#ছদ্মবেশ,পর্ব ১০,১১
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
১০
গাড়ি থেকে নামতেই রিমাকে অন্য একটা ছেলের সাথে দেখে এক পাশে কিছুক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে রুশান।
মোবাইলটা বের করে রিমার নাম্বারে ফোন দিলে ফোন কেটে দেয় রিমা। এবার যেন রাগ টা মাথায় চরে বসেছে রুশানের। আরেকটা গাড়ি নিয়ে সোজা চলে যায় সে।
রাস্তার পাশে আমড়া বিক্রি করছিলো এক লোক। রিমার ফ্রেন্ড সাইমা গেলো আমড়া নিয়ে আসতে। যার ফলে রুশানকে দেখেছিলো সে।
আমড়া নিয়ে রিমার কাছে গিয়ে বলে,
– কিরে রুশান ভাইয়া এসে আবার চলে গেলো কেন?
সাইমার কথায় রিমা চমকে উঠে বলে,
– ভাইয়া এসেছিলো মানে?
– হ্যা, গাড়ি থেকে নেমে কিছুক্ষন তোদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। এর পর আবার কি ভেবে অন্য গাড়ি নিয়ে উঠে চলে গেলো সে।
সাইমার কথা শুনে এবার একটা শুকনো ঢোক নেয় রিমা। আজ যে বাসায় গেলে কপালে দুঃখ আছে তা আর নতুন কিছু না।
,
,
প্রতিদিনের মতো আজও পেছনের বেঞ্চিতে বসলো রাজ। কারণ তার তেমন একটা স্মার্টনেস না থাকায় অন্য স্টুডেন্টরা তেমন একটা মিশেনা তার সাথে। তাই প্রথম বেঞ্চ গুলো তে বসার সৌভাগ্য কখনোই হয়নি তার।
স্যার ক্লাসে লেকচার দেওয়ার সময় আজ হটাৎ একটা প্রশ্ন করে বসে। প্রশ্নটা ছিলো,
‘আজকের আলোচিত অধ্যায় নিয়ে, তোমাদের মধ্য থেকে আমার মতো করে এখানে এসে বাকিদের বুঝিয়ে দিতে পারবে কে?’
সবাই তখন নিশ্চপ হয়ে বসে রইলো। স্যার একটু মুচকি হেসে বলে,
– ভবিষ্যতে তোমরাই এই পজিশনে আসবে। এমন শতাধিক স্টুডেন্ট নিয়ে তোমরাও ক্লাস করাতে হবে। এখন থেকেই প্রস্তুতি নওয়া টা তোমাদের জন্যই ভালো হবে। সাহস তৈরি হবে তোমাদের মাঝে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি হেল্প করবো সমস্যা হলে।
কিন্তু কেওই সামনে গিয়ে লেকচার দেওয়ার সাহস করলো না।
পেছন থেকে রাজ হাত তুলে উঠে দাড়িয়ে বললো,
– স্যার আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি। যদি আপনি হেল্প করেন।
রাজ এভাবে দাড়ানোতে আসে পাশের সব স্টুডেন্ট হাসাহাসি শুরু করলো। আবার স্যারের একটা ধরকে চুপ হয়ে যায় সবাই। তারপর রাজকে ডেকে সামনে নিয়ে যায় স্যার। রাজকে পাশে দাড় করিয়ে স্যার বলে,
– উপরের সাজগোজ দেখে মানুষের যোগ্যতা বুঝা যায় না। যোগ্যতা প্রমানে সাহসের প্রয়োজন হয়। যা ওর মাঝে আছে।
তারপর রাজকে শুরু করতে বলে এক পাশে গিয়ে দাড়ালো স্যার। কিছু স্টুডেন্ট এখনো মুচকি মুচকি হাসছে। রাজ সবার দিকে একবার চেয়ে কিছুক্ষনের মাঝে শুরু করলো ক্লাস।
কিছুক্ষনের মাঝেই সবাই হা হয়ে তাকিয়ে থাকে রাজের দিকে। কারণ একজন প্রপেশনাল লেকচারের মতোই ক্লাস নিচ্ছে রাজ। চোখে মুখে কোনো ভয়ের বা নার্ভাস হওয়ারও ছাপ নেই। হেটে হেটে প্রত্যেক স্টুডেন্টকেই একেবারে হাতে ধরে বুঝিয়ে দিলো সব। যা দেখে স্যার নিজেও অবাক হয়ে চেয়ে ছিলো তার দিকে।
পুরোটা ক্লাস সে এমন ভাবে নিলো, যেন সম্পূর্ণ বই তার মাথার মাঝে সেট করা আছে।
ক্লাস শেষে স্যার রাজের কাধে হাত রেখে বলে,
– ওয়েলডান বয়,,, এতোক্ষন এক মুহুর্তের জন্যও তোমাকে আমার স্টুডেন্ট মনে হয়নি। মনে হয়েছিলো একজন প্রপেশনাল লেকচারারই লেকচার দিচ্ছে।
রাজ কৃতজ্ঞতা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
– থ্যাংক ইউ স্যার।
যেই স্টুডেন্ট গুলো ক্লাস শুরু হওয়ার আগে রাজকে নিয়ে হাসাহাসি করছিলো তারা সবাই এখন নিশ্চুপ হয়ে আছে।
তারা তো আর জানতো না যে, তাদের সামনে ঘুরাফেরা করা আনস্মার্ট ছেলেটা কোনো সাধারণ ছেলে না। সে বাইরে থেকেই পড়ালেখা কমপ্লিট করে এখানে এসে ছদ্মবেশে স্টুডেন্ট রুপ নিয়েছে।
ক্লাস শেষে বাইরে যাওয়ার পর অরিন তার পাশে এসে বলে,
– তোমার পড়ার কৌশল টা আমাকে শিখিয়ে দাও না। মানে সামান্ন স্টুডেন্ট হয়ে এতো কিছু কিভাবে মনে রাখো তুমি?
রাজ একটু হেসে বলে,
– একটা উদাহরণ দিই। লাইফে সফল কাউকে দেখে হাত তালি দিলেই নিজেও সফল হওয়া যায় না। যার জন্য প্রয়োজন হয় প্রতিজ্ঞা, প্রচেষ্টা, পরিশ্রম। এই থ্রিপল P তোমার নিজের সাথে মিশিয়ে নিলে একদিন তুমিও সফল হবে। নিজে থেকে চেষ্টা না করলে অন্য কেও তোমাকে তা শরবত বানিয়ে খাইয়ে দিলেও কোনো লাভ হবে না।
অরিণ একটু হেসে বলে,
– ওফ রাজ, এখানে আপাতত জ্ঞান দেওয়া অফ রাখো।
অরিণের কথায় কিছু না বলে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো রাজ।
,
,
হাতে ও কপালে বেন্ডেজ নিয়ে কোনো রকম ঘরে ঢুকলো তুষার। ফরিদা আন্টি দেখেই তাড়াতুড়া করে তাকে ধরে সবাইকে ডেকে নিচে নিয়ে আসে। সবাই জিজ্ঞেস করলে তুষার মান সম্মানের ভয়ে বলে,
– রাস্তা পার হচ্ছিলাম, একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগেছিলো।
কথাটা অবিশ্বাস করার মতো না। তাই বিশ্বাস করে নিলো। সবাই তুষারকে ধরে রুমে নিয়ে গেলো।
ফরিদা আন্টি বলে,
– কিছু খেয়েছো?
তুষার দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে আস্তে করে বলে,
– না আন্টি কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না এখন।
ফরিদা আন্টি বসা থেকে উঠে বলে,
– তোমরা থাকো আমি তুষারের জন্য সুপ বানিয়ে আনছি।
বলেই চলে গেলো সে। বাকিরাও একে একে চলে গেলে নিবিড় গালে আঙুল দিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে,
– আসল কাহিনি টা কি?
তুষার এবার চার দিকে চেয়ে দেখে কেও নেই। তারপর বলে,
– তোর জন্য হয়েছে সব।
নিবিড় একটু অবাক হয়ে বলে,
– আমার জন্য মানে?
তুষার বলে,
– তোর কথা মত আমি ওই দিনের সব টিপ্স রাত জেগে মুখস্ত করেছি। আজকে দেখি একটা সুন্দরি মেয়ে রাস্তায় একা দাড়িয়ে আছে। আমি ভাবলাম মেয়েটাকে একটু পটানোর ট্রাই করে দেখি। তোর কথা মতো প্রথমে ওর সামনে দাড়িয়ে হাই হ্যালো করে পরিচিত হলাম। তারপর মুখে হাসি রেখে তাকে গুরুত্ব দিয়ে কথা বলছিলাম। হটাৎ দেখি মামা, কোথায় থেকে মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড এসে হাজির। এর পর আমার এই অবস্থা।
নিরব কপালে হাত দিয়ে বলে,
– তোকে প্রথমেই যে মেয়েটা জু’তা খুলে পিটায়নি এটাই তোর ভাগ্য।
তুষার রাগি লুক নিয়ে বলে,
– তুই যা যা শিখালি সবই তো করলাম।
নিবিড় একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,
– আরে ভাই তোকে ঔষধ দিয়েছি তুই একটা একটা খাবি। প্রথমে পরিচিত হবি। এর পর ফ্রেন্ডশিপ করবি। তারপর রিলেশনে যাওয়ার ট্রাই করবি তাও কৌশলে। আর তা না করে তুই সব গুলো ডোস একসাথে মে’রে দিলি।
তুষার বলে,
– ভাই, আমি তো ভাবছিলাম সবগুলো ডোস একসাথে দিলে মেয়ে আরো তারাতারি পটে যাবে।
নিবিড় বলে,
– ভাই তোর মেয়ে পটানোর কোনো দরকার নেই। তুই এক কাজ কর, ফোনে একটা এ্যাপ আছে Talking angle,,,, একটা মেয়ে বিড়ালের এ্যাপ। ওটাকে তুই পালতে পালতে বড় করবি। আর ওটার সাথেই কথা বলবি। ওটাকে সাজাবি, ঘুম পারাবি, খাওয়াবি। তোর আর প্রেম করার কোনো দরকার নেই।
তাদের কথা শেষে পাশে তাকিয়ে দেখে নিলয় এতোক্ষন ধরে সব শুনছিলো। তারপর হসি দিয়ে নিলয় বলে,
– তুমিও তাহলে এই লাভ গুরুর চক্করে পরে মেয়ে ঘটিত ব্যাপারে মা’র খেয়ে বাসায় এসেছো। বাহ্ ভালো তো।
তুষার এবার নিলয়ের দিকে তাকিয়ে দুই হাত জোড় করে বলে,
– ভাই তোর দুইটা পা চেপে ধরি। যা শুনছত, তা কাউকে বলিস না। আমার মান ইজ্জত একটুও থাকবে না তাহলে।
,
,
সারা দিন প্রাইভেট কোচিং এসব নিয়ে কোনো মতে দিন কাটিয়ে দিলেও সন্ধায় ঠিকই বাসায় ফিরতে হলো রিমাকে। এসে দেখে মা চুপচাপ কাজ করছে। কিছু জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলছে না। রিমা একটা শুকনো ঢোক নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
দেখে সারা রুম অন্ধকার। ব্যাগ রেখে সুইস অন করতেই চমকে উঠে সে। কারণ দুই পা মেঝেতে ছড়িয়ে খাটের উপর বসে আছে রুশান। মুখে কোনো কথা নেই।
রিমা ভয়ে ভয়ে ব্যাগ টা পাশে রেখে বলে,
– ভুল হয়ে গেছে আমার। আর কক্ষনো এমন করবো না প্রমিস।
To be continue…….
#ছদ্মবেশ (পর্ব ১১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
রুশান চুপচাপ বসে আছে মেঝেতে দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে। আর সামনে দুই কান ধরে এক পায়ে দাড়িয়ে আছে রিমা।
দাড়িয়ে থাকতে থাকতে দুই পায়ে ব্যাথা ধরে গেছে তার। আবারও করুন চোখে রুশানের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আর কখনো কনো ছেলের সাথে আড্ডা দিবো না প্রমিস। আজকের মতো ছেরে দাও প্লিজ,,
রুশান ঐ অবস্থাতেই বলে,
– এই প্রমিস টা এর আগেও ৩ বার করেছিলি।
– এইবারই শেষ প্রমিস করছি। আর কোনো ছেলে বন্ধুর সাথে কথাও বলবো না আমি।
রুশান কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো। তাকে দেখো বোঝবার উপায় নেই যে, এখনো রেগে আছে না স্বাভাবিক হয়েছে।
ওই অবস্থাতেই খুব শান্ত ভাবে বলে,
– ছেলেটা তোর ঘাড়ে হাত দিয়েছিলো কেন?
রিমা চট করে বলে,
– কই ঘাড়ে হাত দেয়নি তো।
রুশান রেগে বলে,
– তার মানে বলতে চাইছিস আমি মিথ্যা কথা বলছি?
রিমা এবার আমতা আমতা করে বলে,
– ঘাড়ে একটা পোকা বসেছিলো। আমি ভয় পেয়েছিলাম দেখে সে ওটা তাড়িয়ে দিয়েছিলো?
– সে কেন তোর গায়ে টার্চ করবে? কে হয় সে তোর? আর তোর ঘাড় দেখা গেলো কেন? হিজাব কয়টা কিনে দিয়েছি তোকে?
রিমা বিরক্তি নিয়ে বলে,
– গরমে আমার অসহ্য লাগে ওগুলো পরতে।
রুশান এবার উঠে দাড়িয়ে একটু মুচকি হেসে বলে,
– আজ থেকে সব ভালো লাগবে। এতোটাই ভালো লাগবে যে ঘরের মাঝেও হিজাব পরে থাকবি।
রুশানের কথাটা মাথায় ঢুকলো না রিমার। তাই ডেব ডেব করে রুশানের দিকে চেয়ে আছে সে।
রুশান আর কিছু না বলে রিমার পেছনে গিয়ে দাড়ালো। তারপর এক হাত দিয়ে রিমার দুই হাত চেপে ধরে অন্য হাতে একটা চেয়ার টেনে রিমাকে ওটাতে বসিয়ে দিলো। তারপর পকেট থেকে একটা চিকন দড়ি বের করে রিমার হাত বেধে নিলো। রিমা ছোটার চেষ্টা করতে করতে বলে,
– কি করছো ভাইয়া? আজ কি আমাকে এভাবে বেধে মা’রবে নাকি?
রুশান কিছু বললো না। চুপচাপ রিমাকে বেধে সামনে এসে দাড়ালো। তারপর টেবিলে রাখা মেহেদী টা নিলো। যেটা সে আসার সময় নিয়েই এসেছিলো।
এর পর চুপচাপ রিমার সামনে হাটু গড়ে বসে মেহেদী টা দিয়ে রিমার গলায় লিখে দিলো,
– ””রুশানের বৌ””
তারপর উঠে দাড়িয়ে মেহেদী শুকানো পর্যন্ত রিমাকে ওভাবে রেখে সামনে বসে থাকলো রুশান। ঘন্টা কেটে যায়, তবুও রিমার মুক্তি মেলে না।
অনেক্ষন পর মেহেদী পুরোপুরি শুকানোর পর রিমার বাধন খুলে দিলো রুশান। তারপর রাগি লুক নিয়ে বলে,
– চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে পড়ার টেবিলে বসবি। দ্বিতীয় কোনো শব্দ যেন না শুনি আমি। আন্টিকে বলেছি নাস্তা তৈরি করতে। শেষ হলে এসে তোকে দিয়ে যাবে। আর আজকের প্রমিসের কথা যেন সারা জীবন মনে থাকে।
বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো রুশান। রিমা দ্রুত আয়নার সামনে চলে যায় গলায় কি লিখেছে এটা দেখার জন্য।
আয়নার সামনে দাড়াতেই চোখ কপালে উঠে যায় তার।
রিমা রাগে পেছন ফিরে চিৎকার দিতে যাবে তখনই রুশানকে দেখে ভয়ে মুখ অফ হয়ে গেলো। রুশান গাল টিপে ধরে বলে,
– বলেছি না, যেন দ্বিতীয় কোনো শব্দ না শুনি? আর আজকের পর থেকে তোর আশে পাশেও কোনো ছেলে দেখলে, তোর সাথে ওই ছেলের অবস্থাও খা’রাপ করে দিবো।
রিমা এবার না পারছে কিছু বলতে, আর না পারছে বিষয় টা মানতে। ওয়াশ রুমে চলে গেলো সে। গলাটা অনেক্ষন ঘষেও কোনো লাভ হলো না। লেখাটা ভালো ভাবেই বসে গেছে। রাগে কাঁন্না করতে ইচ্ছে করছে তার।
কেন যে এমন একটা খালাতো ভাই তার কপালে জুটলো? বাবা মাও তাকে কিছু বলে না যে, বাবা মায়ের কাছে বিচার দিবে।
রাতে খাওয়ার সময় বাবার ডাকাডাকি তে বাধ্য সবার সাথে টেবিলে গিয়ে বসলো রিমা। তবে সকলের নজর খাওয়ার দিক থেকে সরিয়ে এবার রিমার দিকে পরলো। কারণ খেতে এসেও হিজাব পরে আছে।
রুশান খেতে খেতে বলে,
– কিরে, আজ হটাৎ তোর উপর জ্বিন টিন ভর করলো নাকি?
রুশানের দিকে চেয়ে ভেতর ভেতর রাগে কটমট করতে থাকে রিমা। এই রুশানকে এখন একটুও সহ্য হচ্ছে না তার। নিজেই সব করে এখন আবার খোচা দিচ্ছে।
তার মাঝে মা ও বলে,
– কিরে মা কি হয়েছে তোর? গায়ে জ্বর টর এসেছে নাকি?
রিমা এবার জোড় পূর্বক একটু হাসার চেষ্টা করে বলে,
– আসলে মা, আমি অনেক ভেবে দেখেছি মেয়েদের জীবনে পর্দা করাটাই খুব গুরুত্বপূর্ন।
মা আবার বলে,
– তা ঠিক যে পর্দা করতে হবে। নিজেকে হেফাজত করতে হবে। তাই বলে ঘরেও হিজাব পরে থাকবি?
– হ্যা মা, যেন এই ভালো অভ্যেস টা তারাতারি হয়ে যায়।
রিমা চুপচাপ বসে ছিলো তখন। আজ মাথা টা পুরাই গরম হয়ে আছে। রুশান অনেক্ষন আগেই বেড়িয়ে গেছে। তা ভেবে একটু হলেও মনে শান্তি আসলো।
কিছুক্ষন পর ফোনে একটা মেসেজ আসে তার। রুশানের মেসেজ। যেখানে লেখা ছিলো,
– গলার লেখাটা যদি একটুও পরিবর্তন হয়, তাহলে একেবারে ট্যাটু করে লিখে দিবো।
আবারও রাগ হলো রিমার। রাগে হাতটা আচমকাই গলায় চলে গেলো। আর রাগে ফুসতে থাকে।
,
,
আজ কলেজ থেকে ফেরার পর রাজের কোনো দেখা মিললো না। ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলেও বলে আজ একটা কাজে আসছি, ফিরতে রাত হবে।
ফোন রেখে রাজ উঠে ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিয়ে কিছুটা এগিয়ে গেলো। একটা লোককে ডেকে আপেল টা ওই লোকটার মাথার উপরে রেখে বলে সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকতে।
তারপর টেবিল থেকে একটা পি’স্তল তুলে নিয়ে ওটার উপর হাত বুলাতে লাগলো। অনেক দিন হলো এটা হাতে তোলা হয় নি। টার্গের টা ঠিক আছে কি না একটু চেক করতে লোকটার মাথায় আপেল রেখেছে সে।
রাজ অনেকটা দুড়ে গিয়ে লোকটার দিকে পি’স্তল তাক করে দাড়াতেই লোকটা একটা শুকনো ঢোক নিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
হটাৎ একটা গু’লির শব্দ হলো আর তার মাথার উপর আপেল টা কয়েক ভাগ হয়ে অনেকটা দুড়ে ছিটকে চলে গেলো।
রাজ এবার লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখে ইতিমধ্যে পশ্রাব করে পেন্ট ভাসিয়ে ফেলেছে লোকটা। রাজ একটু মুচকি হেসে পাশ থেকে জুসের গ্লাস টা তুলে নিয়ে তাতে চুমুক দিলো।
পশ্চিম আকাশে তাকিয়ে দেখে সূর্য ডুবে আকাশ টা লাল হয়ে আছে। কিছুক্ষনের পরই সন্ধা হয়ে আসবে। রাজ জুস টা অর্ধেক শেষ করে পাশে রেখে দিয়ে ভাইয়ার দিকে চেয়ে বলে,
– আজ আসি ভাইয়া। আবার কয়েক দিন পর দেখা হবে।
রাজের ভাই উঠে রাজের কাধে এক হাত রেখে বলে,
– তুই যে কি করছিস তা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না আমি। যেখানে ছোট বেলা থেকেই তোর জন্য সেবার জন্যই পার্সনাল ভাবে কয়েকজন লোক রেখে এতো আদর যত্নে বড় করেছি তোকে। আর সেই তুই কিনা, একটা ব্যাচেলর বাসায় থাকিস? তারা কি খায়, কিভাবে থাকে, ওসব পরিবেশ কি তোর জন্য?
রাজ একটু হেসে ভাইয়ার দিকে চেয়ে বলে,
– কারণ আছে ভাইয়া। তা সময় হলে তোমাকে বলবো। এখন আসতে হবে আমাকে। আমার বন্ধুরা বার বার ফোন দিচ্ছে।
রাজের ভাই এবার তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– সাবধানে থাকিস। আর বাবা ফোন দিয়েছিলো। বললো, তোকে বুঝিয়ে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দিতে। ওখানে বাবার বিজনেসের দেখা শোনা করবি। এতো গুলো বিজনেস বাবার একার পক্ষে দেখা সম্ভব হচ্ছে না।
রাজ বললো,
– তুমি কি বলেছো?
– আমি বলেছি রাজ যেটা ভালো মনে করে।
রাজ একটু হেসে বললো,
– ওকে ভাইয়া আসি।
,
,
পর দিন কলেজ থেকে ফেরার পথে একটা মেয়ে এসে নিলয়ের পাশে দাড়ায়। মেয়ে দেখে নিলয় হাটার গতি বাড়িয়ে দিলে মেয়েটা ডেকে বলে,
– তোমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে।
বলেই আলাদা নিয়ে গিয়ে বলে,
– তোমাদের একটা ফ্রেন্ড আছে না, তুষার?
নিলয় মাথা নেড়ে বলে,
– হুম,,
মেয়েটা একটা কাগজ বের করে বলে,
– এটা গিয়ে তাকে দিবে। আমি দিই নি, আমার এক বান্ধবি পাঠিয়েছে। তুষারকে না দেখে তোমাকে দিলাম।
নিলয় সেটা হাতে নিয়ে বলে,
– আচ্ছা দিবো।
মেয়েটা এবার পাশে হাটতে হাটতে বলে,
– আচ্ছা তুষার কলেজে আসে না কেন?
নিলয় বলে,
– ও একটা রেস্টুরেন্টে জব করে, তাই প্রতি দিন আসতে পারে না। তবে আজ আসেনি একটা কারণ আছে।
মেয়েটা উৎসাহ নিয়ে জানতে চাইলো,
– কি কারণ?
নিলয় এবার চুপ করে গিয়ে বলে,
– না সেটা কাউকে বলতে নিষেধ করেছে। ওটা মেয়ে ঘটিত ব্যাপার।
মেয়েটা এবার দাড়িয়ে বললো,
– মেয়ে ঘটিত ব্যাপার মানে? আমি যত দুর জানি, তুষার তো খুব ভদ্র একটা ছেলে।
নিলয় এবার হেসে দিয়ে বলে,
– কচুর ভদ্র। পরশু একটা মেয়ের কাছে গিয়ে বিটলামি করলে, পরে ওই মেয়ের বয়ফ্রেন্ড তাকে সেই লেভেলের একটা মা’ইর দিলো। এক মা’রে গত কাল থেকেই বিছানায় পরে আছে। আর শুনো, তুমি আবার এসব কাউকে বলবে না।
মেয়েটা এবার দাড়িয়ে গিয়ে বলে,
– তুষার আসলেই এমন? অথচ আমার বান্ধবি তাকে কত ভালো ভেবে এই চিঠিটা দিয়েছিলো।
বলেই নিলয়ের কাছ থেকে ছোঁ মেরে চিঠিটা নিয়ে নিলো মেয়েটা।
নিলয় অবাক হয়ে বলে,
– তুষারকে দিতে হবে না এটা?
মেয়েটা ওটা ছিরে ফেলে বলে,
– লাগবে না। ওর মতো একটা লু** ছেলের কাছে কেন জেনে শুনে আমার বান্ধবিকে তুলে দিবো? সালা লু**র দল।
To be continue…….
~ (রাজ-আরোহি) ওদের নিয়ে লিখছি না কেন? উত্তর টা এখন দিবো না। তবে হ্যা ওদের নিয়ে লিখবো, যখন আরোহি পুরোপুরি গল্পে ঢুকে যাবে। আর সে গল্পে এন্ট্রি নিবে ধিরে ধিরে।