#ছদ্মবেশ,পর্ব ৭৩,৭৪
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৭৩
সকাল থেকেই আরোহিদের বাসার চেকিং শুরু হয়ে গেছে। সবটা দেখে পুরো বাসাটা গুছিয়ে রেখে দিলো গার্ড গুলো। নির্জন বাড়িতে আসার আগে এভাবে পুরো বাসা চেক করা হয়। এই পথে চলতে চলতে বিশ্বাস ঘাতকতার সাথে এতোটাই পরিচিত হয়ে গেলো যে, নিজের ফ্যামিলির মানুষ ও কাজের লোকদের উপরও তার বিশ্বাস এতোটা জোড়ালো নয়। শুধু বাসায় না, যে কোনো যায়গায় নির্জন পা ফেলার আগে জায়গাটা ভালো বাবে চেকিং করে নেওয়া হয়। যেটা তার এক্সট্রা সিকিউরিটি।
তাই বলে ফ্যামিলির মানুষদের উপরও এমন সন্দেহটা মোটেও পছন্দ নয় আরোহির মায়ের। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও, এখন তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে সে। এখন তার ভালো কাজ বা খারাপ কাজ কোনোটাতেই তেমন একটা গুরুত্ব দেয়না সে।
থেকে যায় শুধু আফসোস। এমন একটা পশুর সাথেই কেন তার ভাগ্যটা জড়িয়েছিলো।
নিজের রুমে নিশ্চুপ হয়ে বসে ছিলো আরোহি। হটাৎ কারো রুমে ঢুকার শব্দ শুনে পেছনে তাকায় সে। সামিরকে রুমের ভেতরে দেখে আচমকাই বসা থেকে উঠে তার দিকে চেয়ে বলে,
– না বলে আপনি এভাবে হুট করে আমার রুমে আসার সাহস পেলেন কোথায়?
আরোহির চোখে মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট। সামির স্বাভাবিক ভাবে একটা হাসি দিয়ে আরোহির দিকে এগিয়ে এসে তার সামনে দাড়ায়।
মুচকি হেসে আরোহির কাঁধে হাত রেখে বলে,
– রেগে যাচ্ছো কেন? শান্ত হয়ে বসো।
আরোহি এক ঝাটকায় হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলে,
– গায়ে হাত দিয়ে এমন অসভ্যের মত আচরন করছেন কেন?
সামির বেহায়ার মত আবার হেসে বলে,
– পর কেউ না, কয়দিন পর স্বামিই হয়ে যাচ্ছি তোমার।
আরোহির চোখে মুখে রাগের ছাপটা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। রাগের ছাপ ধরে রেখে বলে,
– ম’রে গেলেও এই বিয়ে করবো না আমি। এক্ষুনি রুম থেকে বের হবেন, হয়তো আমি চিৎকার করবো।
আরোহির কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলোনা সামিরের মাঝে। উল্টো আরো একগাল হেসে বলে,
– হুম বের হবোই, তোমার সাথে থাকতে আসিনি এখানে। কিছু কথা বলতে এসেছি, চুপচাপ মাথায় ঢুকিয়ে নাও।
সামিরের কোনো কথাই শুনতে রাজি নয় এমন বিরক্তি প্রকাশ করলো আরোহি। সামির আবার বলে,
– তুমি ভালো করেই জানো, রাজ পড়াশোনার জন্য এই শহরে এসেছে। তাকে তুমি ভালোবেসেছে বা ভালো লাগে যাই হোক। সেটা আমার দেখার বিষয় না। বাট, তুমি তো কখনো চাইবেনা রাজের কোনো ক্ষতি হোক, তাইনা?
সামিরের এমন কথায় আচমকাই রাগের সাথে ভাব ভঙ্গি কিছুটা চুপসে গেলো আরোহির। কারণ এই কয়দিনে আরোহি ভালো করেই বুঝতে পেরেছে, স্বার্থ আদায়ে এরা যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। আর রাজের কোনো ক্ষতি হোক এটা কখনোই সে চাইবে না। তাই কিছুটা ভয়ার্ত গলায় বলে,
– মানে!
সামির এবার দুই পকেটে হাত গুজে বলে,
– মানে খুবই সিম্পল। তুমি দ্বি-মত করলে, রাজ অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই শহরে পা রেখেছে, তাই সেই স্বপ্ন গুলো কখনোই পুরণ হবে না। মুহুর্তেই জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে তার। এখন তোমার কারণে একটা সাধারণ মানুষের লাইফ নষ্ট হয়ে যাবে, এমনকি যেই মানুষটাকে তুমি ভালোবাসো। সে তো বাসেনা। তাহলে তোমার জন্য সে কষ্ট পাবে কেন বলো?
অজানা একটা ভয়ে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো আরোহি। সত্যিই তো, রাজ সাধারণ একটা ছেলে। এখনো পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ত। আর এরা চাইলে রাজকে যা খুশি তাই করতে পারবে। কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা আরোহি।
সামির কিছুটা রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
– যা বলেছি সব মাথায় ঢুকিয়ে নাও। রাজের ভালো চাও তো, যা হচ্ছে চুপচাপ সব মেনে নাও।
বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো সামির। মনটা বিষণ্ন হয়ে উঠলো আরোহির। ধপাস করে বিছানায় বসে পরেসে । এখন যা হচ্ছে এসব কিছুর সাথে কখনো পরিচিত ছিলোনা আরোহি। তাই সময়ের সঠিক সিদ্ধান্তঃ নেওয়াটা তার কাছে খুব বেশিই কঠিন।
চোক্ষু যুগল ছলছল করে উঠলো তার। যেন এক্ষুনি বর্ষণ হবে ঐ চোখ দিয়ে। মুহুর্তেই যেন চার পাশটা ঝাপশা হওয়ার মত অনুভূতি তৈরি হলো তার।
,
,
এদিকে রাজের রাগ যেন কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। নিলয়ের দিয়ে যাওয়া তথ্য গুলো ঘাটাঘাটি করে নিজের মাঝে একটা প্ল্যানিং সাজিয়ে নেয় সে।
রেজোয়ানকে সব কিছু রেডি করতে বলে। রুশানের সাথে আলাপ করে রাত হতেই বের হয়ে যায় সে। রুশানকে নিয়ে গেলো না সাথে। কারণ এসব কিছুর সাথে আইনি লোক থাকলে আর তা প্রকাশ পেয়ে গেলে অনেক ঝামেলার মুখুমুখি হতে হবে। এর পরে সকাল হতে বাকি পদক্ষেপ টা রুশান নিবে।
রেজোয়ান তার টিম নিয়ে অপেক্ষা করছে রাজের জন্য। রেজোয়ান সহ রাজের সব লোক কালো কাপর পরিহিত অবস্থায় দাড়িয়ে আছে। হাত থেকে শুরু করে মুখও কালো কাপর গিয়ে মোড়ানো তাদের। যেন কেউ চিনতে না পারে তাদের।
রেজোয়ান কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সময় দেখার জন্য বারংবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে। কারণ ওসব জায়গায় পৌছাতেও মধ্যরাত হয়ে যাবে। আর যা করার মধ্য রাত থেকে শেষ রাতের মাঝেই করতে হবে।
কিছুক্ষনের মাঝেই নিজের সেই হুডি ও মাস্ক পরা রুপে তাদের সামনে আসলো রাজ। রাজকে দেখে সম্মানের সহিত একটা সালাম দিলো রেজোয়ান। কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে রাজের সামনে রাখলো।
ব্যাগটা খুলে বেশ কয়েকটা পি’স্তলের মাঝে দুটো পিস্তল লোড করে কোমরে গুজে নিলো রাজ। সাথে একটা ধারালো ছু’রি। যখন যেটার প্রয়োজন, সুজুগে সৎ ব্যবহার করবে সে।
রাজের লোক গুলোকে তিনটা টিমে ভাগ করে ছয় জন করে তিন জায়গায় পাঠিয়ে দিলো রাজ। ওরা আগে থেকেই এসবে ট্রেনিং নেওয়া। নিজের আত্মরক্ষার জন্য এদের স্পেশাল ভাবে তৈরি করেছিলো সে।
তিন দলে ভাগ হয়ে সরঞ্জাম নিয়ে ঠিকানা অনুযায়ি চলে গেলো লোক গুলো। আর এদিকে রাজ আর রেজোয়ান দুজন তাদেও মেইন টার্গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে আজ রাতের জন্য নির্জনের সবচেয়ে বড় বড় গ্রুপ গুলোকেই টার্গেট করেছে সে। নিলয়ের মত স্ট্রাইকার হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই যেন নির্জনের ধ্বংসের পাহারটা ধীরে ধীরে ধসে পড়তে শুরু করবে।
,
,
সকালে পাখির কিচির মিচির ডাকের সাথে পূর্ব আকাশে একটু একটু করে আলো ফুটতে শুরু করলো। উদীয়মান সূর্যের সোনালি আভা ফুটে উঠছে চার দিকে। রাতের খবর টা এতোক্ষন চাপা রইলো না। অনেক্ষন আগেই নির্জনের কানে পৌছে গেলো তা।
বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে বাড়িতে গেলেও ভোর রাতেই সামিরকে নিয়ে চলে গেলো নির্দিষ্ঠ গন্তব্যের দিকে।
সব মিলিয়ে চারটা গ্রুপে ৮৭ জন লোকের লা’শ পেলো নির্জনের বাকি টিম মিলে।
আতঙ্ক তৈরি হওয়ার আগেই বাকিরা ভোর রাত থেকেই সব গুলো লা’শ সরিয়ে প্রকৃতি আলোকিত হওয়ার আগেই তা নদীতে গিয়ে ফেলে দিলো নির্জনের কথা মত। কারণ নদীতে লা’শ পাওয়া গেলে আতঙ্কটা নির্জনের উপর দিয়ে শুরু হবে না। কেউ জানবেও না এরা নির্জনের সাথে সম্পর্কিত।
,
,
সকাল পার হয়ে সূর্যটা মাথা বরাবর উঠতে শুরু করলো। সেই সাথে বাড়তে থাকলো রোদের তাপ। এর মাঝে লা’শ গুলো নদীর বিভিন্ন জায়গায় ভেষে উঠতে লাগলো এক এক করে। এত গুলো লা’শ এভাবে নদীতে ভাসতে দেখে চার পাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরতে থাকে। এমনটা এর আগে কখনো হয়নি। হয়তো একটা দুইটা লা’শ পেয়েছিলো। তবে এভাবে ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট রাজশাহি চার বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শতাধিক লাশ উদ্ধারের পর চার দিকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। এই হ’ত্যাকান্ড মোটেও স্বাভাবিক নয়।
রুশান সবটা জানলেও নিশ্চুপ থেকে রহস্য উদঘাটনে নেমে পরে সে। রাজের প্ল্যান মোতাবেগ কয়েকদিন এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি রেখে শেষে সব গুলো খু’নের দায় নির্জনের দিকোই ইশারা করবে।
দেশে সকলের প্রিয় মানুষটার সম্পর্কে তো আর একেবারে দোষ চাপালে কেও বিশ্বাস করবে না। তাই তীলে তীলে তার অপরাধ গুলো প্রকাশ হতে থাকবে। সত্য গুলো একে একে বের হতে শুরু করলে এতোদিন মাথায় তোলা মানুষরাই ছুড়ে ফেলতে শুরু করবে তাকে।
এই লা’শ গুলোর দ্বায় চাপানোর সবচেয়ে বড় প্রমান হলো নির্জনের লোকেরা লা’শ গুলো তুলে নদীতে ফেলে দেওয়ার ভিডিও ক্লিপ। যা রাজ আগে থেকেই সব সেটিং করে রেখেছিলো।
এখন এই কয়দিন নতুন নতুন নিউজ ছাপিয়ে পরিস্থিতি আগে উত্তাল করতে হবে। রাজের প্ল্যান মোতাবেগই এগিয়ে যাচ্ছে রুশান। আইনের লিমিট রেখে এদের বিরোদ্ধে মিশনে নেমে এর আগেও অনেক অফিসার নিখোজ হয়ে গেছে। তাই রাজের এই ভিন্ন প্ল্যানিং অনুযায়ী রুশানের এগিয়ে যাওয়া। এতে সা’পও ম’রবে, লাঠিও ভাঙবে না।
,
,
আজ বেশ কয়েকদিন পর ভার্সিটির গেটে পা রাখলো রাজ, তুষার ও নিবিড়। রুশান এখন দৌড়ের উপর সময় পার করছে। প্রায় দের-দুই মাস তো হবেই কম করে। রুশানের ঝামেলাটার পর থেকেই একটার পর একটা ঝামেলা শেষ করতে অনেক ব্যস্ততার মধ্য দিকে কেটেছে তাদের।
বাধলো আরেক বিপত্তি। নিবিড়কে ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করার নোটিশ দিয়েছে। কারণ তার উপর খু’নের অভিযোগ উঠেছিলো। প্রাইভেট ভার্সিটি দেখে অনেক রুল্স অনুযায়ি চলতে হয় ছাত্রদের।
সবটা জানার পর নিশ্চুপ হয়েছিলো নিবিড়। বুঝতে বাকি রইলো না এমনটা হলে তার জীবন নষ্ট হতে আর বাকি থাকবে না।
প্রেন্সিপাল অফিসে গিয়ে অনক অনুরুধ করলো নিবিড়। কিন্তু কিছুতেই কাজ হলো না। সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে এবার তুষারও বলে,
– তাকে বহিষ্কার করলে আমাদেরও করতে হবে তার সাথে।
আবেগের বসে তুষারের এমন বোকামিতে কিছুটা বিরক্তিবোধ করলো রাজ। প্রেন্সিপাল বিষয়টাকে উড়িয়ে দিয়ে বলে,
– কয়দিন পর কলোজে পা রেখেছো মনে আছে? আর সাথে তুমি কেন, আরো দশটা ছাত্রকে বহিষ্কার করলেও কলেজের কিছুই যায় আসে না।
হাল ছেড়ে হতাশার দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তুষার। পাশ থেকে রাজ অনুমতি নিয়ে বাইরে চলে গেলো। এখানে দাড়িয়ে থাকলে নির্ঘাত মাথা খারাপ হয়ে যাবে। গুরুজনদের সাথে বেয়াদবি করার শিক্ষাটা অন্তত পায়নি সে।
রাজ কিছুটা আড়ালে গিয়ে তার ভাই রাজুর নাম্বারে কল দিয়ে বিষয়টা বলে। মুখে একটা মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলে,
– তোমার কলেজ থেকেই আমাদের বের করা হচ্ছে ভাইয়া। নিজেকে আড়ালে রাখতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের কলেজেও আমার জায়গা হচ্ছে না।
রাজু বিষয়টা বুঝতে পেরে রাজকে শান্ত থাকতে বলে বিদায় নিয়ে ফোন রেখে দিলো। চুপচাপ নিজের অবস্থানেই দাড়িয়ে রইলো রাজ। কিছুক্ষণের মাঝে একজন পিয়ন এসে রাজকে ডেকে নিয়ে গেলো অফিস কক্ষে।
রাজ আর প্রেন্সিপাল ব্যতিত সবাইকে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। এতোক্ষন ধমকের স্বরে কথা বললেও এখন কিছুটা ভয়ের ছাপ ফুটে আছে প্রেন্সিপালের চোখে মুখে। কারণ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রাজু স্যার শহরের নাম করা পলিটিক্যাল লিডার। তার ভাইয়ের সাথেই এতোক্ষন দুঃব্যবহার করে কিছুটা ভয়ের ছাপ ভেষে উঠেছে তার মাঝে।
স্যার কিছুটা জড়তা নিয়ে বলে,
– আমি যতদুর জানি রাজু স্যারের ছোট ভাই মানে আপনি বাইরে থেকে নিজের পড়াশুনা শেষ করে ফেলেছেন। সেই তুলনায় আপনার এডুকেশন আমাদের শিক্ষকদের সমতূল্য বা এর চেয়েও হাই। এখানে নতুন করে এডমিশন নেওয়ার বিষয়টা আমি বুঝতে পারছি না।
রাজ একটু হেসে বলে,
– সবটা তো দেশের বাইরেই করেছি। নিজেদের কলেজেও একটা সার্টিফিকেট থাকুক। এটা ভেবেই এডমিশন নিয়েছিলাম।
স্যার কিছুটা অনু সূচনা নিয়ে বলে,
– একটু আগে আপনাদের সাথে খারাপ বিহেব করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
রাজ আচমকাই বলে উঠে,
– আমাকে ছোট করবেন না স্যার। আপনি আপনার দায়িত্ব থেকে সঠিক কাজটাই করেছেন। আর আমি আপনার ছাত্রই। তবুও আমি অনুরুধ হিসেবে একটা কথা বলবো ওদেরকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করবেন না। আপাততঃ একটা সুজুগ দিন তাদের। আরেকটা কথা স্যার আমার পরিচয়ের কথা যেন আপনি ব্যতিত আর কেউ না জানে।
স্যার আর কিছু বললো না। শুধু ‘হ্যা’ সম্মত জবাব দিলো।
,
,
বিকেলে তুষারকে আলাদা ডেকে নিয়ে রাজ বলে,
– ভার্সিটিতে তোদের দুজনের সবটা মিটিয়ে সামনের এক মাসের ছুটি নিয়ে রেখেছি।
তুষার কিছুটা অবাক হয়ে কারণ জানতে চাইলে রাজ বলে,
– কারণ এই এক মাস নিবিড়কে নিয়ে তুই তোদের গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সাথে সময় কাটাবি। তোদের গ্রামের বাড়ির খবর তো আমরা ছারা কেও জানেনা?
তুষার দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ জানালো। তুষারের উত্তর পেয়েই রাজ বলে,
– তাহলে এই এক মাস দুজন তোদের গ্রামের বাড়িতে সময় কাটাবি। তবে এখানে কেও যেন কিছু জানতে না পারে। কারণ আমি চাইনা কোনো ভাবে জানাজানি হয়ে গেলে আমার আর রুশানের বিষয় গুলোতে কেউ তোদের টেনে আমাদের ব্লেকমেইল করুক। তারা নিলয়ের মত তোদের কোনো ক্ষতি করুক। তাই নিবিড়কে নিয়ে দুজন এই এক মাস তোদের গ্রামের বাড়িতে থাকবি।
তুষার বিষয়টা বুঝতে পেরে বলে,
– তার মানে বলতে চাইছিস, তোদের বিপদে রেখে আমরা গিয়ে বাড়িয়ে বসে থাকবো?
রাজ একটু মুচকি হেসে বলে,
– আমরা আমাদের জন্য নয়, তোদের জন্য চিন্তিত। কারণ মানুষ সরাসরি কাউকে কিছু করতে না পারলে তাদের দুর্বল জায়গা গুলো খুজে বের করে। তাই আমাদের সব জায়গা থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। তুই ছোট না, তোকে এসব ভেঙে বলতে হবে না। আশা করি আমার কথাটা বুঝতে পেরেছিস।
তুষার নিশ্চুপ থাকলে এর মাঝে নিবিড়ও আসে সেখানে। সবটা দুজনকে বুঝিয়ে রাজ তাদের হাতে দুইটা সিম দিয়ে বলে,
– ব্যবহিত সিম গুলো এই এক মাস ইউস করবি না। বন্ধ রাখবি এগুলো। নতুন সিম দিয়ে সবার সাথে যোগাযোগ করবি।
,
,
রাতের বেলায় এই নিয়ে মায়ের সাথে কথা হচ্ছে তুষারের। যে এক মাসের জন্য বাড়িতে যাচ্ছে সে। আগের বার তো অপারেশন নিয়ে দৌড়া-দৌড়ি করে তাদের সাথে তেমন একটা সময় কাটাতে পারেনি। তাই এবার এক মাসের জন্য যাচ্ছে বাড়িতে। সাথে তার একটা বন্ধুও যাবে ঢাকা থেকে।
এর মাঝে মায়ের থেকে ফোনটা নিয়ে তীসা হাসি মুখে বলে উঠে,
– ভাইয়া তুমি কি সত্যিই এক মাসের জন্য আসবে? তাহলে কিন্তু আমাকে অনেক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।
তুষার একটু হেসে বলে,
– পাকনা বুড়ি দেখছি বড় হয়ে গেছে। সুজুগের সৎ ব্যবহার ভালোই করতে শিখেছিস।।
তীসা একটু ভাব নিয়ে বলে,
– আমি এতো কিছু বুঝি না। আগে বাড়িতে আসো, পরের টা পরে দেখা যাবে। আর তোমার সাথে কে আসবে?
তুষার স্বাবাবিক ভাবেই বলে,
– তোর আরেকটা ভাইয়া।
To be continue………….
#ছদ্মবেশ (পর্ব ৭৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
– ছবিতে এই হুডি পড়া ছেলেটা কে? কেন এভাবে আমাদের পেছনে লেগেছে। আমাদের যত লোকদের মা’রা হয়েছে, সব যায়গায় এই ছেলেটাকে দেখতে পাওয়া যায়। আইনেরও কোনো লোক নয়। তাহলে সে চাইছে টা কি এটা খুজে বের করো ইমিডিয়েটলি।
নির্জনের গম্ভির গলায় কথাটা শুনে পাশে দাড়ানো ছেলেটা মাথা নেড়ে জবাব দিলো,
– জ্বি বস আমরা খোজ নেওয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি খুব তারাতারিই জানতে পারবো।
নির্জন কিছুটা ভেবে বলে,
– বেপারটা যত ইজি ভাবছো, এটা মোটেও এতোটা ইজি নয়৷ ছেলেটা আমাদের ব্যাপারে সব জেনেই আমাদের পেছনে লেগেছে। নয়তো এতো নিখুত ভাবে কিছু করা সম্ভব হতো না। এখন যেভাবেই হোক, কোনো না কোনো ভাবে ওর সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করো। আর জানার চেষ্টা করো তার আসল উদ্দেশ্যটা কি? ব্যবসায়িক কোনো উদ্দেশ্য থাকলে ডিলে বসে তাকে হাতে আনার চেষ্টা করো। পরের টা পরে দেখা যাবে।
বলেই আবার কিছুক্ষন চুপ থেকে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে টেবিলে একটা ঘুসি দিলো নির্জন। বিরবির করে বলে,
– নিলয় থাকলেও এই ব্যাপারে কিছুটা নিশ্চিত থাকতে পারতাম। ঐ সা’লাও পল্টি মা’রার আর সময় পায়নি।
আফসোসটা এমন ভাবে চোখে মুখে ভেষে উঠেছে যেন, নিলয়ের তুলনায় বাকিদের যেন একটুও ভরসা করতে পারছে না নির্জন।
,
,
বাস থেকে নেমে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে রাস্তার পাশে দাড়ায় নিবিড়। তার পেছনে তুষারও নেমে আসে। নিবিড় চার পাশে চোখ বুলিয়ে বলে,
– এটা তোদের এলাকা?
তুষার কাঁধের ব্যাগটা ঠিক করে বলে,
– না, এটা উপজেলা। গ্রাম আরো ভেতরে। এখান থেকে আবার গাড়িতে উঠতে হবে।
নিবিড় চারপাশে চেয়ে বলে,
– কেনাকাটা তো এখান থেকে করতে হবে। নাকি গ্রামের ভেতরেও এমন মার্কেট আছে?
তুষার একটু হেসে বলে,
– আশে পাশের কয়েক গ্রামের মাঝে সুপার মার্কেট এটাই। গ্রামের ভেতরের দিকে গেলে আছে ছোটখাটো বাজার ও কিছু দোকানপার্ট। তবে মনোরম পরিবেশে একবার জড়িয়ে গেলে তোর বের হতে মন চাইবেনা আর।
নিজেদের মত কেনাকাটার শুরুর প্রথমেই তুষার ভালো দেখে দুটো চকলেট বক্স নিলো। পাশে নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– বাড়িতে যাওয়ার পর যদি তীসা দেখে বেগের ভেতর এগুলো নেই, তাহলে মুখ গোমড়া করবে যে আর কথাই বলতে চাইবে না আমার সাথে। এর আগে ভুলে একবার এমন হয়েছিলো। সারা দিন আর কথা বলেনি আমার সাথে।
নিবিড়ের হাসি পেলো কিছুটা। কৌতুহল বসত বলে,
– কোন ক্লাসে পড়ে তোর বোন?
তুষার বলে,
– এবার সিক্স-এ উঠেছে। এতো ফাজির ফাজি। গেলেই দেখবি বাড়িয়ে পা রাখা মাত্রই দৌড়ে এসে কেমন গলা জড়িয়ে ধরে। আরেকটা কথা তুই আবার তীসার সাথে খুব বেশি ফ্রি হতে যাবিনা৷ একবার ওর সরম ভেঙে গেলে তোর চুল টেনে, ফোন টেনে সারা দিন বিরক্ত করবে তোকে।
প্রায় বিকেল হয়ে এলো। দুপুরের খাবারটা একটা রেস্টুরেন্টেই করে নিয়েছিলো তারা। এরপর কেনাকাটা শেষে একটা সি’এন’জি করে বাড়ির দিকে ছুটলো তারা।
বাড়ির সামনে আসতেই দেখে তিন রাস্তার মোড়ে কয়েকটা ছেলে হাতে ফুটবল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তুষারকে দেখেই একজন দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
– আরে বন্ধু তুই? ঢাকা যাওয়ার পর তো আমাদের সবাইরে ভুলি গেলি। ফেসবুকেও নক দিলে পাওয়া যায়না তোরে।
তুষারও হাসি মুখে সেখানে সব বন্ধুদের সাথে হাত মিলিয়ে বলে,
– পড়াশুনা নিয়ে অনেক বিজি আছি দোস্ত। তাই সময় হয়না।
সাকিব কিছুটা অভিমানি গলায় বলে,
– তাই বলে বন্ধু বন্ধুরে এইভাবে ভুলে যায়? ঢাকা যাওয়ার আগে কি কইছিলি? বলছিলি না দুরে গেলেও যোগাযোগ রাখবি?
সাকিবের পিঠে ছোট্ট করে একটা থা’প্পর মে’রে তুষার বলে,
– তোদের ভুলবো কেনো? তোরা হলি আমার লেংটা কালের বন্ধু। যাই হোক, এখন মাস খানেক গ্রামে থাকবো। আমার এক বন্ধুও এসেছে ঢাকা থেকে। উড়াধুরা ভাবে চিল হবে সবাই মিলে।
সাকিব নিবিড়ের দিকে একবার চেয়ে একটু হেসে ফিসফিসিয়ে বলে,
– ঢাকাইয়া মাল নাকি? আচ্ছা বাদ দে ওসব। তবে যাই বল তুই কিন্তু ঢাকা গিয়ে অনেক সুন্দর হয়ে গেছত।
তুষার একটু হেসে তাদের থেকে বিদায় নিয়ে বলে,
– অনেকটা পথ যার্নি করেছি দোস্ত খুব টায়ার্ড লাগছে। এখন বাসায় গিয়ে রেস্ট নিতে হবে। সন্ধার পর দেখা হবে। এখন মনে হয় খেলতে যাচ্ছিস তোরা?
সাকিব পায়ের নিচে বলটা আটকিয়ে বলে,
– হুম দোস্ত গাবতলির সাতে খেলা আছে আজ। আচ্ছা এখন বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে। সন্ধার পর দেখা হবে।
সব শেষে বাড়িতে এসে উঠানে পা রাখলো দুজন। পাশের বাড়ির কামাল কাকার মেয়ের সাথে লাফা খেলছিলো তীসা। তুষারকে উঠানে দেখেই লতা ফেলে দৌড়ে এসে ভাইয়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে সে। তুষার একটু মুচকি হেসে বোনেকে নিয়ে হাটা ধরলো ঘরের দিকে। হাটতে হাটতে বলে,
– মা কোথায়রে তীসা?
এর মাঝে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে তৈয়্যবা বেগম। তুষার এগিয়ে গিয়ে মাকে সালাম করে। তুষারের দেখাদেখি নিবিড়ও করলো।
নিবিড়ের দিকে ইশারা করে তুষার মাকে বলে,
– তোমাকে বলেছিলাম না আমার একটা বন্ধুও আসবে? ওর নাম নিবিড়। খুব ভালো খেলে মা। আমার সাথেই একাউন্টিং নিয়ে পড়ছে।
তৈয়্যবা বেগম হুখে একটা হাসি ফুটিয়ে নিবিড়ের সাথে কথা বলে। নিবিড়ও হাসি মনে কথা বিনিময় করলে তাদেরকে নিয়ে ঘরের দিকে চলে যায়।
,
,
দিন যতই যাচ্ছে আরোহির বিয়ে ততই ঘনিয়ে আসছে। মাঝখানে আর দু’এক দিন সময় আছে শুধু। প্রথম কয়েকদিন বিষটা কোনো মতে স্বাভাবিক ভাবে নিলেও এখন আর স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছে না সে। রাজ ছারা অন্য কারো জীবনের সাথে তার জীবন জড়িয়ে যাবে এটা কিছুতেই মানতে পারছে না সে। আর কখনো মানতে পারবেও না।
এদিকে যার জন্য আরোহির এতো কষ্ট হচ্ছে সেই মানুষটারই কোনো খবর নেই।
অদ্ভুত এক ভালোবাসায় আটকে আছে সে। যেখানে নেই তার প্রতি বিপরিত মানুষটার কোনো আকর্ষণ, আর নেই এই ভালোবাসার কোনো নিশ্চয়তা। ছোট থেকে একা একা বড় হয়ে জীবনে একটা মানুষের সাথেই মিশেছে সে। সকল অনুভূতি গুলো সেই মানুষটাকেই ঘিরে। খুব বাজে ভাবেই ঘিরে ধরে আছে। এতো দিনের দুরুত্বে একটুও ছাড়াতে পারেনি সেই অনুভূতি গুলো। বরং আরো বাজে ভাবে কষ্ট দিচ্ছে তাকে।
এদিকে একটা নতুন ঝামেলা সৃষ্টি হলেও বিয়ে পিছিয়ে নেওয়া নিয়ে ভাবছে না নির্জন। কারণ পরিচিত সবাইকে ইনভাইট করা শেষ। এর মাঝে বিয়ে পিছিয়ে নিলে অবশ্যই সবাই কারণ খুজবে। আর কারণ খুজতে গিয়ে সত্যটা বের হয়ে আসুক এটা কখনোই চাইবেনা সে। বিয়ে সঠিক সময়েই হবে। যা পদক্ষেপ নেওয়ার বিয়েটা শেষ হওয়ার পরই নিবে। আপাতত সবদিকে কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে।
এদিকে ইন্ডিয়া থেকে ‘রোহান পান্ডে’ কয়দিন পর পর খোজ নিচ্ছে কালেকশন এর কি খবর।
নিলয়, পিন্টু, এতগুলো লোক মা’রা যাওয়া সব ঝড়-ঝামেলার মাঝে সবে মাত্র শতেক খানেক কালেকশন হয়েছে। এখনো প্রায় দুই শতাধিক বাকি। হাতে সময় আছে শুধু দুই মাস কি আরেকটু বেশি। নিলয়ও নেই এই মুহুর্তে। সবটা কেমন যেন একটা খাপছাড়ার মতো মনে হচ্ছে নির্জনের। সব ঝামেলা যেন চার দিক থেকেই ঘিরে ধরছে ধীরে ধীরে।
,
,
সন্ধার পর নিবিড়কে নিয়ে সেই মাচার সামনে এসে কাউকে না দেখে তুষার সাকিবের নাম্বারে ফোন দিলো। সিম পাল্টালেও ফোনে আগে থেকেই নাম্বার সেভ করা ছিলো।
কল ধরলে তুষার পরিচয় দিলে ওপাশ থেকে সাকিব বলে, তারা বাজারে আছে সবাই। বিশ মিনিটের মাঝেই চলে আসবে, এই সময়টা মাচার উপরে বসতে। তুষার এতোদিন পর আসায় সবাই নাকি প্ল্যান করেছে আজ একটা বিরিয়ানির পার্টি দিতে। তার কেনাকাটা করতে বাজারে গেলো তারা।
আয়োজন করতে করতে সন্ধা পেড়িয়ে প্রায় রাত হয়ে গেলো। কেউ গর্ত করে ইট দিয়ে চুলা তৈরি করে তার উপর পাতিল বসিয়ে ডিম গুলো সেদ্ধ করছে, আর কেউ চাউল ধুয়ে মসলা-পাতি রেডি করছে আর তুষার বসে বসে মাংস কা’টছে। তার পাশে সাকিব ও নিবিড় কথা বলছে। নিবিড়কে সবার সাথেই ভালো করে পরিচয় করিয়ে দিলো তুষার।
সাকিব পেয়াজ ও রসুনের ছোলা ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,
– ভাই আপনি সত্য করে একটা কথা বলুন তো, ঢাকা গিয়ে তুষার কি পরিবর্তণ হয়েছে নাকি এখনো মেয়েদের পেছনে ঘুরে?
নিবিড় হাসলেও তুষার বলে,
– ভাই ওসব পুরোনো হিস্টোরি বাদ দে। সেই আগের তুষার এখন আপডেট হয়েছে। এখন আমি না, মেয়েরা আমার পেছনে ঘুরে।
পাশ থেকে নিবিড় আচমকাই বলে,
– কই এখনো তো ঢাকায় কোনো মেয়ে তোকে পাত্তা দিতেও দেখলাম না।
নিবিড়ের খারার উপরই এমন অপমানে সাকিব হো হো করে হেসে উঠে। আর তুষার তাকিয়ে রইলো নিবিড়ের দিকে। কোথায় তুষার একটু ভাব নিয়েছিলো, আর সবটাতে জল ঢেলে দিলো নিবিড়।
সাকিব হাসি থামিয়ে বলে,
– ভাই বিশ্বাস করেন, তুষারের মত একটা ছেলে আমাদের অত্র এলাকেত দ্বিতীয় টা নেই।
তুষারের বুকটা গর্বে ফুলে উঠলো এটা ভেবে যে সাকিব হয়তো তার প্রশংসা করছে। কিন্তু তার মাঝে সাকিব আবার বলে,
– এলাকায় এমন কোনো শয়’তান নাই, যার পেছনে তুষার হাল ঢুকায় নাই। আর কোনো জায়গায় গেলেই একটা না একটা ঝামেলা তৈরি করে দিয়ে আসতো, পরে আমাদেরকেই এগুলো সল্ভ করতে হতো। আমার মনে হয়, একশ শয়’তান ম’রার পর এই হা’লার পুতের জন্ম হইছে।
সাকিব যে আজ নিবিড়ের সামনে তুষারের মান ইজ্জতের বারোটা বাজাতে বসেছে তা বুঝতে বাকি নেই তুষারের। মাংস কা’টা শেষ হলে সেগুলো সাকিবকে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
– ভাই এবার মুখটা বন্ধ করে এগুলো ভালো করে ধুয়ে নে।
,
,
আজ সকল ভয় ভে’ঙে রাজের নাম্বারো ফোন দিলো আরোহির মা। যা হওয়ার হোক, আরোহির এমন পাগলামি গুলো আর সহ্য হচ্ছে না তার। সারা জীবন বন্ধি থাকতে থাকতে হুট করে জন্ম নেওয়া এই অনুভূতি গুলো যেন দিন দিন এলোমেলো করে তুলছে মেয়েটাকে।
আরোহির মা ফোন কানে নিয়ে বিষণ্ন গলায় বলে,
– আরোহির বিয়ে দু’দিন পর। তার বাবা তার মতোই একজনের সাথে আরোহির বিয়ে দিচ্ছে। কয়দিন ধরে মেয়েটা অনেক পাগলামি করছে। ঘরের সব জিনিস ভাঙচুর করছে। আবার কখনো রুমে দরজা বন্ধ করে নিরবে কাঁদছে। পাগল হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা।
রাজ শান্ত ভাবে বলে,
– যা খুশি করতে দিন তাকে। শুধু খেয়াল রাখবেন সে যেন নিজের কোনো ক্ষতি না করে। ওর কিছু হবে না। সময় হলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। আপনি শুধু তাকে একটা কথাই বলবেন যে যা হচ্ছে চুপচাপ তা মেনে নিতে। সময় হলে তার মনের মতোই সব হবে। তবে হ্যা, অন্য কেউ যেন কিছু জানতে না পারে এই ব্যাপারে।
এর মাঝে কেটে গেলো আরো একদিন। ইভেন্টের লোকরা বাড়িতে আসতে শুরু করলো একে একে। সবাই গেট পেড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে চার পাশে রহস্যজনক ভাবে চোখ বুলিয়ে জিনিস গুলো নিয়ে ভেতরে চলে যাচ্ছে।
ওদিকে অরজিনাল ইভেন্টের লোকদের বেধে রেখে রেজোয়ান হাতে একটা পি’স্তল নিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে আছে তাদের সামনে। কর্কশ গলায় বলে,
– বিয়ের এই দুইদিন একজনও এই ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করবি তো জা’নে মে’রে দিবো।
ওদের মাঝে একজন কেঁদে বলে উঠে,
– ভাই ছেড়ে দেন আমাদের। সময় মত পৌছাতে না পারলে ওরাই আমাদের গ’লা নামিয়ে দিবে।
রেজোয়ার রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
– আমার সামনে বেশি কথা বললে এখনই গ’লা নামিয়ে দিবো তোদের। জীবনের মায়া থাকলে চুপচাপ এই দুই দিন এখানে পরে থাকবি। আমার লোকেরাই তোদের সব কাজ করবে। কেও কিছু জানতে পারবে না। তোরা এখানে বসেই তোদের পারিশ্রমিক পাবি।
সেখান থেকে বেড়িয়ে বাইরে কয়জন সিকিউরিটি রেখে রেজোয়ান গম্ভির ভাবে বলে,
– নজর রাখবে সব দিকে।
বলেই গাড়িতে দিয়ে বসে সে। রাজের ফোনো কল দিয়ে বলে,
– আপনার কথা মত সব ওকে ভাই। লোকগুলো কে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি ঐ বাড়িতে। এখন আমি যাচ্ছি।
রাজ কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,
– গুড, তবে চোখ কান খোলা রাখবে সেখানে যাওয়ার পর।
রেজোয়ান স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
– চিন্তা করবেন না ভাই। সবটা সামলে নিতে পারবো।
সারা বাড়ি সাজাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো ইভেন্টের লোক মানে ছদ্মবেশে আসা রেজোয়ানের লোক গুলো। সেই মুহুর্তে গেট পেড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো রেজোয়ানও। চার পাশে রহস্যজনক ভাবে একবার চোখ বুলিয়ে ভেতরের দিকে হাটা ধরলো সে।
To be continue………….