ছদ্মবেশ,পর্ব ৪৯,৫০

0
935

#ছদ্মবেশ,পর্ব ৪৯,৫০
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৪৯

রাজের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ি নতুন বাসার সামনে গিয়ে দাড়ালো নিবিড় ও নিরা। গেটের সামনে দাড়িয়ে দাড়োয়ানকে তাদের কথা বললে সে বাড়ির ভেতরে গিয়ে বাড়িওয়ালা কে খবর দিলো। বাড়িওয়ালার অনুমতি পেয়ে দারোয়ান এসে নিবিড় ও নিরাকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিলো।

একটা মধ্য বয়স্ক লোক তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। একটা ছেলে ও একটা মেয়েকে দেখে সে বলার আগেই বুঝে যায় এরা কারা। তাই কোনো প্রশ্ন না করে ভেতরে আসতে বলে তাদের।
নিবিড় ভেতরে গেলে লোকটা সিড়ি বেয়ে তিন তলায় তিন রুমের একটা ফ্ল্যাট দেখিয়ে চাবি হাতে দেয় নিবিড়ের। তারপর সব বুঝিয়ে চলে যায় লোকটা।

নতুন বাসায় উঠেছে তাও আবার নিরাকে নিয়ে। ওদিকে গত কাল থেকে নীলার সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি। ফোন বন্ধ করে রেখেছে।
এই নাটকের শেষ টা কোথায় গিয়ে দাড়াবে তা নিবিড় নিজেও বুঝতে পারছে না।। একটা দির্ঘশ্বাস নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে গেলো সে। দেখে ভেতরে ফার্নিচার সহ যাবতিয় যা যা প্রয়োজন সব আছে। এগুলো কাদের?

ভেতরে গিয়ে ফ্যান ছেরে বিছানায় বসলো নিবিড়। আর নিরা জানা খুলে পর্দা গুলো সরিয়ে দিলো রুমটা আলোকিত হুয়ার জন্য।

মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে নিবিড়ের সামনে এসে দাড়ায় সে। দুই হাতে নিবিড়ের গলা জড়িয়ে ধরে নিবিড়ের চোখের দিকে চেয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
– এটা আমাদের নতুন জীবনের সুচনা। আজ থেকে আমরা আমাদের মতো করে সংসার গুছিয়ে নিবো। ছোট একটা মিষ্টি সংসার হবে আমাদের। তুমি আমি আর আমাদের ছোট্ট ভালোবাসা।
পেটে হাত রেখে কথাটা বললো নিরা। আরেক হাত নিবিড়ের কাঁধে।

নিবিড় বিরক্তিকর ভঙ্গিতে নিরার হাতটা সরিয়ে বলে,
– আমি এখনো বুঝতে পারছি না, তুমি কার পাপের ফষল আমার গাড়ে চাপাতে চাইছো? আর তুমি আছো সংসার নিয়ে। সময়টা একটা দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে কাটছে আমার। আর তোমার ঐ নোংড়া শরির নিয়ে আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না। দুরে দুরে থাকবে আমার থেকে।

বলেই সেখান থেকে সরে গেলো নিবিড়। নিরা কিছুক্ষন ওভাবে দাড়িয়ে থেকে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে গিয়ে বসে।

দুই রুমের সাথে একটা ছোট বারান্দা আছে। নিবিড় সেখানে গিয়ে ফোন বেড় করে নীলার নাম্বারে ফোন দিলো। এখনো একটাই কথা, সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এবার তুষারের নাম্বারে ফোন দিলো। সে ভাড়সিটি যাওয়ার জন্য বেড় হয়েছে। তার কাছে নীলার কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলে,
– গতকাল থেকে আর দেখা হয় নি। সকালে একবার বেলকনিতে এসেছিলো। আমাকে দেখে ভেতরে চলে গেছে আবার।
নিবিড় আর কিছু না বলে বিষণ্ন মনে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে গ্রিল ধরে দাড়িয়ে রইলো। নীলা মেয়েটা তো নিজে থেকেই তার খবর নিতো সকাল বিকেল। আর আজ নিজেই ফোন বন্ধ করে রেখেছে। নিজের উপর ও নিরার উপর রাগ হচ্ছে প্রচুর। ইচ্ছে করছে ফল কাটার একটা ছুরি নিয়ে নিরার গলায় এক টান দিয়ে নীলার কাছে গিয়ে বলতে, দেখো আর কোনো ঝামেলা নেই। সব শেষ হয়ে গেছে।
,
,
ভার্সিটিতে আজ হুট করে অরিণ রাজের সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,
– স্যরি,
রাজ কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
– কেন?
অরিণ কিছুটা অনুসূচনা নিয়ে বলে,
– ঐ দিন তোমার সাথে এভাবে ব্যাবহার করাটা উচিৎ হয় নি। ছোট লোক সহ আরো যাতা বলেছি রাগের মাথায়। তাই ভাবলাম তার জন্য স্যরি চেয়ে যাই।
রাজ বলে,
– ছোট লোকদের কাছে স্যরি চাইতে হয় না। তাদের কোনো মন নেই যে কষ্ট হবে। সো আমিও পাইনি। তাই এটা নিয়ে নিজের মাঝে অনুসূচনা দেখানোর কিছুই নেই।
অরিণ সোজন্য মুলক একটা হাসি দিয়ে বলে,
– ধন্যবাদ। শুনে খুশি হলাম।

রাজের ভার্সিটির কিছুটা পাশেই আরোহির কলেজ। আরোহির কলেজের সামনে দিয়েই যেতে হয়।
কলেজের সামনে গেটের বাইরে একটা কার রাখা। তার পাশে দুজন গার্ড ও একজন ড্রাইভার বসে আছে আরোহির ছুটির অপেক্ষায়।
তখন তাদের সামনে আরেকটা গাড়ি এসে দাড়ালো। যেই ছেলেটার সাথে আরোহির বিয়ে ঠিক হয়ে আছে সে। গার্ড গুলোকে ও ড্রাইভারকে গাড়ি সহ পাঠিয়ে দিয়ে ছেলেটা দাড়িয়ে রইলো আরোহির জন্য।

ওদিকে রাজ, নিলয় ও তুষার ভার্সিটি থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। হটাৎ আরোহির কলেজের সামনে সেইদিন নির্জনের সাথে এসে তার বাড়ি এসে রাজের সাথে ফাপর নেওয়া ছেলেটাকে দেখে অবাক হলো কিছুটা।
নিলয় সেই ছেলেটাকে চিনতে পেরেও অচেনার মতো না তাকিয়ে হাটছে।

এমন সময় ছেলেটা নিলয়কে দেখে সামনে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– হাই নিলয় ভাই কেমন আছো?
নিলয় না চেনার মতো করে বলে,
– ভালো বাট আপনি কে ভাইয়া? চিনলাম না তো।
রাজ আর তুষার পাশে থাকায় এমনটা ভাব ধরলো নিলয়। কিন্তু ছেলেটা সেটা না বুঝে আবার বলে,
– আরে ভাইয়া তুমি মজা করছো তাই না?
নিলয় এবার ছেলেটার দিকে চেয়ে রক্তিম চোখের ইশারা করতেই থেমে গেলো ছেলেটা। সেখানে আর না দাড়িয়ে চলে গেলো নিলয়।
রাজ সব জায়গায় চুপচাপ থাকলেও চার পাশে কি কি চলছে সেটা তার দৃষ্টি আড়াল হয় না। নিলয়কে কিভাবে চেলে এই ছেলে? আর এর সাথে নিলয়েরই বা কি সম্পর্ক। বিষয়টা না বুঝার মতো করে এড়িয়ে গেলো রাজও।

এমন সময় আরোহিও বের হলো গেট দিয়ে। রাজকে দেখে আরোহি তার সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে,
– আপনি হটাৎ আমার কলেজের সামনে কি করছেন?
রাজ ছেলেটার দিকে একবার চেয়ে আরোহিকে বলে,
– দেখতে আসলাম তোমার পড়াশুনা কেমন চলছে।
আরোহি আহ্লাদী ভঙ্গি নিয়ে বলে,
– তো কিভাবে দেখলেন? আমি তো ভেতরে ছিলাম।
রাজ আবার ঐ ছেলেটার দিকে আড়-চোখে একবার চেয়ে বলে,
– মনের মিল থাকলে চোখ বন্ধ করলেও দেখা যায়।

ছেলেটা এবার অসহ্য হয়ে আরোহির সামনে এসে আরোহির হাত ধরে বলে,
– রাস্তায় দাড়িয়ে অন্যদের সাথে কিসের কথা? চলো আমি বাসায় পৌছে দিই।
আরোহি এবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,
– আমার হাত ধরার সাহস আপনাকে কে দিয়েছে?
ছেলেটা তবুও জোর করে আরোহিকে গাড়ির কাছে টেনে নিতে চাইলে রাজ ছেলেটার হাত ধরে টেনে আবার সামনে এসে দাড় করায়। তারপর শান্ত ভাবে বলে,
– কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোড় করে কিছু করলে তাকে বলা হয় উত্যক্ত করা।
আরোহি পাশ থেকে মুছড়ে হাত ছাড়িয়ে নিলো। ছেলেটা রাজের সামনাসামনি দাড়িয়ে বলে,
– দেখ তোকে এখনো সাবধান করছি আমাদের মাঝখানে আসবি না। ওর সাথে আমার কি সেটা তুই ভালো করেই জানিস।
রাজ আবারও একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
– যখন হবে তখন অধিকার খাটাতে আসবে এখন না।

এমন সময় নিলয় আবার পেছন থেকে ফিরে এসে বলে,
– কি ব্যাপার রাজ কি হয়েছে এখানে?
নিলয়কে এভাবে আসতে দেখে ছেলেটা বলে,
– ভাইয়া তুমি চেনো তাকে?
নিলয় গম্ভির ভাবে বলে,
– হুম আমার ফ্রেন্ড। বাট সমস্যা কি এখানে?

ছেলেটা এবার রাজকে কিছু না বলে আরোহির দিকে চেয়ে বলে,
– গাড়ি গিয়ে বসো।
আরোহি বলে,
– আপনার গাড়িতে কেন যাবো আমি? আর আমার গাড়ি কোথায়?
ছেলেটা বলে,
– ওরা চলে গেছে। এখন চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসো আমি বাসায় পৌছে দিচ্ছি।
আরোহি বলে,
– প্রয়োজনে একা বাসায় যাবো। তবুও কারো নিয়ে যেতে হবে না আমার। আর আমার সাথে জোড় করার সাহস পেলেন কোথায় আপনি?
ছেলেটা আর কিছু না বলে থমথমে মুখে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে চলে গেলো সেখান থেকে।

আরোহি এবার রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– আমায় বাসায় পৌছে দিবেন? আমার একা যাওয়ার অভ্যেস নেই। তাই ভয় করছে।
রাজ শান্ত ভাবে বলে,
– তাহলে তার সাথে কেন যাও নি? সে তো বাসায়ই পৌছে দিতো।
আরোহি একটু রাগি ভাব নিয়ে বলে,
– তার সাথে কেন যাবো আমি? সে কে আমার যে তার সাথে যেতে হবে?
রাজ এবার একটু ভ্রু-কুচকে বলে,
– তাহলে আমি কে?
আরোহি এবার কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। গোমড়া মুখে বলে,
– পৌছে দিবেন কি না বলেন। নাহলে আমি একা একাই যাবো। পথে কোনো সমস্যা হলে হোক। তাতে আপনার তো কিছু হবে না।

রাজ কিছুক্ষন ভেবে একটা রিক্সা ডেকে উঠতে বলে আরোহিকে। আরোহির চোখে মুখে উজ্জ্বলতার ছাপ ভেষে উঠলো। মনে হচ্ছে আজকের মতো খুশি সে আর কোনো দিন হয় নি।
তবে রাজকে সে আজও বুঝতে পারেনি। এই কঠোর ভাবে ব্যাবহার করে। আবার হুট করে খুব কোমল হয়ে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয় আরোহিকে খুব অপছন্দ করে। আবার মাঝে মাঝে মনে হয় পছন্দ করে এর চেয়েও বেশি। এতো দিন শুনে এসেছে মেয়েদের মন জিলাপির প্যাঁচের মতো। কিন্তু এখন দেখছে রাজের মন পেঁচিয়ে যাওয়া সুতার চেয়েও আরো বেশি পেঁচালো।

আরোহিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে সেই রিক্সায় আবার নিজের বাসার দিকে ফিরলে রাস্তয় ঐ ছেলে গাড়ি নিয়ে রিক্সার সামনে এসে দাড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে এসে রাজের কলার চেপে রিক্সা থেকে নামায় তাকে। রাগি চোখে রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– তোকে একবার ওয়ার্নিং দিয়েও দেখছি কোনো লাভ হয়নি। কিন্তু এবার তোকে লাষ্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি, জীবনের মায়া থাকলে আরোহির থেকে দুরে সরে যাবি। যতটা সম্ভব দুরে থাকবি ওর থেকে। নিলয় ভাইয়ের ফ্রেন্ড না হলে তোকে আজকেই ফেলে দিতাম। তবে এরপর আমার এসব কিছু মাথায় থাকবে না। মাইন্ড ইট।

বলেই রাজকে ছেড়ে আবার গাড়িতে গিয়ে উঠে সেখান থেকে চলে গেলো ছেলেটা। রাজ নিজের জামা ঠিক করে আবার রিক্সায় উঠে বাড়ির দিকে রওনা হয়। রাজ নিশ্চুপ হয়ে আছে শুধু। তবে এই ছেলের বিপদ সব একসাথে হচ্ছে। সময় হলেই ধেয়ে আসবে সব।
রাগের মাথায় একটা প্রতিজ্ঞা করে বসে রাজ। যে ঐ ছেলের সামনে দিয়ে আরোহিয়ে তুলে নিয়ে আবার ঐ ছেলের সামনেই বিয়ে করবে আরোহিকে। ওর বাপ বা নির্জন সবাইকে নিয়ে ঠেকাতে পারলে ঠেকাবে।

তবে এখন এই নিলয়ের সম্পর্কে সন্ধেহটা দিন দিন বেড়েই চলছে। এই নিলয়ের মতো ছেলেকে এই ছেলে কিভাবে চেনে। তাও ডিরিক্ট ভাই ভাই করে ডাকছিলো। আবার নিলয় এমন ভাব দেখাচ্ছিলো তখন। যে ছেলেটাকে চিনেই না সে। তবে নিলয়ের পেছনে এতো সিকিউরিটি লাগিয়েও এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পায়নি সে। কারণ এই কয়দিন নিলয় বন্ধুদের সাথেই বেশি ছিলো। বাইরে খুব একটা যায়নি।
,
,
রাতের বেলায় নিবিড় বাড়ি ফেরে। বন্ধুদের কাছে না। নিরাকে নিয়ে যেই বাসায় উঠেছে সেখানে। আজ খুব একা মনে হচ্ছে নিজেকে। চার পাশে তাকালে, রাজ, রুশান, নিলয়, তাকে নিয়ে সবসময় ফান করা সেই তুষার। তারা কেও পাশে নেই। এক মুহুর্তের জন্যও মনে হলো, এক সময় বন্ধুত্ব গুলো এভাবেই হারিয়ে যাবে সংসার নামক একটা নীতির চাপে। সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে নীলার কথা। যেখানে দিনে বেশ কয়েকবার তাদের কথা হতো। ছাদে এসে দেখা করার আবদার থাকতো সেখানে আজ প্রায় দুই দিন কোনো খোজ নেই।

নিরা তার কাছে এগিয়ে এসে নিবিড়ের গালে হাত রেখে বলে,
– তোমাকে এমন বিষন্ন একধম ভালো লাগে না। অনেক কষ্টে তোমার জন্য আজ খিচুড়ি ও মাছ ভাজা করেছি। চলো দুজন মিলে খেয়ে নিই।
নিবিড় আবারও বিরক্তিকর ভাবে নিরার হাতটা সরিয়ে বলে,
– বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি আমি। খিদে নেই।

বলেই পাশের রুমে চলে গেলো সে। নিরা সেখানে যেতে চাইলে নিবিড় বলে,
– যদি ভেবে থাকো একসাথে এই বাড়িতে আছি দেখে একসাথেই থাকতে হবে তাহলে সেই ভাবনাটা বাদ দাও তুমি। আমার সংস্পর্শেও আসার চেষ্টা করবে না।
বলেই দরজা বন্ধ করে ভেতরে গিয়ে শুয়ে পড়লো নিবিড়। নিরা একটা নিশ্বাস ছেড়ে দাড়িয়ে রইলো সেখানে।
,
,
কেটে গেলো আরো কয়েকদিন। ওদিকে পিন্টু একটা বিষয় নিয়ে খুব ভাবছে যে নিলয়কে ছেলেটার ছবি পাঠালো আর সব প্রমান দেখালো তাও ছেলেটার সম্পর্কে নিলয়ের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। নিলয়তো এমন ছেলে না। সে শত্রু পছন্দ করে না। পছন্দ করে শত্রুর তাজা র’ক্ত। তাহলে ঐ ছেলেটার ব্যাপারে এতো খামখেয়ালি করছে কেন?

যার কারণে নিলয়ের সাথে দেখা করলো আজ। কিন্তু নিলয়ের মাঝে বিষয়টা নিয়ে কোনো সিরিয়াস ভাব দে গেলো না। মুখে বলছে শুধু সে দেখবে বিষয় টা।

নিলয় টয়লেটে গেলে সুজুগ বুঝে নিলয়ের আড়ালে নিলয়ের ফোনে কিছু ছবি দেখতে পায় পিন্টু। যেখানে ঐ ছেলেটা সহ আরো কয়েকটা ছেলে মিলে অনেক গুলো পিক।
কখনো তারা আনন্দ করছে কখনো কোথাও ঘুরতে গিয়ে পিক তুলছে। কখনো রুমে একসাথে সবাই গল্প করার সময় সেলফি। এমন অনেক ছবি দেখতে পেলো সে।
চপুচাপ ফোনটা আগের জায়গায় রেখে দিলো পিন্টু। সে ভালোই বুঝতে পেরেছে এবার বিষয়টা। এই কারণে নিলয় বার বার বিষয়টা এড়িয়ে চলছে। এবার এই নিলয়ের আশা ছেড়ে দিয়ে সে নিজে কিছু করতে হবে। এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কাছের মানুষকে আঘাত করাটা নিলয়ের জন্য কষ্টসাধ্য হলেও রুশান পিন্টুর কেউ না।

To be continue…………..

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৫০)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

নিলয় ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখে পিন্টু বসে আছে চুপচাপ। নীলয় একটা টাওয়াল নিয়ে হাত মুখ মুছে ফোন ও মানি ব্যাগ হাতে তুলে নিলো। নিলয় চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে পিন্টু ডেকে বলে,
– ভাই খেয়ে যাবেন না? দুপুর বেলায় না খেয়েই চলে যাবেন?
বলেই উঠে নিলয়ের পাশে পাশে আগাতে লাগলো পিন্টু।
পিন্টুর কাধে হাতের তালু স্পর্শ করে নিলয় বলে,
– সময় নেই আজ। আর তোমাকে যেভাবে বলেছি সেভাবেই করবে সব। এ মাসের আর ৫ দিন বাকি আছে সামনের মাস থেকেই আবার কাজে লেগে পড়তে হবে। এই কয়দিন একধম চুপচাপ গা ঢাকা দিয়ে থাকবে। আর সব জায়গায় টিম গুলো পরস্তুত রাখো। কোনো সমস্যা হলে আমায় ইনফর্ম করবে।

বলেই সামনের দিকে এগিয়ে গেলো নিলয়। রাস্তায় এসে মুখে মাস্ক টেনে পরে নিয়ে একটা গাড়ি ডেকে উঠে গেলো সে।
রাস্তার অপর পাশে একটা লোক কয়েকটা পানির বোতল নিয়ে বসে আছে বিক্রি করবে বলে। নিলয় চলে যাওয়া অব্দি আড়চোখে বারংবার নিলয়ের দিকে তাকাচ্ছিলো সে।

নিলয় চলে যাওয়ার পাঁচ দশ মিনিট পর সেই পানি ওয়ালা লোকটা মোবাইল বের করে কার সাথে যেন কথা বলে পানির বোতল গুলো নিয়ে উঠে সেখান থেকে চলে যায়।

একটু পর ঐ বাড়ির সাময়ে একটা বাইক এসে থামে। পার্সেল হাতে একজন ডেলিভারি বয়।
গেটে টোকা দিয়ে দাড়োয়ানকে বলে বাড়ির মালিককে ডেকে আনতে। সে সাইন করে পার্সেলটা রিসিভ করতে হবে।
দারোয়ান এক মিনিট দাড়াতে বলে ভেতরে গিয়ে পিন্টুকে ডেকে নিয়ে আসে। পিন্টু গেটের বাইরে এসে লোকটার সামনে দাড়ালে লোকটা বলে,
– আপনার নামে এমটা পার্সেল ছিলো।
পিন্টু কিছুটা ভেবে বলে,
– আপাতত আমার নামে কোনো পার্সেল আসার কথা ছিলো না।
ছেলেটা বলে,
– স্যার আপনার মাম রাসেল না?
পিন্টু একটু গম্ভির ভাবে বলে,
– পিন্টু আমার নাম।
এবার ছেলেটা একটু অপরাধবোধের ভাব প্রকাশ করে বলে,
– স্যরি স্যার। ছোট্ট একটা মিষ্টেক ছিলো। এখানে লেখা ছিলো ৩২ নাম্বার বাসা আমি ভুলে উল্টো মনে করে ২৩ নাম্বারে চলে এসেছি।
পিন্টু আঙুলের ইশারা করে বলে,
– মাথায় সমস্যা?
ছেলেটা আবারও বলে,
– আ’ম রিয়েলি স্যরি স্যার। বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।

সেই সময়টায় সেখান দিয়ে ধীর গতিতে একটা সি’এন’জি পার হয়। ভেতর থেকে একজন লোক কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে যে যার মতো চলে যায় সেখান থেকে।

বিকেলের মাঝে মাঝে সব তথ্য রাজের কাছে পৌছে যায়। রাজ লেপটপ হাতে নিয়ে বসে রুমের দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে। দেখে একটা ছেলের ছবি। নাম পিন্টু। বয়স ২৪। স্টুডেন্ট, ঢাকা ইউনিভার্সিটি।
তার নিচে লেখা, নিলয়কে ফলো করার মুহুর্তে দেখতে পায় ঐ ছেলের বাসায় নিলয় গিয়ে প্রায় ঘন্টা খানেক সময় পার করেছে। এরপর আবার বেড়িয়ে চলে যায়।
,
,
আজ কয়েকদিন পর নীলার সাথে কথা হলো নিবিড়ের। এই কয়দিন ধরে বুকে চাপা কষ্টটা যেন কিছুটা হালকা হলো আজ। কিন্তু এখন যেন তা আবারো ক্রমশ বেড়েই চলছে।

নিবিড় বারংবার বললে, বিকেলে দেখা করবে বলেছে নীলা। সেই তাদের পুরোনো চেনা বড় দিঘির পাড়টায়। যেখানে বসে বাদাম খাওয়ার সাথে আড্ডা দিতো দুজন। প্রতিদিন বিকেলে জায়গাটায় অন্যরকম একটা সৌন্দর্য ফুটে উঠে। সেই সাথে ফুরফুরে বাতাসের সাথে সব মিলিয়ে সুন্দর একটা মুহুর্তে কেটে যায়।

নীলা আগে থেকেই এসে বসে থাকে সেখানে। নিবিড় আসছে দেখতেই বসা থেকে উঠে দাড়ায় সে। নিবিড় দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসছে তার দিকে। দেখে মনে হচ্ছে দ্রুত পায়ে না গেলে নীলার কাছে পৌছাতে পারবে না সে।
নীলা কিছু বুঝে উঠার আগেই নিবিড় এসেই খুব শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে তাকে। যেন এই কয়েকদিন না দেখে আজ হুট করেই তার প্রান ফিরে পেলো।

কিছুক্ষন ওভাবেই শক্ত করে ধরে রাখে নিবিড়। কিছুক্ষন পর একটু স্বাভাবিক হতেই নীলা ধীরে ধীরে নিজেকে নিবিড়ের থেকে ছাড়িয়ে কিছুটা দুড়ে গিয়ে দাড়ায়।
নিবিড়ের আচরণ গুলো যেন আজ বাচ্চাদের মতো দেখাচ্ছে। নীলার দুই গালে হাত রেখে বলে,
– কেনো এই কয়েকদিন একটুও কথা বলোনি তুমি? কত মিস করেছিলাম জানো? মনে হচ্ছিলো দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো আমি।

নীলারও যেন খুব ইচ্ছে করছে নিবিড়কে জড়িয়ে ধরে অশ্রু জনে নিবিড়ের বুক ভিজিয়ে দিতে। ইচ্ছে করলেও নীলা নিজেকে কিছুটা শক্ত করে নিবিড়ের দুই হাত সড়িয়ে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন করে,
– কেন ডেকেছো?
নিবিড় কোনো সঙ্কোচ ছারাই বলে,
– তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো।
নীলা কিছুক্ষন চুপ থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করে আবার বলে,
– দেখা শেষ হয়েছে?
নিবিড় করুণ ভাবে বলে,
– এভাবে বলছো কেন? তুমি কি সাধারণ কিছু যে একবার দেখলেই দেখা হয়ে যাবে? আমার কাছে নীলা একটা মুগ্ধতার নাম। যা যুগ যুগ চেয়ে থাকলেও মুগ্ধতার শেষ খুজে পাবো না।

নীলা এবার ঝাঝালো গলায় বলে উঠে,
– আর কতো নিজের সাথে জড়াবে আমাকে? তারচেয়ে ভালো মেরে ফেলো। আমিও তো মানুষ তাই না? কষ্ট তো আমারও হয়।
নিবিড় আবার নীলার দুই গালে হাত রেখে কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে বলে,
– কারো কষ্ট হবে না। চলো দুজন মিলে দুরে কোথাও চলে যাই। যেখানে আর কোনো ঝামেলা থাকবে না।

নীলা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
– যথেষ্ট হয়েছে, আর না। কোথায় যাবে তুমি? নিজের সন্তানকে ফেলে যেতে পারবে? তুমি এখন একা না। অন্য কারো মাঝে তোমার সন্তান বড় হচ্ছে। এটা কেন বুঝতে পারছো না তুমি?
নিবিড় এবার হতাশার দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
– নীলা তুমি কি আমার একটুও ট্রাস্ট করো না?
নীলা এবার চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– নিবিড় তুমি চলে যাও প্লিজ। এভাবে আমার একটুও ভালো লাগছে না। হয়তো আবারও কয়েকদিন ঘুমাতে পারবো না। কষ্টটা কতোটা তীব্র তা আমিও জানি। তবুও আমাদের উচিৎ পরিস্থিতিকে মানিয়ে নেওয়া। তোমার উচিৎ নিজের সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখা। আর যত তারাতারি পারো নিরাকে বিয়ে করে নিও।

বলেই উল্টো ঘুড়ে হাটা ধরলো নীলা। আজ খুব প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলো যে, নিবিড়ের সামনে একটুও দুর্বল হবে না৷ বাট সে পারলো না শক্ত থাকতে। পারলোনা তার আবেগ কে কন্ট্রোল করতে। চলে যাচ্ছে সে।
নিবিড় পেছন থেকে ডেকে বলে,
– চলেইতো যাচ্ছো একা ফেলে। অন্যকারো ভোজা মাথায় নিয়ে তুমি হীনা প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত কিভাবে কাটে তা তো শুধু আমিই জানি।

নীলা শুনলেও আর পেছন ফিরে তাকালো না। কারণ পেছন ফিরলেই আবার মায়া বেড়ে যাবে।
,
,
রাতে নিবিড়কে বাসায় ফিরতে দেখে দ্রুত ফ্যান এর সাথে ওড়নাটা বাধে নিরা। একটা চেয়ারে দাড়িয়ে তা গলায় পরিয়ে রেখে অপেক্ষা করতে থাকে নিবিড় ভেতরে আসার জন্য।
নিবিড় দরজা খুলে ভেতরে আসতেই নিরা পায়ের তলা থেকে চেয়ার সরিয়ে দেয়। ফাঁস লেগে অদ্ভুত শব্দ করতে থাকে সে। নিবিড় দৌড়ে এসে নিরাকে ধরে নিচে নামায়। নিরা কাঁন্নার ভাব ধরে বলে,
– কেন বাচালে আমায়? মরে গেলেই তো তুমি মুক্ত হয়ে যেতে। ঐ নীলা মেয়েটার কাছে চলে যেতে পারতে। কেন বাচালে আমায়?
নিবিড় নিজেই বুঝতে পারছে না তার এখন কি করা উচিৎ। কিছুক্ষন শান্ত থেকে বলে,
– এসব পাগলামি কেন করছো? তোমার উদ্দেশ্যটা কি আমার ক্লিয়ারলি বলবে প্লিজ?
নিরা কেঁদে বলে,
– ঐ নীলা মেয়েটার কাছে কেন গিয়েছো তুমি? কেন তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে? তুমি কি ভেবেছো আমি কিছুই জানিনা? আমি সব জানি। কেন আমাকে রেখে অন্য মেয়ের কাছে যাবে তুমি? আমাকে তো একটিবারও জড়িয়ে ধরোনি। তাহলে কেন আমাকে এখন মরার হাত থেকে আবার বাচালে? কেন,,,,
বলেই কাঁদতে কাঁদতে নিবিড়কে জড়িয়ে ধরলো নিরা। কাঁদতে কাঁদতে আবারও বলে,
– আমি তোমাকে ছারা বাচতে পারবো না নিবিড়। আমি, তুমি, তোমার সন্তান তিনজন মিলে এক সাথে বাচতে চাই আমি।

নিবিড় মুর্তির ন্যায় চুপচাপ হয়ে আছে। মনে মনে একটাই প্রশ্ন, ছোট বেলা থেকেই আমায় কেন এতো বিপদে ফেলছো আল্লাহ্? সব সময় কেন আমার প্রিয় মানুষ গুলোর থেকে আমায় দুরে রেখেছো তুমি?
,
,
রাতে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে রুশান। পাশে তার সহকারি আজিম। ট্রাফিক সিগনালের লাল বাতি জ্বলে উঠতেই আশে পাশের সব গাড়ি দাড়িয়ে গেলো। রুশানও ব্রেক করে কিছুক্ষনের জন্য দাড়িয়ে রইলো সেখান। এর মাঝে গাড়ির দুই পাশে দুইটা বাইক এসে দাড়ায়। পিন্টু হাত দিয়ে গ্লাসে টোকা দিলে রুশান গ্লাস নামাতেই স্প্রে জাতিও কিছু একটা নাকে আসতেই জ্ঞান হারায় দুজন।
বাইকে দুজন দুজন করে চারজন ছিলো। পিন্টু নেমে গাড়িতে উঠে পড়ে। বাকি তিনজন গ্রিন সিগনাল পেতেই বাইক নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে।

পিন্টু গাড়িতে বসে রুশানকে একপাশে সড়িয়ে ড্রাইবিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। কাজটা এতোই দক্ষতার সাথে করা হয়েছে যে আশে পাশের কারোরই নজরে আসলো না কিছু।

মহা সড়ক ছেরে একটা নির্জন রাস্তায় গাড়ি নিয়ে গেলো পিন্টু। চুপচাপ ড্রাইবিং করছে। আর পাশে জ্ঞান হাড়িয়ে পরে আছে রুশান ও তার সহকারি আজিম।

To be continue……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here