#ছদ্মবেশ,পর্ব ৩৮,৩৯
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৩৮
অন্ধকারে বেড়িয়ে গেলো নিলয়। হাতে একটা পি’স্তল তার। তার মাথায় রাগ এতোটাই ভর করে আছে যে ভালো খারাপ কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে।
একে একে তার সব লোক হারিয়ে যাচ্ছে। সাথে কোটি কোটি টাকার মাল। সব যেন চোখের পলকেই দিন দিন তলিয়ে যাচ্ছে।
আবেগ আর বিবেকের মাঝে তৈরি হওয়া যুদ্ধটা যেন ডিপ্রেশন ছারা আর কোনো দিকেই মোড় নিচ্ছে না।
তখন মুশলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। রাত তখন ৩ টা বাজে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকানোর সাথে মেঘের গর্জে উঠা শব্দটায় কেঁপে কেঁপে উঠছে চার পাশ টা।
নিলয়ের বৃষ্টি ভেজা চুল গুলো কপালের সাথে লেপটে ছিলো। হাটতে হাটতে ঐ গোপন জায়গাটায় চলে এলো যেখানে রুশান তার টিম নিয়ে প্লেন তৈরি করে।
বাড়িটার সামনে দাড়িয়ে কপালে লেপ্টে থাকা চুল গুলো হাতের আঙুল দিয়ে পেছন দিকে নিয়ে মুখ থেকে যতটা পারলো পানি সরিয়ে নিলো। এক টুকরো কাপড় দিয়ে পেচিয়ে নিলো মুখটা।
এখানের প্রত্যেরটা চাবি সে ডুপ্লিকেট করে নিয়েছে। যার কারণে এখন আর রুশানের থেকে চাবি নিয়ে এখানে আসতে হবে না।
বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত যেন বেড়েই চলছে ক্রমশ। আর সময় নষ্ট না করে ভেতরে চলে গেলো সে।
ওখানে থাকা কয়েকজন ঘুমাচ্ছে আর কয়েকজন নজর রাখছে চার পাশ টায়। একটা ভিম এর সাথে নিরবে দাড়িয়ে আছে নিলয়। জেগে থেকে ট্রল দেওয়া একজন তার সামনে দিয়ে ক্রস করতেই এক টানে গলাটা কে’টে ফেলে তার।
লোকটা কিছুক্ষন নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে থেকে ধপ করে পরে গেলো নিচে। সেই সাথে গলা ফেটে বেড়িয়ে আসা তাজা রক্ত চিকন ফাইফ দিয়ে পানি বের হওয়ার মতো করে ছিটকে অনেক টা দুরে গিয়ে পরছে। সেই সাথে শুরু হয়ে গেলো লোকটার ধাপড়ানো।
এভাবে একে একে জেগে থাকা অনেকজনকে এভাবে শুইয়ে দিলো সে। কয়েকজন টের পেয়ে গেলো যে অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটছে। তারা খুব সাবধানতার সাথে পিস্তল হাতে এক পা এক পা করে চার পাশটায় চোখ রেখে হাটছে।
বৃষ্টি ভেজা রাতের এমন শীতল পরিবেশও তাদের তাদেরকে শীতল করতে পারছে না। অস্থিরতায় কপাল ও গলা ভিজে গেলো ঘামে।
পেছন থেকে কেও একজন কাধে কয়েকবার আলতো করে টোকা দিলে চমকে পেছন ফিরে লোকটা। সাথে সাথেই গলায় বসে গেলো একটান। ফ্লোরে আছড়ে পরে গেলো সেও।
একজন রুশানকে বিষয় টা জানানোর জন্য ফোন বের করে কল করলো নিজের মাঝে অস্থিরতা ভাব নিয়ে।
রুশান ফোন রিসিভ করার পর আর কোনো কথা শুনতে পেলো না। লোকটা নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে। ফোনটা হাত থেকে পড়ে নিচে শব্দ ধ্বনি তৈরি করলো। র’ক্তের স্রোতের সাথে পেছন থেকে ভেষে উঠলো নিলয়ের কালো কাপর বাধা মুখ টা।
ঘুমিয়ে থাকা লোক গুলো হটাৎ ঘুম থেকে উঠে অবচেতন হয়ে আছে। তাদের অবচেতন মস্তিষ্ক বিষয়টা বুঝে নিতেও সময় নিচ্ছে কয়েক সেকেন্ড। তার আগেই সব শেষ।
ওদিকে রুশানের ভেতর একটা অস্থিরতা তৈরি হয়ে গেলো। ভোর রাত্রে এভাবে ফোন দেওয়া, তারপর ফোন পরে যাওয়ার শব্দ।
আরো কয়েকবার ফোন করলেও কেউ ফোন রিসিভ করলো না। ফ্লোরে পড়ে থাকা অবস্থায় রিং হয়েই চলছে।
সব আবার আগের মত বন্ধ করে চলে গেলো নিলয়। বাড়ির সামনে হেটে আসা পায়ের ছাপ গুলো আর নেই। অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার রাস্তায় পানি জমে গিয়েছে অনেকটা।
রুশান ঐ জায়গাটায় পৌছাতে প্রায় ভোর হয়ে এলো। ততক্ষনে রাস্তায় জমে থাকা পানি গুলো সরে গিয়েছে। চার পাশটায় তাকিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো সে। ছোট ঢাকনাটা খুলে ভেতরে চলে গেলো সে। সেখানে কারো সাড়া শব্দ কানে আসছে না তার।
আরেকটু ভেতরে গেলে দেখে একজনের লা’শ পড়ে আছে। তার র’ক্তে ভিজে আছে অনেকটা ফ্লোর। আর কিছুটা সামনে গেলে আরেকটা। রুশানের সাথে আসা তার সহকারি আজিম মাথায় হাত দিয়ে এক পাশে বসে গেলো।
কিন্তু রুশান চুপচাপ আরেকটু এগিয়ে গেলো। একে একে সব গুলো লা’শ গলা কা’টা অবস্থায় পরে আছে। তার মাঝে দু’এক জন হয়তো ঘুম ভাঙা অবচেতন অবস্থায় পাল্টা আক্রমন করতে চেয়েছিলো। কারণ তাদের হাতের কাছে বন্দুক পরে আছে। হয়তো গুলি চালানোর আগে তাদেরকে দুর থেকে মাথায় শুট করে ফেলে দিয়েছে।
সব তো ঠিকঠাক ভাবেই বন্ধ ছিলো। তাহলে ভেতরে এলো কে? আর কিভাবেই বা আসলো? তবে কেউ এসেছে এটা তো নিশ্চিত।
দরজায় বা কোথাও হয়তো কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট থাকতে পারে। যেটা চেক করলেই হয়তো বুঝা যাবে। তাই আর দেড়ি না করে কাকে যেন ফোন দেয় রুশান।
ওদিকে নিলয় হাত থেকে গ্লাব্স গুলো খুলে ব্রিজের উপর থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে নদীতে। যেগুলো ভেষে চলে গেলো পানির স্রোতের সাথে।ভোরের আলো তখন ফুটতে শুরু করলো। নিলয় ফোনটা বের করে রুশানের নাম্বারে কল দেয়।
রুশান একবার কেটে দিলেও পরের বার রিসিভ করলে নিলয় খুব হাবা হুবার মতো করে বলে,
– দোস্ত আমার ইংলিশ বুকটা খুজে পাচ্ছিনা। তুই কি নিয়েছিলি?
রুশান একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,
– তোকে পরে ফোন দিচ্ছি, এখন একটু ঝামেলায় আছি।
নিলয় আবার বলে,
– এই সকাল সকাল কি এমন ঝামেলায় পরলি আবার?
রুশান বিরক্তি নিয়ে নিলয়কে ম্যানেজ করতে বলে,
– তেমন কিছু না। ছোট একটা ঝামেলা। আর তোর বই ধরিনি আমি। নিবিড়, তুষার এরা কেউ নিয়েছে কি না দেখ।
বলেই ফোন কেটে দিলো রুশান। ফোন কেটে একটা ভিলেন হাসি দিয়ে বাসায় চলে যায় নিলয়। দেখে ফরিদা আন্টি নামাজ পড়ছে। বাকিরা এখনো উঠেনি। সকাল বেলার ঘুম টা হয় সবচেয়ে ক্লান্তিকর।
,
,
– বিরিয়ানি কেমন হয়েছে কিছু বললেন না তো।
ঐ ছাদ থেকে কথাটা বললো নীলা। যেন নিবিড়ের মুখে ভালো কিছু শুনার জন্য অস্থির হয়ে আছে তার মন।
নিবিড় ছাদের পাশে দুই হাতে ভর দিয়ে দাড়িয়ে বলে,
– গত কাল রাতে অনেক ক্লান্ত ছিলাম তো। সেই সাথে খিদেও ছিলো অনেক। তাই এতো কিছু খেয়াল করতে পারিনি। খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছি।
নিলা একটু ভ্রু কুচকালো। অবাক হয়ে বলে,
– তাই বলে কি একটুও বুঝতে পারেন নি?
নিবিড় হেসে বলে,
– বুঝতে যেহেতু পারিনি, কি আর করার? এক কাজ করো, তুমি সময় পেলে আবার রান্না করে নিয়ে আসিও। আমি টেস্ট করে তোমাকে স্বাদ টা কেমন হয়েছে তা বলে দিবো।
বলেই একটু হেসে দেয় নিবিড়। নীলা কোমরে দুই হাত রেখে ভ্রু-কুচকে বলে,
– মজা করছেন আমার সাথে?
নিবিড় সিরিয়াস লুক নিয়ে বলে,
– এই একধম ভ্রু কুচকাবে না।
নীলা আরেকটু ভ্রু-কুচকে বলে,
– কেন?
নিবিড় বলে,
– আবার কুচকালে? এভাবে চোখের দিকে চেয়ে ভ্রু-কুচকালে কেমন যেন বৌ বৌ লাগে।
কিছুটা লজ্জা পেলে নীলা জোড় করে হাসিটা থামিয়ে রেখে বলে,
– আচ্ছা ঠিক আছে আরেকদিন রান্না করে খাওয়াবো। তখন কিন্তু এসব নাটক করতে পারবেন না।
নিবিড় বলে,
– শুধু এক দিন খাওয়াবে? তার মানে কি, শুধু নিজের রান্নার স্বাদ জানার জন্য রান্না করে খাওয়াবে? তাহলে থাক, আমাকে খাওয়ানোর দরকার নেই। অন্য কাউকে খাইয়ে স্বাদ জেনে নিও।
নীলা কপালে হাত দিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই নিবিড়ের পাশে তুষার এসে দাড়ায়। নীলায় দিকে হাত নারিয়ে তুষার বলে,
– হাই, গুড মর্নিং। কেমন আছো।
বিরিয়ানি খাওয়ার সময় মুখে হটাৎ এলাচি পড়ার মতো অনুভুতি হলো নিবিড়ের। তুষার এই মুহুর্তে তার কাছে সেই এলাচির মতো।
নিবিড় কিছুটা আমতা আমতা করে তুষারের পিঠে হাত রেখে বলে,
– বন্ধু তুই এক কাজ কর, আন্টির নাস্তা তৈরি শেষ হয়েছে কিনা দেখে আয়।
তুষার হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলে,
– এই মাত্র দেখে আসলাম এখনো শেষ হয় নি।
আবার নীলার দিকে চেয়ে বলে,
– কেমন আছো বললে না তো। তোমার হাতের রান্না কিন্তু, ওফ কি বলবো। যাস্ট অসাধারণ।
নিবিড় আবার বলে,
– আচ্ছা বন্ধু ধন্যবাদ।
তুষার অবাক হয়ে বলে,
– প্রশংসা করলাম তার। তুই ধন্যবাদ জানাচ্ছিস কেন?
নিবিড় বলার মতো কিছু খুজে না পেয়ে বলে,
– দোস্ত একটু যা না। একটা দরকারি কথা বলছি আমরা।
– তো আমিও থাকি।
– বলছি না দরকারি। এখন যা পরে আসিস।
তুষার এবার নিবিড়ের দিকে চেয়ে বির বির করে বলে,
– এটাকে আমার ভালো লাগছিলো কিন্তু।
নিবিড় ও বির বির করে বলে,
– তোকে অন্য একটা খুজে দিবো। এখন যা৷
তুষার আবার বলে,
– এই কথা তো অনেকবার বললি। কই দিলিনা তো।
নিবিড় তাকে বুঝাতে বলে,
– এবার দিবো। এখন যা।
তুষার আবার নীলার দিকে চেয়ে বলে,
– আমার বন্ধুটা কিন্তু সেই লেভেলের মেয়ে পটাতে পারে। এর আগেও,,,,,,
বাকিটা বলার আগেই নিবিড় তার মুখ চেপে ধরে সিড়ির রুমের দিকে নিয়ে চলে যায়।
,
,
কলেজে যাওয়ার পর রাজ, নিবিড়, তুষার ও নিলয় এক পাশে বসে ছিলো। রুশান মাথায় এক রাশ টেনশন নিয়ে পরে আছে। এখনো বাসায় ফিরেনি।
নিলয় আর তুষার গেলো কেন্টিন থেকে কিছু নিয়ে আসতে। রাজ ও নিবিড় বসে ছিলো একসাথে।
সেই মুহুর্তে কয়েকটা বাইক এসে সাড়ি বেধে দাড়ায় তাদের সামনে। একটা ছেলে বাইক থেকে নেমে দ্রুত গতিতে এসে রাজের সামনে দাড়িয়ে বলে,
– তোর নাম কি রাজ।
তাদের কথার কিছু না বুঝলেও রাজ বলে,
– হ্যা আমি রাজ। কেন কি হয়েছে? আর আপনারাই বা কারা?
রাজকে আর কিছু না বলে ছেলেটা তার কলার চেপে ধরে বলে,
– বাইকে উঠ, তোর সাথে বুঝাপড়া আছে আমার।
পাশ থেকে নিবিড় বলে,
– এই ভাই আপনি হুট করে এসে গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?
একটা ছেলে নিবিড়কে ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দিয়ে রাজকে বাইকে তুলে নিলো। তুষার দুর থেকে বিষয়টা বুঝতে পেরে সামনে এগিয়ে এসে বলে,
– মগের মুল্লুক নাকি? হুট করে কলেজ থেকে কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া কি এতোই সোজা?
ছেলেটা তুষারের দিকে আঙুল তুলে বলে,
– তুই কে? বেশি উড়তে আসবি তো একধম হাত-পা ভে’ঙে এখানে ফেলে রাখবো। সর সামনে থেকে।
সেই মুহুর্তে নিলয় এসে কোনো কথা না বলে ছেলেটার বাইকের চাবি খুলে নিয়ে বলে,
– দেখি নিয়ে যা এবার।
To be continue…….
#ছদ্মবেশ (পর্ব ৩৯)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
নিলয় এসে কোনো কথা না বলে ছেলেটার বাইকের চাবি খুলে নিয়ে বলে,
– দেখি নিয়ে যা এবার।
নিলয়ের এমন দুঃসাহসিক আচরণে বাইকে থাকা ছেলেটা এবার সানগ্লাস খুলে নিলয়ের দিকে তাকায়। বাইক থেকে নেমে নিলয়ের মুখোমুখি দাড়ালে নিলয়ের পেছনে নিবিড় ও তুষার দুজনই এসে দাড়ায়।
একটা বড় ঝামেলা সৃষ্টি হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে অরিণ দ্রুত এসে নিলয় আর ছেলেটার মাঝখানে দাড়িয়ে বলে,
– ভাইয়া সবাই জড় হয়ে গেছে। কলেজ টাইমে এভাবে ঝামেলা তৈরি করা ঠিক হবে না।
এবার রাজ তাদের সামনে এগিয়ে এসে বলে,
– তার মানে তোমার ভাড়া করা গুন্ডা এরা?
মুহুর্তেই অরিণ রাজের দিকে আঙুল তুলে বলে,
– খবরদার বাজে বকবে না। আমার কাজিন হয় সে।
পাশ থেকে নিবিড় বলে,
– ওয়াও, কাজিন লাভস্টোরি। বাহ্ ভালোই তো চলছে। তাহলে রাজের সাথে নাটক করার কি দরকার ছিলো?
ছেলেটা এতক্ষন দাড়িয়ে সব শুনলেও এবার অরিণকে এক পাশে সরিয়ে রাজের কলার চেপে ধরে বলে,
– অরিণকে প্রপোজ করার সাহস পাস কোথায় তুই?
রাজ ছেলেটার হাতটা ধরে সরিয়ে নিয়ে বলে,
– কাউকে ভালোবাসলে তা বলতে আবার ভয়ের কোনো কারণ দেখছি না?
ছেলেটা আবার বলে,
– ওর দিকে চোখ তুলে তাকাবি তো চোখ উ’পড়ে ফেলবো একধম। কথাটা মাথায় রাখবি।
বলেই রাজকে ছেরে বাইকে গিয়ে বসলো ছেলেটা। নিলয়ের থেকে চাবি নিয়ে বলে,
– টার্গেটে পরে গেলি তুই। ক্লাস শেষে বাইরে আয়।
ছেলেগুলো চলে গেলে অরিণ রাজের সামনে গিয়ে বলে। আমার চাচাতো ভাই হয় সে। পলিটিক্স করে। আমি বলেছি দেখে বেচে গেলে আজ। নেক্সট টাইম কিছু করার আগে ভেবে চিন্তে করবে। লেভেল যতটুকু আছে ততটুকুতেই থাকার চেষ্টা করো। বেশি উড়তে যেও না।
নিবিড়ের ক্লাসে মন বসছে না আজ। মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। বাইরে গেলে আবার না জানি কোন ঝামেলায় পড়তে হয়। কেন যে অরিণকে প্রপোজ করার বুদ্ধিটা সে রাজকে দিতে গেলো?
এমনিতেই এসব ঝামেলা নিবিড়ের পছন্দ নয়। কারো সাথে ঝামেলা করেই বা কি লাভ? যত দিন বেচে আছি সবার সাথে মিলে মিশেই বাচবো। এই ধরণাটা নিবিড়ের।
তবুও সব ঝামেলা তাদের উপরই এসে পড়ে। একবার তুষারের ঝামেলা, আরেকবার রাজের ঝামেলা। ঝামেলার শেষ নেই। বেড় হয়ে না হয় ছেলে গুলোকে বুঝিয়ে বলে কোনো ভাবে মিটমাট করার চেষ্টা করতে হবে।
কিন্তু গেট পেড়িয়ে বাইরে এসে তাদের কাউকেই চোখে পরলো না তার। রাজের মুখেও দেখছি বিষয়টা নিয়ে কোনো চিন্তার ছাপ নেই। নিলয়ও স্বাভাবিক।
তাহলে কি অজথাই বিষয়টা নিয়ে এতোটা ভেবেছিলো সে?
,
,
ওদিকে রুশানের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তবে কেউ একজন যে তার সাথে সাপ-লুডু খেলছে বিষয় টা বুঝতে বাকি রইলো না তার।
সেদিন ঐ লোকটার গায়ে বিষ প্রয়োগ করে তাকে হত্যা করা, আর এখন তার এতগুলো লোক কে এভাবে শেষ করে দেওয়া।
নিশ্চই এমন কেও আছে, যে ঐ গোপন জায়গাটার কথা জানে আর সেখানে তার আশা যাওয়া আছে।
তবে সব কিছুই তো ঠিকঠাক ভাবে থাকে। তাহলে সে আসেই বা কি করে, আর যায় বা কি করে? দরজার তালাই না ভেঙে খোলে কি করে। আর খুললেও কোথাও কারো আঙুলের ছাপ নেই। অদ্ভুত লাগছে সব। এত কিছু আঙালে রেখে এসব করেই বা কি করে?
,
,
আজ আরোহিকে পড়াতে গেলে দেখে আরোহির মনটা খুবই ফুরফুরে। দেখে মনে হচ্ছে কোনো একটা বিষয় নিয়ে দারুন মুডে আছে। খুশির পরিমান এতোটাই যে পড়ায় মনই বসছেনা তার।
রাজ বিষয়টা জানতে চাইলে আরোহি বলে,
– জানেন, এবার মা আর বাবার মাঝে কোনো ঝগড়া হয় নি। আগে দেখতাম কেমন মুখ ফিরিয়ে থাকতো। এখন দেখছি মা নিজে গিয়ে গিয়ে বাবার সাথে কথা বলছে। দেখে মনেই হচ্ছে না একজন আরোকজনের সাথে রাগ করে ছিলো। আর বাবাকে আমি অজথাই খারাপ ভাবতাম। বাবাও এখন আমাকে কত আদর করে। মাকেও খুব বালোবাসে। জানেন আগামি কাল আমাকে আর মাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে বাবা। কত বছর পর যে বাবা এভাবে আমাদের নিয়ে সময় কাটাচ্ছে তা আমার নিজেরই মনে পরছে না।
আরোহির কথা গুলো বলাতে খুব আনন্দ কাজ করলেও রাজের মাথায় বিষয় টা স্বাভাবিক ভাবে ঢুকছে না। হুট করে এতো ভক্তি আসার কারণ কি?
রাজও একটু উৎসাহ দেখিয়ে বলে,
– কোথায় নিয়ে যাবে তোমাদের?
আরোহি হেসে বলে,
– কক্সবাজার যাবো। অনেক দিন পর এমন খোলামেলা সমুদ্রে যেতে পারবো। বাবা ছোট বেলায় একবার কাশ্মির নিয়ে গিয়েছিলো। এর পর আর কোথাও যাওয়ার সুজুগ হয় নি। আর এখন কক্সবাজার।
রাজ বই হাতে নিয়ে বলে,
– সমুদ্র ভালো লাগে?
আরোহি খুব তৃপ্তিদায়ক ভাবে বলে,
– হুম অনেক ভালো লাগে। ভেবেছিলাম একদিন লুকিয়ে আপনার সাথে যাবো।
বলেই খিকখিক করে হেসে দেয় আরোহি। রাজ ভ্রু-কুচকে বলে,
– আমার সাথে বলতে?
আরোহি রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– আপনি ছারা তো আমার কোনো বন্ধু নেই। আর আপনার সাথে কথা বলতে তো কেও নিষেধ করে না। তাই আপনি নিয়ে গেলেও কেও নিষেধ করতো না।
রাজ কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
– আমি তোমার কোন দিক দিয়ে বন্ধু লাগি?
আরোহি সোজা ভাবে বলে দেয়,
– আপনার কাছে আমি হয়তো শুধুই স্টুডেন্ট। আর আমার কাছে আপনি স্যার ও বন্ধু দুই টাই।
,
,
রাত্রি জুড়ে ফেসবুকে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে তুষার। হুট করে একটা মেয়ের আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট আসলো।
তুষার আনন্দিতো চোখে চেয়ে মেসেজ করতে গিয়েই এর আগের সুমাইয়া ইসলামের কথা মনে পরলো তার। নিলয় যেই বোকাটাই না বানিয়েছিলো তখন। এখন আর এসব ফাদে পা দিচ্ছে না সে। ঝুলেই থাকুক রিকুয়েষ্ট। তার চেয়ে বরং ফেসবুকে ভিডিও দেখে সময় পার করাই ভালো।
গল্প করে সময় কাটাতে রুশানের কাছে গেলেও দেখে রিমা নামের কোন মেয়ের সাথে কথা বলে। আবার ইদানিং নিবিড়ের কাছে গেলেও দেখে নীলার সাথে কথা বলছে।
চার দিকে সবার গার্লফ্রেন্ড আছে। নেই শুধু তার। রাতে ফেসবুকিং করেই সময় পাস করা ছারা আর কিছু করার নেই।
রাজের কাছে বুদ্ধি চাইতে গেলেও রাজ বুদ্ধি দেয়,
‘শহরের প্রতিটা অলিতে-গলিতে, গাছে, দেওয়ালে একটা করো পোষ্টার লাগাতে। যেখানে তুষারের বড় করে একটা ছবি ছাপিয়ে নিচে লেখা থাকবে, জরুরি ভিত্তিতে একজন গার্লফ্রেন্ড আবশ্যক।’
সব চেয়ে ভদ্র ছেলেটা, এই রাজও এখন তাকে নিয়ে মজা নেয়।
,
,
পরদিন আরোহি তার বাবা মায়ের সাথে চলে গেলো কক্সবাজার। জায়গাটা আরোহিই সিলেক্ট করেছে।
এদিকে প্রতিটা মুহুর্ত রাজ তাদের উপর নজর রেখেছিলো ছদ্মবেশে। ওখানে গিয়ে একটা রিসোর্টে উঠলো তারা। রাজ দিয়ে সেই রিসোর্টের মালিয়ের সাথে কথা বলে রাজের কিছু লোককে সেখানে ঢুকিয়ে দেয়। চুক্তি অনুযায়ি যত দিন আরোহিরা থাকে, একদিন হোক আর দুই দিন হোক বা তিন দিন হোক যেই কয়দিন থাকে। সেই কয়দিয় রাজের দেওয়া লোক গুলোই এখানে ডিউটি করবে। আগে যারা ছিলো তারা ছুটি কাটাবে এই দুই’এক দিন।
রাজ সেখানে সবাইকে বলে দিলো সব ঠিকঠাক ভাবেই করতে। কেউ যেন কোনো ভাবে বুঝতে না পারে। আর বিশেষ করে আরোহি ও তার মায়ের উপর নজর রাখতে। তাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। সন্দেহ জনক কিছু চোখে পরলেই যেন রাজকে ইনফর্ম করে তারা। কারণ নির্জনের অতি ভক্তি কিছুতেই স্বাভাবিক মনে করার মতো না।
To be continue………