চুপি চুপি ইচ্ছেরা-০৯
লেখনী – সাইমা ইসলাম প্রীতি
সূর্য মহাশয় বেশ দম নিয়েই জ্বলছে আকাশে। সকালেও মেঘলা ছিল পরিবেশ। আকাশে ছিল গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ খন্ড। বাতাসে হালকা বৃষ্টির গন্ধ। সারারাত নিঝুমের ঘুম আসেনি। সকালেও দেখা মেলেনি মেয়েটার। বিভার অভিমাণ আকাশচুম্বী তা নিঝুম জানে তবে এ কাজটা কি অভিমাণ থেকে করলো নাকি রাগ থেকে তা ঠাওর করতে পারছেনা।
গ্রাম বলে ইন্টারেনেট অবস্থা ও ভালোনা। তাই সারাদিন বেহুদা কাটছে নিঝুমের। কিছুক্ষণ আগেই শশী এসে বলে গেছে তৈরী থাকতে, গ্রাম ঘুড়াতে নিয়ে যাবে নিঝুমকে। কিন্তু বিভাকে একবার না দেখলে যে মনটা শান্ত হচ্ছেনা কিছুতেই। কি করবে তাও বুঝতে পারছেনা।
রাত থেকে নিঝুমের ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছে শায়লা। বন্ধ বলছে। মি.আব্রাহীম(নিঝুমের বাবা) হঠাৎই কাল রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শায়লা একা তাকে হসপিটালে নিয়ে আসার পর জানতে পারেন হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এই নিয়ে ২য় বার। খুব বেশি ভয় পেয়ে নিঝুম কেও ফোন দেন অনেকবার। কিন্তু তিতিরের ফোনের পর বন্ধ করে রেখেছে মোবাইল।
সন্ধ্যের দিকে মোবাইল হাতে নিতেই আকস্মিক নিঝুম খেয়াল করে মোবাইল যে সে বন্ধ করেছিল আর খোলেনি। দ্রুত মোবাইল অন করতেই শায়লার হাজারো মেসেজ চোখে পড়লো তার। মেসেজ গুলো পড়ার আগেই কল করলো শায়লার নম্বরে। দু’তিন বার রিং হতেই রিসিভ করলো ফোন।
‘ হ্যালো মা। এত মেসেজ? কি হয়েছে? ঠিক আছো তো তুমি? ‘
‘ আমি তিতির। ‘
‘ তুই? ‘
‘ হুম, রাতে তোমার প্রয়োজনেই ফোন দিয়েছিলাম। তুমি তো কথা না বলেই কেটে দিলে। ‘
কথা শেষ করার আগেই কেঁদে ওঠলো। তিতিরের এভাবে কেঁদে ওঠার কারণটা ঠিক ঠাওর করতে পারছেনা নিঝুম। ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ তিতির তুই কাঁদছিস কেনো এভাবে? ঠিক আছিস তুই? ষশ্মিথ কিছু করেছে তোর সাথে? কোথায় এখন তুই? ‘
কান্নার করার ফলে গলা বসে গিয়েছে। কন্ঠ ও প্যাচপ্যাচে হয়ে গিয়েছে। তিতির কান্নার ফাঁকে কোনো রকম বললো,
‘ মামা! মামা নেই। ‘
নিঝুমের কানে যেন কথাটা বিদ্যুৎতের গতিতে বারি খেলো। বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো নিঝুম।
‘ মানে? কি বলছিস তুই এসব? ‘
আর কিছু শোনার আগেই ফোন কেটে গেলো। নিঝুম বিভাকে নিয়ে প্রায় পাগলের মতো ছুটে এসেছে বাড়িতে। বাহির থেকেই একটা চাপা কান্নার শব্দ শুনতে পেলো নিঝুম। শ্বাস প্রশ্বাসগুলো জমে শক্ত হয়ে আসছিল। মেইন গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকার আগেই কারো চিৎকার কানে খোঁচা দিলো।
‘ লোকটারে মাইরা ফেলছি আমি তিতির। মাইরা ফেলছি লোকটারে। তোরে বাসা থেকে তাড়াইয়্যা যে ভুল করছি তার মাশুল গুনব এখন। মাইরা গেলো। ‘
মিসেস শায়লা পাগলের বিলাপ পড়ছেন আর বারবার আছড়ে পড়তে চাইছেন পাশে সাদা কাপড়ে মোড়ানো দেহটার উপর। তিতির কোন রকম তাকে সামলে ধরে রাখছে। নিঝুম থেমে আবার পা চালালো বাড়ির দিকে। বিভা ততক্ষণে দৌড়ে মেইন ফটক পার করে শায়লার পাশে গিয়ে পড়েছে। নিঝুম যেন পাথর হয়ে গেছে সামনে নিস্তেজ পড়ে থাকা বাবার লাশ দেখে। চোখে কার্ণিশ বেয়ে বুঝে ওঠার আগেই টুপ টুপ করে ঝরে গেলো পানি। মাটিতে বসে পড়ার আগেই ষশ্মিথ দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো নিঝুমকে। নিঝুম কাঁদছে। অঝড়ে কাঁদছে।
তিতিরের কলিজা খানা ছিড়েঁ যাচ্ছে। মামাই যে ছিলো তার পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন। মাথা গুঁজার ঠাঁই। মা-বাবা হারানো মেয়েটাকে এই লোকটাই তো আগলে রেখেছে সারা জীবন। তিতিরের বাড়ি ছাড়া হওয়াটা সহ্য করতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন প্রথমবার। নিঝুমকে কাঁদতে দেখে ক্ষতগুলো জ্যান্ত হয়ে ওঠছে। ছিড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে তিতিরের ভেতরটা। বিভা দুর্বল পায়ে এগিয়ে গিয়ে কান্নারত শায়লাকে ঝাপটে ধরলো। সঙ্গে সঙ্গে পরিত্রাহি চিৎকার করে ওঠলো মিসেস শায়লা,
‘ ধুরে থাক আমার থেকে। তোর কারণেই হলো এমনটা। তোকে নিয়ে এসছি বলেই নিঝুমের বাবা রাগ করে ছেড়ে চলে গেলো আমাকে। মুখপুড়া অলুক্ষণে মেয়ে দূরে থাক আমার থেকে। আমার তিতির মাকে যদি আজ না তাড়াতাম এমন টা হতো? ও আমার বাড়ির লক্ষী হয়ে থাকতো। ‘
শায়লার মুখে এমন সব কথা শুনে ভরকে গেলো বিভা, তিতির দুজনেই। বিভা দ্রুত সরে গেলো মিসেস শায়লার কাছ থেকে। আখিঁযুগলে ততক্ষণে সমুদ্রের উত্তাল ডেউ হানা দিয়ে দিয়েছে। বুক ছিঁড়ে খুঁড়ে একদম গভীর নিঃশ্বাস ছেড়ে নিঝুমের দিকে তাকালো বিভা। তার হুঁশ নেই এদিকে কি হচ্ছে। নিঝুমের থেকে চোখ ছিটকে নিয়ে তাকালো ষশ্মিথের দিকে। কাঁদলে পুরুষকে কেমন দেখায় তা বিভা জানে না। তবে ষশ্মিথের চোখ মুখ আহত।
বৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত ধানের জমির মতো এলো চুল, প্রস্ফূটন চেহারায় শ্রান্তের আভা। শক্ত হাতে সামলে রাখছে সে নিঝুমকে। শায়লাকেও সামলাচ্ছ। কিছুবাদেই জোরজার করে তিতিরকে পানি খাইয়ে দিচ্ছে। তিতিরের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা তার চোখে কর্মে স্পষ্ট। যে কারো মন শান্ত হবে পুরুষের এ রূপে। কিন্তু নিঝুম?
নিজেই আবার নিজেকে সামলে নিলো বিভা। কি পরিস্থিতে, আর ও কি ভাবছে! নিজের প্রতি রাগ ও হলো অনেক। ওর দোষ তো ওর কপাল। কপালে ভালোবাসা না থাকলে কোথা থেকে আসবে। ও যে একটা কালা মেয়ে। ওর গায়ের চামড়া যে কারো মনে ভালোবাসার সঞ্চার করতে পারেনা।
নিঝুম তার স্থিত বোধ হারিয়েছে। বিধ্বস্ত হয়ে গেছে ওর মন। হঠাৎই দৌড়ে গিয়ে বাবার লাশ বুকের মাঝে তুলে নিয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠলো। তিতির আর ষশ্মিথ কোনোরকমে তাকে আলাদা করলো। ষশ্মিথ লাশ ঠিক করে রাখলো। মরা দেহে কখনোই এভাবে হাত দেয়া উচিত না। ষশ্মিথ আব্রহীমের মৃত দেহ ঠিক করে পেছন ফিরে দেখলো নিঝুম তিতিরকে আষ্টে পিষ্ঠে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। তিতির ও কাঁদছে। এভাবে থাকাটা ষশ্মিথের খারাপ লাগলেও কিছু বলতে পারলনা। তিতিরকে তার অন্য কোনো ছেলের সাথে সহ্য হয় না। কিন্তু এটা সত্যিই তেমন পরিবেশ না। চোখের জলের পরিমাপ করে শেষ করা যাবেনা হয়ত, সকলের চাপা কান্নায় চারপাশ মৌ মৌ করছে। ষাহবাব হোসমামের ও খুব প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন আব্রাহীম।
আব্রহীমের দাফন কার্য সম্পাদনের পর তিতিরকে কয়েকদিন নিঝুমের বাসায় থাকার জন্য রেখে যায় ষশ্মিথ। কারণটা মিসেস শায়লা। বর্তমানে তার শারীরিক এবং মানসিক কন্ডিশন খুবই খারাপ। একমাত্র তিতির ছাড়া সে আর কিছুই বুঝছে না। আর কারো সাথে কথাই বলছে না। বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। বিভাও গুটিয়ে নিয়েছে নিজে। ও বুঝে গেছে ওর প্রয়োজন ফুঁড়ালো বলে।
–
আকাশে স্পষ্ট কুচকুচে কালো মেঘ। একটু বাদেই তারা হুমরি খেয়ে পড়বে মাঠে ঘাটে জলে জঙ্গলে। পরিবর্তন করবে নিজের রূপ। তাদের ছুটে পড়া দেখে অনেক মানুষ হয়ত হাত মাথায় চেপে দৌড়ে যাবে। সেই তাড়া আজ নেই তিতিরের। মেঘে পানির কণা জমে বৃষ্টি হয়ে ঝরার আগে যেমন ভারী হয়ে থাকে তিতিরের বুকের ভেতরটা তেমন ভার হয়ে আছে।
ষশ্মিথ কাল তাকে নিতে এসছিল। শায়লা যেতে দায়নি। দুটো মাস থেকেছে ও এভাবে। কলিজাটা পুড়ে যাচ্ছে ষশ্মিথের জন্য। কেঁদেওছে। কিন্তু এর শেষ কোথায়। নিঝুম তিতিরকে পেয়ে অজান্তেই সরে এসছে বিভার কাছ থেকে। বিভাও গুটিয়ে গেছে। তিতির এর অবশ্য খুব ভালো লেগেছে মেয়েটাকে।
ভাবতে ভাবতেই বৃষ্টি নামে। শাড়ির আঁচল মাথায় ঠেকিয়ে দৌড়ে ঘরে ডুকে যায় তিতির। তাও ভিজে গেছে অনেকখানি। চুল ল্যাপ্টে রয়েছে গলায়, কপালে। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছতে মুছতে নিচে এসে দেখে ষশ্মিথ এসেছে।
তিতির তৈরীই ছিল আগে থেকে। কারো বারন না শুনেই এবার চলে এলো ষশ্মিথের সাথে। ষশ্মিথ ও বেশ খুশি। ও ভেবেছিল নিঝুমকে দেখে হয়ত তিতির দূর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। বরং কাল রাতে তিতিরই ফোন দিয়ে বললো ওকে যাতে নিয়ে আসে। বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিলো দুজন। ষশ্মিথ বললো ভাইয়া ভাবীকে নিয়ে শ্বশুড় বাড়ি গেছে। তাই মা নিজের হাতে রান্না করেছে। ডায়নিং এ শৈলী নিজ হাতে খাইয়ে দিলো তিতিরকে। তিতিরের মুখে লোকমা তুলে দিলেন।ধীরে সুস্থেই বললো,
‘ এই মাকে তো একদমই সময় দিস না তুই। ‘
তিতির মুচকি হেসে বললো,
‘ এমনকি? আচ্ছা আজ সারারাত তোমার সাথে আড্ডা দিব। খুশি? ‘
‘ আরে না। কাল আবার অনেক জার্নি করতে হবে তো। ‘
হতবুদ্ধি হয়ে তিতির বললো,
‘ কাল জার্নি? ‘
‘ হুম কাল। ‘
‘ কেনো কোথায় যাচ্চি কাল? ‘
‘ উহুম, তুই আর ষশ্মিথ যাবি। ‘
‘ কিন্তু কোথায়? ‘
‘ খাগড়াছড়ি। ‘
‘ খাগড়াছড়ি? ষশ্মিথ যেখানে থাকে। ‘
মিসেস শৈলি মুচকি হাসলেন। তিতিরের চোখে মুখে নির্বুদ্ধিতা আর লজ্জার ছাপ দেখে। বললেন,
‘ জি, এখন ঘরে গিয়ে একটু রেস্ট নাও। তারপর আমার কাছে আসবে কেমন। ‘
তিতির মাথা ডানপাশে হেলিয়ে সম্মতি দিয়ে ঘরে চলে এলো। ষশ্মিথ তার কিছু বাদেই চলে এলো। তিতির তখন বিছানায় শুয়ে ছিল। ষশ্মিথকে দেখে ওঠে বসলো। আসন করে বসে বাচ্চাদের মতো তাকিয়ে আছে। ষশ্মিথ গায়ের শার্ট খুলে এসে খালি গায়ে শুয়ে পড়লো। তিতিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘ কি দেখছো? ”
‘ আপনাকে। ‘
ষশ্মিথ হেসে তিতিরকে বুকে টেনে নিলো। তিতির ষশ্মিথের নগ্ন বুকে নিজের নাক ঘষেঁ বাচ্চা বিড়ালের মতো শুয়ে রইলো। ষশ্মিথ ওর কান্ড দেখে হেসে বললো,
‘ তোমার কলেজ থেকে পনের দিন ছুটি নিয়ে নিয়েছি।এই কদিন আমার সাথে থাকবা। ‘
‘ উম,,ভালো হয়েছে। ‘, আরো একটু গায়ের সঙ্গে মিশে শোয় তিতির। ষশ্মিথ তার মাথায় চুমু খেয়ে বলে,
‘ এই তুমি এত আদুরে কেন? ‘
‘ জানিনা তো। ‘
‘ ইশঃ জানতে হবেও না। সব সময় এমন বাচ্চাই থেকো তাহলেই চলবে। ‘
তিতির কিছু না বলে কামোর বসিয়ে দেয় ষশ্মিথের বুকে। ষশ্মিথ চোখ বুঁজে বলে,
‘ আল্লাহ, তোমারে কি খেতে দেয় নাই? ‘
তিতির নিশ্চুপ থাকে। ষশ্মিথ হঠাৎ করেই তিতিরের উপর ঝুকে বললো,
‘ একটা কথা বলি? ‘
‘ উহুম। ‘
‘ ধুর দুষ্ট মেয়ে! নিঝুমের ব্যাপারে। ‘
তিতিরের চেহারার রং পাল্টালো। খুব সিরিয়াসলি বললো,
‘ হুম বলো। ‘
‘ বিভা কিন্তু নিঝুমকে প্রচন্ড ভালোবাসে। ‘
নিঃসংকোচে তিতির বললো,
‘ আমারো তাই মনে হয়। আর বিভা মেয়েটা খুবই লক্ষী। ‘
ষশ্মিথ এবার দুষ্টুমি করে তিতিরের কাধে মুখ গুজে বললো,
‘ আর আমিও বাসি! তোমায়। ‘
তিতির দ্রুত ষশ্মিথকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
‘ এই ফাজিল ছেলে আমি ঘুমাবো। যাও খাট থেকে উঠো। ‘
‘ কেনো কেনো? ‘
‘ তুমি শয়তানের হাড্ডি। ‘
‘ আচ্ছা তাই! ডিস্টার্ব করবো না থাকি প্লিজ। ‘
বাচ্চামো করে কান ধরে বললো ষশ্মিথ। তিতির ফিক করে হেসে ষশ্মিথের এক হাত টেনে পেটের উপর দিয়ে বললো,
‘ এবার একদম চুপচাপ শুয়ে থাকবে। জ্বালালে একদম তুলে ফেলে দিব। ‘
ষশ্মিথ হেসে বললো,
‘ ঘুমাও পাগলি। ‘
সকাল নয়টার দিকে রওনা দিলো তিতির আর ষশ্মিথ। সেদিন সেনাবাহিনীর বাস ছিলনা বলে শান্তি পরিবহনে যাত্রা করলো। শান্তি পরিবহন খাগড়াছড়ির দীঘিনালা পর্যন্ত যায়। বিকেল সাতটায় দীঘিনালাতে পৌঁছালো। সেখানে আর্মি জিপ আগে থেকেই রেডি ছিল। সাড়ে আটটা নাগাদ পৌঁছে গেলো খাগড়াছড়ি জেলা সদর ক্যান্টরমেন্টে। ঘরে এসে ধপাস করে খাটে ছড়িয়ে পড়লো ষশ্মিথ। আবার এক হাতে মাথার ভর দিয়ে তিতিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ পরিশ্রম হয়েছে খুব। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। ‘
দুইজন ফ্রেশ হতে হতে ওয়ার্ড ম্যান এসে খাবার দিয়ে গেছে। ভাত, মুরগি আর ডিম-আলু ভাজি। ষশ্মিথ নিজ হাতে খাইয়ে দিলো তিতিরকে। তারপর নিজে খেয়ে নিলো। ষশ্মিথের জন্য কেবল সিঙ্গেল বেড রয়েছে। তবে দু’জন থাকা যেতেই পারে। শার্ট খুলে এসে খালি গায়েই শুয়ে পড়লো ষশ্মিথ। তিতির সঙ্গে সঙ্গে ঝাপিয়ে পড়লো ষশ্মিথের বুকে। অসংখ্য চুমতে ভরিয়ে দিতে লাগল।ষশ্মিথের নিঃশ্বাস ভারী হলো আরো। আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হারিয়ে গেলো তিতিরপাখিতে।
দিনের প্রথমে আকাশে কিছু মেঘ দেখা দিলেও আটটার দিকে ফর্সা হলো আকাশ। সূর্য দেখা না গেলেও মেঘ তেমন নেই। তিতির আর ষশ্মিথ সাতটার মধ্যেই নাস্তা সেরে ফেললো। এই প্রথম তিতিরের খাগড়াছড়ি গমন।
ষশ্মিথ অফিস যাওয়ার আগে তিতিরের জন্য জিপ রেডি করে দিল। তিতির নিজে নিজেই যাতে ক্যান্টরম্যান্ট ঘুরে দেখতে পারে। কাজের চাপ কম থাকার কারণে দুপুরের একটু পর চলে এলো ষশ্মিথ। তিতিরকে ঘুরাবে বলে। তিতিরের জন্য এটা খাগড়াছড়ি একটা ট্রিপই হয়ে গেলো বটে।
ষশ্মিথ আর তিতির বের হলো হটি কালচার পার্কের উদ্দেশ্যে। খাগড়াছড়ি সদর থেকে গঞ্জপাড়া রোড দিয়ে যেতে হবে হর্টিকালাচার পার্ক। নিজস্ব গাড়ি থাকা সর্তেও ভ্রমণ উপভোগ করার জন্য রিকশা ভাড়া করে নিলো ষশ্মিথ। সদর থেকে জনপ্রতি মাত্র ২৫টাকা ভাড়া। আধ ঘন্টা সময়ের ব্যবধানে ওরা পৌঁছে গেলো হর্টিকালকার পার্কে।
খাগড়াছড়ি শহরের জিরোমাইল এলাকায়, ২২একর জমির উপর এই হ্যারিটেজ পার্কটি তৈরী। ২টি টিকেট কেটে ভেতরে ঢোকলো তিতির আর ষশ্মিথ। পার্কের ভেতরের পরিবেশ মনোরম এবং শান্ত। গাছগাছালিতে ভরপুর। পার্কের ভেতর তিতিরের সবচেয়ে বেশি মন কারলো ঝুলন্ত ব্রিজ। একটা বড় সুইমিংপুল ও রয়েছে। ষশ্মিথ তিতিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘ ঝুলন্ত ব্রিজ এবং ট্রয় ট্রেন হলো এই পার্কের বিশেষত্ব। ‘
‘ কত কত ফুল আর ফলের বাগান। কি মনোরম মার্ধুয্য পূর্ণ না জায়গাটা! ‘
তিতির বাচ্চাদের মতন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সবকিছু। ষশ্মিথের ভালোলাগলো। তিতিরের মুখের হাসিটা কেনো এত দামি সে জানেনা। মুচকি হেসে বললো,
‘ হুম। ‘
ষশ্মিথ তিতিরের হাত জরিয়ে ধরে রাখলো। ট্রয় ট্রেনে উঠার পর বোট রাইডিং এর জন্য চলে এলো। লেকের পাশে। লেকের পানির ধারা বয়ে গেছে দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে। প্রকৃতি যেন নিজেকে নিজেই সাজিয়ে রাখছে। ভরে তুলেছে সৌরভে।
রাত আটটার আগে অফিসার্স মেসে ফিরে এলো ষশ্মিথরা। এসেই তিতির গোসল করে নিল। তিতির এই প্রথম এলো খাগড়াছাড়ি ক্যান্টরম্যান্টে। তাই সকলের সাথে পরিচয়ের জন্য ছোট্ট একটা পার্টি রাখা হয়েছিল সেনাবাহিনীর তরফ থেকে। হালকা কফি কার্লারের একটা শাড়ি পড়ে নিলো। সাথে স্টোনের হালকা গহনায় সাজিয়ে তুললো নিজেকে। পার্টি, খাওয়াদাওয়া শেষে রাত দশটায় বাড়ি চলে এলো। তিতিরের মেডিক্যালের অনেকগুলো ক্লাস মিস গিয়েছে মামার মৃত্যুতে। তার উপর ষশ্মিথের এখানে নিয়ে আসা! তাই সন্ধ্যেতেই কিছু বই আনিয়ে রেখেছিলো ষশ্মিথ। ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসে গেলো তিতির।
খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে দু’মগ কফি বানিয়ে তিতিরকে ডেকে তুললো ষশ্মিথ। ঘুম জরানো চোখ। নেশাতুর কন্ঠ!ষশ্মিথের দারুণ লাগে তিতিরের ঘুম জরানো কন্ঠটা। অনেক ডাকার পরও তিতির উঠতে নারাজ।ষশ্মিথ উঠিয়ে বসিয়ে দিচ্ছে। আবার কম্বলের ওমে লুটিয়ে পড়ছে তিতির। ষশ্মিথ রেডি হয়ে তিতিরের কপালে চুমু দিয়ে বের হয়ে গেলো অফিসের উদ্দেশ্যে। ১২টার দিকে তিতির ষশ্মিথে অফিস ঘুরে ফিরে দেখে একসাথে লাঞ্চ করে নিলো। তারপর বের হলো দীঘিনালার জন্য। যদিও ঘুরতে আসলে দীঘিনালার তৈদুছড়া ঝর্ণায় আগে আসা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রমটা হলো। খাগড়াছড়ি সদর থেকে তৈদুছড়া ঝর্ণা যেতে প্রায় দেড় ঘন্টার মতো লেগে গেলো। সাথে ছোট্ট ব্যাগে জামা-কাপড়, ফাস্ট এইড বক্স, স্যালাইন, গ্লুকোজ, শুকনা খাবার আর জল। কারণ তৈদুছড়া ঝর্ণা দুটো। প্রথম ঝর্ণা থেকে ২য় ঝর্ণা যাওয়ার রাস্তা অত্যান্ত দূর্গম। অনেক ঝুঁকি নিয়ে যেতে হয়।
পাহাড় আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আধঘন্টা হাটার পর দেখা মিললো তৈদুছড়া প্রথম ঝর্ণার। পাহাড়ি ঝর্ণার নদীর পাড় ধরে সামনে আগাতে হয়। চলার পথে অনেক দূর থেকেই তিতির শুনতে পাচ্ছিলো এই ঝর্ণার শোঁ শোঁ শব্দ। আর নদীর পাহাড়ি আকাঁ বাকাঁ পথ ধরে ছুটে চলা মুখরিত কলকল ধ্বনি। এক গাঁ শিরশানো মোহময় অনুভূতি। প্রকৃতি আর সৌন্দর্য এই ঝর্ণাকে দিয়ে এক প্রবল শক্তি। কারো কাছে অপূর্ব হয়ে ওঠার শক্তি। এই ঝর্ণা প্রায় ৩০০ ফুট উচ্চতা থেকে পানি প্রবল বেগে ঝড়ে পড়ছে নিচে। অসম্ভব সুন্দর এই দুধ সাদা ঝর্ণার পানি। তিতির খুশিতে বললো,
‘ এতো সুন্দর কেনো! ‘
‘ কারণ সব সুন্দর মানুষেরা এটা দেখতে আসে তাই! ‘
তিতির হাসলো। লজ্জা মিশ্রিত হাসি। তারপর বললো,
‘ জায়াগার নাম দীঘিনালা। তো দীঘিনালা ঝর্ণা হওয়ার কথা ছিলো না! ‘
‘ আরে নারে পাগলি! ত্রিপুরা অধিবাসী থাকে এদিকে। ত্রিপুরা ভাষায় তৈদু মানে পানির দরজা আর ছড়া মানে ঝর্ণা। ‘
তিতির লজ্জা পেলো তার নির্বুদ্ধিতার জন্য। অন্যান্য সব ঝর্ণা থেকে এটি ব্যাতিক্রম। পানি সোজা নিচে পড়েনা। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বারি খেয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে নিচে পড়ে। ঝর্ণার ডান পাশে ১০০ ফুট উপরে ওঠলে দেখা মেলবে তৈদুছড়া ঝর্ণার মুখ। তবে পাহাড়ের গা বেয়ে ৮০-৮৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে ওঠতে হবে। যেখান থেকে পানি নিচে পড়ছে। উপরে ঝর্ণার পানি প্রায় ছোট খাটো নদীর মতো। যা পার করে যেতে হবে থাংঝাং ঝর্ণার কাছে। যে ঝর্ণা তৈদুছড়ার চেয়েও নয়নাভিরাম সুন্দর। তবে পথও ঠিক সেরকম ভয়ংকর আর রোমাঞ্চকর।
ঝর্ণার পানি পাড় করার সময় ষশ্মিথ তিতিরের হাত ধরে রাখে শক্ত করে। কারণ একবার তাল হারিয়ে ফেললে স্রোতের বিশাল টানে দু’তিনশ মিটার দূরে গিয়ে পড়বে। ঝর্ণার পানির সাথে নিচে পড়বার ঝুঁকি আরো বেশি। নিচে কমোর সমান স্বচ্ছ পানি আর পায়ের কাছে হাজারো পাথর। পাহরের খাঁজে পা রেখে চলেছে দুজন। থাংঝাঃ ঝরণার ঝির ঝির পানি তৈরী করেছে এই পথ।
এই পানির স্রোতের বিপরীতে আরো এক ঘন্টা হাটলে থাংঝাং ঝর্ণায় পৌঁছানো যাবে।
হঠাৎই হাত ছুটে যায় তিতিরের। স্রোতের টানে প্রায় হাত পাঁচ-ছয়েক দূরে ছিটকে পড়ে। ষশ্মিথের শ্বাস আটকাবার উপক্রম। পেছন থেকে এক লোক ধরে ফেলেছিল তিতিরকে। তাই বেঁচে গেলো এ যাত্রায়। ষশ্মিথ কোনরকম দৌড়ে ঝাপড়ে গেলো তিতিরের কাছে। তিতির বেশ ঘাবড়ে গেছে। চোখের কার্ণিশ বেয়ে অঝোরে জল টপ টপ করে ঝরছে। কিছুক্ষন থেমে গ্লুকোজ আর খেঁজুর খাইয়ে দিলো তিতিরকে। পায়ের কাটা অংশে ব্যান্ডেজ করে দিলো ষশ্মিথ। পাথরের গায়ে ঘষাঁ খেয়ে ছিলে গিয়েছে অনেকটা। প্রচন্ড ব্যাথা পাওয়ার পরও ঠোঁট কামড়ে চুপ করে রইলো তিতির।
বিশ মিনিটের রাস্তা ত্রিশ মিনিটে হেটে এলো। থাংঝাং ঝর্ণার দেখা পেয়ে তিতিরের সব ব্যাথা এক লোহমায় কেটে গেছে। খুশিতে লাফাতে লাফাতে ষশ্মিথকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ ভয়ংকর সুন্দর এই ঝর্ণা। ‘
ষশ্মিথ হাসলো তিতিরের পাগলামিতে। তারপর গোসল করে নিলো দুজনে ঝর্ণার পানিতে। তিতিরের ঝাপাঝাপি দেখে মনেই হবে না একটু আগে এত বড় এক দুর্ঘটনা ঘটাতে ঘটাতে বেঁচে গেছে। পুরাই বাচ্চা! দেশি মানুষের পাশাপাশি বিদেশি মানুষের ভীরে ভরপূর থাংঝাং ঝর্ণা।
–
বিভা ছাদের প্রান্তে বসে আছে চুপচাপ। তিতির যাওয়ার পর থেকে শায়লা ঘর বদ্ধ। নিঝুমের সাথে বিভা থাকছে ঠিকি কিন্তু মানুষটা যন্ত্রের মতো হয়ে গেছে। বাবার হঠাৎ মৃত্যুটা সহ্য হয়নি।
‘ বিভা। ‘
বিভা ওর নাম শুনে চমকে ওঠে। গত একমাস ওর নাম ধরে ডাকার প্রয়োজন তো কারো পড়েনি। উজ্জ্বল চোখ দুটি পেছনে ফিরতেই জলে চুপচুপ করতে লাগলো। বিভা তড়িঘড়ি করে ওঠে দাড়ালো।
‘ মা আপনি? আমাকে ডাকতেন। আমি চলে যেতাম। আপনি কষ্ট করে আসতে গেলেন কেনো। ‘
নতঃমাথা করলো বিভা। শায়লা হাসলো। কাছে এসে মাথায় হাত রেখে বললো,
‘ মাফ করে দেরে মা। ওনার শোকে তোকে কত আবল তাবল বকেছি। মাফ করে দে। ‘
বিভা কিছু না বলেই জড়িয়ে ধরলো শায়লাকে। কান্নায় বিভোর হয়ে গেলো। শায়লা বিভাকে নিজের হাতে খাইয়ে নিজের ঘরে নিয়ে এলেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই শায়লার গল্প শুনতে শুনতে বিভা ঘুমে তলিয়ে গেল।
খাটে এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু ঘুমের নাম নেই নিঝুমের চোখে। ওঠে গটগট করে চলে এলো মায়ের ঘরে। বিভা শায়লার পাশে শুয়ে কি আরামছে ঘুমাচ্ছে।নিঝুম বিড়বিড় করে বললো,
‘ বাহ! কি ঘুম। মনে চাচ্ছে দু’গালে দুইটা দেই। আমি যে তাকে বুকে না নিয়ে ঘুমাতে পারিনা সে খবর রাখে সে! ‘
বিভাকে ঘুমের মাঝেই কোলে করে নিয়ে এলো নিজের রুমে। বিভা ঘুমে বিভোর। বিভার কৃষ্ণকালো মায়াবী মুখটার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো নিঝুম। বললো,
‘ ভয়ংকর সুন্দর তুমি মায়াবীনি। ‘
–
ষশ্মিথের উন্মুক্ত বুকে আঙ্গুলের গোড়া দিয়ে নিজের নাম লিখছে তিতির। ষশ্মিথ মোবাইলে অফিসিয়াল কিছু কাজ করে নিচ্ছে। তিতির আস্তে আস্তে গুতা দিল ষশ্মিথের বুকে। ষশ্মিথ বললো,
‘ হুম?’
‘ কি করো? ‘
‘ অফিস যাব না কাল। কাজ গুলো করতে হবে তো। ‘
‘ আচ্ছা। ‘
ষশ্মিথের বুক থেকে মাথা সরিয়ে বাহুতে রাখলো তিতির। মুখ ঘুরিয়ে একবার দেখলো। তারপর ঠোঁট উল্টিয়ে কোমল কন্ঠে বলতে লাগলো,
‘ আজ কালকার লোকেরা অনেক পাজি। পাশে কেউ থাকলেও খেয়াল করে না? ‘
ষশ্মিথ দুষ্টু হাসলো। দুষ্টামি করে বললো,
‘ বেমালুম ভুলে গেছিলাম যে পাশে কেউ আছে।’
তিতির চোখ ছোট ছোট করলো। ঠোঁট উল্টিয়ে তাকালো ষশ্মিথের দিকে। তারপর বললো,
‘ খেয়াল না করলেও জোর করে খেয়াল করাবো, হুহ। ‘
‘ আচ্ছা! ‘
‘ জি। ‘
ষশ্মিথ ফোন বালিশের পাশে রেখে তিতিরকে হেঁচকা টান দিয়ে কাছে নিয়ে এলো। কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।চোখ বুজে কপালে কপালে ঠেকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তিতির তাকিয়ে দেখছে ষশ্মিথকে। খুব ক্লান্ত লাগছে। তারপর হঠাৎ বললো,
‘ ভালোবাসো আমাকে? ‘
‘ না। ‘
‘ এএএ্যা…! এ কেমন কথা? ‘
‘ যেমন তোমার প্রশ্ন! ‘
‘ উম বলোনা? ‘
‘ যতটা ভালোবাসলে নিজের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়না ততটা বাসি। আমার সত্য তুমি।”
‘ আমি যদি মারা যাই? ‘
ষশ্মিথের হাত জোড়ার বন্ধন আরো শক্ত হলো। এমনভাবে বুকের সাথে চেপে ধরেছে যেন ঢুকিয়ে নেবে বুকের ভেতর। তিতিরের দম আটকে আসছে। তাও এক অদ্ভুত সুখ খেলে যাচ্ছে বুকের মাঝে। শীতলতা ছেয়ে দিচ্ছে শরীর।
‘ জন্ম,মৃত্যু,বিয়ে আল্লাহ্_র হাতে। তুমি যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো কারণেই ছেড়ে যাও না কেন ষশ্মিথ বেঁচে থাকব মরবার জন্য। আমার রক্তে মিশে গেছ তুমি তিতির। তুমি না থাকলে যে এই রক্ত অবিশুদ্ধ হয়ে যাবে। ‘
তিতির কেঁপে ওঠলো। শরীর নিশ্চল হয়ে গেছে।নমাথা অবশ হয়ে আসছে।নকাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
‘ আমার কাঁদতে ইচ্ছে করছে খুব। তোমার বুকে মাথা রেখে ইট্টু কাঁদব! ‘
কিছু বুঝে ওঠার আগেই ডুকরে কেঁদে ওঠলো তিতির। নাক, গাল, ঠোঁট টকটকে লাল হয়ে আছে। চোখের পানি কার্ণিশ বেয়ে পড়ার আগেই মুছে নিলো ষশ্মিথ। সিগ্ধ কন্ঠে বললো,
‘ এই কাঁদছো কেনো পাগলি! ‘
নাক টানতে টানতে তিতির বললো,
‘ জানো তো আমার খুব ভয় করে তোমাকে নিয়ে। আমি কোনোদিন ভাবিনি কেউ এতটা ভালোবাসবে আমাকে। ভালো আছি নাকি জানার লোকটা পর্যন্ত ছিল না আমার। দিনের পর দিন ভালোবাসার জন্য কাতরেছি। ভেতরটা ছাঁড়খাঁড় করেছি একটুকু শান্তির আশ্রয়ের জন্য। ব্যাথা হতো। প্রচন্ড ব্যাথা হতো বুকে। ঔষুধ খেয়েও যেতো না।”
‘ এখন আছে তো! চুপ করে ঘুমাও তো এখন। কাঁদবে না একদম। ‘
তাও কাঁদছে তিতির। থমকে গেছে পরিবেশ। ষশ্মিথের বুকে মাথা গুঁজে নিজের সব দুঃখকে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে।
চলবে.