#চৈতালি_পূর্ণিমা,পর্ব-৪৪
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
নির্বাণ কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান্ত কন্ঠে বলে, “আমার চাকরি হয়ে গিয়েছে।”
কথাটা কর্ণগোচর হওয়ামাত্র স্পর্শী হৃষ্টচিত্তে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় নির্বাণের দিকে, “সত্যি?”
নির্বাণ মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “হ্যাঁ! এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এনালিটিক্যাল কেমিস্ট হিসেবে জয়েন করছি নেক্সট মান্থে।”
স্পর্শী শুকরিয়া আদায় করে বলে, “এটা হলো কবে?”
“তিনদিন আগে।”
স্পর্শী চোখ বড় বড় করে তাকায়, “আর আপনি আমাকে এখন জানাচ্ছেন? আগে জানান নি কেন?”
নির্বাণ হাতের বাঁধন শক্ত করে বলে, “এখানে এসে জানাতে চেয়েছিলাম। একান্ত ভাবে, তাই!”
স্পর্শী গাল ফুলিয়ে বলে, “নট ফেয়ার।”
নির্বাণ স্পর্শীর গালে আলতো করে আধর ছুঁয়ে বলল, “এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার।”
স্পর্শী আরও কিছুক্ষণ কপট রাগ দেখাতে চেয়েছিল কিন্তু নির্বাণের স্পর্শে সেটা পারলো না। গলে গেল মন তার। কন্ঠ মিহি হলো, “মাকে জানিয়েছিলেন?”
নির্বাণ সুক্ষ্মভাবে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ! প্রথমে তাকে এবং দ্বিতীয়তে তোমাকে। বাকি কেউ এখনো জানে না।”
“জানাবেন না?”
“ফিরে যাই তারপর।”
স্পর্শী মাথা দুলিয়ে আরও কয়েকটা প্রশ্ন করে। নির্বাণ সবগুলো প্রশ্নের উত্তরই বেশ গুছিয়ে দেয়। শেষে স্পর্শী জিজ্ঞেস করে, “আপনি কি আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন কোন সাইডে যাবেন?”
“হ্যাঁ কিছুটা। এই জবটার জন্য আরও মাস খানেক আগে থেকেই ট্রায় করছিলাম।”
“অহ আচ্ছা।”
“হ্যাঁ! ভার্সিটিতে পড়াকালীন আমাদের একজন প্রফেসর ছিলেন। কল্যাণ স্যার! সপ্তাহে একদিন বায়োকেমিস্ট্রি ক্লাস নিতেন তিনি। কিভাবে কিভাবে যেন তার সাথে আমার বেশ সখ্যতা হয়ে যায়। শিক্ষতার বাহিরে তিনি একজন রিসার্চার ছিলেন। আমি ল্যাব সাইডে ভালো ছিলাম বলে তিনি প্রায় তার ল্যাবে আমাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্টগুলা দেখাতেন। বছর দুই-এক তার আন্ডারে ছিলামও। সেটাই এখন কাজে লেগেছে। আর কল্যান স্যারের সাথে এখন পর্যন্ত ভালো সম্পর্ক থাকায় আমার রেফারেন্সটাও তিনিই দেন।”
স্পর্শী চোখ ছোট ছোট করে বলে, “আপনি তো দেখছি গভীর জলের মাছ।”
নির্বাণ হাসে, “তাই নাকি?”
স্পর্শীর অকপট স্বীকারোক্তি, “অবশ্যই।”
নির্বাণ কথা বাড়ায় না। আলিঙ্গন শক্ত করে কথা ঘুরায়, “তোমাকে এখানে নিয়ে আসার মূল কারণ কি জানো?”
“না। কি?”
“তোমার সাথে কিছু সময় কাটানোর। পরবর্তী সময় আমার খুব ব্যস্ততায় যাবে, যোগাযোগ হয়তো ক্ষীণ হবে। দেখাদেখির সুযোগ হবে না তেমন। তাই ব্যস্ত হওয়ার পূর্বে চাইছিলাম পুরো সময়টা তোমাকে দিতে।”
স্পর্শী নির্বাণের আংশিক কথা বুঝলো আবার বুঝলোও না। সে প্রশ্নবোধক চাহনি নিক্ষেপ করে, “মানে?”
নির্বাণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে স্পর্শীকে নিজের দিকে ঘুরায়, “চাকরিটা আমার গুলসানের ওদিকে। এখান থেকে যেয়ে এসে করা সম্ভব না, তাই আমি সেদিকে শিফট হচ্ছি।”
স্পর্শী বার কয়েক পলক ফেলে। নির্বাণের সম্পূর্ণ কথার অর্থ বুঝতে পেরে অভিব্যক্তি মলিন হয়। নিষ্প্রভ চাহনিতে তাকায়, “অহ আচ্ছা। বুঝেছি!”
“কি মন খারাপ করলে?”
স্পর্শী জোরপূর্বক অধরের কোণ টেনে বলে, “নাহ! মন খারাপ হবে কেন?”
শরৎ প্রচ্ছন্ন আকাশে গোলাকৃত চন্দ্রপ্রভায় স্পর্শীর শ্যাম মুখটি একটু বেশি স্পষ্ট দেখাল। গায়ে চন্দ্রমা লেপ্টে আছে খুব আদুরে ভাবে। হিমেল বাতাসের দোলে অর্ধ-সিক্ত কেশ উড়ছে আলগোছে। নির্বাণ স্পর্শীর মুখের কাছে পড়ে থাকা অবাধ্য চুলগুলো খুব সন্তর্পণে কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলে, “অনেকক্ষেত্রে দূরত্ব অনুভূতি ফিকে না বরং প্রগাঢ় করে। আর আমার অনুভূতি কখনো ফিকে হওয়ার নয়। নিশ্চিন্তে থাকো। তোমার পাশে আমি সব সময় আছি।”
স্পর্শী অনিমেষ দৃষ্টিতে তাকায়। অধর ধারে মিহি রেখা বর্ধিত। মানুষটা তার মন পড়তে জানে নাকি? সে যে আসলেই এই ভাবনায় মত্ত ছিল। নির্বাণ স্পর্শীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “রুমে চল, খাবার অর্ডার দিচ্ছে। খেয়ে রেস্ট কর, ক্লান্ত তুমি।”
________________
রাত তখন দশটা৷ তিনতালা প্রায় ফাঁকা। কয়েকটা রুম সবেমাত্র খালি হয়েছে বলে কোলাহলও নেই তেমন। করিডরের মধ্যখানে জ্বলতে থাকা লাইটটা একবার জ্বলছে, আরেকবার বন্ধ হচ্ছে। কেমন যেন গা ছমছম পরিবেশ। এমন সময় স্পৃহা দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দ্বিধাগ্রস্ত নয়নে এদিক-সেদিক তাকালো। হাতে থাকা ভাঙা চশমাটার ফ্রেমটা মুঠো করে ধরলো। আবছা দৃষ্টিতে ভুতুড়ে পরিবেশটা উপলব্ধি করতে পেরে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। দ্রুত পায়ে হেঁটে পাশের রুমটার দিকে এগিয়ে গেল। পাশের রুমটা নাহিদের। আপাতত নাহিদ ব্যতীত তার কোন গতি নেই। দ্রুত বেগে দরজায় কড়া নাড়ে স্পৃহা। মৃদু কন্ঠে ডাকে, “নাহিদ ভাইয়া! ভিতরে আছেন?”
মিনিটের মাঝেই নাহিদ দরজা খুলে ৷ বলে, “কি হয়েছে?”
স্পৃহা কিয়ৎকাল ইতস্তত করে বলে, “আমার একটা সাহায্য করতে পারবেন?”
নাহিদের ভ্রু কুঞ্চিত হয়, “কি?”
“আশেপাশে কোন চশমার দোকান থাকলে আমায় নিয়ে যেতে পারবেন? আমার চশমার ফ্রেম ভেঙে গিয়েছে। তাই এখন আর্জেন্ট একটা চশমা দরকার। আমি আবার চশমা ছাড়া স্পষ্ট কিছু দেখতে পাই না।”
নাহিদ অনুদ্ধত কন্ঠে জিগ্যেস করে,”ভাঙলো কি করে?”
স্পৃহা মাথা নুয়ে ফেলে। লজ্জায় তার মুখ ঈষৎ লাল দেখায়। আনমনে ভাবে, প্রশ্নটার উত্তর কি করে দিবে সে? সত্য এটা যে অসাবধানতার বশত সে চশমার উপরই বসে পড়েছিল। কিন্তু ব্যাপারটা ভীষণ লজ্জার। নাহিদকে বলবে হো হো করে আসবে সে। তার উপর এই ছেলের ঠোঁট যে পাতলা। ঠুস করে বলে বসবে কিছু একটা। তাই সেই মুহূর্তে মিথ্যের আশ্রয় নেওয়াটাই শ্রেয় মনে হলো স্পৃহার নিকট, “হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল।”
নাহিদ ঠোঁট গোল করে বলে, “অহ আচ্ছা।”
স্পৃহা মাথা ঝাঁকায়, “হ্যাঁ। দোকান আছে আশেপাশে? জানেন কি?”
নাহিদ মাথায় চুলকায়। আশেপাশে আদৌ কোন দোকান আছে কি-না তার জানা নেই। তবে যাই হোক ‘না’ বলবে না। সময় কাটানোর একটা সুযোগ হাতে এসেছে হাত ছাড়া করে কিভাবে সে? বের হয়ে দোকান না-হয় খুঁজে নেওয়া যাবে। এটা বড় ব্যাপার না। কথাটা ভেবে নাহিদ গলা পরিষ্কার করে। বলে, “থাকার কথা। আচ্ছা চল আমার সাথে দেখছি।”
“আচ্ছা।”
নাহিদ রুমের ভিতর থেকে চাবি নিয়ে দরজা ভালো মত আটকে বের হলো। হোটেল থেকে বের হয়ে রাস্তার ধারে পাশাপাশি হাঁটাতে শুরু করলো তারা। স্পৃহা সামনে সুব্যক্তভাবে দেখতে না পেয়ে হাঁটার সময় বেশ কয়েকবার হোঁচট খেল। নাহিদ বিষয়টা লক্ষ্য করে নিভৃতে স্পৃহার হাতটা শক্ত করে ধরলো। বলল, “হাতটা শক্ত করে ধরো। তোমাকে দেখার জন্য আছি আমি।”
স্পৃহা সরল মনেই বলে, “থ্যাংক ইউ।”
নাহিদ হাসে। আনমনে বলে, “আজীবন আছি।”
#চলবে
ছোট পর্ব দেওয়ার জন্য দুঃখিত। শব্দ মিলাতে পারছি না কেন জানি। লেখার মাঝে বার বার ছন্দ কেটে যাচ্ছে। আজকে একটু মানিয়ে নিয়েন। ইনশাআল্লাহ পরবর্তী পর্ব বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করব।
ব্যস্ততার কারণে দেরি করে দেই।সরি