?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_৪২
#ইভা_রহমান
বর্ষা হবার পাঁচ মাসের মাথায় বর্ষাকে দেখতে বাসবি সহ রোদের বাবা মা শিশিরদের বাড়িতে আসেন। ব্যাপারটায় রোদ প্রচন্ড রেগে গেলেও শিশির যথেষ্ট বিনয়ের সাথে তাদের বসতে বলে। হিয়া একটু ইতস্তত পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। কি করবে না করবে বুঝে উঠতে পারে না। তার উপর উজানো নেই আজ। রাতে ডিউটি আছে তার আজ সেই জন্য একটু আগে মেডিকেলের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে গেছে সে। শিশিরের আদেশে রোদের বাবা আর মায়ের জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করতে রান্নাঘরে ঢুকে পড়লো হিয়া। চাচ্চু এসে বলে গেলো তাদের বাড়িতে কি হয়েছে হয়েছে এ বাড়িতে যেনো তাদের কোনো রকম অসম্মান না করা হয়। রোদের বাবা মা’র শান্ত ব্যবহারে অবাক হলেও মুখে সেটা প্রকাশ করলো না হিয়া। এদিকে শিশির রোদের আব্বু আম্মুর সাথে ভালো মন্দ কথা বলতে শুরু করলো। হিয়াকে দিয়ে দু বার রোদকে ডাকিয়ে দিলেও রোদ আসলো না। শিশির ওনাদের খেতে বলে রোদকে ডাকতে রুমে আসতেই শুরু হলো দু’জনের এক বিশাল তর্কযুদ্ধ।
– একটা বার কথা বলো রোদ। প্লিজ বাহিরে আসো।
– আমি না তোমাকে দেখে খুব অবাক হচ্ছি জানো। তোমার সাথে যারা এতো বড় অন্যায় করেছে,তোমাকে পুলিশে দিয়ে মা’র খাইয়েছে,তোমার বোনের গায়ে যেই মহিলা হাত অবধি তুলেছে তাদেরকে কি না তুমি ঘরে বসিয়ে আপ্যায়ন করছো। হিয়াকে বলছো চা নাস্তার আয়োজন করতে। সত্যি শিশির। মেরুদণ্ড বলে কিছু আছে তোমার।
– আশ্চর্য রোদেলা। এসব কি কথা। হ্যা আমি মানছি ওরা আমার সাথে আমাদের সাথে অনেক অন্যায় করেছে। অনেক কথা শুনিয়েছে তাই বলে কি ওরা বাড়িতে আসলে আমি ওদের দরজা থেকেই তাড়িয়ে দেবো।
– হ্যা দিবে। দরকার পড়লে তাই দিবে।
– আর উজানের আম্মু। তোমার তো ওনার সাথে কোনো সমস্যা নেই। আমি কি ওনাকেও বলবো বেড়িয়ে যেতে।
– আমি তো বড় আম্মুর কথা কিছু বলছি না। আমি বলছি আমার বাবা মা’র কথা। তুমি ওদের তাড়িয়ে দেও।
কন্ঠ ভারী করে শিশির বললো,
-রোদেলা। ওরা তোমার বাবা মা হয়। সম্পর্কে আমারো। আমার শিক্ষা আমাকে তাদের সাথে দূর ব্যবহার করার আদেশ দেয় না। যদি এটা অন্য কোথাও হতো আমি বিনা বাক্যে ওদের এড়িয়ে আসতাম। কিন্তু ওরা নিজে থেকে আমার বাড়িতে এসেছে। তোমাকে দেখতে এসেছে বর্ষাকে দেখতে এসেছে। আমি পারবো না ওনাদের সাথে খারাপ আচরণ করতে।
– ঠিক আছে তোমার এথিকসের সাথে বিষয়টা যাচ্ছে না তাই তো। তাহলে আমি গিয়ে ওদের বেড়িয়ে যেতে বলি। বলবো?
– না।
শিশির এগিয়ে এসে রোদেলার গাল জড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,
– কি হইছে রোদেলা তোমার। তুমি কি চাও আমার বদনাম হোক। তোমার বাবা মা বাড়ি ফিরে গিয়ে বলুক শিশিরের বাড়িতে শিশির আমাদের সাথে ভালো করে কথা বলেনি,বসতে বলে নি,চা অবধি জিজ্ঞেস করে নি।
– বিশ্বাস করো এরা এসব বললেও আমার কিছু যায় আসে না এতে এখন।
– কিন্তু আমার তো আসে। আমিও যদি আজ ওদের সাথে ওদেরই মতো আচরণ করি তাহলে আমার আর ওদের মধ্যে পার্থক্য টাই বা আর কি বাকি থাকবে রোদ।
– তোমার এই অতিরিক্ত ভালো মানুষী না আমার সহ্য হয় না একদম শিশির। যা খুশি করো গিয়ে। আমি বের হবো না। আর বর্ষাকেও নিয়ে যেতে দেবো না।
– রোদ প্লিজ। বর্ষাকে আটকে রাখার কি আছে এতে। আমি নিয়ে গিয়ে দেখা করিয়ে দিয়ে আসি।
– তুমি কেনো বুঝতে চাইছো না শিশির যে আমি চাই না ওরা আমার বাচ্চাকে স্পর্শ করুক। তাকে কোলে নিক। কি কি দরকারে এতোদিন বাদে আমার খোঁজ নিতে হলো তাদের, কি অপমান করার কি ক্ষতি করার বাকি ছিলো যে ওরা আবার এসে..
রোদেলা আর কিছু আগাবার আগেই,রোদের বাবা মা সহ হিয়া ঘরে ঢুকে পড়লো। চোখে চোখ পড়তেই সোজা ব্যালকুনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো রোদেলা। হিয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না। বসতে বলবে না দাঁড়িয়ে রাখবে দুই দ্বন্দে পড়ে গেলো মেয়েটা। শিশির মুখে হাসি ধরে বললো,
– আন্টি আসুন না। বর্ষা ঘুমাচ্ছে তো তাই রোদ উঠাতে চাইছিলো না।
রোদের বাবা মা এগিয়ে এসে বিছানায় বসলেন,বর্ষাকে বুলিয়ে নিজেদের ভালোবাসা দিলেন। রোদের মা বললেন বর্ষা না-কি অনেকটা রোদের মতো হয়েছে, ছোট বেলায় রোদ যেমন ছিলো গোল চাঁদের মতো তেমনি মেয়েও হয়েছে তারই মতো” হিয়া পরিস্থিতিটাকে স্বাভাবিক করতে বললো” হ্যা আন্টি ঔ একদম আপুর মতো হয়েছে দেখতে,মাঝেমধ্যে তো আঙ্কেলের মতো লাগে অনেকটা, থুতনির দিক টা খেয়াল করে দেখুন” রোদের মা মৃদু হেঁসে হিয়ার মাথায় হাত রাখলেন। ব্যাগ থেকে বর্ষার জন্য একটা স্বর্ণের চেইন বের করে হিয়ার হাতে ধরিয়ে বললো” এটা বর্ষার জন্য, ঘুমোচ্ছে নাহলে নিজে পড়িয়ে দিতাম। বর্ষা উঠলে তুমি পড়িয়ে দিও” হিয়া চেইন টা আবার রোদের মা’র হাতে দিয়ে ভয়ে ভয়ে বললো” আমি এটা নিতে পারবো না আন্টি,রোদ আপু খুব বকবে,আপনি বরং ওটা আপুর হাতেই দিন” রোদের মা মুখটা মলিন করে উঠে দাঁড়ালেন। রোদের বাবা সহ ব্যালকুনিতে আসতেই দেখলেন রোদ মুখ ফিরিয়ে গ্রীল জড়িয়ে কান্না করছে। তাদের উপস্থিতি টের পেয়েই চোখ মুছলো রোদ। নিজেকে শক্ত করে ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো।
– আমি জানি তুই আমাদের সাথে কথা বলবি না…আমি আর তোর বাবা সামনের সপ্তাহে সিডনি যাচ্ছি সিয়ামের উন্নত চিকিৎসার জন্য। হয়তো আর দেশে ফিরবো না। ওখানেই সেটেল হ’য়ে যাবার ইচ্ছে আছে তোর বড় ফুফুর সাথে।
রোদ কিছু বলছে না দেখে রোদের মা রোদের বাবা-র মুখের দিকে তাকালেন। রোদের বাবা রোদের মাথায় হাত রেখে বললেন,
– আমি রাতারাতি আরমানের সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে যে-ই ভূলটা করেছি জানি সেটা ক্ষমার অযোগ্য। তবুও যদি পারো সব ভূলে গিয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ টা রাখা বন্ধ করো না। শিশিরকে আমি কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাই নি সেসময় কিন্তু এবার যখন পেয়েছি বুঝেছি কেনো আমার মেয়ে তার জন্য সব ছাড়তে রাজি ছিলো।
একটু বিস্মিত হয়ে সামন ফিরলো রোদেলা। অবাক চাহনিতে বললো,
– কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে মানে?
– শিশির তোমাকে কিছু বলেনি?
– না!
– জানো তো আমি রিটায়ার্ড করেছি অনেক মাস হলো। তো বাড়িতে একা বসে ছিলাম তোমার ছোট চাচার সাথে আলাপ হলো,বললো একটা কোম্পানি আছে ইনভেস্ট করলে অনেক প্রফিট আসবে আমিও কিছু না ভেবেই হ্যা তে হ্যা করলাম। বাট সেই কোম্পানি আসলেই একটা ফ্রড কোম্পানি ছিলো। আর শিশির যে-ই কোম্পানিতে আছে ওনাদের সাথেও এ-ই ফ্রড কোম্পানি প্রতরণা করেছিলো। সেই টাকা উদ্ধার করতে শিশিরের সাথে দেখা হয় আমার। তারপর শিশির’ই আমাকে আমাদের টাকা টা রিটার্ন করতে সহয়তা করে।
শিশির রোদের অগোচরে এতো কিছু করে গেলো অথচ রোদকে বুঝতে অবধি দিলো না। বিষয়টা যেনো ঠিক হজম হলো না রোদের। রোদের চিন্তার মাঝে রোদের মা রোদের হাতে স্বর্নের চেইন টা দিয়ে বললেন,
– এটা বর্ষার জন্য। আরো অনেক কিছু দেবার ছিলো তুই নিবি কি না সেই ভয়ে আমি আর সাহস জুটাতে পারিনি আনার।
স্বর্নের চেইন টার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো রোদ। কি জানি একটা ভাবতে থাকলো। রোদের বাবা রোদকে বললেন,
– আমি তোমার আর সিয়ামের জন্য যা রাখার ছিলো সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তোমার যা প্রাপ্য সব তোমার বড় আম্মুর হাতে বুঝিয়ে দিয়েছি। পেপারস আসলেই উনি তোমার হাতে সব দিয়ে যাবেন।
তাচ্ছিল্যের এক হাসি টেনে চিৎকার করে রোদ বললো” চাই না তার কোনো সম্পওি। তাদের একটা সুতো অবধি সে নিতে রাজি না। রোদের চিৎকারে ব্যালকুনিতে এসে দাঁড়ালো শিশির। রোদকে আগলে ধরতেই রোদ নিজের বাবা মা সহ শিশিরের সাথে রাগ করতে করতে বললো,
– তুমি আমাকে না জানিয়ে এ-ই লোকটাকে সাহায্য করেছো,তারমানে সেদিন ফোনে ফোনে এই লোকটাই ছিলো,আমি ঠিক ধরেছিলাম তাই তো।
– কি হচ্ছে কি রোদ। চুপ করো।
– কেনো চুপ করবো। আর আপনারা কেনো এখনো দাঁড়িয়ে আছেন। বুঝতে পারছে না আমার আপনাদের সহ্য হচ্ছে না। প্লিজ চলে যান। আর আপনাদের সম্পওি আপনারই রাখুন। যে সম্পওি আমাকে একটা নেশাখোর বানিয়ে তুলে,যে-ই সম্পওি আমাকে আমাকে আমার বাবা মা’র থেকে দূরে করে দেয়,সেই সম্পওি চাই না আমার। আর এগুলা কি আনছেন। চেইন সোনার চেইন। লাগবে না। বর্ষার জন্য এখনো তার মা আছে বাবা আছে ফুফুরা আছে। আপনাদের এসব দয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
বলেই চেইন টা ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেললো রোদ। চোখ বড়বড় করে রোদকে রাগ করলো শিশির। রোদের মা আর বাবা বেশি কথা বাড়ালো না আর। রোদ আরো চিৎকার করার আগেই ওনারা বেড়িয়ে পড়লেন। শিশির এসে রোদকে আচ্ছা মতো বকুনি দিতেই হিয়া ঘাবড়ে উঠলো। এদের চিল্লাচিল্লি তে বর্ষা উঠে গিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। হিয়া বর্ষাকে কোলে নিয়ে বাসবি সহ নিজের রুমে আসতেই এদিকে শুরু হলো দুই স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ।
– কাজ টা কিন্তু তুমি একদম ঠিক করোনি রোদ। নিজের বাবা মা কে কেও এভাবে অপমান করে।
– আর ওরা আমার জীবন নিয়ে যা করেছে তার বেলা।
– ওরা অনুতপ্ত। ওরা তোমার কাছে ক্ষমা চাইতেই এসেছিলো রোদ।
– ক্ষমা কিসের ক্ষমা। কিছু কিছু জিনিসের ক্ষমা হয় না শিশির। আর তুমি আমার থেকে কথাটা লুকিয়ে যা করেছো না সেটারো ক্ষমা হয় না।
– চাই না ক্ষমা তোমার। তুমি কাল আমার সাথে তোমার বাবা মা’র কাছে যাবা তাদেরকে সরি বলবা। বলবা তোমার ভূল হইছে। কথাটা ঢুকছে মাথায়।
– তুমি কি পাগল শিশির।
– পাগল তো তুমি রোদেলা। হ্যা মানছি ওরা অন্যায় করেছে,তোমার বাবা মা’র একটু বেশি টাকার অহংকার ছিলো। কিন্তু তোমার জন্য ওদের চিন্তা টা খারাপ ছিলো না। ওরা চেয়েছিলো তুমি ভালো থাকো। তোমার ভালো হোক।
– সত্যি, সত্যি তারা এসব করে আমার কি ভালোটাই না করেছিলো তাই না শিশির!
– তোমার আর আমার যখন সম্পর্ক রোদ সেসময় আমি একটা বেকার ছেলে ছিলাম। একটা দোকানে বসতাম। না মাথার উপর একটা ছাঁদ ছিলো না জমানো কোনো টাকা। আজকে যদি বর্ষা এরকম করতো তুমি সহজে রাজি হতে পারতা।
– এসবে আমার মেয়েকে কেনো টানছো তুমি।
– তোমাকে বোঝানোর জন্য টানছি।
– হ্যা আমি হয়তো সহজে হ্যা বলতাম না কিন্তু নিজের মেয়েকে কোনো জাহান্নামেও পাঠাতাম না।
– তারা কিন্তু তোমার জন্য জান্নাতেরই আয়োজন করেছিলো রোদ। তারা বোঝেনি সেটা জাহান্নাম হয়ে ধরা দিবে!
– আমি এতো কিছু বুঝতে চাই না। আমি আর এ বিষয়ে একটা কথাও বলতে চাই না। ওরা সিডনি যাচ্ছে না কোথায় যাচ্ছে যাক কিন্তু আমার বাড়িতে যেনো আর কখনো না আসে।
– আজকে বাবা মা বেঁচে আছে তো তাই মর্ম দিচ্ছো না। আমার মতো অনাথ হলে বুঝতে বাবা মা না থাকার কষ্ট টা কতো। আমার কথা তো বাদই দিলাম, বর্ষার কথা তো ভাবতে পারো,মেয়ে টা দাদা দাদির ভালোবাসা পেলোই না এখন একটু নানা নানি আদর দিতে চাইছে সেটাও সহ্য হচ্ছে না তোমার।
কাঁদতে কাঁদতে রোদ বললো,
– হ্যা আমি তো হিংসে করি না আমার মেয়েকে যে সহ্য হবে না আমার।
বলতে বলতে আরো ডুকরে কেঁদে উঠলো রোদেলা। শিশির পাশের আয়না টায় এক বারি দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে গিয়ে বললো,
– এসব মিনিংলেস কান্না আমার সামনে করবা না। কালকে আমার সাথে তুমি যাবা তারমানে তুমি যাবা।
– যাবো না আমি বুঝছো তুমি, যাবো না আমি কোথাও।
– তাহলে আমিও আর তোমার সাথে কথা বলবো না কথা টা মাথায় রাখিও।
!
!
শিশির বেড়িয়ে আসলো। বাবাকে দেখে বাবার কোলে ওঠার বায়না ধরলো বর্ষা। বর্ষাকে নিয়ে মোড়ের দোকানে এসে চকলেট চিপস সহ এক প্যাকেট সিগারেট কিনলো শিশির। এদিকে বাসবি এসে রোদের পাশে বসতেই বাসবিকে আঁকড়ে কান্না শুরু করলো রোদেলা। রোদকে থামাতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো হিয়া বাসবি দুজনেই। একটা সময় বাসবি হিয়াকে বললেন” মা একটু তখনকার চা টা গরম করে নিয়ে আসবে,মাথা টা ধরে গেলো হঠাৎ ” হিয়া রান্নাঘরে ঢুকে চটজলদি চা টা গরম করে নিয়ে বিস্কুট সহ রুমে ঢুকতেই বাসবি আর রোদের কিছু কথা শুনেই ওখানে থমকে দাঁড়ালো। এসব কি বললো বাসবি। এগুলো কি সত্যি!
!
!
!
সেদিন আর সারারাত ঘুমাতে পারলো না হিয়া। বারবার বাসবির কথা গুলো মনে আসতে থাকলো তার। কখন উজান আসবে আর কখন সে উজানকে সবটা বলবে। এমনি কেটে গেলো সারারাত। হিয়ার চোখ টা লেগে আসলো ঠিক সকাল সাতটার দিকে। তার কিছুসময় বাদে ডিউটি দিয়ে বাড়ি ফিরলো উজান। দরজা খুলে রুমে আসলো। দেখলো তার পিচ্চি হিয়া কেমন এই শীতে কাথা বালিশ ছাড়া ঘুমিয়ে আছে। হিয়ার গায়ে কম্বলটা সুন্দর মতো মেলে দিয়ে গোসলের জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো উজান। এ-ই শীতের মরশুমে গোসল করতে যেনো একটু বেশি কষ্ট হলো তার। গোসল সেরে বেড়িয়ে এসে রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো। মাথা মুছে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে পড়তেই হিয়া উঠে পড়লো৷ চোখ টা কচলে নিয়ে বললো,
– তুমি আসছো,কখন আসছো,দরজা কে খুললো?
– আমি আসছি,একটু আগে আসছি,আর দরজা খুললো তোমার ভাই মানে শিশির।
– দেখছো আমি এমনই ঘুমায় ছিলাম যে তুমি আসছো,ভাইয়া দরজা খুলছে আর আমি কিছু বুঝতেও পারিনি।
– হুম আর পারতেও হবে না। দেখি এখন।
উজান ভালো মতো কম্বল জড়িয়ে হিয়াকে লেপ্টে নিতেই উজানকে থামিয়ে দিয়ে হিয়া বললো,
– উজান আমার না তোমাকে কিছু বলার আছে। কথা টা জরুরি।
উজান উল্টে হিয়াকে থামিয়ে দিয়ে কপালে বিরক্তির ভাঁজ টেনে বললো,
– না হিয়া। এখন কোনো কথা না প্লিজ। আমি অনেক টায়ার্ড এখন একটু ঘুমাতে দেও।
– না উজান, কথাটা সত্যি অনেক জরুরি। একটু শোনো।
উজান শুনলো না। শুনবে কি শোনার জন্য তো একটু হলেও শক্তি থাকতে হবে তার। এমনিতে রাতে ডিউটি থাকলেই এ-ই শীতের সকালে এসেই গোসল দিতে হয় তাকে। আজো গোসল দিয়ে শরীর কাঁপছে,ঘুম আসছে। আর এ-ই মেয়েকে দেখো তার কি না এই সাত সকালেই জরুরি কথা মনে পড়লো। হিয়াকে কিছু বলতে না দিয়েই হিয়ার গলার ভাঁজে মুখ লুকালো উজান। কাঁপতে কাঁপতে পুরো কম্বলে হিয়াকে পেঁচিয়ে নিয়ে বললো,” ইশশ কি সুন্দর উষ্ণুম শরীর টায়” হিয়া উজানের ঠান্ডা হাত জোড়া কোমড় থেকে সরিয়ে নিয়ে বললো” তুমি আমার কথাটা একটু শুনো তারপর না হয় যতোক্ষণ ইচ্ছে আমাকে নিয়ে ঘুম দিও”উজান শুনলো না। হিয়াকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমে বিভোর হতেই ছটফট শুরু করলো হিয়া। সারারাত অপেক্ষা করেছে সে কথা গুলো বলবে বলে এখন যখন উজান পাশে আছে তখনো কেনো বলতে পারছে না সেই বাসবির কথা গুলো। হিয়ার মন মানলো না। উজানকে সারিয়ে উঠে বসতেই লেগে আসা ঘুমটা ভেঙে আসলো উজানের। বিরক্ত হলেও উঠে বসে হিয়াকে জড়িয়ে বললো
– কি হয়েছে হিয়া,তখন থেকে ছটফট করে নড়েই যাচ্ছো। না আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছো না নিজে ঘুমাচ্ছো। কি হয়েছে বলো।
– উজান কালকে না মা আর রোদ আপুর আম্মু আব্বু এসেছিলো বাড়িতে।
– হুম জানি তুমি টেক্সট দিয়েছিলে তো আমাকে।
– হ্যা তারপর না অনেক কিছু হয়েছে জানো।
– হুম শিশির বলেছে আমাকে। রোদ নাকি অনেক রাগারাগি করেছিলো।
– হ্যা কিন্তু সেটা বিষয় না। আমি অন্য বিষয়ে কথা বলছি তোমাকে।
– আর কি বিষয় হিয়া?
– উজান মা না ভালো নেই। মা’র লাইফে অনেক কষ্ট যাচ্ছে।
হালকা হেঁসে মাথা নাড়িয়ে উজান বললো,
– কি যে বলো না তুমি হিয়া, মা’র আবার কিসের কষ্ট হতে যাবে?
– আমি শুনেছি মা রোদ আপুকে বলছিলো যে বাবা’র সাথে নাকি মা’র ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। বাবার নাকি আরেকটা সংসার আছে। আর মা না-কি বাবাকে ডিভোর্স দিয়ে তোমাদের নানু বাড়িতে চলে যাচ্ছে।
– কি! কিসব বলছো বলো তো তুমি হিয়া। হ্যা আমি মানছি,আমি মানছি যে বাবার সাথে মা’র সম্পর্ক আগে থেকেই ভালো ছিলো না। অনেক রেশারেশি ঝগড়াঝাটি হতো। তাই বলে এ-ই বয়সে এসে বাবা মা’কে ছেড়ে দিবে কি যে বলো না তুমি। এটা তাই সম্ভব।
– তুমি কেনো বুঝতে চাইছো না। আমি নিজের কানে মা’কে বলতে শুনেছি। তোমার আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না তো ঠিক আছে তুমি বসো আমি রোদ আপুকে ডেকে নিয়ে এসে বলতে বলছি। তখন তুমি বিশ্বাস করবে তো। দাঁড়াও তাহলে।
হিয়া উঠতে ধরবে ওমনি হিয়াকে থামিয়ে নিজের কোলের উপরে বসিয়ে দিলো উজান। হিয়াকে আগলে নিয়ে বললো,
– হিয়া হিয়া,হিয়া দেখি একটু শান্ত হও তো। বসো এখানে। কি হয়েছে কি শুনেছো সেটা পরিষ্কার করে বলো তো আমায়।
– বলবো। তার আগে তুমি আমাকে কথা দেও। তুমি মা’কে গ্রামে যেতে দিবে না। মা এখন থেকে আমাদের সাথে থাকবে। আমাদের বাড়িতে তো আরো দুটো রুম পড়ে আছে। তুমি তো এটাও বললে যে আর কিছু দিন বাদে উপর তালার ও কাজ ধরবে। তাহলে তো কোনো সমস্যাও নেই না আর। প্লিজ তুমি মা’কে এখানে নিয়ে আসো।
– আচ্ছা আনবো। আমি থাকতে মা অন্য আর কোথায় যাবে। কিন্তু তুমি কি শুনেছো,মা কি বলেছে রোদকে?
– বলেছে যে বাবার নাকি ঢাকাতে আরেকটা ফ্যামিলি আছে। অনেকদিন ধরে কিন্তু তোমরা কেউ জানো না। তারপর মা যখন জানতে পারে বাড়িতে এই নিয়ে খুব অশান্তি হয়। তুমি তো নেই না তাই বাবা আরো সাহস পাইছে। মা’কে মা’র দেনমোহরের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে তালাকের কাগজ দিয়ে ছাড়াছাড়ি করে নিছে। আর তোমাদের সম্পওি সেটাও না-কি ঠিক ঠাক ভাগে ভাগ করে দেয়নি। মা তো তোমার ছোট বোন টার জন্য পড়ে ছিলো এতোদিন। তারো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে দেখে মা সিদ্ধান্ত নিয়েছে মা গ্রামে ফিরে যাবে। ওখানেই থাকবে এখন থেকে। তুমি প্লিজ মা’কে যেতে দিও না কোথাও। মা আমাদের সাথে থাকলে কি সমস্যা হবে। কিছু তো বলো উজান। প্লিজ চুপ করে থেকো না। উজানন।
উজান কিছু বললো না। হিয়াকে বুকে জড়িয়ে বেশ খানিক্ষন ওভাবেই বসে রইলো। কিছু সময় বাদে ফোন হাতে নিয়ে ফোন করলো নিজের মা’কে। স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
– মা তুমি কোথায়?
– আমি তো তোর ছোট চাচ্চুর সাথে রিমা বুড়ির স্কুলে আসছি ওকে দিতে। কেনো কিছু দরকার। রোদ আবার কিছু ঝামেলা করে নি তো।
– না। তুমি এক্ষুনি একটু বাড়িতে আসো তো। রিমাকে এখন পড়ে গিয়ে আমি নিয়ে আসবো।
– হঠাৎ এই সকালে। সব ঠিক আছে তো ওদিকে। হিয়া মা ঠিক আছে?
– সবাই ভালো আছে। আমি তোমাকে যা বললাম তুমি তাই করো। নাহলে বলো আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসছি।
– না,আসছি আমি। রিমাকে দিয়েই চলে আসছি বেশি সময় লাগবে না।
বাসবি ফোন রাখতেই হিয়া উজানের বুক থেকে মুখ তুলে বললো,
– উজান আমি কোনোদিন বাবা মা’র আদর ভালোবাসা কিচ্ছু অনুভব করতে পারি নি। আজকে যখন তোমার মাধ্যমে একটা মা পেয়েছি বিশ্বাস করো তাকে আমি আর হারাতে চাই না। অতীতে কি হয়েছে সব ভূলে যাই না আমরা। এখন তো রোদ আপুকেও তার বাবা মা-কাছে টানতে চাইছে। আমরা কি পারি না সবাইকে ক্ষমা করে দিয়ে এক হয়ে থাকতে!
উজান কিছু বললো না। হিয়ার কপালে চুমু এঁকে একটা শান্তির শ্বাস ছাড়লো। তার এই পিচ্চিটা যতোই বয়সে ছোট হোক না কেনো কথা তো বলে একদম সেই মাপের।
!
!
বাসবিকে সামনে বসিয়ে তার চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। উজানের চোখে মুখে যেমন রাগের আগুন তেমনি মা’র জন্য কিছু করতে না পারার যন্ত্রণা স্পষ্ট দেখা মিলছে।
– সেদিন যখন জিনিয়ার জন্য ছেলে দেখতে গেলাম তোমার সাথে সেদিনো তুমি আমায় কথা টা লুকিয়ে গেলে। একটা বার ভরসা করা যেতো না আমাকে। বাড়ি ছেড়ে চলে আসছি বলে সবকিছু থেকে আমাকে এড়িয়ে যাবে। তোমার এতো বড় একটা ক্রাইসিস আর তুমি আমাকে না জানিয়ে একা একা সব ঠিক করে নিলে।
– তুই রাগ করিস না উজান। তোকে বলা মানেই তুই ঝামেলা করতি তাই আমি চাই নি বিষয়টা কোনোভাবে তোর কানে গিয়ে পৌঁছাক।
– ঝামেলার তুমি কি দেখছো। ঝামেলা তো কেবল শুরু। তুমি ভাবলে কি করে আমি ঔ লোককে এতো সহজে ছেড়ে দেবো।
– না উজান। তুই এমন কিচ্ছু করবি না যাতে আমার বারণ আছে। আমি সারাজীবন অনেক কিছু সহ্য করেছি। সব ছিলো আমার। কোনো কিছুর অভাব ছিলো না কিন্তু আমি তোর বাবাকে নিয়ে কখনো সুখি হতে পারিনি। তাই আমি আমার বাকি টা জীবন একটু একা বাঁচতে চাই। এই শেষ বয়সে এসে আর কোনো ঝামেলা আমি নিতে পারবো না।
– তাই বলে আমরা কিছু না বলে শুধু শুধু বসে থাকবো।
– এখানে আর কি বা করার আছে উজান। আমাকে বল। হয়েছে ছাড়াছাড়ি উনি চলে গেছেন। আমি আছি ভালো আছি। আর কি চাই তোর। এরপরো তুই যদি কিছু করিস আমি কিন্তু তোর সাথেও যোগাযোগ রাখা বাদ দিয়ে দেবো বলে দিলাম।
– বেশ। আমি কিচ্ছু করবো না। তুমি যেভাবে চাও সেভাবেই সব হবে কিন্তু তুমি আমাকে কথা দেও আজকে থেকে তুমি আমাদের সাথে এই বাড়িতেই থাকবে।
– পাগল তুই উজান। এখানে আমি কিভাবে থাকবো। এটা তোর নিজের বাড়ি হলেও একটা কথা ছিলো। যেখানে তোর’ই এখানে থাকার কোনো প্রশ্ন আসে না সেখানে তুই আমাকে কোন অধিকারে টানছিস!
বাসবির কথায় শিশির এসে বাসবিকে অভয় দিয়ে বললো,
– কেনো আন্টি আপনার ছেলের বাড়ি কি আপনার না। নাকি আমাকে আপনি নিজের ছেলেই হিসাবে ভাবেন না কোনটা।
– তা না শিশির। এটা আমার উজান রোদেলা দু’জনেরই শ্বশুর বাড়ি। সেখানে আমার থাকা টা চোখে লাগার মতো। মানুষ বুঝবে না।
– মানুষকে তো বুঝতেও হবে না আন্টি। আমাদের বাড়ি আমরা থাকবো। যদি নিজের মা’কেই আশ্রয় না দিতে পারি তাহলে এতো বড় বাড়ি বানিয়ে লাভ টাই কি হলো আমার।
হিয়া দৌড়ে এসে বাসবির সামনে নিচে বসে গিয়ে বাসবির হাত জড়িয়ে বললো,
– আন্টি তুমি আর না করো না। আমি অনেক কষ্টে একটা মা পেয়েছি তুমি আমাকে সেই তুমি থেকে আর আলাদা রেখো না।
হিয়ার সাথে রোদেলাও বসে গিয়ে বললো,
– প্লিজ বড় আম্মু আমরা সবাই যখন চাইছি তুমি তখনো না করবে। কি হবে ঔ গ্রামে গিয়ে। আমি তো শুনেছি এখন ওখানে আর কেউ থাকে না তোমার। তাহলে শুধু শুধু গ্রামে গিয়ে থাকার কি মানে। আমাদের কথা না হয় নাই ভাবলে বর্ষার জন্য থেকে যাও। বর্ষার তো দাদা দাদি নেই আর নানা নানিও চলে যাচ্ছে এখন তুমিই পারো আমার বাচ্চাটাকে দাদা দাদি নানা নানি সবার ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিতে।
– হ্যা আন্টি আপু একদম ঠিক বলছে। প্লিজ আপনি রাজি হয়ে যান। আমি জানি আপনি ঠিক আমাদের ছেড়ে যেতে চাইছেন না তাই তো। আমি উজানকে বলছি আজই বাড়ি থেকে আপনার সব নিয়ে আসবে ও। আপনি শুধু হ্যা বলে দিন। প্লিজ আন্টি।
শেষ মেষ সবার জোড়াজুড়িতে হার মানতে বাধ্য হতে হয় বাসবিকে। সে বলে বেশ তাহলে তাই থাকবো কিন্তু তারো একটা শর্ত আছে।
– আমি এ বাড়িতে তখনই আসবো যখন রোদেলা তার বাবা মা’কে ক্ষমা করে দিয়ে তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলবে।
বাসবির শর্তে চুপ হয়ে গেলো সবাই। কাল রাতে এই নিয়ে রোদ যা করলো সেই মেয়ে কি এতো সহজে এই শর্তে রাজি হবে!
– আমাকে ক্ষমা করো বড় আম্মু আমি এটা কখনোই পারবো না। তারা আমার যেই ক্ষতিটা করেছে আমি সেটা আজো ভূলতে পারি না।
– তারা তোমার সাথে যা করেছে তার জন্য তো তারা অনুতপ্ত মা। তারা তাদের ভূলটা বুঝতে পেরেছে। তারা তো চাইছে না তুমি সারাক্ষণ তাদের সাথে কথা বলো,ওঠাবসা করো। ওরা শুধু চাইছে তুমি তাদের ক্ষমা করে দেও। মাঝেমধ্যে যোগাযোগ রাখো।
– তারপরো বড় আম্মু। ওরা শিশিরের সাথে যেই অন্যায় করেছে সেটা কি ক্ষমার যোগ্য ছিলো। বলো আমাকে।
হিয়া রোদের হাত জড়িয়ে রোদকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
– কেনো রোদ আপু? কেনো এখনো তুমি অতীত নিয়ে পড়ে আছো। ভূলে যাও না ঔসব কালো অতীত। তুমি এটা ভাবো যে এতো কিছুর পরো কিন্তু তোমাকে আর ভাইয়াকে কেউ আলাদা করতে পারেনি। তোমার এক হয়েছো। তোমাদের ভালোবাসা জিতেছে। তোমরা যেই কষ্ট টা সহ্য করেছে তার বিনিময়ে পুরষ্কার হিসাবে সৃষ্টিকর্তা বর্ষাকে পাঠিয়েছে। এরপরো তুমি রাগ করে থাকবে।
– জানি না হিয়া। তোরা বিষয়টা যতো সহজ ভাবছিস। বিষয়টা ওতো সহজ না।
– বিষয়টা ওতোটা জটিলও না রোদ আপু। ক্ষমা চাইলে তো আল্লাহ তালা’ও তার বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। আর এনারা তো তোমার বাবা মা। যতো যাই হোক মায়ের পায়ের নিচে তো সন্তানের বেহেশত থাকে,আর সেই মা’কে তুমি তাড়িয়ে দিচ্ছো আজ।
– মা’কে তো মায়ের মতো হতে হয় হিয়া। আমার মা তো আমার মনের কথা টাই বুঝতে চাই নি কখনো।
– এখন তো চাইছে। তুমি কি পারো না তাদেরকে একটা সুযোগ দিতে। প্লিজ আপু। প্লিজ।
– না হিয়া হয় না এভাবে।
– প্লিজ আপু৷ আমাদের জন্য। বর্ষার জন্য। প্লিজ।
– না।
– প্লিজ আপু। আমার জন্য প্লিজ।
তপ্ত এক শ্বাস টেনে রোদ বললো,
– ঠিক আছে সবাই যখন তাই চাইছে তাহলে তাই হোক। আমি তাদেরকে ক্ষমা করবো ঠিকই কিন্তু তারা যেনো এটা না ভাবে আমি আগের মতো তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবো।
– সত্যি! সত্যি তুমি যাবে ভাইয়ার সাথে আজ ওদের সাথে কথা বলতে?
মাথা নাড়িয়ে চোখ মুছে সম্মতি জানালো রোদেলা। খুশিতে লাফিয়ে উঠে উজানের বুকে এসে পড়লো হিয়া। হিয়ার সাথে খুশির আনন্দ ধরলো বাকি সবার মনে। শিশির মুচকি হেঁসে নিজ মনে বললো যেই মেয়ের সাথে সারারাত ঝগড়া করেও কি না রাজি করানো গেলো না আর হিয়া কি না কিসব ইমোশনাল কথা বলে তাকে রাজি করিয়ে নিলো!
?
আড়াই বছর পরঃ
সেদিন সবার কথায় রাজি হয়ে নিজের বাবা মা’কে ক্ষমা করে দিয়ে শিশিরের সাথে তাদের ফ্লাইটে তুলে দিয়ে আসতে চলে যায় রোদেলা। বাসবি শাহরিয়ার বাড়ির সাথে তার সব সম্পর্ক শেষ করে শিশিরের বাড়িতে এসে থাকতে শুরু করে। তার কিছুদিনের মাথায় এমডি করতে ঢাকায় যেতে হয় উজানকে। ইচ্ছে ছিলো বাহিরে যাবার কিন্তু ঢাকা যেতেই হিয়া যা না খেয়ে সারাক্ষণ চোখের পানি ফেলে যাচ্ছিলো এরপর তো বাহিরে গেলে এ-ই মেয়ে পাথর হয়ে যেতে পুরো। উজান ঢাকা থেকে আসতো কখনো বা পড়ার চাপ কম থাকলে হিয়া গিয়ে উজানের সাথে থেকে আসতো। এভাবে চলতে থাকলো সময় গুলো। বর্ষাও এখন অনেকটা বড় হয়ে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখে। রোদের মেয়ে হলে কি হবে গুন তো পেয়েছে পুরো ফুফুর মতো। হিয়ার মতোই চঞ্চল,হিয়ার মতোই দূরন্ত। আর দেখতে তো মাশাআল্লাহ একটা চাঁদের কণা হয়েছে। যদিও মায়ের মতো রঙ টা খুব ফর্সা হয়নি বাবা-র রঙ পেয়েছে কিন্তু তার গোল মুখের মিষ্টি হাসি তে যেনো পুরো ঝংকার উঠে যায় বাড়িতে। বাবা মা’র চাইতে তো যেনো তার ফুফুজান আর মামাজান ই তার কাছে খুব প্রিয়। যতো প্রকার আবদার সব তো যেনো উজানের কাছেই খাটে তার। আর হিয়ার সাথে লাগে দিনে তার চৌদ্দবার ঝগড়া তবুও হিয়া ছাড়া কিছুই বুঝে না এই পরীটা কিচ্ছু না!
চলবে….