ছদ্মবেশ,পর্ব ৩০,৩১

0
1025

#ছদ্মবেশ,পর্ব ৩০,৩১
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৩০

লোকটা এবার মাথা তুলে নিলয়ের দিকে চেয়ে খুব শান্ত ভাবে বলে,
– সে কোনো আন্ডারগ্রাউন্ড অফিসার।

লোকটার কথায় কোনো চিন্তার ছাপ ভেসে উঠলো না নিলয়ের। লোকটার দিকে চেয়ে একটু প্রশারিত হাসি দিলো সে।
লোকটা একটু ভ্রু-যুগল কুচকে নিলয়ের দিকে চেয়ে বলে,
– ভাই বিষয় টা মোটেও হেসে উড়িয়ে দেওয়ার মতো না। এভাবে চলতে থাকলে সে একে একে আমাদের পুরো টিমটাই শেষ করে দিবে।

নিলয় এবার হাসি থামিয়ে বলে,
– সাপলুডু খেলেছো কখনো? যে মই টপকে উপরে উঠে গেলেও সাপের মুখে পরে আবার একেবারে নিচে?
সিরিয়াস টাইমে নিলয়ের এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা মাথায় ঢুকছে না তার। তবুও ওসব কোনো ভাবে হজম করে নিয়ে বলে,
– ভাই বাকি কথা পরে হবে। আমাকে আপাতত এখান থেকে বের করার ব্যাবস্থা করেন।

নিলয় এবার কিছু না বলে সুচের মতো কিছু একটা লোকটার হাতে ধরে আবার সরিয়ে নিলো। পিঁপড়ার কামড়ের মতো হালকা ব্যাথা অনুভব হল লোকটার হাতে।
লোকটা ওসবে তেমন একটু গুরুত্ব না দিয়ে বলে,
– ভাই ওরা জেগে গেলে কিন্তু সমস্যা হতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এখান থেকে বেড়িয়ে যাই চলুন।
নিলয় উঠে দাড়িয়ে বলে,
– এখন যাওয়া টা তোমার জন্য ভালো হবে না। আর আগামি কাল তোমাকে এমনিতেই তারা এখান থেকে বের করে একা ছেরে দিবে। সো এখন নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নাও।

বলেই সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো নিলয়। দরজা, ঢাকনা সব খুব সাবধানতার সাথে পূর্বের মতো করে চলে গেলো সেখান থেকে।

বাড়ি ফিরে দেওয়াল টপকে ভেতরে চলে গেলো। চুপচাপ রুশানের পাশে জায়গা মতো চাবিটা রেখে নিজের রুমে গিয়ে শুরে পরলো সে।

ঘুম আর আসছে কই। দেখতে দেখতে ফজরের আজান ভেষে আসলো কানে। পাশের রুমে নিবিড়কে দেখলো ফ্রেশ হয়ে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাড়িয়ে গেলো। নিলয় একটু অবাক হলো নিবিড়কে এতো ভোরে উঠে নামাজ পড়তে দেখে। মনে হয় এক ডোসে একেবারে ভদ্র হয়ে গেছে ছেলেটা।
,
,
সকালে ফ্রেশ হয়ে ছাদে চলে গেলো তুষার। কারণ এই সকালে পাশের ছাদের মেয়েটা ছাদে হাটাহাটি করে। অনেক্ষন ধরে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে মেয়েটার অপেক্ষায়।

কিছুক্ষন পর ছাদে আসে মেয়েটা। এসে প্রথমেই পাশের ছাদে তাকালো নিবিড়কে দেখতে পাবে বলে। কিন্তু নিবিড়ের জায়গায় তুষারকে দেখে তার হাসি মুখটা গোমড়া হয়ে গেলো।
তুষার মেয়েটার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলে মেয়েটা বিরক্তি নিয়ে বলে,
– সমস্যা কি আপনার? এমন বলদের মতো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন? আর আপনার সুন্দর ফ্রেন্ড টা কোথায়?
তুষার এবার মুখ খুলে বলে,
– কোনটা? মানে আমার সুন্দর ফ্রেন্ড তো তিনটা আছে, রাজ, রুশান, নিবিড়। আপনি কোনটাকে খুজছেন?
মেয়েটা বিরক্ত হয়ে বলে,
– আরে সবচেয়ে সুন্দর টা, নিবিড় কোথায়? তাকে বলবেন যে আমি তাকে খুজছি।

এবার রাগে ও অপমানে মুখ কালো হয়ে যায় তুষারের। সব মেয়ে কেন ওই নিবিড়কে নিয়ে পাগল হয়? আমাদেরকে কি চোখে পরে না তাদের?

তুষারকে চুপচাপ থাকতে দেখে মেয়েটা বলে,
– কি হয়েছে ভাইয়া?
ভাইয়া ডাক শুনে যেন মুহুর্তেই তুষারের মন টা দুই টুকরো হয়ে গেলো। কি হতে চেয়েছিলো আর কি হয়ে গেলো।
তাই আর কিছু না বলে, চুপচাপ চলে গেলো ছাদ থেকে।
এসেই নিবিড়কে বলে,
– তোর নতুন বাবু তোকে খুজছে।

সবাই হা করে এক সাথে নিবিড়ের দিকে তাকালো। কয়দিন না যেতেই আরেকটা বাবু জোগাড় করে ফেলেছে?
আড়ালে যাই হোক, ফ্রেন্ডস মহলে নিলয় বরাবরই একজন সহজ সরল ছেলে।
নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– ভাই আর কত মেয়ের মন ভাঙবি?

এর মাঝে একটা কল আসতেই রুশান ফোন নিয়ে অন্য দিকে চলে যায়। নিলয় অপ্রকাশিত একহা হাসি নিয়ে রুশানের দিকে আড় চোখে চেয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো। কারণ এর পরের সীন টা তার জানাই আছে। সাপলুডু তো শুরু হয়েছে সবে মাত্র।

রুশান ফোন রিসিভ করলে তার সহকারি আজিম বলে,
– স্যার একটা ব্যাড নিউজ আছে।
রুশান একটু শান্ত ভাবে বলে,
– কি সেটা।
ঐ পাশে লোকটা উত্তেজনা কন্ঠে বলে,
– সকালে অস্বাভাবিক কিছু টের পেয়ে ঐ লোকটার কাছে গিয়ে দেখি কেমন যেন করছিলো। আমি কয়েক বার জিজ্ঞেস করলাম, কিছু হয়েছে কিনা। সে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বললো। এর পর বলে, ঠিক আছি আমি। এর কিছুক্ষন পর দেখি ওই লোকটা মা’রা গেলো। কিছুই বুঝলাম না আমি। এখন কি করবো স্যার?

রুশান চোখ মুখ কুচকে কপালে হাত দিলো। যেন মস্ত বড় ক্ষতি হয়ে গেলো তার। হুম ক্ষতিই তো।
স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বলে,
– আচ্ছা আমি আসছি যত দ্রুত সম্ভব।
,
,
পর দিন রিপোর্ট হাতে পেয়ে লোকটার মৃ’ত্যুর কারণ জানতে পায় রুশান। খুব ক্ষদ্র কিছু দ্বারা লোকটার শরিরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে বা বিষ প্রবেশ করেছে। যার কারণে কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে মৃ’ত্যু হয়েছে তার। হয়তো কোনো সুচ বা ঐ জাতিয় কিছু। আর এই বিষ মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে প্রয়োগ করা হয়েছে।

কিন্তু বিষয় টা অবিশ্বাস্য। কারণ ঐ জায়গায় রুশান ও তার দু’এক জন সহকারি ছারা আর কারো চলাচল নেই। এমন কি এই বিষয়েও কেও জানেও না। তাহলে কেমন করে ঐ লোকটার গায়ে বিষ প্রয়োগ করা হলো? বিষয় টা মাথায় আসছে না রুশানের।
এটা কি তার সহকারিদের মাঝে কেউ করেছে? না, তারা এমনটা কেন করবে? বিশ্বস্ত লোক সব। তাহলে এটা হয়েছেই বা কিভাবে?
,
,
– ভাই আমার মনে হয় তুমি অরিণকে ভালোবেশে ফেলেছো। তাই তো কলেজে আসার পর থেকে আমাদের ফেলে বার বার ওর কাছে ছুটে যাও।
অরিণের দিকে তাকিয়ে ছিলো রাজ। আর পাশ থেকে কথাটা বলে নিবিড়।
রাজ কিছু না বললে, নিবিড় হেসে বলে,
– ভাই বুঝি বুঝি, সব বুঝি। ভালো যখন লেগেই গেলো ডিরেক্ট গিয়ে প্রপোজ করে দাও। নাহলে এই ফাকে অন্য কেউ প্রপোজ করে দিলে দেখবে তোমার পাখি অন্য খাচায় উড়াল দিয়ে দিলো।
বলেই হাসতে লাগলো নিবিড়। রাজ মুখ লুকানোর মতো করে কিছু লজ্জা নিয়ে বলে,
– আরে না, ওসব বললে পরে ফ্রেন্ডশিপ টাই নষ্ট হয়ে যাবে। আর সে যদি আমাকে শুধুই ফ্রেন্ড ভাবে?
নিবিড় মাছি তাড়ানোর মতো বিষয় টা উড়িয়ে দিয়ে বলে,
– আরে ধ্যাত। কতো হাজার হাজার রিলেশন এমন বন্ধুত্ব থেকে তৈরি হয়। আর তোমার আর অরিনের সম্পর্ক টা শুধু বন্ধুত্বতেই সীমাবদ্ধ নয়। এর চেয়েও বেশি কিছু প্রকাশ করে। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় অরিণও তোমায় পছন্দ করে। শুধু লজ্জায় বলতে পারছে না।
– কিন্তু আমার মতো ছেলেকে অরিণ কেন পছন্দ করবে? বলতে গেলে আমার তো কিছুই নেই।
– ভাই এতো ভয় রেখে কখনো হয় না। আর ভালোবাসা কখনো দিক দেখে হয় না, হুট করে হয়ে যায়। ভাই টেনশন নিও না, আমরা আছি তো। ঐ দেখো তোমাকে অরিণ ডাকছে। যাও যাও, কেরি অন।
,
,
এদিকে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে তার সহকারী সবাই। আর তার সামনে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে দাড়িয়ে আছে রুশান।
– তোমরা এতগুলো লোক থাকতে কিভাবে কেউ ভেতরে এসে কাউকে হ’ত্যা করে যায়? কোথায় ছিলে সবাই? আর এখানকার লোকেশন বাইরের কারো কানে গেলো কি করে?
আজিম মাথা তুলে বলে,
– স্যার আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা কি থেকে কি হয়েছে। প্রথমত এখানে সব কিছু ঠিকটাক ভাবেই বন্ধ ছিলো। বাইরের কেউ কিছুতেই ভেতরে আসতে পারবে না। আর দ্বিতীয়ত এখানকার লোকেশনও কারো জানা নেই। আর তৃতীয়ত এখানে কেউ যদি এসেই থাকে, তাহলে এতো গুলো দরজা ভেদ করে আসলো কিভাবে? আর কোনো দরজার তালা ভাঙা দেখিনি। সব ঠিকঠাকই ছিলো। তাহলে এটা কিভাবে হয়েছে আমার মাথায় কিছুই আসছে না।

রুশান রাগের মাথায় কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। ফোনটা ভাইব্রেট হচ্ছে। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে রিমার ফোন।
এমনিতেও মাথায় রাগ চেপে আছে। তার উপর একটার পর একটা ফোন। একটু আগে নিবিড় ফোন দিলো এর পর তুষার। কি প্রয়োজনে তারাতারি বাসায় যেতে বলছে তারাই জানে। এখন আবার রিমা। ইচ্ছে করছে ফোন টাকে আছড়ে ভে’ঙে ফেলতে।

তবুও রাগ যতই থাকুক। সেই রাগ প্রিয় মানুষটার উপরে ঝাড়া টা বোকামি। তাই নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে ফোন রিসিভ করে রুশান।
ওপাশ থেকে রিমার রাগি গলা ভেষে আসে,
– এই সমস্যা কি আপনার? আমি রাগ করে আছি আজ চার দিন পাঁচ দিন হয়ে গেলো, এখনো একটা ফোন দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলেন না আপনি? আমি কি এতোই স্বস্থা হয়ে গেছি আপনার কাছে? এখন আর কথা বলতে ভালো লাগে না তাই না? ভালো না লাগলে বলে দিন, ওকে?

রুশান এবার বিরক্তিতে কপাল কুচকে দাড়ালো। এমন সিরিয়াস টাইমে এসব প্যাচাল শুনতে কারই বা ভালো লাগে। একে একে সবাই ফোন নিয়ে আজাইরা প্যাচাল পারছে। তাই রুশান কপালে হাত রেখে বলে,
– তোরা সবাই মিলে কি শুরু করেছিস, হ্যা? বললাম যে একটা,,,,,
এর আগেই রিমা কথা কেড়ে নিয়ে বলে,
– তোরা সবাই মানে? ও আচ্ছা, তার মানে আরো আছে? তাই তো বলি, ইদানিং নবাব কে খুজেই পাওয়া যায় না কেন। বাহ্ ভালো তো। সুন্দরই চলছে সব। তাদের নিয়েই থাকুন। আমাকে নিয়ে না ভাবলেও চলবে। আর ভাবার সময়ই বা কই? সে তো এখন অন্যদের নিয়ে ভাবতে ব্যাস্ত। বায় বায়, টা টা, আল্লাহ্ হাফেজ। ভালো থাকুন, সুখে থাকুন তাদেরকে নিয়ে।

বলেই ফোন রেখে দেয় রিমা। তার এতোক্ষন বলা কথা গুলো সব যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেলো। বিপদ যখন আসে, সব জায়গা দিয়েই আসে।

To be continue……

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৩১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

এই সিরিয়াস টাইমে রিমার এসব পেচালে কান দেওয়ার সময় নেই রুশানের। রিমার অভ্যেসই এটা। ভুল বুঝার পর বুঝিয়ে বললে আবার সব ঠিক।
এসবে তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাজে মন দেয় রুশান।

ফোন ছুড়ে বিছানায় ফেলে চুপচাপ বসে রইলো রিমা। এতোদিন পর ফোন করেছে একটু সুন্দর করে কথা বললে কি এমন ক্ষতি হতো?
তাহলে কি সে সত্যি অন্য মেয়ের প্রেমে জড়িয়ে গেছে?
এসব হাবিজাবি চিন্তা যেন রিমার মাথা থেকেই সরে না। নিজের মাঝে বিরবির করে বলে, গুষ্টি কিলাই তোর ভালোবাসার।
,
,
রুশান বাসায় আসার পর দেখে, তুষারও নিবিড় বসে বসে দাবা খেলছে। দাবা খেলার আইডিয়া টা হলো তুষারের। শর্ত হলো যদি তুষার খেলায় জিতে, তাহলে নিবিড় তাকে একটা মেয়ের সাথে রিলেশন করিয়ে দিতে হবে। আর নিবিড় জিতলে তুষার তাকে চাইনিস খাওয়াবে।

তাই খুব মনোযোগ দিয়ে চলছে তাদের খেলা। নিবিড়কে কোনো ভাবে হারিয়ে যদি একটা গার্লফ্রেন্ড ম্যানেজ করা যায়।
রুশান আসার পর থেকেই এক পাশে বসে তাকিয়ে আছে তাদের দুজনের দিকে। এই দুইজন কম করে হলেও আট-দশ বার ফোন দিয়েছে তাকে। আর এখন আসার পর কোনো পাত্তাই নেই। দুজনই ডুবে আছে খেলায়।
রুশান কিছু বলতে চাইলে তুষার হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বলে,
– ভাই চুপ থাক। জিততে পারলে আমার কপাল খুলে যাবে।
নিবিড় বলে,
– আর হারলে আমাদের সবাইকে চাইনিস খাওয়াবে।
তুষার হুট করে বলে,
– সবাইকে কখন বললাম?
নিবিড় খেলা ছে্রে বলে,
– তো আমি খাবো বাকিরা কি চেয়ে থাকবে? আর তুই জিতলে যে তোকে একটা গার্লফ্রেন্ড ম্যানেজ করে দিবো সেটা?
তুষার এবার খেলায় মন দিয়ে বলে,
– আচ্ছা টিক আছে, সবাইকে খাওয়াবো।
দুজনই আবার খেলায় মন দিলো। রুশান আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইলো শেষ টা দেখার জন্য।

খেলা শেষে নিবিড় হেসে রুশানের সাথে হাতে হাতে তালি দিয়ে বলে,
– তাহলে সন্ধার পর বের হচ্ছি আমরা।
এদিকে আবারও ব্যর্থ হয়ে মন খারাপ করে বসে আছে তুষার। তার মনে হয় এই জীবনে আর প্রেম করা হবে না।

রুশান এবার স্বাভাবিক হয়ে নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– ফোন দিয়ে বললি কি জরুরি কথা আছে। কি সেটা।
নিবিড় এবার আশে পাশে তাকিয়ে ফিসফিস করে রুশানকে বলে,
– কালকে নিলয়ের বার্থ-ডে। জানিস সেটা?
রুশান এবার বিষয়টা বুঝতে পেরে বলে,
– হুম মনে আছে আমার। আর সব কিছু প্লেনও করে রেখেছি। তোদের জানাবো ভাবছি এখন দেখছি তোরাও ওটা নিয়ে ভাবছিস। আচ্ছা যাই হোক ভালোই হলো। আর শুন নিলয়কে কিছু বলার দরকার নেই। ওর জন্য সব সারপ্রাইজ হিসেবে থাকবে।
নিবিড় দাবার বোর্ড টা সরিয়ে তুষারকে এক পাশে গুছিয়ে রাখতে বলে তার পর রুশানের দিকে চেয়ে বলে,
– হুম তা তো অবশ্যই।
রুশান উঠে দাড়িয়ে বলে,
– রাজকে বলেছিস?
– হুম সেও জানে। শুধু নিলয় ছারা।
,
,
সন্ধার পর সবাই এক সাথে বাইরে যাওয়ার কথা থাকলেও রাজের জন্য যাওয়া হলো না। কারণ এই সময়কে তার টিউশনি আছে। তাই একেবারে রাতেই ডিনারে বের হবে বলে ঠিক করেছে তারা।

ওদিকে রাজ পড়া বুঝাচ্ছে আরোহি মনোযোগ দিয়ে দেখছে সব। তারপর সব বুঝিয়ে দিয়ে আরোহিকে অংক করতে বলে ফোন হাতে তুলে নিলো রাজ। অরিণ মেসেজ দিয়েছিলো,
– কি করো?
– পড়াই, তুমি?
– এই যে তোমার সাথে কথা বলছি।
– আচ্ছা বুঝলাম। মতলব টা কি ওটা বলো।
– কেন আমি কি মতলব ছারা তোমায় মেসেজ দিই না? ভিডিও কলে আসতে পারবে?
– কেন?
– আজ কলেজে স্যার কি বুঝালো কিছুই আমার মাথায় ঢুকেনি। তুমি ও তো খুব ভালো বুঝিয়ে দিতে পারবে।
– এখন আমি টিউশনি তে আছি। রাতে আমি কমপ্লিট করার সময় ভিডিও করে তোমায় সেন্ড করে দিবো৷
– আচ্ছা থ্যাংক ইউ।

আরোহি অলক করা বাদ দিয়ে বলে,
– কার সাথে কথা বলছেন?
রাজ ফোন রেখে বলে,
– কেউ না, তোমার শেষ হয়েছে?
রাজের কথার উত্তর না দিয়ে আরোহি আবার বলে,
– না কে বলুন আমায়, স্পেশাল কেউ?
রাজ ধমক দিয়ে বলে,
– যেই হোক তোমার কি?
রাজের ধমকে মন আরো খারাপ হয়ে যায় আরোহির। চুপচাপ আবার খাতায় কলম চালাতে থাকে। পুরোটা সময় আর একটা কথাও বলেনি সে।
,
,
পর দিন সন্ধার পর প্লেন মত নিলয়কে নিয়ে বাইরে বের হয় নিবিড়। রাজ, রুশান ও তুষার মিলে ছাদে সব কিছুর আয়োজন করতে লাগলো। সব শেষ হলে নিলয়কে নিয়ে বাসায় আসবে এটাই প্লেন।

বড় একটা কেক আর চার পাশে সাজানো অনেক মোমবাতি। আর গরুর মাংসের মাঝে শিক ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। ওগুলো সময় হলে করবে। এখন আপাতত এক পাশে কিছু ডিম ও আটা লুকিয়ে রাখা হলো।

সব শেষ করে রুশান নিবিড়কে ফোন দিলে নিলয়কে নিয়ে বাসায় ফিরে সে। নিলয় সব কিছু স্বাভাবিক ভাবেই নিয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খুজতে থাকে সবাইকে।
নিবিড় টাওয়াল দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে বলে ওরা সবাই বাইরে গেছে হয় তো, চলে আসবে। এই সময়টা চল একটু ছাদে গিয়ে হাটাহাটি করি আমরা।

নিলয় খাটে বলে বলে,
– কেন আমরা কি জামাই বৌ, যে ছাদে গিয়ে রাতের বেলায় জোৎসনা বিলাস করবো?
নিবিড় রুমের এক কোন থেকে গিটার টা হাতে নিয়ে বলে,
– তুই সালা আসলেই একের বলদ। ছাদে কি শুধু জামাই বৌ’রাই যায়? অন্যরা কি যায় না. চল ছাদে গিয়ে গান শুনাবো তোকে।

নিলয় কিছু বুঝতে না পেরে চুপচাপ নিবিড়ের সাথে ছাদে গিয়েই অবাক হয়ে গেলো। দেখে রাজ, রুশান, তুষার ও ফরিদা আন্টি সবাই কেক সামনে রেখে দাড়িয়ে আছে।
নিললয় কিছুক্ষন অবাক হয়ে চেয়ে থাকলে নিবিড় তাকে টেনে ওখানে নিয়ে সবার মাঝখানে দাড়করিয়ে ছুরি হাতে তুলে দেয়।

কেক কাটার পর্ব শুরু হলে প্রথমেই রুশান কেকের পিস নিয়ে নিলয়ের মুখে তুলে দেয়। ওই সময়টা শুধু নিশ্চুপ হয়ে রুশানের দিকে চেয়ে ছিলো নিলয়।

একে একে সবাই কেক মুখে নেওয়া শেষ হলে নিবিড় আস্ত কেকটা হাতে তুলে নিয়ে ধপ করে নিলয়ের মুখে।
নিলয় ওদের থেকে ছুটে মুখ থেকে তা পরিষ্কার করে কিছু বলে উঠার আগেই তুষার ডিম গুলো নিয়ে আসলে রুশান একটা একটা নিলয়ের মাথায় ভেঙে আটা গুলো নিলয়ের গায়ে ছুড়ে মেরে নাজেহাল অবস্থা।

তুষার পেছন থেকে ধরে আছে আর রুশান সব মাথায় গায়ে মেখে দিচ্ছে আর নিলয় হাসতে হাসতে তাদের থেকে ছোটার চেষ্টা করছে শুধু। পাশ থেকে চুপচাপ সব ভিডিও করে চলছে রাজ।
ফ্রেন্ডস মহলের খুনসুটি গুলো বাড়তে বাড়তে তা যেন অজান্তেই বাচ্চামোতে পরিনত হয়ে যায়।

নিবিড় গিটার হাতে এক পাশে বসে বলে,
– মন খারাপ করিসনা বলদা। বলছি না তোকে একটা গান শুনাবো।

রুশান আর তুষার মিলে নিলয়ের সাথে খুনশুটিতে ব্যাস্ত আর নিবিড় এক পাশে বসে গিটারের শুর তুলে গাইতে লাগলো,

‘আমার এই ক্লান্ত বিকেল,,,
বুকে হাওয়া লাগিয়ে হাটা কতটা পথ,,,,,
হেটেছি গন্তব্যহীন, চেনা এই শহরের বুকে,,,,,

তোদের মাঝে যখন থাকি আমি পৃথিবী তখন আপন লাগে,,
তোরা ভুলে যাস না কখনো, আমাদের বন্ধুত্ব রঙিন, কোনো ঘুড়ির মতো,,,,,,’
(গান- ক্লান্ত বিকেল)

To be continue…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here