চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা,#পর্ব: ০১

0
1999

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা,#পর্ব: ০১
#লেখা: ইফরাত মিলি

বিদেশে বসবাস করলে যে মানুষের অহংকার এত বেড়ে যায়, সেটা আগে জানা ছিল না মিতুলের! কিন্তু কানাডার মাটিতে পা রাখার পর অবগত হলো সে ব্যাপারে।
ও একা একটি মেয়ে সুদূর বাংলাদেশ থেকে এই কানাডা এলো, অথচ রেশমী আন্টির ফ্যামিলির কেউ একজন ওকে নিতে না এসে, বাসার একজন মেইডকে পাঠিয়ে দিলো? কেমন ফ্যামিলি তাদের?
অপমান, রাগে সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে মিতুলের। তবুও নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো।
সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে ভালো করে দেখতে লাগলো মিতুল। মেয়েটির নাম ক্যামিলা। বয়স আনুমানিক আঠাশ কি ত্রিশ হবে। এটা কেবলই ওর ধারণা। মেয়েটির বয়স এর থেকে কমও হতে পারে, আবার বেশিও হতে পারে। দেখতে ভীষণ সুন্দর। ত্বক অত্যাধিক উজ্জ্বল। চোখের মণি কিছুটা কমলা রঙের। মাথার অপূর্ব সোনালী চুলগুলো হেয়ার রাবার দিয়ে পিছনে বাঁধা। পরনে গ্রীন কালারের শার্ট এবং ব্ল্যাক কালারের হাটু অবধি একটা শর্ট স্কার্ট। পায়ে উঁচু হিল। মেয়েটিকে দেখে একদমই মনে হচ্ছে না যে সে একজন পরিচারিকা।

মেয়েটি মিতুলকে নিজের উপর দৃষ্টি বুলাতে দেখে বললো,
“ম্যাম, শ্যাল উই গো টু আওয়ার কার?”

মিতুল ভিতরে ভিতরে রাগান্বিত হলেও মুখে জোরপূর্বক হাসি এনে বললো,
“ইয়াহ শিওর!”

“ও কে।”

মেয়েটি মিতুলের লাগেজ নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো। মিতুল তার পিছন পিছন হাঁটলো।
প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে এলো দুজনে।

লাগেজ দুটো গাড়ির পিছনে বুটে রেখে, সামনের আসনে বসে গাড়িতে স্টার্ট দিলো মেয়েটি।
মিতুল পিছনের আসনে চুপটি করে বসে রইল।
গাড়ি ক্যালগারির রাস্তা ধরে এডমন্টনের দিকে এগিয়ে চলছে।
মিতুলের চঞ্চল আখি দুটি গাড়ির উইন্ডো থেকে বাইরে দৃষ্টি বুলিয়ে চলেছে। মিতুলদের গাড়ির পাশ কাটিয়ে একের পর এক গাড়ি চলে যাচ্ছে। বড়ো বড়ো দালান সাই সাই করে চোখের পলকে অতিবাহিত হচ্ছে। মাঝে মাঝে নান্দনিক ডিজাইনের ছোটো ঘর বাড়িও চোখে পড়ছে। সাদা চামড়ার কানাডিয়ান অধিবাসীরা ক্ষণিকের জন্য চোখে ধরা দিয়ে আবার হারিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার দু পাশে ছোটো, বড়ো গাছগুলোতে ফুলের সমারোহ। এখানে যে বসন্ত চলছে এখন, সেটাই জানান দিচ্ছে তারা। ম্যাপল গাছগুলো বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সগর্বে, মিষ্টি রোদ্দুর মেখে।

কানাডা ঘুরতে আসার স্বপ্ন ছিল মিতুলের। অবশেষে পূরণ হলো সেটা। আর এটা পূরণ হওয়ার পিছনে অবদান হলো রেশমী আন্টি এবং মায়ের। বলতে গেলে রেশমী আন্টির ক্রেডিটই বেশি।
ওর আব্বু একটু কঠোর টাইপের। একা একটি মেয়েকে বিদেশ ছাড়তে কিছুতেই রাজি ছিলেন না সে। কিন্তু রেশমী আন্টি আব্বুকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করালেন।
রেশমী আন্টি মিতুলের খুব বেশি ঘনিষ্ঠ কোনো আত্মীয় নন। আবার কমও নন। মায়ের এক রকমের কাজিন হয়, এবং সেই সাথে বান্ধবী। ছোটো বেলা থেকে কলেজ লাইফ পর্যন্ত এক সাথে ছিল তারা। মায়ের সাথে তার ভালো সম্পর্ক। তবে মিতুল তাকে খুব কম সময়ের জন্য দেখেছে।
রেশমী আন্টি প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ কানাডা থাকেন। আর তার হাসব্যান্ড থাকে তারও অনেক আগে থেকে। বিয়ের পর পরই তার হাসব্যান্ড তাকে কানাডা নিয়ে এসেছে। রেশমী আন্টি মাঝে মাঝে বাংলাদেশে যান। ওদের বাড়িতেও গিয়েছিল কয়েক বার। ছোটো বেলায় তাকে দু চার বার দেখলেও দেখতে পারে, কিন্তু তা কিছুই মনে নেই। ছোটো ছিল বলেই হয়তো স্মৃতিতে নেই। তবে বড়ো হওয়ার পর শুধু একবার দেখেছিল তাকে। আরও একবার গিয়েছিল ওদের বাড়িতে। কিন্তু ওর এক্সামের জন্য দেখা হয়নি তার সাথে। মিতুলদের বাড়ি ঢাকাতে। আর ও পড়াশোনা করে রাজশাহী। বেশির ভাগ সময় রাজশাহীতেই থাকে এখন। তাই রেশমী আন্টি ওদের বাসায় গেলেও, ও এক্সাম রেখে তার সাথে দেখা করতে পারেনি। এখন বলা চলে ওর কেবল এক বারই দেখা হয়েছে তার সাথে। তবে বাসায় থাকলে মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয় তার সাথে। মা ফোন ধরিয়ে দেয় কথা বলার জন্য।
মানুষটা তো বেশ ভালো ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে অহংকারী হয়ে গেছে। সে নিজেই এত কিছু করলো ওকে এখানে আনতে। অথচ এনে কী করলো? শুরুতেই অপমান! কেন রেশমী আন্টি নিজে নিতে এলো না?
ঠিক আছে, ধরলো সে কোনো এক কারণে আসতে পারলো না। কিন্তু তার ছেলেরা? শুনেছে দুইজন যুবক ছেলে আছে তার। যদিও নিজে কোনো দিন দেখেনি তাদের। তারাই তো ওকে এয়ারপোর্ট থেকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারতো। কেন এলো না নিতে? কাজের ছুতো? একটু সময়ের জন্য কাজ ছাড়লে কি মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? রাগ আবার চড়াও হতে লাগলো মিতুলের।

অনেকক্ষণ চুপ করেই বসে রইল মিতুল। কিন্তু চুপ করে বসে থাকতে ভালো লাগছে না একদম। সামনের আসনের মেয়েটিকে দেখলো একবার। মেয়েটি সামনে নজর রেখে গাড়ি চালাচ্ছে। মিতুলের মনে হলো মেয়েটি দক্ষ একজন চালক।

রেশমী আন্টির বাড়ি এডমন্টন শহরে। শহরটি যে বেশ সুন্দর বুঝতে বাকি নেই মিতুলের।
প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার ব্যবধানে রেশমী আন্টির বাড়ি এসে পৌঁছালো। ড্রাইভ ওয়ে দিয়ে গাড়িটি গ্যারেজের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ক্যামিলা।
মিতুল উইন্ডো দিয়ে আশপাশ দেখতে লাগলো। বেশ দীর্ঘ একটি বাড়ি। বিশাল লন। লনের চারপাশ গাছ দ্বারা বেষ্টিত। ম্যাপল গাছ, পাইন গাছ, ঝাউ গাছ, ওক গাছ…কয়েকটি চেরি ব্লসমের গাছও দেখতে পেল। গাছে ফুটে আছে গুচ্ছবিদ্ধ চেরি ব্লসম।

রেশমী হলরুমে বসে অপেক্ষা করছিলেন। মিতুল ঘরে প্রবেশ করতেই এসে জড়িয়ে ধরলেন ওকে, কপালে চুমু খেলেন।
নিমেষেই মিতুলের রাগ কমে গেল। কিন্তু অভিমান রয়েই গেল। অপমান সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। রেশমী আন্টি খুব বেশি কথা বললেন না। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে বললেন।

ক্যামিলা মিতুলকে রুমে নিয়ে এলো।
রুমে এসে আরেক দফা মুগ্ধতায় হারালো মিতুল।
এত সুন্দর রুম! দেয়াল জুড়ে থাকা বিশাল আকৃতির গ্লাস উইন্ডোর দিকে ছুটে এলো মিতুল। ওয়াও!
জানালা দিয়ে বাড়ির লনটা ভালোই দেখা যায়। এক সাইডে থাকা চেরি ব্লসমের ট্রিগুলোও নজরে পড়ে।
মিতুল এক মুহূর্তের জন্য রাতের দৃশ্য কল্পনা করার চেষ্টা করলো। জোৎস্না মাখা রাত। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। ও জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। খোলা জানালা দিয়ে চাঁদের আলো সরাসরি গায়ে এসে পড়েছে ওর। চুলগুলো হালকা বাতাসে উড়ছে। ও তাকিয়ে আছে দূরে থাকা কিছু চেরি ব্লসমের ঝরা পাপড়ির দিকে। আহ, কী রোমাঞ্চকর মুহূর্ত!

গোসল সেরে নিলো মিতুল। বাড়ির অন্য এক পরিচারিকা রুমে খাবার দিয়ে গেল। কজন মেইড রাখা আছে এই বাড়িতে? এদের বেতন কত দেওয়া হয়? নিশ্চয়ই আকাশচুম্বী?
এখানে এসে যা বুঝতে পারলো তা হলো, রেশমী আন্টিদের সম্পর্কে ও যা শুনেছিল, রেশমী আন্টিরা তার থেকেও অনেক ধনী। অবশ্য ধনী হবেনই বা না কেন? তার হাসব্যান্ড সেই কতগুলো বছর যাবৎ কানাডা থাকছে, বিশাল বড়ো চাকরি করছে, ধনী তো হওয়ারই কথা। তাছাড়া দেশের বাড়িতেও তাদের পরিবার বিশাল বিত্তশালী পরিবার!
মিতুল নিজের পারিবারিক অবস্থার কথা ভাবলো একবার। ওরাও কি কম ধনী না কি? ঢাকায় তিন তিনটা বাড়ি ওদের। বাবার ভালো ব্যবসা। গাড়িও আছে। রেশমী আন্টিদের মতো এত ধনী না হলেও, বলতে গেলে ভালো রকম ধনীর কাতারেই পড়ে ওরা।
মিতুল খাওয়া শেষ করলো। প্লেটে কোনো খাবার বাঁচলো না। এতটাই ক্ষুধার্ত ছিল যে সকল খাবারই গপাগপ করে খেলো।
গোসল শেষ, খাওয়া শেষ, এবার একটু শান্তিময় ঘুম প্রয়োজন। মিতুল গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। এক টুকরো সাদা মেঘের তুলতুলে কোমল কোলে যেন গা ডুবে গেল। বড়ো করে এক নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করলো ও।
মিনিট পার হলো, পার হলো ঘণ্টাও। কিন্তু এ কী! ঘুম আসার নাম গন্ধও নেই। মিতুল কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে উঠে গেল। মানুষ দীর্ঘ জার্নির ফলে ক্লান্ত থাকে, আর সেই ক্লান্তি থেকে আসে ঘুম। ওর এত দীর্ঘ জার্নির পরে ক্লান্তি লাগছে একটু, তবে ঘুম পাচ্ছে না। অপরিচিত জায়গা বলেই হয়তো এমন হচ্ছে। ধরা দিচ্ছে না ঘুমটা। মিতুল খানিক দোনা-মনা করে মোবাইলটা নিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।
দোতলার প্যাসেজওয়ে ধরে এগিয়ে চলছে। বাড়িটা নিস্তব্ধতায় ঘিরে আছে। যেন কোনো পাতালপুরী। সব সময় কি এমনই থাকে? চলতে চলতে দোতলার কয়েকটি দরজার দিকে নজর পড়লো। কারা থাকে এই দরজার পিছনের রুমগুলোতে?
মিতুল সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে ওর রুমে খাবার নিয়ে যাওয়া মেইডটিকে দেখতে পেল। সাদা লোমের একটি ডলের মতো বিড়ালকে ক্যাট ফুড খাওয়াচ্ছে। বিড়ালও পালে না কি এরা?
মিতুল সোজা দরজার দিকে হেঁটে গেল। বাইরে পা রাখতেই নির্মল বাতাস পরশ বুলিয়ে দিলো। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো মিতুল। এই তো সত্যি সত্যি কানাডার অক্সিজেন গ্রহণ করছে ও। বাইরে সোনালী রোদ্দুর খেলা করছে। ঘাসে, গাছের পাতায়, ফুলে সবখানে রোদ্দুরের বিরাজ। তবে এ রোদ্দুরে তেমন কোনো তাপ নেই। ঘরের সামনে থাকা একটু ঝোঁপের মতন জায়গাটায় ছোটো ছোটো হলুদ ফুলের আশেপাশে কয়েকটা প্রজাপতি ঘোরাঘুরি করছে। ফুলগুলোর নাম জানা নেই ওর।
লনের বাম সাইডে গাছের ছায়ায় পর পর তিনটি ইজি চেয়ার রাখা। মিতুল একটিতে বসলো গিয়ে। দৃষ্টি রাখলো লনের ডান সাইডে থাকা চেরি ব্লসমের উপর। কী অপূর্ব দেখতে এই চেরি ব্লসম! পুরো গাছটাকে এক সুপ্ত মায়ায় ভরিয়ে রাখে। এই মায়া যেন আর কিছুতে পাওয়া যায় না। ওই গোলাপি পাপড়ির সুপ্ত মায়ায় জড়িয়ে রাখা পুষ্পই হলো গাছের মূল প্রাণ। মিতুল মোবাইল বের করে কয়েকটি ছবি তুললো চেরি ব্লসমের। সেলফিও তুললো চেরি ব্লসমের সাথে। এই পিকগুলো ইন্সট্রাগ্রাম, ফেসবুকে দেবে। সত্যি সত্যিই যে কানাডা এসেছে জানাতে হবে না মানুষদের?
তোলা ছবিগুলো দেখতে লাগলো মিতুল। ঠিক এই সময়েই পাশে শোনা যায় একটি নারী কণ্ঠ,
“মিস, তোমার জন্য এই ড্রিংকসটি।”

একটি হাস্যোজ্জ্বল মেয়ে মুখ দেখতে পেল মিতুল। মিষ্টি মুখে মিষ্টি হাসি মেয়েটির। মিতুল ভেবে পায় না এই মেয়েটি এত মিষ্টি কেন?
মিতুল হাসি হাসি মুখে ‘থ্যাংক ইউ’ জানিয়ে ক্যামিলার হাত থেকে সফট ড্রিঙ্কসের গ্লাসটি নিলো। এক চুমুক পান করেই বললো,
“ওয়াও! দারুণ মজাদার ড্রিঙ্কস বানাও তো তুমি।”

“ধন্যবাদ।” ক্যামিলা একটু হাসলো। তারপর ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড বলে একটি সিম কার্ড এগিয়ে দিয়ে বললো,
“ম্যাম দিতে বললেন এটা।”
সিম কার্ডটি দিয়েই চলে গেল ক্যামিলা।

মোবাইলে নেট কানেক্ট করার পর মিতুলের প্রথম যেটা মনে পড়লো, সেটা হলো, ‘মা’। মিতুল সিম কার্ডটি মোবাইলে ঢুকানোর সময় নিলো না। তার আগেই মায়ের কাছে কল করা দিলো। কিন্তু আবার থামলো। আচ্ছা, বাংলাদেশে কয়টা বাজে এখন?
পর মুহূর্তেই আবার কল দিয়ে ফেললো। কয়টা বাজে তা নিয়ে মাথা ঘামালো না।
কয়েকটি রিং হতেই কল রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে মায়ের গলা শোনা গেল,
“মিতুল!”

মিতুল মৃদু কণ্ঠে বললো,
“মা, কেমন আছো?”

“ভালো।”

“আব্বু, ভাইয়েরা ভালো আছে?”

“হ্যাঁ। ওখানে গিয়ে কী করছো তুমি? ভদ্র ভাবে থাকছো তো?”

“হ্যাঁ মা। আমি কি অভদ্র যে অভদ্র ভাবে থাকবো?”

“কোনো কমপ্লেইন যদি পাই তাহলে তোমার ভাগ্যে কিন্তু খারাপ আছে। বুঝেছো? কারো সাথে খারাপ আচরণ করবে না। সবসময় হাসি-খুশি ভাবে কথা বলবে, সবার সাথে আন্তরিক থাকবে। বাইরে বাইরে সারাক্ষণ ঘোরাঘুরি করবে না। লক্ষ্মী হয়ে থাকবে। কোনো ধরনের বেয়াদবি করার কথা যেন শুনতে না পাই। ভেবো না যে বিদেশ গিয়েছো বলে কী করছো, না করছো সে বিষয়ে আমি জানতে পারব না। তোমার রেশমী আন্টির সাথে সব সময় কথা হবে আমার। যদি খারাপ কিছু শুনতে পাই, তবে কিন্তু ওদেশ থেকে ফিরে আর ঘরে পা রাখতে পারবে না। তোমার জায়গা হবে ফুটপাতে। বুঝেছো?”

মিতুলের মনোক্ষুণ্ণ হলো। কষ্ট পেল! ওর মা, বাবা এত কঠোর কেন ওর সাথে? ফোন দিতেই এসব সাবধান বাণী শোনায় কেউ? আসতে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না, এখানে অপরিচিত পরিবেশে থাকতে অস্বস্তি হচ্ছে কি না, সেসব না জিজ্ঞেস করে এমন কথা বলে কেউ? মিতুল একটু নিশ্চুপ থেকে মাকে আশ্বাস দিয়ে বললো,
“জানি মা। চিন্তা করো না, ভালো মেয়ে হয়েই থাকব আমি।”

“হুম, ঠিক আছে। আর খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করবে, কেমন? ফোন রাখছি।”
মিতুলের মা ফোন কেটে দিলেন।

এই মায়ের জন্য ওর শান্তি মতো ঘোরাটা না আবার মাটি হয়ে যায়।
চেয়ারের সাথে মাথা হেলিয়ে দিলো মিতুল। রেশমী আন্টিকে নিয়ে ভাবছে ও। রেশমী আন্টি সত্যিই আগের মতো নেই। অবশ্য আগে কতটুকুই বা চিনতো তাকে? যাই হোক, তবে এটা সুস্পষ্ট যে অহংকারী অহংকারী ভাব আছে রেশমী আন্টির মাঝে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কোথাও দেখেনি তাকে। একজন মেহমান এসেছে, আর সে সমস্ত দায়িত্ব মেইডদের উপর ছেড়ে দিয়ে রুমের ভিতর গিয়ে বসে আছে। এটাকে কোন ধরনের ভদ্রতা বলে? ও লনে এসে বসে রয়েছে, তার কি উচিত না এখানে এসে ওর সাথে একটু কথা বলা? একটু গল্প করা?
না, এই ফ্যামিলির মানুষ ভদ্রতা, আন্তরিকতা জানে না। তাদের আন্তরিকতার মাঝে ব্যাপক ঘাটতি আছে। মিতুলের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
গেট খোলার শব্দ হতেই চকিতে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসলো মিতুল। গেট অতিক্রম করেছে এক যুবক। লম্বাদেহী। ত্বক উজ্জ্বল ফরসা। মাথা ভর্তি কালো চুল। চুলগুলো জেল দিয়ে পরিপাটি করে রাখা। মুখে ছোটো ছোটো দাঁড়ি পড়ে আছে। অবহেলায় না কি সযত্নে সেটা বুঝতে পারছে না। নাকটা লম্বা, সরু।
মিতুল ধারণা করলো এটা হয়তো রেশমী আন্টির ছেলে। বড়ো ছেলে না কি ছোটো ছেলে সেটা ধারণার বাইরে।

মিতুল এগিয়ে এলো লম্বাদেহী যুবকটির দিকে। দেখার পরও চুপচাপ বসে থাকা অভদ্রতার পরিচয় বহন করে। যুবকটি হেঁটেই চলছিল। মিতুল হ্যান্ডশেকের জন্য একহাত বাড়িয়ে দিলো তার দিকে। ভদ্রতার সহিত নিজের পরিচয় দিতে চাইলো।
কিন্তু যা ঘটলো তাতে ওর কণ্ঠ রোধ হয়ে গেল। ও মোটেই প্রস্তুত ছিল না এই ঘটনার জন্য। যুবকটি ডিরেক্ট ওকে অবহেলা, অগ্রাহ্য করে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। এমনকি একটিবার ওর দিকে তাকালো না পর্যন্ত। মিতুলের হাত কেঁপে ওঠে অপমানে। এত বড়ো অপমান?
বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা দুর্বল ভাবে নেমে এলো নিজ অবস্থানে। মিতুলের চোখে-মুখে অবিশ্বাসের ঘোর। যা ঘটলো তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। নিজ থেকে পরিচিত হতে এলো, আর ছেলেটা এমন ভাবে অপমান করে চলে গেল? মিতুলের মন অসম্মানের আত্মগ্লানিতে ছেয়ে গেল। একটু সময়ের ব্যবধানে এই দেশের মাটিতে পরপর দু বার অপমানের সম্মুখীন হতে হয়েছে ওকে। আগের অপমান তো হিসেবে ক্ষুদ্র ছিল। কিন্তু এই ছেলেটা যেভাবে অপমান করলো তাতে অপমানেরও সীমা অতিক্রম হলো! মিতুল নির্দ্বিধায় একটা জিনিস সুনিশ্চিত হলো, এই ফ্যামিলির ভিতরে সবচেয়ে অহংকারী ব্যক্তি হলো এই ছেলে। লম্বা, সরু নাকের অহংকারী ব্যক্তি একজন!

মিতুল ইজিচেয়ারে বসেই কাটালো বেশ কিছু সময়। বিষয়টি ভুলে যেতে চাইলো কিন্তু পারলো না। মস্তিষ্কের সর্বত্র অপমানের অসহ্য যন্ত্রণার উপস্থিত ঝেঁকে বসেছে। কোনো উপায়েই মুক্তি মিলছে না এর থেকে। চোখে কেবল ভাসছে অপমানের সেই কালো, অসহ্যকর, তিক্ত মুহূর্ত। এই একুশ বছরের জীবনে এমন বিকৃত মুহূর্তের সম্মুখীন হতে হয়নি আগে কখনও। এটাই প্রথম। ওই অহংকারী ছেলেটা এর সূচনা ঘটালো। মিতুলের মুখ এখনও লাল হয়ে আছে রাগে। শরীর থেকে উত্তাপ বের হচ্ছে যেন।
না, এভাবে বসে থাকা যাবে না। রুমে গিয়ে আবার লম্বা শাওয়ার নিতে হবে। তাতে যদি মাথায় একটু শান্তি মেলে। মিতুল লন ত্যাগ করলো।

দরজার নিকট আসলে হলরুম থেকে রেশমী আন্টির কণ্ঠ মিতুলের পা থমকে দিলো।
রেশমী আন্টি সেই অহংকারী যুবকটির সাথে কথা বলছে। মিতুল কথা বলার বিষয়টি মুহূর্তে ধরে ফেললো। লুকিয়ে পড়লো দেয়ালের আড়ালে। কর্ণ খাড়া হয়ে আছে হলরুমের কথা শোনার জন্য। রেশমী আন্টি বললেন,
“ক্যামিলা কিচেনে বসে দেখেছে, তুমি কেন মেয়েটাকে ওভার টেইক করে চলে এসেছো? হ্যান্ডশেক করোনি কেন?”

অহংকারী যুবক বিরক্তির সুরে বললো,
“কার কথা বলছো? কোন মেয়ে? হাউসে আসার সময় কোনো মেয়েই চোখে পড়েনি আমার। যদি আমি দেখতাম, তাহলে কি এভাবে চলে আসতাম? কোনো মেয়ে ছিলই না ওখানে।”

মিতুলের মুখ হাঁ হয়ে গেল। বলে কী? দেখেনি ওকে? জলজ্যান্ত একটা মানুষকে চোখে পড়েনি তার?
মিতুল আরও একবার অপমান বোধ করলো। ছেলেটা একের পর এক অপমান করে চলেছে ওকে! মানছে ও একটু খাটো। তাই বলে কি এতই ক্ষুদ্র হয়ে গেছে যে কারো চোখে পড়ার মতো নয়?
মিতুল নিজের রুমে যাবে বলে ঠিক করেছিল, কিন্তু হলরুম পেরিয়ে এই মুহূর্তে কিছুতেই আর যেতে পারবে না। মিতুল আবারও ইজিচেয়ারে এসে নিজের আসন করলো।
বসে থাকার চার-পাঁচ মিনিট পর দেখতে পেল অহংকারী যুবকটি ঘর ছেড়ে বেরিয়েছে। মিতুল চোখ সরিয়ে নিলো। ওই অহংকারী যুবকের দিকে তাকাতেও বিরক্ত লাগছে ওর। মিতুল নিচে দৃষ্টি রেখে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর মনে হলো অহংকারী যুবক ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। আড় চোখে দেখলো একবার। হ্যাঁ ঠিকই তো, ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। আবার কোন অপমান করার ফায়দা নিয়ে আসছে? দু বার অপমান করেও বুঝি সাধ মেটেনি? মিতুল দেখেও না দেখার ভাণ ধরে বসে রইল।

ছেলেটা মিতুলের নিকটে এসে থামলো। মিতুল তার উপস্থিতি টের পেল কিন্তু ফিরেও তাকালো না। শুধু শুনতে পেল একটা শান্ত সুন্দর পুরুষ কণ্ঠ ওকে বলছে,
“আসসালামু আলাইকুম মিস।”

মিতুলের কান এমন সুন্দর, শুভ্র সালাম শুনে আর না তাকিয়ে পারলো না। তাকালো মিতুল। খুব কাছ থেকে দেখতে পেল অহংকারী যুবকটির মুখ। ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে অহংকারী যুবকটি। কে বলবে যে এই মানুষটার ভিতরে হাজারও অহংকার লুকায়িত। দেখতে কী নিষ্পাপ লাগে! মিতুলের রাগ পাতলা হয়ে এলো মানুষটার মুখ থেকে নির্গত সালামের পবিত্র শব্দে। মিতুল সালামের উত্তর দিলো,
“ওয়াআলাইকুমুস সালাম।”

মানুষটা নিষ্পাপ মুখে এক টুকরো নিষ্পাপ হাসি ফুঁটিয়ে মিতুলের পাশের ইজিচেয়ারে জায়গা করে নিলো। একটু জড়তা নিয়ে টানা টানা ইংলিশে বললো,
“আসলে তখন তোমায় দেখতে পাইনি আমি। ফোনে কথা বলছিলাম তো, তাই খেয়াল করিনি তোমায়। কিছু মনে করো না।”

মিতুল মনে মনে ভেংচি কাটলো। খেয়াল করেনি না ছাই! খাটো বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে সেটা সরাসরি বলতে পারছে না এখন। কিন্তু খাটো বলে অপমান যা করার তা তো করেই ফেলেছে। মিতুল মনে মনে এসব ভাবলেও বাইরে এমন কিছুই ধরা দিলো না। বললো,
“না, কিছু মনে করিনি। তোমারই বা দোষ কী? দোষ তো আমার। আমারই উচিত হয়নি তুমি ফোনে কথা বলা সত্ত্বেও তোমার কাছে যাওয়া।”

ছেলেটাকে অপ্রস্তুত দেখালো। কয়েক মুহূর্ত পর সে মিতুলের দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেকের জন্য।
“আমি জায়িন। জায়িন আহমেদ।”

মিতুলের হ্যান্ডশেক করতে ইচ্ছা করলো না। কারো সাথে হ্যান্ডশেক করার ইচ্ছাই মরে গেছে ওর। তবুও সৌজন্য স্বরূপ হ্যান্ডশেক করলো। নিজের পরিচয় দিলো,
“আমি মিতুল দিলরাবা।”

জায়িন হাত ছেড়ে দিলো। বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না সে। মমের কথা রক্ষার্থে এখানে এসেছে মেয়েটির সাথে কথা বলতে। নয়তো কিছুতেই আসতো না এখানে। এমনকি মেয়েটির সাথে হ্যান্ডশেকও করেছে মমের জন্য। জায়িন অস্বস্তিতে ভুগছে। মনে মনে ভাবছে, আর কী বলা যায়? না, বলার মতো কোনো শব্দভাণ্ডার এই মুহূর্তে তার কাছে জমা নেই।
তার ফোনটা তার দুঃসময়ের বন্ধু হয়ে বেজে উঠলো। ‘ফ্রেডি’ কল দিয়েছে। জায়িনের ঠোঁট স্বস্তির সাক্ষী হয়ে নীরব হাসলো।
জায়িনকে হাসতে দেখে মিতুল ভ্রু কুঁচকালো।
জায়িন মিতুলকে কিছু না বলে, বিনা বাক্যে ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে জায়গা ত্যাগ করলো। গেট অতিক্রম করে বাড়ির বাইরে চলে যায়।

মিতুলের চোখ আরও একবার অবিশ্বাসের সাক্ষী হলো। কী বেয়াদব ছেলেরে বাবা! ওর সাথে বসে কথা বলছিল, অথচ একটা ফোন আসতে কিচ্ছুটি না বলে অভদ্রের মতো চলে গেল? কেমন মানুষ? মানুষটা যে একজন অভদ্র, অহংকারী সে প্রমাণ আরও একবার পেল ও।

ইজি চেয়ারেই পুরো বিকেল কাটলো মিতুলের। ঘরে যেতে ইচ্ছে হয়নি। একা একাই ছিল। মধ্যমে রেশমী আন্টির দর্শন পেয়েছিল একবার। এক নেইবরহুডের বাড়ি যাওয়ার সময় মিতুলকে বসা দেখে এগিয়ে এসেছিলেন। নিজের সঙ্গে ডেকেছিলেন ওকে, ও যায়নি। কোথাও যেতে ভালো লাগছে না ওর। যে অপমানের উপর দিয়ে পার হলো আজকের দিন! মিতুল ধারণা করেছে আজকের দিনটা ওর জন্য খারাপ। মানুষের জীবনে একটা, দুটো খারাপ দিন আসেই। ওর জীবনের খারাপ দিন হলো এটা।

ধীরে ধীরে আবছা অন্ধকার বিরাজ করলো প্রকৃতিতে। সন্ধ্যা কেটে গিয়ে এরপর নামবে রাত। প্রকৃতি আবছা আলো থেকে হবে নিকষ কালো। কৃত্রিম আলোতে ঝলমল করবে শহর। রাতের সৌন্দর্যে শোভা পাবে এডমন্টন। গাছে গাছে থাকা চেরি ব্লসম ঝরে পড়বে রাতের নিঝুম মুগ্ধময় মুখরতা হয়ে। ঝিরিঝিরি বাতাস বইবে। শহরের গাছপালাগুলো বাতাসের কোমলতা জড়াবে গায়ে। শহর সাজবে রাতের মোহনীয়তায়।
মিতুল ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ইতোমধ্যে ঘর কৃত্রিম আলোর উৎসে আলোকিত হয়েছে। হলরুমে লাইট জ্বলছে। জ্বলছে দুটো ল্যাম্পশেডও। সোনালী আলোর আভা হাসছে হলরুমের প্রতিটা কোণায়।
মিতুল মাথা নিচু রেখে এগিয়ে চলছিল সিঁড়ির দিকে। ঠিক সামনেই দুটো পা চোখে পড়তেই ওর পা দুটো থমকে গেল। সিঁড়ি থেকে এক পা দূরত্বে দাঁড়ানো ও। সামনে দাঁড়ানো মানুষটি কে, তা দেখার জন্য চোখ ওঠাতে চোখে ধরা দিলো এক বিদেশি যুবক। হাঁটুর নিচ অবধি সাদা নাইট ড্রেস পরা ছেলেটি। ফর্সা পা দুটো দেখা যাচ্ছে। মাথার ব্রাউন হেয়ার কপাল বেয়ে নেমে ভ্রু ছুঁয়ে দিচ্ছে। বাদামি চোখ জোড়ায় একরাশ মুগ্ধতা ছড়ানো। শেভ করা ফর্সা চকচক করা মুখ খানিতে এখনও দাড়ি, গোঁফ গজানোর সুযোগ পায়নি। ফোলা ফোলা মুখ খানিতে কেমন বাচ্চা বাচ্চা ভাব। হয়তো সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে বলে চেহারা এমন দেখাচ্ছে। ঠোঁট দুটো একটু বেশিই লাল।
কিন্তু এ ঘরে বিদেশি ছেলে কেন? প্রশ্নটা মিতুলের মনে উদয় না হয়ে পারলো না। তবে খুব চেনা চেনা লাগছে এই বিদেশি ছেলেটাকে। মনে হচ্ছে কোথাও যেন দেখেছে এই মুখ। কোথায় দেখেছে?
বাজে একটা গন্ধ এসে লাগলো মিতুলের নাকে। কীসের গন্ধ এটা? এত বাজে! মিতুলের মস্তিস্কে আপনা থেকেই একটা শব্দ উদয় হলো, ‘মদ’?

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে ভীষণ বিরক্তি চলে এসেছে জোহানের মাঝে। কাল রাতে ড্রিঙ্কস করার পর ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভেঙেছে এই সবে। ঘুম থেকে ওঠার পর সব কিছুই অসহ্য, বিরক্তিকর লাগছে। আর সব থেকে বেশি বিরক্তিকর লাগছে এখন এই মেয়েটাকে। মুখের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে কেন? মুখে কি গাধার ছবি পেইন্টিং করে রেখেছে যে এই ভাবে দেখছে? অসহ্য, বিরক্তিকর মেয়ে!

মদের কথা মনে হতেই মিতুলের কেমন যেন লাগলো। যদিও এদিকে এসব স্বাভাবিক ব্যাপার। তবুও ব্যাপারটা ঠিক ভালো লাগলো না। ও এড়িয়ে যেতে চাইলো ছেলেটাকে। পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আবারও থমকে দাঁড়াতে হলো।
ও যেদিকে পা বাড়িয়েছে, বিদেশি ছেলেটাও চলে যাওয়ার জন্য ঠিক সেদিকে পা বাড়িয়েছে।
মিতুল বিব্রত বোধ করলো। দ্রুত স্থান ত্যাগের জন্য অন্যদিকে পা বাড়ালো আবার। কিন্তু এবারও একই ঘটনা ঘটলো। ভুলবশত একই দিকে পা বাড়িয়েছে দুজনে। এমনই হলো আরও দুবার।
বিদেশি ছেলেটা শেষমেশ বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। উপরের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফোঁস করে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
মিতুলেরও অস্বস্তি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি যে কারোর জন্যই বিব্রতকর। সামনের ছেলেটা মিতুলের দিকে তাকালো এবার। দুই চোখে বিরক্তি আর রাগ। ছেলেটা বিরক্তির সুরে বললো,
“ননসেন্স, ইডিয়ট, সিক গার্ল!”
বলে ভীষণ বিরক্তিকর একটা চাহনি দিয়ে বড়ো পা ফেলে মিতুলের পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

মিতুলের মুখ হাঁ হয়ে আছে। ননসেন্স, ইডিয়ট, সিক গার্ল? মিতুল এক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। আরও একবার অপমান!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here