চোখের_তারায়_তুই? #পর্ব_১৭

0
650

?#চোখের_তারায়_তুই?
#পর্ব_১৭
#ইভা_রহমান

বাস ভাড়া করে,ছোট বড় স্যার ম্যাডাম সব মিলিয়ে মোট ৫৫ জনের একটা পুরো গ্যাং এসে পৌঁছালো ভিন্ন জগৎ এর মূল ফটকে। সেই ফটক থেকেই শুরু হলো সবার হৈ-হুল্লোড় আর হাসিমজা আনন্দের মাখামাখি। যে যার টিমে,যে ক্লাস যেই স্যারের অধীনে সেভাবেই ঘুরেঘুরে দেখা হলো চারিপাশ। মাঝেমধ্যে দল বদলে গেলো। কেউ বা এসে নিজেদের ইচ্ছেমতো দলে যোগ দিলো। আবার কখনো সব দল এক হয়ে ঘুরে চললো আশপাশ। কারো কাছে যেমন ভিন্নজগৎ এ-ই প্রথম দেখা কারো কাছে বা বছরে অনেক বার। হিয়ার কাছেও ব্যাপারটা অনেকবার দেখার মতো। এইতো সেদিন মামুরা শহরে বেরুতে আসায় সেও এসেছিলো মামু ঋতু সবার সাথে মিলে ভিন্ন জগৎ দেখতে। তাই হিয়ার মাঝে নতুনত্ব দেখার সে-রকম একটা অনুভূতি আজ মনে নেই। বন্ধু দের সাথে আসতে হয় মজা নিতে হয় তাই জন্যেই আসা আরকি।

একটা সময় হাঁটতে হাঁটতে খুব বোরিং আর বিরক্ত হয়ে উঠলো হিয়া। সবাইকে দেখো কিরকম কাপল কাপল হাঁটছে। স্যাররাও কিছু বলছে না আজকে, কত্তো খারাপ। লতাটাও ঔযে ফয়সালের লেজ ধরেছে সেটা ছাড়ার তো নাম গন্ধই নেই যেনো তার,বেয়াদব একটা।

রাগে একটা বসার জায়গায় বসে পড়লো হিয়া। না হাঁটতে ভালো লাগছে না আর। সবাই এইদিক টা ঘুরে দেখুক তারপর না হয় আবার ওদের সাথে হাটা ধরবো।

বেঞ্চে বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে প্রকৃতি দেখচ্ছে হিয়া। আর লতা,মেহু এদের দিকে তাকিয়ে আপসোসের সুর টেনে বলছে,

– ইশশ আজকে যদি আমিও ব্যাচমেটের সাথে প্রেম করতাম,কি সুন্দর এভাবে পাশাপাশি হেঁটে গল্প করতে পারতাম। আর হয়েছে তো এক জ্বালা, স্যার মানুষ,এখন এনাকে নিয়ে হাতে হাত ধরে হাটলেও তো ম্যাম,বড় স্যার সবাই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে..ধুর ভাল লাগে না এর চাইতে বাড়িতে থাকলেই বোধহয় ভালো হতো,একটা গল্পের বই তো শেষ হতো অনন্ত। কেনো যে ভাইয়ার কথা শুনলাম না। আর এনাকে দেখো আমার দিকে কোনো খেয়ালই নেই। মনে তো হয় যেনো আমি অদৃশ্য হয়ে আছি। হু।

হঠাৎই কোথা থেকে ধুপ করে এসে হিয়ার পাশে বসে একটা বিরাট হাই তুললো উজান। একটা রাফ এ্যান্ড টাফ এ্যাটিটিউট নিয়ে চোখের ব্ল্যাক সানগ্লাস টা ঠিক করে, হিয়ার দিকে ড্রিংকের বোতল টা এগিয়ে দিয়ে বললো” খাবে” হিয়া মুখ ফিরিয়ে বললো “না” উজান বুঝলো হিয়া একটু রেগে আছে। হিয়ার গাল টেনে দিয়ে বললো

-এখানে একা একা বসে আছো যে?

– এমনি,ভালো লাগছে না।

– হঠাৎ,দেখি শরীর খারাপ নাকি।

– না শরীর ঠিক আছে।

-তাহলে?

– আমার কিছু ভালো লাগছে না। সবাইকে দেখুন তো কি সুন্দর কাপল কাপল ঘুরছে। আর আমরা। আসছি থেকে আপনি ছেলেদের টিম নিয়ে পড়ে আছেন আমার সাথে একটু কথা অবধি বলছেন না। এগুলো কি ঠিক।

– কোথায় কথা বলছি না। এখন আমি ম্যামদের সামনে কি করে তোমার সাথে আলাদা। আমি ফয়সালদের মতো স্টুডেন্ট হলে না একটা কথা ছিলো হিয়া।

– এজন্যই লতা আপনাকে এমনি এমনি নিরামিষ ডাকে না। ভীতুর ডীম একটা।

– আরে এটা ভয়ের বিষয় না। এটা সৌজন্যেতার বিষয়। বড়দের সামনে আমি এখন যদি তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি ওরা আমার ব্যাপারে কি মিন করবে….আচ্ছা বাদ দেও ড্রিংক টা খাও ভালো লাগবে। তোমাদের রিমা ম্যাডামের জন্য কিনলাম। বললো খেতে ইচ্ছে করছে নাকি।

হিয়া কপাল কুঁচকে উজানের দিকে তাকিয়ে বললো,

– এক সেকেন্ড…রিমা ম্যাডামের তেষ্টা পেয়েছো তো আপনাকে কেনো বলতে হলো। আর কেউ ছিলো না।

– মা–নে!

– না আমি আসছি থেকে দেখছি আপনি আমার দিকে তো দেখছেন না-ই,উল্টে রিমা ম্যাডামের প্রতি যেনো আপনার এক্সট্রা কেয়ার বাড়ছে…কি চলছে হ্যা। আমাকে ঠকালে কিন্তু ভাইয়াকে বিচার দিতে দু সেকেন্ড ও সময় লাগবে না আমার হ্যা। আর ভাইয়া তো জানেন বোনের জন্য বেস্টু কেনো পুরো পৃথিবী উল্টে দিতে পারে।

– তুমি না একটু এক দু লাইন বেশি বুঝো হিয়া। এ্যাটলিস্ট রিমাকে দেখে কিছু শেখা উচিত তোমার। ব্যাচমেট আমরা। সামনে প্রফ। মেয়েটাকে দেখো বাসের মধ্যে পুরো রাস্তা বই নিয়ে পড়ে আসলো। আর তুমি।

– আমি কি?

– নিজেকে প্রশ্ন করো তুমি কি। এবার ইন্টার দিবে। তোমাকে দেখে বোঝার উপায় আছে সেই। পড়াশোনা তো নেই ওলেয়জ বাদরামো।

– আপনি আমার সাথে রিমা ম্যামের তুলনা করছেন।

– এটাকে তুলনা বলে না। জাস্ট তোমাকে পড়াশুনার গুরুত্বটা বোঝাচ্ছি আমি।

– তাই তো। আমি তো অবুঝ।

বলেই হিয়া মুখ গোমড়া করে সামনে হাঁটা ধরলো। আর কথাই বলবো না এ-ই লোকের সাথে। থাকুক রিমা কিমা কে নিয়ে। আমি কে?

!
!

সবার বায়নায় ভূতের ঘরে যেতে দিতে রাজি হলেন স্যার ম্যাডাম। বেশ মজা করেই ভূতের ঘরের ভূত পেত্নী উপভোগ করলো সবাই।
ভূতের ঘর থেকেই বেড়িয়ে সবাই সামনে হাঁটতে শুরু করলো। কেউ বা দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে শুরু করলো ভূতের সাথে। উজান,বড় স্যারের নির্দেশে নীরব সহ আরো দুজন স্যারকে নিয়ে বাসের দিকে এগিয়ে আসলো। দুপুর প্রায় তিনটা সাড়ে তিনটা পাড় হচ্ছে। এখন লাঞ্চ করাটা জরুরি। গাড়িতে সবার জন্য এক প্যাকেট করে ফুল বিরিয়ানির ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলো নিয়ে আসতে ওদিকে যাওয়া। এদিকে হিয়া লতার সাথে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে লতা হিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,

– একটু ব্যাগ টা ধরতো পেত্নী লিপিস্টিক টা একটু ঠিক করে দেই।

– আর কতো লিপিস্টিক ডোলিস মুখে, তখনো না দেখলাম আয়না নিয়ে বসা।

– আরে ফয়সাল বদমাইশ টা খেয়ে ফেললো না সব।

– খেয়ে ফেললো মানে! ফয়সাল তোর ঠোঁট থেকে কি করে..(বুঝে আসতে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে হিয়া বললো)মানে তোরা ভূতের ঘরে..

লতা লজ্জায় লাল হয়ে হিয়ার কাঁধের সাথে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো,

– হুম…কেনোওওও বাবুউউ মনে হয় তুই আর উজান স্যার ভেতরে কিছু করিসইনিইই।

– নাউজুবিল্লাহ,তবা তবা। এসব করতে যাবো কেনো আজব!

– মানে তোরা সত্যি কিচ্ছু করিসনি?

– আশ্চর্য তো কি করবো। ওখানে ভূত আসছিলো আমি ভয় পাইছিলাম। তখন স্যার আমাকে অভয় দিচ্ছিলো এ-ই তো যা।

– হ্যা ভূত তো এসে তোর গলা টিপে ধরতো না..ঠিকই আছে স্যার তো একটা নিরামিষ আর তুই হইছিস একটা আলুভর্তা তাও আবার নুন মরিচ ছাড়া বেস্বাদের ভর্তা। হু।

বলেই সামনে হাটা দিলো লতা। হিয়া চেঁচিয়ে বললো,

– আরে কিসের আলু ভর্তা। লতা শুনে যা। কোথায় যাচ্ছিস আরে বলে তো যা। ভূতের ঘরে ঢুকলে কিস যে করতে হয় আমি তো জানতাম না। এই লতাআআ.. লতাআআ.ধুর! না শুনে চলে গেলো…আশ্চর্য তো। ভূতের ঘরে ঢুকলে কিস করতে হয় এটা তো জানতাম না…..আমিও স্যারকে কিস করবো। আমাকে নিরামিষ বলে গেলো এতো সাহস এই পাতার বাচ্চার। দাড়া তুই।

বলেই হিয়া রাগে গজগজ করতে করতে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করেই উজানের নাম্বারে ফোন লাগালো। আজ তো একটা কিস করেই ছাড়বো,এতো বড় ইনসাল্ট!

এদিকে উজানের দু হাত ভর্তি বিরিয়ানির প্যাকেট দিয়ে,যার উপর বিরিয়ানির প্যাকেট শর্ট বিধায় চলছে সবার মাথা গরম। এমন সময় হিয়ার ফোন আর এই কিস নামক আবদারে মেজাজ পুরো তুঙ্গে উঠলো উজানের। হাত বন্ধ বিধায় নীরব স্যারকে বললো ফোনটা পকেট থেকে বের করে স্পীকারে দিতে। উজান কি আর জানতো অপর পাশের তার পিচ্চি হিয়ার এই কিস নামক মধুরবানী।

– হ্যা হিয়া বলো?

– আপনি কোথায়?

– আমি তোমাদের খাবার নিতে এদিকে এসেছি। কেনো?

– আমি আপনাকে নিয়ে আবার ভূতের ঘরে যাবো। আপনি এক্ষুনি আসুন।

– আর ইউ গোন ম্যাড হিয়া। একটু আগেই তো ভূতের ঘর থেকে বের হয়ে এলাম আমরা। আবার কিসের জন্য।

– আমি আপনাকে ভূতের ঘরে নিয়ে গিয়ে কিস করবো। মানে ঠোঁট খাবো আপনার। আসুন তো আপনি তাড়াতাড়ি।

উজানের সাথে চোখ বড়সড় করে তাকালো নীরব স্যার নিজেও। উনি ফিঁক করে হেঁসে দিলেও উজান চটে গেলো। পাগল নাকি এ-ই মেয়ে।

– হোয়াট!

– আরে কিস করবো কিস! ইংলিশ বোঝেন না আপনি।

– shut up..ফোন রাখো।

খুব জোরে ঝারি দিয়ে কথাটা বললো উজান। আর ব’লেই নীরবকে চোখের ইশারায় আদেশ করলো ফোন কাটতে। নীরব স্যার ফোন রেখে দিয়ে এমনই হাসি দিলো যে মানুষ টা বোধহয় ওখানেই হাসির চোটে দম হারিয়ে ফেলবে।

– যা ফোন কেটে দিলো আমার। একটা তো কিসই করবো বলেছিলাম তাই জন্য এরকম চোটে যেতে হবে। কত্তো খারাপ।

!

বিকেল তখন আসরের কিছু পর। সব মেয়ে গ্যাং মিলে বসে আছে বড় ছাউনিটরা নিচে। ঠিক সেই মুহুর্তে সুইমিং পুলের দিক থেকে অবন্তী সহ দৌড়ে আসলো মোহিনী। এসেই শুরু হলো এ-ই মেয়ের যত পাকা পাকা সব কথা।

-দোস্ত ওদিকে তো পুরোই কাহিনি হচ্ছে..সব ছেলেরা মিলে পুলে নামছে তাও আবার পুরো গেঞ্জি ফেঞ্জি খুলে। একদম খুল্লাম খুল্লা!

হিয়া মেহুর থেকে চিপসের প্যাকেট টা কেড়ে নিয়ে চিপস খেতে খেতে বললো,

– তোর নজরতো পুরাই খারাপ আছে মেহু। স্যারদের দেখে আসলি ওভাবে ছিঃ

মেহু হেসে দিয়ে বললো,

– আরে শোন না। ফয়সালো নামছে ভাই সাতরাইতে..ব্যাটা এতো শুকনা লতা ওরে জড়ায় ধরে কেমনে ভাই। হাড় হাড্ডি সব বাহির হওয়া আছে। এ তোর ঘুতা লাগে না রে লতা?

লতা মেহুকে ভেংচি কেটে দিয়ে বললো,

– ঘুতা লাগবে কেন। তুই জানিস ওরে জড়ায় ধরলে আমি কতো শান্তি পাই! মনে হয় স্বর্গে ভাসছি। এতো আরাম।

সবাই লতার কথায় হেসে উঠতেই মেহুর সাথে দাঁড়ানো অবন্তী হো হো করে হেঁসে বলে উঠলো,

– ভাই বিশ্বাস কর আমি শুধু ওখানে রিয়াদকে দেখে যাচ্ছিলাম। ছেলেটা এতো নাদুসনুদুস। সব একদম ডবলডবল হয়ে….কিছু মনে করিস না আবার তনু।

তন্নি একটু বোকাসোকা টাইপ। তাই সবাই ওকে আর রিয়াদকে নিয়ে এরকম মজা করে ওলেয়জ আর বেচারি কিছু বুঝেও বলতে পারে না।

– না রে। আমার রিয়াদটা একটু বেশি তুলতুলে। জড়িয়ে ধরলে এতো আরাম লাগে মনে হয় গাল দুটো চটকে দেই। খুব কিউত..

সবাই তন্নির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আদুরে সুর টেনে বললো” অঅঅঅঅ কি কিউট” সাথে সাথে লজ্জায় লাল হয়ে দৌড়ে পালালো তন্নি। তখনি তিশা এসে হিয়ার কানের কাছে সাধলো,

– ভাই উজান স্যারটা এরকম কেনো,মনে তো হচ্ছে আজ ঘুরতে আসা অর্ধেক নারীজাতি তার উপর ক্রাশিত হয়ে হুশ হারিয়ে ফেলবে দোস্ত…এরকম বডি,হাইট,সিক্সপ্যাক,হায় মাবূদ রক্ষা করো আমাকে।

হিয়ার কপালে ভাঁজ পড়লো,তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে উঠে বললো কি সমস্যা এরকম বলছিস কেনো হঠাৎ। তিশা উওর করলো” গিয়ে দেখ তোর উজান স্যার কিরকম জামাকাপড় ছাড়া হাফ প্যান্ট পড়ে সুইমিংপুল কাঁপাচ্ছে,ভাই পাড়ের এদিক থেকে মেয়ে গুলো স্যারকে ওভাবে দেখে…আর বলতে পারলো না তিশা। যেনো একরাশ লজ্জা গ্রাস করলো তাকে। কিন্তু লজ্জার বদলে পাহাড় সমান রাগ এসে জমতে শুরু করলো হিয়ার সারা শরীর জুড়ে। দেখতে হচ্ছে তো ব্যাপারটা!

যেই বলা সেই কাজ। সুইমিং পুলের দিকে এক ছুটে দৌড়ে আসলো হিয়া। এসেই দেখতে পেলো তার উজান স্যারের রংবাজি। এএএ ঢং দেখো, কেমন স্টুডেন্টের সাথে সাঁতার কম্পিটিশন করছে,পুশআপ দিচ্ছে। লজ্জাশরম তো নাই, শরীরের সব বুঝা যাচ্ছে ছিঃ। এটা কোনো সিস্টেম। মেয়েগুলোকে দেখো ছিঃ ছিঃ ছিঃ এজন্মে কোনোদিন ছেলে দেখেনি বুঝি। চারদিক থেকে ঘেরা দিলেও তো হতো। আমি বোধহয় দুনিয়ায় একমাএ ভদ্র মেয়ে নাহলে লতা আর মেহুর যা দেখলাম সেগুলোও গেছে পুরো বানের জলে ভেসে হু।

পাড়ের একদম ধার ঘেষে উজানকে কন্টিনিউসয়ালি ফোন করতে থাকলো হিয়া। ভেজা হাত, সব স্টুডেন্ট সামনে,কি করেই বা হিয়ার ফোন ধরবে উজান এখন। তোয়ালে কাঁধে দিয়ে পাড়ে এসে বসে হিয়ার ফোন পিক করতেই চেঁচিয়ে উঠলো হিয়া। চিৎকারের সহিত বললো “আপনি জামাকাপড় পড়বেন না আমি নামবো পুলে, কোনটা?কাজ নেই কর্ম নেই,আসছি থেকে আমার একটা কথা শুনছেন না আপনি, এরকম জানলে আসতামই না আমি আপনার সাথে, এখনো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে কি দেখছেন আমায়, জামাকাপড় পড়বেন না আমি…লজ্জা করে না মেয়েদের শরীর দেখিয়ে বের হচ্ছেন ছিঃ”

– হয়েছে বলা শেষ!

– হুম। এখন যা বলেছি তাই করুন ফাস্ট।

– এক সেকেন্ড ফাস্ট ওফ ওল কে আমাকে কিভাবে দেখছে দিজ ইজ নট মাই মেটার। সেটা ওদের সমস্যা আমার না।

– তাহলে জামাকাপড় পড়ে সুইমিং করুন। ফাস্ট।

– তোমার মাথার কি সব স্ক্রুই ঢিলা হিয়া। আমি কি এক্সট্রা জামাকাপড় এনেছি যে জামাকাপড় পড়ে সুইমিং করবো।

– তাহলে করতে হবে না। উঠে আসুন।

– আমি রাখছি। এমনিতে নীরবের সামনে এমন একটা সিচুয়েশনে ফেলছো তুমি এখন আর কিচ্ছু না। গিয়ে চুপচাপ ম্যাডামদের সাথে ঘুরো যা-ও।

বলেই ফোনকেটে আবারো স্যারদের সাথে সাঁতারে নাম লেখালো উজান। এদিকে রাগে পুরো বোম হয়ে ফেটে পড়তে শুরু করলো হিয়া। এতো সাহস,প্রথমে নতুন ম্যাডামকে নিয়ে আমাকে কথা শুনালো,তারপর কিস করতে বললাম ঝারি দিলো,এখন জামাকাপড় পড়ে সুইমিং করতে বলছি উল্টে ফোন কেটে দিলো। আজ তো এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বো আমি। দাঁড়ান আপনি।

কি করি কি করি ভাবতে ভাবতেই সামন থেকে আসা ফারহানের দিকে চোখ পড়লো হিয়ার। ফারহান একটা কাপড় দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে পাড়ের এদিকে এসে একটা জায়গায় বসে পড়তেই হিয়া দৌড়ে এসে ধপ করে বসে পড়লো ফারহানের পাশে। হিয়াকে দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলো ফারহান। আশেপাশে উজান স্যার নেই তো!

– হিয়া কি করছিস এখানে,প্লিজ যা। দেখ ঔ চিঠি ঔ মোড়ের মাথায় তোকে আসতে বলা সব সব ভূলে যা এখন থেকে আমরা ভাই ভাই না বল।

হিয়া ফারহানের নাক টেনে দিয়ে বললো,

– ওকে ভাইটু,,এতো কিসের ভয় তোর। আমি আছি না। এখন আমার কথা না শুনলে স্যার তোকে বড্ড পানিশমেন্ট দিবে কিন্তু।

– কি কি কথা শুনতে হবে তোর বল।

– চল না আমরা দু’জনে কোথাও থেকে একটু আইসক্রিম খেয়ে আসি। দেখ অনেক দোকান আছে এখানে।

– না হিয়া স্যার শুনলে আমাকে খু*ন করে দেবে।

– আরে কিচ্ছু বলবে না। ভাই হয়ে বোনকে একটু আইসক্রিম খাওয়াতে পারবি না। প্লিজজজ ফারুউউ।

– না হিয়া। আমার ভয় লাগে প্লিজ যা।

– আচ্ছা ঠিক আছে একটা সেলফি তো তুলতে পারি তোর সাথে। আমাদের ভাইবোনের স্মৃতি হয়ে থাকবে। আর কখন এরকম সময় আসে কি না।

– তুলবি কিন্তু স্যার যদি।

– আরে স্যারেই তো বললো সবার সাথে ছবি তুলে স্মৃতি করে রাখতে। বোকাটা বোঝেও না।

– ঠিক আছে তোল তাহলে।

হিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে উঠে ফারহানের বাহু ধরে ফটাফট একটা ক্লোজলি সেলফি তুলে নিতেই বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে উঠলো। এবার দেখুন উজান স্যার কিরকম লাগে! সাথে সাথে “আমার কলিজার ফারহান সোনা” ক্যাপশনে ছবি সেন্ড হয় উজানের হোয়াটসঅ্যাপে!

তৎক্ষণাৎ সীন না করলেও সুইমিং শেষ করে জামাকাপড় পড়ে নিয়ে ফোন চেক করতেই আঁতকে উঠে উজান। কপালের গাঢ় রগ গুলো ফুটে উঠে মুহুর্তে। হিয়াকে কি এসব করতে নিয়ে এসেছে নাকি সে এখানে। এ-ই মেয়ে তো দেখছি। তাও আবার ফারহানের সাথে এতো ক্লোজলি। একটা মুহুর্ত বিলম্বে না করে শার্টের বোতম লাগাতে লাগাতে উজান দৌড়ে আসলো হিয়ার কাছে। চুল গুলো এখনো মোছা হয়নি উজানের। ভেজা চুল আর হালকা বেগুনি শার্ট আরো একবার মন কেঁড়ে নিলো উপস্থিত সব মেয়েদের। হিয়া ভাব ধরে কিছু বলতে যাবে ওমনি হিয়ার হাত থেকে ফোন টা কেঁড়ে নিয়ে আছাড় মারলো উজান। একবার না পরপর তিনবার আছাড় মেরে তবেই শান্ত হলো উজানের রাগান্বিত মন..!!

এখনো ফোন হাতে হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে হিয়া। এটা,এটা কি হলো তার ফোনের উপর দিয়ে। এটা কি ঝড় না ভূকম্পনের ফল,একদম গুঁড়া গুঁড়া। ভ্যাএএএ করে কেঁদে দিলো হিয়া। কতো কাহিনি কেচ্ছা করার পর গিয়ে শিশির ভাই এ-ই ফোন কিনে দিয়েছিলো আমাকে আর স্যার কি না। কান্না থামিয়ে রাগে গটগট করতে করতে উজানের সামনে এসে দাঁড়ালো হিয়া। আজকে তো খু*নই করে ফেলবো এ-ই লোকটাকে আমি। ক্রোধানিত্ব হিয়াকে দেখেই নিজের ফোন লুকিয়ে রাখলো উজান। কিন্তু ফোন রেহাই পেলেও রেহাই পেলো না উজান নিজে। উজানের মাথার সব চুলে খিঁচে ধরলো হিয়া। এতো শক্ত চুল এনার। একটাও রাখবো না পুরাই টাক বানিয়ে রাখবো। এত্তো খারাপ।

!
!

কলিংবেলের লাগাতার শব্দে গায়ের শার্ট টা কোনো মতে পড়ে নিয়ে দরজার গ্রীলের কাছে আসতেই থমকে গেলো শিশির। রোদেলা এ-ই অবেলায় বাড়িতে!!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here