#ছদ্মবেশ,পর্ব ২,০৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
০২
একটা বড় বাড়ির সামনে এসে দাড়ায় রাজ। বাড়ির চার পাশে সিকিউরিটি গার্টে ঘেরা। নিবিড় যেমনটা বলেছিলো তেমনই।
বাড়ির সামনে গিয়ে গেটের সামনে দাড়ালে একজন গার্ড জিজ্ঞেস করে,
– পরিচয় কি আপনার?
রাজ কিছুক্ষন হাবার মতো দাড়িয়ে থেকে বলে,
– জ্বি, আমি এই বাড়ির একটা মেয়ে আছে, ওর নতুন হোম টিচার। ম্যাম এর সাথে কথা হয়েছিলো গত কাল।
গার্ড টা রাজের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে বললো,
– বাড়িতে অপরিচিত লোক প্রবেশ নিষেধ। আমি ম্যাডামের সাথে কথা বলে আপনাকে জানাচ্ছি।
রাজ সোজা হয়ে দাড়িয়ে বললো,
– জ্বি, আচ্ছা।
রাজ কিছুক্ষন ওখানে দাড়িয়ে থাকলে বডিগার্ড টা ফিরে এসে বললো দুই হাত উপরে তুলতে। এর পর চেক করে বললো,
– এবার ভেতরে যেতে পারেন।
রাজ গেটের ভেতরে ঢুকে হাটতে হাটতে বাড়িটায় চোখ বুলাতে লাগলো। এক পাশে কিছু লোক গাড়ি গুলো মুছতে ব্যাস্ত। অন্য পাশে আরেকজন লোক গাছ গুলো তে স্প্রে করছে।
চার পাশে তাকিয়ে ভেতরে গেলো রাজ।
ভেতরে গেলে একজন লোক তাকে পড়ার রুম দেখিয়ে দিলে রাজ ওখানে গিয়ে দেখে আরোহি আগে থেকেই বই খাতা নিয়ে বসে আছে। রাজকে দেখে উঠে দাড়ালো সে। রাজকে বসতে বলে পরে নিজেও বসলো।
শুরুটা কিভাবে করবে ভেবে পাচ্ছিলো না রাজ। আরোহি তার দিকে চেয়ে বললো,
– নার্ভাস হবেন না স্যার। আর কিছু কথা বলি আপনাকে, কিছু মনে করবেন না। এর আগেও কয়েকটা টিচার চেন্জ করেছে শুধু এই কারণে। তারা এসে পড়ানোর সাথে কেমন নার্ভাস হয়ে থাকতো। আমি পড়ার সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস স করলেও ভুত দেখার মতো চমকে উঠতো হটাৎ। এসবের মাঝে কি পড়া যায় বলুন? তাই আপনাকে বলছি, নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবেন। নার্ভাস হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি টিচার আমি স্টুডেন্ট।
রাজ এবার কিছু জড়তা কাটিয়ে বললো,
– আচ্ছা।
আরোহি আবার বলে,
– আরেকটা কথা স্যার। আপনার ড্রেসআপ চেন্জ করতে হবে। এমন হাবা মানুষ আমার একধম পছন্দ না। স্মার্ট হয়ে চলবেন। আমি মাম্মিকে বলে আপনার বেতনের অর্ধেক এডভান্স নিয়ে দিবো। নিজের প্রয়োজনিয় জিনিস গুলো নিয়ে নিবেন।
প্রতি উত্তরে রাজ কিছু না বলে বললো,
– পড়ায় যাই?
– জ্বি আচ্ছা।
,
,
ড্রাইভার নেমে এসে গাড়ির দরজা খুললে একটা মেয়ে নেমে এলো গাড়ি থেকে। কাধে ব্যাগ নিয়ে চার দিকে তাকিয়ে গেটের দিকে পা বাড়ালো। মেয়েটার নাম অরিন। অনেকটাই রুপবতি ও দেমাগি মেয়ে সে। বলতে গেলে পা যেন মাটিতেই পরতে চায় না তার।
রাজ চুপচাপ এক পাশে বসেছিলো। তার জন্য আজ প্রথম দিন।
সিনিয়র ব্যাচের কয়েকটা ছেলে তাকে ডাক দিয়ে হাতে একটা কাগজ দিয়ে বললো,
– ঐ যে মাত্র গাড়ি থেকে নামলো তাকে গিয়ে এটা দিয়ে আসবে। আর নাম বলার প্রয়োজন নেই। ভেতরেই লেখা আছে সব।
রাজ তার দিকে চেয়ে বললো,
– আমাকে কেন বলছেন, আশে পাশে তো অনেক ছেলে আছে।
পাশ থেকে একটা ছেলে থা’প্পর দিবে এমন ভাব নিয়ে বললো,
– ভাই বলেছে তাই দিয়ে আসবি চুপচাপ।
রাজ আর কথা বাড়ালো না৷ কাগজটা চুপচাপ হাতে নিয়ে মেয়েটার দিকে এগুতে থাকে। আর ছেলে গুলো দুর থেকে চুপচাপ চেয়ে একটু একটু হাসছে।
রাজ গিয়ে অরিনের সামনে দাড়িয়ে কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
– এটা আপনার জন্য।
অরিন কাগজটা নিয়ে চুপচাপ ছিড়ে রাজের মুখের দিকে ছুড়ে মারে। রাজ বলতে যাবে এটা আমার না,, তার আগেই ওই ছেলেগুলো এসে রাজে কপার চেপে ধরে বললো,
– সাহস কতো তোর? ভার্সিটির মাঠে দাড়িয়ে সুন্দরি মেয়েদের বিরক্ত করিস?
অরিনের দিকে চেয়ে বলে,
– আপু তোমাকে উল্টো পাল্টা কিছু বলেছে সে? কোনো সমস্যা করেছে? কিছু বললে আমাকে বলতে পারো, ওর এমন অবস্থা করবো জীবনে আর মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস করবে না।
বলেই এতো গুলো স্টুডেন্টের সামনে রাজের গালে ঠাস টাস চ’র বসিয়ে দেয় ছেলেটা।
আর অরিনের দিকে চেয়ে বললে,
– আজ থেকে তোমাকে কেও কিছু বললে সোজা আমাকে বলবে, কেমন আপু? যাও তুমি, এটাকে আমি দেখছি।
অরিন কিছু না বলে ছেলেটার দিকে এক পলক তাকিয়ে হাটা ধরলো।
রাজ ছেলেটাকে বললো,
– ভাইয়া আপনিই তো দিয়েছিলেন চিঠি টা।
বলতেই আবারও ঠাস ঠাস চ’র পরলো রাজের গালে। তারপর বলে,
– এটা আমরা জানি আর তুই জানিস, কিন্তু আর কেউ যেন না জানে। জানলে এই মাঠের মাঝে জী’বিত পু’তে দিবো তোকে। আর শোন, আজ থেকে প্রায়ই এই মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করবি তুই। আর প্রতিবারই আমি গিয়ে তোকে হালকা পাতলা দু’এক টা চ’র দিয়ে ছাড়িয়ে নিবো। বিনিময়ে টাকা পাবি তুই।
তখনই রুশান এসে ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে রাজকে ছাড়িয়ে নেয়। আর ছেলেটার দিকে চেয়ে বলে,
– আমার ফ্রেন্ড হয় রাজ। সো যাকে তাকে রেগিং করার মতো দুঃসাহস দেখাবে না।
তার মাঝেই সেখানে উপস্থিত হলো তুষার।
রুশান, রাজ, তুষার, নিলয়, নিবিড়। এরা পাঁচ জন মিলে থাকে একই সাথে। এর মাঝে তুষার ছেলেটা একটু রগচটা সভাবের। পারুক আর না পারুক, তবে সাহসিকতার দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে সে।
তাই গলা উচিয়ে এগিয়ে এসে বলে,
– এই সমস্যা কি? কি হয়েছে এখানে?
রুশান তাকে এক হাতে থামিয়ে দিয়ে বলে,
– তুষার থাম, সব জায়গায় রাগ দেখানো ঠিক না। আমি দেখছি।
রুশান এবার ছেলেটার দিকে চেয়ে বললো,
– আজ থেকে রাজকে রেগিং করার চেষ্টা করবে না।
বলেই রাজ ও বাকিদের নিয়ে চলে গেলো রুশান। রাজের গাল দুটি লাল হয়ে আছে। তাই এক হাত গালে রেখে নিশ্চুপ হাটছে সে।
,
,
বিকেলে ছাদে গিয়ে হাটাহাটি করছিলো রুশান। ছাদের এক পাশে দুই হাতে ভর করে দাড়ালো সে। মাথায় চিন্তার ভার টা যেন সরছেই না। যেই মিশন নিয়ে মাটে নেমেছে, তার কুল কিনারাও খুজে পাচ্ছে না সে। জানে এটা খুব কঠিন খেলা। হয়তো পরিনতি মৃ’ত্যুও হতে পারে। তবুও জেনে শুনেই নিজেকে মাঠে নামালো সে। কারণ বাবাকে আর দাদিকে কথা দিয়েছে সে। আজ না হয় কাল, নির্জনকে তাদের পায়ের কাছে এনে ফেলবে সে। প্রয়োজনে মৃ’ত্যুকেও মেনে নিবে তবুও পিছ পা হাটবে না। বদলা নিয়েই সেদিন সে প্রান ভরে নিশ্বাস নিবে।
পকেটে থাকা ফোন টা বেজে উঠতেই বের করে দেখে রিমার ফোন। মহারানী আজ মনে হয় দারুণ মুডে আছে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রিমা বলে,
– আলহামদুলিল্লাহ, আল্লার কাছে অশেষ শুকরিয়া।
রুশান একটু ভ্রু-কুচকে বলে,
– কেন?
রিমা বলে,
– এই যে আপনি বেচে আছেন, তাই শুকরিয়া আদায় করছি।
রুশান এবার কপাল কুচকে বললো,
– কি সব আবোল তাবোল কবছিস, আমি মরতে যাবো কেন?
রিমা এবার একটু রেগে বললো,
– তাহলে ফোন দেন নি কেন এই দুই দিন। আমি তো ভাবছিলাম ইন্নানিল্লাহ্ হয়ে গেছেন।
বলেই খিক খিক করে হেসে দিলো রিমা।
রুশান এবার রেগে বললো,
– কানের নিচে খাবি একটা।
রিমা এবার হাসি থামিয়ে বলে,
– আচ্ছা বাদ দেন, কি করছিলেন যে একবার ফোন দিয়েও আমার খোজ নেওয়ার সময় পান নি আপনি?
– খুব চাপে আছি রে, তাই সময় পাচ্ছি না।আমার টিয়া পাখিটা, রাগ করিস না প্লিজ।
ওদিকে রাজের পাশে বসে আছে নিবিড়। রাজের কাধে হাত রেখে বলে,
– কলেজে কোনো ঝামেলায় জড়িও না। ওরা খুব ডেন্জারেস। আজ ঝামেলা করছো কাল দেখবে যে গু’ম হয়ে গেছো, ওরা এমনই। তাই এসবের থেকে দুড়ে থাকাই ভালো।
রাজ কিছু না বলে চুপ করে রইলো। নিবিড় তার কাধে হাত রেখে বলে,
– চা খাবে? দাড়াও নিয়ে আসছি। চা খেতে খেতে আড্ডা দিবো।
বলেই চা বানাতে নিচে ফরিদা আন্টির কাছে চলে গেলো নিবিড়।
রাজ বসে আছে চুপচাপ। পাশে রেখে যাওয়া নিবিড়ের ফোন টা বেজে উঠতেই ওদিকে তাকায় রাজ। দেখে ফোনের স্কিনে ভেসে উঠলো, (বাবু ৭)
(বাবু ৭) এর মানে বুঝতে রাজ কিছুক্ষন ভাবলো। কিন্তু উত্তর টা পেয়ে গেলো যখন কিছুক্ষন পর আরেকটা নাম্বার থেকে ফোন এলো যে, (বাবু ৩)।
রাজের অবাক হুওয়া মুখ এবার হেসে উঠে। নিবিড়ের কয়টা বাবু?
,
,
রাত ১০ টা অব্দি আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলো রাজের সাথে ভার্সিটিতে ঝামেলা করা সেই ছেলে গুলো। যাদেরকে এক নামে ভার্সিটির সবাই চিনে, নাহিদ ভাই, এই ভাই সেই ভাই। অরিনের কাছে হিরো সাজতে গিয়ে রাজকে চ’র থাপ্পর মে’রেছিলো তারা।
বাইকে করে বাড়ি ফিরছিলো নাহিদ ও তার বন্ধু। বাকিরা হয়তো আগেই চলে গেছে বাড়িতে।
নাহিদ বাইক নিয়ে কিছুটা গেলে মাজ রাস্তায় থেমে গেলো বাইক। কারণ সামনেই ছায়ার মতো কিছু একটা দাড়িয়ে আছে। অন্ধকারে বাইকের আলোয় ভালো করে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে। রুমাল দিয়ে মুখ পেচিয়ে রেখে সামনে দাড়িয়ে আছে একটা হকিস্টিক হাতে নিয়ে। অন্ধকারে মুখটা বেধে রাখায় চেহারা টা দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে অন্ধকারাচ্ছন্ন ভুতুরে পরিবেশে একটা ছায়া মুর্তি হাতে হকস্টিক নিয়ে দাড়িয়ে আছে তাদের দিকে তাকিয়ে।
To be continue……
#ছদ্মবেশ (পর্ব ৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
অন্ধকারে সামনে ছায়ার মতো কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নাহিদ বাইক থেকে নেমে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
– কে ওখানে?
বলে পেছন ফিরে তার অপর বন্ধুকে ডাক দিলো নাহিদ। পুনরায় সামনে তাকাতেই কেউ থাবা মা’রার মতো ধপ করে একটা শব্দ হওয়ার পর আর কিছু মনে নেই তার।
অন্ধকার রাস্তায় নাহিদ নিচে পরে আছে। ধাপড়ানোর শক্তিটুও নেই দেখে হাত পা নাড়াচ্ছে শুধু। আর অন্যজন মাথায় ভাড়ি আঘাত পাওয়ায় সে’ন্স’লেস হয়ে রাস্তার এক পাশে পরে আছে।
নাহিদের রক্ত শরির থেকে বেয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। অন্ধকার রাস্তায় বাইকের হ্যাড লাইটের আলোয় শুধু দেখা যাচ্ছে একটা ছেলে রাস্তায় নড়াচড়া করছে আর তার রক্তে ভেষে যাচ্ছে রাস্তা।
পাশের গাছ থেকে একটা পেঁচা ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে চলে গেলো।
নিলয় বসে বসে পড়ছে আর রুশান লেপটপে কিছু একটা করছে। আর অন্য দিকে নিবিড়ের ফোন তো কানের কাছে লেগেই থাকে। আর তুষার ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে সকলকে বললো,
– ফরিদা আন্টি যে ডেকে গেলো শুনতে পাশ নি তোরা?
রুশান লেপটব রেখে বলে,
– হুম আসছি। রাজ কোথায়?
– ওই ফোনে ফ্লেক্সি করতে গিয়েছে, এখনও খবর নেই। হয়তো বাইরে হাটাহাটি করছে। ফোন দিয়ে দেখ।
রুশান ফোন হাতে নিবে তখনই ঘরে এসে প্রবেশ করে রাজ। রুশান লেপটপ এক পাশে রেখে ছড়িয়ে থাকা বই গুছাতে গুছাতে বললো,
– কোথায় ছিলে এতোক্ষন? নতুন এসেছো, কিছুই চিনো না। দেখো সেদিনের মতো যেন আবার কোনো চোর ছিনতাই কারির কবলে না পরো।
রাজ একটু বোকা হাসি দেয়ে বলে,
– ওই রাস্তার ফ্লাইওভার এর উপর দাড়িয়ে ছিলাম। ভালো লাগছিলো খুব। গাড়ি গুলো একপাশ দিয়ে আসে অন্য পাশ দিয়ে আবার চলে যায়। খুব সুন্দর লাগছিলো দেখতে, তাই এতোক্ষন ওগুলোই দেখছিলাম।
রাজের কথা শুনে তুষার মুখ চেপে হেসে উঠলে রাজ আবার বোকা ভাব নিয়ে বলে,
– আসলে আমাদের গ্রাম অঞ্চলে এমন দৃশ্য খুব একটা নেই। আর থাকলেও রাস্ত গুলো এতো বড় না। তাই আর কি।
রুশান একটু মুচকি হেসে বলে,
– আচ্ছা সমস্যা নেই। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো, আমরা যাচ্ছি। তারাতারি আসবে।
রাজ ছোট্ট করে বলে,
– আচ্ছা।
,
,
রাত তখন ৩ টা। সবাই গভির ঘুমে আচ্ছন্ন। এদিকে অন্ধকার একটা ঘরে বা’ধা আছে দুজন লোক। আর সামনে একটা লা’ঠি হাতে তাদের বেধরম মা’রছে রুশান। এক আঙুল দিয়ে কপালে জ্বমে থাকা ঘাম ফেলে তাদের সামনে চেয়ার টেনে বসে রুশান।
দুই হাতে দুজনের চুল ধরে মাথা উপর দিকে তোলে সে। মুখ থেকে রক্ত গড়িয়ে পরছে লোক গুলোর। তবুও কিছুই স্বীকার করছে না।
প্লাস দিয়ে আঙুলের নখ টেনে তোলা থেকে শুরু করে সব করেছে। তবুও মুখ দিয়ে একটুও টু শব্দ বের হয়নি তাদের।
কিছু তথ্য জানবে জানবে করে আজ সাত দিন এই লোক গুলোকে নিয়ে পরে আছে সে। কিন্তু লাভের খাতা শুন্য।
রুশান রাগের মাথায় পিস্তল বের করে একটা লোকের মাথায় শুট করে দিয়ে অন্যটার মাথায় ধরে বলে,
– মুখ না খুললে তোর অবস্থাও ওর মতোই হবে।
লোকটা রক্ত মাখা মুখে হাসতে হাসতে বলে,
– এরোকম একটা কেন? আমাদের হাজারটা সদস্য এভাবে মে’রে ফেললেও কারো মুখ থেকে কিছুই বের হবে না। আমাদের রাস্তা টা এমন এক রাস্তা। হয়তো ম’রো নয়তো মা’রো, তবে মুখ খোলা যাবে না।
বলেই হা হা করে হেসে উঠে লোকটা। রুশান উঠে দাড়িয়ে তৎক্ষনাৎ তাকেও শুট করে দিলো।
পাশে থেকে তার এক সহকারিকে ডেকে বলে,
– লাশ দুটু মর্গে পাঠিয়ে দাও।
লোকটা মাথা নিচু করে বলে,
– ওকে স্যার।
রুশান আর কিছু না বলে চুপচাপ বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে। বাইরে ঘোর অন্ধকার। হাটতে হাটতে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো সে। রাত ৪ টার সময় বাসায় ফিরে চুপি চুপি আবার নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো। সকাল হলেই পুণরায় সে স্বাভাবিক একটা স্টুডেন্ট।
,
,
পরদিন কলেজে যেতেই একটা খবর সবার কানে ভেষে আসে। খবরটা হলো, নাহিদ ভাইকে কারা যেন প্রথমে পিটিয়ে পরে দুই হাতের র’গ কে’টে রাস্তায় ফেলে গেছে। এখন হসপিটালে আছে। বাচে কি ম’রে তার গ্যারান্টি দিতে পারছে না কেও।
তবে কে বা কারা করেছে তার কোনো খোজ পাওয়া যায়নি। রেখে যায়নি কোনো প্রমানও।
রাজ ও নিবিড় কেন্টিনে অপেক্ষা করছে। কারণ রুশান, তুষার ও নিলয় এর ক্লাস এখনো শেষ হয় নি। নিবিড়ের ফোন আসতেই এক পাশে চলে যায় সে। রাজ চুপচাপ বসে বসে চার দিকে তাকাচ্ছে।
এর মাঝে অরিন হেটে এসে তার পাশে বসে। অরিনকে দেখেই উঠে দাড়ায় রাজ। অরিন হাতের ইশারায় বসতে বললে চুপচাপ বসে গেলো রাজ।
অরিন রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– কাজ টা তুমি করেছো তাই না?
রাজ যেন বোকা বনে গেলো। অরিনের দিকে বোকা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
– কোন কাজটার কথা বলছেন আপু?
অরিন একটু হেসে বললো,
– কালকে নাহিদ ভাইয়ার সাথে তোমার ঝামেলা হয়েছিলো, আজ সে কোমায়। তো বিষয়টা একটু ভাবার নয় কি? আচ্ছা যাই হোক, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না এমন কাজ করতে পারো। ক্যান্টিনে আসার পর তোমাকে দেখলাম তাই জিজ্ঞেস করছিলাম এমনি। তবে যেই করুক, ভালোই করেছে। এবার একটা শিক্ষা হলেই হয়।
বলেই উঠে হাটা ধরলো অরিন। রাজ কিছুক্ষন অরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে একটু মুচকি হেসে নিবিড়ের দিকে তাকালো। নিবিড় সেই কখন থেকে কথা বলছেই তো বলছে।
– আমাকে কতটুকু ভালোবাসো বাবু?
নিবিড় খুব নরম ভাবে বলে,
– অনেক ভালোবাসি। আমার জীবনের প্রথম ও শেষ ভালোবাসাটা হলে তুমি। তো তোমাকে ভালোবাসবো না কাকে বাসবো বলো?
– ইশ, আমার বাবুটা কতো ভালো। কিন্তু প্রায় টাইমে তোমার ফোন বিজি পাই কেন? কার সাথে কথা বলো?
নিবিড় একটু রেগে বলে,
– কার সাথে কথা বলো মানে? তুমি ছারা কি আমার লাইফে আর কেও আছে? আচ্ছা, তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো?
নিবিড়ের রাগে একটু থৎমৎ খেয়ে মেয়েটা বলে,
– আরে না না আমি এমনটা মিন করিনি। ভুল বুঝো না প্লিজ। আমি তো জানি তুমি আমায় কতো ভালোবাসো।
– হুম এটা মাথায় রাখবে, দুনিয়ার সব মানুষের ভালোবাসা মিথ্যে হলেও এই নিবিড়ের ভালোবাসা কখনো মিথ্যা হয় না। আচ্ছা আমি ফোন রাখি।
ওপাশ থেকে মেয়েটা বললো,
– প্লিজ রাগ করো না বাবু, আমি সত্যি এভাবে ব,,,,
তার আগেই ফোন কেটে দেয় নিবিড়। যেন এক প্রকৃত প্রেমিক কে তার গার্লফ্রেন্ড সন্দেহ করায় রাগ করেছে সে।
,
,
আজ টিউশনিতে যাওয়ার পর রাজ ভালোই বুঝতে পারে যে আরোহির মনটা বিষণ্ন। আসার পর থেকেই পড়ায় মন বসছে না।
রাজ তার দিকে চেয়ে বলে,
– আসার পর থেকেই দেখছি কোনো পড়াতেই মন বসছে না তোমার। কোনো সমস্যা হয়েছে? পার্সনাল হলে বলার দরকার নেই।
আরোহি গাল থেকে হাত সরিয়ে বললো,
– আজ বাবা মায়ের আবার ঝগড়া হয়েছে। আর বাবা সব সময় মাকে কি বিষয় নিয়ে যেন হু’মকি দেয়।
– এটা ওদের পার্সনাল ব্যাপার। ঝগড়া হবে আবার ঠিক হবে। এর মাঝে তুমি মন খারাপ করে রাখলে কি হবে?
আরোহি এবার টেবিলে ভর দিয়ে ভালোভাবে বসে বলে,
– বিষয়টা এমন হলে আমি ভাবতাম না। বাবা মাসে দুই মাসে একবার বাসায় আশে। তাও একদিন থেকে চলে যায়। আর মাকে দেখি সব সময় কেমন একটা ভয়ে ভয়ে থাকে। কিন্তু কারো সাথে কিছু শেয়ার করে না। আমি জিজ্ঞেস করলেও বলে না। বাবাকে খুব লিমিটের চাইতেও একটু বেশি ভয় পায়।
রাজ কিছুক্ষন ভেবে বলে,
– আচ্ছা বাদ দাও ওসব। তুমি ছোট মানুষ এতো কিছু ভাববে না। তুমি শুধু নিজেকে নিয়ে ভাববে আর পড়াশুনা করবে। আচ্ছা তুমি ভবিষ্যতে কি হতে চাও? (আরোহির মন অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললো রাজ)
আরোহি কিছু না ভেবেই বলে,
– একজন স্বামীর আদর্শ স্ত্রী হতে চাই। সে হবে আমার জন্য সবচেয়ে বেষ্ট একজন মানুষ। যার সাথে মন খুলে কথা বলতে পারবো। আমার বাবা মায়ের মতো হবে না। সুন্দর একটা খুনসুটি ময় জীবন হবে আমাদের।
রাজ সোজা হয়ে বলে,
– হ্যা সেটা তো অবশ্যই হবে। এই ধরো অনেকে তো ডাক্তার হতে চায়, শিক্ষিকা হতে চায়। তোমার এমন কোনো ইচ্ছে নেই?
আরোহি আরো উৎসাহ নিয়ে বলে,
– হুম আছে তো, আমিও শিক্ষিকা হবো। আমার ছেলে মেয়েদেরকে বাসায় পড়াবো। ওরা হবে স্টুডেন্ট, আর আমি হবো শিক্ষিকা।
রাজ হতাশ হয়ে কপালে হাত রেখে বলে,
– আচ্ছা ভালো, এখন পড়ায় মন দাও।
বলেই হাতে থাকা কলম টা ঘুরাতে থাকে রাজ। আরো কিছু দিন যাক, তারপর আরোহির মায়ের সাথে কথা বলার ট্রাই করতে হবে। যদিও ওনার সাথে একা কথা বলার কোনো অপশন নেই। কারণ কথা বলার সময়ও তার সাথে দুজন সিকিউরিটি গার্ড দাড়িয়ে থাকে।
তবুও চেষ্টা করতে হবে। হয়তো তার মাঝেও কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। যা হয়তো তার প্লেনে কিছুটা হলেও কাজে আসবে।
To be continue…….