#ছদ্মবেশ,পর্ব ৩৬,৩৭
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৩৬
– নিলয়ের সম্পর্কে জানতে চাইছি আমি। ওর সম্পর্কে তুমি কি কি জানো। আর সেদিন তোমাদের মাঝে কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো? আর নিলয়ের মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখছো কি না? এক কথায় ওর সম্পর্কে তোমার নলেজে যতটুকু ধারণা তৈরি হয়েছে, সব টা শুনতে চাই আমি।
খুব শান্ত ভাবে কথাটা বললো রাজ। হটাৎ রাজের এমন প্রশ্নে কিছুটা অবাক হলো তুষার। কিছুটা হাসির ভঙ্গিমা নিয়ে তুষার বলে,
– তা জেনে তোমার কাজ কি?
রাজ কিছুক্ষন নিলয়ের দিকে স্থির হয়ে চেয়ে রইলো। কোনো প্রতিউত্তর করলো না।
রাজের এমন স্থির চাহুনিতে কিছুটা নার্ভাস হয়ে পরে তুষার। হাসির ভঙ্গিমা বাদ দিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
– কই না, নিলয়ের সম্পর্কে আমি আর কি জানবো? তোমরা যেমন আমার ফ্রেন্ড, তেমন নিলয়ও। এক সাথেই তো আছি আমরা খুব ভালোই আছি।
রাজ আবার বলে,
– ঐ দিন তোমাদের মাঝে কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো?
তুষার বিষয়টাকে উড়িয়ে দেওয়ার মতো করে বলে,
– আরে ধুরু, এসব ছোট খাটো বিষয় নিয়ে তুমি এখনো পরে আছো? বন্ধুদের মাঝে এমন টুকটাক ঝামেলা হয়ই। এমনি ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে। পার্সনাল।
পার্সনাল কথা শুনে তেমন একটা কথা বাড়ালো না রাজ। তুষার এয়ার ফোন টা হাতে নিয়ে বলে,
– আর কিছু বলবে?
রাজ একটু হাসির রেখা টানার মতো করে বলে,
– না, এইটুকুই জানার ছিলো। এখন আসতে পারো।
কানে এয়ার ফোন লাগিয়ে নিলয়ের রুমের দিকে চলে গেলো তুষার। নিয়লের সম্পর্কে যাই ধারণা তৈরি হোক। আর সেদিন কোন বিষয় নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে তা কাউকে বলবে না বলে কথা দিয়েছে নিলয়কে। যাই হোক কথা দিয়ে তার বরখেলাপ করা তো ঠিক না।
তুষার চলে যাওয়া মাত্রই রাজের মুখটা গম্ভির হয়ে এলো। হাত বাড়িয়ে পাশ থেকে একটা বই নিয়ে পাতা উল্টাতে শুরু করে সে।
তুষার গান শুনতে শুনতে নিলয়ের রুমে গেলে দেখে নিলয় বেলকনিতে দাড়িয়ে কথা বলছিলো কার সাথে। তুষারকে দেখা মাত্রই ফোন রেখে মুখে হাসির রেখা টানলো।
তুষার এয়ারফোন টা খুলে গলায় ঝুলিয়ে নিলয়ের দিকে চেয়ে বলে,
– আচ্ছা দোস্ত একটা প্রশ্ন করলে মাইন্ড করবি না তো?
নিলয় একটা ভেটকি দিয়ে বলে,
– আরে ধুরো, বল কি বলবি? মাইন্ড করার কি আছে?
তুষার একটু ভাবুক হয়ে বলে,
– আমাকে একটা কথা বল তো। রুশানকে নাহয় ওর ফ্যামিলি তার খরচ দেয়। রাজও টিউশনি করে চলে। কিন্তু তুই যে এভাবে চলছিস, টাকা কই পাস? মানে তোর বাবাও তো বেচে নেই।
নিলয় হেসে বলে,
– আরে ফোনে গেম খেলে। শুধু একটু মাথা খাটিয়ে মাসে আয় করা যায় হাজার হাজার টাকা।
তুষার অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,
– সত্যি? তাহলে আমার ফোনেও সেট করে দে।
নিলয় একটু হেসে বলে,
– এসব তোকে দিয়ে হবে না। একটু এদিক সেদিক হলেই প্রতি কো’পে তোকে ফকির বানিয়ে ছারবে। শেষে কাঁন্না মোছার জন্য টিসু কেনারও টাকা থাকবে না।
তবুও তুষার এসব কানে না নিয়ে ফোনটা নিলয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– আরে আমি জানি যে, হারলে টাকা যাবে আর জিতলে টাকা আসবে। আমিও মাথা খাটিয়েই খেলবো। তুই আমার ফোনেও ওটা খুলে দে।
এবার একটু হতাশ হয়ে তুষারের ফোনটা হাতে নেয় নিলয়। যদিও সে কোনো গেম খেলে না। তবুও বাজিতে খেলা যায় এমন একটা এপ্স খুজে তুষারকে ওটা ওপেন করে দিলো।
তুষার একটু ভাব নিয়ে বলে,
– এবার শুধু টাকা আর টাকা আসবে।
বলেই আর সময় অপচয় না করে সেখান থেকে চলে গেলো তুষার। নিলয় পেছন থেকে বলে,
– দেখিস আবার, বেশি টাকা টাকা করলে শেষে ভান্ড কেনারও পয়শা থাকবে না৷
,
,
নিবিড় এতোক্ষণ ওয়াশ রুমে ছিলো। ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে রাজকে এমন গম্ভির মুখে দেখে বলে,
– আবার অরিণের কথা মনে পড়ছে তাইনা? আরে ওই মেয়ে চলে গেছে আরো কত মেয়ে আছে লাইফে। এসব নিয়ে ভাবার টাইম আছে?
রাজ একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,
– কি সব যা তা বকছো? তোমাকে কে বললো অরিনের বিরহে আমি আত্মহারা? ওকে আমার মনের কথা বললাম আর সে রিজেক্ট করলো। কারণ আমি ওর মতো বড় লোক না। তাই বলে এটা নিয়ে এতো ভেবে নিজেকে কেন ডিপ্রেশনে নিয়ে যাবো?
নিবিড় একটু হেসে বলে,
– যাক তোমাকে বুঝানোর আগেই ভুঝে ফেললে। উই আর ব্রিলিয়ান্ট।
,
,
বিকেলে বাস স্ট্যানে দাড়িয়ে ছিলো নিবিড়। জরুরি প্রয়োজনে একটু দুরে গিয়েছিলো সে। এখন ফিরে যাচ্ছে বাসায়।
তার পাশে ছোট একটা ফ্যামিলি। তাদের সাথে বসে আছে আরেকটা মেয়ে। তার থেকে কিছুটা ছোট হবে। চেহারা টা কিছুটা নিবিড়ের সাথে মিল আছে। তাই অবাক হয়ে কিছুক্ষন মেয়েটার দিকে হাকিয়ে ছিলো নিবিড়।
মেয়েটা হয়তো এই ভদ্র লোক আর ভদ্র মহিলার মেয়ে হবে। টিকেট হাতে দাড়িয়ে আছে সবাই।
ভদ্র লোকটা একটু দুড়ে হেটে গিয়ে আবার ফিরে এসে ঐ মহিলার দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলে,
– ফারহা তুমি ফারিহা কে নিয়ে এখানে দু’মিনিট দাড়াও আমি একটু আসছি।
বলেই চলে গেলো সেই লোকটা।
নিবিড় পাশ থেকে বিষয়টা খেয়াল করলো। তার মানে এই মহিলার নাম ফারহা, আর পাশে বসে থাকা মেয়েটা তার মেয়ে ফারিহা।
বিষয়টা নিয়ে আর বেশি ভাবলোনা সে। এতো দুরে এসে অপরিচিত মানুষদের নিয়ে ভেবেই বা কি লাভ?
কাধে ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে নিবিড়। এর মাঝে ফারহা তার কাছে এগিয়ে এসে বলে,
– বাবা আর কতক্ষন বাকি আছে দেখো তে?
নিবিড় তার দিকে চেয়ে বলে,
– আপনার টিকিট কয়টার?
ফারহা তৎক্ষনাৎ বেগের দিকে চেয়ে বলে,
– ওহ্ সেটা তো খেয়াল করিনি।
বলেই ব্যাগ থেকে টিকিট বের করে নিবিড়ের দিকে এগিয়ে দিলো সে। কারণ এতো ছোট লেখা চশমা ছারা পরিষ্কার দেখতে পায়না সে। বিশ বছর আগে ছেলে হারানোর শোকে আজও কাঁদতে কাঁদতে চোখ ও ব্রেন দুটুতেই প্রভাব পরেছে খুব।
নিবিড় টিকিট দেখে বলে,
– আবরার আহমেদ কে?
মহিলা টা বলে,
– আমার স্বামী। একটু আগে দেখলে যে, সে।
– ওহ্ আচ্ছা। আপনাদের বাস তো এখনো বিশ মিনিট বাকি। মানে এখন আমি যেটাতে যাবো ওটার পরের বাসটাই আপনাদের।
বলেই টিকিট টা ফারহার দিকে এগিয়ে দিলে ফারহা তা হাতে নিয়ে বলে,
– ধন্যবাদ বাবা।
দেখতে দেখতে দুই মিনিট পর নিবিড়ের বাসে’র সময় হলে সেটাতে উঠার প্রস্তুতি নেয় সে। এতোক্ষন কথা বলা ভদ্র মহিলাকে বিদায় দিয়ে বাসে উঠে নিজের সিটে গিয়ে বসলো।
,
,
আজ আরোহিকে পড়াতে এসে তাদের বাড়ির গেট পেড়িয়ে ভেতরে গেলে দেখে বাইরে অনেক গুলো গাড়ি দাড় করানো। আর ভেতরেও আগের তুলনায় আজ অনেক মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। হয়তো বাড়িতে আজ মেহমান এসেছে।
এমন অবস্থায় পড়াতে যাওয়া কি ঠিক হবে? প্রশ্নটা মাথায় ঢুকলো তার। এতো মানুষের ভিড়ে বিষয়টা লজ্জা জনক মনে হলো তার কাছে। চলে যাবে ভাবছে এমন সময় উপর তলায় বেলকনিতে আরোহিকে দেখতে পায় সে।
আরোহি রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। চলে যেতে হবে না।
রাজ একটু অবাক হলো। আজব তো, আমি চলে যাবো ভাবছি এটা আরোহি জানলো কিভাবে? নাকি এতোক্ষন এখানে দাড়িয়ে আছি দেখে এমনটা ভেবে নিয়েছে?
আর বেশি কিছু না ভেবে ভেতরে চলে যায় রাজ।
অনেক দিন পর সোনার ডিম পারা রাজ হাসের দেখা মিললো। প্রায় দু’মাস পর নির্জন তার ফ্যামিলির কাছে এসেছে আজ। নির্জনের ব্যাপারে পুরোপুরি না জানলেও কিছুটা জানতে পেরেছে সে। তাই সন্দেহজনক ভাবে আরোহিকে পড়ানোর নামে রাজের এই বাসায় প্রবেশ করা।
ভেতরে ঢুকে রাজ তাকে সালাম দিয়ে আরোহিকে পড়ানোর রুমের দিকে হাটা ধরলে নির্জন পেছন থেকে ডাক দেয় তাকে। রাজ ওভাবেই দাড়িয়ে যায় সোজা হয়ে। মনে একটাই প্রশ্ন জেগে উঠলো তার৷
‘চিনে ফেলেনি তো?’
সঙ্কোচ নিয়ে পেছন ফিরে সে। নির্জনের চার পাশে কয়েকটা গার্ড দাড়ানো। বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে গিয়ে নির্জনের সামনে দাড়ায় রাজ। একধম ভদ্র ছেলেদের মতো করে।
নির্জন বসে থাকা অবস্থায় প্রশ্ন করলো,
– তোমার নাম কি রাজ?
To be continue…………
#ছদ্মবেশ (পর্ব ৩৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
নির্জনের সামনে এসে দাড়ালো রাজ। দুই হাত এক করে সোজা হয়ে একেবারে ভদ্র ছেলেদের মতো।
নির্জন স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– তোমার নাম কি রাজ?
রাজ কিছুটা সঙ্কোচবোধ করে উত্তর দেয়,
– জ্বি।
রাজকে এভাবে দাড় করানোতে কিছুটা ভয় হয় আরোহির। কারণ বাবা খুব রাগী। রাজের সাথে আবার খারাপ বিহেভ করে বসে কি না।
তাই সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে আরোহি। নির্জন তাকে দেখে কাছে টেনে পাশে বসিয়ে রাজকে বলে,
– পড়াশুনা কেমন চলছে ওর?
রাজ শান্ত ভাবে উত্তর দেয়,
– জ্বি আঙ্কেল ভালো।
পাশ থেকে ফর্শা করে একটা কম বয়সি ছেলে বলে উঠে,
– আর কোথাও কি টিউশনি করাও?
রাজ মাথা নিচু করে বলে,
– না।
ছেলেটা বলে,
– ভেরি গুড। তোমার টিউশনিতে শুধু একটাই স্টুডেন্ট, আরোহি। তোমার সর্বোচ্চ চেষ্টা টা করবে আরোহির পেছনে।
রাজের বিরক্তি লাগলেও এই মুহুর্তে তা প্রকাশ করার সময় নয়। তাই শান্ত ভাবে বলে,
– জ্বি, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা টুকুই করবো।
ছেলেটা আর কিছু বললো না। নির্জন আরোহির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
– আমার একটাই মেয়ে। জানো তো নিশ্চই।
রাজ শান্ত ভাবে বলে,
– জ্বি।
এবার আরোহিকে বলে,
– যাও মা, পড়তে যাও।
বাবার পাশ থেকে উঠে চলে গেলো আরোহি। তার পর রাজও চলে গেলো।
আরোহিকে পড়ানোর সময় রাজ একটু উৎসাহ নিয়ে বলে,
– তখন তোমার বাবার পাশে যেই ছেলেটা কথা বলেছিলো সে কে?
আরোহি বলে,
– চিনিনা আমি। তবে বাবার সাথে মাঝে মাঝে আসে আমাদের বাসায়। আর আমার দিকে অদ্ভুত অদ্ভুত ভাবে তাকায়।
রাজ আর কিছু না বলে আরোহির হোমওয়ার্কের খাতায় চোখ রাখে।
আরোহি একটু হাসির রেখা টেনে বলে,
– ডাক্তার দেখিয়েছেন?
রাজ ছোট্ট করে বলে,
– হুম।
আরোহি হাসি মুখ স্বাভাবিক করে বলে,
– শুধুই হুম? ধন্যবাদও দিলেন না। কিপ্টা লোক।
রাজ এবার এক গাল হেসে বলে,
– অসংখ্য ধন্যবাদ। হয়েছে? এবার আর একটা কথাও না বলে চুপচাপ পড়া বের করো।
আরোহিকে পড়ানো শেষ হলে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায় রাজ। গেট পেরিয়ে কিছুটা সামনে যেতেই দেখে তখন নির্জনের সাথে বসে থাকা ছেলেটা তার গ্যাং নিয়ে রাস্তার পাশে সিগারেট টানছে।
রাজকে দেখে ডাক দিলো ঐ ছেলেটা। রাজ সামনে এগিয়ে গেলে সে রাজের মুখের উপর ধোয়া ছেরে বলে,
– আরোহির টিচার হয়ে এই বাড়িতে এসেছো, টিচার হয়েই থাকো। এর চেয়ে বেশি কিছুকে প্রশ্রয় দিও না৷ আরোহি আর আমার বিয়ের কথা অনেক আগেই ফাইনাল করে রাখা হয়েছে। আরোহির কলেজ লাইফ শেষ হলেই বিয়েটা হয়ে যাবে। সো আরোহির দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও, চো’খ উপ’ড়ে ফেলবো তার। এটা তোমার জন্য ফাস্ট এবং লাষ্ট ওয়ার্নিং।
রাজ কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
– হটাৎ এমনটা বলছেন কেন? আরোহি শুধুই আমার স্টুডেন্ট।
ছেলেটা একটু হেসে বলে,
– গুড, এর চেয়ে বেশি কিছু যেন না হয়। তাই আগেই জানিয়ে রাখলাম। এবার যেতে পারো।
বলেই সিগারেটে আরেক টান দিলো ছেলেটা।
সেদিন রাজ পড়াতে না আসায় আরোহি মই নিয়ে দেওয়ালের উপর দিয়ে বার বার তাকানোর কথাটা কাজের মেয়েটা বলে দেয় তাকে। হয়তো রাজের জন্য আরোহির মনে কোনো ফিলিংস তৈরি হচ্ছে। তাই আগে থেকেই সাবধান করে দিলো রাজকে।
রাজ হাটা ধরলো চুপচাপ। এই শহরে সাধারণ ভাবে চলতে গেলে দু’টাকার দামও পাওয়া যায় না। উচু শ্রেনির লোকদের যত কদর। তারা যেমনই হোক না কেন।
,
,
বাসায় এসেই নিবিড় ফ্রেশ হয়ে ফরিদা আন্টির কাছে চলে গেলো। রাতের খাবার তৈরি হয়েছে কিনা দেখতে। দেখে এখনো রান্না চুলোয়। হয়তো আরো আধা ঘন্টার মতো লাগতে পারে।
ক্ষুধায় পেটের ভেতর একটা স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে তার। মনে হচ্ছে ২২ জন প্লেয়ার একটা বল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। আর দর্শক রা লাফাচ্ছে। এদিকে ক্লান্তিতে মাথাটাও ঝিমাচ্ছে খুব।
ফরিদা আন্টি এমন অবস্থা বুঝতে পেরে বলে,
– আর কিছুক্ষন ওয়েট করো আমি তারাতারি করছি।
তখনই কলিং বেল টা বেজে উঠে। নিবিড় ক্লান্ত হয়ে দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে বাইরে নীলা দাড়িয়ে আছে। হাতে একটা হটপট। মনে হয় খাওয়ার কিছুই হবে। এ যেন নিবিড়ের জন্য মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো।
পেছন থেকে ফরিদা আন্টি এগিয়ে এসে বলে,
– কে এসেছে?
তারপর দরজার সামনে এসে নীলাকে দেখে বলে,
– তুমি ঐ মেয়েটা না? পাশের বাসায় নতুন উঠোছো?
নীলা একটু হেসে বলে,
– জ্বি আন্টি।
ফরিদা আন্টি একটু গম্ভির গলায় বলে,
– এখন রাতের বেলায় কেন এসেছো? কোনো দরকার?
মেয়েটা এবার হাসি বাদ দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– আসলে আমি নিজর হাতে বিরিয়ানি রান্না করেছি। তাই আপনাদের জন্যও নিয়ে আসলাম।
ফরিদা আন্টি একটু সন্দেহ জনক ভাবে বলে,
– তোমাকে কি আমরা সেভাবে চিনি? তাহলে কেন কষ্ট করতে গেলে?
পাশ থেকে নিবিড় পোড়ন কেটে নীলার হাত থেকে হটপট টা টুপ করে নিয়ে বলে,
– আরে আন্টি আমি চিনি তাকে। নীলা ভেতরে গিয়ে বসো তুমি?
অনুমতি পেয়ে নীলা ভেতরে চলে গেলো। ফরিদা আন্টি নিবিড়কে ফিসফিস করে বলে,
– নতুন মেয়ে, ভালো করে চিনিও না। ওর থেকে এভাবে হুটহাট কিছু নেওয়া ঠিক হলো?
নিবিড় ঠোঁটের কোনে একটু হাসি ফুটিয়ে বলে,
– আমার ফ্রেন্ড সে। স্পেশালি আমার জন্যই রান্না করে এনেছে। এখন তোমাদের সন্দেহ হলে খেও না। আমি খেয়ে যা থাকে তা প্রয়োজন হলে ফেলে দিও।
বলেই হটপট টা নিয়ে কিচেনে চলে গেলো নিবিড়। ফরিদা আন্টির মাথায় এবার ঢুকলো কাহিনি টা। কোমরে হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
– আহা, এই ব্যাপার তাহলে?
এবার মেয়েটার সামনে গিয়ে বলে,
– নাম কি তোমার?
মেনেটা হেসে উত্তর দেয়,
– আন্টি নীলা।
ফরিদা আন্টি ভ্রু কুচকে বলে,
– আন্টি নীলা আবার কারো নাম হয় নাকি?
নীলা বলে,
– আন্টি আমার নাম হলো নীলা।
ফরিদা আন্টি হেসে বলে,
– বুঝেছি আমি। দুষ্টুমি করলাম। আচ্ছা আমি একটু আসি। চুলোয় রান্না বসিয়েছি তো। তুমি কিন্তু কোথাও যেও না। একসাথে খেয়ে তারপর যেও।
নীলা অমত করে বলে,
– না আন্টি। বাবা একটু পর বাসায় এসে আমায় খুজবে। রাতের বেলায় বাইরে এসেছি শুনলে বকবে সে। অন্য একদিন সময় করে এস সাথে খাবো। আর নিবিড়কে,,,
বাকি কথাটা ফরিদা আন্টি কেড়ে নিয়ে বললো,
– তাকে বলবো যে তুমি চলে গেছো। আর ফোন দিয়ে জানিয়ে দিতে খাবার কেমন হয়েছে? তাই তো?
এবার একটু লজ্জা ভঙ্গিতে হাসি দিলো নীলা। ফরিদা আন্টি হেসে বলে,
– বয়স এমনি এমনি বাড়েনি বুঝলে?
,
,
আজ রাতেও মাল ভর্তি তিন টা ট্রাক আটক করা হয়েছে। লোক গুলো গাড়ি রেখে পালাতে চাওয়ায় শুট করা হয়েছে তাদের। তিন জন মা’রা গেছে আর দুজনের পায়ে গুলি লেগেছে। তাই তারা জঙ্গলের মাঝে কাতরাচ্ছিলো। পরে তাদেরকেও আটক করা হয়েছে। আরেকজন পালিয়ে গেছে।
রুশান মৃত দেহ গুলো মর্গে পাঠিয়ে দিয়ে আহত দুজনকে হসপিটালে ভর্তি করে রেখেছে। ওদের দুজন থেকে হয়তো কিছুটা জানলেও জানা যেতে পারে। আর গাড়ি গুলোকে অনেক আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে। ঘড়ির কাটা তখন রাত ১ টা।
গাড়ি আটক হওয়া ও লোক ধরা পড়ার খবরটা মুহুর্তেই নিলয়ের কানে এসে যায়। নিলয় বাসায় একবার হেটে দেখে আজও রুশান বাসায় নেই। বাকিটা বুঝে নিয়েছে সে।
ছাদের কর্ণিশে এক পাশে ফোনটা রেখে সিগারেট মুখে দিলো নিলয়। রুশান তার গলায় এখন কাটার মতো বিধে আছে। না পারছে গিলতে, না পারছে ফেলতে।
বন্ধুত্বের টানে মা’রতেও পারছে না। আবার না মে’রেও উপায় নেই। মায়া দেখিয়ে নিজেদের বিপদই টেনে আনছে সে।
To be continue…………..