চৈতালি_পূর্ণিমা,পর্ব-২৩
Writer_Asfiya_Islam_Jannat
স্পর্শী খুব সুক্ষ্ম নজরে নির্বাণকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। বা-হাতে তোয়ালে নিয়ে ক্লান্ত হাতে মাথার তালুতে সংঘর্ষ চালাতে ব্যস্ত নির্বাণ। শ্যামবর্ণ মুখশ্রীটি প্রায় পাংশুটে, নয়ন যুগল তার মাত্রাতিরিক্ত লাল। খয়েরী অধর দু’টি চেপে ধরে আছে, কদাচিৎ নাক টানার শব্দ শোনা যাচ্ছে। লোকটার যে ইতিমধ্যে ঠান্ডা লেগে গিয়েছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। স্পর্শী বুঝতে পারলো না, এই অবেলার বৃষ্টি মুখোর রাতে এইখানে আসার মানেটা কি? সে সাথে, কতক্ষণ ধরে যে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টিতে ভিজেছে কে জানে? উপরোক্ত প্রশ্নগুলো করার অবকাশ পায়নি সে। তখন নির্বাণকে দেখা মাত্র স্পর্শী ঝটপট বাসা থেকে নেমে পড়েছিল। নির্বাণের নিকট আসামাত্র তার রক্তহীন,ফ্যাকাশে মুখ-চোখ দেখে স্পর্শীর বক্ষপিঞ্জরের বন্দী যন্ত্রটা ছ্যাৎ করে উঠে। বৃষ্টি বেগ তখনও নিরলস। ক্ষান্ত হওয়ার কোন নাম-গন্ধ নেই। স্পর্শী কোনপ্রকার দ্বিরুক্তি না করে নির্বাণকে টেনে বাসার ভিতর নিয়ে আসে। অতঃপর বাসায় এসে এইটা বলে সামাল দেয় যে, নির্বাণ কোন এক কাজে সন্ধ্যায় বেরিয়েছিল। কিন্তু পরে ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য আঁটকে যায়। তার উপর, সামনের দিকে রাস্তা ব্লকড থাকায় বাসায়ও যেতে পারছিল না। নির্বাণর যেখানে ছিল সেখান থেকে তার বাসা কাছে ছিল তাই সে তাকে বাসায় আসতে বলেছে। নির্বাণ প্রথমে আসতে না চাইলেও তার জোড়াজুড়িতে এসেছে। আর বাসার ভিতর ঢুকতে ঢুকতেই সে পুরো ভিজে গিয়েছে। তবে, সকলে স্পর্শীর বানোয়াট কাহিনিতে এত একটা ধ্যান দেয়নি। নির্বাণকে দেখামাত্রই তারা ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল ঘরের জামাইকে আপ্যায়ন করতে। সাহেলার তো উৎকন্ঠার শেষ নেই। বিয়ের পর এই প্রথম জামাই এসেছে, কিন্তু বাসায় ভালো-মন্দ তেমন কিছুই নে। এই রাতে কি করবেন, কি খেতে দিবেন তা নিয়ে তার ঢেড় মাথাব্যথা। মিজান সাহেব তাড়া দিলেন, দুইজনকে দ্রুত রুমে গিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য। নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে। স্পর্শী কথামতো তাই করলো। নির্বাণের ফ্রেশ হওয়ার সকল প্রকার ব্যবস্থা করে দিয়ে নিজেও জামা বদলে নিল। তারপর, ছুটলো রান্নাঘরের দিকে। তবে অবাক করার বিষয় হলো, নির্বাণ পুরোটা সময়ই নির্বাক,শান্ত ছিল। দরকার ব্যতীত সামান্য শব্দও অপচয় করেনি সে। নির্বাণের এমন ব্যবহার স্পর্শীকে বেশ ভাবায় কিন্তু সেটা নিয়ে সে ঘাটে না তেমন। পরবর্তীতে শান্তিপূর্ণ ভাবে কথা বলে নিবে এইভেবে।
স্পর্শী দীর্ঘশ্বাস ফেললো, হাতে থাকা রঙ চায়ের পেয়ালাটি বেড সাইড টেবিলে রেখে নির্বাণের হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে নিজেই ভালোমত মাথা মুছে দিতে থাকলো। কন্ঠে তিক্ততা মিশিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এতরাতে এইখানে আসার মানে কি? আর এসেছেন ভালো কথা, কিন্তু বৃষ্টিতে ভেজা কি আবশ্যক ছিল? লাগলো তো এখন ঠান্ডা।”
স্পর্শীর কথা শেষ হতে না হলে নির্বাণ স্পর্শীর কব্জি ধরে টান দিল। রোষাগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো স্পর্শীর চোখে চোখ রেখে। ঘটনার আকস্মিকতায় স্পর্শী বিহ্বল, বিমূঢ় হয়ে নিজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে নির্বাণের কাঁধে হাত রাখলো। নির্বাণ জিজ্ঞেস করে, “ফোন ব্যস্ত থাকে কেন তোমার? এত কিসের কথা?”
অগ্নিময় চাহনির অন্তরালে লুকিয়ে থাকা শীতল উপলব্ধি করতে পেরে স্পর্শী ঈষৎ কেঁপে উঠলো। পরক্ষণে ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে বলল, “ফোন আমার ব্যস্ত থাকে নাকি আপনার? অযথা মিথ্যা আরোপ আমার উপর জারি করবেন না।”
মুহূর্তে নির্বাণের কপালে তিনটি রেখার সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়লো, “মানে?”
“মানে যা তাই। এসেছেন কেন আপনি এইখানে?”
স্পর্শীর কন্ঠে স্পষ্ট অভিমান। পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাণের শাণিত কন্ঠ, “কথা ঘুরাবে না। ঠিক কি বুঝাতে চেয়েছ তা বল।”
“এইটাই যে, ফোন আমার না আপনার ব্যস্ত ছিল। রাতে আমি অনেকবার ফোন করেছি কিন্তু প্রতিবারই ব্যস্ত বলেছে সেটা।”
নির্বাণের কপালের ভাঁজ তীব্র হলো। স্পর্শী তা দেখে নির্বাণের হাতের মুঠো হতে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সটান হয়ে দাঁড়ালো। বিছানার উপর থেকে মুঠোফোনটা তুলে নিয়ে কললিস্ট বের করে দেখালো নির্বাণকে, “দেখেন!”
নির্বাণ নীরব রইলো। অতঃপর বলল, “কল তো আমিও করেছিলাম….”
কথাটা সম্পূর্ণ করলো না নির্বাণ। কথা শেষ করার পূর্বেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। স্পর্শী চোখ পিটপিট করলো। অতঃপর ঘটনাক্রমে বুঝে উঠতে বলল, “তার মানে আপনি আর আমি ঠিক একই সময় দুইজন দুইজনকে ফোন করেছিলাম?”
নির্বাণ ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকালো। স্পর্শী নিজের কপাল চাপড়ালো, তার কিছু বলার ভাষা নেই৷ এমন কাকতালীয়তাও যে হয় সে-টা তার জানা ছিল না। স্পর্শী মাথা তুললো, “তাহলে এইখানের আসার কারণটা?”
“বউ নিরুদ্দেশ হলো কি-না দেখতে এসেছিলাম।”
নির্বাণ সহজ স্বীকারোক্তি। স্পর্শী এক মিনিটের জন্য থমকালো, নেত্রপল্লব ফেললো বার কয়েক। নির্বাণ টেবিলের উপর থেকে অর্ধ-ঠান্ডা চায়ের পেয়ালাটা হাতে নিয়ে চারদিকে একবার নজর বুলাই, “তুমি এত আগোছালো কেন? রুমের কি হাল করে রেখেছ।”
নির্বাণের কথা শুনে স্পর্শী চারপাশে তাকালো। তখন পেন্টিং করে উঠার পর আর জিনিসপত্র গোছগাছ করা হয়নি। আলসামিতে ধরেছিল। স্পর্শী লজ্জাবোধ করলো, নিজের দোষ ঢাকতে বললো, “আমার রুম আমি যেমন ইচ্ছা তেমন রাখতেই পারি। আপনার কি?”
“আমি আমার বউকে বলছি তোমার কি?”
কথাটা বলে নির্বাণ দাঁড়ালো। তখনই দরজার পিছনে ঠেস দিয়ে রাখা অর্ধেক সম্পূর্ণ একটি স্কেচের দিকে তার নজর গেল। কিঞ্চিৎ মুহূর্তও লাগলো না তার বুঝে উঠতে স্কেচটি কার। বিস্ময় না হয়ে পারলো না, কিয়ৎকাল পর ঠোঁটের কর্ণদ্বয়ে ভীড় করলো এক সুক্ষ্ম হাসির রেখা। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলল না সে। স্পর্শী তখনই রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে, “আপনার বউ মানে তো আমিই নাকি?”
নির্বাণ দৃষ্টি ঘুরালো, “কি জানি।”
কথাটা বলে নির্বাণ ড্রয়িংরুমের দিকে চলে গেল। নির্বাণের এমন হেয়ালি কন্ঠে স্পর্শী ভ্রু কুঁচকালো, ভিতরে ভিতরে ফোঁস করে উঠলো। কিন্তু পরমুহূর্তে নির্বাণের ‘বউ’ সম্মোধনের কথা মনে পড়তেই এক রাশ মুগ্ধতা বিরাজ করলো মনের কোণে।
________________
রুমে নীলাভ রঙের বাতিটি জ্বালিয়ে দিয়ে স্পর্শী নির্বাণের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। ক্ষণে শীতল শরীরের সংস্পর্শে তীব্র উত্তাপ অনুভব করতেই পাশ ফিরলো সে। শোয়া থেকে আধশোয়া হয়ে উঠে বসে সে, চিন্তিত ভঙ্গিতে হাত ছোঁয়ায় নির্বাণের গালে,কপালে। গা বেশ গরম, জ্বর উঠছে। স্পর্শী তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো, সে নির্বাণের হাবভাব দেখে আগেই বুঝেছিল রাতে জ্বর আসবে তার। তাই খাবারের টেবিলে সে বার বার বলেছিল নির্বাণকে প্যারাসিটামল খেয়ে নিতে। নির্বাণ শুনেনি। মানুষটা বড্ড একঘেয়ে।
কারো শীতল হাতের ছোঁয়া পেতেই নির্বাণ চোখ খুলে তাকায়। চোখাচোখি দুইজনের। স্পর্শী শাণিত কন্ঠে বলে, “বলেছিলাম না তখন ঔষধ খেতে, খেলেন না। দেখেন এইবার জ্বর এলো তো। কি হতো আমার কথা শুনলে?”
নির্বাণ নিরুত্তর রইলো। গভীর দৃষ্টিতে তাকালো স্পর্শীর চিবুকের উপরে। স্পর্শী প্রখর কন্ঠে আরও কিছু কড়া কথা শুনাতে যাচ্ছিল কিন্তু তার পূর্বেই নির্বাণ তার হাতের তর্জনী উঁচিয়ে ধরে স্পর্শীর অধরের মাঝ বরাবর চেপে ধরে ক্ষীণ কন্ঠে বলে উঠলো, “হুসস! কোন কথা না।”
স্পর্শী থমকালো, পিটপিট করে তাকালো। পরমুহূর্তেই নির্বাণের গভীর দৃষ্টির ফাঁদে বাঁধা পড়লো সে। দুইজনের মধ্যকার দূরত্ব একবারেই ক্ষীণ। নির্বাণের অবাধ্য আঙুলের ডগা কিয়ৎক্ষণ বিচরণ করলো স্পর্শীর অধরের চারপাশে। তপ্ত সেই স্পর্শ। হঠাৎ কি হলো কে জানে, চোখের পলকেই নির্বাণ স্পর্শীর হাত ধরে টেনে তাকে নিজের উপর ফেলে। স্পর্শীর গলদেশে হাত গলিয়ে সন্তর্পণে স্পর্শীর অধরে নিজের অধর ছুঁয়ে দেয়। কাল ক্রমে স্পর্শী অবাক হওয়াও যেন ভুলে গেল। বিবশ,ব্যগ্র,বিমূঢ় অনুভব সব মিশ্রিত হওয়া মাত্র স্পর্শ নিবিড় হলো। ক্ষণেই নেত্রপল্লব বন্ধ হয়ে এলো তার। কিয়ৎকাল পর নির্বাণ সরে আসতেই স্পর্শী লম্বা নিঃশ্বাস নিল। লজ্জায় চোখ তুলতে পারলো না ভুলেও৷ প্রথম প্রেমালিঙ্গণ, প্রেমানুভূতি, প্রথম স্পর্শানুভূতি যে তীক্ষ্ণ, প্রখর,শাণিত হয় তা স্পর্শী জানা ছিল না। নির্বাণ স্পর্শীর মুখপানে তাকালো, নীল রাঙ্গা আলোয় স্পর্শীর রক্তিম মুখটি স্পষ্ট ঝলঝল করছে। নির্বাণ বেসামাল হলো। নিভৃতেই মুখ গুঁজলো স্পর্শীর গলদেশে। মুহূর্তে গাঢ় প্রণয়ের লালাভ স্পর্শ স্থাপন করলো সেখানে।
________________
আকাশটা আজ ধোয়াটে৷ কৃষ্ণ মেঘে আবৃত আকাশ। কাঁদা মাখো রাস্তাঘাট জানান দিচ্ছে বর্ষা এসে গিয়েছে। ক্ষণেই দমকা হাওয়ার দল এসে মাটিতে পড়ে থাকা স্পর্শীর ওড়নার শেষাংশটুকু শূন্যে ভাসিয়ে দেয়। স্পর্শী দ্রুতগামী হাতে ওড়নাটা হাতে পুরে নিয়ে অবসন্ন দৃষ্টিতে তাকায় কলাভবণের বারান্দার দিকে। সেখানে স্পষ্ট দুইজন ব্যক্তিকে একত্রে হাসতে এবং কথা বলতে দেখা যাচ্ছে৷ মাঝে মধ্যে হাঁটা থামিয়ে কিছু আলাপ-আলোচনাও করছে। তাদের এমন ভাব স্পর্শীর সহ্য হলো না। মনে ঈর্ষার আগুন জ্বলে উঠলো। সে দৃষ্টি সরাতে চাইলো, কিন্তু পারলো না। বারংবার দৃষ্টি গিয়ে স্থির হলো সেখানেই। সপ্তাহখানেক হতে চললো নির্বাণ কাজের অজুহাতে এদিক-সেদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছে। দু’মিনিট কথা বলারও অবকাশ নেই স্পর্শীর সাথে। অথচ এখন দেখো, ঠিকই তাপসি মিসের সাথে কিভাবে হেসে-খেলে কথা বলছে সে। রাগ হলো স্পর্শীর, তার চেয়ে বেশি অভিমান। সময় যত গড়ালো অভিমানের পাল্লা যেন ভারী হলো। মানুষটার আশেপাশে কেন শত মাইল দূরেও কোন অবস্থান করুক সেটা তার বোধগম্য নয়। অকস্মাৎ পাশ থেকে নিধি বলে উঠে,
“শুনলাম, তাপসি ম্যামের বিয়ে সামনে।”
স্পর্শী দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিধির দিকে তাকালো। পাশ থেকেই মাহিন গরম গরম সিঙ্গারায় একটা কামড় বসিয়ে বলল, “হ্যাঁ, শুনলাম তো। কিন্তু আমার না তার বরকে দেখার খুব ইচ্ছা। আমি দেখতে চাই কোন হতভাগার কপাল ফাটলো।”
সামি হেসে বলে, “যারই ফাটসে, সে যে সারাজীবন কেঁদে কূল পাবে না তা নিশ্চিত।”
কেয়া সন্দিহান কন্ঠে বলে, “আমার না সন্দেহ হচ্ছে। তাপসি ম্যামের বর আমাদের নির্বাণ স্যার না-তো? কয়েকদিন যাবৎ ধরে তাদের একসাথে বেশি দেখা যাচ্ছে। আর আমার জানা মতে, নির্বাণ স্যার এখনও ব্যাচেলর-ই। চান্স আছে!”
নিধির কৌতূহলী কন্ঠ, “হলে হতেও পারে। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক বেশ রহস্যময়ী। তবে, দুইজনের বিয়ে হলে একদম ফাস্টক্লাস হবে৷ হিটলারের ভাগ্যে হিটলারই জুটবে।”
নিধির শেষ উক্তিটি শুনে স্পর্শীর মেজাজ বিগড়ে গেল। সে উচ্চস্বরে বলে উঠলো, “সারাক্ষণ আজাইরা প্যাচাল না পারলে হয়-না তোর? কার সাথে কার জোড়া লাগাস তুই?”
নিধি অবাক হয়ে বলে, “আরেহ ভাই, এত রাগতাছিস কেন তুই? এইখানে রাগার কি-বাই আছে? মজা করছি সকলে।”
স্পর্শী কপট রাগ দেখিয়ে উঠে দাঁড়ালো, “রাগ হওয়ার মত কথা বললে রাগবো না-তো কি লুঙ্গি ডান্স দিব? পরবর্তীতে আমার সামনে এইসব আজেবাজে কথা বলবি না। এন্ড ফর ইয়্যুর কাইন্ড ইনফরমেশন, নির্বাণ স্যার অলরেডি মেরিড। তার বউ আছে।”
অতঃপর এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে নিজের ব্যাগ কাঁধে চেপে লম্বা লম্বা পা ফেলে নিজের ক্লাসের দিকে চলে। আপাতত, মেজাজ তার আগ্নেয়গিরিত উচ্চতর মাত্রার উত্তাপে তপ্ত হয়ে আছে৷ কখন যে কে এর বিস্ফোরণের স্বীকার হবে কে জানে?
_______________
ক্লাস শেষ হতে হতে আকাশ বুক চিরে আবির্ভাব হলো এক পশলা বৃষ্টির। প্রকৃতি মেতে উঠলো বৃষ্টিস্নাতে। স্পর্শী হাতের মুঠোয় ছাতা চেপে ধরে দাঁড়ালো কাঁদা-পানি বিশিষ্ট স্যাঁতসেঁতে রাস্তার ধারে। খোঁজ করলো রিকশার। কিন্তু পেল না একটাও। যাও দুই- একটা রিকশা পেয়েছিল, সেটার মধ্যে একজন ভাড়া চাচ্ছিল আকাশ সমান। আরেকজন যাবে না। স্পর্শী ভীষণ বিরক্ত হলো, অবশেষে না ধৈর্য্যে কুলাতে না পেরে হাঁটা দেয় সামনের দিকে। পাঁচ মিনিটের পথ হাঁটার পর পরই স্পর্শীর পাশে এসে একটি গাড়ি দাঁড়ায়। স্পর্শী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়, কালো রঙের গাড়িটিতে একবার নজর বুলিয়ে পুনরায় হাঁটা দেয়। গাড়িটি পিছন থেকে দুই-তিনবার হর্ণ বাজায়। কিন্তু স্পর্শী সেটা আমলে নেয় না। আবার হর্ণ বাজাতেই স্পর্শী থামে, ক্ষিপ্ত হয়ে পিছন ফিরে তাকায়। কিছু বলার পূর্বেই গাড়ির দরজা খুলে নির্বাণ নেমে আসে। বৃষ্টির শৈথিল্য ভেজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কৃষ্ণমানবটির আয়রন করা সবুজাভ শার্টটি। নির্বাণ স্পর্শীর কাছে এসে ওর হাত চেপে ধরে বলে, “গাড়িতে উঠো।”
চলবে