চোখের_তারায়_তুই? #পর্ব_১৬

0
819

?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_১৬
#ইভা_রহমান

একদিনের বৃষ্টিবিলাসে নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে জ্বর ঠান্ডা সর্দি কাশি সব বাধিয়ে ফেলেছে উজান। ভোর রাত থেকে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর তার। সাথে নাক দিয়ে পড়ছে টপটপ পানি। গা পুড়ে যাচ্ছে। বমি যদিও এখনো হয়নি। কিন্তু শরীর ছেড়ে একদম নেতিয়ে পড়ছে পুরো। তারউপর বাড়িতে নেই তার মা। চাচির হাতে উজানের দায়িত্ব দিয়ে উনি গত এক সপ্তাহ ধরে নিজের বাবার বাড়িতে আছেন। এদিকে চাচিও সকাল সকাল বেড়িয়েছে সেই কোন এক কাজে। এখন যে বেলা বারোটা তবু তার আসার নাম নেই। এদিকে ভোর রাত থেকে ভাইয়ের সেবা করতে করতে ক্লান্ত রোদপাখি। সিয়াম নবাবজাদা তো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। কাকে ডেকেই বা একটু সাহায্য চাবে সে শুনি।

উজানের জন্য আদা দিয়ে চা নিয়ে এসে উজানের মাথার কাছে বসলো রোদ। থার্মোমিটার দিয়ে চেক করে দেখলো এখন অনেকটা কমে গেছে তার ভাইয়ের এই অসময়ের জ্বর। নাক টা কাপড় দিয়ে খুব করে টেনে নিয়ে উজান চা টা মুখে দিতে দিতে কাঁপতে শুরু করে বললো” হিয়া আজকে আসবে না পড়তে রোদ” কপট রেগে গিয়ে রোদ বললো” কেন ভাই বোনের সেবায় মন ভরছে না যে বউয়ের খোঁজ লাগাইছো তুমি” হেঁসে উঠলো উজান। চা টা আরেক ঢোক চুমুক দিয়ে বললো” এতো সুন্দর চা বানাস কি করে শুনি,শিশিরের তো কপাল খুলে গিয়েছে দেখছি,বউ যে রূপবতী সাথে এতো গুন তার” ভেংচি এঁটে দিয়ে রোদ বললো” কেনো ফোস্কা লাগে তোর” উজান গায়ের কম্বল টা ভালো করে মুড়ে নিয়ে বললো,

– ফোস্কা লাগবে কেনো,আমি আমার পিচ্চিকে দিয়ে কোনো কাজ করাবো নাকি,হিয়াকে কতো আদরে রাখবো জানিস।

– সে তো আমিও আমার ননদীনিরে আদরে রাখবো। কিন্তু তার জন্য আগে শিশির নামক পাহাড় টা টপাকাতে হবে তোমাকে বুঝলা।

– সে আর এমন কি হাতিঘোড়া কাজ।

– যদি শিশির না রাজি হয়,তখন,তখন সেই পাহাড় টপকাবি কেমন করে শুনি।

কাঠকাঠ কন্ঠে উজান বললো,

– টপকাতে পাড়বো না তো কি হয়েছে দরকার পড়লে সেই পাহাড় আমি কেটে ফেলবো!

রাগে এসে উজানের গলা চিপে ধরলো রোদ। নিজেকে সামলাতে না পেরে উজানের হাতে থাকা মগ থেকে অনেকটা চা পড়ে গেলো সাদা কম্বলটায়। আরো জোড়ে গলা চিপে দিয়ে রোদ বললো” ভূলেও যদি আমার শিশিরের দিকে তাকিয়েছিস না,এই গলা টিপে তোকে খু*ন করে দেবো আমি,বেয়াদব”

– কি ডেঞ্জারাস মেয়ে তুই রোদ। প্রেমিকের জন্য ভাইকে খু*ন করবি তুই। ব্রেকিং নিউজ টা কিন্তু জোশ হবে তাই না বল।

রাগে ক্ষেপে ওঠে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো রোদ। আসতে আসতে বললো,

– হ্যা খুব জোশ হবে। হু। যা খুশি কর গিয়ে। আর যদি ডাকছিস কিছু লাগলে..বেয়াদব!

হেঁসে দিয়ে আবার কম্বল মুড়ে শুইয়ে পড়লো উজান। জ্বর কমলেও গা ব্যাথা আর দূর্বলতা আছে এখনো অনেকটা। পা গুলো তো ব্যাথায় কটকট করছে যেনো। রোদের হাত ছিলে আছে আদা কাটতে গিয়ে নাহয় রোদই টিপে দিতো এই ব্যাথায় কাতর পাজোড়া। শরীর টাও তো গটগট কাঁপছে। এখন। বেলা তো বেড়িয়ে আসলো আর কখন পড়তে আসবে হিয়া। কলেজো তো বন্ধ আজ। তাহলে এতো দেড়ি হচ্ছে কিসের জন্য শুনি।

মোহিনী আর ঝিনুক মিলে দশমিনিট হলো পড়তে এসেছে। আর দশমিনিট বাদে লতা সহ রোদের বাড়িতে পড়তে আসলো হিয়া। এসেই শুনতে পেলো তার স্যারের এই মর্মান্তিক অবস্থা। যেখানে আরো মসলা ঢেলে রসালো বানালো রোদ। মুহুর্তে কান্নারত হ’য়ে পড়লো হিয়া। সব,সব আমার জন্য সব। কাল ওভাবে হুট না ফেলে দিলে আজ এ-ই অবস্থা হতো না স্যারের। কি দরকার ছিলো ওভাবে বৃষ্টিতে ভেজার!

রোদের থেকে পারমিশন নিয়ে উজানকে দেখতে গুটি গুটি পায়ে রুমে আসলো হিয়া। লতাকে বললো মেহুদের গিয়ে বলার দরকার নেই আমি এসেছি। লতা হিয়াকে অভয় দিয়ে বললো” যা তো গিয়ে আমার উজান জিজুর জোয়ার টা একটু নামিয়ে দে দেখি,এদিকটা আমি দেখছি” শ্বাস ছাড়লো হিয়া। সত্যি জীবনে মনের মতো এরকম একটা বন্ধু পাওয়া অনেক ভাগ্যের বিষয়। সবার কপালে এই সুখ জোটে না। এই পাতার বাচ্চা লতার জন্যেই তো সে বেঁচে যায় চিরকাল।

!
!

কম্বল মুড়ে দিয়ে তড়তড় করে কাঁপছে উজান। আর নাক টানছে ছ্যাৎ ছ্যাৎ শব্দ করে। গুটিগুটি পায়ে রুমে এসে অস্ফুটে কন্ঠে উজানকে উজান স্যার বলে ডাকতেই কেঁপে গিয়ে উঠে বসলো উজান৷ আরে তার পিচ্চি যে! এতো দেড়ি হলো এই অসুস্থ স্যারের কাছে আসতে শুনি।

কি বলতে কি বলতে গিয়ে কেঁদে দিলো হিয়া। ভয় পেয়ে ব্যাথা পায়ে উঠে দাঁড়ালো উজান। হিয়া কি ভয় পাচ্ছে। কাঁদছে যে এভাবে। ওঠে গিয়ে কান্নারত হিয়াকে শান্ত করতে গিয়েও ব্যর্থ হলো উজান। কি করবে এখন। রোদকে ডাকবে। উপায়ন্তর না পেয়ে দরজা লাগিয়ে হিয়াকে এসে নিজের প্রশ্বস্থ বুকে জাপ্টে ধরলো উজান। কি হয়েছে তার এই পিচ্চি পাখিটার শুনি। হিয়ার মাথায় হাত বুলে দিয়ে উজান বললো,

– এরকম করে কাঁদছো কেনো তুমি। কিছু বলেছি আমি। কিছু কিছু দোষ করেছি….হিয়া।

আহ্লাদে আরো গদগদ হয়ে উজানকে শক্ত করে মুড়ে নিলো হিয়া। কান্নারত কন্ঠে বললো

– সব আমার জন্য,সব সব। কতো জ্বর এসেছে আপনার আর আমি। কেনো বলেননি আমাকে যে আপনার এতো জ্বর। আমাকে ভরসা হয় না আপনার তাই না। রোদ আপু সব বলেছে আমাকে। কতো কষ্ট পাচ্ছিলেন আপনি আর আমি..

কান্নারত হিয়ার মুখ টা দুহাতের তালুতে তুলে ধরে উজান বললো” ধুর বোকা এজন্য কাঁদছো তুমি, আমি ভাবলাম…দেখি চোখ মুছো…হিয়া আমি রাগ হচ্ছি কিন্তু,চুপ করো।

– আপনি এখনো ডাক্তারের কাছে না গিয়ে বাড়িতে কি করছেন। দেখি কতো জ্বর আপনার।

কপালে হাত বুলিয়ে উজানের জ্বর মাপলো হিয়া।

– দেখেছেন কপাল পুড়ে যাচ্ছে। চোখ গুলোও কালো হয়ে গেছে। খুব কষ্ট হচ্ছে আপনার তাই না। আমি আমি ভাইয়াকে ডাকবো। ডেকে বলবো আপনাকে একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে। হুম ওটাই বরং ভালো হবে। একটু দাঁড়ান আপনি।

হিয়া তড়িঘড়ি করে ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই অস্থির হিয়াকে থামিয়ে দিলো উজান,দিয়ে বললো” এখন কি কান্নাকাটি করে যাবে এভাবে তুমি ,একটু সেবাযত্ন করলেই তো জ্বরটা সেরে যায় আমার” হিয়া বললো কি করতে হবে বলুন,আপনার এই জ্বর সারাতে যা করতে হবে সব সব করবো আমি” হেঁসে দিয়ে উজান বললো” বেশি কিছু না একটু এই পা গুলো টিপে দিবে প্লিজ,প্রচন্ড ব্যাথা দিচ্ছে শরীর টা। হিয়া চোখের পানি টা মুছে দিয়ে বললো” আপনি বসুন আমি দিচ্ছি টিপে,কিন্তু কেউ এসে দেখলে? উজান বিছানায় শুইয়ে গিয়ে বললো বাড়িতে আপাতত দেখার মানুষ নেই,চাচি আম্মু সবাই বাহিরে” একটু স্বস্তি পেয়ে উজানের পায়ের ধার ঘেষে উজানের পা দুটো নিজের কোলে আঁকড়ে ধরলো হিয়া। সত্যি এই একদিনের জ্বরে উজানের শরীরের প্রত্যেকটা রগ শিরা উপশিরা ব্যাথা দিচ্ছে। না-হয় নিজের পিচ্চিকে দিয়ে এই কাজ করায় উজান।

উজানের পায়ের পাতা থেকে শুরু করে হাটু অবধি খুব যত্নে ভরে টিপছে হিয়া। সাথে ফেলছে এক দু ফোটা লোনাজল। কেনো কাল ঔ অহেতুক ভিজতে গেলো দু’জন। খুব কি দরকার ছিলো। না তো। তাহলে। উজান হাত বাড়িয়ে দিয়ে আলতো সুরে হিয়াকে বললো”হিয়া হাত” চোখ মুছে উজানের হাত এসে টিপে দিতে শুরু করলো হিয়া। এরপর পরপর হাত গলা পিঠ সব টিপে নিয়ে পেছন ফিরলো উজান। আর পেছন ফিরতেই হিয়ার চোখ ভর্তি পানি দেখে আবারো অবাক হ’য়ে গেলো উজান৷ একি হিয়া এখনো কাঁদছে..!!

কান্নারত হিয়াকে নিজের বুকে এনে ফেললো উজান। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে কম্বল টা নিজেদের গায়ে মেলে দিতেই চোখ ঠিকরে বেড়িয়ে আসলো হিয়ার। উজান হিয়াকে নিজের বুকে মুড়ে নিয়ে বললো” সরি,পারমিশন না নিয়ে জড়িয়ে ধরবার জন্য,নাহলে এ-ই পিচ্চি টার কান্না থামানোর আর তো কোনো অপশন দেখছি না হাতে”সত্যি তো এখন কোথায় কাঁদছে হিয়া! শুকনো ঠোঁটে শূন্য বুকে আমতা আমতা করে হিয়া বললো,

– ইয়ে মানে বলছি কি স্যার..বাহিরে রোদ আপু আছে আমি যা-ই এখন। পড়তে বসতে হবে।

– তাই কি পড়াচ্ছ রোদ আপু তোমায় এখন,

– এি এিকোনোমিতি সা–ইন কস থি–টা।

উজান হিয়ার চুল পেঁচিয়ে নিতে নিতে বললো,

– ওহ..আমি পড়িয়ে দেই নাহয় আজ,সাইন স্কোয়ার থিটা প্লাস কস স্কোয়ার থিটা ইজ ই্যাকুয়াল টু

– ওয়ান!

– এ-ই তো দ্যাটস গ্রেট!

একটা বড় তপ্ত শ্বাস ফেললো হিয়া। ইসস কোন অসভ্যের পাল্লায় যে পড়তে হয়েছে তাকে। কি হবে এখন। উজান হিয়াকে জড়িয়ে নিয়ে বললো” এখন আমি তোমার উষ্ণুম নেবো,সো একটা কথা বলবা না” কথা বলবে কি হিয়া।বলার মতো পরিস্থিতিতে থাকলে না হিয়া বলবে!

!
!

হঠাৎই কলিংবেলের লাগাতার শব্দে আসছি আসছি বলে গেট খুলে দিতেই চমকে উঠলো রোদ। শিশির এই অসময়! টপাটপ গেট লাগিয়ে দিয়ে দরজার সীক আঁকড়ে জোরে জোরে শ্বাস টানতে শুরু করলো রোদ। শিশির এই অসময় কি করতে কি আসছে বাড়িতে। এখন কি হবে। উজান তো হিয়াকে নিয়ে!….মনে সাহস জুগিয়ে আবারো দরজা খুলে দিয়ে একটা হাসি দিলো রোদ। শিশির মুখটা খুলে কিছু বলতে যাবে ওমনি শিশিরের গাল দুটো বাচ্চাদের মতো টেনে ধরে ফটাফট কন্ঠে রোদ বলে উঠলো” তুমি জাস্ট দুমিনিট দাঁড়াও আমি এসেই দরজা খুলে দিচ্ছি আমার জানটুস” ভূ উপরে তুলে বোকা বোনে গেলো শিশির। রোদের মাথা ঠিক আছে তো। নাকি ভাইয়ের সেবা করতে করতে নিজেও জ্বর বাঁধিয়ে বসে আছে.. স্ট্রেন্জ!

রোদ মোহিনীদের ছুটি দিয়ে দৌড়ে এসে উজানের রুমের দরজা ধামধাম করে ধাক্কাতেই এক লাফে শোয়া থেকে বিছানায় উঠে বসলো হিয়া। এদিকে উজান সাহেব তো হিয়ার শরীরের উষ্ণুম নিতে গিয়ে কখন যে ঘুমের রাজ্যে ডুবে গেছে সে হুঁশ নেই আর। রোদের লাগাতার ডাকে গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে নিচে নেমে উজানের কাঁধ ঝাকি দিয়ে ডাকতে শুরু করলো হিয়া। কিন্তু এনাকে দেখো ওঠার কোনো নাম-ই নিচ্ছে না।

– স্যার দয়া করে উঠুন না প্লিজ। রোদ আপু ডাকছে তো। উজান স্যার,উঠুন না। আরে কি মুশকিল..স্যার।

গা আড়মোড়া দিয়ে ঘুমটা চোখ থেকে তাড়ালো উজান। ইসস কি সুন্দর একটা ঘুম লেগে আসছিলো চোখে। আর সবাইকে দেখো।উজান উঠে হিয়াকে দরজার আড়ালে রেখে দরজা খুলে দিতেই রোদ হাঁপিয়ে বলে উঠলো”

– শি শি শি!

শরীর টা একটা বিরাট মোছড় দিয়ে উজান বললো,

– কি শি শি করছিস রোদ।

– আরে শি শিশির আসছে। হিয়াকে বের কর জলদি।

উপর থেকে হাত নামিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসলো উজান। শীট বলে কপালে হাত দিয়ে হিয়াকে বের করতে যাবে ওমনি শিশির এসে হাজির ঠিক রোদের সামনে! চোখ বড় বড় করে এ-ই মুহুর্তে তাকিয়ে আছে রোদ। কি জবাব দেবে এখন শিশিরকে। শিশির কি হিয়াকে দেখেছে না দেখেনি কোনটা!

– তু তু তুমি এখানে। আমি না দরজা লাগিয়ে দিয়ে আসলাম।

– হ্যা,ঔ লতাদের বেড়িয়ে যেতে দেখে আমি ভেতরে ঢুকলাম। বাট তুমি এতো ঘাবড়ে আছো কেনো? it’s everything all Right?

– হ্যা হুম সব সব ঠিক। ভুল ভুল কি হবে।

চোখের করুন ইশারায় বোনের কাছে সাহায্যের আবেদন করলো উজান। রোদ কপাল কুঁচকে জানান দিলো এটাই লাস্ট কিন্তু! উজান মাথা দুলিয়ে নিজ মনে বললো ওক্কে মেরি পেয়ারি বেহেনা….শ্বাস ছেড়ে শিশিরকে টেনে হিছড়ে নিজের রুমে নিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো রোদ। একটানে শিশিরকে ফেললো নিজের বেডের উপর। আর ফেলেই বেষ্টন তৈরি করে বসে পড়লো শিশিরের উপর। এ-ই তিনটে ঘটনা এমনই ভাবে আর এতো দূত ঘটলো যে ঘটনা আদৌও কি হচ্ছে সেটা বুঝতেই পুরো সময় পেড়িয়ে গেলো শিশিরের। সে তো এসেছিলো তার অসুস্থ বন্ধুকে দেখতে আর এদিকে রোদ কি না তাকে এভাবে!

অপরপান্তে উজানের এই ছেলেমানুষীর জন্য হাজারটা বোকা দিতে থাকলো হিয়া। হালকা শাসন করে বললো আর কখনো যদি এরকম দেখেছি না আর আসবোই না আপনার বাড়িতে হু।

– আমি কি জানতাম শিশির আসবে।

– বিপদ না বলে কয়ে আসে না। খুব তো আমার সামনে ভাব নিচ্ছেন তা ভাইয়ার সামনে বিড়াল হয়ে যান কেনো শুনি।

– বিড়াল হয়ে যাই না পাখি। তোমাকে স্বীকার করার সৎ আছে আপনার। কিন্তু আমাদের ভালোবাসাটকাকে এভাবে কখনো প্রকাশ করতে চাইনা আমি শিশিরের সামনে..সে তো আমাদেরকে এভাবে দেখে ভুলও ভাবতে পারে। ভাবতে পারে আমরা কোনো..ইউ নো।

– ওসব কেনো ভাবতে যাবে,আর আমরা তো কিছুই করছিলাম না না,আপনি অসুস্থ তাই আমি একটু সেবা করছিলাম।

– হ্যা সেটা তো আমরা জানি না,বাহিরের মানুষ তো জানে না।

– ধুর যান তো আপনি। আমার ভাইয়ার মনমানসিকতা ওতো বাজেও না। যতোটা আপনি ভয় পাচ্ছেন। দেখি ছাড়ুন আমি ভাইয়ার কাছে যাবো…আহা ছাড়ুন না।

উজান হিয়াকে আরো একবার বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে একটা স্নেহের পরশ আঁকে হিয়ার কপালে। আলতো করে দরজা খুলে এদিক সেদিক দেখে বেড়িয়ে আসে হিয়াকে নিয়ে।

!
!

এদিকে নিজের উপর বসে থাকা রোদকে ঝারি দিয়ে শিশির বললো,

– তুমি আমার কিসের উপর বসছো রোদ। নামো বলছি।

হুঁশ ফিরতে শিশিরের উপর থেকে নেমে দুগালে দুবার তবা তবা কাটলো রোদেলা। ইসস মনে হচ্ছে লজ্জায় পুরো ডুবে যাই মাটির তলে। নিজেকে সামলে নিয়ে শিশিরের বুকে এসে পড়লো রোদ। পরিস্থিতিটাকে অন্য দিকে ডাইভার্ট করতে শিশিরের ঠোঁট যুগলে হাত রেখে দিয়ে বললো,

– এতো লজ্জা কিসের আপনার শুনি?

– আপনার কোনো লজ্জা নেই যে তাই… আর এটা কি হচ্ছে। গেট লাগিয়ে দিয়ে এসব কি করছো তুমি। বাড়িতে কেউ নেই?

– না আপাতত সেরকম কেউ নেই। সিয়াম আছে কিন্তু আপাতত সে টাল হয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। এতো জলদি উঠবে বলে মনে হয় না।

– তোমার ভাই যে এসব নেশা করে তোমার বাড়ি থেকে কেউ কিছু বলে না।

– বাবা তো অনেক বলে,শুনলে তো সে। এটা নাকি এখনকার কালচার!

– হু কালচার..দেখি উঠো এখন আমি উজানকে দেখতে আসছি তোমার সাথে খোশগল্প দিতে না। উঠবা কি।

রোদ উঠলো না বরং আরো সুন্দর মতো শিশিরকে জড়িয়ে ধরে বললো” ইসস কবে যে এ-ই বুকটায় সারাদিন মাথা দিয়ে ঘুমোবো আমি আর”রোদের মাথায় হাত বুলে দিয়ে শিশির বললো” তুই তোর এ-ই বিলাসীতা ছেড়ে আমার সাথে থাকতে পারবি তো রোদ” রোদেলা শিশিরের বুকে মুখ ঘষে নিয়ে বললো” আগে আপনার সাথে নিয়ে গিয়ে তো দেখান”শিশির রোদের মাথায় ঠোঁট বুলে দিয়ে বললো”সব হবে,শুধু একটু ধর্য্য ধরো তুমি” রোদ একটা হাসি দিয়ে বললো ” হুম”

শিশির রোদকে নিয়ে উঠে এসে দরজা খুলে বাহিরে পা রাখতেই হিয়া আচমকা এসে ভাউ বলে চিৎকার দিতেই অনেকটা ভয় পেয়ে উঠলো শিশির। রোদো ভয়ে বেড়িয়ে এসে কি হয়েছে বলে চিৎকার করতেই খিলখিল করে হেঁসে দিলো হিয়া,ফোড়ন কেটে দিয়ে বললো”

– আপুর সাথে ভেতরে কি করতিছিলি ভাইয়াআআ..!!

শিশির কপাল কুঁচকে হিয়ার কান মুলে দিয়ে বললো” বেশি পাকবি না,ছোট আছিস ছোটোর মতো থাক,ফাজিল”

– আরে আরে আর বলবো না কানটা তো ছাড়।

উজান শার্টের হাতা ফ্লোড করতে করতে এসে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো” ছোট বলিস কেনো ওকে সবসময়,সী ইজ নাও এ্যাডাল্ট এনাফ”

শিশির হিয়ার মাথায় হাত বুলে দিয়ে বললো” এ-ই হেবলি তো আশি বছরের বুড়ি হয়ে গেলেও আমার কাছে সেই ছোট্ট হিয়া’ ই থাকবে তাই না বুড়ি” হিয়া মুচকি হাসলো। মানে হুম। একদম ভাইয়ের আদরের গদগদ হয়ে থাকবে সবসময়। রোদ এবার ফোড়ন কেটে দিয়ে বললো” শুধু ভাইয়ের কেনো,আমার ননদীনি তার বর এরো খুব আদরের হবে দেখে নিও তোমরা। লজ্জায় উজানের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো হিয়া। আর উজান চোখে আগুন দেখিয়ে বললো”থামবি কি তুই,রোদ”

!
!

হিয়ার হাফ ইয়ারলি পরীক্ষার সমাপ্তি ঘটলো এরমধ্যে। উজানের কড়া শাসন আর রোদের এক্সট্রা কেয়ার সব মিলিয়ে পরীক্ষাটা বেশ ভালোই চলে গেলো। কথা ছিলো হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা শেষ হলেই কোচিং থেকে একটা বড়সড় ট্যুরের আয়োজন করা হবে। অনেকদিন হলো সেই ক্লাস এ্যাইটে পড়াকালীন একবার কোচিং থেকে বাহিরে নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু এরপর এই এতো বছরে একবারো একটা পিকনিকে অবধি যাওয়া হয় নি। না কোনো ছোট্ট গেটটুগেদার এর আয়োজন। তাই সবার বায়না তে এবারো একটা ছোট্ট ট্যুরের আয়োজন করা হয়েছিল মহাস্থানগড় যাবার উদ্দেশ্যে কিন্তু অনেকের কাছে এইটুকুনি পথই বিরাট পথের সমান মনে হলো। অনেকের গার্ডিয়ান এলাও করলো না। তাই শেষমেষ ঠিক হয় এ-ই সামনে ভিন্নজগৎ থেকে একটা ছোট্ট খাট্টো পিকনিকের আয়োজন করে ঘুরে আসার। সবাই তো মহাখুশি। আর হিয়াদের ব্যাচ তো আরো খুশি কারণ আর ছ’মাস বাদেই এ-ই কোচিং এর পার্ট তাদের চুকু যাবে। যাবার আগে একটা পিকনিক হলে মন্দ হয় না ব্যাপারটা! হোক না-হয় সেটা ছোট্ট করেই!

– আমি পিকনিকে যাবো যাবো যাবো। তুই যেতে না দিলে আমি পালিয়ে যাবো।

– আহ হিয়া বাচ্চাদের মতো জীদ করবি না। এমন না যে তোকে আমি ভিন্নজগৎ কখনো দেখাইনি। সেদিন মামারাও যখন আসলো সবাই মিলে গেলি না ঘুরতে। আর কতো যেতে হবে।

– আশ্চর্য তো৷ তোর সাথে যাওয়া,মামুর সাথে যাওয়া আর কোচিং থেকে সব ফ্রেন্ডরা মিলে যাওয়া কি এক জিনিস। ওখানে কতো মজা হবে। লতা মেহু সবাই যাবে। ইনফেক্ট স্যাররাও সবাই যাবে। সায়রা ম্যাম যাবে,নীরব স্যার যাবে আর উজান স্যার তো আছেই তাহলে সমস্যা কি তোর।

– সমস্যা তুই নিজে। তুই যদি ম্যাচিউর হতি। দিন দুনিয়া বুঝে চলতে পারতি আমার কোনো চিন্তা ছিলো না। কিন্তু তুই তো এখনো একটা ছোট বাচ্চা। যদি হারিয়ে যাস।

চিৎকার করে হিয়া বললো,

– আমি ছোট বাচ্চা নাআআআআআ। আমি এখন ইন্টারে পড়িইইইই…ও রোদ আপু তুমি একটু ভাইয়াকে বোঝাও না। কেনো এরকম করে আমার সাথে। আমি কি ছোট বাচ্চা বলো যে হারিয়ে যাবো।

রোদ হিয়ার মাথায় হাত বুলে দিয়ে শিশিরের দিকে এগিয়ে কিছু বলতেই শিশির বলে উঠে,

– একদম না। হিয়ার হয়ে কিছু বলতে আসবে না। আগের বার আমি সাথে ছিলাম তারপরো ওর কি হয়েছিলো মনে আছে তোমার। চড়কি থেকে পড়ে পুরো বা পা। এখনো সেলাই এর দাগ আছে।

– কোথায় দাগ আছে একটুও দাগ নেই দেখো আপু।

– এ তুই যা তো এখান থেকে। যাবি না আমি লাঠি তুলবো।

শিশির ভয় দেখিয়ে বেতের স্কেল টা তুলতেই উজানের পেছনে টুক করে লাফিয়ে গিয়ে ভ্যাএ করে কেঁদে দিলো হিয়া! এদিকে রোদ, আদুরে কন্ঠে শিশিরের বাহু ধরে বলে

– আচ্ছা তুমিও তাহলে ওদের সাথে গেলেই তো পারো। আর ঝামেলা থাকছে না।

– বাড়িতে চাচি চাচ্চু দাদি কেউ নেই রোদ আর কাল কেনো পরশুরাতেও ওরা ফিরবে না। দোকান সামলাতে হবে। ওর বায়না শুনলে হবে এখন আমার।

– ওজন্যই তো বলছি বাড়িতে ও একা কি করে থাকবে।

– এ কয়দিন একা ছিলো না ও বাড়িতে।

– কি মুশকিল এ কয়দিন ছিলোটাই বা কোথায় ও বাসায়। সারাদিন তো কলেজ কোচিং বাহিরে, আর রাতে তুমি আর ও। তাহলে। আর কাল তো শুক্রবার কি করবে মেয়েটা বাসায় একা।

– কালকে তো আমিও থাকবো বাসায়। কাল তো আমারো দোকান বন্ধ।

বিরক্ত হয়ে গেলো রোদ। এতো দেখছি কোনো যুক্তিই শুনতে চাইছে না। আশ্চর্য। এদিকে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তিনজনের কাহিনী দেখে যাচ্ছিলো উজান। শিশিরের কাঠকাঠ কন্ঠ,রোদের অস্থির চিএে বোঝানোর ভঙ্গি,আর হিয়ার চোখের টপটপ লোনাজল,তিনটে জিনিস বেশ বিন্দাসে উপভোগ করছিলো যেনো সে। হিয়া উপায়ন্তর না পেয়ে উজানের শার্ট খিঁচে ধরে করুন চাহনি দিয়ে বললো একটু বুঝান না আপনি ভাইয়াকে। আপনি বুঝালে ঠিক রাজি হয়ে যাবে প্লিজজজজ। হাতে থাকা বিস্কুট টা মুখে দিয়ে হাত ঝারলো উজান। পাশ থেকে পানি টা গিলে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে শিশিরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত দুটো ভাজ করে নিলো। নাক টা বুড়ো আঙুলে ঘষে নিয়ে বললো,

– আমাকে ভরসা করিস তো তুই!

– তোকে ভরসা করি কিন্তু হিয়াকে না।

কথাটা ঠিক হজম হলো না হিয়ার। রেগে গিয়ে চিৎকার করে হিয়া বললো” কত্তো খারাপ তুই ভাইয়া। কথাই বলবো না আমি আর তোর সাথে” ব’লেই হনহন করে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের রুমে গিয়ে মুখ গোমড়া করে বসে রইলো হিয়া।

এদিকে রোদো রেগে গিয়ে বললো,

– দেখলে তো মেয়েটা কতো মন খারাপ করে চলে গেলো। ও তো বড় হয়েছে এখন।ওকে একটু একা বের হতে হবে না। নিজে কিছু শিখতে হবে না। এভাবে কতোদিন তোমার উপর ডিপেন্ড করে চলবে আজব।

– রোদ একদম ঠিক বলছে শিশির। হিয়াকে তো এখন শিখতে হবে সবকিছু। কতোদিন আমি তুই বা চাচ্চুর সাথে গিয়ে সব করবে। তার তো নিজেরো একটা স্বাধীনতা আছে।

– সেটা বিষয় না। আজ যদি লতা বা মেহুদের কে কেউ কিছু বলে বা করে ওদের নিজেদের প্রটেক্ট করার মতো ক্ষমতা আছে কিন্তু হিয়া,সে তো ভয়ে আগে কাঁদতে শুরু করবে। ওর তো শুধু আমার সাথে জবরদস্তি চলে। অন্য মানুষের সামনে তো একটা কথা বলতে পারে না।

– তার জন্য তুই নিজে দায়ী…আর কোনো কথা না। কাল হিয়া যাচ্ছে আর হিয়ার সব রেসপনসেবিলিটি আমার। ওকে।

– তুই পারবি না ওকে সামলাতে।

ফিসফিস করে উজান বললো” এতোদিন সামলে আসলাম আর বলে কিনা”
শিশির একপ্রকার জোড়াজুড়িতে রাজি হয়ে নিলো ঠিকই কিন্তু খুব একটা ভরসা করতে পারলো না। একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে ওয়াশরুমের দিকে যেতেই উজান নিজের বাহুর দ্বারা রোদের কাঁধে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বললো” একটা তো থ্যাংকস ডিজার্ভ করি আমি তাই না বল”

ভাব ধরে রোদ বললো,

– কি-সে-র জন্য।

– এ-ই যে কাল আমি আর হিয়া তো যাচ্ছি। এদিকে তুই আর শিশির..বাড়ি কিন্তু পুরো ফাঁকা। ”

উজানের কাঁধে একটা বারি দিয়ে রোদ বললো” ফাজিল একটা,তোর বন্ধু পুরাই নিরামিষের গোডাউন ভাই,বিয়ের দু তিন বছরের তোকে মামা বানাতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে আমার..!!”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here