#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা,পর্ব: ১৭
#লেখা: ইফরাত মিলি
____________
ভ্যাঙ্কুভার যাওয়ার সকল ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন। চেরি ব্লসমের মায়ায় হারিয়ে যেতে চাওয়া প্রিয় ভ্যাঙ্কুভার মিতুলের। এই বসন্তে ভ্যাঙ্কুভার ঘুরতে যাবে না এটা তো বেমানান। নেক্সট উইকেন্ডে সবাই মিলে ভ্যাঙ্কুভার যাচ্ছে ওরা। উহু, সবাই না। একজন বাদে। জোহান যাবে না। শুনেছে ফ্যামিলির সবাই প্রত্যেক বছর বসন্তে ভ্যাঙ্কুভার সময় কাটাতে যায় কিছুদিনের জন্য। কিন্তু জোহান না কি ভ্যাঙ্কুভার যেতে চায় না একবারও। এমনকি যায়ও না। এবারও তাই। তবে এবার যেতে না চাওয়ার একটা কারণও আছে। সেটা হলো, ওর গানের কনসার্ট আছে উইনিপেগে। কালকেই রওনা হবে উইনিপেগের উদ্দেশ্যে। আর তারপরের দিন ওরা সবাই রওনা হবে ভ্যাঙ্কুভারের উদ্দেশ্যে।
জোহান ভ্যাঙ্কুভার না যাওয়াতে খুশি মিতুল। জোহান সাথে গেলে ওর আনন্দের সময়গুলো মাটি করে দিতো। জোহানকে এখন দুই চোক্ষের বিষ মনে হয় ওর কাছে। সেদিন কী অপমানটাই না করেছিল জোহান! একবার খারাপ দেখতে লাগে বলে অপমান করেছে, আরেক বার কফি বানানো নিয়ে। সবই মনে আছে মিতুলের। তবে মিতুল জোহানকে শাস্তি দিচ্ছে। জোহান বলেছিল থ্রি পিস আর না পরতে, থ্রি পিসে ওকে খারাপ লাগে দেখতে। এই খারাপ লাগা ড্রেসই পরছে ও সেদিন থেকে। আজ তিন দিন হলো এই নিয়ে। এবার বুঝুক জোহান।
মিতুল বারান্দায় পায়চারি করছে। এখন রাত। বারান্দায় লাইট জ্বলছে। ওর পরনে ভারী কাজের লাল রঙের থ্রি পিস। শীত নেই আজকে তেমন। তাই শাল জড়ায়নি। খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। হাতে কার্লের দেওয়া সেই হেয়ার রাবার। ভ্যাঙ্কুভার গেলে কার্লকে খুব মিস করবে। ভ্যাঙ্কুভারে যদি কার্লও থাকতো সাথে, তাহলে খুব খুব ভালো হতো। দুজনে এক সাথে পুষ্পবৃষ্টিতে ভিজতে পারতো। দুজনে এক সাথে ঘুরতো চেরির রাজ্যে। খুবই ভালো হতো।
“মিতুল!”
কারো ডাকে পিছন ফিরতে হলো মিতুলের। রাবার্তা দাঁড়িয়ে আছে। মিতুলকে ফিরতে দেখে সে বললো,
“ডাইনিং রুমে এসো, রাতের খাবারের জন্য।”
কথাটা বলেই রাবার্তা চলে গেল। রাবার্তার মাঝে কোনো আন্তরিকতা নেই। তাকে গম্ভীর স্বভাবের মনে হয় মিতুলের। ক্যামিলার মতো মিশুক নয়। মিতুলের মনে হলো এই রাবার্তাকেই এ বাড়ির উপযুক্ত মেইড হিসেবে মানিয়েছে। এ বাড়ির মানুষের মাঝেও যেমন আন্তরিকতা নেই, তেমন এই রাবার্তার মাঝেও নেই। ক্যামিলা এদের থেকে ভিন্ন। ক্যামিলাকে যায় না এদের সাথে।
ডাইনিং রুমে এসে সাদাত আঙ্কলকে দেখতে পেল। সাদাত আঙ্কলকে খুব একটা দেখাই যায় না। কাজ-বাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। আজকে তাকে এভাবে ডাইনিং রুমে দেখতে পাবে ভাবেনি। মিতুল দরজায় এসে থেমে গিয়েছিল সাদাত আঙ্কলকে দেখে। সাদাত আঙ্কলের দৃষ্টি ওর উপর পড়তেই একটু হকচকিয়ে গেল। হেসে ফেললো অপ্রস্তুত। সাদাত আঙ্কলও একটু হাসি উপহার দিলেন।
মিতুল রুমে ঢুকলো। সাদাত আঙ্কলের বিপরীত পাশের একটা চেয়ার টেনে বসলো।
ক্যামিলা খাবার সার্ফ করছে। দেশি, বিদেশি দুই ধরনের খাবারই আছে। পোলাও, মুরগির রোস্ট, মুরগি ভুনা, গরুর গোশ, গরুর কলিজা ভুনা, ফিশ ফ্রাই, চাইনিজ সবজি কারি, অ্যাপল টার্ট, থাই চপ স্যুয়ে, ভেজিটেবলস সালাদ এবং ভাত। মিতুল এ বাসায় আগে একসাথে এত আইটেম তৈরি করতে দেখেনি। আজকে হঠাৎ এত খাবার তৈরির মানে কী?
কয়েক মিনিট পরই জায়িনকে ডাইনিং রুমে ঢুকতে দেখা গেল। জায়িন সাদাত আঙ্কলের থেকে একটা চেয়ার রেখে তারপর বসলো। এরই মধ্যে রেশমী আন্টিকেও দেখা গেল। উনি এসে স্বামী এবং ছেলের মাঝখানের চেয়ারটাতে বসলেন। যে চেয়ারটা মিতুলের সোজাসুজি। মিতুল ভাবছে কী হচ্ছে আজকে? আজকে কি কোনো স্পেশাল ডে? এখানে আসার যতদিন হলো তত দিনে এদের সবাইকে এক সাথে বসে খেতে দেখেনি ও। আজকে হঠাৎ সবাই একসাথে খেতে বসেছে, কাহিনী কী?
জোহান না আসায় ফ্যামিলিটা অপরিপূর্ণ ছিল। হুট করে সেও এসে গেল। টপাস করে বসে পড়লো মিতুলের পাশের চেয়ারটিতে। জোহানকে নিজের পাশে বসতে দেখে মিতুল এই চেয়ারটা ছেড়ে দিয়ে এর পাশের চেয়ারটায় সরে বসতে চাইছিল। কিন্তু সবাই এখানে উপস্থিত থাকার কারণে পারলো না। এমন করলে তারা কী ভাববে? মিতুল চুপচাপ বসে রইল। তবে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেছে ওর। জোহানের কেন ওর পাশে এসেই বসতে হলো? আরও তো চেয়ার ছিল।
রেশমী আন্টির কথা শুনে তার দিকে তাকালো মিতুল। রেশমী আন্টি বলছেন,
“মাসে তিন, চার বার আমরা সবাই এক সাথে বসে ডিনার করি। কাজ বাজে সবাই ব্যস্ত থাকার কারণে সব সময় একসাথে বসে খাওয়া হয় না। আর তাছাড়াও আমাদের খাওয়া-দাওয়ার ধরা বাধা নিয়ম নেই। যার যখন খিদে পায়, সে তখন খায়। তোমার সাদাত আঙ্কলই মাঝে মাঝে একসাথে বসে খাওয়ার তাগাদা দেয়।”
রেশমী আন্টির কথা শুনে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হলো মিতুলের। মাসে মাত্র তিন, চার বার একসাথে বসে ডিনার করে সবাই? মজার তো ব্যাপারটা!
সবাই স্বাভাবিক ভাবে খাচ্ছে। কিন্তু মিতুল খেতে পারছে না। ওর অস্বস্তি হচ্ছে। এত লোকের মাঝে বসে খাওয়া যায়? পোলাও আর এক পিস রোস্ট নিয়ে সেই থেকে বসে আছে। প্লেট যেন একটুও খালি হচ্ছে না। এ কেমন জ্বালা?
জোহান নিজের মমকে লক্ষ করছে। ব্রাদারকে খুব সযত্নে এটা-ওটা বেড়ে দিচ্ছে মম। এই যে ব্রাদার ফিস ফ্রাই নিতে চাইলো না, কিন্তু মম তারপরও জোর করেই দিলো। দৃশ্যটা তো খুব নয়নাভিরাম! মা তার ছেলেকে যত্ন করছে। জোহান মনে মনে হাসলো একটু। তারপর মিতুলকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“জানো তো মিতুল, মম তার বড়ো ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসে। কী, তোমারও কি মনে হচ্ছে না যে মম আমার ব্রাদারকে খুব বেশিই ভালোবাসে?”
মিতুল এমনিতেই খেতে পারছিল না। তার উপর সবার মাঝে বসে জোহানের এমন একটা প্রশ্ন করে ওঠায় একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সবার মধ্যে বসে এ কীরকম প্রশ্ন করলো জোহান ওকে? মিতুল দ্রুত রেশমী আন্টির দিকে তাকালো। জোহানের কথা শুনে সবার খাওয়াই বন্ধ হয়ে গেছে। সবার মুখেই লেগে আছে একটা অপ্রত্যাশিত ছায়া।
রেশমী আন্টি নিজের মুখের সেই ছায়াকে এক চিলতে হাসিতে ঢেকে দিয়ে বললেন,
“এই দুষ্টু ছেলে, এটা কেমন কথা? আমি কেবল তোমার বড়ো ভাইকেই ভালোবাসি? তোমাকে বুঝি বেশি ভালোবাসি না?”
জোহান মমের মুখের হাসিটা খুব গভীর ভাবে তাকিয়ে দেখলো। এতটাই গভীর ভাবে দেখলো যে, ওই হাসিতে ভালোবাসা আছে কি না সেটাও বুঝে যায় নিমেষে! জোহানের নিজের মুখেও একটু হাসি ফোঁটে নীরব। বুকের মাঝে চাপা পড়ে রয় কিছু একটা খুব দুঃখ, অভিমানে!
______________
ঘর অন্ধকার। শুধু ড্রিম লাইট জ্বলছে একটা। মিতুল কম্বলটা কোমর পর্যন্ত টেনে রেখেছে। হাতে মোবাইল। মোবাইলের স্কিনে কার্ল। কার্ল মানে, কার্লের ছবি। সেদিন রেস্টুরেন্টে গিয়ে খুব গোপনে কার্লের ছবি তুলেছিল ও। মোট পাঁচটা ছবি তুলেছিল। এর মাঝে তিনটার অবস্থাই বেগতিক। এই তিনটা ছবি দেখে তো মিতুলের সন্দেহ হচ্ছে, এ কাকে তুলেছে ও ক্যামেরায়? কার্লকে? না কি কার্লের প্রেতাত্মাকে?
ইশ, ছেলেটা কাজের জন্য এত ছোটাছুটি করে যে ওর বদলে ওর প্রেতাত্মা উঠে গেছে মোবাইলে!
বাকি যে দুইটার অবস্থা একটু ভালো, সে দুইটা মেহরিনকে পাঠিয়ে দিয়েছে। মেহরিন তো দেখে খুবই প্রশংসা করেছে। অবশ্য প্রশংসা করবেই বা না কেন? প্রশংসা পাওয়ারই তো যোগ্য সে। কী সুন্দর চেহারা, কী সুন্দর নাক, কী সুন্দর ধূসর চোখ, কী সুন্দর ঠোঁট, যেন একেবারে সুদর্শন রাজপুত্র! যদিও এই সুদর্শন রাজপুত্রের সুদর্শন নাক, কান, চোখ, ঠোঁট কিছুই দেখা যাচ্ছে না স্পষ্ট। দূরে বসে তার চলার উপর ছবি তুললে কতটুকুই বা স্পষ্ট হবে আর? এরকম যে উঠেছে সেটাই তো কপাল। চাইলে কার্লের পারমিশন নিয়ে ভালো করেই ছবি তোলা যেত। কিন্তু ব্যাপারটা কেমন হতো? সে জন্য ও এভাবেই ছবি তুলেছে। এরকম ভাবে যা উঠেছে তাতেই শান্তি ওর।
মিতুল কার্লের মুখটা জুম করে দেখছে। এই তো ওর প্রথম প্রেম। ও মোবাইল স্কিনে কার্লের ছবিতে চুমু খাবে বলে মোবাইলটা ধীরে ধীরে ওর ঠোঁটের কাছে নিয়ে আসছিল। এর মাঝেই মোবাইলটা হঠাৎ বিকট শব্দে বেজে উঠে হাত ফসকে ঠাস করে ওর মুখের উপর পড়লো।
“আ-আহ্…”
মোবাইলটা মুখের উপর পড়ে আবার বিছানায় পতিত হয়েছে। মোবাইলটা হঠাৎ করে পড়ায় নাকে লেগেছে একটু। মিতুল মোবাইলটা বিছানা থেকে হাতে তুলে নিলো। মোবাইল স্কিনে চোখ দিয়ে ওর চোখে বিস্ফোরণ ঘটলো। ভেবেছিল মা অথবা ভাইয়েরা কল করেছে। কিন্তু জোহানের নামটা দেখে ওর সর্বাঙ্গ জ্বলে গেল অগ্নিতাপে। জোহানের কলটি কেটে গেল রিং হয়ে। এই জোহান সব সময় ওর ভালো ভালো সময়গুলোতে এসে ডিস্টার্ব করে। রোমান্টিক মুহূর্তে এসেও নিজের বাম হাত ঢুকিয়ে দিলো এখন।
আবার কল এলো জোহানের। এই কল ও ধরবে, এটা ভেবে যদি বসে থাকে জোহান, তাহলে ভুল সেটা। মিতুল ওর কলটা এক চাপে কেটে দিলো। তারপর আবারও নিজের কার্লকে দেখায় মনোযোগ দিলো। কিন্তু এই মনোযোগ কি আর জোহান রাখতে দেয়! জোহান ম্যাসেজ পাঠালো,
‘তোমার সাহস দেখছি ইদানীং খুব বেশি বেড়ে যাচ্ছে! আমার কল কেটে দেওয়ার দুঃসাহস হয় কীভাবে তোমার?’
ম্যাসেজটা দেখে মিতুলের মেজাজ চরমে উঠলো। ও কতগুলো ঘুষির ইমোজি পাঠিয়ে দিলো জোহানকে। তারপর আবার ব্যাক করলো নিজের গ্যালারিতে।
সঙ্গে সঙ্গেই জোহানের ম্যাসেজ এলো আবার।
‘আমি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছি তোমার সাথে। আর তুমি কতগুলো অহেতুক ইমোজি পাঠাচ্ছ আমায়? তোমার দেখছি আসলেই সাহস বেড়ে যাচ্ছে!’
জোহানের ম্যাসেজটা দেখে মিতুল শ্লেষপূর্ণ গলায় বললো,
“আরে আহাম্মক, তোকে অহেতুক ইমোজি পাঠাচ্ছি না আমি। সামনাসামনি তোকে মারতে পারব না বলে এভাবে ঘুষি মারছি তোকে। তুই এতটাই বেকুব যে এটাও বুঝতে পারছিস না?”
ঘটাঘট আবারও জোহানের ম্যাসেজ এলো,
‘কী হলো? কোনো রেসপন্স করছো না কেন? আমার কথাবার্তা কি তোমার কাছে গুরুত্বহীন মনে হচ্ছে? আমাকে গুরুত্বহীন বানাতে চাইছো তুমি?’
জোহানের ম্যাসেজ দেখে মিতুলের এখন ক্লান্ত লাগছে। ও আর কিছু বললো না জোহানকে। না কিছু লিখে পাঠালো, আর না কোনো ঘুষির ইমোজি পাঠালো। মোবাইল সাইলেন্ট করে রেখে চোখ বুজলো ও।
_____________
“তোমার ফ্লাইট তো দুপুর বারোটায়। এখনই সব কিছু তাড়াহুড়ো করে গোছগাছ করছো কেন?”
জোহানের পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো ক্যামিলা।
পর্দা সরিয়ে রাখা জানালা অতিক্রম করে সকালের স্নিগ্ধ রোদ্দুর এসে পড়েছে জোহানের মুখে। জোহান হোয়াইট কালারের একটা শার্ট লাগেজে রাখতে রাখতে বললো,
“আগে তাড়াহুড়ো করে গুছিয়ে রাখছি কারণ, চাই না পরে তাড়াহুড়ো করে গোছাতে গিয়ে কিছু একটা ভুলে যাই।”
“তাই বলে এত সকাল সকাল?”
“হ্যাঁ। পরে যেটা করতেই হবে সেটা আগে করে রাখাই ভালো না?”
“হ্যাঁ, তা ভালো। কিন্তু আমাকে কেন ডাকলে? নিজের লাগেজ তো তুমি নিজেই গোছাও সবসময়।”
“লাগেজ গোছাতে ডাকিনি তোমায়। তোমায় তো অন্য কারণে ডেকেছি আমি। লুক অ্যাট মি…” জোহান নিজের ঠোঁটের কোণে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললো,
“এই জায়গাটা দেখে কি মনে হবে যে আমি মার খেয়েছি? ক্ষতটা তো হালকা হয়ে গেছে। এটা দেখে কি এখনও বোঝার উপায় আছে আমাকে কেউ মেরেছে? মানে মুখের অন্য দাগগুলো তো প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাও কানের পাশটায় একটু আছে। সেটা কনসিলার দিয়ে ঢেকে দেবো। কিন্তু এই জায়গাটা নিয়েই তো সমস্যা। এটা দেখে কি বোঝা যায় আমি মার খেয়েছি?”
জোহানের ঠোঁটের কোণে আঘাতের চিহ্নটা একটু দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ক্যামিলা তা ধরা দিলো না। সে চোখ সরু করে দেখতে দেখতে বললো,
“দেখো, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি এই বিষয়ে মিতুলের সাহায্য নিতে পারো। ওকে কি আমি..”
“নো সিস, ওর কথা উঠিয়ো না। ও আমার সাথে বেয়াদবি করেছে!”
“বেয়াদবি? কী বেয়াদবি করেছে তোমার সাথে?”
“কালকে আমি ওকে কল দিয়েছি। ও কল রিসিভ করেনি আমার। ম্যাসেজ পাঠিয়েছি, ও কোনো রিপ্লাই দেয়নি। চরম বেয়াদবি করেছে ও আমার সাথে।”
“কল রিসিভ না করার কারণ ছিল নিশ্চয়ই।”
“বুঝ দিতে এসো না সিস, বুঝ দিতে এসো না আমাকে। তুমি চেনো না ওকে। ও সাংঘাতিক মেয়ে!”
“বুঝতে পেরেছি তুমি রেগে আছো ওর উপর। ঠিক আছে আমি এখন যাচ্ছি।”
ক্যামিলা জোহানের ঘর থেকে বের হতে উদ্যত হলো। জোহান ডেকে উঠলো,
“সিস…”
ক্যামিলা পিছন ফিরে বললো,
“হোয়াট?”
জোহান একটু দোনামনা করে বললো,
“পাঠিয়ে দাও মিতুলকে আমার রুমে।”
জোহানের কাণ্ডে ক্যামিলা হেসে ফেললো। কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
দেখতে পেল মিতুল কিচেনে ঢুকছে। ক্যামিলা কিচেনে চলে এলো।
মিতুল ক্যামিলাকে দেখে বললো,
“কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”
“মিতুল, তুমি একটু সাহায্য করতে পারবে আমাকে?”
“কী সাহায্য?”
“জোহানকে একটু হেল্প করতে পারবে? ও আমাকে ডেকেছিল। কিন্তু আমাকে এখন ব্রেকফাস্ট রেডি করতে হবে। তো আমার হয়ে তুমি ওকে একটু সাহায্য করো।”
জোহানকে হেল্প করে দিতে নারাজ মিতুল। কিন্তু ক্যামিলার মুখের উপর সে কথা বলতে পারলো না। ক্যামিলার মুখের উপর না করে দেওয়া তো অভদ্রতা ছাড়া আর কিছুই নয়। মিতুল বললো,
“ঠিক আছে, ওকে হেল্প করবো আমি। কিন্তু কী বিষয়ে হেল্প করতে হবে ওকে?”
“গিয়েই দেখো একটু কী হেল্প লাগে।”
মিতুল জোহানের রুমের দরজায় নক করলো। সাহায্যের জন্য মানুষ ডেকে এখন আবার দরজা বন্ধ করে রেখেছে? কেমন বেয়াদব? মিতুল এবার জোরে আঘাত করলো। দরজা খুলে গেল সাথে সাথে। মিতুল কঠিন মুখ করে জিজ্ঞেস করলো,
“কী হেল্প লাগবে তোমার?”
“রুমে প্রবেশ করো।”
মিতুল রুমে ঢুকলো।
জোহান নিজের ঠোঁটের কোণে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললো,
“এই জায়গাটা দেখলে কি বোঝা যায় যে আমি মার খেয়েছি?”
“হুম, বোঝা যায়। না বোঝার কী আছে? তুমি যে মার খেয়েছো সেটা একটা পাগলও দেখলে বুঝে যাবে।”
মিতুল বাড়িয়ে বললো। জোহানের ক্ষত অতটাও গাঢ় নয়। হালকা হয়ে গেছে। আর একটু ক্ষত তো যে কোনো কারণে হতেই পারে। মার খেলেই যে কেবল ক্ষত হবে এমনটা তো নয়।
মিতুল যে বাড়িয়ে বলছে সেটা জোহানও বুঝতে পারলো। আর তাই বললো,
“বাহ! বাংলাদেশি মেয়েরা তো হাত হলে পা বানিয়ে ফেলতে পারে দেখছি। এসব প্রতিভা তো ওদের ভালোই আছে।
এখন তুমিই বলো, বাংলাদেশি মেয়েদের গুণগান আমি কীভাবে গাইতে পারি? নাহ, বাংলাদেশি মেয়েদের এই জীবনে বিশ্বাস করা যাবে না। আর হ্যাঁ, যাওয়ার সময় বাংলা বলার চেষ্টা করবে না একদম। আমি বাংলা পারি না বলে দুর্বল ভাববে না আমাকে। ওদিকে দেখো। তিন তিনটা বাংলা শেখার বই আছে আমার কাছে। খুব দ্রুত বাংলা শিখে তোমায় দেখিয়ে দেবো আমি।”
মিতুল এবার বাংলাতে গটগট করে বলে উঠলো,
“হ্যাঁ, আমিও দেখতে চাই তোমার মতো অকর্মণ্য বদমাইশের মুখে কী বাংলা ফোঁটে। পারবে তো শুধু ‘চু-চু’ করতে। ‘চুবিয়ে’ আর বলতে পারবে না।”
বলেই মিতুল বেরিয়ে গেল।
জোহান বিছানার উপর ধপাস করে বসে পড়লো। দিশেহারা লাগছে ওর। মেয়েটা বাংলা বলে বলে পাগল বানিয়ে ফেলবে ওকে। না, বাংলা না শিখে থাকা যাবে না আর। এই বেঙ্গলি লিটল গার্লটির জন্য হলেও ওকে বাংলা শিখতে হবে দ্রুত।
(চলবে)