চোখের_তারায়_তুই?#পর্ব_৪৩

0
798

?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_৪৩
#ইভা_রহমান

বাড়িতে আজ সকাল থেকে চলছে বর্ষার তৃতীয় জন্মদিনের বিরাট আয়োজন। প্রথম দুটো জন্মদিন একদম ছিমছামে পালন করা হয়েছিলো কারণ ছিলো বর্ষার অসুস্থতা আর দ্বিতীয় বার হিয়ার সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল। তাই এবারের জন্মদিন টা একদম জমকালো ভাবে পালন করতে কাল রাতে ঢাকা থেকে ফিরেছে উজান। সকাল থেকে বাড়িতে কি সেই রইরই অবস্থা। ছাঁদের উপরে চলছে রান্নাবান্নার আয়োজন আর তিনতলার উপরে করা হবে খাওয়াদাওয়া আর ডেকোরেশনের সব ব্যবস্থা। সব আয়োজন সকাল হতে উজান’ই একা হাতে সামলাচ্ছে,শিশির ছুটি নিয়েছে ঠিকই কিন্তু অফিসের এতো কাজের চাপ যে বাড়িতে বসেই ল্যাপটপের সামনে সেই সকাল থেকে এই দুপুর অবধি ঔ ফাইলপত্র নিয়েই বসে থাকতে হচ্ছে তাকে। এদিকে রোদের কিছুতেই শিশিরের এই ছুটি নিয়ে আবারো সেই কাজ ধরে বসে থাকা একদম সহ্য হচ্ছে না। রাগে ফুঁসছে সে কখন না বাঘিনীর মতো গর্জে উঠে যেকোনো মুহুর্তে।

বাবুর্চিকে সব বুঝিয়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে রুমে এসে বিছানায় একটু হেলান দিয়ে শুইয়ে পড়লো উজান। মামুকে দেখা মাএই দৌড়ে এসে প্রাণের প্রিয় মামুজানের কোলে উঠলো বর্ষা। উজানের পুরো চোখে মুখে বাবুনি এঁকে দিয়ে খেলা শুরু করলো। উজান বর্ষার হাত জোড়া আঁকড়ে ধরে বললো,

– তুমি কার ময়নাপাখি হও?

হাতে থাকা চিপসের প্যাকেট থেকে একটা চিপস মুখে নিয়ে বর্ষা তার আধো আধো বুলিতে বললো,

– তোমার ময়না পাখি হই।

– আর কার টিয়া পাখি হও?

– হিয়া ফুপুর টিয়া পাকি হই।

– আর কোকিল পাখি কার হও?

– মামনির কোকিল পাকি হই।

উজান আর বর্ষার এই গল্প চলাকালীন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুমে ঢুকে পাপোষে পা মুছতেই হিয়া খেয়াল করলো আরে বর্ষার হাতে তো তার প্রিয় সেই চিপস টা। ইশশ আজকে খাবো খাবো বলে কিনতে চেয়েও আর রিক্সা থেকে নামা হলো না। এখন কি করি৷ চিপস টা দেখে তো লোভো সামলে রাখা যাচ্ছে না। হুশ এটাই সুযোগ বর্ষাকে বাগিয়ে বুগিয়ে চিপসটা খতম করা।

দৌড়ে এসে বর্ষা আর উজানের সাথে কম্বলের ভেতর ঢুকে পড়লো হিয়া। বর্ষাকে আদর করে বলতে থাকলো।

– আমার সোনা আম্মু টার আজকে জন্মদিন তাই না বুড়ি।

– তুই বাবার বুড়ি,আমি তো পিচই(পিচ্চি)

– অঅ,হ্যা তো তুই আমাদের সোনা বাবু,আচ্ছা বর্ষা বাবু আজকে মামুজানের কাছে কি গিফট নিবে?

– আগে বল তুই কি দিবি?

– আমি কি দেবো আমি কি দেবো,আমি একটা হালুম দেবো।

হালুমের কথা শুনে বর্ষা এগিয়ে হিয়ার গালে একটা বাবুনি আঁকতেই হিয়া সুযোগে কয়েকটা চিপস মুখে ঢুকিয়ে নিলো। বর্ষা উজানের আরো কোল ঘেঁষে বললো,

– মামুজান আমাকে দাজ(দারাজ) থেকে লিপিটিক(লিপিস্টিক) কিনে দেবা এতোগুলা।

– সেদিনই না তোকে দুটো নতুন লিপিস্টিক কিনে দিলাম বর্ষা, আবার মামুর কাছে কেন চাইতে হবে।

– তোমার গুলা ভালো না পুপু(ফুফু)

– তবে রে। ব্রান্ডের লিপিস্টিক কিনে দিয়ে তোর মা’র বকুনি খেলাম আর এখন মেয়ে বলছে কি না লিপিস্টিক ভালো না।

বর্ষার বলতে শেষ নেই উজানের দারাজে ঢুকে মেক-আপ আইটেম বের করা শেষ। বর্ষাকে দেখিয়ে বললো তার কোনটা চাই। বর্ষা এক ডজন লিপিস্টিক সেট তো অর্ডার করলো করলো সাথে পুরো একটা মেকআপ এর সেট কিনে নিলো। এইসব দেখাদেখি কেনাকাটার মাঝে বর্ষার সব চিপস খতম করে দিয়ে হাত ঝারলো হিয়া। এমনি সময় চিপসের প্যাকেটে হাত ঢুকিয়ে আর চিপস নেই দেখে ভ্যা করে কেঁদে ফেললো বর্ষা। হিয়া কান্নারত বর্ষাকে থামাতে অস্থির হয়ে বর্ষার মুখ চিপে ধরলো কিন্তু মেয়ের যে গলা বাপরে বাপ পাড়াপ্রতিবেশি না এবার বাড়িতে হামলা দিয়ে বসে।

– এই চুপ কর না। ভাইয়া আছে। মা’র খাওয়াবি নাকি।

– এ্যাএএ হ্যাএ? তুই সব চিপস খাইছিস আমার। আমি বাবা কে বলে দেবো। এ্যাআআ।

– আরে চুপ কর না। একটা চিপস খেলাম বলে কাঁদছিস আর তোকে যে সেদিন আমি কতো কি কিনে দিলাম।

– আমি মা’কে গিয়ে বলে দেবো পুপু আমার চিপস খাইছে। সাড় সাড় তুই সাড়।

ব’লেই হিয়াকে মারতে মারতে এক ছুটে রান্নাঘরে রোদের সামনে গিয়ে ভ্যান ভ্যান শুরু করলো বর্ষা। কড়াইয়ে রোস্ট ভাজতে ভাজতে রোদ বললো,

– কি হইছে বর্ষা,হিয়া ফুফু আবার কি করছে?

– এ্যাআ আম্মু হিয়া পুপু না আমার সব চিপস খাইছে। এ্যাআ হ্যাআ।

– ফুফু হয় খাইছে ঔজন্য তুমি কান্না করবা। ফুফু না তোমাকে কতো ভালোবাসে।

– ভালোবাসে?

– ভালো না বাসলে তোমাকে লিপিস্টিক কিনে দেয়,হালুম কিনে দেয়,যাও গিয়ে ফুফু কে গিয়ে সরি বলো। খাবার জিনিস সবার সাথে ভাগ করে খেতে হয় তুমি জানো না।

চোখ মুছলো বর্ষা। তার কাছে তার মায়ের সব কথা যেনো এক একটা সত্যের বাণী। দৌড়ে গিয়ে আবারো হিয়ার রুমে ছুটে গিয়ে হিয়াকে জড়িয়ে ধরলো,হিয়াকে আবার একটা বাবুনি দিয়ে বললো,

– সরি ফুপু,এরপর থেকে আমরা একসাথে চিপস খাবো। মা বললো খাবার জিনিস ভাগ করে কেতে(খেতে) হয়।

– ওহ মা বললো দেখে ভাগ করে খাবি না। আর আমি যখন চাইলাম তখন কান্না করলি। ভাগ যা যা মায়ের দুলালি আসছে। আমি আর তোকে আদর করবো না। যা। যা।

রেগে গিয়ে হিয়াকে একটা মা’র বসিয়ে বর্ষা বললো,

– এ্যা হ্যা। কেনো আদর করবি না তুই। আমি না তোর সোনা মোনা হই।

– কে বলছে তুই আমার সোনা মোনা হোস৷ তুই একটা পঁচা মেয়ে। আমার বাবু আসলে আমি আর জীবনেও তোকে আদর করবো না,কিছু কিনেও দেবো না।

বর্ষা ঠোঁট ভ্যাটলে বললো,

– এ্যাএএএ কেনো তুই আমাকে আদর করবি না।বল তুই আদর করবি।

– না করবো না। আমিও করবো না তোর মামু জানো করবে না আম্মু করবে না মামনিও করবে না। খুব ভালো হবে।

এবার আরো জোরে কেঁদে উঠলো বর্ষা। সোজা গিয়ে এবার মা কে না একদম বাবাকে গিয়ে বিচার দিতে শুরু করলো।

– কি হইছে মা তখন থেকে কেনো কান্না করছো তুমি?

বর্ষা ফুঁসতে ফুঁসতে কান্না করে বললো,

– বাবা,বাবা হিয়া বলচে হিয়ার বাবু আসলে আমাকে আর কেউ আদর করবে না। ফুপু আমাকে আর বালোবাসবে না। এ্যা হ্যা এ্যা?

– এমনি বলছে মা,হিয়া ফুফু না কতো আদর করে তোমাকে।

– এমনি বলে নাই। হিয়া টা সত্যি আমাকে আর আদর করবে না বলচে।

– আচ্ছা আমি হিয়াকে বকা দিয়ে দেবো এখন,কেমন?

– না তুমি পুপুকে এখনি বকা দিয়ে দেও?

শিশির ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে হিয়াকে চিৎকার করে রাগ করতে করতে বললো,

– হিয়া,কি সমস্যা তোর কেনো তখন থেকে আমার মেয়েটাকে কাঁদাচ্ছিস। এবার কিন্তু তোকে মা*রবো আমি।

হিয়া ভয়ে চিৎকার করে হাসতে হাসতে বললো,

– আরে ভাইয়া আমি কিছু বলিনি। উজান লিপিস্টিক কিনে দিতে চাইছিলো না দেখে কান্না করছে তোর মেয়ে।

উজান মাথা নাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো। না অনেকক্ষণ হলো নিচে বসে আছে। উপরে বাবুর্চিরা যে কতো কি রান্না করছে দেখা দরকার।

– তুমি না হিয়া খুব খারাপ আছো। বর্ষার সাথে একদিন তোমার না লাগলে হয় না না।

– আরে আমি কোথায় লাগালাগি করি,ঔ তো মারে আমাকে।

– চুপ! বাচ্চাদের মতো ওর চিপস চুরি করে খাও,চকলেট নিয়ে খাও কি স্বভাব এগুলা।

– আরে আমি তো।

– আর একটা কথা না। রোদ তখন থেকে একা কাজ করতেছে গিয়ে একটু হেল্পও তো করতে পারো। সারাদিন এটা ওটা নিয়ে থাকো।

– আরে আমি তো একটু আগেই কলেজ থেকে আসলাম। এসে বর্ষাকে খাওয়ালাম। তুমি জানো বর্ষাকে খাওয়ানোটা কতো বড় কাজ।

হিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এক পালা বকুনি দিয়ে ছাঁদের উপরে গিয়ে বাকিসব আয়োজন দেখতে থাকলো উজান। এদিকে হিয়া এসে বর্ষাকে টুক করে তুলে উপরে ভাসাতেই হিয়ার চোখেমুখে ধুমধাম মা-র বসিয়ে দিলো বর্ষা।

– যা যা তুই যা,তুই পঁচা পুপু তুই যা।

– আরে আমার মুখ,এই মাইর খাবি কিন্তু বর্ষা। ভাইয়া দেখ–বর্ষা আমার চুল খামচে ধরতিছে। বর্ষারররর বাচ্চা।

রোদ এদিকে কাজ সেরে এসে বর্ষাকে হিয়ার কোল থেকে নিয়ে রাগ করতে করতে বললো,

– আর মারবি, মারবি আর ফুপুকে..হিয়া যা তো আমি রোস্ট টা ভেজে দিছি উজানকে গিয়ে বল পাতিল টা উপরে নিয়ে যেতে।

– কেনো আপু,বাবুর্চিরা এতো টাকা নিচ্ছে তা আবার আমাদের দিয়ে সব ভেজে নিচ্ছে কেনো।

– সময় আছে কোনো আর,দেখছিস না পাঁচটা পার হচ্ছে। উজান আর একা হাতে কতো কি দেখবে…(বর্ষার তোয়ালে, সাবান, শ্যাম্পু নিতে নিতে রোদ বললো)…..মেয়েটা তো আমার একার না। আর কারো কোনো দায়িত্ব আছে কি। একটা অনুষ্ঠান বাড়িতে। নিজের মেয়ের জন্মদিন। আর একজনকে দেখো সকাল থেকে ল্যাপটপে বসে আছে। গোসল টাও তো করিয়ে দিতে পারতে মেয়েটাকে।

– তুমি তো আমাকে বললেই গোসল করিয়ে দিতাম আপু।

– কেনো তোকে করতে হবে কেনো। খাবার টাও তো খাইয়ে দিলি আর কি করবি। অন্য কারো কি কোনো দায়িত্ব নাই।

রোদের রাগ করা সব কথা ঠিকই কানে যাচ্ছে শিশিরের। কিন্তু কিছুই করার নাই তার। ছুটি যে আজ দিয়েছে এটাই অনেক। এখন এইকাজ গুলো বাড়িতে বসে না করলেই প্রমোশনের আশাটাও ওখানেই শেষ। হিয়া বুঝলো তার ভাইয়ের এই সকাল থেকে ল্যাপটপের সামনে বসে থাকার জন্য রোদ আপু কি পরিমান রেগে আছে। না এখন আর বর্ষাকে নিয়ে কোনো মারামারি করা যাবে না। দৌড়ে গিয়ে উজানকে ডেকে দুজনে মিলে রোস্ট ভাজার পাতিলটা উপরে নিয়ে গেলো। ডেকোরেশন এর লোক গুলো চলে আসছে। এখন সব সাজানো হবে। এদিকে বর্ষাকে গোসল করিয়ে দিতেই অর্ধেকই ভিজে গেলো রোদ। গোসল শেষে আধো ভেজা নেংটু বর্ষাকে কোলে নিয়ে শিশিরের পাশে নিয়ে এসে বসিয়ে দিলো। তোয়ালে ধরিয়ে বললো মাথা মুছো একা একা। বর্ষা তার ছোট ছোট হাতে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতেই রোদ আলমারি থেকে বর্ষার জামাকাপড় বের করতে থাকলো।

– বাবা, ও বাবা।

– হ্যা মা বলো?

– তুমি আমার কেক আনবে না?

– হ্যা আনবো তো।

– আর কখন আনবে। আমার সব বন্দুরা(বন্ধুরা) তো একটু পরেই চলে আসবে।

ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে কোলের ফাইল গুলো পাশে রাখলো শিশির। তোয়ালে টা বর্ষার হাত থেকে নিয়ে বর্ষার মাথা মুছে দিতে দিতে বললো,

– আমি আনবো না মা। মামা গিয়ে নিয়ে আসবে তোমার কেক।

– মামুজান যাবে। আচ্ছা বাবা তুমি তো আমাকে আজকে কিছু দিলে না। মামুজান আমাকে লিপিটিক মেক-আপ কিনে দিলো। পুপু আমাকে হালুৃম কিনে দিবে তুমি কি দিবে আমাকে।

– আমার প্রিন্সেস টার কি লাগবে?

– আমাকে দাজ থাকি আরেকটা লিপিটিক কিনে দিবা। লাল নঙের(রঙের)

– তুমি এতো লিপিস্টিক দিয়ে কি করবে মা। আম্মু শুনলে কিন্তু খুব মারবে।

-মাববে না।

শিশির হেসে দিয়ে নিজের ব্যাগ টা থেকে কিছু টাকার বান্ডিল বের করে রোদের সাথে আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রোদকে আলতো করে জড়িয়ে বললো,

– এ-ই টাকা টা রাখো তো রোদেলা।

– এতো টাকা!

– হ্যা এটা আলাদা প্রজেক্ট ছিলো সেদিন যে ট্যুরে গেলাম। ওখান থেকে প্রফিট আসছে আমার পারসোনাল।

– কতো আছে?

– পাঁচ।

– তা এতোগুলো টাকা ব্যাংকে রাখলেই তো হতো,বাড়িতে কেনো রাখতেছো।

– কাজ আছে,উজান এমনিতে নিজের পড়াশোনা সাথে হিয়ার টাও সামলাচ্ছে ওকে আর বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। উপরের তো ছাঁদ গুলো একা দিলো,বাকি কাজ টুকু এবার আমি সাড়বো ঠিক করছি।

রোদ টাকা টা নিয়ে ড্রয়ারে রাখতেই বর্ষা দু’জনের ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে দিয়ে চোখ পাকিয়ে বললো,

– এ-ই তোমরা ফিসফিস করে কি কথা বলচো। এ-ই আম্মু, আম্মু, বাবা তোমাকে কি রাখতে দিলো আমাকে দেকাও বলছি।

– না তোমাকে দেখতে হবে না। তুমি এখন এ-ই জামা টা নিয়ে ফুপুর কাছে যাবা,ফুফু মনে হয় গোসল করছে। বের হলে গিয়ে বলবা জামা পড়িয়ে দিয়ে মাথা টা দুই ঝুঁটি করে দিতে।

– না আমি এ-ই জামা পববো না।

– না পড়লে এরকম নেংটু থাকবা নাকি। জামা পড়ো ফুপু সাজিয়ে দেবে এখন সুন্দর করে।

– লিপিটিক দিয়ে দেবে?

– আর এ-ই মেয়ের লিপিস্টিক। এবার তোমার মেয়ের লিপিস্টিক কিন্তু আমি সব জানালা দিয়ে ফেলায় দেবো শিশির।

হেঁসে দিয়ে বর্ষাকে কোলে নিয়ে শিশির চুমু এঁকে বললো,

– আমি দিয়ে দেবো এখন লিপিটিক তোমার। আর তুমি এখনো কি দাঁড়িয়ে আছো রোদ। একটু পর মাগরিবের সময় হয়ে আসবে আর কখন গিয়ে গোসল করবা তুমি।

রোদ নিজের জামা কাপড় বের করে নিতে নিতে বললো,

– তোমার মেয়েকে গোসল দিতে তো সময় গেলো আমার। বড় আম্মুটাও গেছে বাহিরে তো এখনো নেই আজ। আর তুমি কি দুপুরের ভাত টাও সন্ধ্যায় গিয়ে খাবা। আমি যদি গোসল সেরে এসে দেখি না যে তুমি এখনো এগুলো তুলো নাই আমি কিন্তু সব তুলে আছাড় মারবো।

– আচ্ছা যাও তুলছি আমি সব।

– এখনই তুলো। উজানটা সকাল থেকে খাটছে একটু গিয়েও তো দেখে আসতে পারো।

!
!

এদিকে গোসল সেরে বের হতেই লতার ফোন আসলো হিয়ার ফোনে। তড়িঘড়ি করে লতার ফোন রিসিভ করলো হিয়া। ফোন ধরে লতা বললো তাড়াতাড়ি বাহিরে আয় তোর রিপোর্ট নিয়ে আসছি, উজান স্যার আছে বাবা আমি ভেতরে যাবো না। রিপোর্টের কথা শুনে বুকটা ধরফর শুরু হয়ে গেলো হিয়ার। কালকে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে দিয়ে আসছিলো সে,আর লতাকে বলেছিলো মেডিকেল থেকে ফেরার পথে নিয়ে আসতে রিপোর্ট টা। বাড়িতে এখনো কেউ কিচ্ছু জানে না এ বিষয়ে। উজানের ভয়ে সাহসো করে কিছু বলতে পারে নি তাকে হিয়া। আগে রিপোর্ট কি আসে তাই জানা হোক। বাহিরে আসতেই মুখে এক প্রফুল্লের হাসি টেনে লতা লাফিয়ে বললো,

– হিয়াআআ মেরি জান। congratulations ডার্লিং। রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। তুই মা হতে যাচ্ছিস হেবলি।

– তুই সত্যি বলছিস,আমি সত্যি সত্যি কনসিভ করছি আবার?

– হুম হুম,রিপোর্ট তো তাই বললো। আমি যে তোর জন্য এত্তো খুশি হইছি বিশ্বাস কর।

– আমি তো ভাবতেই পারছি না লতা যে আমি আবার। তুই জানিস না মা হওয়ার ইচ্ছে টা কতো ছিলো আমার। আর আজ সেটা।

– আচ্ছা শোন। এখন তুই স্যারকে কিভাবে বোঝাবি কি বলবি ভেবে নে। আমার মনে হয় না স্যার এ বিষয়ে তোকে আর কিছু বকাবকি করবে।

– আচ্ছা আমি আজকের অনুষ্ঠান টা শেষ হয়ে গেলেই ওকে বুঝিয়ে বলবো সব।

– আচ্ছা তাহলে আমি আসি এখন। রিপোর্ট গুলো ধর।

– ধন্যবাদ লতাপাতাআআ আমি যে কি খুশি হইছি না। আর এখন যাচ্ছিস যা একটুপর ভাইয়াকে নিয়ে কিন্তু সেজেগুজে সোজা চলে আসবি।

– হুম তুই যা আমি ফ্রেশ হয়ে ও ফিরলেই এসে যাচ্ছি।

লতাকে বিদায় দিয়ে রুমে আসলো হিয়া। বুকে হাত দিয়ে দেখলো হার্ট তার এতো জোরে আজ বিট করছে যে সব অনুভব করা যাচ্ছে। মন তো চাচ্ছে এখুনি গিয়ে উজানকে সব বলে দিক সে। একবার ছাঁদে গিয়ে উজানকে বলতেও চাইলো সবটা কিন্তু ডেকোরেশনের লোকদের সাথে উজানকে চিল্লাপাল্লা করতে দেখিই ভয়ে আবার টুক করে নিচে নেমে চলে আসলো হিয়া। না থাক আগে সব অনুষ্ঠান শেষ হোক,গেস্ট রা বিদায় নিক তারপরই রাতে ধীরেসুস্থে উজানকে জানানো যাবে। ফাইল গুলো আলমারিতে লুকিয়ে বর্ষাকে তৈরি করে দিলো হিয়া। জামা পড়িয়ে সুন্দর মতো দুই ঝুঁটি করে কিলিপ বসিয়ে একটা টিপ দিয়ে দিলো। এরপর নিজের শাড়ি মেকআপ সব নিয়ে নিজে সাজতে বসে পড়লো। আজ তো তার এতো আনন্দ হচ্ছে যে মনে হচ্ছে বউয়ের মতো সাজ দিক সে। কিন্তু না এতো কি আর সাজা যায়। তবু মন মানলো না হিয়ার। কি ক্ষতি এতো খুশির দিন আজ একটু না-হয় সেজেই নেই। এদিকে হিয়াকে এতো এতো সাজতে দেখে বর্ষা টুকুরটুকুর চোখে তাকিয়ে রইলো। আর হিয়ার সব মেক আপ গুলো বুলাতে বুলাতে বললো,

– হিয়া একটু লিপিটিক দিয়ে দে না।

– বর্ষা যা তো আপু দিয়ে দিলো না তোকে লিপিস্টিক, আর কতো দিবি।

– দে না তোর কালার টা সুন্দর,

– যা তো,ডিস্টার্ব দিস না।

– তুই এগুলা চোখে কি দিচ্ছিস আমাকেও একটু দিয়ে দে না।

– তুই ছোট মানুষ, এগুলা বড় মানুষ দেয়।

– তুই এই ফুল কোথায় দিবি,বল না?

– মাথায় দেবো শান্তি। আর কোনো প্রশ্ন করবি না। ভাগ।

বর্ষা খুতখুত করতে করতে হিয়ার আঁচল টান দিয়ে বললো,

– দে না হিয়া লিপিটিক দিয়ে। বাবুনি দেবো একটা তাইলে। দে না।

হিয়া বর্ষার হাতে দুটো লিপিস্টিক ধরিয়ে দিয়ে বললো একা একা দে। আমি সাজছি দেখতে পারছিস না। বর্ষা হিয়ার থেকে লিপিস্টিক নিয়ে সোজা দৌড় দিলো নিজের রুমে। আয়নায় দাঁড়িয়ে একা একা লিপিস্টিক ঠোঁটে দিতে কি যে আনন্দ ধরলো বাচ্চা টার মনে। বর্ষা তো মনের সুখে লিপিস্টিক ডলছে তো ডলছে। ওদিকে লিপিস্টিক ঠোঁট ছেড়ে পুরো মুখে লেপ্টে শেষ। শিশির গোসল সেরে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আয়নায় এসে দাঁড়িয়ে যেতেই বর্ষার দিকে চোখ পড়লো তার। মেয়ের কান্ডে হেঁসে দিয়ে রোদকে ডেকে আনলো শিশির। আর এসেই মেয়ের মুখের এই লাল নীল অবস্থা দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠলো রোদেলা। কি আশ্চর্য। লিপিস্টিক তো সব লুকিয়ে রেখেছিলো আবার আসলো কোথা থেকে এই মেয়ের হাতে।

বর্ষার হাত থেকে সব লিপিস্টিক কেঁড়ে নিয়ে আবারো ভেজা ত্যানা দিয়ে মুখ চোখ পরিষ্কার করে দিলো রোদেলা। লিপিস্টিক হাতে নিয়ে বললো,

– এটাই শেষ,এরপর লিপিস্টিক খেয়ে ফেললে কিন্তু আর দিয়ে দেবো না বর্ষা।

– আর খেয়ে ফেলবো না। দিয়ে দেও এখন।

– হুম উম করো তো ঠোঁট গুলো উম।

বর্ষা ঠোঁট উঁচু করে দিতেই রোদেলা সুন্দর মতো বর্ষাকে লিপিস্টিক দিয়ে দিলো। এরমধ্যে বাসবি এসে বর্ষা মা বলে ডাকতেই লাফিয়ে উঠে এক দৌড়ে বাসবির কোলে উঠে পড়লো মেয়েটা। আরে তার মামনি যে তার জন্য কতো কি নিয়ে আসছে আজ। ইশশ সবাই এতো ভালো কেনো তাকে এতো ভালোবাসে!
!
!
সন্ধ্যা তখন প্রায় আটটার কাছাকাছি, সব গেস্টরা এসে এক এক করে উপস্থিত। একটুপর কেক কাটা হবে। উজান বাদে বাকি সবাই তৈরি। হিয়া সেই কখন থেকে ডেকেই যাচ্ছে একটু গোসল টা তো অন্তত এসে করে যাও কিন্তু এই ছেলের তো যেনো কাজেই শেষ হচ্ছে না। সব ব্যবস্থা করে দিয়ে একবারে নিচে আসলো উজান। রুমে ঢুকে হিয়ার দিকে চোখ পড়তে চোখ আঁটকে গেলো তার। দরজার খিল আটকিয়ে হিয়াকে এসে জড়িয়ে ধরতেই রাগে খেঁকিয়ে উঠলো হিয়া।

– সাড়ো না। তোমার ভেজা গা। ধুর।

উজান হিয়ার নাকের সাথে নাক ঘষে নিয়ে বললো,

– ব্লাক কুইন সাজা হয়েছে দেখছি। তা শাড়ি পড়লে একটু দেখালেও না ডেকে।

– প্লিজ উজান। দেখো এখন এসব না হ্যা। আমি অনেক সুন্দর মতো সাজুগুজু করছি। এখন আর কিচ্ছু না।

– আরে এরকম না না করো কেনো সবসময়। গোসলে যাবার আগে একবার।

– তবা তবা,এই ভরা বাড়িতেও তোমার আদর করতে মন চায়, বেহায়া। যাও তো।

হিয়া উজানকে ধাক্কা দিয়ে একটা কালো স্যুট বের করে দিয়ে বললো,

– আজকে এটা পড়বা তুমি। দু’জনে কালো কালো পড়বো। সুন্দর না।

উজান হিয়ার হাত থেকে ওসব রেখে দিয়ে আবারো হিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। শাড়ির ফাঁকে হিয়ার কোমড়ে হাত ডুবাতে যে-ই একটু আদর করতে যাবে ওমনি লতার ডাক আসাতে চমকে উঠলো হিয়া। উজানকে তোয়ালে ছুঁড়ে দিয়ে বললো এক্ষুনি রেডি হয়ে আসো নয়তো রাতেও আদর কেনো আদরের অ ও না দিয়ে মা’র কাছে শুতে চলে যাবো হু। নিরুপায় হয়ে তোয়ালে হাতে গোসলে ঢুকে গেলো উজান জানে কিছু হইলেই এই মেয়ে এখন তার মায়ের কাছে গিয়ে ঘুম দেয়,মার সামনে ডাকতেও পারে না সে। বেড়িয়ে এসে একদম কালো স্যুটে নিজেকে সুন্দর মতো সাজিয়ে তুললো উজান। আয়নার সামনে হিয়ার একগাদা কসমেটিক পড়ে আছে দেখে বিরক্তও হলো কিছুটা,না এই মেয়ে যে এখনো এতো অগোছালো কেনো। নিজের প্রিয় পারফিউম টা খুঁজে না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠলো বেচারা। আলমারি থেকে নতুন পারফিউম বের করতে যাবে ওমনি সব আওরাতে গিয়ে হিয়ার শাড়ির ভাঁজ থেকে বেড়িয়ে আসলো সেই রিপোর্টের ফাইল। একটু অবাক চাহনিতে রিপোর্ট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো উজান। ফাইল খুলে সব ফাইল চেইক করতেই মাথা ঘুরে আসলো তার। এতো বড় একটা কথা হিয়া কি না তাকে না জানিয়ে হেলেদুলে বের হচ্ছে..!!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here