ছদ্মবেশ,পর্ব ৩২,৩৩

0
882

#ছদ্মবেশ,পর্ব ৩২,৩৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৩২

জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় ভাই। গাড়ি থেকে নামতেই কয়েকজন এসে কয়েকটা ফুলের তোড়া হাতে দিয়ে উইশ করে নিলয়কে।
সানগ্লাসটা খুলে হালকা মাথা নাড়িয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায় নিলয়।
অনেকগুলো লোকের মাঝ দিয়ে সোজা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলে কয়েকজন লোক সোফা থেকে উঠে নিলয়ের দিকে ফুল বাড়িয়ে দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়।
পাশ তেকে নিলয়ের দলের একজন এসে তাকে কানে কানে ফিস ফিস করে বলে,
– ভাই এরা তিনজন নাম করা বিজনেসম্যান। আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ও কিছু বিষয়ে কথা বলতে এসেছে।

বলেই সেখান থেকে সরে গেলো লোকটা। নিলয় পায়ের উপর পা তুলে লোক গুলোকে বলে,
– হুম বলুন,,
লোক গুলোর মাঝে একজন খুব অসহায় ভাবে বলে,
– ভাই আমরা তিনজন মিলে শেয়ারে বিজনেস করতাম। অনেক কষ্টে বিজনেসটা বড় করেছিলাম। কিন্তু শেষে কিছু লোক এসে জোড় করে সব দখল করে নিলো। আমরা অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে পারিনি। প্লিজ ভাই আপনি একটু সাহাজ্য করুন আমাদের। এখন আপনিই আমাদের শেষ ভরসা ভাই।

নিলয় সবটা শুনে শান্ত ভাবে বলে,
– আচ্ছা দেখছি আমি। আপনারা এখন আসতে পারেন।
লোক গুলো এবার বিজয়ি হাসি দিয়ে নিলয়কে সালাম দিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে।

নিলয় একটু মুচকি হাসলে আশে পাশের সবাই হেসে উঠে এক সাথে। কার কাছে কার জন্য বিচার চাইতে আসছে।

বোতল থেকে গ্লাসে মদ ঢেলে তা হাতে নিয়ে দাড়ায় নিলয়। পাশ থেকে একজন এগিয়ে এসে বলে,
– ভাই আজকে সবচেয়ে বেষ্ট আইটেমটা খুজে আপনার বার্থডে গিফ্ট হিসেবে নিয়ে এসেছি। কয়েক এলাকা খুজে সবচেয়ে সুন্দরিটাই টার্গেট করে এনেছি আজ।

নিলয় একটু মুচকি হেসে মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে এগিয়ে গেলো রুমের দিকে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখে ফুটফুটে সুন্দরী একটা মেয়ে রুমের এক কোনো বসে হাটুতে মুখ গুজে কাঁদছে।
নিলয় তার সামনে গিয়ে দাড়ালে মেয়েটা নিলয়ের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– প্লিজ ভাইয়া, আপনার দুটো পায়ে ধরি আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না। আমার বাবা মায়ের অনেক মান সম্মান আছে। তাছারাবআমার দিকে চেয়েও কেউ কোনো দিন বাজে কথা বলতে পারেনি। আমার জীবনটা এবাবে নষ্ট করবেন না আপনার দুটু পায়ে ধরছি আমি।

কিন্তু মেয়েটার কাঁন্না নিলয়ের কান অব্দি পৌছাচ্ছে না। এমন শত শত মেয়ের কান্নাঁ তার কানকে স্পর্শ করেছে। তার সামনে তো এসব কিছুই না।
,
,
– সমস্যা কি তোর? এতো জেদ উদয় হয়েছে কোথা থেকে বল আমাকে।
একটা চেয়ার টেনে রিমার সামনে বসে কথাটা বলে রুশান।
রিমা ফোন টিপা বাদ দিয়ে রুশানের দিকে তাকিয়ে রাগি দৃষ্টিতে বলে,
– এখানে এসেছেন কেন? আপনার না আরো গার্লফ্রেন্ড আছে? ওদের কাছে যান। এখানে কি?
রুশান একটু ভাব নিয়ে বলে,
– আমি আমার খালার বাসায় এসেছি তোর কি?
– তাহলে হুট করে আমার রুমে এসেছেন কেন? বের হন এখান থেকে।

রুশান এবার রেগে রিমার গাল টিপে ধরে বলে,
– এখন আসার সময় পাইনা দেখে চটাং চটাং কথা শিখেছিস না? আর কাউকে অহেতুক সন্দেহ করা শিখেছিস কোথা থেকে?
রিমা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
– আমি মোটেও কাউকে অহেতুক সন্দেহ করছি না। আর সন্দেহ কি হুম? আমি তো সত্যটাই বলেছি। অন্য কাউকে পেয়ে এখন আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না।
রুশান এবার রেগে বলে,
– এখন আগের মতো ধাম ধুম চর মারিনা দেখে ভাবিস না আমি ওসব ভুলে গেছি। আর এসব শিখলি কোথায় থেকে? কলেজে উঠে খুব চালাক হয়ে গেছিস না? আর আন্টির কাছে শুনলাম, ইদানিং কলেজ ছুটির পর দেড়ি করে বাসায় ফিরিস, ব্যাপার কি?

এবার মুখ গোমড়া করে চুপ করে বসে আছে রিমা। রিমাকে চুপ থাকতে দেখে রুশান বলে,
– নতুন ডানা গজিয়েছে ভালো কথা। বেশি উড়ার চেষ্টা করবি তো কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম। কাল থেকে টাইম টু টাইম কলেজে যাবি টাইম টু টাইম বাসায় ফিরবি। সময়ের কোনো নরচর হলে, আর মুখে কিছু বলবো না তোকে। মাথায় ঢুকেছে কথা?

রিমা চুপ করে থাকলে রুশানের ধমকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
– হুম ঢুকেছে।
রুশান হুট করে রিমার মুখের খুব সামনে চলে এসে বলে,
– মনে থাকবে?
হুট করে রুশান এতোটা কাছে চলে আসায় চোখ বন্ধ করে নের রিমা। বন্ধ চোখে ভয়ার্ত গলায় ছোট্ট করে বলে,
– হুম,,,

রুশান এবার ফু দিয়ে রিমার সামনে আসা চুল গুলো পেছনে সরিয়ে দিয়ে একটু মুচকি হেসে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।
চোখ খুলে রুশানকে সামনে না পেয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রিমা। কিছুক্ষন ওভাবেই বসে থেকে এর পর উঠে বেলকনির দিকে পা বাড়ায় সে।

বারান্দায় আসলেই ছোট একটা ঝুলানো খাচায় দুটো পাখি দেখে অবাক হয় রিমা। কতো সুন্দর দুইটা পাখি। রিমার গোমরা মুখে অজান্তেই এবার এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। আগের পাখিটা মারা যাওয়ার পর মনটা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তার। অনেক শখ ছিলো সব সময় দুটো পাখি পোষার।
একটু মুচকি হেসে পাখি দুটুর সাথে ইশারায় কথা বলছে রিমা। একটু পর রুশানকে দেখার আশায় রুমের দিকে তাকায় সে। মানুষটা বড়ই অদ্ভুত। মুখে এক কথা বললেও মনে থাকে ভিন্নতা। যার কারণে এতো কিছুর পরও এই মানুষটার উপর রাগ করে থাকা যায় না।
,
,
রাস্তার এক পাশ ধরে হাটছিলো নিবিড়। পেছন থেকে একটা মেয়ে কয়েকবার ডাক দিয়ে তার পাশে এসে হাটতে লাগলো। নিবিড় পাশে তাকিয়ে দেখে পাশের বাড়ির ঐ মেয়েটা। যার সাথে আগে ছাদে মাঝে মাঝে কথা হতো।
মেয়েটা হাটতে হাটতে নিবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আজ একা কেন? বাকিরা কোথায়?
নিবিড় বিষণ্নতা নিয়ে বলে,
– সবাই সবার মতো ব্যাস্ত। রাজ, রুশান, নিলয় ওরা মাঝে মাঝে কোথায় হাওয়া হয়ে যায় নিজেও জানিনা। আর তুষার তো ছুটে বেড়াচ্ছে পড়ালেখার পাশাপাশি একটা চাকরি খুজতে। আর তাই এখন আপাতত একা একা হাটছি। কি আর করার?
মেয়েটা একটু হেসে বলে,
– এখনো কি একা একা হাটছেন?
নিবিড় হাটতে হাটতে একটু মুচকি হেসে বলে,
– না তো, এখন আমার পাশে যে নিলাঞ্জনাও আছে।
মেয়েটা একটু ভ্রু-জুগল কুচকে বলে,
– বাড়িয়ে বলার দরকার কি? আমার নাম নিলা। নট নিলাঞ্জনা।
নিবিড় হাটতে হাটতে বলে,
– জানি আমি। তবে আপাতত নিলাঞ্জনা ডাকতেই ভালো লাগছে আমার। কি করার বলুন?
মেয়েটা আর কিছু না বলে হেসে দিলো। আর কিছুটা হেটে বলে,
– আপনার সময় টা যেহেতু বোরিং যাচ্ছে তাহলে চলুন কোথাও বসি আমরা। আমারও আপাতত তেমন কোনো কাজ নেই।
নিবিড় দাড়িয়ে গিয়ে বলে,
– আপনার মতলব টা কি বলুন তো।
মেয়েটা ক্ষনিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো। আর বলে,
– সত্যি বলতে আমারও সময়টা বোরিং ফিল হচ্ছে। তাই বাবলাম দুজন মিলে গল্প করে সময়টা কাটিয়ে দিই।
নিবিড় আবার হাটতে শুরু করে বলে,
– কোথায় বসবেন?
নিলার চোখে মুখে খুশির আভাস ভেষে উঠে। হাস্যজ্জল মুখে বলে,
– একটু সামনে গিয়ে বড় দিঘিটার পাড়ে বেঞ্চের মাঝে চলুন। এই সময়টায় দারুন উপভোগ করার মতো জায়গাটা। সাথে মন শীতল করার মতো বাতাসও।

আর কিছুটা হেটে নিবিড় বলে,
– বাদাম খাবেন?
মেয়েটাও মুচকি হেসে বলে,
– আমার ফেভারিট।

নিবিড় একটু মুচকি হেসে সামনে এগিয়ে গিয়ে বাদাম নিলো। তারপর দুজম মিলে বড় দিঘিটার পাড়ে গিয়ে বসে।
বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে নিবিড় বলে,
– পরিবারে কে কে আছে আপনার?
মেয়েটাও বাদাম হাতে নিয়ে বলে,
– আমি আর বাবা। আমার মা পাঁচ বছর আগে মারা গেছে। এর পর বাবা আর বিয়ে করেনি। আমি মাঝে মাঝে ভাবি আমার কখনো বিয়ে হয়ে গেলে আমার বাবার কি হবে?

নিবিড় দিঘির দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
– আমরা যেই বাসায় থাকি, ঐ বাসার মালিক ফরিদা আন্টিও সেম। এক্সিডেন্টে তার স্বামী ও সন্তান দুজনই মারা যাওয়ার তিনিও একা হয়ে গেলেন। আমি মাঝে মাঝে ভাবি আমরা পড়া লেখা শেষে নিজেরা নিজেদের মতো চলে গেলে ফরিদা আন্টি একা একা কিভাবে থাকবে?

দুজনের চিন্তা ধারার মিল খুজে পেয়ে একটু হাসলো মেয়েটা। তারপর নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– আপনার ফ্যামিলিতে কে কে আছে?
নিবিড় একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে বলে,
– পরে বলবো কনো একদিন সময় করে।
নিবিড়ের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে মেয়েটা বলে,
– আচ্ছা।
তারপর আবার নিজেদের মতো বাদাম খেতে খেতে গল্প করতে থাকলো দুজন।
,
,
ওদিকে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে তুষার। নিলয় তখন বসে বসে টিভি দেখায় ব্যাস্ত ছিলো। তুষারকে এমন ঘামাতে দেখে সে হেসে বলে,
– আর কতো এই ১৫-২০ হাজার টাকার চাকরির পেছনে দৌড়ে সময় নষ্ট করবি?

তুষার শার্ট খুলে এসির নিচে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে আরাম করে বসে বলে,
– কি আর করা, চেষ্টা তো করতে হবে তাই না?
নিলয় এবার টিভি দেখা ছেরে আশে পাশে একবার তাকিয়ে নিয়ে বলে,
– আমি যদি তোকে কোনো জব ম্যানেজ করে দিই তাহলে করবি?

নিলয়ের কথায় হাসতে থাকলো তুষার। আর হাসতে হাসতে বলে,
– তুই আমাকে জব ম্যানেজ করে দিবি? হাস্যকর এটা।
নিলয় এবার সিরিয়াস লুক নিয়ে বলে,
– কেন তোর কি বিশ্বাস হচ্ছে না? আমি কিন্তু ফান করছি না।
তুষার এবার হাসি থামিয়ে বলে,
– আচ্ছা বল দেখি কি জব ম্যানেজ করে দিবি?
তুষার আবার চার পাশে তাকিয়ে বলে,
– কাজ খুবই হালকা। একদিন কাজ করবি কয়েকদিন বসে থাকবি। বাট মাসে কামাতে পারবি লাখ লাখ টাকা।
তুষার এবার খনিকটা সিরিয়াস হয়ে বলে,
– সত্যি বলছিস নাকি ফান করছিস? একদিন কাজ করে কয়েকদিন বসে থাকলে মাস শেষে আমাকে লাখ টাকা কি তারা চেহারা দেখে দিবে?

নিলয় আবার বলে,
– তোর কাজ থাকবে শুধু এক জায়গার জিনিস অন্য জায়গায় পৌছে দেওয়া। তোকে বড় বড় বাক্স দেওয়া হবে সেগুলো তুই শুধু গাড়িতে করে জায়গা মত পৌছে দিবি তোর কাজ শেষ।

তুষার এবার নিলয়ের কথা একটু সিরিয়াসলি নিয়ে বলে,
– কিসের বক্স ওগুলো?
নিলয় বলে,
– যে কোনো কিছুই থাকতে পারে, সেটা জেনে তোর কাজ কি? তুই শুধু ওগুলো জায়গা মত পৌছে দিবে আর টাকা নিবি শেষ।
তুষার কিছুটা ভেবে বলে,
– দেখ ভাই আমি না জেনে কিছু করতে পারবো না। ওরা যদি আমাকে দিয়ে খারাপ কাজ করায়?
নিলয় একটু হেসে বলে,
– আরে ধুর। ওগুলো সব ব্যাবসায়ি জিনিস পত্র। তুই শুধু এক জায়গা থেকে জিনিস গুলো সেভ মতো অন্য জায়গায় পৌছে দিবি। আর পারিশ্রমিক নিবি। তোর কাজ এত টুকুতেই শেষ।

তুষার এবার কিছুটা ভেবে বলে,
– আচ্ছা ঠিক আছে আমি করবো কাজ।
নিলয় একটু মুচকি হেসে বলে,
– ধরে নে তোর চাকরি কনফার্ম। তবে হ্যা, একটা শর্ত আছে। এই জব এর কথা যেন আমি আর তুই ছারা অন্যরা কেউ না জানে।
তুষার মাথা নাড়িয়ে ‘আচ্ছা’ বলে একটা টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। আড়ালে একটু ভিলেন হাসি দিলো নিলয়।

তুষার হয়তো নিজেও জানেনা সে কোন বিজনেসে জড়াচ্ছে।

To be continue………..

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৩৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

রাতের আধারে একা গাড়ি নিয়ে ছুটছে তুষার। যত দ্রুত সম্ভব সঠিক জায়গায় মাল পৌছে দিয়ে বাড়ি যেতে হবে।
লাইফের প্রথম অভিজ্ঞতা। মনে একটা প্রশ্ন বার বার কুহু ডাকছে। সে যেই মাল গুলো নিয়ে যাচ্ছে এর ভেতরে কি আছে? তাকে কোনো খারাপ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না তো? নাহলে জিনিস গুলো এতো সেইফটির সাথে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
ভাবতে ভাবতে নির্জন রাস্তায় ব্রেক চাপলো তুষার। গাড়ির ভেতরে ৩ টা ব্যাগ। ব্যাগের ভেতর কি এমন আছে, তা জানার আগ্রহ তাকে খুব করে টানছে বার বার।

কাঁপা হাতে ব্যাগ গুলো খুললেই যেন সারা শরির ঝাকুনি দিয়ে উঠলো এক মুহুর্তের জন্য। দেখে ব্যাগের ভেতর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অশ্র।
আরেকটা ব্যাগ খুললে দেখে ইয়াবা, হিরোইন সব নানার অবৈধ মাল।

তৃতীয় ব্যাগ টা আর না খুলে দ্রুত গাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে তুষার। শমস্ত শরির জুড়ে চিকন ঘাম শুরু হয়ে গেলো তার। সারা শরির জুড়ে কাপুনি তৈরি হয়ে গেলো তার।
মাথায় দুই হাত রেখে চুল গুলো পেছনের দিয়ে চেপে ধরে অস্থিরতা প্রকাশ করছে সে। তাকে দিয়ে স্মাগলিং করানো হচ্ছে? যা সম্পুর্ণই অবৈধ?

তুষার আর ওখানে না দাড়িয়ে দ্রুত গাড়ির ভেতর বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে দেখতে পায় কিছুটা দুরে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সব গাড়ি একে একে চেক হরছে তারা।
তুষার মনে মনে হাজার বার সৃষ্টিকর্তার নাম জপে গাড়ি ঘুড়িয়ে উল্টো পথে ব্যাক করলো। সে আগে জানলে কখনোই এই কাজটা নিতো না।

এসির মাঝেও ঘামছে তুষার। দ্রুত গতিতে সেই জায়গাটায় চলে এলো যেখান থেকে মাল গুলো গাড়িতে তুলে তুষারকে পাঠিয়েছিলো তারা।

তুষার গাড়ি থেকে নেমে ওখানে থাকা টিম লিডারের কাছে গিয়ে বলে,
– ভাই আমাকে দিয়ে এসব কিছু করা সম্ভব না। আর আমাকে বলাও হয়নি যে আমাকে দিয়ে স্মাগলিং করানো হবে।
ওদের মাঝে টিম লিডার কিছুটা ক্ষেপে গিয়ে বলে,
– তোকে তো এতো কিছু ভাবতে বলিনি। তোকে মাল দেওয়া হয়েছে তুই জায়গা মত পৌছে দিবি। তোর কাজ এতোটুকুই। এখন আবার এসে এসব কি যা তা বলছিস৷

তুষার দুই হাত জোড় করে বলে,
– ভাই মাপ করবেন আমি কখনোই এসব অবৈধ কাজ করতে পারবো না। আমার ফ্যামিলির এক মাত্র ভরসা আমি। এসবে জড়িয়ে আমার কিছু হয়ে গেলে ওদের পথে নামা ছারা আর কোনো উপায় তাকবে না।

মুহুর্তেই ওদের মাঝে একজন কয়েকটা বিশ্রি গালি দিয়ে এগিয়ে এসে তুষারের মাথাটা টেবিলে চেপে ধরে মাথায় পিস্তল তাক করে রাখে।
টিম লিডার লোকটা উঠে হাসতে হাসতে বলে,
– তুই হয়তো জানিস না যে, এসব কিছুতে কেউ একবার জড়িয়ে গেলে তার কাছে শুধু দুইটা অপশন থাকে। একটা হলো, এসব কাজ করে যাওয়া। আরেকটা হলো, মৃত্যু।

বলেই লোকটা ফোন বের করে নিলয়ের নাম্বারে কল করে। নিলিয় রিসিভ করে খুব শান্ত ভাবে বলে,
– হুম বলো, কাজ হয়েছে?
লোকটা উত্তেজিত থাকলেও নিলয়কে নরমাল ভাবে বলে,
– ভাই কিভাবে কাজ হবে? ওই সালা এখন বলে সে এসব কাজ করবে না। চলে যেতে চাইছে এখান থেকে। এখন ভাবছি মে’রে কোথাও পু’তে দিবো।

নিলয় ওপাশ থেকে শান্ত ভাবে বলে,
– তার প্রয়োজন নেই। ছেরে দাও তাকে।
লোকটা অবাক হয়ে বলে,
– ভাই কি বলছেন এসব? সে এখন অনেক কিছুই জেনে গেছে। তাকে বাচিয়ে রাখাটা আমাদের জন্যই বিপদ হয়ে দাড়াবে। পথের কাটা না সরিয়ে পথেই রেখে দিতে বলছেন?

নিলয় এবার কিছুটা রেগে দিয়ে বলে,
– আমার কথা কি বুঝতে পাওনি তুমি?
লোকটা এবার শান্ত হয়ে বলে,
– ভাই এটাকে কেন ছেরে দিতে বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কিন্তু ভাই সে যদি এসব ফাঁস করে দেয়?
নিলয় এখনো রেগে তাকে বলে,
– ওটা আমি বুঝে নিবো। তোমাকে যেটা বলেছি সেটাই করো। ওর গায়ে যেন একটা ফুলের টোকাও না পরে। ওখানে কাউকে দিয়ে তাকে বাড়ি পৌছে দাও। যেন পথে কোনো বিপদে না পরে।
লোকটা কিছুটা নিরব থেকে বলে,
– ভাই আপনি ঠিক আছেন তো?
নিলয় এবার একটা বিশ্রি গালি দিয়ে বলে,
– আরেকটা কথা বলবি তো তোদেরই সব বেঠিক হয়ে যাবে।

বলেই ফোন কেটে দেয় নিলয়। চেয়ারে বসে নিজেকে শান্ত করার ট্রাই করে সে। নিজের মাঝে একটা অনুশোচনা জেগে উঠলো তার। নিজের বন্ধুকে সে কিভাবে জেনে শুনে এমন অন্ধকার জগতে জড়াচ্ছিলো? নিজের সার্থের জন্য কি না নিজের বন্ধুকেই বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছিলো? সে এটা কিভাবে করলো? নিজের মাঝেই একটা অপরাধবোধ কাজ করতে শুরু করলো তার।
,
,
ওদিকে রুশান অনেক দিন পর নিজের বাসায় পা রাখলো। দাদির ঘরে গিয়ে দাদির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে সে। ছোট থেকেই তার সবচেয়ে কাছের মানুষ হলো তার দাদি।
দাদির রুমের দেয়ালে দাদার বেশ কয়েকটা ছবি লাগানো আছে। দাদাকে দেখেনি সে।
বাবা ও দাদির কাছে শুনেছে, সে গর্ভে থাকতেই নাকি তার দাদার থেকে সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে দাদকে মে’রে ফেলেছিলো ওই নির্জন।

দেশে নাম করা বিজনেস ম্যানদের মাঝে একজন ছিলো তার দাদা রুদ্র চৌধুরি। নির্জনকে রাস্তা থেকে তুলে এনে নিজের কাছেই বড় করেছিলো তার দাদা। বড় হওয়ার পর দাদার ব্যাবসার কাজ মাঝে মাঝে নির্জনই সামলাতো।
রুশানের বাবা রিদ ডাক্তারি পেশায় মানব সেবায় নিয়োজিত থাকতো দেখে ব্যাবসায় তার কোনো আগ্রহ ছিলো না।
নির্জনকেই নিজের ছেলের মতো করে দাদা সব তাকে দিয়েই করাতো। এর পর রুশান যখন গর্ভে ছিলো। নির্জন তখন ছিলো ২৫ বছর বয়সি যুবক।
তখন দাদার থেকে সব জোড় করে লিখে নিয়ে দাদাকে মে’রে ফেলেছিলো। সেখান থেকেই বিজনেসটা বড় করতে করতে সাথে অবৈধ বিজনেস জোগ করতে থাকে সে।

সেই থেকে এই ২৫ বছরে নির্জন নিজের বিজনেসটায় সব কিছু জড়িয়ে ফেলেছে। বাইরের দেশেও ছরিয়েছে তার কালো হাত। মানুষের পার্স ও জিবিত মানুষ বাইরের দেশে পাচার করাটাও চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে।

নির্জনের সাথে রুশানের ব্যাক্তিগত শত্রুতা হলো এটা। সেই সাথে তার অন্ধকার জগৎ ধ্বংস করার তীব্র প্রতিজ্ঞা।
(রুশানের দাদার এই উপরের ঘটনা টুকু আমার ‘অনুভুতিহীন’ গল্প থেকে নেওয়া)

খাবার তৈরি শেষে আরশি এগিয়ে গেলো তার শাশুরির রুমের দিকে। রিদ এখনো হসপিটাল থেকে ফিরে আসেনি।
শাশুরির রুমে গিয়ে দেখে রুশান দাদির কোলে মাথা রেখে গল্পে ডুবে আছে।
আরশি একটু হেসে রুমে প্রবেশ করে বলে,
– শুধু গল্প করলেই কি দাদি নাতির পেট ভরবে? নাকি খাওয়া দাওয়ারও একটু প্রয়োজন আছে?
রুশান একটু হেসে বলে,
– ঠিক বলেছো মা, দাদির সাথে আড্ডা দিলে খাওয়ার প্রয়োজন নেই। দাদির মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনলেই পেট ভরে যায়।
দাদি তা শুনে হাসতে হাসতে রুশানের মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
,
,
বাসায় ফিরেই নিলয়ের সামনে গিয়ে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে তুষার। নিলয়ের জামার কলার চেপে ধরে বললে,
– সালা তুই আমাকে কোন জায়গায় নিয়ে ফেললি? একটুর জন্য নিজের জীবন নিয়ে বেচে ফিরতে পেরেছি।
নিলয় একটু হাবা হুবা ভাব নিয়ে বলে,
– কেন ভাই কি হয়েছে? আমি তো যাস্ট মাল সেল এর জব দেখে ওটা তোর জন্য সিলেক্ট করেছি।
তুষার একনো রেগে বলে,
– আমি আগেই জিজ্ঞেস করেছিলাম কিসের মাল আমাকে ডেলিভারি দিতে হবে? তুই বলেছিলি ব্যবসায়িক মাল। কিন্তু শেষে গিয়ে দেখি সব স্মাগলিং এর জিনিস।

নিলয় কিছু না জানার মতো গালে হাত দিয়ে বলে,
– আয় হায় কি বলিস? বিশ্বাস কর দোস্ত আমি কিছুই জানতাম না এসবের। আমিও চাকরিটা অফার হিসেবে পেয়েছিলাম। যে, এক জায়গার মাল অন্য জায়গায় পৌছে দিতে হবে। এর পর ভাবলাম তোর একটা জবের প্রয়োজন তাই তোকে বললাম। আমি কিছুই জানতাম না এসব মালের ব্যাপারে।

নিলয়ের বানানো গল্প শুনে তুষার এবার কিছুটা শান্ত হয়ে নিলয়ের কলার ছেরে দিয়ে বলে,
– ওরা আমার মাথায় পি’স্তল ঠে’কে রেখেছিলো। পরে কার সাথে যানি কথা বলে আবার ছেরে দিয়েছে। জমের দুয়ার থেকে বেচে ফিরেছি। আর কখনো এসব উল্টা পাল্টা জবের অফার আমাকে দিবি না।

ওদের দুজনের চেচামেচি শুয়ে পাশের রুম থেকে বেরিয়ে আসে রাজ। তাদের মাঝে এসে বলে,
– দুজন মিলে আবার কি বিষয়ে ঝামেলা করছো তোমরা।
তুষার কিছু বলার আগেই নিলয় তাকে থামিয়ে বলে,
– আরে তেমন কিছু না। এমনি একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা।

তুষার কিছু বলতে চাওয়া আর নিলয় তা থামিয়ে দিয়ে কথা ঘুরিয়ে নেওয়াটা রাজের চোখ এড়ালো না।
রাজ নিছুক্ষন শান্ত থেকে নিয়কের দিকে চেয়ে বলে,
– ওকে, তবে দুজন ঝগড়া বেধে যেওনা আবার।

বলেই পাশের রুমে চলে গেলো রাজ। ইদানিং নিলয়কে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে রাজের কাছে।
,
,
আজ কলেজে আসার পর থেকেই নার্ভাস হয়ে আছে রাজ। নিবিড় আর তুষার এই অরিণের সম্পর্কে অনেক কিছুই বলেছে। সত্যিই তো, অরিনের পেছনে কত ছেলে পরে থাকে। হুট করে কেউ এসে প্রপোজ করে দিলে আর অরিণ রাজি হয়ে গেলে রাজ দেখা ছারা আর কিছুই করতে পারবে না। চাইলে অনেক কিছু করতে পারলেও, জোড় করে ভালোবাসা হয় না।

ইদানিং নিবিড় ও তুষারের নানান বুদ্ধি ধরে ফাইনালি অরিণকে প্রপোজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। কেউ নিয়ে যাওয়ার আগে সময় থাকলে ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসার কথাটা বলে দেওয়াই ভালো।
সেই আসার পর থেকেই নার্ভাস রাজ। নিবিড় কয়েকটা গোলাপ নিয়ে এসে রাজের হাতে ধরিয়ে দিলো।
পাশ থেকে তুষার বলে,
– ভয় পেও না ভাই। তোমার কপাল খুলতে চলেছে। আর আমার ফাটা কপাল ফাটাই রয়ে গেলো।

মানুষ যতই সাহসি হোক। ভালোবাসার মানুষের সামনে সে সবচেয়ে দুর্বল ও ভিতু প্রকৃতির হয়। যদি তাকে মন থেকে ভালোবেসে থাকে।
রাজ আবার নার্ভাস হয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিবির তাকে বলার সুজুগ না দিয়ে ধাক্কিয়ে অরিণের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে দুই হাত লাইকের মতো করে বুঝালো, বেষ্ট অফ লাক।

To be continue………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here