#ছদ্মবেশ,পর্ব ২৪,২৫
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
২৪
রিমা চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে মায়ের রুমে যায়। দেখে মায়ের রুমের ওয়াড্রপ এর উপর একটা গিফ্টবক্স রাখা।
তখন রাগ থাকলেও এখন কিছুটা কমেছে তার। তাই হাত বাড়িয়ে গিফ্টবক্স টা হাতে তুলে নিলো। যেটা কেকের সাথে রুশান দিয়ে গিয়েছিলো।
ওটা নিয়ে নিজের রুমে হাটা ধরলে ড্রয়িং রুমে কিছুক্ষন দাড়ায় সে। সন্ধায় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া কেক টা সরিয়ে ফ্লোর টা পরিস্কার করে নিলো তার মা।
কেন জানি নিজের মাঝে একটা অপরাধবোধ জেগে উঠলো রিমার মাঝে।
সাত পাচ না ভেবে চুপচাপ চলে গেলো নিজের রুমে। খাটের উপর বসে একটা ছুরি নিয়ে আস্তে আস্তে খুলতে লাগলো বক্স টা।
খুলেই একটু অবাক হলো সে। এটা তার ১৯ তম জন্মদিন। তার মানে সে বড় হয়েছে। এমন মেয়েকে শাড়ি, চুড়ি এসব গিফ্ট দেওয়া মানায়। কিন্তু রুশান দিলো সেই বাচ্চাদের মতো একটা টেডি। আশ্চর্য এই ১৯ বছর বয়সে এসে এই পুতুল দিয়ে কি করবো? আবার কিন্তু রাগ হচ্ছে তার।
ওমা সাথে দেখি একটা নীল চিরেকুটও আছে। রাগের মাঝে একটু হাসলো রিমা৷ মুখ ফসকে হেসে ফেলা যাকে বলে।
হেলান দিয়ে বসে টেডি টা এক হাতে নিজের সাথে চেপে ধরে অন্য হাতে চিরেকুট টা মেলে ধরলো সে।
যেকানে প্রথা সম্বোধন টাই হলো ‘টিয়া পাখি’। রিমার মুখে হাসি ফুটলো। কতো সুন্দর একটা সম্বোধন।
যাই হোক এবার চিঠিতে যাই।
প্রিয় টিয়া পাখি,
‘ প্রথমেই স্যরি বলছি এই জন্মদিনে তোর পাশে থাকতে না পারার জন্য। তোকে এতোটা গুরুত্ব দেওয়ার পরও তোর স্পেশাল দিনে আমি তোর পাশে থাকতে পারছি না। কারণ তো নিশ্চই আছে তাই না? নিশ্চই রাগ করে আছিস?
আচ্ছা এক কাজ কর চিঠি টা নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়া। দাড়িয়েছিস? এবার রাগি মুখ টা নিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখ কেমন লাগে। কি, তাকিয়ে একটু পর হেসে দিলি তাই তো? এবার রাগি লুক আর হাস্যজ্জল লুক এর মাঝে একটু পার্থক্য খোজার চেষ্টা কর।
আচ্ছা ওসব কিছু বাদ। তুই এতো কিছু বুঝবি না। তাই প্রথমেই সম্বোধন টা ‘টিয়া পাকি’ দিয়েছি। কারণ এই পাখি বুঝে কম চিল্লায় বেশি। ঠিক তোর মতো।
এতটুকু পড়েই এবার রাগ উঠলো রিমার। প্রত্যেক জায়গায় সুন্দর মুহুর্ত টায় এক টা না একটা কিছু করে রাগ উঠিয়ে দেয় এই ছেলে। এটা কি তার স্বভাব নাকি ইচ্ছা করেই এমন করে, রাগানোর জন্য। শেষে আবার লিখে দিলো,
‘হ্যাপি বার্থ-ডে আমার টিয়াপাখি টা।’
রিমা রাগে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
– গুষ্টি কিলাই তোর সম্বোধনের। আমি টিয়া পাখি হলে তুই,,,,,
কিছু বলতে চেয়েও খুজে পাচ্ছে না হয়তো। এর মাঝেই মা রুমে আসার শব্দ পেতেই চিঠি টা পেছনে লুকিয়ে নিলো রিমা।
,
,
রাজ চোখ মেলে তাকালে দেখে অন্ধকার একটা রুমে তাদের তিনজনকে বেধে রাখা হয়েছে। বাইরে থেকে আসা লাইটের মৃদ আলোয় ভেতরটা ঝাপসা হয়ে দেখা যাচ্ছো অল্প অল্প করে।
রাজ মাথা তুলে কয়েক বার ডাক দিলে চোখ খোলে নিবিড় ও তুষার দুজনই। তাদেরও পরিস্থিতি বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লেগে গেলো। তুষার ছোটার জন্য একটু জোড়া জোড়ি করলেও লাভ হলো না।
নিবিড় ভয়ার্ত গলায় বলে,
– ভাই এটা কি স্বপ্ননাকি বাস্তব?
রাজ চুপ থাকলে তুষার বলে,
– আমারও তো একই প্রশ্ন।
নিবির আবার বলে,
– বাস্তব হলে এই আমরা কোথায় ফেসে গেলাম। কয়দিন আগে তো আমার গার্লফ্রেন্ড গুলো আমাকে এভাবেই বোধে রেখেছিলো।
তুষার বলে,
– ভাই এখন গার্লফ্রেন্ডের চিন্তা বাদ দিয়ে এখান থেকে বাচার উপায় বের কর। এটাও বুঝতে পারছি না এটা কোন জায়গা।
এদিকে চুপচাপ বসে আছে রাজ। চোখ দুটু রক্তিম হয়ে উঠেছে তার। যেন সব এলোমেলো করে দিবে সে। কারণ লাইফে তাকে এভাবে বেধে রাখার সাহয় দ্বিতীয় কেউ করেনি।
তখনি দরজার আওয়াজ হলো। সেই সাথে অন্ধকার ঘরের লাইট জ্বলে উঠলো। আর একটা ছেলে ভেতরে প্রবেশ করলো।
তুষার চিনতে পারলো তাকে। সেদিনের রেস্টুরেন্টে ঝামেলা হওয়া সেই ছেলেটা। শুনেছিলো অনেক আগে তুষারকে খুজেছিলো তারা। এর পর আর খোজেনি। কেন খোজেনি সেটা জানেনা সে। ভেবেছিলো হয়তো ওরা আর ঝামেলা বাড়াতে চায় না তাই।
এর মাঝেই ছেলেটা একটু হেসে তুষারের সামনে বসলো। আর বলে,
– মেয়ের সামনে সেদিন খুব তো হিরো গিরি দেখালি। আজ দেখা তোর হিরোগিরি।
তুষার ঠান্ডা মাথায় বলে,
– দেখুন আমি মোটেও হিরো গিরি দেখাই নি। একজন মেয়ের সাথে অন্যায় হচ্ছিলো আমার যে টুকু কর্তব্য ছিলো আমি তাই করতে চেয়েছি। ঝামেলাটা আপনিই বড় করেছেন।
ছেলেটা হাসতে হাসতে বলে,
– সেদিনের বুকের ব্যাথা টা আজও কমেনি। আর তোকে না মা’রা পর্যন্ত কমবেও না। সাথে তোর বন্ধুরাও বিপদে পরে গেলো।
বলেই মুখ দিয়ে কয়েকবার ‘চু’ সুচক শব্দ করলো সে।
এর পর আবার বলে,
– তোর আরেকটা ফ্রেন্ড আছে না? রুশান না কি যেন নাম? পাঠিয়েছিলি না? সেদিন এসে অনেক বড় ফাপর নিয়েছিলো, বাবার কারণে কিছু বলতে পারিনি। এখন তাকে বল কিছু করে দেখাতে।
এর মাঝে রাজের ফোন টা বেজে উঠলো। ছেলেটা রাজের পকেটে হাত দিয়ে ফোনটা বের করে দেখে অরিণ নামের একটা নাম্বার থেকে ফোন?
ছেলেটা একটু হেসে বলে,
– গার্লফ্রেন্ড নাকি?
রাজ গম্ভির হয়ে চুপ করে রইলো। ছেলেটা আবার বলে,
– তাকে কি জানানো উচিৎ না? যে তোদের তিন জনের অগ্রিম মৃত্যুর খবর। না থাক, শক্ড হতে পারে।
বলেই আবার রাজের পকেটে ফোন টা রেখে দিয়ে বলে,
– ওকে গুড নাইট। কালকে সকালে দেখা হবে আবার।
বলেই লাইট অফ করে আগের মতো দরজা বন্ধ করে চলে গেলো ছেলেটা।
,
,
এদিকে নিজের টিমের প্রধান লোকদের একসাথে নিয়ে একটা বড় টেবিলে একটা ছক বানিয়ে নিলো রুশান। কে কোন দায়িত্যে থাকবে একে একে সবািকে বুঝিয়ে দিচ্ছে সে। কারণ সবাই এক সাথে থাকতে পারবে না একে একে আলাদা হয়ে যেতে হবে সবাইকে। হয়তো মা’রো, নয়তো ম’রো। হয়তো মে’রে আসবে, নয়তো ম’রে আসবে। তবুও যেন নিজের দায়িত্ব থেকে এক কদম পিছু পা না হাটে কেউ।
সবাই মনোযোগ দিয়ে ছক দেখছে আর রুশান যা যা বুঝাচ্ছে তা বুঝে নিচ্ছে। আজ রাত পার হলেই কালকে ২৬ তারিখ। আর কালকের মাঝেই সব টিম সাজিয়ে তুলতে হতে।
তাদের ৫০ জন ৫টিমে ভাগ হলো। আর মিশনের সময় সবাই একা একা ওদের পিছু নিবে। যেই জয়গা টা সবচেয়ে ঝুকি পূর্ণ ওখানে দুইজন থাকবে।
,
,
পাখির কিচিরমিচির ডাক কানে ভেসে আসে। পূর্ব দিগন্তে সূর্যের সোনালি আলো ফুটে উঠেছে। যা নতুন দিনের সূচনা। ধীরে ধীরে এই সোনালি রং সাদা হয়ে উঠবে। সেই সাথে বাড়তে থাকবে তেজও।
এদিকে সকাল হতেই রাজ, নিবিড় ও তুষারকে রুম থেকে বের করে একটা আলাদা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলো। ঘর থেকে বাইরে। বাড়ির পেছন টায়। দুই হাত উপরে বেধে ঝুলন্তের মতো করে বাধা হলো তাদের। আর ছেলেটা ও তার বাবা টেবিলে বসে ওদের নানার কথা জিজ্ঞেস করছে। নিবিড় মাঝে মাঝে উত্তর দিলেও বাকি দুই জন চুপ হয়ে আছে।
নিলয় এখানে থাকলে হয়তো ছেড়ে দেওয়ার জন্য কেঁদে কেটে একাকার অবস্থা করে ফেলতো।
লোকটা কোমড় থেকে একটা পি’স্তল বেড় করে টেবিলের উপর রাখলো। প্লেন হলো ওদের তিন বন্ধুকে এক সাথে গু’লি করে মা’রা।
তুষারের বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু করলো। কারণ তার কিছু হয়ে গেলে তার মা ও বোনের কি হবে?
রাজ এখনও নিশ্চুপ। গত কাল থেকে একটা কথাও বলেনি সে। শুধু চোখ দুটু রক্তিম হয়ে আছে তার।
ওদের তিন বন্ধুকে নিয়ে হাসাহাসি করছে ওখানে থাকা সব মানুষ। এর মাঝে বাইক নিয়ে কারো আগমন ঘটায় সবাই হাসি থামিয়ে সেদিকে তাকায়। দেখে হেলমেট পরা একটা কম বয়সি ছেলে বাইক থেকে নেমে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আর এসেই ওদের সকলের সামনে চেয়ার টেনে বসে গেলো। দেখে মনে হচ্ছে বুকে একটু ভয় ডর নেই। তবে হেলমেট পরে থাকার কারণে কেও চিনতে পারছে না তাকে। দুই পা এদের সামনে টেবিলে উঠিয়ে বসলো ছেলেটা। ওর কান্ডে আশে পাশের সবাই হতবাক। কে এই ছেলে?
ছেলেটা হেলমেট খোলার পর। লোকটা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। গাল হা হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। শরির জুড়ে অদ্ভুত এক কাপুনি সৃষ্টি হলো তার। হেলমেট খোলা মাত্রই এই ছেলেটাকে চিনতে এক মুহুর্তও দেড়ি হয়নি তার।
অজান্তেই মুখ দিয়ে ফিস ফিস করে বেড়িয়ে যায়,
– নিলয় আপনি,,,,,
এর মাঝেই নিলয় তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
– মুখ একধম বন্ধ।
তাদের মাঝে ফিস ফিস কথা গুলো ওরা ছারা আশে পাশের তেমন কেও শুনতে পায় নি।
নিলয় উঠে দাড়িয়ে বলে,
– ওরা তিনজনই ফ্রেন্ড হয় আমার। ওদের গায়ে একটা ফুলের টোকা পরলেও প্রতিটা বু’লেট তোদের বাপ ছেলের বুকে গিয়ে পরবে।
বলেই টেবিল থেকে পি’স্তলটা নিয়ে রাজ, নিবিড় আর তুষার কে বেধে রাখা দড়ির দিকে তিন রাউন্ড চালানো নিলয়। একধম নির্ভুল টার্গেটে বাধন খুলে যায় ওদের তিনজনেরই। আর নিলয় হাতের ইশারায় ডেকে ওদের নিয়ে বেড়িয়ে যায় সেখান থেকে।
নিবিড় ও তুষারের মুখ একধম বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। সেই সাথে অবাকের চরম পর্যায়ে রাজ নিজেও।
নিলয়ের মতো একটা ভিতু ও সরল প্রকৃতির একটা ছেলের এমন রুপ যেন নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছে না তারা। এটা কি সত্যিই নিলয়? নাকি ওর রুপে অন্য কেও?
মেইন রোডে এসে নিলয় একটা ছেলেকে বাইক টা দিয়ে দিয়ে ওদের তিনজনের সাথে হাটতে লাগলো। হয়তো ছেলটার বাইক, এমন কিছু হবে।
আর মুচকি হেসে বলে,
– কিরে ফাপর টা কেমন নিলাম আজ?
নিবিড় মাথায় হাত দিয়ে বলে,
– ভাই আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এটা তুই? আর এতো দিন কোথায় ছিলি তুই? তোকে কতো খুজেছি আমরা।
নিলয় হেসে বলে,
– তোরা বন্ধুকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেও সে তোদের ভুলে যায় নি। বন্ধুর বিপদ শুনে আর রাগ করে থাকতে পারিনি। ছুটে চলে এলাম।
বলেই পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা ছোট ট্রাক দাড় করার সে। আর ড্রাইভারকে বলে,
– ভাই আমরা একটু সামনে যাবো, নিয়ে যাবেন?
লোকটা হয়তো ভালো ছিলো তাই বলে,
– আচ্ছা উঠেন।
নিবিড়, তুষার প্রথমেই উঠে গেলো। এর পর রাজকেও তুলে নিলো তারপর নিলয় নিজেও উঠে গেলো।
গাড়ি চলছে। সেই সাথে উড়ছে সবার চুলও।
তুষার এখনো অবাক ভঙ্গিতে বলে,
– ভাই আজ কি দেখালি এটা। তুই কি মাফিয়া দলের কেউ?
নিলয় হাসতে হাসতে বলে,
– ভাই বিশ্বাস কর আমি নিজেও জানিনা এতো বড় ফাপর আমি কিভাবে নিয়েছি। তোদের বাচাতেই হবে এটা ভেবে কিভাবে যেন হয়ে গেছে এটা।
নিবিড় পাশ থেকে পোড়ন কেটে বলে,
– সব না হয় মানলাম আমাদের বাচাতে তোর শরিরে একটা আলাদা হিট চলে এসেছিলো। কিন্তু তুই গুলি চালানো শিখলি কিভাবে? তাও আবার এতো নির্ভুল?
নিলয় বলে,
– আমার বাবা ছিলো পুলিশ অফিসার। স্বপ্ন ছিলো আমাকেও পুলিশ অফিসার বানানো। তাই আমাকে একটা ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি করেছিলো ছোট কালে। সেখান থেকেই এই পি’স্তল চালানো শিখেছি।
নিবিড় ও তুষার দুজনই এক সাথে বলে,
– তোকে যেন আজ চিনতেই কষ্ট হচ্ছে আমাদের। মনে হচ্ছে একটা স্বপ্নের মধ্য দিয়ে পার করছি সব।
বিনিময়ে একটু হাসলো নিলয়। চুপচাপ খোলা আকাশের নিচে ছুটে চললো সবাই।
অপর দিকে রাজের মুখে নেই কোনো প্রশ্ন, নেই কোনো অবাক হওয়ার ছাপ। শুধু তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে। নিলয়ও রাজের দিকে তাকাতেই চোখচোখি হয়ে যায় দুজন।
চোখাচোখি হয়ে তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে। আজ এই দৃষ্টিতে কোনো করুণতা নেই। খুবই ভয়ঙ্কর এই দৃষ্টি।
To be continue…………..
#ছদ্মবেশ (পর্ব ২৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
রাজ ও নিলয় চোখাচোখি হয়ে তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে। আজ এই দৃষ্টিতে কোনো করুণতা নেই। খুবই ভয়ঙ্কর এই দৃষ্টি।
নিবিড় ও তুষার অপর পাশে দাড়িয়ে আছে। রাস্তায় একটু জেম লেগে যাওয়ায় একটু বিরক্তি নিয়ে সামনের দিকে তাকালো নিবিড়।
পাশ থেকে তুষার এক হাতে নিবিড়ের কাধে বার বার টাচ করলে নিবিড় তার দিকে ফিরে তাকায়। দেখে তুষার একটা সি’এন’জি এর দিকে তাকিয়ে আছে।
আর নিবিড়ের দিকে সেয়ে বলে,
– ভাই দেখ মেয়েটা কতো সুন্দর।
কিন্তু আজ নিবিড় একধম ভদ্র ছেলের মতো অন্য দিকে তাকিয়ে বলে,
– এরা নারী না, এরা বিষধর সাপ। আমি আর এসবের মাঝে নেই। যেই ছোবল খাইলাম। তার চেয়ে বরং সৌন্দর্য টা তুই একাই উপভোগ কর। আমাকে এসবে ডাকিস না ভাই। আমি একধম ভালো হওয়ার চেষ্টা করছি এখন।
পাশ থেকে নিলয় বলে উঠে,
– আল্লায় তাহলে তোকে হেদায়েত দান করছে?
তুষার হাত নাড়িয়ে বলে,
– আরে ওর এসব মিথ্যা ভাষণ কেন কানে নিচ্ছিস ভাই। শরিরে হয়তো এখনো ব্যাথা আছে তাই এসব বলছে। কয়দিন পর যখন শয়তানে আবার লারা দিবে, তখন দেখিস।
নিবিড় একটা শ্বাস নিয়ে বলে,
– না ভাই একধম ভালো হয়ে যাবো। আর রিলেশনে জড়াবো না। মেয়েরা হলো বহুরুপি। ওই দিন বিকেলেও সবাই কতো বাবু সোনা ডেকে ডেকে কথা বলেছিলো।
নিলয় অবাক হয়ে বলে,
– মুল কাহিনি টা কি?
তুষার হাসতে হাসতে বলে,
– তোকে বাসায় গেলে বলবো সব।
নিলয় এবার রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– কি হলো ভাই, তুমি আমার দিকে সেই তখন থেকে তাকিয়ে আছো কেন? আসার পর থেকে একটা কথাও বলছো না। অতি কষ্টে পাথর হয়ে গেলে নাকি?
রাজ এবার নিরবতা ভেঙে বলে,
– আমি ভাবছি তুমি নিলয় না অন্য কেউ! এই কয়দিনে এতো চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শিখলে কোথা থেকে?
নিলয় এবার নিবিড় ও তুষারের দিকে চেয়ে বলে,
– কি রে ভাই, বন্ধু বান্ধরের সাথে একটু শান্তিতে কথা বলতে না পারলে কার সাথে বলতো বল।
নিবিড় তুষার দুজন একই সাথে বলে উঠে,
– তোকে চিনতে আমাদেরও খুব কষ্ট হচ্ছে।
নিবিড় ও তুষারের অনেক কিছুই এভাবে এক সাথে মিলে যায়। সারাক্ষন দুজন এক সাথে থেকে মেয়েদের পিছে ঘুরা আরো অন্যান্য আকাম করতে করতে ধীরে ধীরে একজন আরেক জনের ফটোকপি হয়ে যাচ্ছে।
অনেক ঘুরাঘুরির পর তারা বাসায় এসে পৌছালো তখন প্রায় দুপুর ঘনিয়ে এলো। প্রায় বারোটার কাছাকাছি।
এদিকে ফরিদা আন্টি বাসার মাঝে চুপচাপ গম্ভির হয়ে বসে আছে। রাজ, নিবিড়, নিলয়, তুষার চারজন একসাথে বাসায় প্রবেশ করা মাত্রই ফরিদা আন্টি উঠে দাড়ায়। টপ করে চোখ বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরলো তার।
প্রথমেই এগিয়ে গিয়ে নিবিড়কে কাছে টেনে নিয়ে কেঁদে দিলো সে। কারণ রাজ রুশান এরা আসার আগে থেকেই নিবিড় ফরিদা আন্টির সাথে থাকতো। একধম মা ছেলের মতো।
এর পর একে একে সবাইকে ধরে বললো,
– এবাবে উদাও হয়ে গেলে আমাকে না জানিয়ে এটা মোটেও ঠিক করোনি তোমরা।
নিবিড় কথা ঘুরাতে বলে,
– আরে আন্টি আমরা তো নিলয়কে খুজতে বের হয়েছিলাম এক সাথে।
ইমোশনে আন্টি এতোক্ষণ খেয়ালই করেনি নিলয় কয়েক দিন পর তার সামনে এসে দাড়ালো।
নিলয়ের কান টেনে ধরে বলে,
– বন্ধুদের সাথে রাগ করে বাড়ি থেকে চলে যাওয়া টাও শিখে গেছো দেখছি। অথচ আমি তোমাকে ছোট বাচ্চাদের সাথে তুলনা করতাম।
নিলয় ব্যাথায় আর্তনাথ করে উঠলেও বাকি সবাই হাসতে শুরু করলো।
,
,
দুপুরের খাওয়া শেষে রুমে একা বসে লেপটপ অন করে রাজ। ক্রিমিনাল রেকর্ডে নিলয় নামের ৮ জন ছেলেকে কুজে পেলো সে। যারা একবার করে হলেও ধরা খেয়ে ক্রিমিনাল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
কিন্তু ওই আট জনের সাথে কোনো ভাবেই এই নিলয়ের কোনো মিল পায়নি।
তবুও সন্দেহ থেকে যায় মাথার মাঝে। অন্যান্য সাইড খুজতে থাকে সে। কিন্তু না, সন্দেহ জনক কিছুই দেখতে পাচ্ছে না নিলয়ের।
কলেজের কাজে নিলয়ের বাবার আইডি কার্ডের ফটো কপি ছিলো এ বাসায়। ওটা নিয়ে নিলয়ের বাবার ডিটেইলস খুজে বের করে দেখে।
ওর বাবা আসলেই পুলিশের লোক ছিলো। ৮ বছর আগে সিলেটে কোনো মিশনে গিয়ে কিছু সন্ত্রাসিদের হাতে মৃ’ত্যু হয় তার।
তার মানে এটা নিশ্চিত হলো যে নিলয় গাড়িতে যা বলছে তা মোটেও মিথ্যা কিছু বলেনি। তাহলে কি নিলয় বন্ধুদের বাচাতে নিজের অজান্তেই এমনটা করে ফেলেছে? তবুও সন্দেহ থেকে যায় কিছুটা।
,
,
সন্ধার পর,,,
– স্যার আপনি কি একটা বিষয় লক্ষ করেছেন?
টেবিলে দুই হাতের উপর থুতনি টা রেখে প্রশ্ন করে আরোহি।
রাজ বইয়ের থেকে মনোযোগ সরিয়ে আরোহির দিকে চেয়ে বলে,
– সোজা হয়ে বসো। আর কি বিষয় সেটা?
আরোহি ওভাবেই থেকে মুগ্ধতার দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
– আপনি।
রাজ একটু অবাক হয়ে বলে,
– মানে?
আরোহি এবার সোজা হয়ে বসে বলে,
– মানে হলো, আপনি যখন প্রথম এসেছিলেন তখন খুব বলদ প্রকৃতির,,,
এতটুকু বললে রাজ আরিহির দিকে তাকাতেই আরোহি থেমে গিয়ে বলে,
– ইয়ে মানে, কেমন যেন ছিলেন। আর এখন একটু স্মার্ট হয়ে গেছেন। পুরোপুরি না, তবে আগের তুলনায় কিছুটা।
রাজ এবার বই বন্ধ করে আরোহির দিকে তাকিয়ে বলে,
– পড়াশোনায় মনোযোগ আছে তোমার? নাকি শুধু এসব নিয়ে ভাবো।
আরোহি এবার একটু রাগ করেছে এমন ভাব নিয়ে বলে,
– ছোট থেকেই পড়াশুনা নিয়ে ভেবে আসছি। আর কতো ভাববো? ওসব ভাবতে এখন আর ইচ্ছে করে না আমার।
রাজ ভ্রু-কুচকে বলে,
– তো কি করতে ইচ্ছে করে?
আরোহি একটু লাজুক ভঙ্গিতে বলে,
– ভালো একটা মানুষ খুজে প্রেম করতে ইচ্ছে করে।
রাজ অবাক ভঙ্গিতে বলে,
– আসতাগফিরুল্লাহ্ তওবা তওবা,,,,
যা শুনে মুখ চেপে হেসে উঠে আরোহি। কিন্তু তার হাসি বেশিক্ষন রইলো না রাজের ধমক শুনে। রাজ রাগি চোখে তাকিয়ে বলে,
– থাপ্পর দিয়ে গাল লাল করে দিবো এসব চিন্তা করলে। বয়স কতো তোমার?
আরোহি মুখ কালো করে বলে,
– ১৮ বছর।
রাজ বলে,
– তোমার এখনো প্রেম করার বয়স হয়নি। চুপচাপ পড়া শুরু করো।
আরোহি আবার বললো,
– একটা মেয়ের বিয়ের বয়স হলো ১৮ বছর। আমার তো ১৮ বছর হয়ে গেছে। এখনো আমাকে বিয়ে দিচ্ছেনা তারা।
রাজ এবার হতাশ হয়ে কপালে হাত দিয়ে চুপচাপ আরোহির দিকে তাকিয়ে রইলো। যদিও আরোহিকে এই কয়েক মাসে কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে সে। আরোহি এসব অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে চায়। ছোট থেকে ফ্যামিলি প্রব্লেম দেখে বিরক্ত সে। ভালো ও বিশ্বস্ত একজন মানুষের হাত ধরে এসব থেকে দুরে কোথাও চলে যেতে চায় সে।
,
,
রাত তখন ৯ টা। ভেতর থেকে মারের শব্দের সাথে মানুষের আর্তনাথ এর শব্দ ভেষে আসছে কানে।
শার্টের হাতা একটু উপরের দিকে তুলে ভেতরে প্রবেশ করে রাজ। ভেতরে দুইটা লোককে উলঙ্গ করে ঝুলিয়ে বেধমর মা’রছে কয়েকজন ছেলে।
সকালে রাজ ও তার বন্ধুদের বেধে রাখা সেই লোকটা আর তার ছেলেকে। পরনে একটা শর্টপেন্ট ব্যাতিত আর কিছু নেই তাদের। সারা শরিরে মারের দাগ ফুটে উঠেছে।
রাজের ইশারা পেয়ে ছেলে গুলো আবার মারতে শুরু করলো ওদের। আর রাজ একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে বসে চক্ষু তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।
চোখদুটু গতকাল তার থেকেই তৃষ্ণার্থ হয়ে ছিলো। এদের মারের দৃশ্য আর আত্মচিৎকার নিজ চোখে দেখার তৃষ্ণা এটা।
কিছুক্ষন পর রাজ ইশারায় ওদের থামিয়ে দিয়ে ওদের দুজনের সামনে দাড়ায়।
ছেলেটা মাথা তুলে রাজের দিকে তাকানোর শক্তি পাচ্ছে না।
এক হাতে ছেলেটার মুখ উপরে তুলে বলে,
– সবাইকে তুষারের মতো অসহায় ভেবে ভেবে ভুল করাটা সবচেয়ে বেশি বোকামি। উচু আর গর্ত দুটু সময় মনে করে দৌড়াতে থাকলে হয়তো উচু থেকে গড়িয়ে পরতে হবে নয়তো গর্তে হারিয়ে যেতে হবে। এটাই স্বাভাবিক।
রাজ কিছুটা দুড়ে হেটে একটা পাত্র থেকে এক মুঠো লবন নিয়ে নিলো।
আর সামনে গিয়ে ছিটিয়ে দিলো ঐ লোকটার গায়ে। লোকটার চিৎকারে যেন বন্ধ রুম ফেটে যাওয়ার উপক্রম। এতোক্ষন মা’রের পর ব্যাথার সাথে এখন লবন ছিটানোর জ্বালা পোড়া যেন মৃ’ত্যুর জন্ত্রনার মতো মনে হচ্ছে তার।
রাজ হাত ঝেড়ে আবার চেয়ারে গিয়ে বসলো। এবার ছেলেটার দিকে তাকালো সে। খোজ নিয়ে দেখেছিলো ছেলেটার নামে ৭ টা রেপ কেস আছে। আর একটারও ন্যায্য বিচার হয় নি। ক্ষমতার জোড়ে ছারা পেয়েছে প্রতিবার। বিপরিত মানুষ গুলো ধর্ষনের মামলা করেও কোনো বিচার না পেয়ে কাঁন্না ছারা কিছুই করতে পারেনি।
কিন্তু রাজ বিস্তারিত জানার পর ছেলেটার বিচার হওয়াটা যেন বাধ্যতা মুলক মনে হলো। এসব মানুষ যত দিন মুক্ত বাতাশে ঘুড়ে বেড়াবে ততদিন একের পর এক অপরাধ করেই যাবে।
এদেরকে বাচিয়ে রাখলেও হ’ত্যা করতে হবে তাদের নোংড়া মানসিকতার।
ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো রাজ। আজকের পর থেকে ছেলেটা বেচে থাকবে। তবে আর কোনো অসুস্থ মানসিকতা জেগে উঠবে না তার।
চাইলেও আর কারো সাথে অন্যায় করার শক্তিটুকু থাকবে না তার। প্রত্যের ধড়ষকের এমনটাই হওয়া উচিৎ।
এর পর রাজ ইশারা দিতেই দুজন ডাক্তার বেড়িয়ে আসে ভেতর থেকে। রাজ ওদের দিকে চেয়ে আবার ছেলেটার দিকে তাকালো।
ছেলেটা বিষয়টা বুঝতে পেরে চিৎকার করে উঠলো। রাজের দিকে চেয়ে বার বার অনুরুধ করতে লাগলো একবার মাপ করে দেওয়ার জন্য। এর পর আর কোনো মেয়ের মানুষের দিকে চোখ তুলেও তাকাবে না সে। না কারো সাথে অন্যায় করবে।
কিন্তু ছেলেটার চিৎকার রাজের কান স্পর্শ করছে না। চুপচাপ সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো সে। কারণ রাত গভির হয়ে আসছে। ওদিকে তার জন্য অপেক্ষা করছে তার বন্ধু রা।
To be continue…….