চেনা_পথে,০৬

0
249

#চেনা_পথে,০৬
#Tahmina_Akhter

— কত্ত বড়ো সাহস তুই দেখেছিস? আমার মোবাইলে অশ্লীল মেসেজ পাঠায়! চোখের নেশায় ডুবলে কি আমি তার জন্য লাইফ সেভিং জ্যাকেট পাঠাবো আর চিঠিতে বলব,, এটা পরিধান করুন আমি আপনাকে ডুবতে দেব না। ফাজিল, অসভ্য, ইতর, ওই ব্যাটাকে আমি একবার সামনে পাই দেখিস ওর প্যান্টের তলদেশে আমি…. করে দিব।

মধু বিছানায় বসে পাগলের মতো কথাগুলো বলছিল আর তুশি মনোযোগ সহকারে কথাগুলো শুনছে। মধুর কথা শেষ হবা মাত্র তুশি সহ ওর অন্য রুমমেটরা হাসতে হাসতে একে অপরের গায়ে লুটিয়ে পরে। ওদেরকে এমন পাগলের মতো হাসতে দেখে মধুর রাগ ওঠে। বিছানা থেকে নেমে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,,,

— হাসির মতো কিছু হয়েছে? দাঁত দেখিয়ে লাভ কি হচ্ছে তোদের? এখানে তো আর ব্রাশ কোম্পানির লোক নেই যে তোদের এত বাজে দেখতে দাঁতগুলো দেখে আতংকিত হয়ে ব্রাশ ফ্রিতে দিয়ে যাবে।

মধুর কথায় যদিও সবাই মিলে মনোযোগ দিয়েছিল কিন্তু ওর এমন পাগলাটে কথা শুনে আরেক দফা হাসির রোল পরলো।

মধু রেগেমেগে খাটের ওপর থেকে ওড়না গায়ে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। তুশি সহ বাকি রুমমেটরা বুঝতে দেরি করলো না যে আজ মধু ভীষনভাবে রেগে আছে। এখন যদি ওর পেছনে যায় তবে কপালে মাইর ব্যতিত অন্য কিছু নেই।

সন্ধ্যা সাতটা…

হরেক রকমের লাইটের আলো এসে পরছে রাস্তায়। অফিস ফেরত মানুষের জন্য রাস্তায় তিল পরিমাণ জায়গা নেই দাঁড়ানোর জন্য। তবুও, আজ গন্তব্যেহীন পথে হাঁটতে হবে থামলে চলবে না। মনটা যে বিষিয়ে আছে।

ফুটপাতের ওপর হাঁটতে হাঁটতে এমন এক জায়গায় এসে মধু দাঁড়িয়েছে যেখানে প্রথমবারের মতো মাশফির সাথে মধুর দেখা হয়। যদিও মূহুর্তটা ছিল টোটালি ইমবেরিসিং। ভাবতেই কেমন অস্বস্তি হয়! মাশফির কথা মনে পরতেই মধুর চেহারায় অন্যরকম এক আভার দেখা মিললো। সম্পূর্ণ অচেনা এক আভা।

— ভরসন্ধ্যায় এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন??

কারো কথায় মধু ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো মাশফি দাঁড়িয়ে আছে। মধু ওর ওড়নাটা আরেকটু মাথায় টেনে দিয়ে বললো,,

— এমনিতেই এলাম। বাড়িতে ভালো লাগছিল না।

মধুর কথা শুনে মাশফির ভ্রু-কুচকে আসে। মন খারাপের কারণটা কি? মাশফি হাত দিয়ে ওর কপালের চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলে দিলো। এতটুকু দৃশ্য দেখে মধু অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। কারণে,, লোকটা আসলেই সুন্দর। ভয়ানক সুন্দর যাকে বলে। যদিও প্রথমবার সাক্ষাৎের সময় ওতটা খেয়াল করেনি। কিন্তু,, পরপর দুবার খুব সামনাসামনি দেখে মানতেই হলো সে সুন্দর!

— মন খারাপের কারণটা আমাকে বলতে পারেন যদি না খুব বেশি পার্সোনালি হয়।

মাশফির কথায় মধুর মনে হলো একবার বলেই দেখুক? পরক্ষণে ভাবলো থাক বলার দরকার নেই। নিজের সমস্যা সে নিজেই সমাধান করতে পারবে।

— না না ছোটখাটো ব্যপারে মন তো মানুষেরই খারাপ হয়। তাছাড়া,, বাড়ি থেকে আসলাম বাবা-মায়ের কথা মনে পরছে।

মধু আংশিক সত্যি কথা বলেছে বাকিটা মিথ্যা। কারণ,, মাশফির সাথে তার এমন কোনো সুসম্পর্ক হয়নি যে,, সে মেসেজটির ব্যাপারে আলাপ করতে পারবে৷

মাশফি মধুর মুখ দেখে বুঝতে পারছে, মধুর মন ভালো নেই। আর মন খারাপের কারণটা যে সে নিজেই এটা তো মাশফি খুব ভালো করেই জানে৷ মাশফির তো এখন নিজের কপাল দেয়াল ঠুকতে ইচ্ছে করছে। কেন যে ওমন মেসেজ পাঠাতে গেল? বেচারির মনটাই খারাপ হয়ে আছে সাথে মুখটাও শুকিয়ে গেছে।

মধুর মন ভালো করার জন্য মাশফি সাহস করে বললো,,,

— একটা কথা বলি?

মধু মাশফির দিকে তাকিয়ে আবারও চোখ নিচু করে বললো,,,

— বলুন।

— পাশেই একটা স্টল আছে। আপনি যদি মাইন্ড না করেন তবে সেখানে গিয়ে আমরা ফুচকা খেতে পারি।

মাশফির আবদার শুনে মধু ভেবেছে না করে দিবে কিন্তু না করে দেয়াটা কতটুকু অনুচিত হবে সেটা ভেবেই মধু আর না করতে পারলো না। মাশফি মধুর দিকে তাকিয়ে আছে উত্তর জানার জন্য।

— চলুন।

ব্যস, মাশফির খুশি আর দেখে কে। যদিও ওর মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে ভেতরে ভেতরে কতটা সুখি সুখি অনুভূতি পাচ্ছে।

স্টলের পাশে রাখা সারিবদ্ধ ভাবে রাখা চেয়ারের দুটো চেয়ারে বসে আছে মধু আর মাশফি। মাশফির তো পেটের মধ্য থেকে কথা বের হবার জন্য আন্দোলন করছে। কিন্তু,, সুযোগ পেলে তো। আর মধু সংকোচে মাথা নীচু করে রেখেছে। নিজেকে নিজেই বকে যাচ্ছে কেন যে সে রাজি হতে গেলো? লোকটা নিশ্চয়ই ওকে হ্যাংলা ভাবছে।

দুটো সাজানো ফুচকার প্লেট এনে টেবিলের ওপর রেখে গেলো ষোল-সতের বছর বয়সের একটি ছেলে৷ মাশফি নিজের দিকে একটি প্লেট এগিয়ে আনলো কিন্তু মধুকে নড়চড় করতে না দেখে মাশফি মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,

— দেখুন,, এমন তো নয় আমরা অপরিচিত। আমার পরিবারের সাথে আপনার একবছর ধরে পরিচয়। আমি হয়তো দেশের বাইরে ছিলাম তাই অতটা সক্ষ্যতা গড়ে উঠেনি আপনার সাথে। একে-অপরকে চেনা-জানাতে তো অপরাধ নেই।

মাশফির কথায় মধু কিঞ্চিত লজ্জিতবোধ করলো। আসলেই সে মাশফি যা বলছেন সবটা সঠিক৷ পরিচিত হতে চাওয়া অপরাধের কিছু নয়। মধু প্লেট থেকে একটি ফুচকা মুখে পুরে নিলো। মাশফিও মধুর দেখাদেখি একটি ফুচকা নিয়ে মুখে পুরলো।

মোবাইলে বারবার মেসেজ টোন বেজে ওঠেছে। খাওয়া শেষ হলে মধু মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো তুশির মেসেজ৷ কোথায় আছে জানতে চাইছে? মধু তাগাদা দিয়ে মাশফিকে বললো,,,

— আসলে আমাকে বাড়িতে ফিরতে হবে। কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছি।

— আমি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। রাস্তা-ঘাটের যা অবস্থা।

মধু চাচ্ছিলো না মাশফি ওর সঙ্গে আসুক। প্রথম কারণটা হচ্ছে বাড়িওয়ালা। চারটা মেয়েকে প্রথমত উনি সাবলেটে ভাড়া দিতে চাননি। যদিও তুশির অনেক অনুরোধের পর উনি রাজি হয়েছেন। তবে শর্ত একটাই বয়ফ্রেন্ড কিংবা ছেলেবন্ধু থাকলে বাসার ধারেকাছেও আনা যাবে না৷ আর দ্বিতীয় কারণটা হচ্ছে ওর বান্ধবীরা। ওকে মাশফির সঙ্গে দেখলে মজা নেবে। কিন্তু,, মাশফিকে সরাসরি না করবে কি করে?

মধু যখন নয়ছয় মেলাতে ব্যস্ত ঠিক তখনি মধুর মোবাইলের মেসেজ টোন বেজে ওঠল। মধু চিন্তার জগত থেকে বেরিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলো। মধুর চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম কারণ সে একই নাম্বার থেকে ওকে আবারও মেসেজ পাঠিয়েছে। মধু ঢোক গিলে পাশে তাকিয়ে দেখলো মাশফি তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। মধু মাশফিকে আসছি বলে একটু দূরে গিয়ে সরে দাঁড়ালো। মেসেজটি পড়তে শুরু করলো,,

” আমার সামনে যখনি আসবে তখনই চোখের কাজল মুছে আসবে। নয়তো,, তোমার ওই চোখ আমাকে … ইঙ্গিত দেয়। বুঝতে পারছ তুমি আমার জন্য এটা কত বড়ো চ্যালেন্জিং ব্যাপার! এমনিতেই আমি তোমার চোখের মায়ায় ডুবেছি সেই চোখ যদি আমাকে ভুল-ভাল ইঙ্গিত দেয় তখন তো আমার অনেক খারাপ হতে ইচ্ছে করে। বখাটে প্রেমিক হতে ইচ্ছে করে। তাও তোমার একমাত্র বখাটে প্রেমিক”

মেসেজটি পড়ার পড়ার পর মধুর মনে হলো ওর গলা শুকিয়ে সাহারা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। আশপাশে চোরা চোখে তাকিয়ে দেখলো আসলেই ওর দিকে কেউ তাকিয়ে আছ কিনা? কিন্তু না এমন কেউ তো নেই। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। তবে এতটা সুক্ষ্মভাবে ওকে পর্যবেক্ষণ করছে কে? কেউ খুব বাজে ভাবে হ্যারাসমেন্ট করতে চাইছে ওকে।

কপালে জমে থাকা বিন্দু ঘাম ওড়নার কোণা দিয়ে মুছলো। তারপর,, স্বাভাবিক ভাবে নিজের মোবাইলটা হাতে শক্ত করে চেপে ধরে মাশফির সামনে গিয়ে বললো,,

— আমি একাই যেতে পারব। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার সঙ্গে এত চমৎকার সময় কাটানোর জন্য।

কথাটি বলে আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে বাড়ির পথে রওনা দেয় মধু।

মধুর এমন প্রস্থান দেখে মাশফি হাসতে হাসতে মনে মনে বললো,,

— পালিয়ে যাবে কোথায়?? একদিন তোমায় ধরে এনে বুকের মাঝে শক্ত করে চেপে ধরব। তখন কোথায় পালাবে ?? এই যে বুকের মাঝে দমবন্ধ করা ভালোবাসা নিয়ে তোমার সামনে ঘুরছি ফিরছি খাচ্ছি অথচ তোমাকে বুঝতে দিচ্ছি না এটা কি আমার জন্য যুদ্ধ সমান নয়! তোমাকে দেখলেই তো বখাটে হতে ইচ্ছে করে মধু। ভদ্রতা দেখিয়ে তো আর তোমাকে চূড়ান্ত পর্যায়ের ভালোবাসা দেখাতে পারব না৷ তাই একটু না হয় বখাটে হলাম।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here