#ছদ্মবেশ,পর্ব ১২,১৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
১২
ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙে রুশানের। ঘুমু ঘুমু চোখে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে ভালো করে তাকিয়ে দেখে আরিশা আন্টির ফোন। ফোন রিসিভ করে রুশান বলে,
– আসসালামু আলাইকুম, আন্টি।
আরিশা আন্টি ওপাশ থেকে সালামের উত্তর নিয়ে বলে,
– রিমাকে কি বলেছিলে গত কাল? হটাৎ করে ও এতো ভদ্র হয়ে গেছে কিভাবে?
ঘুম কাতুর চোখেও হাসি আসলো রুশানের। হাসি দমিয়ে রেখে আন্টিকে বলে,
– কই কিছুই তো করিনি আন্টি। ওকে শুধু একটু বোঝালাম, যে এসব ভালো না। ঠিকঠাক ভাবে চলতে। এই আর কি।
আরিশা আন্টি একটু ভেবে বললো,
– কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে না ওর মতো মেয়েকে কিছু বুঝিয়ে লাভ হবে বলে। তুমি নিশ্চই কোনো পানিসমেন্ট দিয়েছো বা কোনো প্যাচের মধ্যে ফেলেছো। নাহলে ওর মতো মেয়ে এতো সহজে সোজা হওয়ার কথা না।
রুশান একটু হেসে বললো,
– সে কোথায় আন্টি?
– উঠে পড়তে বসেছে এখন।
– আচ্ছা পড়ুক, তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। খেয়েছে কিছু?
– না এখন নাস্তা তৈরি শেস হয়নি।
– আচ্ছা।
কিছুক্ষন পর ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে সবাই। নিবিড় রেডি হয়ে রাজের রুমে এসে বসলো। মুখে হাসি নিয়ে বলে,
– ইদানিং দেখি অরিনের সাথে খুব ভাব জ্বমেছে তোমার। দুজন দুজনকে ছারা কিছুই বুঝোনা। লুকিয়ে প্রেম করছো নাকি দুজন।
নিবিড়ের কথায় লজ্জা মাখা মুখে রাজ বলে,
– আরে ওসব কিছু না। আমরা যাস্ট ফ্রেন্ড।
– থাক ভাই, আমার কাছে অন্তত মিথ্যা বলতে হবে না। মেয়ে ফ্রেন্ড তো আমাদেরও আছে। কই আমরা তো এমন একটার সাথে আরেকটা আটার মতো লেগে থাকি না?
রাজ এবার উত্তর দেওয়ার মতো কিছুই খুজে পেলো না। রাজের নিরবতা দেখে নিবিড় আবার বলে,
– আচ্ছা অরিণ মেয়েটা তো অনেক ভাবওয়ালি ছিলো। তাকে কিভাবে পটিয়ে নিলে ভাই?
রাজ এবার দুই হাত কোমড়ে রেখে হেসে বলে,
– আরে ভাই, পটালাম কই? আর আমার মতো এমন ক্ষেত টাইপের ছেলেকে কি কোনো মেয়ে পছন্দ করবে, বলো?
নিবিড় উঠে দাড়িয়ে বললো,
– শুনো, কিছু ভালোবাসা দিক দেখে হয় না। হটাৎ ই হয়ে যায়। আমার মনে হয় ওই মেয়েও তোমার উপর ফিদা। তাই এমন লেগে থাকে সারাক্ষন। তুমিও ঝুলে পরো, দেখবে জীবনটা রঙিন হয়ে উঠবে।
রাজ একটু লজ্জা পেলেও তা প্রকাশ করলো না। অন্য দিকে ফিরে জামা পরতে পরতে বলে,
– ভাই বাদ দাও তো ওসব। দেড়ি হয়ে যাচ্ছে চলো।
,
,
এদের ফ্রেন্ডস মহলের আড়ালেও আরেকটা গল্প আছে। ছেলে হারানো এক মায়ের গল্প। যে প্রতি বারের মতো আজও সেই ছোট্ট ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদছে।
আবরার রুমে এসে দেখে খাটের এক পাশে বসে সেই ছোট্ট ফাহাদের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদছে ফারহা। ছবিটায় কি সুন্দর হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে সেই ছোট্ট ফাহাদ।
বিশ বছর হয়ে গেলো আজ। তবুও সেদিনের পর আর একটা নজরের জন্যও দেখেনি ছেলেকে। কারা নিয়ে গেছে বা কোথায় হারিয়ে গেছে তা কিছুই জানেনা। থানা পুলিশ অনেক কিছু করেও খুজে পেলো না তাদের ছেলেকে।
সেই ঘটনার বিশ বছর পার হয়ে গেলো। হয়তো সেই ছোট্ট ফাহাদ আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। নয়তো আকাশের তারা হয়ে গেছে অনেক আগেই।
ফারহা’কে দুই হাতে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো আবরার। সন্তান হারানো একজন মাকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা তার জানা নেই। সেও তো বাবা। কষ্ট তো তারও হয়।
ফারহা আবরারের বুকে মাথা রাখা অবস্থায় বলে,
– আমার ফাহাদ একদিন ঠিকই ফিরে আসবে।
তবে কে সেই ছোট বেলায় হারিয়ে যাওয়া ফাহাদ? রাজ,রুশান,নিবিড়,তুষার,নিলয় এদের ফ্রেন্ডস মহলেও কেউ নয় তো? নাকি সেও জড়িয়ে আছে নির্জনের সেই অন্ধকার জগতের মাঝে।
,
,
আজও ভার্সিটি যায়নি তুষার। রেস্টুরেন্টের টেবিল মুছতে মুছতে খেয়াল করে ফোনটা ভাইব্রেট হচ্ছে। কেও হয়তো ফোন দিয়েছে।
ম্যানেজারের থেকে একটু অনুমতি নিয়ে সাইডে গেলো সে। দেখে বাড়ি থেকে ফোন।
কল ব্যাক করলে তার ছোট বোন ফোন রিসিভ করে। আর বলে,
– মায়ের ঔষধ শেষ ভাইয়া। ঔষধ কিনতে হবে। তার জন্য কিছু টাকা লাগবে।
মায়ের অনেক ঔষুধ একসাথে কিনতে হয়। তাই টাকা পয়সাও কম লাগে না। আর মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক দিন ধরেই এখানে ওখানে কাজ করে টাকা জমাচ্ছে সে।
ছোট বোনকে বলে,
– আচ্ছা চিন্তা করিস না। আমি বিকালের মাঝেই ম্যানেজ করে টাকা পাঠিয়ে দিবো। আর মাকে একটু ফোনটা দিবি, দুই মিনিট কথা বলি।
তুষারের ছোট বোন দৌড়ে মায়ের কাছে ফোন টা নিয়ে গেলো। তুষার এক মিনিট কথা বলতেই ম্যানেজার এসে গালাগাল শুরু করলো তাকে। কাস্টমার সব বসে আছে আর সে আসছে এখানে ফোনালাফ করতে।
তুষার একটু রগচটা স্বভাবের হলেও এখন সবই সহ্য করতে হচ্ছে তাকে। মাঝে মাঝে নিজের রাগ সামলে রাখার জন্য হলেও কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকে সে। কারণ এখনো অনেক টাকা জমানো বাকি।
,
,
কলেজে আসার পর অরিন দৌড়ে এসে রাজকে আলাদা করে এক পাশে নিয়ে চলে গেলো। কারণ তার কিছু হোম ওয়ার্ক বাকি ছিলো। প্রাইভেট ভার্সিটি দেখে রেগুলার পড়ার প্রতি গুরুত্বটা বেশি থাকে সব সময়ই।
রাজকে এভাবে নিয়ে যাওয়ায় নিবিড় চুপচাপ দাড়িয়ে একটু হেসে গুন গুন করে বলে,
– পিরিতি কাঠালের আটা, লাগলে পরে ছারেনা,,,,,
তখনই নিলয় পেছন থেকে নিবিড়কে ডেকে বলে,
– দেখ ওই মেয়েটা গত কাল আমাকে চিঠি দিয়েছিলো।
নিবিড় হেসে বলে,
– তোর মতো আবুলকেও মেয়েরা চিঠি দেয়? বাহ্ দারুণ তো।
– আরে বাল, আমার জন্য না। তুষাররের জন্য দিয়েছিলো। তুষারকে মনে হয় পছন্দ করে।
নিবিড় হেসে বলে,
– আরে ভাই, এটা তো গুড নিউজ। ফেইক আইডির সাথে রিলেশন করে যা তা অবস্থ করেছিলো এর আগে। এখন রিয়েল এটা জুটলেই হয়।
নিলয় বলে,
– কিন্তু দোস্ত আমি তো একটা আকাম করে ফেলেছিলাম তখন।
– কি?
– তুষার যে একটা মেয়ের সাথে টাংকি মা’রতে গিয়ে মা’র খেয়ে এসেছিলো, এটা আমি ওই মেয়েকে বলে দিয়েছিলাম। এর পর সে আবার চিঠিটা নিয়ে নিলো। আর বললো, সালার লু’ইচ্চার দল।
নিবিড় এবার কোমরে হাত দিয়ে বলে,
– তুই সালা সব সময় ওই তুষারকেই বা’শ দিতে পারছ। তুষার এযদি কখনো এসব জানতে পারে, তোর কপালে কি আছে তা তুইও জানিস না।
,
,
তখন রাত্রি বেলা। ওইদিন লোক গুলো ধরে আনার পর থেকেই অ’ত্যাচার করে চলছে। কিন্তু এখনো মুখ খুলতে পারেনি তাদের। গা বেয়ে কয়েক ফোটা র’ক্ত গড়িয়ে মেঝেতে আছড়ে পরলো। তবুও টু শব্দ করছে না তারা।
রুশানও কম নয়। ইশারা দিতেই একজন লোক এসে একটা প্লেট রেখে গেলো। যটাতে ছিলো ছোট ছোট অনেক কাচের গুড়ো। কেও মুঠোয় নিয়ে চাপ দিলে টপ টপ করে র’ক্ত গড়িয়ে পড়বে এমন।
রুশান তাদের তিনজনের সামনে মুখ নিয়ে বলে,
– তোদের আগেও এখানে কয়েকজন এসেছে। কেউই বেচে বের হতে পারেনি এখান থেকে। এখন তোরেকেও সেই দুইটা অপশন দিচ্ছি।
অপশন নাম্বার ১ঃ- যা যা জানতে চাইছি সকল তথ্য দিয়ে আমাদের হেল্প করবি আর শত শত মানুষের জীবন বাচবে এতে। আর তোরাও মুক্তি পেয়ে যাবি।
অপশন নাম্বার ২ঃ- সামনে থাকা এই কাচের গুঁড়ো গুলো এখন খেতে হবে তোদের। এগুলো খাবি আর মৃ’ত্যুর যন্ত্রনায় কাত’রাবি।
এখন অপশন বেছে নেওয়ার দায়িত্ব তোদের। এক মিনিট সময় দিলাম ৩ জনকে।
এক মিনিট পার হলো, দুই মিনিট পার হলো, তিন মিনিট পার হয়ে গেলো। এখনো কেউই মুখ খোলেনি একটুও। রুশান রাগে টেবিলে থা’প্পর দিয়ে উঠে দাড়িয়ে যায়। আর ইশারা করলেই কয়েকজন এগিয়ে এসে ওই তিনজনের মাঝে একজনকে খুলে নেয়।
আর বাকি দুজনের সামনে গাল টিপে হা করিয়ে কাচের গুড়ো গুলো খাওয়াতে লাগলো। লোকটা ছটপট করছে। আর বাকি দুজন তাকিয়ে আছে তার দিকে।
তাকে খাওয়ানোর পর ছেড়ে দিতেই মেঝেতে পরে ধাপড়াতে লাগলো সে। গাল দিয়ে ফাইপের মতো র’ক্ত বের হতে লাগলো। যেই র’ক্তে ফ্লোরে ভেষে তা লাল রং ধারণ করেছে।
রুশান এবার বাকি দুই জনের দিকে তাকালে দেখে তারা এখনো নিশ্চুপ।
রুশান কপালে হাত দিয়ে বলে,
– তোরা কি মাটির তৈরি ভাই? জীবন চলে যাচ্ছে তোদের। আর তোদের বসের তো এতে একটুও ক্ষতি হবে না। যা যাচ্ছে তোদেরই যাচ্ছে। তাহলে কেন ওর জন্য নিজেদেরকে এভাবে ব’লি দিচ্ছিস তোরা? আরে নিজের ভালো তো পাগলেও বুঝে। কিছুক্ষন পর তো তদের অবস্থাও এর মতো হবে। ভয় করছে না একটুও?
লোক দুটু এখনো চুপ করে বসে আছে পাথরের ন্যায়।
To be continue……
#ছদ্মবেশ (পর্ব ১৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
লা’শ গুলো ম’র্গে পাঠানোর ব্যাবস্থা করো।
বলেই পাশের রুমে গিয়ে টেবিলে রাখা চায়ের কাপ টা তুলে নেয় রুশান। জানালার সামনে দাড়িয়ে কপির মগে চুমুক দিলে পাশে তার এক সহকারি এসে দাড়ায়। রুশান তার দিকে তাকালে সে বলে,
– স্যার, আমার তো কিছুই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এতো গুলো লোককে ধরেও একটাকেও মুখ খোলাতে পারিনি। সবাই মনে হয় একটাই সংকল্প নিয়ে কাজ করছে যে, ভাঙবে তবুও মচকাবে না৷
রুশান চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
– বিষয়টা এমন হলে এতো অত্যা’চারের পরও কেও না কেও মুখ খুলতো। কিন্তু এরা কেওই মুখ খোলেনি। হয়তো ওদেরকেও কোনো না কোনো ভাবে লক করে রাখা হয়েছে। কারণ যারা এসব ক্রাইমের পরিচালনা করে তারা কেউই কোনো বোকা মস্তিষ্কের মানুষ না। সব গুলোই তীক্ষ্ম বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। যারা আড়াল থেকেই এদের পরিচালনা করে। আর আমাদের টার্গেট হলো ওসব লোক গুলো। যারা এই খেলার ক্যাপ্টেইন।
পাশ থেকে লোকটা বলে,
– ইদানিং প্রায়ই ক্রা’ইমে দেখি ভার্সিটির কিছু স্টুডেন্ট ও জড়িয়ে আছে। আমি ভাবি ওরা এতো বড় বড় কাজে হাত দেওয়ার সাহস পায় কোথায় থেকে? আর ওদেরকে এসব কাজের’ই বা সন্ধান দেয় কারা?
রুশান জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলে,
– হয়তো বিভিন্ন ভার্সিটিতেও ওদের ছেলে পেলে মিশে আছে। এতে টিম মেম্বার বৃদ্ধি করছে তারা। জাতীয় পর্যায় থেকে এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে তাদের জাল।
– কিন্তু স্যার আমার তো মনে হয় না এভাবে আমরা কিছু খুজে পাবো বলে। এর আগেও কয়েকজন অফিসার এসব কিছুর মুল খুজতে গিয়ে নিজেরাই হারিয়ে গেছে।
রুশান একটু বাকা হাসি দিয়ে বলে,
– তার জন্যই তো আমি সোজা রাস্তায় না হেটে বাঁকা রাস্তাটাই বেছে নিয়েছি। তবে এবার আমাদের নতুন প্লেন তৈরি করতে হবে। সামনে হয়তো অনেক বিপদ পরে আছে যা এখনো আমরা চোখেও দেখিনি। সো আমাদের প্লেন কে নতুন করে আরো স্ট্রং করে সাজাতে হবে।
বলেই ফোনের অন করে দেখে রাত ২ টা ৩০ বাজে। ওয়েল প্যাপারে সুন্দরি একটা মেয়ের ছবে দেখে মুচকি হেসে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো রুশানের পাশের লোক টা। যেটা ছিলো রিমার ছবি। লোকটার এমন হাসির মাঝেও একটা বিষয় মাথায় ঢুকে গেলো রুশানের।
কারণ লোকটা এতোক্ষন গম্ভির থেকে এখন পিকটা দেখা মাত্রই তার মুখের ভঙ্গিমা চেন্জ হয়ে গেলো। আজ হয়তো প্রথম খেয়াল করেছে তাই এমন হেসে দিলো। যদি না দেখতো তাহলে কখনোই হাসতো না।
এখন চিন্তার বিষয় টা হলো, যদি কোনো ভাবে তার শত্রু কেও তার সাথে মিশে গিয়ে এমন করে তার দুর্বলতা টা বুঝে ফেলে তাহলে তার কাজ টা খুব বেশিই কঠিন হয়ে পরবে। কারণ দুর্বল জায়গা খুজে পেলে প্রতিপক্ষকে বসে আনা খুব সহজ। তাই দুর্বলতা আড়ালে রাখাই ভালো।
ফোনের লক খুলে ওয়েল প্যাপার টা চেন্জ করে নিলো রুশান। কারণ সে চায় না এসবের মাঝে রিমার কথা কেউ জানুক বা তার কোনো ক্ষতি হোক।
,
,
অল্প কয়েক দিনেই রাজদের ডিপার্টমেন্ট এর প্রায় সকল স্যার দের প্রিয় হয়ে উঠেছে রাজ। তার আচরণ ও পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ টা সকলেরই প্রিয় করে তুলেছে তাকে।
অনেক দিন পর আজ হসপিটাল থেকে কলেজে ফিরলো নাহিদ। তাও হুইল চেয়ারে বসে। ছাত্র রাজনৈতিক দলের সভাপতি ছিলো দেখে ভার্সিটির অনেক রাজনৈতিক ছেলে মেয়ে তার পেছনে আছে।
আর নাহিদের সুবাধে সেই জেলার এনপিও আসছে আজ কলেজে। সারা জেলায় ছাত্র রাজনৈতিক এর মাঝে রাজ করা ছেলেটা আজ হুইল চেয়ারে। অপমানে হসপিটালেই পদত্যাগ করেছে সে। তাই তাকে পদত্যাগএর কারণে বিদায় জানাতে এতো আয়োজন। এর পর সিলেক্ট করা হবে নতুন সভাপতি।
সব ডিপার্টমেন্ট এর ক্যাপ্টেন রা এমপি কে একে একে ফুলের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। তার মাঝে পদার্থ বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট থেকে গেলো রাজ। তার প্রিয় সম্রাট স্যারই ডেকে নিলো তাকে।
রাজ ফুল নিয়ে এগিয়ে গেলো এনপির কাছে ফুল দিয়ে রাজ হাত মিলানোর জন্য হাত বাড়ালে এনপি চেয়ারের দিকে তাকিয়ে বসে গেলো চেয়ারে। অপমানিত হয়ে সেখান থেকে সরে গেলো রাজ। বিষণ্ন মনে অন্যান্য ছাত্রদের সাথে মিশে গেলো সেও। রাজের ভাবতেই হাসি পায় একদিন এই এমপি নিজেই তার সাথে হাত মিলাতে আসবে।
অরিন রাজের পাশে দাড়িয়ে বাহু দিয়ে রাজকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে হেসে বলে,
– দেখলে পাওয়ার চিরকাল থাকে না। কতো ছেলেকে মে’রেছে এই নাহিদ। হসপিটালেও পাঠিয়েছে অনেক কে। আর তোমার ভার্সিটিতে আসার প্রথম দিনই তোমাকে মা’রলো। আর এখন নিজেই হুইল চেয়ারে বসে আছে। তবে কাজটা যেই করুক একধম ঠিক কাজই করেছে। এসব ছাত্র রাজনিতির কারণে সাধারণ ছেলে মেয়েরা ভার্সিটিতে ঠিক মতো শান্তিতে ক্লাসও করতে পারে না।
রাজ একটু হেসে বলে,
– আর কয়েকদিন অপেক্ষা করো, এর পর দেখবে এসব ছাত্র নেতাদের কি বেহাল দশা হয়।
অরিণ কিছু না বুঝে অবাক চোখে রাজের দিকে তাকালো। অবাক ভঙ্গিতে বললো,
– মানে?
রাজ আবার হেসে বললো,
– এই দেখছো না নাহিদের কি অবস্থা। বাকিরাও এমন হবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে?
– ওহ্।
,
,
দুইটা মেয়ে রেস্টুরেন্টে আসলো। কিছুটা দুরে একটা সিট খালি দেখে ওখানে যেতেই পাশ থেকে একটা ছেলে ইচ্ছে করেই একটা মেয়ের শরিরে হাত লাগালো। যার কারণে মেয়েটা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে,
– এসব কোন ধরনের অভদ্রতা?
ছেলেটা উঠে দাড়িয়ে বললো,
– ওহ্ সরি,,,
– সরি মানে? গায়ে হাত দিয়ে সরি বললেই সব সমাধান হয়ে যায়।
ছেলেটা এবার মেয়েটার হাত দরে বললো,
– গায়ে হাত দিলেই কি মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়? এখন তো সামনেই ধরলাম, কি করবি এখন কর?
দুর থেকে পুরো বিষয়টা লক্ষ করলো তুষার। সামনে এগিয়ে গিয়ে ছেলেটাকে ধরে বলে,
– হোয়াট ইজ দিস ভাইয়া? এসব কোন ধরনের আচরণ।
ছেলেটা এবার তুষারকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে,
– তোর কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে আমার? সা’লা ফ’কিন্নি।
তুষার আবার সামনে গিয়ে বলে,
– রেস্টুরেন্টে সবার সামনে একটা মেয়ের সাথে এমন আচরণ করতে পারেন না আপনি।
ছেলেটা এবার তুষারের দিকে আঙুল তুলে বলে,
– আমার পরিচয় জানিস তুই?
তুষার মাছি তাড়ানোর মতো করে আঙুল সরিয়ে বলে,
– আপনার পরিচয় যেনে আমি কি করবো?
আর কিছু না বলেই তুশারের গালে একটা ঘু’ষি বসিয়ে দেয় ছেলেটা। আর মুখ দিয়ে অসংখ্য গালি-গালাজ করতে থাকে সে। যা ছিলো তুষারের কাছে অসহ্যকর। তাই সে রাগের মাথায় ছেলেটার বুকে লাথি বসিয়ে দিলে কয়েকটা টেবিল দুড়ে গিয়ে বলে ছেলেটা। হাতাহাতি শুরু হলে সবাই এসে তুষারকে টেনে একপাশে নিয়ে চলে যায়। আর ছেলেটা উঠে বলে,
– শুধু মাত্র একটা ফোন দিলে এমন দশটা রেস্টুরেন্ট ভে’ঙে গুরো গুরো করে ফেলতে দুশ মিনিট সময় লাগবে না। আর তুই আমার গায়ে হাত তুলিস?
হোটেল ম্যানেজার এসো ছেলোটাকে ধরে ক্ষমা চাইতে লাগলো। আর এসেই তুষারের গালে থা’প্পর মে’রে বলে,
– গেট আউট। আর কখনো যেন তোকে এই রেস্টুরেন্টের আশে পাশে না দেখি।
ছেলেটাও তুষারের দিকে আঙুল দেখিয়ে বেড়িয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট থেকে। যার অর্থ তুষার তার শিকারে পরে গেছে। এখান থেকেই তুষারের শত্রুদের সূত্রপাত হয়েছিলো।
কাস্টমারের সাথে এমন আচরণের জন্য ম্যানেজার গালাগাল করে বের করে দিলো তুষারকে। তুষার কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে ইউনিফর্ম খুলো বেড়িয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট থেকে। রাস্তার এক পাশ থেকে হাটছে। মাসের আর ৫-৬ দিন বাকি ছিলো। তবুও অর্ধেক মাসের বেতনটাও পেলো না সে।
বাসায় আসার পর থেকেই বিষণ্ন মনে বসে আছে তুষার। মাঝে মাঝে চোখের জল মুছে নিচ্ছে সে। অনেক কষ্টে জবটা ম্যানেজ করেছিলো। প্রতি মাসে কিছু টাকা জমিয়ে আবার বাড়ির জন্যও পাঠাতে হতো তাকে। আর এখন সেটাও চলে গেলো। এখন আরেকটা জব খোজা, নিজের পড়াশুনার খরচ চালানো, মায়ের অপারেশনের জন্য টাকা জমানো। সব কিছু কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। আর চাইলেও সহজে আর এতো ভালো জব খুজে পাবে না সে।
তুষারের মন বিষণ্ন দেখে নিবিড় পাশে বসে কারণ জানতে চাইলো। তুষার সবটা খুলে বললো তাকে। পাশে রাজও ছিলো।
সব শেষে তুষার কেঁদে বললো,
– মায়ের অপারেশনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আর আমার বাবা নেই। কয়েক বছর আগে মা’রা গেছে। আমাকেই পড়াশুনার পাশাপাশি সংসার চালাতে হয়। এখন তো সেই পথটাও বন্ধ হয়ে গেলো। গত এক বছর ধরে এখানে ওখানে কাজ করে মায়ের অপারেশনের জন্য টাকা জমাচ্ছি। আর এখন? এখনো দু’লাখের মতো জমানো বাকি। আমি এখন কিভাবে এতো টাকা জোগাড় করবো?
রাজ পাশ থেকে তার কাধে হাত রেখে বললো,
– মন খারাপ করো না। আমরা তো আছি। তোমার মা তো আমাদেরও মায়ের মতো তাই না? প্রয়োজনে আমরা সবাই মিলে তোমার জন্য একটা জব খুজে দিবো। ইন’শা আল্লাহ্ একটা না একটা ব্যবস্থা নিশ্চই হয়ে যাবে।
বলেই সেখান থেকে উঠে চলে গেলো রাজ। রুমে গিয়ে লেপটপ টা নিয়ে বসলো । কিছুক্ষন পর তুষারের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে।
‘কনগ্রেচুলেশন তুষার আহমেদ, সাগরপারি সংস্থা থেকে প্রতি বছরই আমরা লটারির মাধ্যমে পাঁচ জন সেরা ভাগ্যবান সিলেক্ট করে নিই। আর এই বছরের সেই পাঁচ জনের মাঝে একজন হলেন আপনি। তাই সাগরপারি সংস্থা থেকে আপনার একাউন্টে ৫ লক্ষ টাকা যোগ হয়েছে। একাউন্ট চেক করে যদি টাকা পেয়ে থাকেন তাহলে Y লিখুন। আর যদি টাকা এখনো না পৌছায় তাহলে N লিখে সেন্ট করুন। ধন্যবাদ।’
তুষার যেন অবাক হয়ে রইলো। সাগরপারি নামের কোনো সংস্থা আছে বা তারা প্রতি বছর মানুষকে এসো টাকা দান করে, তা এই প্রথমবার শুনলো সে। তবুও একাউন্ট চেক করে দেখে সত্যিই তার একাউন্টে কিছুক্ষন আগে পাঁচ লক্ষ টাকা যোগ হয়েছে। যা দেখে কিছুক্ষন স্থির হয়ে তাকিয়ে রইলো তুষার। এটা কিভাবে সম্ভব?
To be continue……..