#ছদ্মবেশ,পর্ব ৬৩,৬৪
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৬৩
একটা মেয়েকে বাড়ি থেকে কিভাবে কিড’নাপ করে নিয়ে গেলো, এটা কারো মাথায় ধরছে না। তাও আবার কিডনাপার আর কেও না, সেও একটা মেয়ে। ছেলে হলেও মানা যেত।
নীলার রুমে গিয়ে নীলার ফোনটা হাতে তুলে নেয় নিবিড়। দেখে নীলার ফোনে লাষ্ট কল টা এসেছিলো 6:15pm. মানে সন্ধার সময়। নাম্বারটা আননোন হলেও তাদের মাঝে কথা হয়েছিলো।
ফোনটা হাতে নিয়ে রাজ ও রুশানের পাশে গিয়ে বসে নিবিড়। বিষণ্ন মনে বসে আছে ফ্লোরের দিকে চেয়ে।
পাশে তুষার তাদের মাঝে কথা বলছে,
– নিরাকে তো বলে দিলাম নিবিড় তাকে বিয়ে করবে। বলেছি এই জন্য যেন সে নীলার কোনো ক্ষতি না করে। কিন্তু শেষে কি হবে?
পাশ থেকে রাজ বলে,
– নীলার ফোনও ঘরে রেখে গেছে। সাথে থাকলে নাম্বার ট্রেক করে বেড় করে নেওয়া যেত। এখন যাই হোক, দেখা যাবে।
নাম্বার ট্রেক করার কথা শুনলে তাদের দিকে তাকায় নিবিড়। নীলার ফোনের স্কিন অন করে বলে,
– ৬ টার পর নীলার ফোনে একটা কল এসেছিলো। কথাও হয়েছে তাদের। এরপর আর কোনো কল নেই।
তুষার বলে,
– তো এটা দিয়ে কি হবে?
পাশ থেকে হেলান দিয়ে বসে থাকা অবস্থায় রুশান বলে,
– ব্যাপারটা এমনও হতে পারে, যে নীলাকে ফোন করে কিছু বলে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নয়তো বাড়ির ভেতর থেকে তো আর এত গুলো মানুষের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ কথা না।
ফরিদা আন্টি বলে,
– হতে পারে নাম্বারটা সেই কিড’নাপারের।
রুশান আবার বলে,
– যদি প্রফেশনাল কিডনাপার হয় তাহলে এমন বোকামি করতে যাবেনা। তবুও একবার ট্রাই করাটা ভালো হবে।
নাম্বারটা ট্রেক করলে দেখে বেশি দুড়ে না, এখান থেকে ৯ কিঃমিঃ দুরেই আছে লোকটা।
তুষার, নিবিড় ও নিলয় বেড়িয়ে যায় যায়গাটার উদ্দেশ্যে।
রুশান, ফরিদা আন্টি ও নীলার বাবাকে নিয়ে বাসায় রইলো রাজ।
জায়গাটায় যাচ্ছে তার সন্দেহজনক ভাবে। নীলাকে ওখানে পাওয়া যাবে কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ঘরির কাটা তখন রাত ৩ টা। জায়গাটায় পৌছে দেখে একটা বাড়ি। তার দোতলায় লাইট জ্বলছে। বাড়ির সামনে কয়েকটা নাড়িকেল গাছ আছে।
তুষার বাড়িটার দিকে চেয়ে বলে,
– লোকেশন অনুযায়ি তো এই বাড়িটাই।
নিলয় পকেটে হাত গুজে বলে,
– হুট করে ঢুকে যাওয়ার আগে জানতে হবে নীলা এখানে আছে কি নেই।
তুষার অবাক ভঙ্গিতে ‘কিভাবে জানবো’ এটা জিজ্ঞেস করলে নিলয় বলে,
– দোতলায় লাইট জ্বলছে দেখছিস? মাঝে মাঝে রুমে কেউ হাটাহাটি করার ছায়াও দেখা যাচ্ছে। হয়তো নীলাকে ওখানে রেখেছে, নয়তো অন্য কোনো কিছু হচ্ছে ওখানে।
তুষার আবার বলে,
– কিভাবে দেখবো কি হচ্ছে?
নিলয় এক নজরে নারকেল গাছটার দিকে চেয়ে বলে,
– যেহেতু নিবিড়ের কাজে এসেছি সেহেতি নিবিড় ঝটপর নারকেল গাছে উঠে জানালা দিয়ে দেখতে হবে। কিরে নিবিড় গাছে উঠতে পারিস?
তুষার আবার বলে,
– বেচারা এমনিতেও অনেক টেনশনে আছে। গাছে আমিই উঠছি। ছোট বেলায় গ্রামে থাকতে কতোদিন নেংটা হয়ে গাছের উপর উঠে পুকুরে লাফ দিয়েছি তার হিসেব নেই। তোরা শুধু লক্ষ রাখবি কেও চোর চোর বলে মা’রতে আসে কিনা৷
কিছুক্ষন পর গাছ থেকে নেমে জুতা পায়ে দিয়ে তুষার হাপাতে হাপাতে বলে। রুমের ভেতর কাউকে বেধে রেখে দুজন রুমে হাটাহাটি করছে। থাহ গ্লাসপর কারনে পরিষ্কার দেখতে পাইনি।
নিলয় আর কিছু না বলে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো। দরজায় কয়েকবার টোকা দিকে একজন এসে দরজা খুলে তাদের তিনজনকে দেখে বলে উঠে,
– কারা আপনারা? এখানে কি চাই।
নিলয় তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভেতরে ঢুকে বলে,
– তুই যে বলদ তা তোর চেহারাতেই লেখা আছে। নয়তো কেও কিড’নাপিং এর সময় ব্যবহিত ফোন সাথে রাখে না। আর চালাক হলে আমাদের এমনিতেই চিনতে পারতি।
বলেই রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো নিলয়।
নিবিড় গিয়ে নীলার হাতের বাধন খুললে নিলয় হাত বাড়ায় দড়ি গুলো তাকে দেওয়ার জন্য। নিবিড় চুপচাপ দড়ি গুলো নিলয়ের হাতে দিলে নিলয় সেগুলো ভাজ করে ছোট একটা বেল্টের মত বানায়। তুষারকে বলে দরজার পাশে দাড়িয়ে থাকতে কেও যেন বের হতে না পারে। আর নিবিড় ও নীলাকে বেলকনিতে পাটিয়ে ঐ দরজাটাও বন্ধ করে দেয় নিলয়।
দড়ি গুলো শক্ত করে ধরে ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে বলে,
– চুপচাপ ফ্লোরে বস আর আমি যা যা বলবো সব করবি।
দুটা ছেলের মাঝে একজন রেগে উঠে বলে,
– অনেক্ষন ধরে দেকছি তোর হিরো গিরি। বেশি হিরো গিরি দেখাতে আসবি তো…..
আর কিছু বলার আগেই নিলয় দড়ি গুলো দিয়ে বেধরম পে’টাতে থাকে ছেলে দুটুকে। তুষার দরজা ধরে দাড়িয়ে আছে যেনো ছেলে গুলো রুম থেকে বর হয়ে না পারে। আর নিবিড়-নীলা বেলকনিতে দাড়িয়ে জানালা দিয়ে চেয়ে আছে নিলয়ের দরজা বন্ধ করে মা’রার দৃশ্যটা।
ছেলে দুটুকে বেশ কিছুক্ষন পে’টানোর পর শান্ত হয়ে চেয়ার টেনে তাদের সামনে বসে নিলয়। ছেলে দুটু ক্লান্ত শরিরে নিলৈর দিকে চেয়ে দুই হাত জোড় করে বলে,
– ভাই আমরা জীবনেও এই কাজ করিনি। নিরা নামের একটা মেয়ে আমাদের টাকা দিয়ে বলেছে মেয়েটাকে তুলে এনে শুধু আটকে রাখতে। আমরা শুধু তাই করেছি।
নিলয় শান্ত হয়ে বলে,
– এখন আমি যা যা বলবো, চুপচাপ তাই করবি।
তুষার দরজা খুলে দিলে নিবিড় ও নীলাও বলকনি থেকে রুমের ভেতরে আসে। নিলা ছেলে দুটুর সাথে কথা বলছে। নিবিড় অবাক চোখে তুষারের দিকে চেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
– ভাই নিলয়ের কাছে মাঝে মাঝে এতো সাহস আসে কোথায় থেকে। এমনে তো ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে যানে না।
তুষার কিছুটা ভেবে নিবিড়ের দিকে চেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
– আমার মনে হয় নিলয়ের উপর মাঝে মাঝে জ্বিনে আছর করে।
,
,
– তুমি চাও টা কি? কোনো ছেলেই অন্যের বাচ্চাকে নিজের বলে মেনে নিবেনা। নিবিড় তোমাকে ভালোবাসলেও তা ভিন্ন কথা ছিলো। কিন্তু যেখানে ভালোবাসাই নেই সেখানে অন্যের বাচ্চা সহ তোমায় মেনে নেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই উঠে না।
নিরাকে সামনে বসিয়ে রেখে খুব শান্ত ভাবে কথাটা বলে রাজ। নিরা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
– তো আমি কি করবো বলেন? আমার আর কি করার আছে? আমি প্র্যাগনেট জানার পর আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আজ অব্দি একবারও খোজ নেয়নি তারা।
রাজ আবার বলে,
– একটা মেয়ে কোন পর্যায়ে চলে গেলে তার ফ্যামিলি তার সাথে এমন করে, সেটা কি কখনো ভেবে দেখেছো?
নিরা আবার কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
– আমার ভেতরেও আরেকটা জীবন বেরে উঠছে। যার কারণে এমনটা হয়েছে সে নিজেই আমাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। আমি আমার প্রথম বেবিটাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে চাই। তার জন্য আমার লাইফে কারো সাপোর্ট প্রয়োজন। কিন্তু আমার পাশে কেও নেই।
রাজ আবার বলে,
– তোমার জায়গায় তুমি সঠিক হলেও সময়টা ভুল ছিলো। দোষটা কারো নয়, তোমারই। তুমি তার প্রয়োজন ছিলে, প্রিয়জন নয়। প্রয়োজন শেষ তোমাকেও আর দরকার নেই। বিয়ের আগেই তুমি মোহে পরে যেমনটা করে এখন পস্তাচ্ছো, তা কি আর কিছুটা সময় অপেক্ষা করে দুজন বিয়ে করে তারপর… যাই হোক। তখন কি সে তোমায় ছেরে যেত? আর ছেড়ে গেলেও তোমার ফ্যামিলির সাপোর্ট পেতে তুমি। ফ্যামিলি কখনো তোমার খারাপ চাইবে না। প্রয়োজন আর প্রিয়জনে পার্থক্য বুঝেই জীবন সঙ্গি বেছে নিতে হয়।
নিরা এবার নিচের দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠে বলে,
– আমার ও আবার বাচ্চার দায়িত্ব কে নিবে? কোথায় যাবো আমি?
রাজ কিছুটা নিরব থেকে বলে,
– ঐ ছেলের নাম্বার বা এড্রেস আছে তোমার কাছে?
নিরা তৎক্ষনাৎ ফোন নাম্বার বের করে ও এড্রেস দিলো রাজের কাছে।
রাজ তা নিয়ে বলে,
– ঐ ছেলের ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব করবো আমি। ছুড়ে ফেলে দেওয়া দুরে থাক, বাপ ডেকে বিয়ে করবে তোমাকে। এরপর তোমাদের পার্সনাল লাইফে ভালো হলে তো ভালো, আর খারাপ হলেও তা তোমার দোষের কারণেই হবে। মনে রেখো কিছু ভুল শোধরানোর মত না। তবে ভুল গুলো করার আগে ভেবে চিন্তে করলে আজ এমন পরিস্থিতিতে পরতে হতো না।
,
,
বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো রাজ, তুষার, নিবিড় ও নীলা। নিরাকেও নিয়ে যাচ্ছে সাথে। আর যাই হোক, মেয়েটা ভুল করে এখন বিপদে পরেছে। মানুষ হিসেবে হলেও সাহাজ্য করাটা জরুরি।
সকালে তুষারের ফোন পেয়ে এখানে এসেছিলো রাজ। তার আগে নির্জনের জরুরি ফোন পেয়ে কাজের বায়না দিয়ে চলে গেলো নিলয়।
রাস্তার পাশে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছে তারা। নীলার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে নিবিড়। যেন ছারলেই হারিয়ে যাবে। তুষার তাদের হাত দুটুর দিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।
কখনো কখনো খুশি থাকার জন্য নিজের লাভের প্রয়োজন হয় না৷ প্রিয় মানুষ গুলো হ্যাপি আছে এটা দেখলেই মনের ভেতর অন্য রকম একটা প্রশান্তি কাজ করে।
কিছুক্ষন পর তুষার একটা গাড়ি ডেকে নিয়ে আসলে তাতে সবাই উঠে গেলো। নীলাকে গাড়ির ভেতরে বসিয়ে নিবিড় উঠতে যাবে এমন সময় একটা রিক্সায় থাকা মেয়ের উপর নজর পরে তার। মেয়েটা তাহলে এই এলাকায় থাকে? কিছুক্ষনের জন্য দৃষ্টি থমকে যায় নিবিড়ের।
এক হাত বাড়িয়ে আচমকাই ডেকে উঠে,
– ফারিহা।
To be continue……..
#ছদ্মবেশ (পর্ব ৬৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
এতো খোজাখুজির পর হুট করে আজ ফারিহাকে দেখে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো নিবিড়। ফারিহা বলে ডাক দিলেও সেই ধ্বনি ফারিহার কান অব্দি স্পর্শ করতে সক্ষম হয়নি।
নিবিড় এতোক্ষন তাকিয়ে থাকা মুহুর্তটায় রিক্সা অনেক দুরে চলে গিয়েছে। গাড়ির ভেতর থেকে কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে তুষার,
– ফারিহা আবার কে?
কিন্তু নিবিড় তুষারের কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে বলে,
– পাঁচ মিনিট দাড়া আমি একটু আসছি।
বলেই দৌড়ে রিক্সাটার দিকে ছুটলো নিবিড়। কিছুক্ষনের মাঝে রিক্সার কাছে পৌছে যায় সে। রিক্সার সামনে দাড়িয়ে রিক্সা থামিয়ে বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নিলো।
নিবিড়কে দেখে চিনতে পারলো ফারিহা। তাই এমন আচরণে কোনো রিয়েক্ট করেনি সে। এতোক্ষন দৌড়ে নিবিড়কে হাঁপাতে দেখে ব্যাগ থেকে পানির বোতল টা বের করে নিবিড়ের দিকে বাড়িয়ে দিলে কিছু পানি পান করে স্বাভাবিক হয় নিবিড়।
ফারিহা বোতলটা নিয়ে বলে,
– আর ইউ ওকে?
নিবিড় অস্থিরতায় প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলে,
– তোমার বাসা কি এখানে?
ফারিহা বলে,
– হুম, এইতো কাছেই। সেদিন তো মা বলেছিলো আপনাকে বাসায় নিয়ে আসতে। কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিলেন?
নিবিড় এবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলে,
– ওসব অনেক কাহিনি পরে বলবো। এখন তোমার এড্রেস টা দাও।
মা বলেছিলো ছেলেটাকে আবার খুজে পেলে বাসায় নিয়ে যেতে। এরপর ফারিহা নিজেও অনেক খুজেছে তাকে। তাই এড্রেস না দিয়ে বলে,
– এড্রেস দেওয়ার দরকার কি? আমার সাথেই চলুন। আমিও কোচিং শেষ করে বাসার দিকে যাচ্ছি।
কোচিং এর কথা শুনে নিবিড় বলে,
– কোন ক্লাসে পড়ো?
ফারিহা বলে,
– ইন্টারে।
– এবার পরিক্ষা দিয়েছো?
– না সামনের বার দিবো।
নিবিড় আর কিছু জানতে চাইলো না। সব পরেও জানা যাবে। ওদিকে রাজ, তুষার এরাও অপেক্ষা করছে। তাই তাড়া নিয়ে বলে,
– এখন একটা ঝামেলায় পরেছি। তাই তোমার সাথে যেতে পারছি না। এড্রেসটা দাও তারাতারি। বিকেলের দিকে আসবো আবার। তোমার আম্মুকে বলে দিও।
ফারিহা এড্রেস দিলে এর মাঝে তুষারও এসে দাড়ায় তার পাশে। একবার ফারিহার দিকে আরেকবার নিবিড়ের দিকে তাকাচ্ছে সে। কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে হতাশা ভঙ্গিতে বলে,
– নীলা ও নিরা দুজনই একসাথে গাড়ির মাঝে বসে আছে।
তুষারের কথায় ফারিহা কিছু বুঝতে না পারলেও নিবিড় বুঝতে পেরে কিছুটা নিচুস্বরে বলে,
– ও আমার বোনের মতো। ফালতু বকবি না।
তুসারও এবার সিরিয়াস ভাব নিয়ে বলে,
– মেয়েটা কে?
ফারিহার থেকে বিদায় নিয়ে তুসারকে নিয়ে হাটা ধরে নিবিড়৷ ফারিহা অবাক হয়ে চেয়ে রইলো দুজনের কান্ডে। মনে টেনশন ঢুকে গেলো তার। কাকে এড্রেস দিয়েছে? কোনো বাটপারের খপ্পরে পরতে যাচ্ছে না তো সে? এড্রেস দিলো আর একদিন হুট করে দেখবে বাসার সব কিছু নিয়ে গায়েব। ফারিহার মনে এমন দুশ্চিন্তা জেগে উটলেও আবার নিজেকে বুঝ দেয় যে, না ছেলেটাকে দেখে ভালোই মনে হয়।
নিবিড় হাটতে হাটতে তুষার বলে,
– মেয়েটা কে সেটা পরে বলবো তোকে।
তুসারও তার সাথে হাটতে হাটতে বলে,
– ভাই আমি বুঝতে পারছি না কি করছিস। এবার কোনো ঝামেলায় পরলে কিন্তু আমি নিজেও গিয়ে তোর পিঠে কয়েকটা দিয়ে আসবো মনে রাখিস।
দুজন হাসতে হাসতে চলে গেলো গাড়িটার সামনে। নীলা তখন সবার সামনে চুপ করে রইলো। এসব মেয়ে সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করলো না তাকে।
,
,
নীলা ও নিরাকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করলো তারা। নীলাকে দেখে ফরিদা আন্টি ও নীলার বাবার মন খুশিতে নেচে উঠলেও, নিরাকে দেখে তাদের হাস্যজ্জল মুখে আধার নেমে আসে। ফরিদা আন্টি রেগে গেলে রাজ তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
নিলয় অনেক আগেই বাসায় চলে এসেছে। মুখটা গোমড়া হয়ে আছে তার। যেন আজও খুব বড় একটা ক্ষতি হয়ে গেলো। তবে তার এমন বিষণ্নতা বাইরে প্রকাশ করছে না। নিরাকে দেখে রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– তাকে কেন বাসায় নিয়ে এসেছো?
রাজ নিরার অসহায়ত্বের কথা বললে নিলয় কিছুটা রাগি দৃষ্টিতে নিরার দিকে চেয়ে বলে,
– এদের তিন জনকেই সহজ সরল পেয়ে ইমোশনাল বানিয়ে আবার কোন কাহিনি সাজাতে এসেছো এখানে?
নিলয়ের কথা শুনে এবার নিরার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সবাই নিলয়ের দিকে তাকালো। আর নিরা খুব অসহায় দৃষ্টিতে রাজের দিকে তাকালো।
যা দেখে নিলয় আবার বলে,
– তোমার এমন মায়া ভরা করুন চাহুনিতে ওদের মন গলানোর চেষ্টা করবে না। আমার দিকে তাকাও। তোমার মত এমন মেয়েদের আমার ভালো করেই চেনা আছে। তাই আমার সামনে বেশি ইনোসেন্ট সাজার চেষ্টা করবে না।
নিলয়ের মুখে এমন কঠোর কঠোর কথা শুনে সবাই হা করে চেয়ে আছে তার দিকে। এটা কি সত্যিই নিলয়?
ফরিদা আন্টি সহ সবাই অবাক হলেও শুধু নিবিড়ের কানের কাছে গিয়ে তুষার ফিসফিসিয়ে বলে,
– হালার উপর মনে হয় আবার জ্বিন ভর করছে।
,
,
অনেক বছর ধরে একটা জিনিস প্যাকেটিং করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলো। সেটা একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগটা কাধে নিয়ে রওনা দিলো ফারিহার থেকে নেওয়া ঠিকানাটার উদ্দেশ্যে।
নিবিড়কে এমন ব্যাগ নিয়ে কোথাও রওনা দিতে দেখলে বাকিরা জিজ্ঞেস করলে নিবিড় বলে, একটা জরুরি কাজে যাচ্ছে। শেষ হলে এসে সব বলবে।
সবাই অল্পতেই বুঝে গেলেও তুষারের মনে ঘটকা লাগলো বিষয়টা। তার মতে, নিবিড় নিশ্চই আবার কোনো মেয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। কথায় আছে, আমি পাপকে ছারলেও পাপ আমাকে ছারে না। বিষয়টা অনেকটাই এমন। এই নিবিড়ের সাথে থাকলে একদিন না একদিন হয়তো ভাগ্যটা খুলেই যাবে।
তাই কোনো কথা ছারা তুষারও বলল তার সাথে যাবে। নয়তো নিবিড়কে যেতে দিবে না সে। মনে মনে বিরক্ত হলো নিবিড়। এই বন্ধু জিনিসটাই এমন। কখনো উপকারি, কখনো মিষ্টি, কখনো হালকা ঝাল, আবার কখনো তিতার চাইতেও বিরক্তিকর। দিন শেষে আবার বিপদে তারাই পাশে থাকে।
তুষারকেও নিয়ে যাওয়ায় একটা শর্ত দিলো নিবিড়। ওখানে গিয়ে যেন আবার কোনো অঘটন না ঘটায়।
,
,
ঠিকানা অনুযায়ি একটা বাড়িতে পৌছে গেলো দুজন। রুশান ও রাজদের মত এতো বড় বাড়ি না। গেট পেড়িয়ে ছোট একটা জায়গার মাঝে একটা তিন তলা বাড়ি। নিচ তলায় তারা থাকে আর উপরের দুই তলা ভাড়া দেওয়া।
তুষার বাড়িটার দিকে একবার চেয়ে অবাক হয়ে বলে,
– এখানে আবার কোথায় আসলি? তুই না বললি তোর কোনো রিলেটিভ নেই?
নিবিড় বাড়ির সামনে গিয়ে বলে,
– চুপচাপ থাকবি। কারণ অনেকেই বকবক পছন্দ করে না। তাছারা আমি নিজেও জানিনা এই বাড়ির মানুষ কেমন?
কেন জানি আজ খুব নার্ভাস ফিল হচ্ছে নিবিড়ের। মানে কোনো কারণ ছারাই যেন আজ হাত-পা কাঁপছে তার। কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি।
দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিং বাজালে একটু পর দরজা খোলে ফারহা। নিবিড়কে সেদিন দেখলেও আজ মনে করতে না পেরে বলে,
– তোমরা কারা, আর কাকে চাও?
নিবিড় চুপ করে দাড়িয়ে রইলে পাশ থেকে তুষার একটা চিমটি কাটলে একটু কেঁপে উঠে স্বাভাবিক হয় নিবিড়। যা দেখে ফারহা আবার বলে,
– কারা তোমরা?
নিবিড় এবার কিছুটা নার্ভাস চেহারা নিয়ে বলে,
– জ্বি আমি নিবিড়।
এর মাঝে ফারিহা রুম থেকে বেড়িয়ে মায়ের পাশে এসে দাড়ায়। নিবিড়কে দেখে বলে,
– আরে মা, তোমাকে একটা ভাইয়ার কথা বলেছিলাম না? আবার আজ সকালে তোমাকে বললাম না যে একটা ভাইয়া আসবে। এই হচ্ছে সেই ভাইয়াটা।
ফারহা এবার বুঝতে পেরে তাদের ভেতরে আসতে বলে।
নিবিড় ও তুষার দুজনই ভেতরে এসে সোফায় গিয়ে বসলো।
কিছুক্ষন ওভাবেই বসে রিলো দুজন। তুষার বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে একটু আগে আসা মেয়েটাকে দেকা যাচ্ছেনা বলে। তুষারের এমন হাব ভাব দেখে নিবিড় কারণ জিজ্ঞেস করলে তুষার বলে,
– মেয়েটা কিন্তু দেখতে শুনতে খারাপ না।
নিবিড় একটা হাসি দিয়ে বলে,
– শুনলি না একটু আগে আমাদের ভাইয়া ডেকেছে সে। তাই আমাদের বোন হয়। ওটা কি ভুলে গেলি?
তুষার মাছি তাড়ানোর মতো করে কথাটা উড়িয়ে দিয়ে বলে,
– ভাইয়া তোকে ডেকেছে। আমাকে তো আর ডাকে নি।
এর মাঝে ভেতর থেকে আবরার-ফারহা দুজনই আসলো সেখানে। তাদের পাশের সোফাটায় বসলো তারা। ফারিহাও নাস্তা নিয়ে তাদের সামনে রেখে মায়ের পাশে গিয়ে দাড়ায়। দুজনের সাথে পরিচিত হয়ে দুজনকে চা নিতে বলে আবরার নিজেও চা হাতে নিলো। সবাই পরিচিত হওয়ার মত কথা বলছে আর চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে।
এর মাঝে সবার দৃষ্টির আড়ালে তুষার হাতের আঙুল নাড়িয়ে ফারিহাকে ‘হায়’ সূচক একটা ইঙ্গিত জানালো। কিন্তু তেমন একটা পাত্তা না পেয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে গোমড়া মুখে চায়ের কাপে চুমুক দিলো।
নাস্তা ও পরিচয়ের পার্ট শেষ হলে আবরার বলে,
– ফারিহার কাছে আমি সব শুনেছি। কিভাবে তোমাদের পরিচয় হয়েছে। আর কেনোই বা আমাদের সাথে দেখা করতে চাইছো। সবই বলেছে আমার। যাই হোক, আমাদের ছেলেটা সেই ছোট বেলায় হারিয়েছে। যখন তার আড়াই বছর বয়স ছিলো। এখন বেচে আছে কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু তুমি নাকি ফারিহাকে বলেছো আমাদের ছেলেকে খুজে দিতে পারবে। এটা কিভাবে পসিবল?
আবরারের কথা শুনে পাশ থেকে তুষার বলে,
– আঙ্কেল নিবিড়ের নিজেরই তো কোনো বাবা মা নেই। তার বাবা-মা কে সেটা সে নিজেও জানেনা। তাহলে সে কিভাবে আপনার হারিয়ে যাওয়া ছেলে খুজে দিবে?
আবরার এবার কিছু না বলে ফারিহার দিকে তাকালে ফারিহা বলে,
– সে নিজেই তো আমাকে নিশ্চয়তা দিয়েছে যে ভাইয়াকে খুজে দিতে পারবে। আপনাদের সাথে দেখা করতে চায়। তাই তো আমি নিয়ে আসলাম।
এবার নিবিড় চুপ থাকা অবস্থায় ব্যাগ থেকে সেই প্যাকেটিং করা জিনিসটা বের করে আবরারের হাতে দিয়ে কিছুটা জড়তা মাখা গলায় বলে,
– এটা খুলে দেখুন তো কিছু চিনতে পারেন কি না।
আবরার এবার তা হাতে নিয়ে তা আনবক্স করতে লাগলো। খুলে ভেতরে দেখে একটা জামা, একটা প্যান্ট, এক জোড়া ছোট ছোট জুতা, আর একটা হাত ঘড়ি।
আরবার আর ফারহা ওসব দেখে অবাক ভঙ্গিতে দুজন একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। ফারহা সেগুলো হাতে নিয়ে বলে উঠে,
– এগুলো তো আমার সেই ছোট ফাহাদের গায়ে ছিলো সেদিন।
নিবিড় আবার কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। কয়েক ফোটা জল গাল বেয়ে ফ্লোরে আছড়ে পরলো। এক মুহুর্তের জন্য যেন নিস্তেজ হয়ে রইলো। কিছু বলার জন্য যেন সেই বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে। কি এক অদ্ভুত অনুভূতি।
কিছুক্ষন নিশ্চুপ হয়ে রইলো সে। চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পরছে তা সে নিজেই বুঝতে পারেনি এতোক্ষন। একটা ঘোরের মধ্য থেকে বেড়িয়ে হটাৎ বুঝতে সক্ষম হলো যে তার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। আর আবরার-ফারহা দুজনই চেয়ে আছে তার দিকে।
নিবিড় চুপচাপ মুছে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে তাদের দিকে চেয়ে বলে,
– আমাকে যেই মানুষটা কুড়িয়ে পেয়েছিলো এগুলো তার কাছেই ছিলো। আমি জানার পর এগুলো যত্ন করে এতো বছর নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলাম।
To be continue………….