চোখের_তারায়_তুই? #পর্ব_০৪,০৫

0
974

?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_০৪,০৫
#ইভা_রহমান
০৪

শিশিরের এক হাত সজোরে টেনে নিয়ে একটা ফাঁকা ক্লাসরুমে ঢুকো পড়লো রোদেলা। বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা তাসফিয়া আর নিপাকে কি একটা ইশারা করে রুমের দরজা টা ধাম করে লাগিয়ে তেড়ে আসলো শিশিরের দিকে। রোদের চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার শরীর জুড়ে আগুনের লাভা ফুটে দাউদাউ করছে,যেই আগুন তার চোখ দিয়ে বেড়িয়ে ভষ্ম করে দিতে প্রস্তুত সামনের মানুষটাকে। রোদের এ-ই রাগের কারণ টাও শিশিরের অজানা নয়। তবে একটা শার্ট না পড়ে আসার জন্য যে এ-তো টা রেগে গিয়ে তার রোদ তাকে ভরা ভার্সিটিতে এরকম করে টেনে নিয়ে দরজার খিল লাগিয়ে দেবে এটা জানা ছিলো না তার। রোদ শিশিরের খুব কাছে এসে মিশে যেতেই পেছনের সীট বেঞ্চটায় ধাক্কা খেয়ে ওখানেই বসে পড়লো শিশির। রোদেলা শিশিরের দিকে ঝুঁকে আসলো,শিশিরের শার্টের কলার টা হাতের মুঠোয় চিপে নিয়ে দাঁত মুখ শক্ত করে খিঁচে দিয়ে বললো,

-বলেছিলাম না আমার দেওয়া জিনিস গুলো পড়ে আসতে,পড়ো নি কেনো?

শিশির কিছু বললো না,চুপ করে অপলক দেখতে লাগলো রোদকে,এতে যেনো রোদ আরো ক্ষেপে উঠলো,

-কি হলো কি,উওর দিচ্ছো না কেনো?

রোদ আর কিছু বলার আগে খেয়াল করলো শিশিরের হাতে ঔ সেই প্যাকেট টা। যেটায় ও শিশিরের জন্য কিনে রাখা শার্ট প্যান্ট গুলো পাঠিয়েছিলো,রাগ টা সপ্তমে গিয়ে ঠেকলেও অবাক হলো না রোদ। কারণ সে জানতো তার শিশির ঠিক এরকমই কিছু একটা করবে।

– তোমার মনে হয় তুমি ফেরত দিতে চাইলেই আমি এগুলো নেবো!হু। কখনোই না..তুমি..

রোদ আর কিছু বলার আগেই শিশির রোদের কোমড় জড়িয়ে তার বা পায়ের উড়ুতে রোদকে বসিয়ে নিলো। একটা ফু ছুঁড়ে দিলো রাগান্বিত রোদের পুরো মুখে। শিশির তার বা হাতে রোদের কোমড় শক্ত করে ধরে ডান হাতটা গুজে নিলো রোদের বা হাতের সাথে। শান্ত চাহনিতে বললো,

– কেনো আমাকে দূর্বল করতে চাইছো তুমি রোদ। আমাদের মাঝে কখনো কিচ্ছু সম্ভব না একটু বুঝো!

রোদ ওর ডান হাত টা শিশিরের বা গালে রাখলো। চাপা অভিমানের কন্ঠে বললো,

-তুমি আমাকে ভালোবাসো না শিশির?

শিশির একটা তপ্ত শ্বাস টেনে ধীর কন্ঠে বললো,

-ভালোবাসার আগে ভালোবাসার মানুষটাকে ভালো রাখা জরুরি রোদ। আর তোমাকে ভালো রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না। এই পৃথিবীতে অভাব বড্ড নিষ্ঠুরতম অভিশাপ রোদ। যা জীবনে থাকলে ভালোবাসার ঠাই হয়েও হয় না!

-আমি তোমার সব জেনেই তোমাকে গ্রহন করতে রাজি শিশির!

শিশির দু’জনের মুষ্টিবদ্ধ হাত দুটো উল্টো করে রোদের হাত টায় ওর ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,

– তুমি ছোট থেকে নরম গালিচায় ঘুমিয়ে বড় হয়েছে রোদ। আর আমি শক্ত ফ্লোরের একটা পাতলা গদির উপর। তাই অভাব যে কতো ভয়ানক তুমি তা কখনো উপলব্ধি করতে পারবে না রোদ। টাকার অভাবে মানুষ এমন এক জাতাঁকলে পিষে মরে যে সেখান থেকে কখনো আগের রুপে ফেরা তো অসম্ভব উপরন্তু যা অবশিষ্ট থাকে তা সব ধুলোয় মিশে যেতে দু সেকেন্ডও সময় নেয় না।

রোদ কিছু বললো না। ক্ষোভে মুষ্টিবদ্ধ হাত দুটো থেকে নিজের হাত টা ছাড়িয়ে দুহাতে শিশিরের গলা জড়িয়ে ধরলো,মুখ লুকালো শিশিরের কানের নিচে। শিশির চেয়েও রোদকে জড়িয়ে ধরতে পারলো না। একটা চাপা আর্তনাদ বাঁধ সাজলো জেনো,

– আমি বড়লোক ঘরের মেয়ে এটাই কি আমার ভূল শিশির!

শিশির এবার না চাইতেও রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে রোদের চুলের ভাঁজ দিয়ে রোদের মাথার কিনারে একটা চুমু খেলো,

– না রোদ ভূল টা আমার। ভূল টা এ-ই সমাজের!__দেখি এখন উঠো তো। এভাবে ক্লাস রুমে এগুলো ঠিক না। কেউ জানলে বাজে কথা রটবে। আর আমি চাই না আমার জন্য আমার রোদকে কেও বাজে কথা বলুক।

রোদ মুখ তুলে উঠে দাঁড়ালো। শিশিরের খুব ইচ্ছে করলো রোদের কপালে একটু ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে কিন্তু নিজেকে সংযত করে নিলো সে,

– এ-ই প্যাকেট টা নিয়ে যাও রোদ,

– তুমি রাখো আপাতত তোমার কাছে,আমি ক্লাস শেষে নিয়ে যাবো!

বলেই দরজা খুলে ক্লাস রুমের দিকে হাঁটা দিলো রোদ। সাথে ছিলো নিপা আর তাসফিয়া। তিনজনে গিয়ে সীটে বসতেই রোদ একটা ডেভিল টাইপ হাসি দিলো। রোদের এ-ই রহস্য সূচক হাসি দেখেই নিপা আর তাসফিয়া ভূ কুঁচকে তাকালো রোদের দিকে,নিজের কৌতূহল মেটাতে না পেরে নিপা জিজ্ঞেস করেই দিলো,

– তুই এই কাঁচি নিয়ে গিয়ে জিজুর সাথে ভেতরে কি করলি রোদ?

রোদ একটা হাসি দিয়েই নিপার কানে কানে বললো “কেটে দিছি”….চোখ বড় বড় করে তাকালো নিপা। কেটে দিছি মানে! কি কেটে দিছিস। হায় হায়। শিশির জিজুর মিডিল বডি আউট। তুই কি ডেঞ্জারাস মেয়ে রোদ। কিন্তু এখন!

রোদ ভূ কুঁচকে বললো “কি এখন?

নিপা বললো ” আরে তোদের ভবিষ্যৎ বাচ্চা কাচ্চা ওগুলো ডেলিভারি দিবি কি করে,বাচ্চার বাবা-ই যখন”

রাগ উঠলো রোদের। নিপার মাথায় বারি দিলো একটা ” গর্ধব! মিডিল বডি আউট করি নি। তোদের জিজুর শার্ট ছিঁড়ে দিছি। আমার দেওয়া জিনিস পড়বে না। দেখবো এখন কেমন ছেঁড়া শার্টে ক্লাসে ঢুকে হু”

রোদ যখন অভিযোগের ভাবে শিশিরকে জড়িয়ে ধরে তখনি কায়দা করে শিশিরের পেছনের পুরো শার্ট ছিঁড়ে দেয়। তার উদ্দেশ্য এ-ই দু বছর আগের বোতাম ছিঁড়ে যাওয়া শার্ট গুলো এক এক করে শিশিরের রুম থেকে তো দূর জীবন থেকেই আউট করে দেওয়া। আর তাতে সফলো হয় রোদ। গ্রামীন চেকের লাল কালো নতুন শার্ট টা গায়ে জড়িয়ে ক্লাসে ঢুকে হাতে থাকা ফাইল টা স্বজোরে টেবিলে ছুঁড়ে মারে শিশির। নিজ জায়গায় বসে পড়তেই চোখ টা বন্ধ করে নেয়। রাগে কপালের রগ গুলো তিরতির করে কাঁপছে তার। সাথে কাঁপছে সারা শরীর। সে রোদকে অভাবের সারাংশ বুঝিয়ে বলছিলো আর রোদ কিনা তাকে ভালোবাসার সম্প্রসারণ পড়িয়ে দিলো..!!❤️

চোখ খুলে রোদের সীটের দিকে তাকাতেই দেখলো রোদ তার দিকে তাকিয়ে একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিচ্ছে। সাথে রোদের পাকা পাকা চাহনি আরো শরীর জ্বালিয়ে দিলো শিশিরের। পাশের সীটে বসা রনি,শিশিরের কাঁধে হাত দিয়ে হেঁসে দিলো,শিশির ভূ কুঁচকে রনির দিকে তাকাতেই সে বললো” মামা নতুন শার্ট নাকি,gentle park এর ট্যাগ টাও খুলো না-ই দেখছি। না দেখাতে চাইছো ব্রান্ডের জিনিস পড়ো,কোনটা?” আরো রাগ বেড়ে গেলো শিশিরের৷ রনি মজা করে কথা টা বললেও শিশির রাগে ট্যাগ টা এক টানে ছিঁড়ে রোদের দিকে ঘুড়ে তাকালো। রোদ শিশিরের চোখে রাগের তীব্রতা দেখা মাএই হালকা হেঁসে দিলো। নিজের ঠোঁট জোড়া উঁচু করে হাওয়াতে একটা চুমু ছুঁড়ে দিলো শিশিরের দিকে। রোদের এমন কান্ডে আরো রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠলো শিশির। কিছু বলতে যাবে তার আগে ক্লাসে স্যার এসে উপস্থিত হলো। পড়াতে শুরু করলো স্যার। পড়ার মাঝে সবার মন বসলেও শিশিরের মন আঁটকে রইলো রোদের উপর। এতোক্ষণ রোদকে খেয়াল করা হয় নি তার। হালকা লেমন রঙ টাও মেয়েটার গায়ে এতো মানালো কি করে ভেবে পায় না শিশির। ঠোঁট দিয়ে কলম কামড়ে স্যারের লেকচার শুনতে মগ্ন রোদ। এদিকে শিশির মগ্ন তার প্রেয়সীকে দু চোখ ভরে দেখতে। একটু আগের ঘটনা গুলো মনে আসতেই এবার রাগ না বরং হাসির রেখা ফুটে উঠলো শিশিরের ঠোঁটের কানিতে। কেনো ভালোবাসে মেয়ে টা তাকে এতো। কেনো? কিছুই যে নেই তার। সে যে পুরো নিঃস্ব..!!

!
!

গালে হাত দিয়ে লতা,পারুল,মোহিনী,রুপা আরো যারা পাশাপাশি বসে আছে সবার বকবক শুনছে হিয়া। আজ হিয়ার পেটের ছুঁচো টা বড্ড নাচানাচি করে বের হচ্ছে বিধায় ক্ষিদের চোটে মুখে কথা ফুটছে না হিয়ার। তাই সীটে হাত ভর করে সবার পাকা পাকা গল্প শোনায় ব্যস্ত হিয়া। হঠাৎই কোথায় থেকে দৌড়ে এসে তিশা ধপ করে হিয়ার পাশে বসে গিয়েই বুকে হাত রেখে জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিতে লাগলো,সবাই তড়িঘড়ি করে তিশাকে ঘিরে জানতে চাইলো কি হয়েছে ওর,এরকম করছে কেনো ও!

– বুকে ব্যাথা,খুব ব্যাথা,ইসস

হিয়া তিশাকে ধরে চিন্তিত গলায় বললো কোথায় ব্যাথা এদিকে ,ভালো করে বল কোথায় ব্যাথা,এ-ই পাতার বাচ্চা লতা দাঁড়িয়ে দেখছিস কি ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে হবে তো ওকে নাকি,

হিয়া’র কথামতো লতা যেতে ধরবে ওমনি তিশা লতার হাত ধরে লতাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

– এ-ই ব্যাথা ডক্টর সারাতে পারবে না লতা। এটা যে প্রেমে পড়ার ব্যাথা!

সবাই বড় বড় চোখে তাকিয়ে উঠলো তিশার মুখের দিকে,মানে কি বলতে চাইছে কি এ-ই মেয়ে!

– দোস্ত,উজাজাজাজানননন স্যারকে আজ যা লাগছে না। আমার কাছে যদি ডোরেমনের কোনো গ্যাজেট থাকতো আমি একদিনের জন্যে হলেও লোকটাকে বিয়ে করে দেখতাম,ব্যাটা এতো হট কেমন হইলো ভাই,পোষাক পড়েই এমন পোষক ছাড়া না জানি,উফফ!!

লজ্জায় হিয়ার বুকে মুখ লুকিয়ে নিলো তিশা। এদিকে এতোক্ষন তিশাকে ধরে থাকা হিয়া রেগে উঠে এক ধাক্কাতে তিশাকে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেললো। দাঁতে দাঁত চিপে কিছু একটা বলতে যাবে ওমনি তনু এসে হিয়ারই কানের কাছে সাধলো,

– দোস্ত আজকে লাল পাঞ্জাবিতে উজান স্যারকে যা লাগছে না। স্যার তো বরাবরি লাইট কালার পড়ে তবে মনে হয় কোনো ফাংশন আছে আজ,তাই লালে পুরো স্ট্রবেরি বানিয়েছে নিজেকে,যদি একটা বাইট দিয়ে কামড়ে খেতে পারতাম!

তিশা ফ্লোরের সাথে থাকা পিলারে হেলান দিয়েই ভাবলেশহীন ভাবে বললো,

– এ-ই পোলা তো পোলা নয় আগুনের গোলা তনু আগুনের গোলা। আই রিয়্যালি নিড মমতাজ আন্টিজ দিস সং রাইট নাও!

পাশ থেকেই মোহিনী এবার বলে উঠলো,

– আমার তো সেই প্রথম দিনেরই ক্রাশ ছিলো ঔ পোলা, স্যাররে যখনি দেখতাম তখনি শুধু মনে একটাই গান বাজতো তু চিজ বারি হে মাস্ত মাস্ত তু চিজ বারি হে মাস্ত!

তনু আবার দীর্ঘ শ্বাস টেনে বললো,

– না দোস্ত আজকে তো ওনারে দেখলে শুধু মনে একটাই গান বাজতিছে “রসিক দিলকা জ্বালা ওই লাল কুর্তাওয়ালা

দিলি বড়ো জ্বালা রে পাঞ্জাবিওয়ালা
দিলি বড়ো জ্বালা রে পাঞ্জাবিওয়ালা”

সবার এ-ই গানের আন্দাকসারি দেখে রীতিমতো বোকা বনে গেলো হিয়া। তার উজান বিদ্বেষী মনকে যে এই উজান পাগল ফ্যানডম কিছুতেই মেনে নিবে না তা বুঝে আসতেই হিয়া নিজেই কেটে পড়লো সেই রাস্তা থেকে। না এই অশ্লীল ফ্রেন্ডগুষ্টির মাঝে থেকে নিজের পাপ বাড়ানোর কোনো মানে হয় না,কোনো না। অন্য সীটে গিয়ে বসে পড়তেই দেখলো কার জানি একটা দশটাকার ড্রাইকেকের প্যাকেট সামনে তাকিয়ে তাকে হাই বলছে। তাও আবার হেঁসে হেঁসে বলছে। পেট টা শান্ত না হলেও মনটা খুশিতে ভরে উঠলো হিয়ার। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সম্পত্তি আছে ঠিকই কিন্তু মালিকানার দাবিদাওয়া এ-ই মুহুর্তে কেউ নেই। তাই সব কিছুকে তুচ্ছ করেই প্যাকেট টা খুলেই ভেতরের কেক টা টপাটপ মুখে দিতে লাগলো হিয়া। যাগ পেটের ছুঁচো টা একটুক্ষণের জন্য হলেও তো শান্ত হবে। আপনমনে খুব স্বাদ করেই কেক টা মুখে পুড়ছিলো হিয়া। ঠিক তখনি এক গাদা খাতা হাতে রুমে ঢুকলো উজান। সবার তো উজান নামক আগুনের গোলা টাকে থুক্কু পোলাটাকে দেখেই দম বন্ধ হয় হয় এবার হিয়াও খেতে খেতে উজানের দিকে তাকাতে ৪৪০ ভোল্টের ঝাটকা খেয়ে কেক খাওয়া ভুলে গিয়ে থমকে বসে। আজ সত্যি উজানের থেকে চোখ ফেরানো মুশকিল হয়ে পড়ছে। লাল পাঞ্জাবি সাদা চুড়িদার,হাতে ব্লাক ঘড়ি,চুল গুলো হালকা উষ্কখুষ্ক,বোঝাই যাচ্ছে সবে গোসল করে আসলো হয়তো। আর তাতেই যেনো সবাই একটা জলন্ত লাভা দেখতে পাচ্ছে। যেই লাভা যে কোনো নারীমনকে হালকা হলেও ঝলসে দিতে সক্ষম। হিয়া না চাইতেও এবার হিয়ার মুখ দিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বেড়িয়ে আসে” তু চিজ বারি হে মাস্ত মাস্ত তু চিজ বারি হে মাস্ত”…….হুঁশে ফিরতে নিজেই নিজের কান্ডে ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে হিয়া। তার চিরশত্রুকে সে কি না এভাবে মাস্ত মাস্ত বলছে। রাগে নিজের চুল খামচে ধরলো হিয়া। নিজের মন কে বোঝালো হ্যা লোকটা আগুন না বারুদের গোলা। যখনতখন তোর উপর হামলা করে দিতে সক্ষম। তাই এর থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ খুব খুব নিরাপদ।

পরীক্ষার খাতা গুলো সবার মাঝে বন্টন করে দিয়ে উজান বেড়িয়ে আসলো৷ না আজ আর সে ক্লাস করাবে না। হিয়া যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কিন্তু তা যেনো বেশিক্ষণের জন্য না। কোচিং ছুটি হতেই সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো হিয়া।হিয়ার সামনে ছিলো লতা আর রুপা,হিয়া পেছনে। হঠাৎই কারো হাতের টানে সেকেন্ড ফ্লোরের একটা রুমে এসে আঁটকে গেলো হিয়া। কিছু বলে চিৎকার করার আগেই সামনের মানুষ টা তার মুখে হাত দিয়ে ব্লাকবোর্ডের কাছে হিয়াকে চিপে ধরলো। ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলেও পর মুহুর্তে চোখে খুলে তাকাতেই দেখলো সামনের মানুষটা আর কেউ না তার সাদা বিলাই!

উজান হিয়ার মুখ থেকে হাত নামিয়ে নিলো,হিয়া অবাক সুরে বললো,

– উজান স্যার আপনি!

উজান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বুড়ো আঙ্গুলে নিজের থুঁতনির একদিক টা দু’বার ঘষে নিলো,

– উ–জা–ন স্যা–র(টেনে টেনে)…এখন উজান স্যার কিন্তু তার আগে____ সাদা বিলাই,হিটলার,জল্লাদ,আর কি যেনো ছিলো একটা___ওহ রাম গরুরের ছানা! তাই তো মিস মুননতাআআসীর?

হিয়া ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো,বুঝতে পারলো আজ আর তার রক্ষে নেই। এতোদিন যতো টা যা করেছে আজ এ-ই বন্ধ রুমে উজান তার সব প্রতিশোধ তুলবে,সব। দু’হাতে নিজের ওড়নার দু পাশ টা খিঁচে ধরলো হিয়া। ভয়ার্ত সুরে বললো,

– আমি আমি তো ওগুলো আপ আপনাকে বলিনি। রোদ আপুর আরেকটা ভাই আছে না সিয়াম ওনাকে বলেছি,বিশ্বাস করুন,

উজান একটা ডেভিল টাইপ হাসি দিয়ে হিয়ার মুখের কাছে তেল লাগা শার্ট টা তুলে ধরলো,

– বিশ্বাস করলাম কিন্তু এ-ই শার্টে এ-ই তেল টা!

হিয়া আবার শুকনো ঢোক গিললো,মনে মনে এটাই ভাবলো তাহলে কি উজান বুঝে গেছে যে এ-ই দাগটা..

– প্রথমে স্যারকে রোজ রোজ নিত্যনতুন নাম দেওয়া,স্যারের শার্টে দাগ বসানো, স্যারের সাথে রং নাম্বারে মজা করা,সবার সামনে স্যারের নকল করা,আবার জানতে চাইলে মিথ্যে বলা।

কথা গুলো খুব ঝাঁঝালো আর গম্ভীর কন্ঠেই বলে উজান,আর বলেই সামনের ব্লাকবোর্ড টায় একটা ঘুষি মারে। এতে হিয়া আরো ভয়ে কুঁকড়ে উঠে চোখ বন্ধ করে আর তৎক্ষণাৎ ওর দু’হাত কানে জড়িয়ে বলে,

– আর কখনো এরকম ভূল করবো না। এবারের মতো মাফ করে দিন। প্লিজ প্লিজ প্লিজ..

হিয়াকে চোখ বন্ধ করে কান ধরে দাঁড়িয়ে নিজ মনে বকবক করতে দেখে উজান ওর ঠোঁটের কোণে একটা মুচকি হাসি দিলো,উজানকে বেশ খানিকক্ষন কিছু না বলতে দেখে হিয়া ভয়ে ওর এক চোখ খুলে সামনে তাকাতে গিয়েই দেখলো উজান নিচে তাকিয়ে হাসছে। কি হলো কেস টা। সাথে সাথে আরেক চোখ খুলে নিলো হিয়া। উজান স্যার হাসছে কেনো। তারমানে হিয়াকে জব্দ করতে! রাগ উঠলো হিয়ার খুব। উজানকে সারিয়ে যেতে নিতেই উজান আবার হিয়াকে আঁটকে দিলো। ব্লাকবোর্ডের দু পাশে বেষ্টন করে হিয়াকে তার দু হাতের মাঝে বন্দি করে নিলো,

– ছাড়ুন আমাকে,আমি বের হবো।

– পানিশমেন্ট না দিয়েই ছেড়ে দেবো,কি করে ভাবলে এটা!

– তাহলে তো পানিশমেন্ট আপনারো হওয়া উচিৎ। এভাবে নিজের স্টুডেন্টকে একটা বন্ধ ক্লাস রুমে আঁটকে রেখে নিশ্চয় পূর্ণ্যের গান গাইছেন না আপনি। আমি একটা চিৎকার করলে কি হবে জানেন!

– করো চিৎকার,আই উইল ম্যানেজ,

রাগে গা টা তিরতির করে উঠলো হিয়ার। উজানের বেষ্টন ছাড়িয়ে যেতেও পারছে না এমন। উজান হিয়ার পেছনে দু হাত দিয়ে নিজের শার্ট টা হিয়ার পিঠে মেলে দিলো,শার্টের হাতা দুটো হিয়ার গলার সামনে নিয়ে এসে একটা সুন্দর গিট্টু দিতে দিতে বললো,

– আমার শার্ট একদম নীট এ্যান্ড ক্লিন চাই। নয়তো পানিশমেন্ট কতো ভয়ানক হতে পারে তা তুমি জানো না হংস্রীনি সরি হিয়া মুনতাসীর!

রাগে কটমট করে উজানের দিকে তাকিয়ে হিয়া বললো,

– আমাকে হংস্রীনি বলে ডাকবেন না, এই হংস্রীনির দংশন কতোটা ভয়ানক আপনি তা জানেন না।

উজান হিয়ার কথা শুনে হেঁসে দিলো। বয়সের তুলনায় একটু বেশি বলছে যেনো হিয়া। উজান হিয়ার দিকে ঝুঁকে হিয়ার পুরো মুখে একটা ফু ছুঁড়ে দিলো আর বললো,

– আগে ফোঁস ফোঁস করা তো বন্ধ করো তারপর না দংশনের চিন্তা করবে!

হিয়া উজানকে ধাক্কা দিলো। উজান পড়ে যেতে গিয়েও সামলে নিলো নিজেকে। হিয়া দরজার দিকে যেতে যেতে বললো,

– এখন তো ফোঁস ফোঁস করছি সময় আসলে শুধু দংশন না, বিষ ছিটিয়ে দিয়ে আপনার নেশা ধরিয়ে দেবো উজান স্যার! (সাথে রাগ মিশ্রিত মায়াবী হাসি)

হিয়া চলে যেতেই উজান নিজের এক ভূ উপরে তুলে মাথায় হাত রেখে একটা মুচকি হেঁসে দেয়,

– চিন্তা নেই পিচ্চি,আই উইল ট্রিট দ্যাট আ লাভ বাইট এ্যান্ড ওলসো ট্রিট আ ম্যাজিকাল এ্যাডিকশন ওর আ লাভ ভেনম!❤️

!
!

শার্ট হাতে বাথরুমে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছে হিয়া। একটা গোটা দশ টাকার সার্ফএক্সেল এ চুবিয়ে রাখছে শার্ট সহ নিজের হাত দুটোকে। আর গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে রগরে রগরে ঘষছে পুরো শার্ট টাকে। যেনো গায়ের যতো জ্বলুনি আছে তা মিটিয়ে নিচ্ছে এ-ই নিষ্পাপ শার্ট টার উপর। এক সময় তো ইচ্ছে হচ্ছিলো পা দিয়ে কচলে নিক শার্ট টা কিন্তু পর মুহুর্তে হিয়া থেমে গেলো নিজ মনে ভাবলো” না এটা করা উচিৎ হবে না। হাজার হোক স্যার মানুষ। সম্মানের জিনিস। তাকে এভাবে পা দিয়ে অসম্মান করা টা সত্যি তাকে মানায় না,উম হুম” শার্টটাকে টানা আধা ঘণ্টা ধুইয়ে শান্ত হলো হিয়া। সেটাকে শুকিয়ে নিয়ে নিজ হাতে আয়রন করে একদম নতুন ঝকঝকে তকতকে বানিয়ে সুন্দর মতো গুছিয়ে নিলো সে। শার্টের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো হিয়া,পর মুহুর্তে কি একটা ভেবে রহস্য সূচক হাসি দিয়ে নিজ মনে হিয়া বললো ” আমাকে দিয়ে শার্ট কাচিয়ে নিলেন তো উজান স্যার,এবার এ-ই হংস্রীনির থাবা টা যে কতোটা ঘাড়েল করতে পারে তাই দেখবেন আপনি!

চলবে….

?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_০৫
#ইভা_রহমান

তোয়ালে টা কাঁধে নিয়ে বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে হিয়া বলে ডাক দিতে থাকলো শিশির। ভাইয়ের ডাকে হাতে থাকা গল্পের বই টা বন্ধ করে চড়ুই পাখির মতো তুড়ুৎ করে নিজের বিছানা থেকে দৌড়ে আসলো হিয়া। হালকা বিরক্তি নিয়ে বললো,

– কি হয়েছে টা কি,এভাবে ষাঁড়ের মতো ডাকছিস কেনো,আমি গল্পের বই পড়ছিলাম না।

– আর পড়তে হবে না,আমি গোসলে যাচ্ছি,উজান আসলে গেট টা খুলে দিস,

কপালে ভাঁজ এঁটে হিয়া বললো” সাদা বিলাই টা আবার কি করতে কি আসছে বাড়িতে” শিশির দরজা লাগাতে লাগাতে বললো ” কি করতে আসছে তোর ওতো না ভাবলেও চলবে,যা করতে বলেছি সেটা কর” শিশির দরজা লাগিয়ে দিতে হিয়া কপট রেগে গিয়ে নিজের রুমে ঢুকতে যাবে ওমনি কি একটা মনে করে দাঁড়িয়ে গেলো। একটা ডেভিল সূচক হাসি ফুটে উঠলো হিয়ার ঠোঁটের কোণে। একটু পরেই সেটা বিজয়’ই হাসি তে রুপান্তর হতেই হিয়া পেত্নী গুলোর মতো হি হা হা করে উঠলো। হিয়ার হাসির ধরন দেখে বুঝাই যাচ্ছে এরপর একটা মহাবিপদ ধেয়ে আসছে উজানের আকাশ জুড়ে!

কিছু সময় বাদে উজান এসে দরজার গ্রীল ধরে ডাকতেই হিয়া চাবি নিয়ে এসে গেট খুলে দিলো। এমন ভাব ধরলো যেনো সামনের মানুষটাকে সে দেখেও দেখছে না এমন! তালা খুলে দিয়েই রুমে আসলো হিয়া। গেট টা যে খুলে উজানকে ভেতরে ঢুকাবে আজ সেটাও করলো না সে। উজান ভূ কুঁচকে নিজেই ছিটকিনি টা খুলে আবার তালা টা লাগিয়ে রুমে আসলো। হিয়াদের বাড়িটা এমন যে বারান্দার গ্রীল খুলে দিলে হাতের বা দিকে দরজা আর দরজা দিয়ে ঢুকতেই প্রথমে পড়ে ড্রয়িং রুম। ড্রয়িং রুম পেরুলে ডাইনিং,ডাইনিং এর ডান সাইডে পর পর হিয়া আর শিশিরের রুম। আর বা সাইডে বড় দুটো রুম। যেটায় চাচা চাচি থাকে আরেকটায় থাকে হিয়ার দাদি।

দরজা পেড়িয়ে রুমে ঢুকতেই উজানের চোখ পড়ে সোফায় বসে থাকা পান হাতে দাদির উপর। ওনাকে সালাম নিবেদন করে উজান ওনার কাছে গিয়ে বসতে দাদি পান রেখে দু হাতে বুলিয়ে দেয় উজানের পুরো মাথা, উজান দাদির পানের কৌটা হতে একটা সুপারির ফালা নিয়ে চিবোতে চিবোতে বলে,

– কি গো দাদি,শুকায় গেছো কেনো এমন। ঠিক মতো ঔষধ নেও না?

– ঔষধ তো নেই বাজান কিন্তু শরীর কি আর এতো ঔষধ নিতে পায় ক দেখিনি।

উজান শ্বাস ফেলে বললো হু,সাথে এপাশ ওপাশ দেখে নিয়ে পকেট থেকে খয়েরী রঙের ওয়ালেট টা বের করে খুচরো একশো টাকার তিনটে কচকচে নোট বের করে দাদির হাতে চুপ করে গুঁজে দিলো,

– পান তো দেখছি বেশি নাই,কিনে নিও,কিন্তু জর্দা কিন্তু ভুলেও মুখে দিবা না বুঝছো!

দাদি হেঁসে দিয়ে আবারো উজানের মাথায় বুকে হাত বুলিয়ে দোয়া দিলো,উজান আর শিশির ছোট থেকেই এরকম ছিলো যে, শিশির তো দাদিকে দিতো দিতোই সাথে উজান যখনি এ বাড়িতে আসতো দাদির জন্য দশ টাকার একটা চকলেট হলেও নিয়ে আসতো। বড় হবার সাথে সাথে যখন বুঝে আসলো দাদির চকলেট না অন্য কিছুরো প্রয়োজন আছে তখন হতেই উজান চুপিসারে যা পারে তাই দাদির হাতে গুঁজে দিয়ে যায়। দাদিও উজানকে কখনো পর করে দেখেন নি। শিশির হিয়া সহ আর নাতি নাতনি গুলোর মতোই তাকে ভালোবেসেছিলেন। উজানদের মতো উচ্চবিও পরিবারে তো পান্তা ভাত খুব একটা চলে না তাই এ-ই বুড়ি দাদির হাতে পান্তাভাতের রসালো স্বাদ নিতে হলেও দাদির কাছে ছুটে আসতো উজান। দাদিও খুব যত্নভরেই সবার পেট জুড়ে তৃপ্তি আনতো।

দাদির থেকে আরেকটা সুপারি নিয়ে ডাইনিং পেড়িয়ে শিশিরের রুমে আসতেই বাধলো সর্বনাশ। গেটের কাছে ডান পা ছিলিপ কেটে ব্যালেন্স হারিয়ে ধপাস করে পড়ে গেলো উজান,আহ চিৎকার কানে পৌঁছাতে দাদি সব কিছু রেখে যত দূত সম্ভব পা চালিয়ে উজানের কাছে আসতেই এবার বিপদের চাইতেও ঘটলো মহাবিপদ। উজান তো পড়েছে পড়েছে সাথে দাদিরো পা ছিলিপ কেটে যায়,যদিও দাদিকে বসা অবস্থায় সামলে নেয় উজান। দৌড়ে আসে হিয়া। একটু আগের আহ চিৎকার শুনে যেই হাসিটা মুখে এঁকেছিল নিমিষে সেটা ভয়ার্ত হয়ে ভেসে উঠলো তার! উজানকে জব্দ করতেই তো হিয়া মেঝেতে তেল ছড়িয়ে দিয়েছিলো সেকি আর জানতো দাদিও তার এ-ই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলবে। তোয়ালে হাতে মাথা মুছতে মুছতে রুমে আসতেই থমকে গেলো শিশির। কি করছে কি এরা তিনজন নিচে বসে। হিয়া কোনোমতে দাদিকে ধরে দাঁড় করালো। উজান উঠতে পাচ্ছে না। পায়ের গোয়ালির কাছে সত্যি একটা বড়সড় মোচ খেয়েছে সে। শিশির এসে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে উঠলো উজানকে ওঠানোর জন্য। এদিকে তো শিশিরকে দেখেই হিয়ার বুক চুপসে গিয়ে কুক কুক করে উঠতে লাগলো।

– দাঁড়িয়ে দেখছিস কি হিয়া,বরফ নিয়ে আয়।(ধমকের কন্ঠে)

শিশিরের ধমকে শুকনো ঢোক গিললো হিয়া। দাদিকে সাবধানে সামনে ডাইনিং এর একটা চেয়ারে বসিয়ে ফ্রীজ থেকে বরফ বের করে দূত পায়ে দরজার দিকে এগোতেই এবার নিজেও হালকা তেলে পা হরকে ফেললো। তবে দরজার সিক ধরে নিজেকে সামলে নিলো সে। কিন্তু হাতে থাকা বরফের বাটিটা ব্যালেন্স হারিয়ে সোজা গিয়ে টুপ করে পড়লো উজানের মাথার উপর(বুম বুম বুম) রাগে চোখ বন্ধ করে দাঁত মুখ খিচালো উজান। হিয়া ভয়ে কেঁপে উঠে দরজার পর্দা চিপে ধরলো, শিশির রেগে গিয়েও হিয়াকে পাওা না দিয়ে উজানকে দেখতে থাকলো। কিছুক্ষণ বরফ ডোলে দিয়ে উজানকে এনে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয় শিশির। খুতিয়ে খুতিয়ে দেখতে থাকে আর কোথাও লেগেছে কি না।

– আমি ঠিক আছি শিশির। যা তুই রেডি হ তাড়াতাড়ি।

– এ-ই পা নিয়ে তুই কি করে..

– বললাম না তোকে আমি ঠিক আছি,যা।

হিয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টি ছুড়ে শিশির রুমে গেলো শার্ট চেঞ্জ করতে। চেঞ্জ শেষে উজানকে নিয়ে বারান্দায় এসে তালা খুলতে খুলতে শিশির গম্ভীর কন্ঠে হিয়া বলে ডাক দিলো। হিয়া শূন্য বুকে শিশিরের সামনে এসে দাঁড়াতেই মাথা নুইয়ে নিলো,

– একটা বার এটা ভাবলি না দাদি বয়স্ক মানুষ যদি তোর এ-ই ছেলেমানুষীর জন্য ওনার আজ..

– ভাইয়া আমি..

-একদম এখন মিথ্যে বলবি না যে ঔ তেল গুলো তুই ভুল করে মেঝেতে…রাতে বাড়ি আসি আজ!

এ-ই শেষ কথাটা “রাতে বাড়ি আসি আজ” হিয়ার সারা দিন টাকে মাটি করে দেবার জন্য যথেষ্ট ছিলো। হিয়া জানে তার ভাই যেমন তাকে সব আদর দিয়ে বাদর বানিয়েছে তেমনি বাঁদরের বাঁদরামি কিভাবে আয়ওে আনতে হয় সেটাও তার ভাইয়ের ভালো করে জানা আছে। শিশির তালা খুলে হিয়ার দিকে বাড়িয়ে ধরলো,হিয়া কাঁপা হাতে তালা চাবি নিতে সাহস করে সামনে তাকাতে গিয়ে দেখলো উজান নিচে তাকিয়ে মিচকে দিয়ে হাসছে। শিশির হিয়াকে শাষালো ব্যাপারটায় যেনো বেশ মজা পাচ্ছে উজান! দাঁতে দাঁত চিপে সবটা সহ্য করে নিলো হিয়া!

!
!

তার দুদিন পর,

ডাইনিং এ পাশাপাশি বসে গরম ভাত আর মুরগির মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলো উজান আর শিশির, আসলে দু’জনে আজ ছোট চাচার এক কাজে ঔ রাহাত বলে ছেলেটার মামার হেইড অফিসে আবার গিয়েছিলো, তা-ই ছোট চাচির অনুরোধে উজান রাজি হয় দুপুরে এখানে খেতে। যদিও আগে প্রায়ই প্রায়ই এ বাড়িতে খাওয়া হতো তার তবে এটা অনেক দিন পর। চাচি উজানের পাতে শাক ভাজি তুলে দিতে দিতে বললো,

– উজানদের বাড়িতে তো দেশি ছাড়া রান্না হয় না, তা লেয়ার মুরগী খেতে কষ্ট হচ্ছে না তো উজান?

– না চাচি আপনি ভালোবেসে খেতে বলেছেন এটাই যথেষ্ট,,,দাদি খাবে না?

– তোমরা খাও উনি আসছে,তসবিহ গুনছে দেখলাম।

– ওহ!

– শিশির তোকে দেবো আরো কিছু?

– না চাচি,শাক ভাজি টা আজকে যা মজা হয়েছে বিশ্বাস করো। হিয়ার সামনে এনো না। রাতে তাহলে আর পাওয়াই যাবে না..

চাচি হেঁসে দিয়েই বললো চুপ,বদমাইশ। ভাই হয়ে বোনের খাবারে নজর দিচ্ছে দেখো।

হঠাৎই খাবার মাঝে বাহির থেকে কারো উচ্চ আওয়াজ কানে পৌঁছাতে থেমে গেলো শিশির। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তারই নাম ধরে কেউ ডাকছে। চাচি আওয়াজ শুনেই বুঝলো এটা সালেহা আপার গলা। কিন্তু সালেহা আপার আবার কি দরকার শিশিরকে তাও আবার এ-ই ভর দুপুরে। চাচি শিশিরকে বললো তোরা খা। আমি গেট খুলে দিয়ে দেখছি আপা কেনো তোকে ডাকছে। চাচি গেইট খুলে দিতেই হিয়া সহ সালেহা আপা এসে দাঁড়িয়ে গেলো শিশিরের সামনে। শুরু হলো তার বিচার দেবার প্রথম ধাপ।

– এলাকায় তো আরো মেয়ে আছে কোথায় তাদের নিয়ে তো কারো এতো সমস্যা হয় না। কিন্তু তোর বোন…… বলটা সোজা এসে আমার থাইয়ে লাগছে,আর সাথে সাথে কাঁচ টা.. আচ্ছা যদি থাই টা বন্ধ না থাকতো। বল টা এসে তো আমার ঘুমন্ত বাচ্চা টার মুখে পড়তো। একটা বার ভেবেছিস সে কথা____না মানুষের তো একটা খেলার সময় থাকে এ-ই ভর দুপুরে,আর তোর বোনকি এখনো ছোট বাচ্চা। মাধ্যমিক দিয়ে কিছুদিন পর কলেজে উঠবে এ বয়সে এসে এসব মানায় ওকে। তুই ভাই হয়ে বারন করতে পারিস না একটু..

লজ্জায় রাগে চুপচাপ সালেহা আপার সব অভিযোগ শুনছে শিশির। এটা নতুন কিছু না। এরকম অভিযোগ এরকম নালিশ হিয়ার জন্য তাকে প্রায় প্রায় শুনতে হয়। তাই মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া তার আর উপায় টাও বা কি। এদিকে ভয়ে দুহাত পেছনে দিয়ে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে হিয়া৷ মনে হচ্ছে সালেহা আপার মুখ টা কসটেপ দিয়ে বন্ধ করে দিক সে। এরপর যে আরো কি মুখ দিয়ে বিষ বের হবে কে জানে!

– এর গাছের ফল পেড়ে খায়,ওর বাড়ির ফুল চুড়ি করে এগুলো কোন ধরনের স্বভাব। মানছি বাবা মা ছাড়া তোর পক্ষে ওকে একা হাতে মানুষ করা সহজ না তাই বলে….

আরো হাজারটা কথা শুনিয়ে সালেহা আপা চলে গেলো। ছোট থেকে সবাই অভিযোগ দিলেও কখনো কানে তুলে নি শিশির। কিন্তু আজকে কেনো জানি সালেহা আপার কথা গুলো হজম করতে পারলো না শিশির। অনেকদিন বাদে আজ হিয়া তার ভাইয়ের এ-ই অগ্নিরুপ দেখছে। এরকম কঠিন কঠিন কথা এর আগে কখনো হিয়া শিশিরকে বলতে শুনে নি। উজান কিছু বলতে গিয়েও পারছে না বলতে। চাচি থামাতে গিয়েও চুপ হয়ে আছে। ভাগ্যিস এ সময় দোকান থেকে ইমার্জেন্সি ডাক আসতেই শিশির একটু দমে গেলো। তাকে এখুনি দোকানে আসতে হবে খুব জরুরি। তাই উজানকে বললো তুই খেয়ে নে বাকিটা। আমি আসছি। হাত ধুয়ে বের হতে হতে শিশির হিয়ার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে বললো,

– রোদের কাছে পড়তে যাবার সময় হয়নি তোর। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার মুখ কি দেখছিস(ধমকে)

উজান রেগে গিয়ে বলে,

– আহ শিশির,হয়েছে এবার যা তো তুই।

– সেদিনো আমি কিছু বলতে গিয়েও বলি নি তোকে। যদি দাদির..বাড়ি ফিরি আজ। তোকে মারের উপর না রাখলে তুই শুধরাবি না।

বলেই শিশির চলে যায়। অনেক কষ্টে কান্না টা এতোক্ষণ চেপে রেখেছিলো হিয়া। এখনো তাই করছে। তাই তো শিশির চলে যেতেই দূত পায়ে নিজের রুমে এসে ব্যাগে বই গুছিয়ে,চোখের কান্না টা আড়াল করে বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে গেলো হিয়া। উজান একটা শ্বাস ছাড়লো। চাচির অনুরোধে বাকি ভাত টুকু শেষ করে হাত ধুইয়ে নিয়ে কিছু সময় দাদির সাথে গল্প দিলো,ফেরার সময় ডাইনিং থেকে একটা টিস্যু নিতে যাবে ওমনি উজানের চোখ আঁটকে গেলো নিচে ফ্লোরের উপর যেখানে হিয়া দাঁড়িয়ে ছিলো। স্পষ্টত্ব সেখানে রক্তের বিন্দু বিন্দু চিহ্ন দেখা মিলছে। থমকে গেলো উজান। ফ্লোরে বসে বুঝতে চাইলো কিসের রক্ত এটা। এটা সিউর যে এটা হিয়াই রক্ত কারণ হিয়া দাঁড়ানোর আগে জায়গাটা একদম ক্লিন ছিলো সে ব্যাপারে উজান সিউর কারণ এ-ই ফ্লোর থেকে সে তার হাত থেকে পড়ে যাওয়া চামুচ টা তুলেছিলো কিছুক্ষণ আগে। ভূ কুঁচকে আসলো উজানের তাহলে কি এটা হিয়ার পিরিয়ডের রক্ত! কিন্তু উজান জানে হিয়ার কিছু দিন আগে পিরিয়ড শেষ হয়েছে তাহলে কিসের!

!
!

রোদের কাছে পড়তে আসে হিয়া সহ মোট চারজন,তাদের সবাই রোদকে দুই হাজার টাকা করে দিলেও রোদ হিয়ার থেকে কোনো টাকা নেয় না। তবে রোদের এ-ই অহেতুক প্রাইভেট পড়ানোর মানে টা তার বাবা মা খুঁজে পায় না। তাদের কাছে তো এই ৮/১০ হাজার টাকা হাতের ময়লা সেখানে তাদের মেয়ে কি না। তবে রোদকে না বলার সাহস বাড়িতে কারো নেই। সে নিজে উপার্জন করার ইচ্ছে রাখে তাই তাকে তাই করতে দিতে হবে এটাই তার শেষ কথা।

রোদের সামনে লতার পাশে বসে আছে হিয়া। এদিকের বা সাইডে বসে আছে মোহিনী আর রুপা। তিনজনের পড়াতে মনোযোগ থাকলেও সেই প্রথম থেকেই হিয়ার মুখ টা শুকনো দেখে রোদের বুঝতে বাকি থাকে না নিশ্চয় আজকে আবার শিশির কিছু একটা বলে বকা দিছে তার বোনকে। রোদ হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, মনোযোগ দে পাগলি! ভয়ের কিছু নেই আমি আছি না। হিয়া রোদকে মুচকি হাসি উপহার দিয়ে পড়াতে মন দিতে চেষ্টা করে। হঠাৎই পড়ার মাঝে কোথা হতে ঝড়ো হওয়ার মতো উজান ছুটে এসে হিয়ার ডান হাত ধরে এক টানে বসা থেকে হিয়াকে টেনে তুলে। মুহুর্তে ভয় পেয়ে যায় হিয়া। সাথে ভয় পায় রোদ নিজেও।

– কি হয়েছে ভাই,এরকম করে হিয়াকে টেনে তুললি কেনো?

রোদকে উপেক্ষা করে উজান হিয়ার এদিক সেদিক লক্ষ্য করতে করতে দাঁতে দাঁত চিপে রাগান্বিত সুরে বলে,

– কোথায় কেটেছে হিয়া?___কথা বলছো না কেনো,রক্ত কোথায় থেকে বের হচ্ছিলো(ধমকে)

ভয়ে আরো চুপসে পড়ে হিয়া। মনে মনে ভাবে উজান স্যার কি করে বুঝলো আমার কেটে গেছে আমি তো কাউকে বলি নি কথাটা। উজানের আরেক দফা ধমকানিতে চোখে পানি চলে এসে চোখ টলটল করতে থাকে হিয়ার। ঠোঁটে ঠোঁট চিপে হিয়া চেষ্টা করতে থাকে সেই কান্না টা দমানোর।

– কিসের রক্ত উজান! আর তুই ওকে ওভাবে ধমক কেনো দিচ্ছিস। ভয় পাচ্ছে না মেয়েটা!

– হিয়া তুমি কি নিজে থেকে দেখাবে যে কোথায় আঘাত পেয়েছো তুমি না আমি নিজে..

হিয়া ওর বা হাত টা বাড়িয়ে উল্টো করে ধরে,মেলে রাখা হাতের কনুইয়ের কাছে চোখ পড়তে আঁতকে উঠে উজান। কি বিশ্রী ভাবে কেটে গিয়ে জায়গা টার রক্ত জমা হয়ে আছে। কিন্তু এ-ই মেয়েকে দেখো। রোদ এসে হিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে হিয়ার মাথায় হাত রাখে,এবার আর হিয়া নিজের কান্না টা আঁটকে রাখতে পারে না। রোদের বুকে যেনো মায়ের গন্ধ খুঁজে পায় হিয়া। তাই তো এতোক্ষণ ধরে জমে রাখা কান্না টা অঝোরে কেঁদে দিয়ে শান্ত হতে চেষ্টা করে সে!

– কিচ্ছু হয়নি,চুপ__লতা আজকে তোমাদের ছুটি আমি এটা অন্য দিন পড়িয়ে দেবো কেমন।

লতা সহ বাকি দু’জন মাথা নাড়িয়ে ব্যাগপএ গুছিয়ে বেড়িয়ে আসে। রোদ হিয়াকে নিয়ে রুমে এসে বিছানায় বসিয়ে দিতে উজান দূত ফাস্ট এইড বক্স এনে হিয়ার পায়ের কাছে একটা ছোট্ট টুলে হাটু গেড়ে বসে যায়। নিজে থেকে হিয়ার হাত টা বাড়িয়ে সেটাতে সেভলন,মলম সহ ফাস্ট এইড করতে ব্যস্ত হয়ে উঠে!

– এ-ই তো হিয়া,উজান এখন মলম লাগিয়ে দিচ্ছে না। দেখবি একটু পর সব ব্যাথা কমে যাবে। আর তুই কি হ্যা এতো বড় কেটেছে সেটা আমাকে বলবি না এসে!

হিয়া রোদের এক হাত চেপে ধরে কান্না ভেজা কন্ঠে বলে,

– ভয় পাইছিলাম। ভাইয়া বকা দিছিলো না খুব। বলছে বাড়ি ফিরলে আমাকে মারবে।

রোদ হিয়ার মাথায় চুমু এঁকে বলে,
– এতো সাহস আছে না-কি শিশিরের যে আমার বোনের গায়ে হাত তুলবে। ঠ্যাঙ খোঁড়া করে রেখে দেবো না। তা এ-ই আঘাত টা পেলি কি করে শুনি?

হিয়া ভেজা চোখ টা মুছে নিয়ে নাক টেনে বলে,

– বল খেলছিলাম না। খেলা। তখন লতার গায়ে বল ছুঁড়তে গিয়ে বল টা সালেহা আন্টির থাইয়ে লেগে যায়। আর কাঁচ টা ভেঙে আসে। আমি বলটা আনতে গেলে ভেতর থেকে আন্টি লাঠি হাতে দৌড়ে আসে। আমি ভয় পাই খুব। দেওয়াল টপকে বের হতে যাবে তখনি দেওয়ালের গায়ে লেগে থাকা কাঁচে পড়ে গিয়ে…

হিয়ার কথায় একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উজান। এতো দীর্ঘ শ্বাস যে কোমড়ের কাছে থাকা হিয়ার ওড়না টা অবধি হালকা নড়ে উঠে। উজান উঠে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

– জিজ্ঞেস করতো ওর আর কোথাও লেগেছে কি না?

রোদ হিয়ার দিকে তাকালে হিয়া মাথা নাড়িয়ে বলে না। তবে পেটের দিক টায় অল্প লেগেছে এ-ই এতোটুকু দেখো। নিজের তর্জনীর মাথা দেখিয়ে। রোদ কিছু বলতে যাবে তার আগে উজান বলে,গিয়ে দুপুরে কি খাবার আছে নিয়ে আয়,হিয়া দুপুরে খায় নি। রোদ মাথা নাড়িয়ে খাবার আনতে চলে গেলে উজান একটা তুলোয় স্যাভলন লাগিয়ে হিয়ার দিকে মুখ করে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে বলে

– দেখি পেট টা! জামা তুলো?

আঁতকে উঠে হিয়া। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে জামা তুলবো মানে! পাগল না-কি?

– হিয়া,আমি একজন উড বি ডক্টর তাই এসব লাজ লজ্জা আমার সামনে খাটে না.

হিয়া ভেংচি কেটে উওর দিলো,

– উড বি! এখনো তো ডক্টর হোন নি না..

উজান কপালে ভাঁজ টেনে বললো”হিয়া” হিয়া চোখ পাকিয়ে বললো আপনি তুলো টা আমার হাতে দিন আমি লাগিয়ে নিচ্ছি” উজান কিছু বলতে পারলো না, তুলো টা হিয়ার হাতে দিতেই হিয়া বললো ওদিকে মুখ করুন! বিগড়ে থাকা মেজাজ টা সপ্তমে গিয়ে ঠেকলো এবার যেনো। উজান পেছন ফিরে নিতে হিয়া টপাটপ তুলো দিয়ে পেটের জায়গা টা পরিষ্কার করে নিলো। সাথে উজানের বলে দেওয়া এ্যান্টিসেপ্টিক টা লাগিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

– নিন হ’য়েছে আমার!

উজান ঘুরলো ঠিকই কিন্তু হিয়ার দিকে তাকালো না। ফাস্ট এইড বক্স টা গুছিয়ে নিতে বিছানায় বসতে হিয়া অনুশোচনার কন্ঠে বলে উঠলো” Sorry” উজান ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকালো হিয়ার দিকে। হিয়া মাথা নামিয়ে বললো,

– সেদিন আপনাকে ওভাবে। আর কখনো এরকম মজা করবো না প্রমিস!

উজান হিয়ার থেকে মুখ নামিয়ে নিলো,বিশ্বাস হলো না তার হিয়ার কথা।

– পাক্কা প্রমিস তো,আর হবে না এরকম!

পাক্কা প্রমিস কথাটা শুনে উজান একটু একটু বিশ্বাস করলো হিয়াকে। উজান শুধু হু বলে এক শব্দে উওর দিয়ে উঠে যেতে হিয়া পেছন থেকে বললো ” আপনার পা টা ভালো আছে এখন” উজান মুচকি হাসলো। উল্টোদিকে থাকায় হিয়া তা দেখতে পারলো না। পরক্ষণেই গম্ভীর কন্ঠে উজান বললো হুম আছে।

!
!

হিয়াকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে রোদ কিছু সময় হিয়াকে তার কাছে রাখে। সন্ধ্যা নাগাদ শিশির নিতে আসাতে আবার যেনো মারের ভয় টা চেপে ধরলো হিয়াকে। রোদ বললো আরে বোকা-মেয়ে শিশির তো শুধু ঔ কথাটা মিছে মিছে বলেছে। কিন্তু হিয়ার ভয়ার্ত মন তো সেটা মানতে চাইলো না। রোদ বললো আচ্ছা বেশ আমিও যাচ্ছি নিচে,আসো তো দেখি কি বলে ঔ-ই বাঁদর টা। রোদ হিয়াকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো। মাঝপথে শিশির আর উজানকে উপরে উঠতে দেখলো। উজান শিশিরকে রিকুয়েষ্ট করতেও ভয় পাচ্ছিলো বাড়িতে থাকার জন্য যা ক্ষেপে আছে সে হিয়ার উপর। রোদ নীরব পরিবেশ টাকে শান্ত করতে কথা শুরু করলো,

– আচ্ছা বেশ বাড়িতে আসতে হবে না। উজান.

– বল?

– হিয়াকে নিয়ে নিচে নামতো আমি শিশির কে নিয়ে আসছি।

হিয়া কিছু বলতে যাবে কিন্তু হিয়াকে থামিয়ে দিলো রোদ। উজান হিয়াকে নিয়ে নিচে নামতেই রোদ এসে শিশিরের ডান হাত টা বাড়িয়ে নিজের কাছে টেনে এনে মুঠো করে ধরলো,

– প্লিজ শিশির। বাচ্চা মেয়ে ভূল করেছে তা-ই বলে তুমি ওকে এভাবে বকবে!

শিশির মুঠে ধরে থাকা তার হাত টা সারিয়ে নিয়ে সেটা আলতো করে রোদের বাম গালে রাখলো।

– কি করবো রাগ টা সামলাতে পারি নি। এতো অবাধ্য হলে হবে বলো তুমি!

– তাই বলে বকে ধমকে। তুমি না ওর ভাই হও, তুমি বুঝো না ও শুধু বয়সে বড় হয়েছে মন টা এখনো বাচ্চাই হয়ে আছে তার।

শিশির রোদের বাম গালে রাখা হাত টা দিয়ে রোদকে কাছে এনে রোদের কানের লতিতে একটা স্নেহের পরশ বুলে দিলো। মন টা মুহুর্তে খুশিতে ভরে উঠলো রোদের।

– ধন্যবাদ আমার বোন টাকে এতোক্ষণ আগলে রাখার জন্য।

– তোমার বোন কি আমার কেউ না। জানো আমি শুনেছি ভাবিরা না-কি মায়ের সমতুল্য হয়। সে হিসাবে হিয়া তো আমার নিজেরই অংশ বলো..

শিশির একটা তপ্ত শ্বাস টেনে আসছি বলে নিচে নেমে পড়লো। এদিকে একটু আগের খুশিতে ভরে ওঠা মন টায় একটা চাপা আর্তনাদ এসে জমা হয়ে রোদের বুক টাকে পিষে নিতে থাকলো যেনো!

– আর কতোদিন এভাবে আমার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে শিশির আর কতো দিন।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here