#ছদ্মবেশ,পর্ব ৬,০৭
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
০৬
সূর্যের সোনালি আলো তখন ফুটতে শুরু করলো। সেই সোনালি আলো জানালা ভেদ করে রুমে প্রবেশ করছে ধিরে ধিরে। নিলয় তখন বেলকনিতে দুই হাত মেলে অলসতা কাটানো তে ব্যাস্ত। আর তুশার রুমে মরার মতো ঘুমাচ্ছে। সারা রাত গার্লফ্রেন্ডের বিরহে কাঁদতে কাঁদতে শেষ রাতে এসে চোখ দুটি লেগে এসেছে তার। আর এখ বে-ঘোরে ঘুম।
ফরিদা আন্টি নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজাচ্ছিলো। তখনই কলিং ব্যাল এর শব্দ আসে। দরজা খুলে দেখে রাজ আর নিবিড় বাইরে দাড়িয়ে আছে। খুব ভোরে জগিং করতে বেড়িয়েছিলো দুজন।
নিবিড় ফরিদা আন্টির কাছে গিয়ে বলে,
– ফ্লেভার তো দারুন ছড়াচ্ছে আন্টি। আজ কি তৈরি করছেন আমাদের জন্য।
ফরিদা আন্টি নাস্তা টেবিলে আনতে আনতে বলে,
– গরুর মাংসের সাথে পরোটা, চা আর নুডলস, সাথে একটা কেক বানিয়েছি।
নিবিড় একটু হেসে বলে,
– আজ এতো কিছু আর হটাৎ কেক বানিয়েছেন আন্টি, কোনো বিশেষ কিছু নাকি?
ফরিদা আন্টির আজ গোমড়া মুখ। ড্রয়িল রুম টু কিচেন এভাবে হাটতে হাটতে গোমড়া মুখে বলে,
– হুম, খুব বেশিই স্পেশাল আজকের দিন টা। যাও তোমরা নাস্তা করার জন্য তৈরি হয়ে আসো।
– এক্ষুনি আসছি আন্টি, না আসলেও আপনার খাবারের টানে হলেও খুব তারাতারি চলে আসবো।
বলেই উপরে চলে গেলো নিবিড়। একটু পর আবার কলিং ব্যাল বাজলে দরজা খুলে দেখে রুশান। বাড়ি গিয়ে গত কাল সব ঠিকঠাক করে আবার ব্যাক করেছে ব্যাচেলর বাসায় তার বন্ধুদের কাছে। ফরিদা আন্টির সাথে কথা বলে সেও উপরে চলে গেলো।
নিলয় একটু পেটুক টাইপের। সবার আগে সে’ই নিতে শুরু করে দিলো। সবাইকে নিয়ে খাওয়ার সময় ফরিদা আন্টি কেকটা কে’টে সকলকে দিয়ে বলে,
– আজ হটাৎ কেক বানালাম কেন জিজ্ঞেস করেছিলে না তখন?
নিবিড় উৎসাহ নিয়ে বলে,
– হুম আন্টি।
মুহুর্তেই ফরিদা আন্টির চোখ বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। তা এক হাতে মুছে বলে,
– আজকের দিনটায় আমার তৌসিফ দুনিয়াতে এসেছিলো। কত ফুটফুটে ছিলো আমার তৌসিফ।
রাজ আর রুশান দুজনই খাওয়া বন্ধ করে ফরিদা আন্টির দিকে তাকায়। কারণ তারা কেউই ফরিদা আন্টির কষ্টের মুল কাহিনি টা জানেনা। কারণ তাদেরকে কখনো বলেও নি সে। তারা শুধু জানতো ফরিদা আন্টির কেউ নেই। তার স্বামি ও এক সন্তান দুজনই গাড়ি এক্সিডেন্টে মা’রা গেছে।
নিবিড় উৎসাহ নিয়ে বললো,
– আপনার কাহিনি টা আমরা শুনতে চাই আন্টি।
পাশ থেকে নিলয়ও তাল মিলালো।
ফরিদা আন্টি একটা দির্ঘশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,
– প্রতি বছর তার জন্ম দিনে পার্টি না করলে মুখ গোমড়া করে বসে থাকতো। কিন্তু পরে তার বাবা ঠিকই সারপ্রাইজ দিতো তাকে। খুব খুশি হতো সে। হাস্যজ্জল মুখে চোখ গুলো খুশিতে ঝিলিক দিয়ে উঠতো। আমি এমন অবস্থায় ছিলাম না। না ছিলাম এমন একা। অটল ধন সম্পদ ছিলো আমাদেরও। বাড়ির ভেতরেই কাজের মানুষ ছিলো ৩-৪ জন। আমার তৌসিফ ছিলো ৮ বছর বয়সের। বিয়ের প্রথম ১০ বছর আমাদের কোনো সন্তান ছিলো না। এর পর তৌসিফ আসলো আমাদের কোলে। আনন্দের সীমা ছিলো না। তবে এই সুখও আমার কপালে সইলো না। কারা যেন তৌসিফের বাবার সব কিছু আস্তে আস্তে কৌশলে লুটে নিয়েছিলো। এর পর সে ওদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিবে সেই রাতেই এক্সিডেন্ট টা হয়। সবাই একটাকে এক্সিডেন্ট হিসেবে নিলেও, আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করি এটা এমনি এমনি হয়নি, করানো হয়েছিলো।
বলেই কেঁদে দিলো ফরিদা আন্টি। আবার চোখের পানি মুছে বললো,
– তার পর ওদের সাথে সব হারিয়ে ফেললাম। কিছুই করতে পারিনি আমি। একা হয়ে গেলাম একেবারে। এই বাড়িটির উপর তলা ভাড়া দিয়ে প্রথম এক বছর একাই কাটিয়ে দিলাম। তারপর তারাও বাড়িটা ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। এর পর নিবিড় আসলে আমার কাছে। যেন থাকার মতো একটা রুম হলেও ভাড়া দিই তাকে। তার পর রুশান, এর পর একে তোমরা সবাই। এখন তোমরাই আমার পরিবার তোমরাই আমার ছেলে, তোমরাই আমার সেই ছোট্ট তৌসিফ।
তখনই নিবিড় উঠে এসে ফরিদা আন্টির মাথাটা নিজের সাথে ধরে বলে,
– আমরাই তো আপনারর সন্তান আন্টি। আর আমি কখনোই আপনাকে ছেরে যাবো না। তৌসিফ যেমন আপনার সাথে সারা জীবন থাকতো। আমিও থেকে যাবো সারা জীবন। কারণ আমারও যে আপনার মতোই একজন মা খুবই প্রয়োজন ছিলো। পেয়েছিও, ছেড়ে যাবো না কখনো।
এর পর একে একে সবাই এসে ফরিদা আন্টিকে শান্তনা দিতে লাগলো। রুশান বিষয় টার কিছু হলেও বুঝতে পারছে। কারণ তার জানা মতে ২৫ বছর আগে তার ফ্যামিলির সাথেও একই কাজ করা হয়েছিলো।
,
,
আরোহিকে পড়ানো শেষে বাসায় ফিরলো রাজ। বেলকনিতে বসে ফোন টিপছিলো সে। নিবিড় তার পাশে গিয়ে বসে। তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
– সব ঠিকঠাক?
রাজ মাথা তুলে বলে,
– কিসের কথা বলছো?
নিবিড় এবার আরো কাছে গিয়ে বলে,
– তুমি যেই মেয়েটাকে পড়াও, কি যেন নাম? ওহ্ হ্যা, আরোহি। মেয়েটাকে আজ দেখলাম তাদের গেটের সামনে। ভাই মেয়েটাতো হেবি সুন্দরি। এমনটা জানলে টিউশনি টা আমিই করাতাম ভাই।
রাজ এবার সোজাসুজি ভাবে চেয়ে বলে,
– সুন্দরি এটা সত্য। তবে তার সাথে টিউশনির কানেকশন কি?
নিবিড় হেসে বলে,
– তুমি দেখতে যেমন বলদ টাইপের। তোমার বুদ্ধিও বলদ টাইপের। আরে ভাই একে তো মেয়েটা মারাত্মক সুন্দরি, আর দুই হলো অনেক বড় লোক ফ্যামিলির মেয়ে। এমন একটা মেয়েকে যদি পটিয়ে এক বার বিয়ে করে নিতে পারি তো, লাইফ স্যাটেল।
রাজ হেসে বলে,
– আমার মেয়েদের প্রতি এতো ইন্টারেস্ট আর এভাবে স্যাটেল হওয়ার লোভ কোনো টাই নেই। সে আমার স্টুডেন্ট মানেই স্টুডেন্ট।
নিবিড় আবারও হেসে বলে,
– ভালো বুদ্ধি দিলাম নিলা না। আচ্ছা তাহলে এক কাজ করো, ওই মেয়েটার সাথে কোনো ভাবে আমার লাইন করিয়ে দাও।
রাজ এবার নিবিড়ের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বলে,
– ওর ফ্যামিলি সম্পর্কে জানো তুমি? তোমার না ৬-৭ টা গফ? ওসব যদি ওই মেয়ে জানতে পারে তাহলে গু’লি করে মা’রবে। তাই ওসব ফ্যামিলির মেয়ের থেকে দুরে থাকাই ভালো।
বলেই উঠে হাটা ধরে রাজ। নিবিড় পেছন থেকে বলে,
– ভাই সত্যি বলছি, ওরকম একটা মেয়ে পেলে বাকি সবাইকে ছেড়ে দিবো।
,
,
রাতের বেলায় ঢুলতে ঢুলতে বাসায় আসে তুষার। নিবিড়, রাজ, রুশান এরা তাকে ধরে রুমে এনে বসায়। নিবিড় বলে,
– তুই আবার মাল খেয়েছিস? তোকে না বললাম এইসব ছাইপাশ খেয়ে এই বাসায় আসবি না। ফরিদা আন্টি শুনলে কি করবে বুঝতেছিস?
তুষায় খুব শোকাহত দের মতো করে বলে,
– ভাই, সুমাইয়া আমাকে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিছে। কতো ভালোবাসতাম তাকে।
নিবিড় এবার সরে বসে বলে,
– ধুর হালা। একটা মেয়ের জন্য এতো কিছু করতেছিস? মেয়ে লাগলে তুই আমার কাছে আসতি। কিন্তু এই ছাইপাশ খেতে গেলি কেন?
তুষার আবারও কেঁদে বলে,
– সুমাইয়া আমার পিউর লাভ ছিলো ভাই।
রাজ করা করে লেবুর শরবত বানিয়ে এনে তুষারের কাছে দিলো। তুষার ওটা খেয়ে হেলান দিয়ে বসে।
নিবিড় আবার বলে,
– ভাই শুন, ভালোবাসা আর কমার্স অনেকটাই মিল। কমার্সের স্টুডেন্ট দের কে শিখানো হয়, বেশি জায়গায় বিনিয়োগ করলে লস হওয়ার সম্ভাবনা টা কম থাকে। আর তোমরা এক জায়গায় বিনিয়োগ করে ওটা নিয়ে বসে থেকেই তো এই H মা’রা টা খাও। আমাকে দেখ, কতো জায়গায় ভালোবাসা বিনিয়োগ করেছি। তাই আমার লসেরও কোনো হিসেব নেই।
তুষার ফোনের ওয়েল পেপারে সুমাইয়ার ছবি সেট করে রেখেছিলো। ওটা দেখে কেঁদে বলে উঠে,
– আমার সুমাইয়া,,,,,,,
নিবিড় ফোন টা নিয়ে এবার তুষারের দিকে কিছুক্ষন নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার পর বলে,
– এটা তোর সুমাইয়া? আরে বলদের ঘরে বলদ, এটা তো বাংলা নাটনের অভিনেত্রি মেহজাবিনের ছবি।
তুষারের কোনো কান নেই নিবিরের কথায়। সে বুকের বা পাশে হাত রেখে সুমাইয়া সুমাইয়া করছে। নিবিড় আবার বলে,
– ফেসবুক রিলেশন তাই না?
তুষার মাথা নেড়ে হ্যা সূচক সম্মতি জানায়। নিবিড় এবার উঠে দাড়িয়ে বলে,
– বাংলা নাটক দেখিস না বলেই মেহজাবিনকে চিনলি না। আর ফেইক আইডি না রিয়েল আইডি ওটা না দেখেই প্রেম শুরু করলি।
বলেই সেখান থেকে চলে গেলো নিবিড়। আর এদিকে তুষার বুকে হাত দিয়ে সুমাইয়া সুমাইয়া করতে শেষ,,
আমার সুমাইয়া,
আমারে নেশা খোর বানিয়ে,
কেমনে রইলি ঘুমাইয়া?,,,,,,,
নিবিড় নিজের রুমে এসে বসলে নিলয়ও তার পাশে এসে বসে। আর নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– এই নিবিড় শোন, তুষার তো মনে হয় আজ সুমাইয়ার শোকে শেষ হয়ে যাবে। দেখ কি কাঁদা কাঁদছে।
নিবিড় মাছি তাড়ানোর মতো করে বলে,
– আরে বাদ দে বাল, হালা পুরাই বলদ।
নিলয় আবার বলে,
– মামা একটা সিক্রেট শুনবি?
– কি?
– তুষারকে বলবি না তো?
নিবিড় বলে,
– আমি কি তোর মতো মুখ পাতলা?
নিলয় নিচের দিকে চেয়ে বলে,
– তুষারের সাথে রিলেশন করা ওই ‘সুমাইয়া ইসলাম’ আইডি টা আসলে আমার ছিলো।
To be continue,,,,,,,,,
#ছদ্মবেশ (পর্ব ৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
– তার মানে তুষার যেই মেয়ের বিরহে মাতাল হয়ে এখন কেঁদে কে’টে অস্থির, সেটা কোনো মেয়ে না বরং ওটা তোরই ফেইক আইডি ছিলো?
নিলয় একটু ভয়ার্ত চেহারায় বলে,
– হ্যা ভাই, তুষারকে কিছু বলিস না প্লিজ।
নিবিড় মাথায় হাত দিয়ে উউঠে দাড়িয়ে ও মাই গট ও মাই গট বলে নিলয়ের দিকে তাকায়।
কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বলে,
– তোকে বলদ বলদ মনে হলেও তোর মাথায় দুনিয়ার সয়’তানি বুদ্ধিতে ভরা। আর ওই দিন নিরাকে কেন বলতে গেলি, যে আমি কোনো মেয়ের সাথে দেখা করতে গিয়ে মা’র খেয়েছি?
– ভাই এখন ওসব বাদ দে। তুষারের কথা ভাব। না জানি সে আবার উল্টা পাল্টা কিছু করে বসে।
নিবিড় এবার একটা ঝাড়ি মে’রে বলে,
– ধুরু সালা, দোষ সব তোর। বন্ধুর সাথে বন্ধু এসব করে?
ওদিকে তুষার শুয়ে শুয়ে বিরোহে মোবাইল হাতে তার সুমাইয়ার পিকের দিকে চেয়ে আছে। আজ যেন ঘুম হারাম হয়ে গেছে তার।
,
,
দুর থেকে অরিনের ডাকে পেছন ফিরে তাকায় রাজ। অরিন তার কাছে এসে একটা হাসি দিয়ে বলে,
– নোটস গুলো সব করে দিয়েছো?
রাজ চুপচাপ ব্যাগ থেকে এগুলো বের করে অরিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– এই নাও। এখানে সব আছে।
অরিন উল্টে উল্টে দেখে বলে,
– থ্যাংক ইউ,,,,
রাজ একটু হেসে বলে,
– ওয়েলকাম।
অরিন ওগুলো গুছিয়ে বলে,
– ক্লাসের তো এখনো অনেক সময় বাকি আছে, চলো দুজন গরম গরম সিংগারা ও চা এর সাথে ক্যান্টিনে আড্ডা দিই।
রাজ একটু অসম্মতি জানাতে চাইলেও মুখে বলতে পারলো না।
অরিন তা বুঝতে পেরে বলে,
– লজ্জা পাচ্ছো? সমস্যা কি ফ্রেন্ডই তো আমরা তাই না? চলো,,,
ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছে দুজন। অরিন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রাজকে বলে,
– ফ্যামিলিতে কে কে আছে তোমার?
হটাৎ অরিনের এমন প্রশ্নে বিষম খেল রাজ। নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাবাবিক ভাবেই বলে,
– আমরা দুই ভাই আর বাবা মা। ভাইয়া আমার চেয়ে অনেক বড়।
– তাই,, কি করে তোমার ভাইয়া?
রাজ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
– একটা ছোট কোম্পানিতে জব করে।
– আর তোমার বাবা?
– সে আছে বাড়িতে।
– তার মানে তোমার বড় ভাই ই এখন সব সানলায়।
– বলতে পারো,,, গরিবের সংসার আর কি।
বলেই এক সাথে দুজনই হেসে দিলো। হাসি থামিয়ে রাজ বলে,
– এবার তোমার সম্পর্কে বলো।
– আমার ফ্যামিলিতে আছে বাবা মা আর আমি। বাবা বিজনেস করে আর মা ব্যাংকার।
– বাহ্ ভালো। হ্যাপি ফ্যামিলি।
ওদের কথার মাজখানে দুর থেকে কয়েকটা ছেলে ডাক দেয় রাজকে। রাজ ওদিকে তাকালে, ছেলে গুলো হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকে তাকে। রাজ অরিনের দিকে একবার চেয়ে উঠে ছেলে গুলোর সামনে গিয়ে দাড়ালো।
ওদের মাঝে একটা ছেলে বলে,
– আমাদের সবার জন্য চা অর্ডার দিয়েছি। ওগুলো এনে দে যা।
রাজ চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে বলে,
– ভাইয়া আমি কি আপনার বেতন ভুক্ত কর্মচারি?
ছেলেটা সানগ্লাস খুলে উঠে দাড়িয়ে রাজের সামনে দাড়ায়। দুই আঙুল দিয়ে রাজের গাল টিপে ধরে বলে,
– কলেজে থাকতে হলে চুপচাপ সিনিয়রদের কথা শুনতে হয়। আর হ্যা, তোর সাথে মেয়েটা কে? তোর বন্ধু তাই না? ওকে ভাল্লাগছে। ওর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিবি। এখন চুপচাপ গিয়ে চা গুলো নিয়ে আয়।
রাজ আর কিছু না বলে চুপচাপ গিয়ে চা এনে দেয়। সাথে কেক গরম গরম সিঙ্গারা অনেক কিছুই এনে সামনে রেখে বলে,
– ভাইয়া, এগুলো ছোট ভাইয়ের তরফ থেকে সামান্য ট্রিট। বিল কিন্তু অবশ্যই আমি দিবো।
ছেলেটা এবার এক গাল হেসে রাজের পিঠে ছোট্ট করে দুই টা থাপ্পর দিয়ে বলে,
– এইতো ছোট ভাই লাইনে চলে আসছে।
রাজ একটু হাসি বিনিময় করলো। তারপর অরিনের দিকে চেয়ে একটা আঙুল দেখিয়ে এক মিনিট সময় চেয়ে নেয়।
ছেলেগুলোর দিকে চেয়ে বলে,
– ভাইয়া আপনারা খান তাহলে, আমার আবার ক্লাসের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমি যাই।
বলেই রাজ দুইটা নোট বের করে তাদের দিয়ে বলে,
– এই নিন, বিল দেওয়ার পর যা বাচে তা নিজেদের মাঝে ভাগ করে নিবেন। ভাববেন না, এমনি এমনি দিচ্ছি। যাই হোক সিনিয়র ভাইয়া আপনারা। ছোট ভাই হিসেবে আপনাদের প্রয়োজনের কথাও তো ভাবতে হবে আমাকে। পরে সামান্য ঔষধ পত্র দরকার হলেও কিনে নিতে পারবেন। আসি ভাইয়া,,,,,,
বলেই একটা ভিলেন হাসি দিয়ে অরিনের সাথে হাটা ধরলো রাজ। রাজের কথার কিছুই বুঝতে পারলো না ছেলে গুলো। শুধু তাকিয়ে আছে রাজ ও অরিনের চলে যাওয়ার দিকে।
,
,
(এবারের টপিক টা কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশি কাজে লাগবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে বিরক্তিকর মতে হতে পারে)
বিকেলে চুপচাপ বসে আছে তুষার। বিরহ যেন কেড়ে নিয়েছে তার মুখের হাসি। নিবিড় টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে তুষারের পাশে এসে বসলো। একটু হেসে তুষারের দিকে চেয়ে বলে,
– মন মেজাজ ঠিক হয়েছে?
তুষার গোমড়া মুখে বলে,
– কোন শালা এই কাজ টা করছে তা শুধু একবার জানতে পারি আমি। ওর বিদায়ের ঘন্টা বাজাবো আমি। অভিনেত্রীর ছবি দিয়ে ফেইক আইডি খুলে তাও একদিন দুইদিন না, ছয় ছয় টা মাস আমাকে বিয়ে বাচ্চা কাচ্চার পর্যন্ত স্বপ্ন দেখিয়েছিলো।
নিবিড় একটু মুখ চেপে হাসি কন্ট্রোল করে তুষারকে বলে,
– আচ্ছা যা হওয়ার হয়ে গেছে। ওটা ফেইক আইডি ছিলো, তা গেছে তো গেছে। তাই বলে মন খারাপ করে বসে থাকবি? তুই তোর মন টা ব্লুটুথ এর মতো ওপেন করে রাখ। যেখানে ভালো ডিভাইস পাবি কানেক্ট করে নিবি ব্যাস।
তুষার এবার মন খারাপ করে বলে,
– কিন্তু দোষ্ট কিভাবে? আমি তো কোনো মেয়ের সাথে সরাসরি কথা বলতে গেলে ভয় লাগে। মানে নার্ভাস ফিল হয়।
নিবিড় এবার কিছুটা হেসে বলে,
– আচ্ছা দাড়া তোকে কিছু টিপ্স দিই। যেগুলো মেয়েদের সাথে কথা বলার সময় যদি ঠিকঠাক ভাবে পালন করতে পারিস, তাহলে দেখবি অল্প দিনেই খুব ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যাবে তোদের।
তুষার এবার আগ্রহ নিয়ে বসে নিবিড়ের টিপ্স শোনার জন্য। নিবিড় বললো,
– মনোযোগ দিয়ে খেয়াল কর।
১ঃ মেয়েদের সামনে কথা বলার সময় মুখে স্মাইল রাখবি। কারণ, হাসি খুশি মানুষদের কে শুধু মেয়েরা কেন? আমরা সবাই পছন্দ করি। তাই বলে বিষয় টা এমন না যে, আমার কথা শুনে মেয়েদের সামনে পড়লাম আর হে হে করে হাসতে থাকলাম। এমন করলে কিন্তু তোকে পাগল ভাববে তারা৷ মানে হাসি টা এমন হতে হবে যে, একধম স্বাবাবিক। চেনা হোক বা অচেনা হোক যার সাথেই কথা বলবি মুখে হাসি রেখে কথা বলবি। যার দ্বারা বুঝা যাবে তুই খুব হ্যাপি পার্সনালিটির মানুষ। এতে তুই সবার কাছে ইন্টারেস্টিং পার্সন হবি, আর সবার কাছ থেকে গুরুত্ব টা পাবি।
২ঃ কোনো মেয়ের সাথে কথা বলার সময় অনেক ছেলেই একটা ভুল করে থাকে সেটা হলোঃ কথা বলার সময় মুখে হাত দেওয়া, চুলে হাত দেওয়া, বাকা ত্যারা হওয়া। এসব তুই নার্ভাস হয়ে করলেও বিপরিত মানুষটার কাছে খুব বিরক্তিকর মনে হবে এটা। কারো সাথে কথা বলার সময় এদিক ওদিক তাকিয়ে থাকা। নার্ভাস হয়ে গাছ-পালার দিকে মানে অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলা। এসব কখনোই করবি না। কারণ এতে সে মনে করবে তুই তাকে কোনো ইম্পর্টেন্ট ই দিচ্ছিস না, আশে পাশের জিনিস গুলো দেখছিস। তাহলেও বিরক্ত হবে সে। কারণ মেয়েরা সব সময় ইম্পর্টেন্ট ও কেয়ারিং মানুষ খোজে। তুই কাউকে ইম্পর্টেন্ট দিবি তার ছোট ছোট বিষয়ে কেয়ার করবি, দেখবি তার কাছেও গুরুত্ব পাবি। তাই কথা বলার সময় এদিক ওদিক তাকিয়ে না থেকে তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবি। এতে সে মনে করতে তুই তাকে গুরুত্ব দিচ্ছিস। এতে দেখবি খুব শক্ত মনের মেয়েটাও নরম হয়ে গেছে।
৩ঃ মেয়েরা সব সময় প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে। আবার প্রশংসার গুছিয়ে করতে হবে। যেমন, কারো সাথে দেখা হলো তুই প্রশংসা করলি যে, বাহ তোমার ড্রেস টা তো খুব সুন্দর। এভাবে বললে মেয়েটে খুশি হবে ঠিক আছে, তবে এটাকে আরেকটু গুছিয়ে যদি বলতে পারিস যে, বাহ এই ড্রেস টা তো তোমাকে দারুণ মানিয়েছে। তাহলে সে আরো বেশি খুশি হবে। তবে অতিরিক্ত প্রশংসা করবি না। মানে সব কিছু একটা লিমিটে রাখতে হবে।
৪ঃ তুই নিজে বেশি বকবক করবি না। আমি এই, আমি সেই, আমি এটা করতে পছন্দ করি, ওটা করতে পছন্দ করি। এসব বললে বিপরিত মানুষটা বিরক্তিবোধ করবে। কারণ মেয়েরা শুনতে না, বলতে ভালোবাসে। তাই তাকে বলার সুজুগ দিবি বেশি বেশি। আর তুই শুনবি তার দিকে তাকিয়ে। তাহলে সে ভাববে তুই তাকে গুরুত্ব দিচ্ছিস।
মানুষের সাথে মিশতে হলে সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ হলো গুছিয়ে কথা বলা। চাইলে শুধু মুখের কথার মাধ্যমেই মানুষকে ইমপ্রেস করতে পারবি। আপাতত এসব ট্রাই কর, দেখবি সবার কাছেই গুরুত্ব পাচ্ছিস। আস্তে আস্তে আরো অনেক কিছুই শিখাবো তোকে।
আপাতত এই চার টা টিপ্স পলো করবি।
১ঃ মুখে হাসি রেখে কথা বলা।
২ঃ বাকা ত্যারা হয়ে মুখে হাত দিয়ে কথা না বলে ভদ্র ভাবে কথা বলা।
৩ঃ প্রশংসা করা।
৪ঃ গুরুত্ব দেওয়া।
সব শেষে হলো নিজের ব্যাক্তিত্ববোধ। সবার কাচে নিজের ব্যাক্তিত্ববোধ কে স্ট্রং রাখবি। ভাই মেয়ে পটানো খুবই ইজি। তোকে আস্তে আস্তে সব শিখাবো।
বলেই উঠে চলে গেলো নিবিড়। তুষার খুশিতে নিবিড়ের দিকে একটা প্লাইং কিস দিয়ে বলে,
– ভাই তোর মতো বন্ধু পেয়ে আমি গর্বিত।
(তুষার আর নিবিড়ের এটা হলো সঙ্গদোষ)
,
,
প্রতি দিনের মতো আজও সন্ধায় আরোহিকে পড়াতে গেলো রাজ। কিন্তু বাড়ির সামনে যেতেই আরোহিকে রাস্তায় দেখে অবাক হয় রাজ। এই সময় তো আরোহি জান দিলেও বাসা থেকে বের হতে পারে না। তবে আজ রাস্তায় দাড়িয়ে লুকিয়ে কার জন্য অপেক্ষা করছে মনে হলো। রাজ কিছুটা এগিয়ে পেছন থেকে আরোহি বলে শব্দ করতেই ভয়ে চমকে উঠে আরোহি। পেছন ফিরে রাজকে দেখে স্বাভাবিক হয়ে বলে,
– এতোক্ষনে এলেন আপনি? কতোক্ষন ধরে অপেক্ষা করছিলাম।
রাজ ভ্রু-কুচকে বলে,
– তাই বলে বাইরে কেন?
আরোহি একটু হেসে বলে,
– আজ বাসায় আম্মু নেই। নানু নাকি অসুস্থ তাই আজ রাতে আসবে না। বাসায় কাজের লোক গুলো আর বাইরে গার্ট গুলো ছারা কেও নেই। সবার চোখ ফাকি দিয়ে মই দিয়ে দেওয়াল টপকে এসেছি।
রাজ আবার বলে,
– কিন্তু কেন?
– জানেন আমাকে প্রয়োজন ছারা বাসা থেকে কোথাও যেতে দেয় না। আজ বাসায় কেও নেই। তাই সুজুগ পেয়ে বেড়িয়েছি। আজ আপনি আমাকে নিয়ে ঘুরবেন। অনেক জায়গায় নিয়ে যাবেন।
রাজ বলে,
– আমি কি তোমার বন্ধু? যে তোমাকে নিয়ে ঘুরবো?
আরোহি অন্য দিকে তাকিয়ে বলে,
– এতো কিছু জানিনা, আপনি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন আজ ব্যাস। নাহলে আমি গিয়ে সবাইকে বলে দিবো আপনি আমাকে বাইরে বের করে এনেছেন। এখন ভাবেন, আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন, নাকি গার্ড দের হাতে গন ধো’লাই খাবেন?
বলেই খিক খিক করে হেসে দেয় আরোহি। রাজ এক হাত মাথায় ঠেকিয়ে বলে,
– হায় খোদা এটা দেখার বাকি ছিলো।
To be continue……