#ছদ্মবেশ,পর্ব ২৮,২৯
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
২৮
‘কখনো কাউকে এক পক্ষিক ভালোবেসেছেন? বেসে দেখুন ভালোবাসা কতো সুন্দর। যেই ভালোবাসা হবে নির্ভেজাল, নিঃস্বার্থ। তবে একটা স্বার্থ থাকলে মন্দ হয় না। যেই স্বার্থে থাকবে প্রিয় মানুষটিকে নিজের করে পাওয়ার লক্ষ। ভালোবাসা টা একাধিক না, একজনের প্রতি হলেই উপলব্ধি করা যায় অনুভূতি কে। মনাকাশে রঙিন প্রজাপ্রতির মতো ডানা মেলে উড়বে সেই অনুভূতি গুলো।’
বিকেলে ছাদের এক পাশে একটা গল্পের বই হাতে বসে আছে নিবিড়। বইয়ের কথা গুলো সবই তার বিপরিত। তবুও আজ কেমন একটা ভালোলাগা অনুভব হচ্ছে তার মাঝে।
বইয়ের পাতা থেকে চোখ সরিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করলো একবার,
– আমি কি কখনো কাউকে এভাবে ভালোবেসেছি। যেই ভালোবাসায় এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো যে, আমার তাকেই লাগবে।
কিন্তু উত্তর এলো, না। এমন কাউকেই ভালোবাসতে পারেনি সে। তার কাছে ভালোবাসার মানেটা ছিলো এমন যে, একজনকে ভালো লাগলো, তাকে কোনো ভাবে পটিয়ে প্রপোজ করো। এর পর আরেকটা ভালো লাগলো তাকেও পটিয়ে চ্যাটিং ফোনালাপে টাইমপাস করা। তার এই উড়নচন্ডি মন কি কখনোই একজনের প্রতি স্থির হবে না?
ভাবনার মাঝে হটাৎ চোখ পরে পাশের ছাদের সেই মেয়েটার দিকে। ছাদে শুকানো কাপড় গুলো নিতে এসেছে মেয়েটা। কাপড়ের আড়াল থেকে মাথা বেড় করে নিবিড়ের দিকে তাকালো মেয়েটা। হালকা বাতাশে মেয়েটার কপালে থাকা এলো মেলো চুল গুলো উড়ছে কিছুটা। নিবিড়ের চোখে চোখ পরতেই একটু মুচকি হাসলো মেয়েটা।
কারণ নিবিড়ের সাথে যতবারই দেখা হয়েছে মেয়েটার, ততবারই নিবিড় নিজে থেকে কথা বলতো। আর মাজে মাঝে অদ্ভুত প্রশংসা করে লজ্জায় ফেলে দিতো তাকে।
সব মিলিয়ে পরিচয় টা আগের হলেও এই কয় দিনে তেমন একটা দেখা হয়নি তাদের। আর প্রয়োজন ছারা তেমন একটা ছাদে আসেনি নিবিড়।
মেয়েটা কি বুঝে যেন আজ নিজে থেকেই হাত নাড়িয়ে হাই জানালো। নিবিড় নিজের মাঝে কি যেন ভেবে বই নিয়ে চুপচাপ নিচে চলে গেলো। মেয়েটার কথায় কোনো রেসপন্স নেই তার।
নিবিড়ের আচরণে একটু অবাক হলো মেয়েটা। হটাৎ কি হলো এই ছেলের?
,
,
সেই বিকেল থেকেই তুষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো পার্টিতে যাওয়ার। আজ প্রথম কোনো বড় পার্টিতে জয়েন হলো সে। মুরাদ’রা সহ মোট ৬ জন।
এর আগে কখনো নাইট ক্লাবে যায়নি তুষার। আজই প্রথম। এর আগে ৫ শত বা ১ হাজার করে তুলে নিজেদের মাঝে পার্টি করতো তারা। কিন্তু গতকাল মুরাদের প্লেনে আজ নাইট ক্লাবে প্রথম যাবে তারা। তুষার প্রথমে অমত করলেও ক্লাবে অনেক সুন্দরি মেয়ে আছে শুনার পর রাজি হয় সেও।
সন্ধার পর রেডি হয়ে বেড়িয়ে যায় সে। এর আগে ছোট খাটো পার্টি করতেও টাকার চিন্তা করে পিছু হাটতো সে। বাট এখন নাইট ক্লাবে যাওয়ার কথা শুনেও টাকার চিন্তা করছে না সে।
রাজের দেওয়া টাকার মাঝে অর্ধেক খরচ হয়েছিলো মায়ের চিকিৎসা বাবদ। বাকি টাকা ব্যাংকে রেখে একটা কার্ড নিয়ে নেয় সে। এখন যখন খুশি জমা রাখবে। আর যখন খুশি কার্ট দিয়ে তুলবে।
শুন্য হাতে হটাৎ টাকা আসার পর আঙ্গুল ফুলে কলা গাছের মতো হলো তার অবস্থা।
,
,
আরোহিকে পড়ানোয় প্রতি মাসের ১ তারিখে হাতে বেতন পেয়ে যায় রাজ। একটা খামে করে। মাস শেষে আজও একটা খাম চলে এলো তার কাছে।
কাজের মেয়েটা নাস্তার সাথে খাম টা দিয়ে রুম ত্যাগ করলো। আরোহি কলম মুখে নিয়ে কি যেন ভাবছে। আজ একটু চিন্তিত লাগছে তাকে।
রাজ তার দিকে চেয়ে বলে,
– আজ না ইয়ার চেন্জ এর মার্কশিট দেওয়ার কথা ছিলো?
আরোহি চমকে উঠে আমতা আমতা করে বলে,
– দি দিয়েছে তো। অল বিষয়ে পাশ। প্রমোশনও হয়েছে।
রাজ হাত বারিয়ে বলে,
– মার্কশিট টা দেখি।
আরোহির মুখটা মুহুর্তেই কালো হয়ে গেলো। যেন একটু বিরক্তি ফুটে উঠেছে। বিরক্তি নিয়ে ব্যাগ থেকে মার্কশিট টা বের করে রাজের দিকে এগিয়ে দিলো।
বাংলা- ৫৬
ইংলিশ- ৬২
ICT- ৫৩
পদার্থ বিজ্ঞান- ৪৮
রসায়ন- ৪২
জিব বিজ্ঞান- ৫৫
উচ্চতর গনিত- ৩৯
রাজ মাড়কশিট দেখে বলে,
– বাহ্ ফ্যান্টাস্টিক, একধম অতুলনিয় নাম্বার।
ঠোঁট ফুলিয়ে নিচের দিকে থাকা অবস্থায় আড় চোখে বার বার রাজের দিকে তাকাচ্ছে আরোহি। আবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। এর মাঝে রাজ কড়া করে একটা ধমক দিলেই আরোহি ভয়ার্ত গলায় বলে উঠে,
– অল বিষয় পাশ করেছি তো।
রাজ এবার রেগে বলে,
– এটাকে পাশ করা বলে? নাকি এগুলো কোনো নাম্বার? ফাইনালে এমন নাম্বার হলে তো এ+ দুরে থাক, ৩ পয়েন্টও আসবে না।
আরোহি এবার মাথা তুলে বলে,
– তাতে কি হয়েছে, কোনো মতে একবার পাশ করলেই তো হলো।
রাজ শান্ত ভাবে বলে,
– এমন পয়েন্ট নিয়ে পাশ করে লাভ কি, শুনি?
আরোহি এবার একটু হেসে রাজের দিকে তাকায় পিট পিট করে। যেন তার চোখ ও হেসে উঠেছে। হাস্যজ্জল মুখে বলে,
– আচ্ছা স্যার বলুন তো একটা মেয়েকে যখন পাত্র পক্ষ দেখতে আসে তখন পড়ালেখার সম্পর্কে তারা কি জিজ্ঞেস করে?
রাজ স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
– কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়েছে ওটাই জিজ্ঞেস করে।
আরোহি এবার লজিক নিয়ে বলে,
– এক্সেটলি, সবাই জিজ্ঞেস করে মেয়ে কোন ক্লাস পর্যন্ত করেছে। কেউ জিজ্ঞেস করে না মেয়েটা কি পয়েন্ত পেয়েছে। তাই ২ পয়েন্ট নিয়ে পাশ করলেও সেটা পাশ। আর ৫ পয়েন্ট নিয়ে পাস করলেও সেটা পাস। ৫ পয়েন্ট হোক আর ২ পয়েন্ট হোক। পাশ করলেই মাথা উচু করে বলা যায় যে, মেয়ে এতো ক্লাস পাশ।
কঠিন লজিক। রাজ এবার বিরক্তি নিয়ে মাথায় হাত দিলো। মাথায় রাগ উঠেছে তার। এই মেয়ে যে কোনো টপিকেই বিয়ের টপিক টানবেই।
পাশ থেকে আরোহি নরম স্বরে বলে,
– আমি কি কিছু ভুল বলেছি স্যার?
রাজ মাথা তুলে বলে,
– থাপ্রাই গালের সব দাত,,,,,,,
এতটুকু বলেই থেমে গেলো রাজ। হটাৎ ভয়ে নার্ভাস হয়ে গেলো আরেহি। আর মাথা নিচু করে বলে,
– আচ্ছা ঠিকাছে। ফাইনালে অনেক ভালো রেজাল্ট করবো।
রাজ এবার রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে,
– কথাটা যেন মাথায় থাকে। আর ফাইনালে এ+ না আসলে তোমার আম্মু/আব্বুকে ডিরেক্ট বলে দিবো যে, তোমাকে যেন জীবনেও বিয়ে না দেয়। এখন চুপচাপ বই বের করো।
,
,
ওদিকে রাত ঘনিয়ে আসায় নাইট ক্লাবে ফুর্তি শুরু করে দিলো সবাই। গানের তালে তালে মেয়েদের সাথে নেচে বেড়াচ্ছে মুরাদ সহ বাকিরা।
তুষার চুপচাপ এক পাশে দাড়িয়ে ড্রিংস করছে আর ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
ক্লাবের মেয়ে গুলোর সাথে কিছুতেই মিশতে পারছে না সে। লজ্জার সাথে জড়তাও মিশে আছে।
কিন্তু ওদিকে মুরাদ সহ অন্যরা দেখছে একটা একটা মেয়ে নিয়ে কোথায় উদাও হয়ে যাচ্ছে। কি সাংঘাতিক কথা।
কিছুক্ষন পর একটা মেয়ে তুষারকে নিজে থেকে টেনে নিয়ে গেলো ড্যান্স করতে। তুষারও করছে ড্যান্স। তার দুনিয়া দারির খবর নেই আর।
ক্লাব থেকে ধীরে দীরে মানুষ কমতে শুরু করলো। তুষার চার পাশ খুজেও মুরাদ ও বাকিদের পেলো না। হয়তো চলে গেছে তারা৷ কিন্তু আমাকে বলে যায়নি কেন?
ভাবতে ভাবতে সেখান থেকে হেটে কিছুটা সামনে গেলো তুষার।
বিল কতো জিজ্ঞেস করতেই একটা টাসকি খায় সে। কিছুক্ষন সময়ে ৫৫ হাজার টাকা বিল কিভাবে হয় সেটাই বুঝতে পারছে না সে। তুষার আবার চেক করতে বললে তারা জানায়। জন প্রতি ৫ হাজার করে ৬ জনে ৩০ হাজার। এর মাঝে বাকি ৫ জন ৫ টা মেয়ে নিয়ে আলাদা সময় কাটিয়েছে এর জন্য ৫ করে আরো ২৫। সব মিলিয়ে মোট ৫৫ হাজার।
তুষার অবাক হয়ে বলে,
– ওদের টাকা আমি কেন দিবো?
লোকটা হেসে বলে,
– ওরা আপনার ফ্রেন্ড আর আপনাকে দেখিয়ে ওরা চলে গেছে স্যার। এখন সব টাকা আপনাকেই পরিশোধ করতে হবে। নয়তো এখন থেকে বেরোতে পারবেন না স্যার৷
মাথায় হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলো তুষার। তাকে কিভাবে ফাঁসিয়ে দিলো সবাই। কাউকে ফোন করে এখান থেকে বের হবে সেটারও উপায় নেই। এমনিতেই ক্লাবে আসছে বললে মান ইজ্জত সব যাবে আজ।
নিজের কপালকে থাপ্রাতে লাগলো তুষার। যেখানেই পা বাড়ায় সেখানেই একটা ফাদে পরে সে।
(বিঃদ্রঃ ক্লাব সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। তাই জানিনা কিভাবে টাকা দিতে হয় বা কত দিতে হয়। সবটা অনুমানেই লিখেছি তাই ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে)
,
,
ওদিকে রুশার বাসা থেকে বেড়িয়ে রওনা দিলো তার লুকোনো গন্তব্যে। এখনো সব তথ্য নেওয়া বাকি। অনেক ময়লা জ্বমে আছে। যা একটু একটু করে পরিষ্কার করতে হবে।
রুশানের গাড়ির পেছনে দুর থেকে আরেকটা গাড়ি ফলো করে চলছে রুশানকে। হুডি পরে মুখে মাস্ক লাগিয়ে চুপচাপ গাড়ির ভেতর বসে আছে সে।
বন্ধুত্বটা এতো দিনের হওয়ার স্বত্তেও রুশার হুটহাট কোথায় যায় তা বুঝতে পারেনি নিলয়। হয়তো আজ গভির এক রহস্য বের হবে তার সামনে। সেই সাথা হয়তো অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর কিছু একটা।
To be continue………..
#ছদ্মবেশ (পর্ব ২৯)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
রুশানের পেছন পেছন ফলো করছে নিলয়। রুশান গাড়ি থেকে নেমে মেইন রোড পার হয়ে গলির মতো একটা রোডে ঢুকলো। নিলয়ও গাড়ি থেকে নেমে হাটা ধরলো গলি ধরে রুশানের পেছন পেছন।
এলাকাটায় মানুষজন তেমন একটা নেই বললেই চলে। তাই রাতের বেলায় এলাকা টা খুবই নির্জন। রুশান সন্দেহ জনক ভাবে কয়েকবার পেছনে তাকালেও কাউকে চোখে পরলো না তার।
পুনরায় সামনের দিকে তাকিয়ে হাটা ধরে নিজের মতো।
আরো কিছুটা এগিয়ে যেতেই একটা কবরস্থান দেখতে পেলো নিলয়। কিন্তু রুশানের হাটা এখনো শেষ হচ্ছে না। রুশান এই রাতের বেলায় কবরস্থানের মাঝ দিয়ে কোথায় যাচ্ছে বিষয়টা কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না তার। তবুও রহস্য উদ্ঘাটনের উদ্দেশ্য রুশানের পেছন পেছন হাটতে থাকলো নিলয়।
কবরস্থানের মাঝ দিয়ে হাটার মতো একটা চিকন রাস্তা আছে। আর দু’পাশে গাছপালা আর ভাঙা কবর(কবর ভেঙে গর্ত হয়ে থাকা)। খুবই ভয়ানক একটা জায়গা। রুশান বেছে বেছে ভয়ানক জায়গাগুলোই বেছে নিয়েছে। যেখানে তেমন একটা মানুষের চলাচল থাকবে না।
রুশান এবার দাড়িয়ে যায় সোজা হয়ে। আশে পাশে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে কবরস্থানের কিছু জায়গায় খুজতে থাকে কিছু একটা। যেটা তার মাঝে বার বার সন্দেহ তৈরি করছে।
কিন্তু রুশান চার পাশে খুজেও দ্বিতীয় কারো উপস্থিতি দেখতে পেলো না৷
ওদিনে একটা ভাঙা কবরে ঢুকে শুয়ে আছে নিলয়।
রুশান টর্চ নিয়ে সেই কবরের কাছাকাছি খুজে কাউকে না পেয়ে আবার হাটা ধরলো নিজের গন্ত্যব্যে।
নিলয় কবর থেকে উঠে আবারও পিছু নিলো রুশানের। বেশ বড় কবরস্থানটা পেরিয়ে কিছুটা দুরে এগিয়ে গেলে লতা পাতায় মোড়ানো একটা পুরোনো বাড়ি চোখে পরে তার।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই বাড়িতে বেশ কয়েক বছর ধরে কারো বসবাস নেই।
রুশান লতাপাতা সরিয়ে চুপচাপ প্রবেশ করলো বাড়িটির ভেতর। নিলয়ও পেছন পেছন গেলো। অনেক বছরের পুরোনো বাড়ি হলেও খুবই মজবুত রয়েছে বাড়িটি। দরজা জানালা গুলোও খুবই স্ট্রং।
বাড়িটি ছিলো মুলত একজন ক্রিমিনালের। বাড়িটি দু’তলা হলেও মাটির নিচে আরেকটি লুকোনো ঘর আছে। যেখানে নানান ক্রাইম হতো বেশ কয়েক দশক আগে।
এর পর এসব ফাস হওয়ার পর। ঐ লোকটাকে ও তার সাথে যারা যারা ছিলো, সবাইকে রেব ক্রস ফায়ার করে, আর বাড়িটি সরকারের অধিনে চলে যায়।
ক্রাইম হতো বলে বাড়িটি আলাদা একটা জায়গায় তৈরি করা হয়েছিলো যেখানে তেমন একটা মানুষের আনাগোনা নেই। বিশেষ করে বিকেলের পর এই বিশাল কবরস্থানের ভয়ে এদিকটায় আসেনা তেমন কেউ।
রুশানের পেছন পেছন লুকিয়ে ভেতরে চলে গেলো নিলয়। রুশান তার এক সহকারির সাথে কথা বলতে বলতে একটা রুমের ভেতরে প্রবেশ করে। নিলয় ভিম এর সাথে লুকিয়ে থেকে এর পর জানালা ঘেষে দাড়াতেই শরির জুড়ে একটা শীতল শিহরন বয়ে যায়। মুহুর্তেই আবার তা উত্তপ্ত হয়ে শরির বেয়ে ঘাম বের হতে শুরু করে।
দেখে কয়দিন আগে তাদের টিমের হাড়িয়ে যাওয়া লোকটা এখানে বন্দি। আর তার সাথে রুশান ও তার কয়েকজন সহকারি।
ঠোঁটের কোনে একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠে নিলয়ের। ফাইনালি তার অনুমানই সত্য হলো।
ওখানে আর দাড়িয়ে না থেকে চুপচাপ বাড়িটা থেকে বেড়িয়ে আসে নিলয়। ফাইনালি তার বেষ্ট ফ্রেন্ডই তার শত্রু হয়ে দাড়ালো? যাকে এতো দিন সে নিজের ভাইয়ের মতো মনে করেছিলো।
নিলয় বার বার চোখ বন্ধ করে একটা জিনিসই পার্থনা করছে যে, একটু আগে যা দেখেছে সব যেন মিথ্যা হয়। কারণ বেষ্ট ফ্রেন্ডকে মা’রার কথা ভাবতেও বুকের ভেতর হার্টবিট টা ধুক ধুক করতে লাগলো। কতোদিন ধরে একই বাড়িতে এক সাথে থেকে, একই টেবিলে খাবার খেয়ে, হাসি-কান্না, আনন্দ-উল্লাস সব জায়গায় এক সাথে থেকে এসব ভাবতে কষ্ট তো হবেই।
,
,
রাতের খাবার শেষ করে রুমে বসে টিউশনির বেতন পাওয়া খাম টা খোলে রাজ। প্রতি মাসের মতো আজও ১০ হাজারই আছে খামের ভেতর। তবে সাথে একটা লিখিত সাদা কাগজ।
আগ্রহ নিয়ে কাগজটা খোলে রাজ। যেখানে লিখা,
“সেদিন হটাৎ ফোন রেখে দিলে আমি ভেবেছিলাম কোনো বিপদ হয়নি তো আবার? কারণ চার পাশেই শত্রু উৎ পেতে আছে। যাই হোক তুমি ভালো আছো এটাই অনেক। জানিনা কি হয়েছিলো। আমার যতটুকু মনে হচ্ছে, তুমি হয়তো কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এই শহরে পা রেখেছো। যাই হোক, চোখ কান খোলা রেখে চলাফেরা করবে। হয়তো শত্রু তোমার আশে পাশেও থাকতে পারে আপনজন বেশে। আর একদিন সুজুগ বুঝে সব বলবো আমি। এটা মাত্রই সতর্ক-বার্তা।”
রাজ কাগজ টা মুচড়িয়ে বাইরে ফেলে দেয়। এসব জিনিস সাথে রাখাটাও বিপদ। ঠান্ডা মাথায় করতে হবে সব। ঐ বাসায় যেহেটু সূচ হয়ে ঢুকেছে, কুড়াল হয়েই বের হবে।
,
,
বাসায় আসার পর থেকেই অস্থির হয়ে আছে নিলন। মাথাটা যেন এক মুহুর্তের জন্য হলেও অচেতন হয়ে আছে। ভালো খারাপ কিছুই বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না সে।
এক পাশে বিজনেস, অন্য পাশে তার আপন মানুষ। কি করা উচিৎ তার? উত্তর খুজতে চুপচাপ বসে আছে এক পাশে।
এর মাঝে কলিং বেল বাজালে নিবিড় গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দেখে বাইরে তুষার দাড়িয়ে আছে মুখটা ভাড় করে।
নিবিড় নাক চেপে ধরে বলে,
– উম, কি বিশ্রি গন্ধ বের হচ্ছে তোর মুখ থেকে? ড্রিংক করে এসেছিস না?
তুষার কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। এক ধাক্কাতেই তার এতো গুলো টাকা হাওয়া।
নিবিড় রাগে বলে,
– তোকে না বলেছি ওসব ছাই পাস খেয়ে বাসায় আসবি না?
তুষার এবার অসহায় ভাবে বলে,
– মামা ওরা সবাই মিলে একটা পু*কি মারা দিছে আমারে।
নিবিড় হেসে বলে,
– তা আর নতুন কি? তোর তো জন্মই হয়েছে পু*কি মারা খাওয়ার জন্য। আরেকটা আছে নিলয়, ওর জন্ন হয়েছে সবাইকে পু*কি মারা দেওয়ার জন্য। তোরা দুজন এসব ছারা আর কিই বা পারবি? তো কি মারা টা খেয়েছিস বল শুনি?
তুষার এবার একটু ইমোশনাল হয়ে বলে,
– খপ করে আমার ৫৫ হাজার টাকা। বাকি যারা গেলো তারাও আমার উপর বিল চাপিয়ে উদাও হয়ে গেলো।
নিবিড় একটা হাসি দিয়ে বলে,
– তৃষ্ণার্থ অভাগা সাগরে গেলেও সাগর শুকিয়ে যায়। কয়েক ঘন্টায় যে এতগুলো টাকা উড়িয়ে এলি, রেস্টুরেন্টে জব করার সময় এই টাকা তোর ৩ মাসের পারিশ্রমিক ছিলো।
তুষার মাথায় হাত দিয়ে বলে,
– ভাই আমার প্রচুর মাথা ঝিমাচ্ছে, সামনে থেকে সর।
নিবিড় সরে বলে,
– চুপচাপ রুমে চলে যা। ফরিদা আন্টি যেন না দেখে।
,
,
প্রায় ১১ টার দিকে ফিরে এসেছে রুশান। বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে বলে রুমে গিয়ে শুয়ে পরে সে।
রাত তখন ৩ টা। সবাই ঘুমের দেশে। চার পাশ টায় ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনা যাচ্ছে শুধু। আর মাঝে মাঝে শেয়ালের ডাক। যা সাধারণ একটা মানুষের জন্য হার্ট এ্যাটাকের মতো ভয়ঙ্কর পরিবেশ।
আর এই পরিবেশেই কোনো ভয় ভিতি ছারা কবরস্থানের মাঝখান দিয়ে হেটে ঐ বাড়িটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নিলয়। ভয়ের বিপরিতে এটিটিউড নিয়ে দুই হাত পকেটে রেখে মাথা নিচু করে হাটছে খুব শান্ত ভাবে।
বাড়ির সামনে গিয়ে দেখে বড় একটা তালা ঝুলানো। নতুন যে কেউই এসে বলবে এখানে কেও নেই। নিলয় একটা হাসির রেখা টেনে পকেট থেকে চাবি বের করে নিলো।
রুশানের ঘুমের সুজুগ নিয়ে যেটা আসার সময় নিলয় নিয়ে এসেছে।
ঘরের ভেতর ঢুকে নিচে লুকানো গুপ্ত ঘরটার ঢাকনার তালাও খোলে সে। চুপচাপ ভেতরে গিয়ে দেখে ওখানেও সবাই ঘুমিয়ে আছে। আর লোকটাকে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে।
নিলয় চুপচাপ লোকটার কাছে গিয়ে হাত দিয়ে কয়েকবার টোকা দিতেই লোকটা জেগে উঠে। আর মোম বাতির আলোয় সামনে নিলয়কে দেখেই খুশিতে চোখ মুখ ঝলক দিয়ে উঠে তার। কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিলয় মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলে তাকে।
লোকটা চুপ হয়ে ফিস ফিস করে বলে,
– ভাই আপনাকে এখানে দেখে আমি একটুও অবাক হচ্ছি না। কারণ এর চেয়ে বড় বড় বিষয় গুলোও আপনার কাছে সামান্ন বিষয়। এখন শুধু আমাকে নিয়ে চলুন এখান থেকে। ওরা অনেক অত্যাচার করছে আমার উপর।
নিলয় তার কথার উত্তর না দিয়ে বলে,
– রুশানের পরিচয় কি? তোমাকেই বা কেন এখানে ধরে নিয়ে এসেছে? সে কি প্রশাশনের কোনো লোক? নাকি আমাদের শত্রু পক্ষের কোনো লোক? আই মিন, কোনো মাফিয়া? কোনটা?
লোকটা এবার এবার নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
– কোনো আন্ডারগ্রাউন্ড অফিসার।
To be continue……..