?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_২৯
#ইভা_রহমান
আজ দুদিন থেকে মারাত্মক রকমের জ্বরে ভুগছে শিশির। সাথে শরীরের এ-ই মা’র খাওয়া ব্যাথা গুলো যেনো পুরো শরীরকে বিষিয়ে দিচ্ছে তার। না আছে চলার শক্তি না আছে কোনো কিছু মুখে দেবার রুচি। চাচি দাদি কেউ বাড়িতে নেই। চাচ্চুও দুদিনের কথা বলে কোথায় যে চললো কাল রাতে। একা বাড়িতে অসুস্থ এই শরীরে কোনোরকম বেঁচে আছে ছেলেটা। আর কন্টিনিউসয়ালি চেষ্টা করছে রোদের সাথে যোগাযোগ করতে। কিন্তু রোদের সব নাম্বার তো বন্ধ সাথে বন্ধ রোদের ভার্সিটিতে আসা। তার রোদরানি ঠিক আছে তো ওদিকে! পলাশকে দিয়ে খোঁজ নিতে বলায় ছোট্ট পলাশ তার ভাইয়ের হুকুম পালন করতে সেই সকালে বেড়িয়েছে রোদের বাড়ির উদ্দেশ্যে কিন্তু বিকেল হয়ে আসলো সেও বা আসছে না কেনো এখনো!
অনেক কষ্টে এক ঢোক পানির সাথে একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো শিশির। পেটে আছে প্রচুর ক্ষুধা কিন্তু গলা দিয়ে নামছে না তার কোনো খাবার। চোখ ঝাপসা লাগছে সাথে মাথাটাও ঘুরপাক খাচ্ছে। তবুও উঠে দাঁড়ালো শিশির। গায়ে একটা শার্ট জড়িয়ে ঠিক করলো নিজে একবার রোদের খোঁজে বের হবে সে এখন। আর তাই করলো। কিন্তু সব গুছিয়ে বের হবার মুহুর্তে গ্রীলে তালা লাগাবার আগেই এসে হাজির হলো তার অর্ডার দিয়ে আসা সেই কাঠের জিনিসপত্র গুলোর মধ্যে বানানো তিনপাল্লার আলমারিটা। শিশির আবার তালা খুলে লোকগুলোকে বললো এদিক দিয়ে গিয়ে তার রুমে রেখে দিয়ে আসতে। তাই করলো লোকগুলো। আলমারিটা ঘরের মধ্যে ঠিক একটা জায়গাতে রেখে যে-ই ঔ লোকগুলোকে বিদায় দিয়ে শিশির বের হতে যাবে ওমনি পলাশ দৌড়ে এসে শিশিরের হাতে ধরিয়ে দিলো একটা বড় প্যাকেট। শিশির অবাক দৃষ্টিতে জানতে চাইলো এটা কি ছোট? তখন পলাশের উওর এমন ছিলো যে এটা নাকি তার রোদ আপা তার মায়ের কাছে রাখতে দিয়েছে আর বলেছে পলাশ ফিরলে সে যেনো পলাশকে বলে পলাশ যেনো এই প্যাকেটা নিয়ে গিয়ে শিশিরের হাতে দেয়। একটু থমকে দাঁড়ালো শিশির! হঠাৎ কি এমন জিনিস যেটা রোদকে পলাশের মায়ের কাছে দিতে হলো, বললেই তো শিশির গিয়ে নিয়ে আসতে পারতো। আজব না বিষয়টা। পলাশ বললো ভাই ওদিকে দোকানে আপনিও নাই চাচাও নাই আমি একটু দেইখা আসি দোকানটা, তারপর আবার রোদ আপার খোঁজে যাবো এখন কেমন। শিশির মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বললো “আচ্ছা যা”। পলাশ দৌড়ে বেড়িয়ে আসতেই শিশির ঔ প্যাকেটটা নিয়ে আবার রুমে এসে বসলো। গায়ের শার্টটা খুলে দিয়ে প্যাকেট টা আলতো হাতে খুলতেই তা থেকে বেড়িয়ে আসলো রোদকে এ যাবৎ গিফট করা তার সব উপহার। শিশিরের দেওয়া প্রথম গল্পের বই থেকে শুরু করে এবার জন্মদিনে গিফট করা রুপোর পায়েল,সাথে বইয়ের ভাঁজে শুকিয়ে যাওয়া কিছু লাল গোলাপের বাহার তো কখনো হিয়ার বায়নাতে গিফট করা বার্বিডল… ঘাবড়ে গেলো শিশির। হঠাৎ রোদ তাকে এসব ফিরিয়ে দিলো কেনো। কিছুমুহুর্ত ওখানেই চুপচাপ বসে রইলো সে। এমনিতে শরীরের এই অসুস্থতা তার উপর এইসব,যেনো শরীর মন কোনোটাই আর হজম করতে পারছিলো না বিষয়গুলো। বাধ্য হয়ে শিশির ফোন করলো সাকিবকে। যদি কোনোভাবে সাকিব রোদের সাথে একটা যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করে দিতে পারে তাকে। সাকিব শিশিরের ফোন ধরলো ঠিকই কিন্তু ফোন ধরে যা বললো সেটা শোনার জন্য কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলো না শিশির। সে বিশ্বাস করতে পারলো না সাকিবের কথা ভাবলো সাকিব হয়তো মজা করছে তার সাথে। কিন্তু না সাকিব মজা করছে না,না সে মিথ্যা বলছে। হ্যা সে সত্যি বলছে। সত্যি রোদের বিয়ে হ’য়ে গেছে। রোদ এখন আর এ শহরে নেই!
– ধুর সাকিব,ইআরকি করিও না তো। বলো না বলো রোদ কোথায়,আচ্ছা যা-ও লাস্ট বার মিট করায় দেও আর কোনোদিন এরকম রিকুয়েষ্ট করবো না। প্রমিস।
সাকিবের এখন এমন অবস্থা যে শিশিরের কথাগুলো শুনে মনে হয় সে নিজেই কান্না করে ফেলবে এমন!
– আমি কোনো ইআরকি করছি না শিশির। যা বলছি পুরোটাই সত্যি।
– কি সত্যি হ্যা,কোনটা সত্যি। তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে বলছো রোদেলা আমাকে রেখে অন্য এক ছেলেকে বিয়ে.. অসম্ভব সাকিব। তুমি আমাকে খু*ন করলেও আমি বিশ্বাস করবো না।
সাকিবের হাজারবার বলার পরো শিশির কথাটা বিশ্বাস করতে পারলো না। সে এখনো ভাবছে সবাই ভূল বলছে। রোদ তাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করবে অসম্ভব। এক পর্যায় সাকিব বাধ্য হয়ে শিশিরের ফোনে রোদের বিয়ের ছবি পাঠাতেই থমকে গেলো শিশির। বিশ্বাস করতে পারলো না এ-ই ছবি গুলো। লাল বেনারসি পড়ে তার রোদ বিয়ে করছে অন্য এক পুরুষকে, মাথা-মস্তিষ্ক-মন-শরীর কিছুতেই হজম
সহ্য করতে পারলো না বিষয়টা! নতুন আলমারি টার দিকে চোখ পড়তেই তরতর করে কাপতে শুরু করলো শিশির, এটা তো তার রোদরানির জন্য বানিয়েছে সে,রোদ কি দেখবে না জিনিসটা তার মন মতে হয়েছে কি না! রোদ না থাকলে এ-ই নতুন জিনিসপত্র,নতুন তৈরি বাড়িতে কাকে নিয়ে থাকবে সে সেখানে এখন। আর ভাবতে পারলো না শিশির। অসার হতে থাকলো তার পুরো শরীর। জমে গিয়ে বরফের মতো স্থির হলো শরীরের সব শিরা উপশিরা। সব নিউরন কাজ করা ছেড়ে দিলো তার। হৃৎপিণ্ড হারিয়ে ফেললো তার ছন্দের গতি!
!
!
বেলা করে ঘুম থেকে উঠেও উজানের বায়নাতে নাস্তানাবুদ অবস্থা হিয়ার। মেয়েটা না পারছে উজানের বেষ্টন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে না পারছে তাকে জড়িয়ে রাখা মানুষটাকে দুটো কথা বলতে।
– কি করছো উজানননন,ছাড়ো নাআআ।
– আগে একটু আদর দেও। তারপর।
– কখনোই না। আদরের বাহানা বানিয়ে বেলা দশটা পর্যন্ত শুইয়ে রাখছো আমাকে। এখন আবার ওসব। উমহুম।
– আচ্ছা একটা কিস দেও। সেটাতেও না করবে?
– হুম করবো……আরে আমার কাতুকুতু লাগছে তো। উজানন..দেখো রান্না বাকি গোসল বাকি খাওয়া বাকি। আর আজ না তোমার বিকেলে কাউন্টারে যাবার কথা ছিলো টিকিট কাটতে। যাবে না? নাকি এখনো এখানে আরো কিছুদিন থাকার ইচ্ছে আছে তোমার শুনি।
– আমার তো ইচ্ছে করে সারাজীবন এভাবে একা একা আপনাকে নিয়ে থাকি ম্যাডাম। কোনো কোলাহল থাকবে না। সবকিছু নীরব আর সিথিল থাকবে। আর সাথে থাকবো আমরা দু’জন।
– হ্যা ঔ করো। তারপর একদিন যখন এভাবে থাকতে থাকতে আমাকে একঘেয়েমি মনে হবে,তখন তো ছুঁড়ে ফেলে দিবে আমাকে জানি তো সব।
কপট রাগ দেখিয়ে উজান বললো,
– একটা মারবো। ভূলেও মুখে এসব আজেবাজে কথা আনবে না লাস্ট বারের মতো বলে দিলাম কিন্তু হিয়া…দেখি এদিকে ঘুরে, জলদি কিস করো তো ক্ষুধা লাগছে খুব।
– তোমার ঔ সিগারেট খাওয়া ঠোঁটে এই হিয়া জিন্দেগীতেও কিস করবে না। যা-ও গিয়ে ব্রাশ করে কুলি করে এসো। ইশশ কি বাজে স্মেল!
– সিগারেটটা খেতে আর দিলে কোথায় কেঁড়ে নিয়ে তো ছুঁড়ে ফেলে দিলে। ইডিয়ট।
হিয়া একটা ভেংচি কেটে তাকে জড়িয়ে রাখা উজানের হাত দুটো ছাড়িয়ে যেই এক পা নামিয়ে সামনে যাবে ওমনি উজান হিয়াকে আবার লেপ্টে নিয়ে শুরু করে তাদের প্রেমবিলাশ। হিয়ার তো এরকম অবস্থা যে সে বেচারি না তার প্রেমিকপুরুষকে থামাতে পারে না পারে এই অবলীল প্রেম লিলায় নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া থেকে বিতারিত করতে। হিয়াকে ইচ্ছেমতো গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে হিয়ার ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে নিয়ে সেগুলোর সর্বস্বগ্রাস করার অন্তিম মুহুর্তে হঠাৎই কলিংবেলের লাগাতার শব্দে কেঁপে উঠে দু’জনে। এই অবেলায় কে আসলো হঠাৎ! হিয়া হাফ ছেড়ে শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করলেও কপালে এক রাশ বিরক্তির রেখা ফুটে উঠলো উজানের। কতো সুন্দর একটা মুমেন্ট বিল্ডআপ হচ্ছিলো আর কোন হতছাড়া এসে যে সেটায় একবালতি পানি ঢেলে দিলো কে জানে। হিয়া মুচকি হেসে গায়ের ওড়না টা ঠিক করে নিতে নিতে বললো গিয়ে দরজাটা খুলবেন না মানুষগুলো ওভাবেই বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবে শুনি। উজান একটা ভূ পাকিয়ে শার্টের বোতম গুলো লাগাতে লাগাতে ডাউনিং এ এসে দরজা খুলতেই পুরো থমকে দাঁড়ালো। যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলো না সে কিছুতেই। তার মা,সাথে রোদের বাবা,আর তাদের সাথে এ মুহুর্তে উপস্থিত হিয়ার চাচ্চু। কিছুসময় নীরব দর্শকের ভূমিকাতে নিজেকে জাহির করলেও পরমুহূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক করে উজান ওর মা’কে উদ্দেশ্য করে বললো ভেতরে আসতে। উজানের মা সহ বাকি দু’জন ভেতরে আসতেই হিয়া “কে আসছে উজান?” বলে বাহিরের রুমে পা রাখতেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। একটা ধাক্কা খেলো যেনো মেয়েটা। এক মিনিট আগেও তো উজান বা হিয়া কেউ কল্পনা করেনি তাদের বাড়িতে কে আসতে পারে..
!
!
উজানের মা কান্না ভেজা চোখে উজানের শরীরে হাত বুলিয়ে দিলেন। মায়ের এই অসহায় মুর্ছে যাওয়া মুখের দিকে তাকাতে বুকটা কেঁপে উঠলো উজানের। মা’র শরীরের এরকম কাহিল অবস্থা কেনো। মা কি নিজের যত্ন নেবার কথা ভূলে গেছে!
চাচ্চু এসে হিয়ার মাথায় হাত রাখতেই নীরব অশ্রু ঝড়ে পড়ে ভিজিয়ে দিলো হিয়ার সারা মুখ। এদিকে চাচ্চুর দিকে তাকাতেও শিউরে উঠছে হিয়া। এরকম শুকিয়ে গেছে কেনো চাচ্চু। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গুলোতো আগে এতো সাদা দেখতে লাগতো না। বয়সের তুলনায় আজকে চাচ্চুকে এতো বৃদ্ধ মনে হচ্ছে কেনো হিয়ার। এটা কি সময়ের দোষ না-কি কোনো ভয়ানক মানসিক পরিস্থিতির চিহ্ন!
!
রুমে কোনো বসতে দেওয়ার মতো জায়গা ছিলো না। শুধু ছিলো একটা উঁচু টুল আর একটা চেয়ার। উজান সোফার একটা সেট কিনতে চেয়েছিলো কিন্তু হিয়া বাঁধা দিয়েছিলো বলেছিলো থাকবোই বা আর কতোদিন এখানে। রংপুরে গিয়েই না হয় সবটা সাজাবো আবার____বাসবি হিয়ার চাচ্চুকে বসতে অনুরোধ করলেও চাচ্চু বিনতীর সুরে বললেন” আপনি বসুন,কথা বলুন আপনাদের ছেলের সাথে, আমি বরং ও ঘরে হিয়ার সাথে কথা বলে আসি” বাসবি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই চাচ্চু হিয়াকে নিয়ে শোবার ঘরে এসে বিছানার বসলেন। হিয়াকে ডেকে বললেন “মা এক গ্লাস পানি খাওয়াবি” হিয়া দূত পায়ে চাচ্চুর জন্য পানি এনে দিলো। চাচ্চু পরিতৃপ্তি সহকারে পানি টা খেয়ে নিয়ে হিয়াকে হাতের ইশারায় বললেন পাশে বসতে। হিয়া কাঁপা কন্ঠে চাচ্চুর পাশে বসতেই চাচ্চু ভালোমন্দ এটা ওটা জিজ্ঞেস করার পর বলতে শুরু করলেন এ-ই কয়েকদিনের কিছু নির্মম ছবির গল্প। বললেন হিয়ার এ-ই একটা সিদ্ধান্ত,এই একটা ছেলেমানুষী কেমন করে বিষিয়ে দিয়েছে তার শিশির ভাইয়ের জীবন! তবে চাচ্চু যতোটুকু বললেন তার আড়ালে ছিলো আরো অব্যক্ত অনেক গল্প যেগুলো উনি হিয়াকে বলতে চাইলেন না কারণ বললেই হিয়াকে এখান থেকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে যাওয়াটা সহজ হতো না….!!
– তোমরা আমাকে আগে এসব জানাওনি কেনো চাচ্চু। ভাইয়া ওখানে এতো অসুস্থ আর আমাকে ফোনে বলে কি না সব ঠিক আছে। কি ভাবে ভাইয়া আমাকে, আমি এখনো ছোট। এসব কিছু সামলে উঠতে পারবো না। এতো কিছু হ’য়ে গেলো আর আমি এখানে বসে।
চাচ্চু হিয়াকে অভয় দিয়ে বললেন,
– এজন্যই তো তোকে নিতে এসেছি মা আমি। আমরা তোকে আর উজানকে মেনে নিয়েছি। এখন তুই ফিরে চল। আমরা বড়রা কথা বলেছি। আমরা ঠিক করেছি সামাজিক নিয়মনীতি মেনেই তোদের বিয়ে টা আবার দেবো। আর এভাবে পালিয়ে এসে থাকাটা। এটা অনেক খারাপ দেখায় মা। খুব চোখে লাগে।
– তু তুমি কথা বলেছো উজানদের বাড়ির লোকের সাথে? ওরা রাজি হয়েছে? ওরা কি বলেছে যে ওরা নিজে থেকে আমাদের বিয়ে দেবে? ওরা তো রাজি ছিলো না তাই না।
– ধুর বোকা রাজি না হলে কি উজানের মা বা চাচা আসে আমার সাথে তোদের নিতে। এখন তুই তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে ফেল তো আমি ১২টার বাসের টিকিট কাটছি। ওদিকে শিশিরের জ্বর একা ফেলে আসছি তোর চাচিও গাইবান্ধাতে আছে কদিন হলো। তুই আর দেড়ি করিস না মা।
অস্থির হিয়া বুঝতে পারলো না সবার সরলতার মাঝে লুকিয়ে থাকা কালো ছায়াটাকে। ভাইয়ের চিন্তায়ক্ষনে ক্ষনে আরো অশান্ত হয়ে উঠলো মেয়েটা। কান্না মিশ্রিত কন্ঠে হিয়া বললো,
– ভাইয়ার কি খুব জ্বর। তুমি কেনো ফেলে আসলে ভাইয়াকে। আমাকে বললেই তো উজান আমাকে দিয়ে আসতো। একা একা কি করছে কে জানে। তুমি একটু পলাশকে বলো না ভাইয়ার পাশে থাকতে। ও তো থাকে না ভাইয়ার সাথে সবসময়। ওকে বললেই ও থাকবে।
– ঠিক আছে আমি বলছি ছোটকে,তুই তৈরি হ’য়ে নে তো যা।
হিয়া মাথা নাড়িয়ে দূত হাতে ওর লাগেজে যা সব জামাকাপড়,নোটস বই খাতা সহ প্রয়োজনীয় যা জিনিস আছে গুছাতে শুরু করলো। এদিকে চাচ্চু গিয়ে বাসবি আর উজানের সাথে যাবতীয় কথা বলে নিতে উজানের সাথে কিছু কথা কাটাকাটি বিধে যায় এদের তিনজনের। উজানের মন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না যে তার বাড়ির লোকজন এতো সহজে কিনা তাদের দ্বিতীয় বার বিয়ে দেবার কথা ভাবতে পারে। উজানের মনে সন্দেহের বাসা বাঁধতেই উজান ভেটো দিয়ে বসলো যে সে হিয়াকে নিয়ে কিছুতেই রংপুরে ফিরবে না,না কাউকে হিয়াকে নিয়ে সাথে করে ফিরতে দিবে। উজানের মা তার অশান্ত ছেলেকে শান্ত করতে তাকে আগলে ধরে বললেন,
– তোর মায়ের উপর তোর বিশ্বাস নেই উজান। আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে হিয়াকে ঘরে তুলবো। এরপরো তুই সন্দেহ পোষণ করবি নিজের মনে।
– মা আমার মন মানছে না। তুমি নিশ্চয়ই কারো চাপে পড়ে এসব বলছো তাই না বলো।
– আশ্চর্য তো।কার চাপে পড়ে করবো। হ্যা মানছি প্রথমে তোদেরকে মানতে আমাদের মন সায় দেয়নি কিন্তু একবার যখন বিয়ে টা করেছিস তখন কি কিছু করার আছে আমাদের আর। এখন আমরা যা করতে পারি সেটা হচ্ছে তোদেরকে সম্মানের সাথে ঘরে তুলতে পারি। এতে তোরাও ভালো থাকবি আমাদের সবার সম্মান টাও বজায় থাকবে।
চাচ্চু এগিয়ে এসে উজানের কাঁধে হাত রেখে দিয়ে বললো,
– দেখো বাবা। এভাবে পালিয়ে থাকা টা তো খুব ভালো একটা বিষয় না। তুমি কি চাও না হিয়া স্বসম্মানে তোমাদের বাড়িতে বউ হ’য়ে যাক।
– চাই কিন্তু…আমি একবার শিশিরের সাথে কথা বলতে চাই চাচ্চু নাহলে আমি হিয়াকে আপনার সাথে ছাড়তে পারবো না।
– শিশির অসুস্থ বাবা। নাহলে তো ও নিজে আসতো। আর আমি হিয়ার চাচ্চু এসেছি তাতেও তুমি সন্দেহ করছো। এটা কি আমাকে বা তোমার মা’কে অপমান করা হচ্ছে না উজান!
– কিন্তু চাচ্চু!
– কোনো কিন্তু না। যা বলছি তা শোনো। এতোদিন অনেক পালিয়ে গা ঢাকা দিয়ে থেকেছো। এখন বড়রা যেভাবে বলছে সেভাবে কাজ করো। আর তোমার মা যখন নিজে তোমাকে কথা দিচ্ছে উনি হিয়াকে নিজে দাঁড়িয়ে গ্রহন করবে এরপরো তুমি তাকে ফিরিয়ে দেবে!….আর এমনো তো না যে তোমরা ছোট আমরা তোমাদের ধরে বেঁধে রাখতে পারবো। আর শরীয়তমতে সাথে আইনগত ভাবে হিয়া এখন তোমার স্এী কিছু করতে গেলে তো আমরাই বিপদে পড়বো। একটু ঠান্ডা মাথায় বিষয়টা ভাবো।
– ঠিক আছে আমি আগে হিয়ার সাথে কথা বলবো এ বিষয়ে। তারপর যা হবার হবে।
উজান কারো কথাকে গ্রাহ্য না করে দূত হিয়ার কাছে আসতেই দেখতে পায় হিয়ার ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়া শেষ। সে এখন ব্যাগের চেইন লাগিয়ে সেটাকে লক করতে ব্যস্ত। উজানকে দেখামাত্র হিয়া ব্যাগে চেইন লাগাতে লাগাতে বললো,
– তুমি কথা বললে চাচ্চুর সাথে। ভাইয়ার অবস্থা খুব খারাপ উজান। এরকম কেউ করে তুমি বলো। আমাকে না বলুক তোমাকে তো অনন্ত বলতে পারতো তার শরীর খারাপের কথা…আচ্ছা শোনো আমি তোমার ব্যাগো গুছিয়ে দিয়েছি তুমি যাবে না পরে,মা যে এসে বললো তখন।
উজান রুমের দরজা লাগিয়ে এসে হিয়ার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে হিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
– তুমি কি এতোই অবুঝ হিয়া। বুঝতে পারছো না এদের চালাকি। এরা আমাদের ভূল বুঝিয়ে দূরে করে দিতে চাইছে। একটু বুঝো।
হিয়া মৃদু হেঁসে দিয়ে বললো,
– কি যে বলো না তুমি উজান। এটাও কি সম্ভব.. মা আপনাকে ছুঁয়ে কথা দিয়ে বললো সে আমাকে নিজে দাঁড়িয়ে গ্রহন করে ঘরে তুলবে এরপরো তুমি সন্দেহ করছো।
উজান হিয়ার বাহু আরো শক্ত করে চিপে ধরে বললো,
– হ্যা করছি সন্দেহ। কারণ আমি জানি আমার মা কখন সত্য বলতে পারে আর কখন মিথ্যা। বাড়িতে এরকম অনেক পরিস্থিতি হয় যার চাপে পড়ে মা’কে আমি অনেকবার মিথ্যা বলতে দেখেছি। তাই আজকে উনি আমার মা হবার পরো আমি তাদেরকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না হিয়া।
হিয়া শান্ত কন্ঠে উজানকে বুঝিয়ে বললো,
– তোমার মাথা খারাপ হ’য়ে আছে উজান। মা রা কখনো মিথ্যা বলে না। তারা সবসময় তাদের সন্তানদের ভালো চায়। আর প্রশ্ন এখানে সেটাও না প্রশ্ন হচ্ছে শিশির ভাইয়া অসুস্থ। আমাদের এখন তার পাশে থাকা উচিৎ।
– শিশির যে সত্যি অসুস্থ এটা তোমাকে কে বললো?
– আশ্চর্য তো। চাচ্চু আমাকে মিথ্যা বলতে কেনো যাবে। আর সত্যি যদি ভাইয়া অসুস্থ হ’য়ে থাকে তখন। পারবে তুমি নিজেকে ক্ষমা করতে।
উজান হিয়ার দু’গালে হাত জড়িয়ে বললো,
– শিশির আমার ফোন তুলছে না হিয়া।
– তাই জন্য তো আমার বেশি ভয় হচ্ছে উজান । যদি তোমার ভয়টাই সত্যি হয় তাহলে তারা ওদিকে ভাইয়ার কি ক্ষতি করতে পারে একবার ভেবে দেখেছো তুমি।
– আমি এতোকিছু বুঝিনা হিয়া। তার উপর রোদের বাবা, উনি কেনো এসেছে সবার সাথে আমার ওনার আসা একদম পছন্দ হয়নি।
– আচ্ছা,আস্তে বলো,শুনবে তো। তোমার না নিজের চাচা হয়। বাড়িতে আসলে এরকম করে কেউ কথা বলে।
– বলে। কারণ আমার ঔ লোকটাকে ছোট থেকেই পছন্দ না।
হিয়া উজানের হাত দুটো মুঠো করে ধরে নিয়ে বললো,
– উজান আমি আইনত তোমার স্ত্রী। এদের কারো ক্ষমতা নেই আমাকে তোমার থেকে আলাদা করবার।
– কিন্তু আমার খুব ভয় হচ্ছে হিয়া। মনে হচ্ছে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলবো!
– ধুর বোকা। এতো সহজ নাকি কাউকে হারিয়ে ফেলা। তাহলে এতোকাল দুজন দুজনকে আমরা কি ভালোবেসে আসলাম বলো দেখি!
– আমি যাই তোমার সাথে?
– যাবোই তো। একটু আগা পিছা হবে কিন্তু একটা জায়গায় গিয়েই তো থামবো বলো। চাচ্চুর তো বাস ছাড়া পোষাবে না বলো আর তোমার বাড়ির লোকজন তো ফ্লাইটে।
উজানের মন এতোকিছু হবার পরো মানতে চাইলো না। হিয়া উজানের অস্থিরতা উপলব্ধি করে উজানকে জড়িয়ে ধরলো তার দুহাত আগলে। ভয়সা দিয়ে বললো,
– ভয় নেই উজান,আমি আছি তোমার সাথে!
– ফোন সাথে রাখবা সবসময়। আমি কল করবো।
– ঠিক আছে। আর?
– আর শিশিরের সাথে কথা হলে বলবা যেনো ইমিডিয়েট আমার সাথে কনটাক্ট করে।
– আর?
– ওখানে গিয়ে আমাকে ভূলে যাবা না।
– তুমি না সত্যি। বাসে করে ফিরতে আমার রাত হ’য়ে যাবে আর তুমি সন্ধ্যার ফ্লাইটেও উঠলে আমার আগেই রংপুরে পৌঁছে যাবা পাগল। মনে হচ্ছে যেনো আর রংপুর ফিরবে না তুমি।
উজানের মন মানতে চাইলো না। কিন্তু নিজের মা’কেই বা অবিশ্বাস করে সে কি করে। তারউপর হিয়ার চাচ্চুও তো অভয় দিয়ে বলছে সব ঠিক হবে তাহলে এ-তো ভয় হচ্ছে কেনো তার। এমন না যা হিয়ার মনের মাঝে কোনো ভয় হচ্ছে না। হিয়ার মনের মাঝেও ঝড় বইছে। এক অন্যরকম আগমনী বার্তাবিহীন ঝড়। কিন্তু ওদিকে শিশির ভাইকে কি করে একা ফেলে হিয়া এখানে নিশ্চিন্তে থাকবে!___হিয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে আসলো চাচ্চু। তবে চাচ্চুকে দিয়ে উজান কথা দিয়ে নিলো সে যেনো রংপুরে ফিরে তার হাত দিয়েই হিয়াকে পাশে পায়। চাচ্চু মানুষটা এতোটাই সরল যে উনি ওখানেই উজানকে জড়িয়ে কেঁদে দিলেন। বললেন হিয়া যদি তোমার জন্যেই লেখা থাকে হিয়া তোমারই হবে উজান। চাচ্চুর কথায় আরো মনটা বিষে গেলো উজানের। কেনো মনে হচ্ছে এ-ই দূরত্ব কিছু সময়ের না এ-ই দূরত্বের পরিসীমা অনেক গভীর আর বিস্তৃত হবে। যার সীমা গিয়ে অসীমে ঠেকবে,যার গভীরতার কাছে হার মানতে বাধ্য হবে কৃষ্ণগহব্বরে ঢাকা কালো অন্ধকার!
!
!
রাত তখন আটটার কিছু পর। গাড়ি এসে উপস্থিত বাস টার্মিনালে। হিয়াকে নামিয়ে চাচ্চু আবার ফিরবে গাইবান্ধার পথে। তাই সব ব্যাগপএ নামিয়ে উনি হিয়াকে নিয়ে রিক্সা খুঁজতে গিয়ে বললেন কিছু কথা। যেগুলোর অন্তর্নিহিত মানে ছিলো গভীরতার থেকেও আরো গভীর!
– তুমি এখন বাড়ি না গিয়ে আবার গাইবান্ধা যাবে চাচ্চু!
– হ্যা মা তোর চাচি হঠাৎ করে অসুস্থ হ’য়ে পড়লো, বাসে তোকে বললাম না তখন। আমাকে এখন জরুরি তলব করছে। না গেলে হয় বল।
– হ্যা তা তো যাবেই কিন্তু তুমি তো তাহলে গাইবান্ধাতেই নামতে পাড়তে শুধু শুধু আবার আমাকে নামিয়ে দিতে রংপুর কেনো আসলে।
– ধুর পাগলি তা বললে হয়। রাস্তায় কিছু হয়ে গেলে তখন।
– এই এক দু ঘন্টার রাস্তায় তেমন কিছু হতো না চাচ্চু।
– আচ্ছা বেশ আর বকাবকি করতে হবে না। তোকে আমি রিক্সায় তুলে দিয়ে দিচ্ছি,তুই যেতে পারবি তো এটুকুনি রাস্তা?
– এটা আমার শহর চাচ্চু!
– হুম হুম বুঝেছি।____হিয়া মা একটা কথা বলি?
– হ্যা বলো না?
– যদি মনে হয় আমি তোকে কখনো মিথ্যা বলেছি,জানবি সেটা তোর আর শিশিরের ভালোর জন্য বলেছি। তোদের ঠকাতে না।
– কি মিথ্যা বলেছে চাচ্চু!
– শিশিরের অবস্থা ভালো নেই মা। নিজের কথা তো অনেক ভেবেছিস এবার একটু ছেলেটার ভবিষ্যৎ,তার ভালো থাকা এসব নিয়ে ভাব।
– আমি কিছু বুঝতে পারছি না চাচ্চু। আসার আগেও তো তুমি অন্য কিছু বলছিলে তাহলে এখন কেনো!
– বাড়িতে যা,শিশিরের সাথে কথা বল। তুই নিজে সব বুঝতে পারবি। তুই বড় হয়েছিস মা এখন আর ছোট নেই। দায়িত্ব নিতে শেখ।কেমন।
হিয়া শুধু মাথা নাড়িয়ে দিলো কি বুঝলে না বুঝলে তার জানা নেই। চাচ্চু হিয়াকে রিক্সায় তুলে দিয়ে আবার গাইবান্ধার বাস ধরে উল্টোপথে রওনা দিলেন। এদিকে অটোরিক্সার জোড়ালো গতিতে পাঁচ মিনিটের মধ্যে হিয়া এসে পৌঁছালো বাড়িতে। রিক্সা ভাড়া দিতে হলো না আর তাকে,চাচ্চু দিয়ে দিয়েছিলেন রিক্সা ঠিক করে দেবার সময়ই। হিয়া শুধু নিজের ব্যাগটুকু তুলে নিয়ে সদর দরজা পেড়িয়ে বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়ালো। চাচ্চুর কথা গুলো শোনার পর থেকে একটা অদ্ভুত ভয় কাজ করতে শুরু করছিলো হিয়ার মাঝে এতোক্ষণ। বাসেও তো চাচ্চুকে দেখে স্বাভাবিক লাগলো। তাহলে হঠাৎ নেমেই কি এমন হলো ওনার।
উজানের সাথে কথা হ’য়েছে বগুড়ার মাঝামাঝি থাকাকালীন। এরপর উজান ফোন দিয়েছিলো একবার পিরগঞ্জের মাথায়,হিয়া শুধু বলেছিলো সে ঠিক আছে তাকে নিয়ে আর বেশি চিন্তা না করতে। এরপর এই দু আড়াইঘন্টায় আর কথা হয়নি হিয়ার সাথে উজানের। নেমে ফোন করতে বলেছিলো উজান কিন্তু চাচ্চুর কথা গুলো শোনার পর হিয়ার সেই হুঁশ টা ছিলো না যে একটা ফোন করে সে জানাবে সে পৌঁছে ছে কিনা__বাড়ির মুখে আসতেই হিয়া দেখতে পেলো গ্রীলের তালা খোলা সাথে তালার সাথে গেটে ঝুলছে চাবি। দু’বার ভাইয়া বলে ডাক দিলো হিয়া। কিন্তু ভেতরঘর থেকে কোনো আওয়াজ মিললো না। কপালে ভাঁজ পড়লো হিয়ার। দরজা এভাবে খোলা অথচ ভাইয়াকে ডাকছি ভাইয়া শুনছে না কেনো? লাগেজ হাতে দরজা লাগিয়ে ডাইনিং পেড়িয়ে রুমে আসলো হিয়া। ব্যাগটা চেয়ারের সাইডে রেখে শিশিরের রুমের দিকে পা বাড়াতে দেখলো রুমটা ঘুটঘুটে অন্ধকার হ’য়ে আছে কেমন দেখো। ভাইয়া বলে ডাকতে ডাকতে রুমের লাইট জ্বালালো মেয়েটা। আর যে-ই লাইট জ্বালিয়ে পেছন ফিরতে যাবে ওমনি ফ্লোরের উপর পড়ে থাকা শিশিরের দিকে চোখ পড়তেই আঁতকে উঠে এক পা পিছিয়ে আসলো হিয়ার। দৌড়ে ছুটে এসে ভাইকে ধরতেই হিয়া দেখতে পেলো পুরো ফ্লোর জুড়ে রক্তের ছড়াছড়ি। ভয় পেয়ে ধপাস করে সেই রক্ত ভেজা ফ্লোরের উপর ওভাবেই বসে পড়লো হিয়া। শিশিরকে ভালো করে পরক্ষ করে দেখতে পেলো শরীরে তার জায়গায় জায়গায় আঘাতের গভীর চিহ্ন। মনে হচ্ছে কোনো হায়না তার ক্ষুধার্ত পেটের জ্বালা মেটাতে ঝাপিয়ে পড়েছিলো তার ভাইয়ের উপর। এদিকে শিশিরের বুকের দিকে তাকাতেই আরো কেঁপে উঠলো হিয়া। এসব কি। মনে হচ্ছে কেউ চাকু দিয়ে নিজের ভেতর টাকে কুড়ে কুড়ে কেটে ফেলে দিতে চাইছে। এরকম ভাবে জখম করা কেনো? শিশিরের মাথার কাছে একটা রক্তমাখা চাকু পড়ে থাকতে দেখে হিয়ার বুঝতে বাকি থাকলো না এটা শিশির নিজে হাতে নিজেকে আঘাত করেছে কিন্তু কেনো!
নিজেকে স্বাভাবিক করতে অনেক সময় নিলো হিয়া। আশেপাশে চোখ বুলাতে গিয়ে দেখলো সেই প্যাকেটভর্তি উপহারের পসরা। যেগুলো দেখে বুঝতে বাকি রইলো না এগুলো কার ফেরত দেওয়া উপহার। কাপা হাতে শিশিরের ফোনটা হাতে নিয়ে ওন করতেই আরো কেঁপে গিয়ে নিজের শরীর ছেড়ে দিলো হিয়ার। ফোনস্ক্রীনে জ্বলজ্বল করছে তার রোদআপুর বিয়ের কিছু ছবি। যেগুলো মেনে নেওয়া ছিলো তার পক্ষেও অসম্ভব। হিয়ার আর বুঝতে বাকি রইলো না তখন চাচ্চুর বলা কথা গুলোর অন্তর্নিহিত মানে। হিয়ার বুঝতে বাকি রইলো না তার জন্য তার ভাইয়ের সহ্য করা প্রত্যেকটা আঘাতের গভীরতা ঠিক কতোটা!
চলবে….