চোখের_তারায়_তুই? #পর্ব_১৫

0
808

?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_১৫
#ইভা_রহমান

ধূ অন্ধকার বিস্তৃত ধানক্ষেত। আর এক পাশে ছোট খাটো দুটো টিনের দোকান৷ একটা যদিও বন্ধ,আরেকটায় দেখা যাচ্ছে মৃদু আলোর চিহ্ন। কারেন্ট নেই হাড়িকেনের খুপরি তে মিটেমিটে জ্বলছে সেই আগুন। বাইক টা সেই দোকানের অপজিটে একটু সাইডে দাড় করিয়ে রাখলো উজান৷ নেমে গিয়ে দোকানে এসে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট কিনলো,সাথে কিনলো হিয়ার জন্য একটা চিপস। লাইটারে সিগারেট ধরিয়ে হিয়ার কাছে এসে চিপস টা দিয়ে বাইকের নিচে আলতো হেলে বসলো সেই পিচঢালা পথে। গত এক সপ্তাহ ধরে না ছিলো খাওয়া না ঘুম এখন এই সিগারেটটাই পারে পেটের ক্ষুধার সাথে শরীরের শান্তি মিটিয়ে মাথা ব্যাথা টা কমাতে। রাগে ফুঁসতে থাকা হিয়াও গটগট করতে করতে উজানের পাশে গিয়ে বসলো। সামনে তাকিয়ে ঔ বহুদূর আকাশের পানে তাকিয়ে রইলো দুজন। মিটমিট তারা জ্বলছে। মেঘের চাদরে চাঁদের সরু চিকন ফালি দেখা যাচ্ছে সাথে বইছে আগমনরত শীতের হিমেল বাতাস! ধানফুলের গন্ধ সাথে সিগারেটের ধোঁয়া মিলিয়ে যেতে থাকলো হিমেল প্রকৃতির কোল জুড়ে! হিয়া চিপসের প্যাকেট টা কোলে রেখেই মাথা রাখলো উজানের বুকে। সাথে সাথে ওড়না দিয়ে চিপে ধরলো নিজের মুখ,ইসস কি বিশ্রী এই সিগারেটের স্মেল!

– হাশরের ময়দানে না আপনার আর ভাইয়ার একটা ইবাদতও কবুল হবে না দেখবেন। নামাজ পড়েন অথচ সিগারেট খান। তারউপর আপনি একজন উডবি ডক্টর। আপনার সাথে যায় এসব।

– সো হোয়াট। ডাক্তাররা কি মানুষ না। তারউপর আমি একজন ছেলে মানুষ সিগারেট খাওয়া একটা আর্ট তুমি বুঝবে না।

– ছিঃ। লজ্জা করা উচিৎ আপনার। যে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে এতো অসচেতন সে যে কি করে পেশেন্টদের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক করবে উপর মাবূদ’ই ভালো জানেন।

– চুপো তো বেশি পকপক করো তুমি আজকাল। ওয়েদার টা দেখছো। এরকম শুনসান পরিবেশ,রাতের অন্ধকার,ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস,সাথে গার্লফ্রেন্ড আর একটা সিগারেট,বুঝো এই ফিলিংস টা!

– হ্যা আপনার এই ফিলিংসের চক্করে কতোগুলো মিথ্যা বলতে হলো আমাকে। এখন যদি ভাইয়া বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞেস করে কিসের ফর্মের শেষ তারিখ,তখন আমি কি বলবো?

– বলে দেবে কিছু একটা। আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখন বলে দেবো কিছু।

– তাই ভালো। এখন এখানে কতোক্ষন বসে থাকবেন শুনি। কেউ এসে ধাওয়া করলে কি হবে জানেন। এটা কিন্তু আমাদের শহর না হ্যা।

– দৌড়ে পালাবো তখন। বাইক আছে না সাথে।

– বাইক আছে না সাথে।

ভেংচি এঁটে কথা টা রিপিট করলো হিয়া। হিয়াকে রাগে ফুঁসতে দেখে আরো লেপ্টে ধরলো উজান। হিয়াকে আরো জ্বালাতে ধোঁয়া ছাড়লো হিয়ার’ই মুখের সামনে। রাগে উজানের শার্ট চিপে ধরে উজানের বুকের সাথে নাক চিপে ধরলো হিয়া। এতো খারাপ এ-ই মানুষ টা। স্যার নামের অসহ্য মানুষ একটা!

!
!

কলেজ থেকে ফিরে কোচিং এর উদ্দেশ্য তৈরি হচ্ছে হিয়া। আকাশের অবস্থা খুব একটা ভালো না বিধায় চাচির তাগাদায় দূত ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে লতার বাড়ির দিকে রওনা দিলো সে। সত্যি আকাশ একদম কুচকুচে হয়ে আছে। সাথে ঝড়ো বাতাস। কোচিং আজকে হবে তো আদৌও। কেউ আসবে তো এ-ই বৃষ্টিতে। হাঁটতে হাঁটতে লতার বাড়ির সামনে এসে লতাপাতা বলে ডাক পাড়তেই ছাতা হাতে বেড়িয়ে আসলো লতা। বিচলিত কন্ঠে বললো,

– একি রিক্সা ডাকিসনি। বৃষ্টি তো এই পড়তে শুরু করলো বুঝি।

– হ্যা রিক্সা তো এই হিয়ার জন্য রোজ রোজ গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে না।

লতা এসে হিয়ার গাল দুটো টেনে দিয়ে বললো,

– তা কেনো হতে যাবে বান্ধুবী। তুমি তো তোমার জোয়ারভাটাকে বলতে পারো একটা রিক্সা তোমার জন্য বুক করে রাখতে। যতো খেয়াল রাখে আমার।

– আমার জোয়ারভাটা না তোমার ফয়সালের মতো বেকার না। উনি একজন অত্যন্ত ব্যস্তশীল একটা মানুষ ওনার এরকম ফালতু কাজের সময় নেই।

– ব্যস্ত না ছাই পুরাই নিরামিষ একটা।

নিজমনে ফিসফিস করে হিয়া বললো”উনি নিরামিষ হায়রে,উনি নিরামিষ হলে জীবনটা ধন্য হয়ে যেতো আমার,ধন্য”

অনেকদূর হেঁটে একটা রিক্সা জোগাড় করতে সক্ষম হলো দুই বান্ধবী। বৃষ্টি ঝরতে শুরু করেছে ঝমঝম ধারাতে। রিক্সা থেকে অনেক কষ্টে এক লাফে কোচিং গেটের মুখে এসে দাঁড়াতেই একটা বীভৎস বাজ পড়লো সামনের পোলটায়। লতার “আআ” নামক চিৎকারে বাজ পড়ার চাইতেও বেশি চটকে উঠলো হিয়া। রাগে চোখ মুখ খিঁচে দিয়ে বললো হারামি তুই তো নিজে হার্টফেইল করবি করবি সাথে আমাকেও তোর জন্য হসপিটালাইজড হতে হবে,বেয়াদব “….ক্লাসে এসে দেখলো মোটে চারজন স্টুডেন্ট বসে আছে একদম জানালার ধার ঘেষে। এরা হচ্ছে আলাদা গ্যাং যাদের সাথে হিয়াদের তেমন একটা ভাব নেই। চিন্তায় পড়ে গেলো লতা ক্লাস কি আজ আদৌও হবে সত্যি! সত্যি আর আজ ক্লাস হলো না। নীরব স্যার এসে দুটো অংক করতে দিয়েই ছুটি দিয়ে দিলেন। বৃষ্টি এই এক ঘন্টায় অনেকটা ধরেছে। এখন বাড়ি ফিরলে ফেরা যায়। লতাকে নিয়ে হেলেদুলে নিচে নামতেই আচমকা ঝড়ের বেগে উজান এসে উপস্থিত হিয়ার সামনে। একটু চমকে উঠলো হিয়া। আজ তো উজানের কোনো ক্লাস নেবার কথা ছিলো না,না তাদের আলাদা করে মিট করার কথা। তাহলে! চোখের ইশারায় উজান বললো লতাকে পাঠিয়ে দিতে। সেই ইশারা বুঝতে বেগ পেতে হলো না লতার নিজেরো। রেগে উঠে হিয়াকে একটা চিমটি দিয়ে গটগট করে বাহিরে আসলো লতা। এখন এই বৃষ্টিতে যাও বাড়ি একা! হু।

আজ বাইক নিয়ে আসেনি উজান। মনে মনে যে এ-ই লোকটার মাথায় কি চলছে সেই বুঝতে ব্যস্ত হিয়ার তুলতুলে মস্তিকের সব নিউরন। কিন্তু না বুঝা গেলো না কিছুই। উজান বেড়িয়ে একটা রিক্সা ঠিক করলো। শুধু ঠিক না এমনভাবে ঠিক করলো যে আগামী দেড় ঘন্টার জন্য রিক্সা পুরো রিজার্ভ তাদের জন্য। বৃষ্টি আবার নামলেও রিক্সাকে থামলে চলবে না। বেশি টাকার বিনিময়ে রাজি হলেন মামা নিজেও। হিয়াকে নিয়ে রিক্সায় উঠে হুট উঠিয়ে দিলো উজান। রিক্সা চললো ভার্সিটির রাস্তা পেড়িয়ে কোন সেই নাম না জানা পথের দিকে!

আবার বৃষ্টি শুরু হলো গুঁড়ি গুঁড়ি। ঝমঝম হলে বোধহয় আরো ভালো হতো। সামনের রিক্সার পর্দাটা দু’পাশে গুঁজে দিয়ে উপরটা হালকা খোলা রাখলো উজান। হাইটে লম্বা থাকায় রিক্সার মাথার রড গুলো গিয়ে বারবার বারি দিলো উজানের শক্ত মস্তিষ্কে। রাগে কপাল কুঁচকে ব্যাথায় বারবার আ করলো উজান। আর ফিঁক করে হাসতে থাকলো হিয়া।

– হাইট নিয়ে খুব গর্ব করতেন না দেখুন এখন বেশি লম্বা হলেও দোষ।

– কোথায় আমার মাথার লেগেছে একটু হাত বুলিয়ে দিবা তা না,দেখি..

উজান নিজের ডান হাতটা দিয়ে হিয়ার বা হাতটা সম্পূর্ণ নিজের দখলে নিয়ে কোলের কাছে এনে রাখলো। আর বা হাত পেছনে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো হিয়াকে। খানিকটা লজ্জা পেলো হিয়া। মাথা নুইয়ে উজানের কাঁধে আলতো করেই মাথা রাখতে এক ঝাক উড়ন্ত বাতাস এসে পর্দার সাথে সাথে উড়ে দিলো এ-ই দুই প্রেমিকপ্রেমিকার অশান্ত মনকে। ইসস বাতাস টা এতো ঠান্ডা হবার পরো হিয়ার এতো গরম লাগছে কেনো! কিছু বৃষ্টির ছাট এসে জমা হলো হিয়ার মুখে কিছুবা উজানের এদিকের হাত টায়। উজান মজার ছলে হিয়ার পিঠে তার আঙ্গুলের আঁকিবুঁকি সুরসুরি দিতেই লাফাতে শুরু করলো হিয়া। কিন্তু উজানের থেকে রেহাই মিললো না তার..!!

– এরকম করবেন না। মানুষ দেখবে তো।

– কেউ দেখবে না।

– আচ্ছা লোকতো আপনি। রিক্সা মামা বুঝে যাবে।

– আরে আমি কি এমন করছি যে উনি বুঝলে সমস্যা।

– ইসস খুব বাজে আপনি। লতাকে এ-ই মুহুর্তে থাকা লাগতো। থেকে দেখা লাগতো আপনি নিরামিষ না ছাই।

– তাই,শালিসাহেবা কি আমাকে নিরামিষ ভাবে নাকি?

– হুম মনে করে আপনি কোচিং-এ আর সবার সাথে যেরকম গম্ভীর। একটা রাফ এ্যান্ড টাফ এ্যাটিটিউট নিয়ে ঘোরেন আমার সামনেও সেরকম কঠিন।

– তাই!

– হুম সে তো আর জানে না না তাদের বদমেজাজী,হিটলার স্যার আমার সামনে আসলে ওনার সব ব্যাক্তিত্ব ভুলে গিয়ে ছোট্ট বাচ্চার থেকেও বাচ্চা হ’য়ে যায়।

– হুম আগে কি হতাম। তুমি তো আমাকে মাথায় তুলছো!

উজানের বুকে একটা কিল বসিয়ে হিয়া বললো,

– কি খারাপ আপনি উজান স্যার।

– আচ্ছা ওসব বাদ দেও। সামনের সপ্তাহ থেকে হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা। সব ক্লিয়ার আছে তো?

– হম আছে ঔ আরকি!

– ঔ আরকি টা আবার কি জিনিস হিয়া। এখনো এতো গা ছাড়া তোমার। একটু তো সিরিয়াস হবে এবার।আর তোমাকে যেই সাজেশন গুলো কিনে পড়তে বলেছিলাম বাসায়,সেগুলো এখনো কেনোনি নিশ্চয়ই। শিশির সময় না পেলে আমাকে বলতা এ্যাটলিস্ট একবার,আমি কিনে নিয়ে যেতাম।

– ওহহহহ…আরে বাবা কিনেছি তো,আর আপনি কতো বই কিনে দিবেন বলুন তো। ভাইয়া কিন্তু খুব রাগ হয় আমার সাথে।

– তুমি বলতে যা-ও বা কেনো। শিশির তো আর তোমার টেবিল এসে চেক করে না তাই না।

রেগে উঠে আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে হিয়া বললো,

– একটা কথা বলি,এই ঘুরতে এসে যদি এখনো আপনি বই খাতা পরীক্ষা রেজাল্ট এগুলো নিয়ে পড়ে থাকেন,তো বলুন আমি নেমে যাই রিক্সা থেকে..অসহ্য একবারে!

– আচ্ছা সরি সরি,কিন্তু তোমাকে তো একটু বুঝতে হবে না। বাড়িতে তো কোনো কাজ করো না সারাদিন,তা সে সময় টা পড়লেই তো অনেকটা আগায়।

– আমি,আমি কি নামবো রিক্সা থেকে। নামবো আমি।

রাগে হিয়া রিক্সা মামাকে পেছন থেকে ডেকে দিয়ে বললো”মামা রিক্সা থামাও তো তুমি আমি নামবো,কি হলো থামাও” সপাটে হিয়ার মুখ চিপে ধরে উজান রেগে গিয়ে বললো” চলো তো মামা তুমি। একদম রিক্সা থামাবে না”মামা হেঁসে দিয়ে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই চলতে শুরু করলো সামনে। এদিকে হিয়ার মুখ থেকে হাত সরিয়ে উজান ফোড়ন কেটে বললো,

– ভালো কথা বললে তো গায়ে ফোস্কা পড়ে আপনার। এসব শুনবেন কেনো?

রাগে গর্জে উঠলো হিয়া। মুখ ফুলিয়ে হাতে হাত গুটে নিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। ঠিক করলো পুরো রাস্তা আর কথাই বলবো না এ-ই বাজে লোকটার সাথে হুম। হিয়াকে এরকম মুখ ফুলিয়ে রাগতে দেখে মুচকি হেঁসে দিলো উজান। দেখি কতোক্ষনা এ-ই কথা না বলে থাকতে পারে তার পিচ্চি হিয়া রানি। একটু পরপর উজানের দিকে তাকাতেই আরো ক্ষেপে উঠছে হিয়া,আমাকে রাগিয়ে দেখো কেমন করে হাসছে,কত্তো খারাপ!

ফোনটা পকেট থেকে বের করে মিনারের ঝুম গানটা প্লে করলো উজান। ইতিমধ্যে গানের তালে বৃষ্টিও খুব জোরে ঝমঝমিয়ে পড়তে শুরু করেছে। রিক্সা মামা খুঁজছে একটা নিরাপদ আশ্রয় যদি রিক্সা টা একটু কোথাও থামানো যায়। বাতাসো বইছে সেই দমকা। পর্দা উড়ছে পড়পড় শব্দ করে। বৃষ্টির ছাট গায়ে মাখতে শিউরে উঠছে হিয়া। রাগান্বিত হিয়ার পেছনে হাত দিয়ে সুরসুরি দিতেই মুখ টিপে হাসতে লাগলো হিয়া। উকুশফুকুশ করলো ঠিকই কিন্তু না হেরে গেলে চলবে না। হু। উজান হিয়ার গলা পিঠ কোমড় সব জায়গায় সুরসুরি দিতে থাকলো আর গানের সাথে নিজেও গুনগুনিয়ে গান শুরু করলো” এখন আমি অন্য আমি হয়ে,ছুটে চলি তোমারই শহরে,হারিয়ে চোখের যতো ঘুম..ঝুম..হুম হু হু হু..তারে ডাকি”

উজানের গান শুনে হেঁসে দিলো হিয়া। হিয়ার খিলখিল হাসিতে আনন্দের ঢেউ উঠলো উজানের সারা শরীরে। মুঠো ভর্তি এক খাপলা বৃষ্টির পানি হিয়ার মুখে ছিটিয়ে দিতেই আরো হেঁসে দিলো হিয়া। তবে রে আমাকে ভিজিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

– আমাকে ভিজিয়ে দিলেন তো। আমি কিন্তু ছাড়বো না। দেবো দেবো ভিজিয়ে আপনাকে…..উজান স্যার এরকম করবেন না…আহ আমি ভিজে যাচ্ছি তোওওওও…আহ থামুন না…তবে রে।

বলেই হিয়া পুরো রিক্সার হুট খুলে দিলো এবার। যা ভিজেছি যখন পুরোটাই ভিজি সাথে ভিজিয়ে দেই এ-ই উজান নামক জোয়ার টাকে!

ঝমঝমিয়ে বৃষ্টিতে মুহুর্তে ভিজে গেলো উজান হিয়া। উজানের হাতের ফোনটা টপাটপ হিয়ার ব্যাগে ভরে দিলো উজান। রাস্তাঘাটের কিছু মানুষ ড্যাবড্যাব চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে এদের এই পাগলামি দেখে। হিয়া রিক্সা হুট উঠাতে চাইছে কিন্তু উজান আর উঠাতে দিচ্ছে না। এই ঝরা বর্ষায় এভাবে ভিজতে ভালোই লাগছে যেনো!

!
!

শহরের এদিকে বৃষ্টি ধরেছে প্রায় মিনিট দশেক হলো। সূর্যের চিকন কিরন দেখা মিললেও ঝিরিঝিরি বৃষ্টির একটা হালকা আমেজ আছে প্রকৃতির কোল জুড়ে। ক্লাস শেষে শিশিরের হাতে হাত ধরে রাস্তা হাঁটছে রোদ। ভালোই লাগছে এ-ই বৃষ্টি ভেজা রাস্তার স্বাদ নিতে তাও আবার প্রিয় মানুষটার হাত ধরে এভাবে। এটা যেনো আলাদা একটা শান্তি! হঠাৎই হাঁটতে হাঁটতে শিশিরররর বলে লাফিয়ে উঠলো রোদ৷ হকচকিয়ে রোদের দিকে তাকিয়ে শিশির বললো,

– এরকম করে ডাকছো কেনো,আমি তোমার সাথেই আছি রোদ।

রোদ একটু আদুরে হাসি টেনে বললো”একটা কদম ফুল পেরে দেও না গো,প্লিজজজ” রোদের ইশারায় সামনের গলির দিকে তাকাতেই শিশির দেখলো একটা বিরাট কদম গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে কদমবিলাসে ভরিয়ে তুলেছে চারপাশ। যদিও কদমের এই গন্ধটা নাকে এসে বড্ড যন্ত্রণা দিলো শিশিরের। কিন্তু কি আর করার রোদপাখির আবদার সেটা কি না শুনলে রোদ তাকে রেহাই দেবে এতো সহজে। রোদের সাথে সেই পিচ্ছিল রাস্তা পেড়িয়ে কদম গাছের সামনে এসে দাঁড়ালো শিশির। মাথা উপরে তুলে দেখলো সব ডাল একদম উঁচুতে।আর যেই একটা ডাল একটু নিচুতে ঝুলছে সেটা হাতে পাবে কি না সন্দেহ।

– এতোদূর কি করে হাতে পাবো রোদ।

– কি করে পাবে আমি জানি না। বর্ষার প্রথম কদম আমি তোমার কাছেই চাই ব্যাছ।

– তুমি আর তোমার জীদ! এখন আমি কিভাবে এটা হাতে..

– লাফ দেও।

– হ্যা লাফ দেই আর স্লিপ কেটে পড়ে যাই। দেখতিছো রাস্তা টা কেমন হ’য়ে আছে তারপরো..

– আমি জানি না,তুমি আমাকে কদম পেরে দেও। দেও মানে দেও।

রাগে রোদের চুল টেনে দিয়ে উপরে তাকিয়ে রইলো শিশির। এখন এ-ই কদম কি করে পাড়বে সে। এক দু বার পা উঁচু করে সাহস করে লাফ দিয়ে ডাল টা ধরতে চেষ্টা করলো ঠিকই কিন্তু হাতে এসেও আসলো না আর কদমফুলটা। বরং কিছু পানি ঝরে পড়লো সেই বৃষ্টি ভেজা ডাল থেকে। আরো একবার চেষ্টা করেও পারলো না শিশির পা টা হড়কে গেলো কিছুটা কিন্তু রোদ তাকে দু হাতে ধরে সামলে নিলো।

– পারছি না তো,কি করবো এখন?

– ঠিক আছে চলো।

মনটা খারাপ করে কথাটা বললো রোদ। রোদের মন খারাপটা বুঝতে বেগ পেতে হলো না শিশিরের। কি একটা ভেবে নিয়ে বললো” এদিকে আয় তো” রোদ শিশিরের দিকে এগিয়ে এসে বললো”কি” শিশির হাসি টেনে বললো” আমি আপনাকে ভাসিয়ে তুলছি আপনি হাত বাড়িয়ে পাড়ুন তো ফুলটা” মুখে এক বালতি হাসি টেনে রোদ লাফিয়ে উঠলো,আরে ব্যাছ এ-ই বুদ্ধি টা আমার মাথায় আসলো না কেনো। চটপট রোদের কোমড় পেঁচিয়ে রোদকে উপরে ভাসিয়ে ধরলো শিশির। এ-ই তো কি সুন্দর এখন ডাল টা হাতে আসলো রোদের। রোদ কদম ফুল টা ছিঁড়ে একটা ঝারা দিলো ডালাটায়। সাথে সাথে গাছের ডালটায় লেগে থাকা সব বৃষ্টির পানি টপটপ ঝরে পড়লো দুজনের গায়ে!

– হেই পাগলি কি করছিস।ভিজিয়ে দিবি নাকি!

– হে হে দারুণ না দেখো মনে হচ্ছে মুক্ত ঝরছে।

– হ্যা আর তোর ওজন দেখছিস মোটি। ফেলায় দেবো কিন্তু এবার আমি।

– দাঁড়াও দাঁড়াও আর একটু। আর একটা পাড়ি না। আরেকটু তুলো তো।

– রোদ নিয়েছো না একটা আর কতো। মানুষ দেখুক এরপর।

রোদ কথা শুনছে না। একটা পাড়ার পরপর হাত বাড়িয়ে যতোটা পাড়ছে তোতোটা কদম লুফে নিচ্ছে। এদিকে রোদকে এভাবে তুলে ধরে নিজেকে সংযত রাখতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে শিশিরের। শিশিরের মুখ বরাবর ডুবে আছে রোদের মাঝকোমড়। ইচ্ছে তো করছে গিলে খাই মেয়েটাকে। নিজে তো পাগল হয়েছে এবার আমাকেও পাগল করে দিবে। এদিকে ফুল পাড়তে পাড়তে কোথা হতে কদম গাছের মালিকের সতর্কতার হুঙ্কার ” কে রে কে আমার গাছের ফুল ছিঁড়ছে এই বৃষ্টি বাদলে” কানে পৌঁছাতে হকচকিয়ে শিশিরের কোল থেকে নেমে পড়লো রোদ। আর এক দৌড়ে শিশিরের হাত ধরে পালিয়ে গেলো সেই গলি ছেড়ে সামনের গলির মুখে। যাগ কদমফুল তো পাওয়া হলো এতো গুলো!!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here