?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_০৬,০৭
#ইভা_রহমান
০৬
ফাঁসির আসামির মতো এ-ই মুহুর্তে শিশিরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হিয়া। এক হাত প্রসারিত করে শাস্তির প্রাপ্য টুকু গ্রহনের জন্য প্রস্তুত সে৷ কাঠের স্কেলের পরপর দুটো মা’র এসে পড়তে না পড়তেই হাতের ফর্সা তালু টা চোখের নিমিষে লাল হয়ে উঠলো তার। তবুও দাঁতে দাঁত চিপে সেই ব্যাথা সহ্য করে নিলো হিয়া। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে তবু একটা উহ শব্দ পর্যন্ত করছে না যেনো।
– আর যাবি বাহিরে খেলতে। আমার পারমিশন ছাড়া আর বেড়োবি বাড়ি থেকে(উঁচু কন্ঠে)। যা চেয়েছিস নিজের যথাসাধ্য দিয়ে সেটা সবসময় পূরণ করতে চেয়েছি। আম্মুআব্বুর অভাব টা যাতে কখনো তোকে কষ্ট না দেয় তাই তোকে সবকিছু দিয়ে আগলে আগলে রেখেছি। ভেবেছিলাম বড় হলে নিজেই শুধরে যাবি কিন্তু না,বরং যতোদিন যাচ্ছে তোর এ-ই ছেলেমানুষী বাদরামি গুলো বেড়েই যাচ্ছে। যাবি আর বাহিরে(ঝারি দিয়ে)?
হিয়া কোনো কথা বললো না। শুধু মাথা দু পাশে নাড়িয়ে দিলো,যার মানে সে যাবে না। শিশির হাতে থাকা স্কেল টা হিয়ার পড়ার টেবিলে ছুঁড়ে দিতেই দেখলো সেখানে বইয়ের পাশে জলজল করছে গল্পের চারটে বই। আরো মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো শিশিরের। বই চারটে হাতে নিতেই হিয়ার বুক ভরা কান্না চলে আসলো। মনে মনে একটাই দোয়া পড়তে থাকলো এ-ই বই গুলোকে তো অনন্ত রেহাই দে ভাই। হিয়ার দোয়া অকবুলই থেকে গেলো। বই চারটে হাতে নিয়ে শিশির নিজের রুমে চলে আসলো। হাফ ছাড়লো হিয়া। বিছানায় শুইয়ে বালিশ হাতড়ে কি জানি একটা বের করে সেটাকে বুকে আগলে ধরে মুখে মুখ চিপে,ঠোঁটে ঠোঁট কামড়ে অঝোরে কাঁদতে থাকলো। এদিকে হিয়ার চোখের পানি,নাকের পানিতে বালিশ অবধি ভিজে মুহুর্তে চৌচির।
– আমি বোধহয় ভাইকে ভালো রাখতে পারি নি মা, আজকে সালেহা আন্টি আমার জন্য ভাইয়াকে অনেক কথা শুনিয়ে গেছে। বিশ্বাস করো আব্বু আমি চাইনি এমনটা হোক…
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমের দেশে কখন যে হারিয়ে গেলো হিয়া,তার জানা নেই। রাতের খাবারে চাচির ডাকে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে শিশির। হিয়া আসছে না দেখে একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে শিশির হিয়ার মাথার কাছে গিয়ে বসে। দেখে তার রাজকুমারী টা একটা ছবি আঁকড়ে কেমন বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে। ছবি টা হিয়ার বুকের সাথে লেপ্টে থাকায় শিশির আর নিতে চাইলো না সেটা। কিন্তু শিশিরের এটা অজানা নেই ছবি টা কাদের। ঘুমন্ত হিয়ার মাথা বুলিয়ে দিতেই হিয়া নড়ে উঠে হালকা করে চোখ খুললো। দেখতে পেলো শিশিরের হাসিহাসি মুখ। কষ্ট টা অনেকটাই কমে আসলো হিয়ার। হিয়া নিজেও একটা মলিন হাসি দিয়ে শিশিরের দিকে গুটিসুটি হয়ে আরো সরে আসলো।
– প্রিন্সেস টা কি এখনো রাগ করে আছে তার ভাইয়ের সাথে?
হিয়া মুচকি হেঁসে দিয়ে তার আঙ্গুলের মাথা দেখিয়ে উওর করলো,
– এ-ই যে এ-ই এতোটুকু রাগ করে আছি,দেখ।
শিশির মুচকি দিয়ে হাসলো,
– হুম তা কি করলে প্রিন্সেসের এ-ই এতো টুকু রাগ কমবে শুনি। একটা প্রিন্স এনে দেবো নাকি!
হিয়া লজ্জা পেয়ে হেঁসে দিলো,
– বালাইষাট,এতো জলদি প্রিন্স দিয়ে কি করবো আমি,আগে তো তোর জন্য রোদ আপুর মতো একটা পুতুল পুতুল সুন্দর বউ আনবো তারপর..
-রোদকে এতো ভালো লাগে তোর!
– খুব মানে খুব। একটু পুতুল আপু্। কি সুন্দররর।
– ওতো সুন্দর মেয়ে যায় তোর ভাইয়ের সাথে!
তড়াৎ করে উঠে বসলো হিয়া,রেগে গিয়ে বললো,
-কেনো কেনো কেনো যায় না। আমার ভাই কম কিসে শুনি,হাইট তো ঔ সাদা বিলাই টার মতো ছয় ফুটের কাছাকাছি,দেখতেও ফর্সা হিরোদের মতো তাহলে কেনো মানাবে না শুনি?
– ধুর পাগলি,চেহারা ধুইয়ে কি তোর রোদ আপু পানি খাবে। তোর রোদ আপু পাড়বে নিজের ঔ বিলাশবহুল বাড়ি রেখে আমার এ-ই ভাঙ্গা রুমে ভালো থাকতে!
– পারবে না?
বিষ্ময়ে হতাশ সুরে কথাটা বললো হিয়া। নিজের বোনের বোকা একটা প্রশ্ন শুনে শিশির হাসলো শুধু। উঠে গিয়ে বললো ক্ষিদে পাইছে তাড়াতাড়ি খেতে আয় হেবলি। শিশির চলে যেতেই হিয়া কিছুক্ষণ চুপচাপ নিজের বিছানায় বসে রইলো। বাবা মায়ের ছবি টা হাতে আনমনে তাদের জিজ্ঞেস করলো” রোদ আপু এখানে আসলে কেনো ভালো থাকবে না মা”
!
!
আকাশে আজ মেঘ তার নানা রুপ দেখাতে ব্যস্ত। কোথাও শুভ্র মেঘের ছড়াছড়ি। কোথাও বা ভারী মেঘ আকাশের এক পাশকে কালো করে পরিবেশে অন্ধকার নামিয়ে দিতে প্রস্তুত। হাওয়া বইছে,একটু জোরেই বইছে,রাস্তায় পড়ে থাকা শুকনো পাতার সাথে কিছু কাগজ উড়ছে। হয়তো কিছুসময় বাদে ঝড়ো হাওয়ার সাথে আকাশ কাঁপিয়ে ঝুরঝুর বৃষ্টি নামবে। মানুষজন ব্যস্ত তাদের প্রয়োজনীয় কাজ গুটে নেওয়ার জন্য। কেউবা ব্যস্ত বাড়ি ফেরার তাড়ায়।
একটা সরু পোনিটেল,সবুজ স্কুল ড্রেস, সাদা ওরনা,কাধে ঝুলানো হ্যালো কিটির সুন্দর একটা ব্যাগ নিয়ে স্কুল থেকে একটুদূরে সামনের এক কফি শপের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে হিয়া। একটু আগে স্কুল শেষ হয়েছে তাদের আর হিয়ার এ-ই কফি শপের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ লতা। কফি শপের পেছনের গলিতে লতা ব্যস্ত তার কলিজার কলিজা বয়ফ্রেন্ড ফয়সালের সাথে চুটিয়ে প্রেম করতে। হিয়া লতাকে দশ মিনিট সময় বরাদ্দ দিয়ে রাখলেও এখন সময় পেড়িয়ে পনেরো মিনিট পাড় হচ্ছে কিন্তু লতার আতাপাতা কিচ্ছু নেই। এমনিতে আকাশের এই বাজে অবস্থা তার উপর হাওয়া বইছে। রাগে দাঁত কটমট করছে হিয়া। না এর বেশি দাঁড়িয়ে থাকা উচিৎ হবে না, শিশির ভাই দেখলেই খু*ন করে ফেলবে৷ একটা দম ফেলে সামনে এক পা এগুতেই একটা বাইক এসে ধুপ করে হিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। বিষ্ময়ে টুক করে মুখ তুলতেই চোখ চড়ক গাছে উঠে যায় হিয়ার। উজান স্যার! তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে উজান। স্কুল তো শেষ প্রায় আধা ঘণ্টা হয়ে আসছে তাহলে এ-ই কফি শপের সামনে হিয়ার কি! ভ*য়ে বুকের ভেতর টা পাথর হ’য়ে যাচ্ছে হিয়ার। হিয়ার দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে এবার উজান গর্জে উঠলো,কুঁকড়ে উঠলো হিয়া!
– কফি শপের বাহিরে কি তোমার,স্কুল তো অনেকক্ষণ হলো শেষ হয়েছে এখনো বাড়ি ফেরোনি কেনো?
-রি-ক্সা খুঁজ-ছিলাম।
-তা সেটা স্কুলের সামন থেকে নেওয়া যেতো না।
– না মানে ভেবেছিলাম হেঁটে বাড়ি ফিরবো কিন্তু ঝড় আসবে মনে হচ্ছে তাই জন্য দাঁড়িয়ে থেকে..
– উঠো বাইকে।
কেঁপে উঠলো হিয়া। মানে কি বাইকে উঠবো কেনো। উজান বললো বাড়ি যাচ্ছি তোমার, রোদ ওখানে আছে। ওকে নিতে যাবো। হিয়া মাথা নাড়িয়ে উজানের পিছনে গিয়ে বসলো। কিন্তু লতা! লতার কথা স্মরণে আসলো যখনি ঠিক তখনি উজান বাইক টা ঘুরে মোড় নিলো সেই পেছনের গলিতে। জোরে জোরে শ্বাস টানতে শুরু করলো হিয়া। উফফ মেইন রাস্তা থাকতে এ-ই চিপা গলি দিয়ে বাইক ঢোকানোর কি দরকার ছিলো অসহ্য। সরু গলিতে ঢুকতেই চোখে পড়লো লতা আর ফয়সালকে,দু’জনে কি রকম হাত ধরে হাঁটছে। হিয়া অগ্নি দৃষ্টি ছুড়ে চোখের ইশারায় বললো কাল আয় দেখাচ্ছি তোকে। লতার বুক শূন্য হয়ে গেলো মুহুর্তে। উজান শুধু লতাকে দেখলো কিছু বললো না। বাইক চালিয়ে সোজা টান দিলো। হিয়া একটা হাফ ছাড়লো। এদিকে আবহাওয়া এখনো আগের মতো থাকলেও মনে হচ্ছে মেঘ গুলো ভারী থেকে ভারী হয়ে আসছে থেকে থেকে। কি জানি বৃষ্টি হলেও হতে পারে।
একটা ফোন আসাতে থামলো উজান। ফোন টা রিসিভ করে নিতে কথা বলতে শুরু করলো সে। বাইক চালিয়ে কথা বলা রিস্ক। এদিকে এমন ওয়েদারে চোখ ফেটে ঘুম আসছে হিয়ার। বসে থাকতে গিয়ে যেনো ঘুম টা আরো তীব্র বেগে চোখে ধেয়ে আসছে। ঘুমঘুম অলস চোখে আনমনে নিজের মাথা টা উজানের পিঠে ঠেকিয়ে দিলো হিয়া। উজান কথা বলতে গিয়ে মুচকি হাসলো। নড়লো না আর। অদ্ভুত এক ভালোলাগার শিহরণ মনে এসে গ্রাস করলো উজানের মাঝে হিয়াকে ঘিরে! কিছুক্ষণ বাদে হিয়া নিজে থেকে তার মুখটা উজানের পিঠ থেকে উঠিয়ে নিলো। একটা হাই টানতেই সামনে পড়ে থাকা কিছু কাঠগোলাপের দিকে নজর পড়তেই তড়াৎ করে বাইক থেকে নেমে পড়লো হিয়া। উজান পেছন ঘুরে ভূ তে ভাজ এঁটে বললো” কি? হিয়া মুখ টা বাচ্চাদের মতো করে বললো “ফুল” উজান হিয়ার পেছনে তাকিয়ে দেখলো কিছু শুকনো কাঠগোলাপ পড়ে আছে। উজান ফোনে কথা বলতে বলতে চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো “নেও” হিয়া গিয়ে বেছে বেছে অনেক কয়েকটা তড়তাজা দেখে কাঠ গোলাপ তুলে নিয়ে ব্যাগে ভরে আবার বাইকে এসে বসলো। উজান ফোন রেখে বললো”হয়েছে তোমার ” হিয়া উওর করলো হু। আবার বাইক স্টার্ট করলো উজান। এদিকে হিয়ার মাথায় এবার দুষ্ট বুদ্ধির আর্বিভাব ঘটতেই হিয়া তার হাতে থাকা কাঠগোলাপের একটা খুব সর্তকভাবে উজানের এক কানে গুঁজে দিলো। উজান নড়তেই হিয়া বললো” নড়ছেন কেনো একটা পোকা কানে আপনার” এ-ই বলে ফুল টা ঠিক মতো উজানের কানে গুঁজে দিতে হিয়া মুখ টিপে হাসলো।
এদিকে এবার রাস্তার মানুষজন যারই নজর পড়ছে উজানের উপর তারা উজানকে দেখে কেমন একটা হাসি দিচ্ছে। বাইক চালায় মন থাকায় উজান সেসব লক্ষ্য করছে না। ব্যাংকের মোড় যাবার আগেই বাইক টা জ্যামে পড়তে জ্যামে বসে থাকা একটা অটোর চারটে মাঝবয়সী মেয়ে উজানকে দেখামাএই সেই রকম হাসি দিয়ে উঠলো। ব্যাপারটা কিছু বুঝলো না উজান। কি সমস্যা সবার,হাসছে কেনো এরকম করে আজব। তাকে দেখে কি জোকার মনে হচ্ছে না-কি। নাকি কিছু মুখে লেগে আছে তার। আয়নাটা বাকা করে নিজেকে দেখতে গিয়ে দেখলো ঠিকই তো আছে সব তাহলে। হঠাৎই কানের পাশে চোখ পড়তেই ক্ষেপে উঠলো উজান। কাঠগোলাপ!(বুম বুম বুম) তারমানে তখন হিয়া ইচ্ছে করে। রাগে কপালের রগ গুলো গাঢ় হতেই কান থেকে এক টানে ফুল টা হাতে নিলো উজান। হিয়া ভয়ে চুপসে গেলো মুখ দিয়ে আস্তে করে অনেক কিউটলি বেড়িয়ে আসলো সরিইই। উজান কিছু না বললেও মুখ দেখে বুঝা গেলো খুব ক্ষেপে আছে। জ্যাম টা ছাড়তেই বাইক নিয়ে আবার সোজা হিয়ার বাড়িতে আসলো উজান। হিয়া বাইক থেকে নেমে উজানের বকুনি খাবার আগেই এক দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে গেলো। রোদ দাদির সাথে সোফায় বসে গল্প দিচ্ছিলো সেসময়। রোদকে দেখামাত্রই হিয়া কোনোমতে জুতা টা খুলে এক দৌড়ে ঝাপে ধরলো রোদের গলা। খুশিতে গদগদ হয়ে চুমু খেলো রোদের গালে।
– রোদ আপুউউউ…আমি আজকে কতো খুশি হয়েছি তুমি জানো না। আজকে কত্তোদিন বাদে তুমি আমাদের বাড়িতে এলে।ইসস।
রোদ হিয়ার গালে হাত বুলিয়ে বললো,
– কোথায় কতোদিন,আগের মাসেই তো আসলাম,আর শুনলাম দাদির শরীর টা খারাপ তাই না এসে পাড়ি বল দেখি,
– হুম। তুমি আসছো এখন আমরা খুব খুব মজা করবো। দাদি,ভাইয়া আসেনি?
দাদি জাতাতে সুপারি কাটতে কাটতে উওর দিলো,
– এ-ই তো আসলো। কিছুক্ষণ হবে। যা গিয়ে গোসল টা করে আয় তো আগে। রোদ মা আজকে আমাদের সবার জন্য তোর চাচির সাথে মিলে খিচুড়ি করেছে খাবি আয়।
খিচুড়ির কথা শুনে খুশিতে আটখানা হয়ে হিয়া লাফিয়ে উঠলো। রোদকে বললো ‘আপু তুমি বসো আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোসল করে আসছি,এ-ই যাবো আর বের হবো। রোদ মুচকি হেঁসে বললো যা পাগলি। হিয়া উঠতে রোদও উঠে চাচির সাথে রান্নাঘরে গরম গরম বেগুন ভাঁজতে মন দিলো। এদিকে শিশির এসে উজান সহ উজানের বাইক টা বারান্দায় নিয়ে এসে রাখলো। বলা যায় না বৃষ্টি নামতে পারে এ-ই মুহুর্তে আকাশের অবস্থা খুব বাজে হয়ে আছে। উজান সহ রুমে আসতেই তোয়ালে হাতে হিয়া বাহিরে বের হতো ধরলো। হিয়াকে বের হতে দেখে শিশির বলে উঠলো,
– আবার কোথায় যাচ্ছিস হিয়া!
– উঠোনে যাচ্ছি কাপড় মেলে দেওয়া আছে আমার ভাইয়া,ওগুলো তুলতে।
– কেনো আর জামা নেই তোর?
– আছে কিন্তু বেগুনি নেই। রোদ আপু বেগুনি পড়ছে আমিও তাই ঔ রঙ পড়বো এখন হু।
শিশির এক শব্দে উওর দিলো “যা” হিয়া দৌড়ে এসে উঠনো পা রাখতে যেই কাপড়ে টান মারবে ওমনি আকাশ কাপিয়ে মেঘ গুলো সব বৃষ্টি হয়ে ঝরতে শুরু করলো। এক লহমায় ভিজিয়ে দিলো হিয়াকে। হিয়া রেগে গিয়েও পরমুহূর্তে বললো ভালোই হয়েছে গোসলই তো করতাম তারচেয়ে বরং ভিজেই নেই পুরোটা। বাড়ির ভেতরে সবাইকে উপেক্ষা করে ভিজতে শুরু করলো হিয়া। বৃষ্টির তেজ এতোই ছিলো যে যা হিয়ার প্রত্যেকটা লোমকূপ কে ভিজিয়ে দিতে যথেষ্ট ছিলো। তবে তেজ থাকলেও বৃষ্টির অস্তিত্ব বেশিক্ষণ টিকলো না। দশ মিনিটের ভারী বর্ষন শেষে আকাশে সূর্যিমামার ঝকঝকে কিরনের দেখা পাওয়া গেলো৷ হিয়া সূর্যিমামার দিকে হালকা রাগ ছুঁড়ে দিয়ে বললো আর একটু পর তোমার ঘুম ভাঙ্গলে কি ক্ষতি টা হতো শুনি!
কাঁদা পায়ে বৃষ্টি ভেজা শরীরে বারান্দায় আসতেই সজোরে ধাক্কা খেলো সামন থেকে আসা উজানের সাথে। উজানের হাতের কনুই টা গিয়ে বিধলো হিয়ার থুতনিতে। আহ বলে খেঁকিয়ে উঠলো হিয়া। উজানের দিকে চোখ পড়তেই চুপ হয়ে গেলো সে। এদিকে হিয়ার দিকে চোখ পড়তেই উজান থেমে গেলো। হিয়া না বাথরুমে ছিলো। তাহলে এভাবে বৃষ্টিতে কি করে। হিয়ার শরীরের দিকে তাকাতে ভূ কুঁচকে আসলো উজানের। ভেজা শরীরে প্রত্যেকটা অঙ্গ স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে হিয়ার। হিয়ার এ-ই নারীত্বের সৌন্দর্যে নেশা ধরলেও নেশার চাইতে রাগ টা আজ বেশি প্রখর হলো জেনো। মেজাজ টা মুহুর্তে সপ্তমে গিয়ে ঠেকতে উজান এবার হিয়ার দিকে তেড়ে এসে হিয়ার এক বাহু চিপে ধরলো,আর গম্ভীর কন্ঠেই বললো,
– তোমার কি কোনোদিনো সেন্স হবে না হিয়া। বড় হচ্ছো তুমি,এসব কি?
রাগি সুরে হিয়া বললো “কি এসব” উজান এবার হিয়ার হাত আরো জোরে চিপে ধরে বললো,
– বাড়িতে চাচ্চু আছে,শিশির আছে তাদের সামনে এভাবে যাবে তুমি।
– কিভাবে যাবো?
বিষ্ময়ে কথাটা বললো হিয়া। উজান এখন তার এ-ই পিচ্চিকে কি করে বুঝাবে সে কিভাবে যাবে। রাগে হিয়াকে টেনে এনে ডাইনিং পেড়িয়ে সোজা বাথরুমে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলো উজান। শিশিরের রুমের পর্দাটাও টেনে দিলো অসংকোচে। হিয়াকে এভাবে দেখার অধিকার যে তাকে ছোট থেকে মানুষ করা শিশির কেও গার্ডিয়ান হিসাবে একটা মুহুর্তের জন্য দিবে না সে,কখনো না..!! হিয়া যে শুধু তার অধিকার শুধু তার..!! হিয়া উজানের এ-ই বিহেভের কারণ বুঝে পেলো না। উজান হিয়াকে বললো” গায়ে সাবান দেও,আমি রোদকে বলে জামা পাঠিয়ে দিচ্ছি” বলেই দরজাটা লাগিয়ে দিলো উজান। হিয়া কিছু বুঝলো না,উপরন্তু মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিতে ক্ষীপ্ত হলো সে। দাঁত মুখ খিঁচে বাথরুমের আয়নায় চোখ দিতেই থেমে গেলো হিয়া। বুঝতে পারলো উজানের এ-ই রকম বিহেভের কারণ। সত্যি তো এ-ই অবস্থায় কিনা। ভাগ্যিস শিশির বা চাচ্চু কেউ দেখেনি। মুখে হাসি ফুটতেই থেমে গেলো হিয়া,হঠাৎই স্মরণে আসলো ভাই আর চাচ্চু না দেখুক কিন্তু সাদাবিলাই টা! লজ্জায় লুটিয়ে পড়লো হিয়া। উজান স্যার কি না তাকে এভাবে!
!
!
হিয়ার জামা হাতে দাঁড়িয়ে আছে রোদ। নিজের ভাইয়ের এ-ই কান্ডে হাসবে না কাঁদবে কিচ্ছু বুঝছে না যেনো সে। ফোঁড়ন কেটেই বললো,
– এখুনি এরকম পড়ে গিয়ে তো…(টেনে টেনে)
– হোয়াট পড়ে গিয়ে!
– না মানে,ছাএীর জন্য এতো টা ভাবতে এর আগে কোনো স্যারকে দেখেছি বলে তো মনে হয় না।
– রোদ তুই কিন্তু!
– আচ্ছা সরি সরি,আর তুই বা কি বাচ্চা একটা মেয়ে তার উপর শুধু শুধু।
– শুধু শুধু এটা শুধু শুধু,বড়ো হচ্ছে ও। শরীরে গ্রোথ হচ্ছে। বডি শেইপ চেঞ্জ হচ্ছে ওর। এখনো তুই বলবি সে ছোট..!!
– কুল ভাই কুল। আচ্ছা আমি বুঝিয়ে বলবো নে এখন হিয়াকে। যা তো গিয়ে শিশিরকে ডাক৷ ওলেয়জ ওর এ-ই হিসাবের খাতা নিয়ে বসে থাকা খুব রাগ লাগে আমার,
উজান এবার মুচকি হেঁসে দিয়ে রোদের চুল টেনে শিশিরে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
– আপনাকেও সারাজীবন এ-ই সব সহ্য করতে হবে রোদ ম্যাডাম। এখন থেকেই অভ্যাস করে নেও বুঝলা।
প্রথমে ক্ষেপে গেলেও পর মুহুর্তে হেঁসে দিলো রোদ৷ হিয়াকে জামা কাপড় দিয়ে ডাইনিং এ এসে চাচি সহ খাবার বাড়তেই সবাই এসে বসে পড়লো টেবিলে। মাথা মুছতে মুছতে হিয়াও রোদের পাশে বসে খুব স্বাদ করে সবাই মিলে খিচুড়ি আর বেগুন ভাজা মুখে ঢুকালো,,চাচি রোদের পাতে আরেকটু খিচুড়ি তুলে দিতে দিতে রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
– মা তুমি যে আজ আমাদের বাড়িতে এসব ফলমূল দাদির জন্য নিয়ে এসেছো এটাকি তোমার আম্মু বা আব্বু জানে?
– না জানার কি আছে আন্টি। আর না জানলেই বা কি! আমি যে ভালোবেসে নিয়ে এসেছি এতে খুশি হোন আপনি?
– তা না মা,আসলে তোমার আম্মু আব্বু তো মনে হয় এ বাড়িতে তোমার আসা খুব একটা পছন্দ করেন না তাই জন্য বললাম যে..
– না আন্টি ওরা কিচ্ছু মনে করবে না,না আমাকে বকবে। আসলে মা একটু গম্ভীর তো আর বাবা আর্মিতে তাই সবাই ভাবে ওরা হয়তো খুব কঠিন। কিন্তু ওরা একদমই সে রকম না বিশ্বাস করুন..
চাচি মাথা নাড়িয়ে হু বলে আবার খাবারে মন দিলেন। সবার সাথে একটা জমজমাট গল্পের মাঝে খাবারের ইতি ঘটলো,চাচ্চু আর দাদি যে যার রুমে চলে আসতে চাচি এঁটো বাসন গুলো নিয়ে রান্না ঘরে আসলো। এদিকে এবার হাত ধুতে গিয়ে বাঁধলো ঝগড়া। কে আগে হাত ধুবে তাই নিয়ে উজান হিয়ার মাঝে শুরু হলো কথা কাটাকাটি। হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাতে ফেনা তুলে আঙ্গুল নাড়িয়ে ঝগড়া করছে দু’জন,এরই ফাঁকে শিশির আর রোদের হাত ধোয়া শেষ হয়ে ওরা বসে পড়লো কিন্তু এদের ঝগড়া থামার জো নেই।
– আপনি কিন্তু আমাকে এভাবে হ্যাটা করতে পারেন না উজান স্যার।
– তুমিও এভাবে আমার সাথে আঙ্গুল তুলে কথা বলতে পারো না হিয়া।
– যা করছি বেশ করছি,এটা আমার বাড়ি তাই আমি আগে হাত ধুবো হু।
– বাড়িতে গেস্ট আসলে বুঝি এভাবেই আপ্যায়ন করতে হয়,এটাই শিখিয়েছে তোমার শিশির ভাই তাই না?
– একদম আমার ভাইয়াকে নিয়ে বাজে কথা বলবেন না হ্যা, নাহলে কিন্তু।
– খুব লাগলো গায়ে না,তা বলে দেই কফি শপের বাহিরে কি করছিলে,বান্ধবী প্রেম করে আর তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দেও?
– না না,আমি তো শুধু..
চুপসে গেলো হিয়া। এ-ই সাদা বিলাইয়ের কোনো বিশ্বাস নেই যদি ভাইয়াকে বলে দেয় তখন! এক পা সরে আসলো হিয়া,উজান চোখ পাকিয়ে হাত ধুইয়ে নিলো,পরমুহূর্তে হিয়াও এসে যোগ দিলো তাতে। আঙ্গুলে আঙ্গুল বারি খেলো দু’জনের। উজান পানি থেকে হাত সরিয়ে হাত টা ঝারা দিতেই সব পানি ছিটকে পড়লো হিয়ার মুখে৷ বুঝাই যাচ্ছে এটা ইচ্ছাকৃত একটা কাজ। চোখ বড়বড় করে তাকালো হিয়া। হিয়াকে পাত্তা না দিয়ে তোয়ালে দিয়ে উজান হাত মুছতে যাবে ওমনি হিয়াও এসে তোয়ালে টান দিলো। দু’জনে তোয়ালের দু কানি দিয়ে হাত মুছতে থাকলো। তাও শুরু হলো টানাটানি। এদিকে রোদ এদের দু’জনের কান্ড দেখে শ্বাস ফেললো,উপায় না পেয়ে নিজের ওড়না টা বাড়িয়েই মুছে দিলো শিশিরের মুখ। অবাক চোখে রোদের দিকে মুখ ঘুড়ে তাকালো শিশির। একটা পরিতৃপ্ত টার দেখা মিললো দু’জনের মুখে। রোদের কানের পাশে চুল টা গুঁজে দিতে দিতে শান্ত কন্ঠে শিশির বললো,
– কখন এসেছো তুমি?
– এ-ই ঘন্টা দেড় এক হবে।
– আসার আগে আমাকে বলবা না একবার।
– কেনো বললে বুঝি আজ তাড়াতাড়ি খেতে আসতেন আপনি।
– না,
– তাহলে।
– হিয়ার রোদ আপুর জন্য একটা ওড়না বেছে রেখেছিলাম। সুন্দর। ওটা সাথে করে নিয়ে আসতাম।
খুশিতে লাফিয়ে উঠলো রোদ। আবার আরেকটা ওড়না। ইসস এ-ই মানুষ টা এতো ভালো কেনো? এদিকে তোয়ালে দিয়ে হাত মোছা শেষে দৌড়ে আসলো হিয়া। রোদ আর শিশির একটু দূরত্ব বজায় নিলো। মুখে এক বালতি হাসি টেনে হিয়া বললো এখন হবে লুডু খেলা,যে জিতবে সে বাকি তিনজনের কাছে যা চাইবে তাকে তাই দেওয়া হবে হু…
চলবে….
কালকে লুডু লেখায় কে জিতবে??
হিয়া❤️
উজান?
?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_০৭
#ইভা_রহমান
শিশিরের ফ্লোর বিছানায় লুডু বিছিয়ে চার পাশে গোল হয়ে চার মাথা এক করে বসে আছে চার জন। খেলা শুরু হয়ে গেছে অনেকক্ষণ হলো। রোদ আর হিয়া মুখোমুখি। এদিকে মুখোমুখি উজান আর শিশির। প্রথম প্রথম খেলার গতি দেখে মনেই হয়েছিলো যে দান টা বুঝি শিশির’ই জিতবে কিন্তু না গতি পাল্টে দিলো রোদ। খেয়ে নিলো পরপর শিশিরের দুটো গুটি। হিয়া ক্ষেপে আছে কারণ দুটো গুটি নিয়ে এদিক সেদিক করতে হচ্ছে তাকে। কোনোভাবে আর ছক্কা উঠছে না তার। এদিকে উজানের চারটে গুটি উঠানো শেষ। ডাক্তার বাবু সেগুলো ঘরে না ঢুকিয়ে চার স্টানে সেট করে রাখতে ব্যস্ত,কোন ফাঁকে হিয়ার গুটি খাওয়া যায় সেই ধান্দাতে। কিন্তু না একবার হিয়ার গুটি খেয়ে নিতেই ক্ষেপে উঠলো হিয়া। আহ! পৈশাচিক আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো উজানের ঠোঁটের কোণে। কিন্তু এই গুটি খাওয়া টাই হিয়ার জন্য লাকি হয়ে গেলো যেনো। পরের চালে দু ছক্কা পাঁচ এ বাজি মাত করে দিলো হিয়া। গুটি খেয়ে নিলো শিশির রোদ দু’জনের। সাথে খাওয়া দানে আবার ছয় উঠতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলো হিয়া। খেলা চলতে থাকলো। শিশির আর রোদের কোনো আশা নেই জেতার। শিশিরের সব গুটি বাহিরে রোদের যা একটা আছে সেটাও পর পর খেয়ে নিচ্ছে উজান আর হিয়া। তাই গা ছাড়া দিয়ে বসলো রোদ। এদিকে সব গুটি উঠে গিয়ে হিয়া উজান দু’জনের থাকলো এক এক গুটি। হিয়ার দরকার পাঁচ উজানের পুট। টান টান উওেজনায় মুখোমুখি উজান হিয়া। হিয়া চোখ বন্ধ করে দোয়া দরুদ পড়তে ব্যস্ত। শিশির রোদ ব্যস্ত কে জিতে তাই দেখার জন্য। হিয়া একবার করে চাল দিচ্ছে আর চোখ বন্ধ করছে। উজান চাল দিচ্ছে তাতেও চোখ বন্ধ করে রাখছে হিয়া। চলতে থাকলো কিছুক্ষণ। একটা পর্যায় উজানের চালে পুট উঠেই গেলো কিন্তু সাথে সাথে উজান সেটা উল্টে দিলো। হিয়ার চোখ বন্ধ থাকায় হিয়া বুঝলো না। রোদ আর শিশির হেঁসে দিলো। পরক্ষণে চোখ খুলে গুটির দিকে তাকাতে দম ফেললো হিয়া যাগ পুট উঠে নি তাহলে। শান্তি আর শান্তি। আবার চাল দিয়েই চোখ বন্ধ করে নিলো হিয়া। উজান চোখের পলকে গুটি পাল্টে দিয়ে সেটাকে পাঁচ বানিয়ে দিলো। এবার চোখ খুলতেই লাফিয়ে উঠলো হিয়া। পাঁচ উঠে গেলো এতো জলদি! হিয়ার খুশি মুখ দেখে সবাই তৃপ্তি পেলো যেনো। হিয়ার আনন্দেই যেনো সবার আনন্দ!
– ইয়েএএএ,,কি জানি কথা ছিলো এবার। যে জিতবে সে যা চাইবে তাকে তাই দিতে হবে,বলো বলো বলো মনে আছে তো নিশ্চয়ই।
রোদ হিয়ার নাক টেনে বললো বল কি চাই তোর। হিয়া সবার থেকে কথা দিয়ে নিলো সে যা চায় তাকে তাই দিতে হবে কিন্তু। সবাই হু হু বললেও রহস্যের হাসি হাসলো হিয়া। তার যে অনেক দিনের শখ একটা ফেইসবুক এ্যাকাউন্ট খুলার। আর আজ তো তার রোদ আপুও বাড়িতে,এ-ই সুযোগ ভাইকে পটিয়ে নেবার। হিয়ার মুখে ফেইসবুক খোলার কথা টা শুনতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন চোখ বড় করে তাকিয়ে উঠলো। তাহলে এ-ই ছিলো মেয়ের মনে..!
এক বাক্যে না করে দিলো শিশির। শুরু হলো দুই ভাই বোনের কথা কাটাকাটি। শিশির কিছুতেই মাধ্যমিকের আগে হিয়াকে এসব কোনো এ্যাকাউন্ট খুলে দিবে না। ওদিকে হিয়াও নাছোড়বান্দা যখন সবাইকে দিয়ে সে প্রমিস করে নিয়েছে তখন সে তো ফেইসবুক খুলবেই খুলবে। শিশিরের না তো নাই এদিকে হিয়া এবার রেগে গিয়ে শিশিরের জামা কাপড় সব ছুঁড়ে বিছানায় ফ্লোরে ফেলছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুই ভাইবোনের কান্ড দেখছে উজান আর রোদ। এদিকে দাদি ঘুমের ঘোরে খেঁকিয়ে উঠে বললো” কি হয়েছে হিয়ার,এরকম পাগলের বিলাপ করছে কেন দেখি,একটু গা টা বিছানায় দিয়ে শুইলাম তারো শান্তি নেই এই মেয়ের জন্য” রাগান্বিত শিশির আঙ্গুল তুলে বললো দেখ দাদি রেগে যাচ্ছে এরকম করিস না। এদিকে চাচি এসেও এক দফা গালি দিয়ে গেলো দুই ভাই বোনকে। শিশিরকে বললো মেয়েটা কি খুলে চাচ্ছে সেটা খুলে দিলেই তো হচ্ছে। চাচি চলে যেতেই রোদ এসে শিশিরের বাহু ধরে মিষ্টি সুরে বললো,
– দেও না একটা এ্যাকাউন্ট খুলে। সবারই তো আছে। মেয়েটা কতো শখ করে..
– একদম না রোদ। একদম আমাকে বাগাতে আসবে না তুমি। মাধ্যমিকের আগে এসব খুলে ওর রেজাল্ট খারাপ করবো নাকি আমি। এমনিতেও তো বই নিয়ে বসে না তার উপর।
– কে বলেছে হিয়া বই নিয়ে বসে না। না পড়লে কি আমার কাছে ভালো করতো বলো।
রোদ যতোটা পারছে শিশিরকে কনভেন্স করতে চেষ্টা করছে। এদিকে হিয়াও গাল মুখ ফুলিয়ে নিচে বসে দুঃখী দুঃখী ভাবে শিশিরের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা পর্যায় হার মানতে হলো শিশিরকে। বললো যদি উজান রাজি হয় তবেই খুলে দেওয়া হবে এ্যাকাউন্ট নায়তো না। শিশির জানতো এস এ টিচার উজান কখনোই হিয়াকে অন্তত এই বোর্ড পরীক্ষার আগে এসব কিছুতেই খুলে দিবে না। নেভার। কিন্তু শিশিরকে অবাক করে দিয়ে উজান নিজে থেকে বললো “আই হ্যাভ নো প্রবলেম,যদি চাস তো এখনি আমি হিয়াকে” খুশিতে লাফিয়ে উঠলো হিয়া। এ-ই তো হয়ে গেলো সব ঠিক আর কি চাই। শিশিরের মাথায় ব্যাপারটা ঢুকলো না উজান নিজে থেকে কি করে। কিন্তু এখন যখন বলে দিয়েছে উজান রাজি হলেই সে রাজি তাহলে আর কিইবা করার আছে তার।
!
!
শিশির আর রোদ জানালার কাছে দাঁড়িয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছে আর বৃষ্টি বিলাসে নিজেদের সুপ্ত ভালোবাসার উওাপ ছড়াচ্ছে। এদিকে ফ্লোরে বসে উজান হিয়াকে নিজের ফোনে ফেইসবুক এ্যাকাউন্ট খুলে দিচ্ছে। দু’জনের মাথা একসঙ্গে লাগানো আর একটু হলে ঠুকে যাবে এরকম। দু’জনে তাকিয়ে আছে ফোন স্ক্রীনে। উজান মগে চুমুক দিচ্ছে আর একটা করে স্টেপ পাড় করছে। উওেজনার বসে হিয়াও চুমুক দিয়ে চা খাচ্ছে সেই মগ থেকে..!!
– দেখি নিজের মতো করে একটা ফেইসবুকের পাসওয়ার্ড দেও,
হিয়ার দিকে ফোন টা বাড়িয়ে উল্টোদিকে মুখ করে রইলো উজান। হিয়া একটু পিছে এসে আরো আড়াল হয়ে ভাবতে থাকলো কি পাসওয়ার্ড দেওয়া যায়। অনেক লেখালেখি কাটাকুটি করে একটা মনের মত পাসওয়ার্ড ভেবে আসতে পাসওয়ার্ড টা লিখে আবার উজানকে ডেকে ফোন টা হাতে দিলো হিয়া। উজান সব ঠিক ঠাক দেখে নিয়ে খুলে দিলো হিয়ার সেই কাঙ্ক্ষিত এ্যাকাউন্ট। সর্বপ্রথম নিজের আইডিতে রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে,পরপর শিশির রোদ,লতা মোহিনী আরো যারা যারা আছে সবার আইডিতে রিকুয়েষ্ট দিয়ে একটা স্ট্যানডার আইডি খুলে প্রোফাইলে তালা ঝুলিয়ে দিলো মানে লক প্রোফাইলের আন্ডারে চলে গেলো হিয়ার আইডি। উজান হিয়াকে বুঝিয়ে দিতে থাকলো ফেইসবুকের আপাদমস্তক সবকিছু। কি লাইক,কি কমেন্ট,কি শেয়ার,কি পেইজ হেনো তেনো সব। শিশির রোদ নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত থাকায় এদিকের কিছু চোখে তুললো না কিন্তু হিয়া একটু মনে মনে অবাক হলো যে,যে গম্ভীর উজান স্যার একটার বেশি প্রয়োজনে কথা বলতে দুটো বাক্য ব্যায় করে না সে কি না আজ হিয়াকে ফেইসবুক খুলে দিয়ে একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে তো যাচ্ছে। তবে মনের অবাক টাকে খুব বেশি পাওা দিলো না হিয়া। ওর একটা নিজস্ব এ্যাকাউন্ট হচ্ছে এটাই অনেক। পাসওয়ার্ড তো আর উজান জানে না হে হে!
কিন্তু হিয়াকি আর জানতো তার উজান স্যার এমনি এমনি তাকে ফেইসবুক খুলে দেবার পাএ নন। কলেজে উঠলে তো শিশির এমনিতেও হিয়াকে ফোন কিনে দিয়ে ফেইসবুকে খুলেই দিতো তাই তার আগে না হয় হিয়ার ফেইসবুকের পুরো প্রোপার্টি হিয়ার নামে হিয়া ভোগ করলেও তার দলিলপত্র উজানের কাছে’ই থাক..!! উজানের ফোন নাম্বার দিয়ে এ্যাকাউন্ট খুলা তাই হিয়া অন্য কারো ফোনে লগইন করতে চাইলে রেফারেন্স কোড আসবে উজানের নাম্বারে,জি মেইলো দেওয়া উজানের নিজের আর পাসওয়ার্ড, কিন্তু সেটা কোথায় পাবে উজান! আরে হিয়া পাগলি তোমার স্যার যে তোমার হাতে ফোন তুলে দেবার আগে তার ফোনে স্ক্রীন রেকর্ডার ওপশন চালু করে রেখেছিলো তা কি আর তোমার জানতে..!!!!??
এদিকে ফেইসবুক নিয়ে কিছুক্ষণ মাতামাতি করার পর লতার ডাক আসতেই হিয়া সব ভূলে এক ছুটে দৌড় দিলো বাহিরে। উজানের দিকে দেখেও দেখলো না। উজান উঠে বললো রোদ অনেকক্ষন হলো মা ফোন দিচ্ছে ফিরতে হবে এবার। রোদ মাথা নাড়িয়ে বললো তুই গিয়ে বাইকটা বের করতে থাক আমি আসছি। উজান দু’জনকে একটু আলাদা মুহুর্ত উপহার দিতে হু বলে বেড়িয়ে আসতেই রোদ অকপটে জাপ্টে ধরলো শিশিরকে। ঘাবড়ে গেলো শিশির। তার পাগলি কি করছে কি এসব।
-রোদ..ছাড়ো..
ছাড়ার বদলে রোদ আরো আরাম করে জড়িয়ে নিলো শিশিরকে,
-হুঁশ,চুপ,তোমার বুকের উষ্ণুম নিচ্ছি না আমি।
-পাগলি ছাড়,চাচ্চু বাড়িতে,দাদি আছে। মার খাওয়াবি না-কি আমাকে।
– আচ্ছা ছাড়বো তার আগে কপালে একটা চুমু দেও।
-না,
– সত্যি দিবে না,কপালে না দিলে কিন্তু আমি এ-ই স্ট্রবেরী টাইপ সিগারেট খাওয়া ঠোঁট গুলোকে..
– না…
-তাহলে দেও..
– আমি বুঝি না সবার সামনে কতো বুঝদার সাজো তুমি আর আমার সামনে আসলে হিয়ার মতো বাচ্চা হয়ে যাও যে কেনো..দেখি ছাড়ো..
শিশিরের নরম ঠোঁটের আদলে কপালে স্নেহের পরশের লোভে রোদ শিশিরকে ছাড়লো ঠিকি কিন্তু নিরামিষ শিশির নিজের শিহরণকে সংযত করে রোদের ভাবনায় পুরো জল ঢেলে দিলো। দরজার কাছে এসে হাত দেখিয়ে বললো বের হোন ম্যাডাম। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রোদ। রাগে গটগট করে বেড়িয়ে আসলো সে। এদিকে বাইক বের করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে উজান। কিছুদূরে দাঁড়িয়ে লতার সাথে কানেকানে ফিসফিস করে গল্প দিতে ব্যস্ত হিয়া। এদিকে ফোন হাতে একবার হিয়ার দিকে উজান দেখছে তো কখনো ফোনের দিকে। হিয়ার নিজের পাসওয়ার্ড টাইপিং করার কাটাকুটি দেখে উজানের পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে প্রথমে হ্যালো কিটি/হিয়াকুইন/হিয়ামুনতাসীর/হিয়ামুন না এসব কিছুই চলবে না। শেষে গিয়ে ১০সেকেন্ড সময় নিয়ে হিয়া লিখলো ইংলিশে স্পেস ছাড়া রোদ_শিশির_হিয়া_উজান। পড়ে ওটা কেটে দিয়ে রোদ_শিশির_হিয়া_উজানস্যার। আবার স্যার কেটে দিয়ে শুধু রাখলো উজান। না আবার সাথে যোগ করলো স্যার। না আবার কেটে দিলো স্যার। এভাবে চলতে থাকলো কিছুক্ষণ। শেষে গিয়ে ঠেকলো রোদ_শিশির_হিয়া_উজানস্যার! Done….মনটায় এক রাশ মায়াময় আবেগী অনুভূতি এসে গ্রাস করলো উজানকে। হিয়া যে তার আপন মানুষদের তালিকাতে হৃদয়ের গহীনে উজান স্যারকেও জায়গা দিয়েছে সেটা ভেবেই চোখ হালকা টলটল করে উঠে উজানের। কিন্তু না তাঁকে কাঁদা যাবে না সে তো স্ট্র্যং পার্সোনালিটির ছেলে। যাক কোনোদিন স্যার টা না হয় নিজে হাতে বাদ দিয়ে দেবে সে আর হিয়া মিলে! অবশ্য এটা থাকলেও বা সমস্যা কি!
!
!
সময়ের বহমানতায় নিয়ম করেই চলতে থাকলো সবার জীবন,খরস্রোতা নদীর মতো কখনো প্রখর ঢেউ আবার কখনো’বা শান্ত পালের ক্লান্ত দুপুরের মতো জীবনে হাসি,মজা,সুখ,দুঃখ দিয়ে পেরুতে থাকলো চারটে অক্ষত হৃদয়ের সুপ্ত চাওয়া পাওয়া গুলো। হয়তো কোনো সম্পর্কের ঠিকঠাক প্রাপ্তি জুটেনি ভাগ্যে কিন্তু কিছু কিছু অপ্রাপ্তিতেও সেরা কিছু পাওয়া লুকিয়ে থাকে যেটা মনের গভীরে গিয়ে উপলব্ধি করলেই উপলব্ধ করা যায় নয়তো মহৎ কিছু না পাবার তাড়না মনুষ্যত্বকে শেষ করে দিয়ে বিষিয়ে তুলে আমাদের অন্তরটাকে..!!
উজানের কড়া শাসন,বেধে দেওয়া শক্ত রুটিন,প্রত্যেক পরীক্ষা শেষে হিয়ার জন্য শিশিরের সাথে রাস্তার মোড়ে চিন্তিত চাহনিতে অপেক্ষা করা,হিয়া বেরুতেই প্রশ্ন হাতে শিশিরের আগেই জিজ্ঞেস করা “কি?” উওরে কখনো বলা খুব ভালো আবার কখনো বা মোটামুটি,ফিজিক্স পরীক্ষা দিয়ে এসে তো অঝোরে কেঁদে দিয়ে ভাইয়ের বুকে লুটিয়ে পড়া,হিয়াকে বুকে আগলে রোদের সান্ত্বনা,সব মিলিয়ে একটা মান সম্মত সমাপ্তি ঘটিয়ে শেষ হয় হিয়ার স্কুল জীবনের রঙীন অধ্যায়।
রেজাল্ট একদম গোল্ডেন পর্যায়ে না গেলেও প্লাস টুকু তুলতে কোনো খামতি হয়নি হিয়ার। শিশির তো ভয়ে ছিলো এ-ই ভেবে যে ফিজিক্স পরীক্ষা দিয়ে যে-ই কান্নাকাটি শুরু করেছিলো তার বোন,কোনো ভাবে সেটাতে ফেইল আসলে গেলো সব আশা পানিতে ধুইয়ে। কিন্তু না হিয়ার যেটুকু পড়াশোনা এটাতে এ-ই রেজাল্ট আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো শিশিরের কাছে আজ। উজানো খুশি সাথে খুশিতে আত্মহারা হিয়া নিজেও। এদিকে স্কুলের অধ্যায় শেষ করে কলেজের রঙীন দুনিয়ার পা রাখতেই একটু যেনো বেশি ছটফটে হয়ে যাচ্ছে হিয়া। অবাধ্যতা মিশতে শুরু করেছে তার সারা রন্ধ্র জুড়ে।
!
!
কাপড়ের দোকান থেকে এখন শিশিরকে ট্রান্সফার করা হয়েছে থাইয়ের দোকানে। ছোট্ট পলাশো তার ভাইজানের সাথে এখানে ট্রান্সফার নিয়ে এসেছে। চাচ্চুকে বলে দিয়েছে শিশির ভাই যেখানে থাকবে ওখানে ওকেও চাকরি দেবার লাগবে। চাচ্চুও আর মানা করে নি। জানে পলাশ শিশির ছাড়া কিচ্ছু বুঝবে না। এদিকে থাইয়ের দোকানে কাজ নিয়ে শিশিরের যেনো দম ফেলার সময় নেই। বাড়িতে গিয়ে যে গোসল টা করে শান্তিমতো দুমুঠো খাবে তাও সময় নেই ওর এখন।
দোকানের পেছনের গলিতে পলাশ সহ দাঁড়িয়ে আছে রোদ..
-ও রোদ আপা তুমি কি আমার চাকরি খাইতে চাচ্ছো বলো তো,এ-ই মাঝেমধ্যে খাবার দিয়ে আমার সাথে আমার মা’কেও ফাঁসা’য় দিবার লাগছো কিন্তু তুমি,
রোদ ছোট্ট পলাশের চুল নেড়ে দিয়ে বলে,
-বালাইষাট তোর চাকরি কেনো খাইতে যাবো আমি,আমার কি বাড়িতে খাবারের অভাব,
পলাশ খিল খিল করে হেঁসে দিলো,রোদ পলাশকে থামিয়ে বলে,
-তুই না থাকলে আমার চুরি গুলোকে আড়াল কে করবে শুনি,
– হো,শুধু ভাই জানুক এ-ই টিফিন ভর্তি ভাত-তরকারি মোর মা না রোদ আপায় পাঠায় ঔদিনে আমাকে চাকরি থাইক্কা ঘাড় ধরে বার কইরা দেবে।
– না রে পাগল দিবে না। আমি আছি না। শোন এখানে চারটে রুই মাছের টুকরো আছে তুই দুটো খাস,তোর ভাইরে দুটো দিস,আর ভর্তায় ঝাল যে কেমন করে এতো হলো আজ বুঝলাম না,তোর ভাইরে কিন্তু বেশি ঝাল খেতে দিবি না কেমন,আলসার আছে ওর হালকা।
– হো,ঝাল আমি খাই,ভাই পায় না খাবার। তবে তোমরা এগলা কোন দেশি চাল খাও আপা,এতো চিকনা চিকনা,আমার ভাই মোটা দানার ভাত পেটে না ঢুকাইলে হয় না,
পলাশের কথায় হেঁসে দিলো রোদ,আর বেশিক্ষণ গলিতে না থেকে পলাশকে বিদায় দিয়ে বাড়িতে ফিরলো। এসে কাঁধের ব্যাগ টা বিছানাতে রাখতেই উজান এসে রোদের পাশে একটা বালিশে মাথা দিয়ে শুইয়ে নিলো,পা দুটো রোদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে রোদকে আদেশের সুরে বললো,
– হেবলি পা টিপতো,
রোদ উজানের পা ঝাটকা দিয়ে সরিয়ে বললো,
– ভাগ এহান থেকে,আমার জ্বর হলেও তো মাথা টিপে দিস না আর ছোট থেকে আমার দ্বারা পা টিপে নিস,লজ্জা করে না তোর,
উজান আবার রোদের দিকে পা বাড়িয়ে দিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,
– আচ্ছা দে,এবার জ্বর আসলে তোর মাথা হাত পা চুল সব টিপে দেবোনে…দিবি না…তাহলে কিন্তু শিশির’রে গিয়ে বলবো যে তুই রোজ রোজ পলাশ’রে দিয়ে…
রাগে উজানের পা দুটো এক পায়ে হালকা করে উঠিয়ে টিপে দিতে থাকলো রোদ,উজান ব্যস্ত ফোনে হিয়ার প্রোফাইল ঘাটতে। হঠাৎ পা টিপতে টিপতে রোদ অভিমানী সুরে বললো,
– শিশির কি কোনোদিন আমাকে গ্রহন করবে না ভাই!
– জানি না।
– কি জানিস তা তুই(রাগে)
– শুধু জানি তোর জন্য জীবন হলেও দিতে পারবে শিশির।
চোখে হালকা পানি এনে রোদ বললো,
– বিশ্বাস করতে পারলাম না তোর কথা, যদি আমার জন্যে মরতে পারে সে তাহলে আমার সাথে বাঁচতে কি সমস্যা ওর! না-কি আমার থেকেও বেটার কেউ আছে ওর জীবনে,থাকলে বলে দিক আর বিরক্ত করবো না ওকে..
উজান রোদের দিকে না তাকিয়েও বুঝলো রোদ কেঁদে ফেলছে,উজান ফোন টা রেখে উঠে রোদের সামনে দু পা ভাঁজ করে বসে রোদের মাথায় ভাইয়ের স্নেহময় হাত রাখলো,রোদ নিজের কান্না টা আড়াল করে উজানের দিকে ঘুরে তাকাতে উজান মুচকি হেঁসে দিয়ে বললো,
– এটা’ই যেনো তোর চোখের শেষ পানি হয়,এরপর কাঁদলে কিন্তু শিশিরকে খু*ন করে রেখে দিয়ে আসবো আমি,আমার বোনকে কাঁদায় এতো সাহস ওর।
রোদ মুখে অনেক কষ্টে একটা হাসি টেনে মাথায় রাখা উজানের হাত টা টেনে ধরে নিচে নামালো,
– আমার চোখের পানি সেই মানুষটাকে ভাবায় না ভাই।
উজান তপ্ত শ্বাস ছুঁড়ে বললো,
– একটা আইডিয়া দেবো তোকে?
-কি!(অস্ফুটে)
– শিশির তোকে যতো দূরে রাখতে চাইবে তুই ততো তার কাছে ভিড়বি,এস এ ম্যান আই নো ছেলেরা কিসে দূর্বল হয়। যতোই মুখে না না বলুক মনে তো আছে তোর জন্য সাত সমুদ্র সমান ভালোবাসা। তুই শুধু শিশিরের আশেপাশে থেকে চেষ্টা করবি সেই সমুদ্র সমান ভালোবাসা টাকে উথাল-পাথাল ঢেউ এ মাতিয়ে রাখতে,এমন ভাবে শিশিরের নিশ্বাসের সাথে মিশে যেতে হবে তোকে যাতে শিশির তোর মায়াজাল থেকে বেরুনো তো দূর,এ-ই গরীব অনাথ সে নিঃস্ব এসব বলে বলে যে-ই দেওয়াল তৈরি করে রাখছে তোর আর নিজের মাঝে সেই ধারলো ফলা টাও যেনো তোর মায়াজাল টাকে কেটে দিয়ে তা থেকে তাকে বের করতে না পারে…!!❤️
রোদ অবাক হয়ে উজানের কথা গুলো শুনছিলো,তার ভাই যে ডক্টরির মোটা মোটা বইয়ের বাহিরে গিয়েও ভালোবাসা,সম্পর্ক এগুলোকে এতো গভীরে গিয়ে মাপতে পারে এটা জানা ছিলো না তার!..রোদ উজানের চুল গুলো হালকা করে নাড়িয়ে দিয়ে বললো,
– বুঝলাম তোর কথার অন্তর্নিহিত মানে,কিন্তু নিজের মায়ার আটকাবো’ই বা কি করে তাকে শুনি,সে সময় দেয় আমাকে। সারাদিন দোকান আর দোকান,আর শুক্রবার দোকান ওফ তো আমাদের ওল গুষ্টি বাড়িতে..এখন?
উজান উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ব্রাশ করতে করতে বললো” এটা এখন তোর দায়িত্ব তুই কি করে সময় বের করে নিবি,আমরা টা আমি বললাম”
-হু,,তুই বের হচ্ছিস কোথাও এখন?
– হ্যা কোচিং এর দিকে যাচ্ছি,ক্লাস আছে.
– ওহ! আচ্ছা শোন,হিয়ার না একটা বই আছে আমার কাছে ওকে দিয়ে দিস তো..কলেজে উঠে এ-ই মেয়ের মন তো আরো হাওয়ার উড়ছে। পরশু নোটস ফেলে রেখে গিয়েছিল আর আজকে বই!
রোদ এসে উজানের হাতে হিয়ার বই টা দিতে সেখান থেকে বেড়িয়ে পড়লো সাদা কাগজের একটি অংশ। দু’জনে চোখ পাকিয়ে ফ্লোর থেকে চিঠি টা হাতে তুলে নিলো,উজান কাগজ টার এপিঠ ওপিঠ মেপে দেখতে গিয়ে লক্ষ্য করলো এটা একটা মোহিত প্রেমপএ! কপালে ভাঁজ পড়লো উজানের! রোদ চোখ বড় বড় করে পড়তে শুরু করলো সেই লুকায়িত চিঠির প্রত্যেকটা বাক্য..
প্রিয় হিয়া,
কি দিয়ে শুরু করা উচিৎ আমি জানি না,হাত কাঁপছে তবু আজ তোমাকে সবটা না বললেই আমার মন শান্ত হবে না। মনে আছে একবার লতা তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো একটা প্রেম কর না বোন,একটা প্রেম করলে কি এমন ক্ষতি হবে। তার উওরে তুমি বলেছিলে তোমার নাকি প্রেমে পড়ার বয়স হয়নি। বড় হলে দেখা যাবে করবো কি না…তাই তখন আর বলতে চেয়েও বলতে পারিনি কথা টা। আজ তো তুমি স্কুল পেড়িয়ে কলেজে পা বাড়িয়েছো এবার কি জড়াবে না কারো মায়াতে? জানি এখনো বড় হওনি তুমি কেবলই তো সব শুরু তবুও। আমি বলছি না তোমাকে আমার সাথে প্রেম করতে কিন্তু কথা দেও যেদিন তুমি প্রেমে পড়বে সেদিন সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটা যেনো আমি হই। নিশ্চয় তুমি এতোক্ষনে বুঝে গেছো আমি কে। যদি তোমার সম্মতি থাকে তাহলে আজ কোচিং শেষে আমি তোমার জন্য মোড়ের গলিতে অপেক্ষা করবো। যদি তুমি আসো ধরে নেবো এতে তোমার হ্যা আছে।
ইতি
তোমার কাছের কেউ একজন!
চোখ মুখ শক্ত হয়ে পাথর হয়ে যাচ্ছে উজানের। চোখে জ্বলছে রাগের তপ্ত আগুন। ঠোঁটে ঠোঁট চিপে রাগ টাকে দমাতে মরিয়া উজান। এদিকে রোদ উজানের এই অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে কুপোকাত!
– উজান,উজান,বিশ্বাস কর উজান তোর এ-ই বাংলার পাঁচের মতো মুখ টা দেখে আমার..
-রোদ!
কোনোমতে হাসিটা কন্ট্রোল করে রোদ উজানের কাঁধ ধরে বললো,
-সরি সরি,,আমাকে তো খুব জ্ঞান দিলি আর নিজের বেলা। শোন।সময় থাকতে পাখিকে খাঁচায় বন্দি করে নে নয়তো পাখি তোর অবাধ্য হয়ে অন্য কারো খাচার রানী বেশে বন্দি হ’য়ে যাবে উড়ে। তুই কিচ্ছু’ই করতে পারবি না।
রোদের দিকে আঙ্গুল তুলে কাঠ কাঠ কন্ঠে উজান বললো..
– এ-ই রাজত্বও আমার। আর রাজার রাজ্যের রানী টাও আমার! গট ইট..
রোদ হেঁসে দিয়ে বের হতে হতে বললো,
– আগে ভীত টা তো তৈরি কর। ইসস আমার তো মেয়েটার কথা ভেবেই কেমন জেলাস লাগছে কলেজে পা দিতে না দিতে প্রপোজ পাচ্ছে এরপর বাকি দুটো বছর না জানি..
উজানকে জ্বালাতেই রোদ কথা টা বলে এক দৌড়ে ভয়ে রুম থেকে পালিয়ে গেলো। উজান চিঠি টা হাতের মুঠোয় লন্ডভন্ড করে পিষে দিয়ে মুখে একটা ডেভিল সূচক হাসি এঁকে বললো “মোড়ের গলিতে..!!
চলবে….