ছদ্মবেশ,পর্ব ৪২,৪৩

0
958

#ছদ্মবেশ,পর্ব ৪২,৪৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৪২

চোখে মুখে মা’রের দাগ নিয়ে রাস্তার এক পাশে দাড়িয়ে আছে তুষার। রাস্তায় সাথীর পিছু নিয়ে বার বার সরি বলায় বিরক্তিবোধ করছিলো সাথী। তখন কয়েকজন ছেলে বিষয়টাকে ইভ’তেজিং মনে করে সামনে এগিয়ে আসে।
তুষার তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– ভাই আমি কোনো ইভতেজার না। সে আমার গার্লফ্রেন্ড হয়।
তখন একটা ছেলে সাথীকে ডেকে বলে,
– আপু, আপনি চেনেন তাকে?
সাথী বিরক্তি নিয়ে বলে,
– না ভাই, তখন থেকে আমাকে বিরক্ত করে চলছে।
বলেই সেখান থেকে হাটা ধরলো সাথী। পেছন থেকে তুষার কয়েকবার ডাক দিলেও তাকালো না সে। এদিকে ছেলে গুলো তুষারকে চ’র থা’প্পর ঘু’সি মে’রে টাকা ফোন সব নিয়ে নিয়েছে তুষারের থেকে।

মুখে মা’রের দাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে তুষারের। এক সাথে চার পাঁচটা ছেলের সাথে একা ঝামেলা করেও লাভ নেই। উল্টো মা’ইর কয়েকটা আরো বেশি পড়বে।

রাস্তার পাশের একটা দোকানদার থেকে একটা ফোন নিয়ে নিবিড়কে ফোন দেয় সে। রাস্তার নাম বলে বিষয়টা জানায় যে কয়েকটা ছেলে তাকে মে’রে টাকা ফোন সব নিয়ে নিয়েছে।
মেয়ে ঘটিত বিষয় নিয়ে মা’র খাওয়াটা হাস্যকর হলেও নিবিড়ের মাঝে এই মুহুর্তে হাস্যকর মনে হচ্ছে না। বন্ধুকে মে’রেছে মানে বিষয়টা খুবই সিরিয়াস।

নিলয় তখন বসে বসে ফোন টিপছিলো আর রুশান দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। এই কয়দিন অনেক ধকল গিয়েছে তার উপর দিয়ে।
নিলয়ের সামনে গিয়ে বিষয়টা জানায় নিবিড়। নিলয় ফোন পকেটে নিয়ে জুতা পড়ে নিয়ে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতেই নিবিড় বলে,
– রুশানকেও ডাকবো কি?
নিলয় রুশানের দিকে একবার চেয়ে বলে,
– বাসায় ফিরার পর বলছিলো প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে। এরপর খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। হয়তো ক্লান্ত। ঘুমাক সে, ডাকার দরকার নেই। ঘুমের ডিস্টার্ব হবে।

বলেই নিবিড়কে সাথে নিয়ে বেড়িয়ে যায় নিলয়। প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর সেখানে পৌছে গেলো তারা। দেখে তুষার গাছের নিচে একটা বেঞ্চিতে বসে আছে চুপচাপ।
তুষার কে নিয়ে কিছুটা এগিয়ে গেলে দেখে কয়েকটা ছেলে ক্যারাম খেলছে। তুষার চোখের ইশারায় দেখিয়ে দেয়, ঐ ছেলেগুলো।

নিলয় আর কিছু না বলে চুপচাপ সেখানে এগিয়ে গিয়ে একটা ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ক্যারামের স্ট্রাইকার টা হাতে নিয়ে চুপচাপ কয়েকটা গুটি পকেট করে শান্ত বাবে বলে,
– আমি দেখিনি একটু আগে এখানে কি হয়েছে। আর শুনতেও চাইনা। তুষারকে মে’রেছে কে?
ওখানের একটা ছেলে নিলয়ের দিকে চেয়ে বলে,
– তুই কে? আর তোর কাছে কেন কৈফিয়ত দিয়ে যাবো?
নিলয় এবার ছেলেটার দিকে চেয়ে বলে,
– আমার বন্ধুকে মে’রেছিস তাই আমার কাছে কৈফিয়ত দিবি।
ঐ ছেলেটা এবার হাসতে হাসতে বলে,
– সালা প্রতিশোধ নিতে আসছে।

বলেই নিলয়ের দিকে এগিয়ে আসলে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে ঠাস করে একটা চ’র বসিয়ে দেয় নিলয়। আঘাত টা এতোটাই জোড়ে ছিলো যে, ছেলেটা টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে ক্যারামের বোর্ড টা নিয়ে নিচে পরে যায়।
তা দেখো ওখানের আরেকটা ছেলে এগিয়ে এলে তাকেও সেম ভাবে আঘাত করে।
কিছুক্ষনের জন্য যেন শুধু ঠাস ঠাস শব্দই কানে এলো সবার। ছেলে গুলোর মাঝে চারজনই একেকটা চর খেয়ে নিচে পড়ে আছে।
গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে নিলয়, তুষার, নিবিড়ের দিকে। কিছুক্ষনের জন্য যেন দুই কান দিয়ে কিছুই শুনছে না তারা। শুধু শো শো করে শব্দ শুনছে কান দিয়ে।
,
,
মাগরিবের আজান দিলো একটু আগে। এখনো ঘুমিয়ে আছে রুশান। পাশে ফোনের রিংটোনে ঘুমটা কিচুটা হালকা হলো তার। ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় হাত দিয়ে চার পাশে ফোনটা খুজে হাতে পেয়ে রিসিভ করে কানে তুলে আবার শুয়ে রইলো সে। ওপাশ থেকে রিমা বলে,
– কোথায় থাকেন হুম? কতক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছি।
রুশান ঘুমু ঘুমু চোখে বলে,
– ঘুমিয়ে ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি।
রিমা বিষয়টা হজম করে নিয়ে বলে,
– পরশু থেকে আমাদের এইচ’এস’সি এক্সাম শুরু জানেন তো।
রুশান ছোট করে বলে,
– হুম,,,
রিমা বলে,
– আসবেন না?
রুশান এবার শোয়া থেকে উঠে বসে। মাথাটা এখনো ভাড় লাগছে। একটা হাত তুলে বলে,
– আমি গিয়ে কি করবো?
রিমা একটু রাগি গলায় বলে,
– কি করবেন মানে? আমাকে সিট নাম্বার খুজে দিবেন।
-রামিম ভাইয়া কোথায়? সে খুজে দিবে সিট নাম্বার।
– ভাইয়ার তো অফিস আছে। সে সকাল সকাল বেড়িয়ে যায়। আর আমার একটা ছোট্ট ইচ্ছা আছে।
রুশান ভ্রু-কুচকে বলে,
– সেটা আবার কি?
রিমা হেসে বলে,
– পরিক্ষার প্রথম দিন আমি আপনার সাথে হলে যাবো। একটা বাইকে করে হিরো-হিরোইনের মতো স্লো-মোশনে কলেজে এন্ট্রি নিবো আমরা।
রুশান বলে,
– এক্সাম দিতে যাবি, নাকি শুটিং করতে যাবি?
রিমা একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,
– আরে শুনেন পুরো কথা। এরপর আপনি আমাকে সিট নাম্বার খুজে দিবেন। এর পর পরিক্ষা শুরু হলে আপনি বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করবেন। এর পর আমার এক্সাম শেষ হলে আপনি আবার আমাকে নিয়ে বাসায় চলে আসবেন।
রুশানও এবার তার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,
– তারপর সবাই ভাববে রিমাকে তার বয়ফ্রেন্ড কত কেয়ার করে। এটা নিয়ে বাকি বান্ধবিদের সামনে একটা ভাবের উপর থাকবেন তাই তো?
রিমা একটা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলে,
– হুম,,,
রুশানও এবার তার পাকা ধানে মই দেওয়ার মতো করে বলে,
– কিন্তু এটা নিয়ে এতো ভাব নেওয়ার কিছু নেই। বাকিরা ভাববে ভাই তার বোনকে পরিক্ষার হলে নিয়ে এসেছে।
রিমা এবার কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
– মানে কি, আমার একটা রোমান্টিক মুডে বা’হাত না ঢুকালে কি আপনার শান্তি হয় না?

রুশান আবার একটা হাই তুলে বলে,
– ভাল্লাগে,,,,
রিমা এবার বিষয়টা বাদ দিয়ে বলে,
– আসবেন কিনা বলেন,,,,
রুশান বলে,
– দেখি আসতে পারি কি না। এখন পড়া বাদ দিকে এতো পক পক করছিস কেন? ফোন রেখে পড়তে বস।
বলেই ফোন রেখে দেয় রুশান। রিমা কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করে নিজের মাঝে ‘ধ্যাৎ’ সূচক একটা শব্দ উচ্চারণ করে বসে থাকে পড়ার টেবিলে। মাকে রুমের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ফোনটা এক পাশে ছুড়ে পেলে দিয়ে বই কুলে পড়তে শুরু করলো সে। যেন এক দিনেই বিদ্যাসাগর হয়ে যাবে।
,
,
নির্জন আর নিলয় বসে আছে এক সাথে। নিলয় কম্পিউটারে নানান ডকুমেন্টস ঘাটাঘাটি করছে। আর পাশে বসে তা দেখে যাচ্ছে নির্জন।
ঘাটতে ঘাটতে নির্জ একটা বিষয় লক্ষ করে নিলয়কে বলে,
– কোম্পানি গুলো ভিন্ন হলেও সব জায়গায় একই লোকের সাইন। আর তা হলো ইকবাল সানি।
নিলয়ও স্কিনে চোখ রেখে বলে,
– হ্যা সেটাই তো দেখছি।
নির্জন একটু ভাবান্তর হয়ে বলে,
– এই ইকবাল সানি কয়টা কোম্পানি পরিচালনা করে?
নিলয় আরো কিছুক্ষন ঘাটাঘাটি করে বলে,
– আরেকটা জিনিস লক্ষ করেছেন?
নির্জন নিলয়ের দিকে চেয়ে বলে,
– না, কি সেটা?
নিলয় স্কিনের দিকে চেয়ে থাকা অবস্থায় বলে,
– এই ইকবাল সানির নামে যা যা পরিচালনা হচ্ছে তা কিছুই ইকবাল সানির নয়। রাজ চৌধুরি নামের কোনো ব্যাক্তির হয়ে সব জায়গায় কাজ করছে এই ইকবাল সানি।
নির্জন অবাক হয়ে বলে,
– এই রাজ চৌধুরিটা আবার কে?
নিলয় এবার কম্পিউটার রেখে নির্জনের দিকে চেয়ে বলে,
– ইকবাল সানিকে দিয়ে সব করাচ্ছে সে। নিজে কখনো সামনে আসেনি। হয়তো বা দেশের বাইরে থাকে, নয়তো নিজের পরিচয় হাইড রেখে পরিচালনা করে সব। তবে তার সব কোম্পানির প্রোডাক্টই এখন মার্কেট জুড়ে।
নির্জন এবার হেলান দিয়ে বসে বলে,
– কি এমন লোক যার পরিচয় এখনো আমাদের হাতেই আসেনি?

নিলয় হেসে বলে,
– আসল মালিককে খুজে পাচ্ছিনা বলেই তো কোম্পানি গুলো এমন তৈ তৈ করে উড়ছে। ইকবাল সানিকে কিছু করেও লাভ নেই। কারণ এসব কিছুই তার না। আবার এখানে আরেকটা পয়েন্ট আছে। ইকবাল সানি বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন লোক দিয়ে পরিচালনা করায়। তারা জানে তারা ইকবাল সানির হয়ে কাজ করছে। বাট ইকবাল সানি নিজেও কাজ করছে অন্য কারো আন্ডারে।

নির্জন এবার একটু ভাবান্তর হয়ে বলে,
– রাজ চৌধুরি কে? আর কোথায় থাকে? এসব তথ্য কালেক্ট করার চেষ্টা করো। পারলে তার সাথে কন্টাক্ট করারও ট্রাই করো। কোনো ভাবে কোনো খোজ পাওয়া যায় কি না দেখো।
নিলয় এবার উঠে বলে,
– আপাতত ইকবাল সানির সাথে কন্টাক্ট করছি আমি। দেখি তার থেকে কিছু জানা যায় কিনা।
,
,
পরদিন ইকবাল সানির সাথে একাকি মিটিং এর ব্যাবস্থা করলো নিলয়। যদিও এক দিনের মাঝে এটা করা সহজ কাজ ছিলো না৷ বাট নির্জনের কাছেও এসব অসাধ্য নয়।

ইকবাল সানির কিছু আলোচনা শেষ হলে নিলয় চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে,
– আমি মুলত এই সব কোম্পানির মালিকের সাথে কন্টাক্ট করতে চাইছি। যার কারণে আপনার কাছে আসা।
ইকবার সানি একটু মুচকি হেসে বলে,
– সরি মি. নিলয়। আপনি হয়তো একটা কথা জানেন না যে, আমাদের স্যার মানে রাজ চৌধুরি শুধু তাদের সাথেই দেখা করে, যাদের সাথে সে নিজে দেখা করতে চায়। তাই এই ক্ষেত্রে আমি কিছুই করতে পারছি না। তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা ছারা কিছুই করার নেই আমার।

To be continue………….

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৪৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– স্যরি মি. নিলয়। আপনি হয়তো একটা কথা জানেন না যে, আমাদের স্যার মানে রাজ চৌধুরি শুধু তাদের সাথেই দেখা করে, যাদের সাথে সে নিজে দেখা করতে চায়। তাই এই ক্ষেত্রে আমি কিছুই করতে পারছি না। তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা ছারা কিছুই করার নেই আমার।
কথাটা বলেই একটু মুচকি হাসলো ইকবাল সানি।
নিলয় চেয়ারে হেলান দিয়ে থাকা অবস্থায় স্থির হয়ে চেয়ে রইলো ইকবাল সানির দিকে। ভালোই বুঝতে পারছে যে কথা বারিয়ে লাভ নেই। এই রাজ চৌধুরি নামক ব্যাক্তিটার কাছে পৌছানো টা যতটা সহজ ভেবেছিলো বিষয়টা এতোটাও সহজ না।
তাই আর সময় নষ্ট না করে উঠে দাড়ায় নিলয়। ইকবাল সানির সাথে হেন্ডসেক করে বিদায় নিয়ে একটু হাসির রেখা টেনে বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে। পাশে একটা ছেলে। ছেলেটা প্রায় সময়ই নিলয়ের সাথে চলাফেরা করে। নাম তার প্রিন্স পিন্টু। নিলয়ের অবর্তমানে টুকটাক বিষয় গুলো সেই দেখাশোনা করে।
নিলয় যখন খুব জটিল একটা বিপদে পরেছিলো তখন এই পিন্টুর উসিলায় বেচেছিলো সে। তখন থেকেই নিজের সাথে রেখে দেয় এই পিন্টুকে। বলতে গেলে নিলয়ের খুব বিশ্বস্থ এই ছেলে। তবে এসব পথে বিশ্বস্ত মানুষ গুলোই পেছন থেকে ছু’রি বসাতে দ্বিতীয় বার ভাবে না। এসব রাস্তায় প্রতিটা মোড়ে মুড়ে সাইনবোর্ডের শব্দ গুলো হলো, স্মা’গলিং, মা’র্ডার, বিশ্বাসঘাতকতা, নিজের মেধা খাটিয়ে বড় হওয়া। উদ্যেশ্য একটাই, ক্ষমতার লোভ।

গাড়ির সামনে আসলে পিন্টু দৌড়ে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে ভেতরে বসে নিলয়। তারপর পিন্টু অপর পাশে গিয়ে ড্রাইবিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
,
,
ওদিকে আজ বাসায় ফিরলো আরোহিরা। এই দু’এক দিন আরোহির আশে পাশেই ছিলো রাজ। তবে তেমন কোনো সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি তার। নির্জন কি তাহলে শুধুই ফ্যামিলি নিয়ে সময় কাটাতে গিয়েছিলো? নাকি ভেতর ভেতর কোনো চাল চালছে? নাকি ফ্যামিলির কাছে নতুন করে ভালো সাজতে এসব করছে? বিষয়টা মাথায় ঢুকছে না রাজের।

আর সেখেনে কচি সেজে আরোহির সাথে যেভাবে কথা হয়েছে আর আরোহিও রাজকে নিয়ে যা যা বলেছে তা মোটেও স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না রাজের। আরোহি তাকে পছন্দ করে বাট সেটা সে নিজেও বুঝতে পারে না। আর আরোহির বিয়েও অন্য জায়গায় ঠিক করা। আর মেয়েটাও একটু বাচ্চা স্বভাবের। হয়তো এসব মাত্রই আবেগ। তার বয়সের দোষ এটা। আর আরোহির এসব বাচ্চামো দেখতে দেখতে পড়ানো শেষে বাসায় আসার পরও আরোহির বাচ্চামু গুলো চোখের সামনে ভেষে উঠে। বিরক্তির মাঝেও এক চিলতে ভালো লাগা এসে হাতছানি দিয়ে যায় তাকে। হয়তো এটা নতুন করে একটা সাইকোলজিকাল প্রব্লেম দেখা দিয়েছে।
যার জন্য প্রয়োজন আরোহি বেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ার আগেই এখান থেকে চলে যাওয়া। বাট তার লক্ষের কিছুটা কাছাকাছিই চলে এসেছে বলে টিউশনিটাও বাদ দিতে পারছে না। যাই হোক আরোহির এসব আবেগ কে একধমই পাত্তা দেওয়া টা ঠিক হবে না। এসব বিষয় ইগনোর করে পড়ানোর বিষয় টা খেয়াল রাখতে হবে।

ওদিকি রাজ আজ পড়াতে আসলে তাকে ওখানের সব কিছু বলার জন্য অস্থির হয়ে আছে আরোহি। মনে হচ্ছে তার সুন্দর মুহুর্ত গুলো রাজের সাথে শেয়ার না করা অব্দি শান্তি হবে না সে।

রাজ পড়াতে আসার পরই বই হাতে নিয়ে বলে,
– কয়েকদিন ছুটি পেয়েছো, এখন চুপচাপ পড়ায় মন দিবে। কোনো ফাকি দেওয়ার চলবে না।
আরোহি তবুও উৎসাহ নিয়ে রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– জানেন সেখানে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেছে।
রাজ বইয়ের দিকে চেয়ে বলে,
– আগেই বলেছি পড়ায় ফাকি দেওয়ার চেষ্টা করবে না।
আরোহি এবার জেদ ধরে বলে,
– আমার কথা না শুনলে আমি পড়বো না।
রাজ একটু রাগি লুক নিয়ে বলে,
– না পড়লে কানের নিচে খাবে একটা।
আরোহি আবার বলে,
– মা’রলে আম্মুকে গিয়ে বলে দিবো।

একটু বিরক্তিবোধ করলো রাজ। এতো বড় ময়েকে মে’রেছে তা আবার গিয়ে আম্মুকে বলে দেওয়া। বিষয়টা অবশ্যই লজ্জা জনক। যদিও আরোহিকে ভয় দেখানোর জন্যই এটা বলেছিলো।
রাজ ভেবে পায় না, আরোহি কি সত্যিই এমন? নাকি শুধু তার সাথেই এমন বাচ্চামু করে? কই অন্য জায়গায় তো আরোহির কথাবার্তা গুলো বড় মেয়েদের মতোই থাকে? তাহলে তার সামনেই বা কেন এমন অজথা বাচ্চামু করে?

রাজ যদিও কক্সবাজারে পুরোটা সময়ই আরোহির সাথে ছিলো, তবুও একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,
– আচ্ছা বলো দেখি কি এমন অদ্ভুত কান্ড।
আরোহি এবার একগাল হেসে বলে,
– ওখানে আমার রুমে যেই লোকটা সার্ভিস দিতো, সে দেখতে একধম আপনার মত ছিলো। আমি তো প্রথমে কনফিউশান এ পড়ে গিয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারলাম লোকটা আপনার মতো দেখতে। একটু অদ্ভুত টাইপের লোকটা। সারাক্ষন আমার পিছে লেগে থাকতো। আমি যেখানে যেতাম, সেও সেখানে যেতো। আমার মনে হয়, লোকটা আমাকে পছন্দ করে ফেলেছিলো। তাই এভাবে আমার পেছন পেছন ঘুরতো।

আরোহি কথাটা বলা মাত্রই রাজের বিষম উঠে গেলো। কয়েকটা কাশি দিলে আরোহি পানির গ্লাস টা এগিয়ে দেয় তার দিকে। রাজ পানি খেয়ে শান্ত হয়ে আরোহির দিকে তাকায়। কি বলে এই মেয়ে, তাকে পেছনে প্রেম করার জন্য ঘুরতাম আমি?
তবুও বিষয় টা হজম করে নিলো রাজ। আরোহির মুখে পরের কাহিনি টা শুনার জন্য আগ্রহ জন্মালো এবার। তাই নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,
– হুম তারপর?
আরোহি আবার বলে,
– লোকটা এতো পিছন পিছন ঘুরলো কিন্তু লোকটাকে ছ্যাকা দিয়ে চলে আসলাম আমি। হিহিহি,,,,,,
রাজ এক গাল হেসে বলে,
– হুম ভালো করেছো।
আরোহি আবার বলে,
– আরেকটা অদ্ভুত বিষয় কি জানেন? তার নাম কচি। হা হা হা,, কচি কারো নাম হয় নাকি?
রাজ এবার সৌজন্য মুলক একটা হাসি দিয়ে বলে,
– সুন্দর নাম। তোমার কচি কাচি শেষ হয়েছে? তাহলে এবার আমরা পড়ায় আসি?
আরোহি এবার রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– আপনার হাসি পায় নি? আপনি এমন কেন? গম্ভির হয়ে থাকেন। একটু গাল টেনে হেসে আবার গম্ভির হয়ে যান। আমার মত মন খুলে হাসতে পারেন না? হাসলে মন ফ্রেশ থাকে।
রাজ বলে,
– তোমার মতো এমন করে পাগলের ন্যায় হাসতে অভ্যস্ত নই আমি।
আরোহি রাজের দিকে চেয়ে হাস্যজ্জল মুখে বলে,
– তাহলে কাতুকুতু দিলে হাসবেন?
রাজ এবার চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে মুখটা উপরের দিকে করে দুই হাত মুখে দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
– ইয়া আল্লাহ্ কার পাল্লায় পড়লাম আমি। অল্প দিনে পাগল করে ছাড়বে।
,
,
আজ রিমার প্রথম এক্সাম। খুব ভোরে উঠে পড়তে বসেছে সে। গত কাল রাতে রুশান ফোন দিয়ে জানালো, আসতে পারবে না সে। তা নিয়ে ভিষণ মন খারাপ হলো রিমার। কারণ তার একটা প্লেন ছিলো প্রথম দিন রুশানের সাথে পরিক্ষার হলে যাওয়া। রুশানকে তার ইচ্ছের কথা জানালেও রুশান বললো আসতে পারবে না। মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তা ছারা আরো একটা প্লেন ছিলো, রুশানের সাথে কলেজ গেট দিয়ে ঢুকার সময় একটা স্লো-মোশন ভিডিও বানানো। তার বান্ধবিকে বলেও রেখেছে যেন ক্যামরা নিয়ে রেডি থাকে। প্রথম দিন পরিক্ষা শেষে ছবিও তুলতে হবে। ক্যামরাটা রুশানের কাছে রেখেই হলে চলে যাবে তারা।
কিন্তু এতো কিছু প্লেন করে রাখলেও কিছুই হলো না।

এক্সামের সময় রাত জেগে পড়াটা সবচেয়ে বড় বোকামি। উত্তম হলো ৯টা থেকে ১০ টার মাঝে ঘুমিয়ে যাওয়া। আর ভোড় বেলা উঠে পড়া। কারণ ভোর বেলার পড়াটা মনে থাকে সবটা। আর রাত জেগে পড়লে পরিক্ষার হলে যাওয়ার পর সব এলোমেলো লাগে সব। জানা প্রশ্নও খুব কঠিন হয়ে পড়ে।

তাই ভোর ৪ টায় উঠে নামাজ শেষে পড়তে বসলো রিমা। সাড়ে ৭ টা অব্দি পুরোনো পড়া সব একবার রিভাইস দিয়ে নিলো। এরপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা শেষে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে রিমা। রামিম নাস্তা করে অফিসের জন্য রওনা দিচ্ছে। রিমার মা ডেকে বলে, রিমাকে যেনো কলেজের সামনে নামিয়ে সিট খুজে বসিয়ে দিয়ে তারপর অফিসে যায়।
কিন্তু রামিমের ইদানিং কাজের চাপ বেশি থাকায় সময় মত পৌছাতে হবে তাকে। সে হয়তো বড়জোড় রিমাকে গেটের সামনে নামিয়ে দিতে পারবে।

রিমার মা রিমার কাছে গিয়ে বলে,
– রুশান কি বলেছে? তোর এক্সাম জেনেও যে আসলো না।
রিমা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
– আমার প্রতি আগের থেকে গুরুত্ব কমে গেছে তার। এখন শুধু ব্যস্ততা দেখিয়ে বেড়ায়।
আরিশা একটু হেসে মেয়েকে বুঝাতে বলে,
– আরে ওসব কোনো বিষয় না। পুরুষ মানুষের অনেক ব্যাস্ততা থাকে। রামিম তোকে হলে নামিয়ে দিয়ে আসবে। সিট খুজে নিতে পারবি? নাকি আমি সাথে আসবো?
রিমা বলে,
– তোমার যেতে হবে না। এই গরমে এত দুর যেবে আবার একা একা ফিরবে তার চেয়ে ভালো আমিই খুজে নিতে পারবো।
আরিশা মেয়ের মাথায় একটা ফু দিয়ে বলে,
– সব কিছু ভালো হোক। আর মাথা ঠান্ডা রেখে পরিক্ষা দিবি।

বলেই যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় তারা। বাড়ি থেকে বের হয়ে অবাক হয় রিমা। দেখে রুশান বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে সেখানে। আরিশা একটু হেসে মেয়ের দিকে চেয়ে বলে বলে,
– রুশান ঠিকই বলে, তুই অজথাই তাকে ভুল বুঝিস।
রিমা একটু রাগি লুকে তাকিয়ে থাকে রুশানের দিকে। আসবেই যখন গত কাল এতো ঢং করার কি দরকার ছিলো?
রুশান একটু হেসে বাইকে উঠতে বললে রিমা একটু ঝাঝালো ভাবে বলে,
– উঠবো না আমি। ভাইয়ার সাথেই যাবো। কেউ নিয়ে যেতে হবে না আমাকে।
রিমা ভেবেছিলো রুশান ক্ষমা চেয়ে স্যরি বলে তার রাগ ভাঙাবে। কিন্তু রুশান বাইক স্টার্ট দিয়ে বলে,
– লাষ্ট বার বলছি, উঠলে ভালো আর না উঠলো সোজা চলে যাচ্ছি আমি।

এবার রিমা রাগ ঝেড়ে লক্ষি মেয়ের মতো চুপচাপ গিয়ে উঠে বসলো। রুশান ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে বলে,
– সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে নিয়েছো?
রুশানের মুখে হটাৎ তুমি শুনে কিছুটা অবাক হয় রিমা। বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে হজম করে নিয়ে বলে,
– হুম নিয়েছি।
,
,
ঐ দিকে সকাল সকাল ফ্রেশ হয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে একা একা রুমের ভেতর বসলো রাজ। দেখে ইকবাল সানি বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে। কল ব্যাক করলে ওপাশ থেকে রিসিভ করে গত কালকের বিষয়টা জানায় তাকে।
যে একটা লোক তার সাথে দেখা করতে চাইছিলো। বাট পরিচয় দেয়নি। আর লোকটা যে চেনা, বিষয়টা এমনও না। শুধু বলেছিলো বিজনেস ডিল।

রাজ গম্ভির ভাবে বলে,
– অপরিচিত কারো সাথে সাক্ষাৎ করার আগে তার সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিৎ ছিলো তোমার। যাই হোক লোকটা কি একেবারেই পরিচিত না?
ইকবাল সানি বলে,
– তেমন ভাবে পরিচিত না। শুধু প্রস্তাব রেখেছে আপনার সাথে দেখা করতে চায়।
রাজ আবার গম্ভির ভাবে বলে,
– বিজনেস সাব্জেক্ট হলে তোমার সাথেই সব করতো। এতোটা গভিরে হাত দিতো না। যাই হোক। ওয়াট্সএ্যাপ এ তার পিক সেন্ড করে দাও লোকটার। সাথে তোমার সাথে দেখা করার মুহুর্তের সব সিসি টিভি ফুটেজ পাঠাও। বাকিটা আমি দেখছি।

To be continue……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here