হাত। মৌ রাজের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এদিকে তিশা মৌ আর রাজকে এভাবে দেখে চিৎকার দিয়ে বলে একি হচ্ছে!
– অফিসের প্রায় সকলেই চিৎকার শুনে, মৌ এর রুমে এসে উপস্থিত।

– তিশান রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে’ কিরে,লুচ্চা তোর কিভাবে সাহস হয় আমার স্ত্রীর কোমড় ধরার!
– মৌ তিশানের কথায় যেন স্বাভাবিক হয়ে আসে। মৌ রাজের হাতটা কোমড় থেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই দেখে, অফিসের সবাই হাজির। আর সবাই আপত্তিকর অবস্থাও মৌ আর রাজকে দেখে মাথা নিচু করে আছে।

– মৌ বুঝতে পারল, তার মান সম্মান যা আছে সব গেছে।এখন তাকে কিছু করতেই হবে। মৌ রাজকে কিছু না বলেই দু’গালে চড় বসিয়ে দেয়। রাজ কিছু না বলে মৌ এর দিকে তাকিয়ে আছে।
– কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে তুই ছি!আজকের পর থেকে আমার অফিসে তোর মতো ছেলেকে দেখতে চাই না! এখন বের হয়ে যা!আর আপনারা কাজ ছেড়ে কি করতে আসছেন?
যান কাজে যান।
– সবাই রাজকে ছি! ছি করছে।
– সবাই চলে গেলে, মৌ রাজকে বলে, কি হলো আপনি এখনো যাচ্ছেন না কেন?
প্লিজ যান আপনার চেহারাটা আমার দেখতে মন চাচ্ছে না।
– ম্যাডাম আমি ইচ্ছা করে করেনি। আপনি আমাকে ভুল বুঝতেছেন।

– আমি! তাও আবার তোকে ভুল বুঝতেছি?
চরিত্রহীন! যার চরিত্রের ঠিক নাই সে আবার আমাকে বলে আমি নাকি ভুল বুঝতেছি।রাজকে কথাগুলো বলতে গিয়ে বুকেরভেতর কেমন যেন করতে লাগল।

– রাজ দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বললো’ কি ভেবেছেন? আমি আপনাকে এমনিতেই ছেড়ে যাবো? চরিত্রহীন কাকে বলে তা প্রমাণ করে যাবো।
– মৌ যখন চিৎকার দিতে যাবে তখন রাজ মৌ এর মুখটা চেপে ধরে! টেবিলের পাশেই কাটা চামিচটা রাজ হাতে নিয়ে বলে আর একটা কথা বললে এটা তোর বুকে গেথে দিব। মৌ ভয়ে চুপসে যায়। রাজ আস্তে আস্তে মৌ এর দিকে এগিয়ে যায়। মৌ এর শরীর কাঁপছে। রাজ হঠাৎ মৌ এর শাড়িটা……
প্রিয় পাঠকবৃন্দগন রাজ কি করতে যাচ্ছে? কোনো রকম আইডিয়া থাকলে দিন।
.
চলবে_কি??
.

লিখা_রাইসা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here