চৈতালি_পূর্ণিমা,পর্ব-১৭
Writer_Asfiya_Islam_Jannat
বিয়ের কার্যক্রম শেষ করে ফিরতে ফিরতে স্পর্শীদের প্রায় রাত হয়ে যায়। বাড়ির ছেলে-মেয়েরা আর কিঞ্চিৎ গুরুজনেরা আগে-ভাগেই এসে ঘরবাড়ি গুছিয়ে নববধূকে বরণ করার প্রস্তুতি নিয়ে নেন। অতঃপর বাকিরা এসে পৌঁছাতেই বরণ করা হয় বর ও নববধূকে। আনুষ্ঠানিক রীতিনীতি মেনে বধূকে বসিয়ে আসা হয় ফুলে সজ্জিত রুমে। সকলে কিছুক্ষণ হাসি-ঠাট্টা করে চলে আসে বাহিরে। মাহিনকে হেনেস্তা করতে তার আসার পূর্বেই দরজার সামনে গোল হয়ে দাঁড়ায় সকলে। স্পর্শী সেখান থেকে চলে আসতে চাইলেও নাহিদের জন্য পারে না। অগত্যা সকলের সাথে দরজা ধরে দাঁড়ায়। অনন্তর, মাহিনের দেখা মিলতেই সকলে হামলে পড়ে তার উপর। জানায়, মোটা অংকের টাকা না নিয়ে তারা কোনভাবেই তাকে ভিতরে ঢুকতে দিবে না। মাহিন প্রথমে রাজি না হলেও সকলের পীড়াপীড়িতে অবশেষে রাজি হয় টাকা দিতে। টাকা পাওয়া মাত্রই সকলে হৈ-হুল্লোড় করে দরজা ছেড়ে দেয়। সকলের উচ্ছাস দেখে মাহিন মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“যত মজা করার করে নে। এই দিন ফুরিয়ে আমার দিনই আসবে। সেদিন আমিও বুঝাবো মজা।”
নাহিদ দাঁতের পাটি বের করে বিস্তৃত হেসে বলে, “আগে আসুক তোমার দিন, তারপর কথা বইলো। আমাদের দিনে তোমার কথা বলা সাজে না। এখন চুপচাপ বাসর ঘরে গিয়ে নিজের কাজ করো, যাও!”
মাহিন কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “আমার কথা বাদ দে। সামনে না নির্বাণের বিয়ে? নিজের ভাইয়ের থেকে চার আনা বের করতে পারোস কি-না দেখুম। যদি না পারসোস টাকা বের করতে, তোর একদিন কি আমার একদিন।”
নাহিদ ভাব নিয়ে বলে, “টাকা না দিলে ভাইয়ের বাসরই হইতে দিমু না আমি। ভাবীরে কিডন্যাপ করে হলেও টাকা হাতাবো আমি।”
মৃদুল বলে, “স্লোগান তাইলে কি হবে? টাকা দাও, বউ নাও নাকি বাসর করিতে হলে আমাদের দাবি মানতে হবে, কোনটা?”
স্লোগান শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে। এদিকে, নির্বাণের নাম উঠতেই স্পর্শীর মেদুর গালে ছড়ায় রক্তিমা। মাথা নুইয়ে যায় লজ্জায়। ভাই একটা দুনিয়ার বদরাগী, আরেকটা পুরাই লাগামহীন। কাদের মাঝে যে চলে আসলো স্পর্শী, আল্লাহ মালুম। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
“মাহিন তুই এখনো বাহিরে কেন? আর কি নিয়ে মজা হচ্ছে?”
নির্বাণের কন্ঠস্বর সকলে সনাক্ত করতে পেরে মুহূর্তেই জমে যায়। তটস্থ হয়ে পিছনে ঘুরে তাকায় সকলে। নির্বাণের গাম্ভীর্য পূর্ণ অভিব্যক্তি দেখেই সকলেই ফাঁকা একটা ঢোক গিলে নেয়। এদিক, মাহিন নির্বাণকে দেখামাত্র চওড়া হাসি দেয়। মনে মনে নাহিদ এবং সকলকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ফন্দি এঁটে নিয়ে বলে, “আরেহ তোর কথাই হচ্ছিল। ওরা বলছিল…”
চোখের পলকেই নাহিদ মাহিনের পেটে কুনোই দিয়ে আঘাত করে মাহিনকে অর্ধেক কথার মাঝেই থামিয়ে দেয়। মাহিন ব্যথায় পেট চেপে ধরে নাহিদের দিকে রোষাগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। নাহিদ সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে কিঞ্চিৎ হেসে নির্বাণকে বলে,
“কিছু না ভাই। মাহিন ভাই আজাইরা প্যাচাল পারে খালি, আমরা তো শুধু তাকে বাসর ঘরে ঢুকাচ্ছিলাম। কি ঠিক না বল সবাই?”
বাকিদের দিকে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতেই প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে নাহিদ। পরক্ষণেই সকলে সেই কথায় সমর্থন জানায়। কেন না, এইখানে কম বেশি সকলেই নির্বাণের রাগ সম্পর্কে অবগত। নিজে বা অন্যকে নিয়ে কোন রকমের ব্যঙ্গার্থক উক্তি নির্বাণের পছন্দ নয়। একবার এক কাজিন মজার ছলেই নির্বাণকে নিয়ে মজা করেছিল, অতঃপর নির্বাণের ঝাড়ির বর্ষণেই তার একশো দুই ডিগ্রি জ্বর উঠে কুপোকাত অবস্থা। সেই থেকেই তারা কখনো নির্বাণের সামনে মজা করার দুঃসাহসিকতা করে না। তৎক্ষনাৎ সকলের এরূপ পরিবর্তনে স্পর্শী বেশ চমকায়। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে দেখতে থাকে তাদের। নির্বাণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
“আচ্ছা! মাহিন তুই এখন ভিতরে যা আর বাকি সব নিজ নিজ রুমে যা।”
সকলে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়৷ মাহিন পুনরায় কিছু বলতে নিলে নাহিদ মাহিনকে ঠেলে রুমের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে চাপা কন্ঠে বলে, “প্রতিশোধ নিলে অন্যভাবে নাও। আমাদের বাঘের মুখে ফেলার ফন্দি আঁটছো কেন? এখন এদিক-সেদিক না দেখে সোজা মন দিয়ে বাসর করো, যাও!”
কথাটা বলেই নাহিদ কিঞ্চিৎ শব্দ করে দরজা আঁটকে দেয়। অতঃপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে নাহিদ সকলকে নিয়ে কেটে পড়ে। নির্বাণ এইবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় স্পর্শীর পানে, “রুমে চল।”
স্পর্শী মাথা দুলিয়ে পিছন পিছন যায় নির্বাণের। যাওয়ার মাঝে নির্বাণের ডাক পড়ে। নিলুফা ডাকছেন। নির্বাণ স্পর্শীকে রুমে যেতে বলে, চলে যায় নিলুফার রুমে। স্পর্শী রুমে এসে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দেয়৷ আঁখিপল্লব ভর্তি নিদ্রা বিরাজমান। মিনিট দুই-এক না পেরুতেই চোখ লেগে আসে স্পর্শীর। বেশ কিছুক্ষণ পর তন্দ্রাঘোরেই অতি পরিচিত পুরুষালী কন্ঠে নিজের নাম শুনতে পায় স্পর্শী। পিটপিটিয়ে চোখ খোলার চেষ্টা করে সে। আধ-নিভন্ত চোখে তাকায় সামনে, মুখের সামনে নির্বাণের প্রতিচ্ছবি দেখে মন্থন কন্ঠে বলে,
” কি হয়েছে? ঘুমাতে দিন না!”
“উঠো আগে! এইভাবে কেউ ঘুমায়? কিছুই তো চেঞ্জ করো নি। ফ্রেশ হয়ে তারপর ঘুমাও।”
স্পর্শী একরোখা কন্ঠে বলে, “আমি এইভাবেই ঘুমাবো।”
“উফফ! উঠো তো।”
নির্বাণ এক প্রকার টেনেই স্পর্শীকে উঠালো। স্পর্শী ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থায় নির্বাণের দিকে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে তাকালো। নির্বাণ সেই দৃষ্টি আমলে না নিয়ে নিজ উদ্যোগেই একেক করে স্পর্শী গহনাগুলো খুলে দিল। অতঃপর ব্যাগ থেকে এক সেট জামা বের করে ধরিয়ে দিল স্পর্শীর হাতে। কিছুটা অসন্তোষজনক কন্ঠেই বলল, “এতটা পথ জার্নি করে এমন নোংরা অবস্থায় কিভাবে কেউ ঘুমাতে পারে? এখনই গিয়ে শাওয়ার নিবে তুমি, যাও।”
স্পর্শী অপ্রসন্ন কন্ঠে বলে, “এইবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে। এত রাতে শাওয়ার?”
নির্বাণ কঠিনচিত্ত কন্ঠে বলে উঠে, “যা বলেছি তা করো, যাও। ধুলোমাখা শরীর নিয়ে আর যাই হোক তুমি আমার পাশে ঘুমাতে পারবে না।”
“আচ্ছা তাহলে আমি মায়ের রুমে যাচ্ছি। তার সাথেই ঘুমাবো আমি আজ।”
কথাটা বলে স্পর্শী দরজার দিকে যেতে নিলে নির্বাণ তার বাহু ধরে টান দেয়। স্বগতোক্তি কন্ঠে বলে, “এক পাও যদি রুম থেকে বাহিরে যাওয়ার জন্য চালিয়েছ আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। ফ্রেশ হতে যাও এখনোই।”
স্পর্শী প্রত্যুত্তর করতে চাইলো তবে নির্বাণের দৃঢ়ভাব দেখে দমে গেল। সেই সাথে খানিকটা অভিমান হলো নির্বাণের দৃঢ় ব্যবহারে। অগত্যা এক রাশ অভিমান নিয়েই চলে গেল ফ্রেশ হতে। স্পর্শী যেতেই নির্বাণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। অতঃপর স্পর্শীর গহনা গুলো বিছানা থেকে তুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে, বিছানা ঝাঁট দিয়ে নিল। রুমে এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে মেরে নিজে বেরিয়ে গেল রুম থেকে নিলুফার রুমের উদ্দেশ্যে। তার এখন আবার ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন।
স্পর্শী বেরিয়ে এসে সব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখে ভ্রু কুঁচকালো। তবে, বিষয়টা এতটা আমলে নিল না। কোন রকম চুল মুছে দ্রুত গা এলিয়ে দিল বিছানায়। নিদ্রায় কাবু সে, নয়ন দুইটি নিমজ্জিত আঁধারে। স্পর্শী শুয়ে পড়তেই নির্বাণ রুমে এলো। প্রখর দৃষ্টিতে তাকালো স্পর্শীর দিকে। উল্টোমুখ করে শুয়ে আছে সে। চুল বেয়ে তার তখনও টপটপ করে পানি ঝড়ছে। ভিজে যাচ্ছে নীলাভে আবৃত বালিশ, বিছানা। সিক্ত জামা আড়ষ্টভাবে লেপ্টে আছে পিঠের সাথে। নির্বাণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। হাতে থাকা তোয়ালেটা নিয়ে এগিয়ে গেল স্পর্শীর দিকে। ফের টেনে উঠালো তাকে। স্পর্শী এইবার আকাশ ছুঁই ছুঁই রাগ নিয়ে বলল, “কি সমস্যা? বার বার আমাকে নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া করছেন কেন? ঘুমাবো আমি।”
নির্বাণ চিন্তামগ্ন কন্ঠে বলে, “মাথা মুছোনি কেন ঠিক মত? ঠান্ডা লেগে যাবে তো।”
স্পর্শী নির্বাণের কথা অগ্রাহ্য করতে চাইলে নির্বাণ স্পর্শীকে নিজের বুকের সাথে ঠেশ্ দিয়ে ধরে। খুব সপ্তপর্ণে চুলগুলো মুছে দিতে থাকে। ঘুমের তাড়নায় স্পর্শীও নিভৃতে গুটিয়ে আসে নির্বাণের দিকে। ক্লান্ত থাকায় ঘুমন্ত কুমারী সে অবস্থাতেই পাড়ি জমায় বিভোর রাজ্যে। নির্বাণ বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারলো আরও পরে। স্পর্শীকে এইভাবে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে নির্বাণ স্বল্প প্রশস্তে হেসে বলে, “মেয়েটা এত ঘুমকাতুরে কেন?”
___________________
মেহেদী রাঙ্গা বিকেলের স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি ছোট দিঘির বুকে। মৃদু বাতাসের দোলে কম্পিত আকাশ। দিঘির ঠিক পূবদিকে পদ্ম গাছের কচি লতা-পাতা ছড়িয়ে আছে বিশৃঙ্খলভাবে। বর্ষার আগমনে দেরি বলে অভিমানী ফুল ফুটেনি এখনো। সকালে কালবৈশাখি ঝড়ে আগমন হওয়ায় বাতাসে এখনো কাঁচা মাটি ও বুনোফুলের সুবাস বিদ্যমান। দিঘির পাড়ে বসেই পড়ন্ত বিকেলের অপার্থিব সৌন্দর্য উপভোগ করছে এক দল কিশোরী। তার মধ্যে স্পর্শীও অন্তর্ভুক্ত। নিবার্ণের কাজিনদের সাথেই এইদিকটায় আসা তার। জায়গায়টা কোলাহলমুক্ত হওয়ায় সেখানেই জমে গেল আড্ডা৷ অকস্মাৎ স্পর্শীর ইচ্ছে হলো দিঘির জলে পা ভেজাতে। নিজের ইচ্ছাকে হেলায় যেতে না দিয়ে পাড়ে কাঠ দিয়ে বাঁধানো উঁচু জায়গায় বসে সপ্তপর্ণে পা ডুবিয়ে দিল শীতল জলে। স্পর্শীকে দেখাদেখি কয়েকজন এগিয়ে এসে একই কাজ করলো। গল্প-গুজবে সময় কাটলো কতক্ষণ। অতঃপর সাঁঝ নেমে আসতেই সকলে উঠে দাঁড়ালো একেক করে। তবে স্পর্শী উঠলো না, বসে রইলো। তার ভালো লাগছে এইখানে। খোলা আকাশের নিচে, নির্মল বাতাসে। নিবিড় দৃষ্টি স্থির হলো মিলিত আকাশের পানে। স্পর্শীকে এইভাবে বসে থাকতে ইমদাদুলের বড় মেয়ে সুবর্ণা বলে উঠে,
— ভাবী, ভিতরে যাবে না? একটু পরই আযান দিবে, এর আগে বাসায় না ফিরলে মা বকবে।
স্পর্শী মন্থর কন্ঠে বলে, “আমি এইখানে আরেকটু থাকতে চাই। তোমরা যাও, আমি না-হয় একটু পর আসছি।”
রাসেলের কনিষ্ঠ মেয়ে রামিশা বলে, “তোমাকে না নিয়ে ফিরলে আমরা সবাই বকা খাব। এইভাবেই মা বলে, সন্ধ্যার সময় দিঘির পাড়ে থাকতে নেই। জ্বীনে-ভূতে ধরে। তুমি চল না আমাদের সাথে।”
স্পর্শী পুনরায় বলে, “বকবে না। আমি বলবো নে আমি থাকতে চেয়েছিলাম বলেই তোমরা ফিরে গিয়েছ। তোমাদের দোষ নেই।”
সকলে আরও কয়েকবার স্পর্শীকে তাদের সাথে যাওয়ার জন্য বলে। কিন্তু শেষে স্পর্শীকে রাজি করাতে না পেরে ব্যর্থ হয়েই চলে যায় তারা। কিঞ্চিৎ সময় পরই প্রতিধ্বনিত হয় আজানের মিষ্ট ধ্বনি।ধীরে ধীরে রঙিন আকাশ আবৃত হয় কৃষ্ণের রঙে। স্পর্শী মাথায় দেওয়া ঘোমটা আরেকটু টেনে নিয়ে পুনরায় মন দেয় আকাশের রূপান্তর দেখাতে৷ কিছু সময় অতিবাহিত হতে না হতেই পিছন থেকে নির্বাণের কন্ঠ ভেসে আসে।
“তুমি এখনো এইখানে কি করছো?”
স্পর্শী ফিরে তাকায়। নির্বিকার কন্ঠে বলে, “আকাশ দেখছি।”
“দেখা হলে, ভিতরে চল। এখন দিঘির পাড়ে থাকা নিরাপদ না।”
স্পর্শী হেসে বলে, “কেন? আপনিও কি জ্বীন-ভূতে বিশ্বাস করেন?”
নির্বাণ ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলে, “বখাটে ছেলের দল বের হয় এইসময়। এদিকটায় আসে বেশির ভাগ। ”
স্পর্শী ঠোঁট গোল করে বলে, “অহ আচ্ছা।”
“হুম, চল।”
স্পর্শী কথা না বাড়িয়ে উঠতে নেয়। তা দেখে নির্বাণ এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে, “আস্তে-ধীরে উঠো, পড়ে যাবে না-হলে।”
স্পর্শী প্রত্যুত্তর করে না তবে কিঞ্চিৎ হাসে৷ মনটা আজ তার হৃষ্টচিত্ত। নির্বাণের হাত ধরেই উঠে দাঁড়ালো সে। স্পর্শীর হাতে ও পিছনে মাটি লেগে থাকায় ঝাড়া দিল। নির্বাণ সেটা লক্ষ্য করে পকেট থেকে রুমাল বের করে স্পর্শীর হাত টেনে ধরলো। খুব যত্নসহকারে হাত দু’টো মুছে দিতে রুমালটা পানিতেই ফেলে দিল। স্পর্শী তা দেখে বলল, “ফেললেন কেন?”
“এইভাবেই! চল এখন।”
স্পর্শী পাল্টা প্রশ্ন করতে চাইলো কিন্তু কিছু একটা ভেবে আর করলো না। সিক্ত পায়ে জুতো চড়িয়ে হাঁটা দিল নির্বাণের সাথে। বাগানের পথ ধরে কিছু দূর এগোলেই শেখ বাড়ি। ভেজা ঘাসের উপর স্পর্শীকে অসাবধানতার সাথে হাঁটতে দেখে নির্বাণ বলল, “আস্তে হাঁটো। জায়গায়টা ভেজা, পড়ে যাবা।”
নির্বাণের কথাটা বলতে দেরি তবে স্পর্শীর স্লিপ কাটতে নয়। নির্বাণ দ্রুত ওর হাত টেনে ধরে। স্পর্শী নিজের ভারসাম্য রক্ষা করে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই নির্বাণ বলে, “বলেছিলাম না?”
স্পর্শী লজ্জায় মাথা নুইয়ে বলে, “আসলে,খেয়াল করিনি।”
নির্বাণ কিছু বলল না। নিভৃতে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে স্পর্শীর হাত নিজের মুঠোয় শক্ত করে ধরলো। বাকিটা পথ আর হাত ছাড়লো না সে।
চলবে