চোখের_তারায়_তুই?#পর্ব_২৩

0
705

?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_২৩
#ইভা_রহমান

দৃষ্টির অগোচরে গিয়ে,গোপনে নিজেদের ভালোবাসার উওাপ ছড়াতে থাকলো উজান আর হিয়া। অনেকদিন যাবাৎ হিয়ার কলেজ বাদ দিয়ে সব বন্ধ থাকলেও এক মাসের মাথায় আবার কোচিং শুরু করে দেয় শিশির। তবে নিজে গিয়ে ঠিক সময়ে নিয়ে আসে ঠিক সময় দিয়ে যায়,ঠিক কলেজের মতো। উজান এখন আর ঘনঘন এ বাড়িতে আসে না। তবে তার সাথে যে শিশিরের সম্পর্ক খারাপ হয়ে ভেঙে গিয়েছে ব্যাপারটা সেরকমো না৷ তারা ঠিক আগের মতো আড্ডা দেয়,গল্প করে,সবই হয় তাদের মাঝে। শুধু হিয়াকে বা রোদকে নিয়ে কোনো কথা উঠে না তাদের মাঝে। উজান এমন একটা ভাব ধরে যে শিশিরের বলাতে হিয়ার সাথে এখন আর তার যোগাযোগ নেই,তাদের দু’জনের পথ এখন আলাদা। উজানের মন তো চায় শিশিরের নাকের ডগা কেনো শিশিরের সামন দিয়ে সে তার হিয়াকে নিয়ে ঘুরুক ফিরুক কিন্তু তারপর যে হিয়ার নিষ্ঠুর ভাই না আবার হিয়ার লেখাপড়া বন্ধ করে দিক। তাই অনন্ত এইচ এস এর আগে সবটা শান্ত আর স্থির ভাবে চলতেই তাদের এই নীরব প্রেমের উষ্ণতা..!!

!
!

লাল রঙে মোড়া ক্যাশম্যামো হাতে আবারো স্লিপ তৈরিতে ব্যস্ত শিশির। দোকানে কাস্টমার খুব কম। যা আছে তাতে লোকসানের অংকটা পুরোটা কভার করা হয়তো সম্ভব হবে না এমাসেও। হঠাৎই উজানের মা সহ ছোট্ট পলাশ এসে হাজির শিশিরের দোকানে। পলাশের পাশে উজানের মা’কে দেখে অনেকটা চমকে উঠলো শিশির। উজানের মা এ-ই সময় এই অবেলায়। চাচ্চু চেয়ার এগিয়ে বসতে বললেও উজানের মা বসলেন না। শিশিরকে বললো তার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে একটু যদি বাহিরে আসতো শিশির। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চাচ্চুসহ বাহিরে আসলো শিশির। এরপর উজানের মা যেই কথা গুলো বললো সেটার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলো না শিশির না চাচ্চু!

– দেখো বাবা,তুমি,উজান ছোট থেকে একসাথে মানুষ। আমি কখনো তোমাদের মাঝে কোনো ভেদাভেদ করিনি। তুমি বাড়িতে আসতে,থাকতে আমি কখনো তোমাকে কিন্তু উজানের চাইতে কম করে দেখিনি বলো,

– না আন্টি,সেসব নিয়ে কখনো কোনো অভিযোগ নেই আমার। আমি অনাথ হবার পরো আপনি আমাকে যেই সম্মান টুকু দিয়েছিলেন আপনার বাড়িতে তাই জন্য কিন্তু সেদিন এতোকিছুর পরো আমি চুপ ছিলাম।

– তুমি বুঝদার শিশির। সব বুঝো। আমি বলছি না হিয়া খারাপ। হিয়া যথেষ্ট ভালো একটা মেয়ে। কিন্তু হিয়া শাহরিয়ার পরিবারে আসলে ভালো থাকবে না বাবা। আর উজানকে তো তুমি জানো ও কিরকম জেদি। এখন তোমাকেই সবটা ম্যানেজ করতে হবে।

– আমি আমার তরফ থেকে হিয়াকে আয়ওে রাখতে চেষ্টা করছি আন্টি। আপনি ভাববেন না। দরকার পড়লে আমি আরো একবার কথা বলবো উজানের সাথে এ বিষয়ে।

– আয়ওে রাখতে পারছো আর কোথায় হিয়াকে!..আজকেও উজান হিয়াকে নিয়ে আবারো মহিপুরের দিকে গিয়েছে সে খবর জানো তুমি! এতোদিন ভাবতাম হয়তো সব মিটে গেছে। কিন্তু না। সিয়াম না বললে তো এসব কিছুই আমি জানতে পারতাম না এখনো।

থমকে গেলো শিশির। উজানের মা’র কথাটা ঠিক হজম করতে পারলো না যেনো। উজান হিয়া মহিপুর ঘাটে! কিন্তু হিয়াকে তো সে নিজে কোচিং-এ নামিয়ে দিয়ে আসলো তাহলে!

– সেদিন হিয়াকে অপমানিত করার জন্য উজান বাড়িতে আমার সাথে তার চাচির সাথে যে ব্যবহার টা করেছে সেটা কোনোভাবেই আমি আমার ছেলের থেকে আশা করিনি। বাড়ির বড় ছেলের এরকম আচরণ পুরো পরিবার জানাজানি হয়ে কথা বলাবলি করছে। এমনকি সিয়ামকে তো মেরে উজান হসপিটালাইজড পর্যন্ত করাতে বাধ্য করেছে। শুধু উজানের বাবা-র ভয়ে কেউ উজানকে একটা প্রশ্ন করার সাহস করে নি এতোদিনেও..!!!!

– এতে আমি কি করতে পারি আন্টি। উজান তো ছোট না বলেন। ওকে কি করে!

– শিশির তুমি আমাদের ফ্যামিলি সম্পর্কে সবটা জানো। আমাদের ফ্যামিলিতে এমন কারো ছেলেমেয়ে নেই যে তারা ভালো একটা জায়গায় নেই। সেখান থেকে নিজের ছেলের এরকম একটা ভবিষ্যৎ…আমি শুধু আমার ছেলের একটা সুন্দর ক্যারিয়ার দেখতে চাই শিশির। হিয়া পড়াশোনা করছে করুক। বয়স কতো আর ওর। আমরা পরে ভাববো এ বিষয়ে।

চাচ্চু এগিয়ে এসে সৌজন্যেতার সহিত বললেন,

– পরে ভাবা আর এখন। ভাবতে তো একটা সময় হবেই তাই না আপা। এর চেয়ে যদি এখন ভেবেই আপনারা একটা সিদ্ধান্তে আসতেন তাহলে হয়তো ছেলেমেয়ে দুটো শান্তি পেতো। তারমানে আমি বলছি না যে আপনারা এখুনি তাদের বিয়ে পড়িয়ে দিন৷ আমাদের হিয়াও তো এখনো অনেক ছোট। কিন্তু তাদেরকে যদি কথা না শুনিয়ে একটু অভয় দিতেন,একটু যত্ন করে বোঝাতেন তাহলে ওরা হয়তো ভবিষ্যৎ এ কোনো ভূল করতো না।

– মিরাজ ভাই মনে কিছু নিবেন না। জানেনই তো এটা কখনো সম্ভব না। আমি চাইলে যদি সব হতো তাহলে এতোদিনে হয়তো শাহরিয়ার বাড়িতে আমি আমার নিজেরই ঠিকঠাক একটা জায়গা করে নিতে পারতাম। আমি তো উজানের বাবা,চাচা এদের চিনি তাই বলছি বিষয়টা এতো সহজ হবে না।

শিশির দীর্ঘ শ্বাস টেনে বললো,

– আপনি চিন্তা করবেন না আন্টি। আপনি নিশ্চিন্তে বাড়ি যান। এদিক টা আমি দেখে নিচ্ছি।

উজানের মা আর কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে গেলেন সেখান থেকে। কিন্তু চাচ্চু দোকান বয়ে এসে এ-ই মিষ্টি মুখের অপমান টা ঠিক সহ্য করতে পারলেন না। এতোদিন সব জানার পরো এ বিষয়ে তিনি একটা কথা বলেননি হিয়াকে বা শিশিরকে কিন্তু আজ বললেন,বলতে বাধ্য হলেন,

– আমার ছেলেমেয়ের জন্য কখনো এভাবে আমাকে কথা শুনতে হয়নি শিশির যেটা আজ তোদের জন্য হচ্ছে। হিয়াকে একটু শাষণে রাখ দয়া করে। এরকম কুটুম চাই না আমাদের। এরকম মন মানসিকতার মানুষদের পরিবারে তো আমি আমাদের হিয়াকে কোনোদিন বিয়ে দেবো না কথাটা যেনো মনে থাকে তোর।

!
!
আজ অনেকদিন বাদে নৌকাবিহারে বেড়িয়েছে উজান আর হিয়া। পরীক্ষার এই একমাস তো বইয়ের সাগরে ডুবে ছিলো হিয়া,কোথায় উজান কোথায় তার বাকিসব কাজ। টেস্ট ভালো না দিতে পারলে যে খু*ন হতে হতো তাকে তার এই নিষ্ঠুর ভাইয়ের হাতে..!!

হাতে সময় তিনঘন্টা বরাদ্দ। যাগ আজকের জন্য এতটুকু সময়ই যথেষ্ট দু’জনের জন্য। নদীর পানিতে পায়ে পা ডুবিয়ে উজানের কাঁধে মাথা লুকিয়ে নদীর কলকল ধ্বনি কানে শুনতে ব্যস্ত হিয়া। উজান ব্যস্ত প্রেয়সীর উড়ন্ত চুলে বিলি কেটে প্রকৃতির শান্ত আমেজ নিতে।

– আজকের পরীক্ষা কেমন হলো বললে না তো একবারো।

– যেমন হয় রোজ,সেরকমই হয়েছে।

– তারমানে ঠিকঠাক।

– ঔ আরকি। আচ্ছা ওসব পরীক্ষা পড়াশোনা কলেজ এই কথা গুলো আজ থাক না একটু। কতোদিন বাদে ঘুরতে আসলাম এখন আমাদের নিয়ে কথা বলি একটু আমরা প্লিজজ।

হিয়ার মাথার সাথে মাথা ঠুকে দিয়ে উজান বললো”আচ্ছা বলো কি বলবে” হিয়া শুরু করলো তার এই একমাসে জমানো হাজার টা কথার ফুলঝুরি। পানিতে পা দুলিয়ে দুলিয়ে উজানো মগ্ন হয়ে পড়লো প্রেয়সীর সব গল্প কাহিনি শুনতে। কখনো উজান তার হাতে থাকা টিস্যু দিয়ে মুছে দিলো ঘর্মাক্ত হিয়ার মুখ কখনো বা হিয়া তার ওড়না টাকে মুঠো করে নিয়ে মুছে দিলো উজানের মুখে ভেসে ওঠা বিন্দু বিন্দু লোনাজল।

গল্প চলছে অনেকক্ষন৷ সাথে চললো কিছু একান্ত অন্তরঙ্গ মুহুর্তের রেশ। পানি থেকে পা তুলে নৌকার উপর দাঁড়ালো উজান। পকেটে থাকা ফোন টা বের করে তুললো তার পিচ্চি হিয়ার হাজার টা পোজ এর ছবি। নাহ পিচ্চি টা বড্ড বড় হয়ে গেছে দেখছি। এতো মুখ ভর্তি মায়া এই মেয়েটার। মনে হয় যখনতখন গিলে ফেলি। হিয়া পা তুলে উজানের সাথে এসে দাঁড়ালো। উজান ঠোঁট ছোঁয়ালো হিয়ার কপাল ভাঁজে। সময় প্রায় শেষের পথে এখন ফেরা দরকার।

নৌকার ভাড়াটুকু মিটিয়ে হিয়াকে নিয়ে পাড়ে আসলো উজান৷ ভর দুপুর বিধায় মানুষজনের আনাগোনা কম। হাতে হাত গুঁজে নদীর পাড় ঘেঁষে হাটছে এই দুই প্রেমিকযুগল। ফিরতে তো মন চাইছে না কিছুতেই যদি সময়টাকে এখানে বাঁধিয়ে রাখা যেতো।

– মন খারাপ লাগছে?

হিয়া গালে একটা মেকি হাসি টেনে বললো,

– কোথায়,এমনি খারাপ লাগছে।

– আবার আসবো তো।

– হুম,সময়গুলো এতো দূত কেনো চলে যায়। যদি কিছু দিয়ে এ-ই মুহূর্ত টাকে শিকল পড়িয়ে রাখতে পারতাম।

– একটু ধর্য্য ধরো। টেস্ট তো শেষ হলো পরীক্ষা আর এ্যাডমিশন মিলিয়ে তো সবে আর ছয়টা মাস।

– হুম…তবে কি বলুন তো..

আর কিছু বলতে পারলো না হিয়া। হঠাৎই সামনের দিকে চোখ পড়তে চোখ দুটো আঁটকে রইলো হিয়ার। ইটের বাধ টুকু পেড়িয়ে এ কাকে নামতে দেখছে হিয়া!

উজান হিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে পেছনে ঘুরতে শিশির এসে উপস্থিত তাদেরই মুখোমুখি। উজানকে কিছু বলার সুযোগ টাও দিলো না শিশির। তার আগে হিয়ার গালে সপাটে এক চড় পড়লো শিশিরের হাতের। হিয়ার বাহু চেপে ধরে আবারো এক চড় বসিয়ে দিলো শিশির। রাগান্বিত কন্ঠে বললো,

– আর কতো ডোবাবি আমার মান সম্মান। এতো করেও শান্তি মিটেনি তোর।

রেগে উঠলো উজান। অনেক হয়েছে। আজ অবধি চুপ থাকলেও এবার শিশিরের এই বাড়াবাড়ি মাএা ছাড়াচ্ছে যেনো তার কাছে!

– জাস্ট স্টপ শিশির। ওভাবে ধরেছিস কেনো ওকে। হিয়ার লাগছে না। ছাড় ওকে।

উজানের দিকে আঙ্গুল তুলে শিশির কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো,

– আমার বোনকে আমি যা খুশি করবো তুই বলার কে। হিয়া নাহয় অবুঝ কিন্তু তুই। তুই কি করে পারলি এরকম একটা অবিবেচকের মতো কাজ করতে। ছিঃ।

– আমি কোনো অবিবেচকের মতো কাজ করিনি শিশির। হিয়ার এই বয়সে কতোটুকু সীমায় গিয়ে কি করা উচিৎ আমি ঠিক ততোটুকুই হিয়াকে আমার সাথে জড়িয়েছি।

দাঁতে দাঁত চিপে রাগটাকে কন্ট্রোল করতে চেষ্টা করলো শিশির। কিন্তু লাভ হলো না কিছুই। হিয়ার এক হাত টেনে উপরে উঠতে উজান বাঁধ সাধলো। এতো কিসের অধিকার শিশিরের। হিয়ার উপর তারো সমান অধিকার,ভালোবাসা, স্নেহ আছে শিশিরকেও সেই অনুভূতি গুলো বুঝতে হবে আজ।

– হিয়ার হাত ছাড় শিশির.. হিয়াকে আঘাত করার কোনো রাইট তোর নেই।

রেগে গিয়ে হিয়াকে ছেড়ে দুহাতে উজানের কলার চেপে ধরলো শিশির। অগ্নিদৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে বললো,

– তুই আমাকে রাইট শেখাবি এখন। হিয়া কে তোর। যখন তোর পরিবারের সবাই মিলে আমার এই বোনটাকে অপমান করেছিলো সেসময় কোথায় ছিলি তুই। তোর চাচি কোন সাহসে আমার বোনের গায়ে হাত তুলে বলতে পারিস তুই,কোনো উওর আছে তোর কাছে।

– বাড়িতে সবাইকে যা বলার যা করার আমি করেছি শিশির। বাট এনাফ ইজ এনাফ তুই এই ৭,৮ মাসে যা যা বলেছিস আমি আর হিয়া সব শুনেছি বাট আর না।

– কি আর না। কি করবি তুই। আমি যদি আমার বোনকে তোর সাথে না দেই কিছু করার আছে তোর।

আরো জোড়ে কলার চিপে ধরে কথাটা বলে শিশির। দুজনের চোখেই আগুন বিরাজ করছে। হিয়ার প্রতি দু’জনই দু’জনের অধিকার ফলাতে ব্যস্ত। এদিকে বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছে হিয়া। কি করছে উজান আর শিশির। ছোট থেকে বড় হয়েছে হিয়ার এই বেড়ে ওঠা জীবনে এই প্রথম হিয়া, উজান আর শিশিরকে এভাবে লড়তে দেখলো। ভয়ে হাত পা কাঁপছে হিয়ার। কাকে ছেড়ে কাকে বাঁচাবে হিয়া!

– আমার কলার ছাড় শিশির…শিশির দেখ বাড়াবাড়ি করবি না। তুই হিয়াকে মানুষ করেছিস বড় করেছিস,তোর রাইট আছে তুই হিয়ার গার্ডিয়ান কিন্তু তুই আমার সাথে অন্যায় করতে পারবি না।

– আর আমার বোনের সাথে যে অন্যায় হচ্ছে! তুই তো তোর মতো মজা নিচ্ছিস কিন্তু তোর পরিবার!

এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না উজান। নিজেও শিশিরের কলার চিপে ধরে বললো,

– একদম বাজে ইঙ্গিত এ কথা বলবি না শিশির। হিয়া কোনো খাবার জিনিস না যে আমি ওর মজা নিবো।

– তাহলে এখানে এসব কি হচ্ছে তোদের মাঝে। আমাকে শেখাচ্ছিস তুই। তোর পরিবার, তোর মা দোকান বয়ে এসে আমার বোন কিরকম ভালো না খারাপ তার ব্যাখা দিয়ে যায়। এতো সাহস পায় কোথায় ওনারা।

– মা কি বলেছে তোকে?

– আমার বোনকে আমি আয়ওে রাখতে পারি না। আমার বোন নোংরা। তোর ভাই বলে আমার বোন বাজারের মেয়ে। এতো ওডাসিটি পায় কোথাথেকে ওনারা। আর তুই হিয়া…

উজানের কলার ছেড়ে হিয়ার দিকে তেড়ে আসে শিশির। হিয়ার গালে কানে মুখে যেখানে পারে ইচ্ছে মতো থাপ্পড় দিতে শুরু করে। ভয়ে পিছিয়ে আসে হিয়া। হালকা কাঁদায় পা হড়কে যায় তার। শিশির চুল মুঠ করে ধরে নিজের গায়ের সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে শুরু করে!

– কি চাইতিছিস তুই হিয়া। ভাইয়াটাকে এতো অপমানিত করে কি শান্তিটা পাইস। বল? মারতে চাস আমাকে। মেরে ফেলতে চাস। বল সেটা। একবারে মরে যাই তাহলে….লাফ দেবো এই নদীতে।বল দেবো। আমি থাকবো না কেউ তোকে কিছুতে বাধা দিবে না। বল দেবো লাফ।

হাত জোড় করে কাঁদতে কাঁদতে হিয়া বললো,

– না, না তুই কেনো মরবি,তুই মরে গেলে আমার কি হবে। আমি কোথায় যাবো?

– উজান আছে,এখন তো আমার আর কোনো দরকার নেই তোর৷ আছে কি। যা তুই চলে। আর আসবি না আমার কাছে। আমি কে তোর?

– না কেনো এরকম বলতিছিস তুই। তুই তো আমার সব তাই না বল। তুই তো আমার মা বাবা সব তুই আমার।

রেগে গিয়ে হিয়ার দুগাল চিপে ধরলো শিশির। উচ্চস্বরে বললো,

– তাহলে আমার কথার কেনো অবাধ্য হোস তুই বারবার। আর হবি? না তোকে আমি খুন করবো নিজ হাতে। বল কোনটা করবো। তোকে মারবো না নিজে মরবো কোনটা? বল?

না এবার আর নিজেকে সংযত রাখতে পারলো না উজান। হিয়ার চুল বিধস্ত। গালে শিশিরের হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ, কান্নার অবিরাম বারিধারা। তার উপর শিশিরের হিয়ার মুখ চিপে ধরে এরকম শাসন। আর পারলো না উজান। এক ধাক্কায় শিশিরকে টেনে সেই কাদামাখা পাড়ে ফেলে দিলো উজান। হাত মুঠো করে একটার পর একটা ঘুষি মারতে থাকলো শিশিরের মুখে। হিয়া কাঁপা হাতে উজানকে থামাতে চাইলেও ব্যর্থ হতে হলো আজ তাকে। এ কোন উজানকে দেখছে হিয়া আজ। মারতে মারতে শিশিরের ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু উজানের হাত থামলো না। হিয়া হাত জোড় করে জোড়াজুড়ি করতে থাকলো কিন্তু উজান শুনলো না।

– তুই হিয়ার গার্ডিয়ান তাই আজ অবধি সব সহ্য করে গেছি। একটা আওয়াজ অবধি করি নি। কিন্তু আমার সামনে তুই কোন সাহসে হিয়ার গায়ে হাত তুলিস। ভাই হোস ভাইয়ের মতো থাকবি….তোর যা রাগ আমার উপর মেটা হিয়াকে কেনো শাসন করতে হবে তোকে। হিয়া কি তোর পুতুল!

হিয়ার অনুরোধে শান্ত হলো উজান। শিশিরের উপর থেকে উঠে হিয়াকে নিজের বুকের কাছে এনে শক্ত করে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো । এদিকে ঠোঁটে থেকে ঝরে পড়া রক্তগুলো মুছে কোনো মতে উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হলো শিশির। হিয়াকে আগলে শিশিরের দিকে আঙুল তুলে উজান কাঠ কাঠ কন্ঠে জানালো,

– হিয়াকে আমি ভালোবাসি, তোর মতো সেটা মজা নিতে না। সারাজীবন আগলে রাখতে…একটা কথা মাথায় রাখবি,হিয়া যদি আমার না হয় তো সে কারো হবে না সে তুই হিয়ার ভাই হো আর বাপ।

এটুকু বলে হিয়ার কপালে একটা স্নেহের পরশ বুলে দিলো উজান। হিয়াকে অভয় দিয়ে বললো,

– তুমি বাসা যাও। আমি দেখছি বাকি টা। কেউ কিচ্ছু বলবে না তোমাকে। আমি আছি❤️

মৃদু, ম্লান,ক্লান্তি ভরা এক হাসি দিলো হিয়া। শিশির হিয়াকে টেনে নিয়ে উপরে আসলো। বাইক স্টার্ট দিয়ে রওনা দিলো বাড়ির পথে। সাথে পেছনে আসলো উজান নিজেও।

!
!

আজ এক সপ্তাহ পরঃ

দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে শিশির আর চাচিদের কথোপকথন শুনতে মরিয়া হিয়া। কিসব বলছে শিশির চাচিকে এগুলো। মাথা ঠিক আছে তো বাড়ির সবার। হিয়ার শরীর কাঁপছে। হাত পা অসার হয়ে যাচ্ছে। মাথার সব নিউরন জট পাকিয়ে কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। এগুলো শিশির বলছে৷ যার স্বপ্ন ছিল কি না হিয়াকে সে মেডিকেল সাইন্সে পড়াবে আর সে আজ!

– দেখ শিশির,ছেলেটা ভালো ব্রাক থেকে এমবিএ শেষ করে এখন একটা বড় ফার্মে আছে। স্যালারিও মাশাআল্লাহ খুব ভালো। আর নিজেদের চেনা পরিচিত তোর খোঁজ নিতেও সুবিধে হবে।

– আমি তা বলছি না চাচি। রিয়াজ কিরকম ছেলে ওদের পরিবার কিরকম আমি তো জানি। দেখেছি। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে আমার যে-ই দাবি. ওগুলো যদি ওরা না মানতে চায়।

– তোকে ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি সব ওভাবেই কথা বলে নিয়েছি ওদের সাথে। আমি বলেছি মেয়েকে এখন বিয়ে দিয়ে রাখবো বিদায় একদম হিয়ার এডমিশনের পর।

– ওরা রাজি হয়েছে এতে!

– না হবার কি আছে। রিয়াজ শিক্ষিত ওর বাবা হাই স্কুলের টিচার। ওরাও চায় ওদের বাড়ির বউ শিক্ষিত হোক। বুঝলি বিষয়টা।

চাচ্চু হালকা কেশে দিয়ে বললেন,

– তোমাদের মনে হয় না হিয়া এখনো ছোট। কিছুদিন পর উচ্চমাধ্যমিক দিবে ভালো কথা। কিন্তু অনার্স পড়তে পড়তে। অন্তত দুটো বছর যদি যেতো। মেয়েটাতো এখনো অবুঝ অনেক।

চাচি কপাল কুঁচকে রেগে গিয়ে বললো,

– অবুঝ। তোমার এখনো মনে হয় হিয়া অবুঝ। বয়স কম তো কি হয়েছে। বয়সের চেয়েও বেশি কাজ করে ফেলেছে সে। এখন ওর বিয়ে দিলেই এই প্রেম ভালোবাসার ভূত ওর মাথা থেকে নামবে আর কেউ তখন বাড়ি বয়ে এসে আমাদের অপমান টাও না করবে না।

– হ্যা সবই বুঝলাম কিন্তু আমি চাই এসব বিয়ে সংসারের বাহিরে,নীলির মতো পড়াশোনা করে হিয়াও একটা পর্যায় গিয়ে পৌঁছাক। এরপর যা খুশি তোমরা করো…আর একটা কথা শিশির আমি কিন্তু কোনোদিন’ই শাহরিয়ার বাড়িতে হিয়াকে পাঠাবো না। ওরকম কুটুম আমাদের সহ্য হবে না।

চাচ্চু আর কথা বাড়ালো না। খবরের কাগজ টুকু নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করলেন। এদিকে শিশিরের সাথে আরো অনেক কিছু বলে চাচি শান্ত কন্ঠে বললেন,

– পরীক্ষার আগে বিয়েটা দিয়ে রাখ। বিদায় পড়ে হবে। আর এরকম পরিবার বা ছেলে তুই খুঁজে দেখ পাবি কি না তোর বোনের জন্য।

– ঠিক আছে তুমি কথা বলো। সামনের সপ্তাহে দেখি হিয়াকে বলে কি করা যায়। তবে চাচি বারবার বলছি বিদায় কিন্তু হিয়ার এ্যাডমিশনের পর!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here