#ছদ্মবেশ,পর্ব ৮,০৯
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
০৮
স্নিগ্ধ বাতাসে চুল গুলো হালকা মুখের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো আরোহি’র। হাত দিয়ে চুল গুলো পেছনে গুজে রাজের হাত ধরে টেনে নিজের সাথে নিয়ে আসতে আসতে বলে,
– তারাতারি চলেন, কেও দেখে ফেললে আবার ঝামেলা হয়ে যাবে৷
রাজ আর কিছু বলতে পারছে না আরোহি’র সাথে সাথে যাচ্ছে। এই মেয়েটা আসলেই বাচ্চা স্বভাবের। কখন কি করে একটুও ভাবে না।
এই মেয়ের দ্বারা সবই সম্ভব, তাই কথা না বাড়িতে হাটতে লাগলো তাকে নিয়ে।
পরিচয়ের বেশি দিন হয়েছে, বিষয় টা এমনও না। অল্প দিনের পরিচয়ে কতোটা বিশ্বাস করে নিলো তাকে।
রাজ কপালে আঙুল দিয়ে একটু চিন্তা করে দেখে, সময় টা আরোহি যেমন উপভোগ করবে তেমনই তার কাজেরও কিছুটা হেল্প পাওয়া যাবে৷ তাই দ্বিতীয় কথা না ভেবে রাজ দুটো আইসক্রিম নিয়ে আরোহির কাছে দিলো। আরোহি খুশিতে হাটছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। মেয়েটা আসলেই বাচ্চা স্বভাবের।
কিছুক্ষনের নিরবতা ভেঙে রাজ বললো,
– আচ্ছা আরোহি তুমি ওই দিন একটা বিষয়ে কিছু বলেছিলে আমাকে, মনে আছো?
আরোহি খেতে খেতে বলে,
– কোন বিষয়?
– ঐ যে তোমার মায়ের বিষয় টা। তোমার বাবার সাথে কোনো বিষয়ে ঝামেলা হয়, আর ভয়ে ভয়ে থাকে।
আরোহি বলে,
– হুম, বাবাকে এখন সহ্যই করতে পারে না মা।
– তুমি কতটুকু জানো, যে বিষয় টা কি শুরু থেকেই এমন? নাকি হটাৎ তাদের মাঝে কোনো কিছু হয়েছে?
আরোহি এবার পাশে একটা বসার জায়গা পেয়ে ওখানে বসে বলে,
– জানেন, বাবা মা আগে এমন ছিলো না। আমি বাবা মা সবাই খুব হ্যাপি ছিলাম। বাবা খুব ভালোবাসতো মা কে। সাপ্তাহে দুই তিন দিন হলেও আমাদের সময় দিতো বাবা। এক কথায় খুবই হ্যাপি ফ্যামিলি ছিলো আমাদের। এক দিন বাবা চলে গেলে মা ও তার পেছন পেছন চলে গেলো। হয়তো কোনো বিষয়ে জানতে পেরে মা এমনটা করেছে। ঐ দিন আর বাড়ি ফেরেনি মা। পর দিন সন্ধার পর বাড়ি ফিরে আসে তাও বাবার সঙ্গে। মায়ের শরিরে অনেক মা’রের দাগ ছিলো। আর রুমে নিয়ে গিয়ে মায়ের গাল টিপে ধরে বলে, এইসব বিষয়ে যদি কোনো কাক পঙ্খিও টের পায় তুই আর তোর মেয়েরও ওই হাল টাই করবো যেমনটা নিজের চোখে দেখে এসেছিস। আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম, দরজার আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ভয়ার্ত চেহারায় তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, আর কেঁদেছিলাম।
রাজ পাশ থেকে বলে,
– বিষয় টা কি ছিলো, তুমি কিছু জানো বা শুনেছো?
আরোহি বলে,
– আমি শুধু এতটুকুই জানি। এর পর থেকে মা বাবাকে দেখলে ভয়ে চুপচাপ থাকে। আর মাঝে মাঝে রাতে কাঁদে। আমি অনেক বার জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মা বলেনি। শুধু বলেছিলো, এই নর’পশুর উপর আল্লাহর গ’জব প’রুক। হয়তো তার ধং’সেরও আর বেশি দিন বাকি নেই। এতটুকুই জানি আমি।
রাজ কিছু একটা ভেবে আরোহির দিকে চেয়ে বলে,
– আরেকটা আইসক্রিম নিয়ে আসি?
আরোহি মাথা নাড়িয়ে না বললো। রাজ তার দিকে তাকিয়ে বলে,
– বলো কোথায় যাবে। মানে এই রাতের বেলায় কোন জায়গা টা তোমার পছন্দ?
আরোহি পিট পিট করে রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– জানেন আজ অনেক হালকা লাগছে নিজেকে। ওই বাড়িটা আমার কাছে জেল খানা মনে হয়। বাসা থেকে সোজা কলেজ আর কলেজ থেকে সোজা বাসা। এর পর আর বের হতেই দেয় না। সারা দিন বাসায় থাকতে থাকতে একটা খাচায় বন্ধি পাখির মতো মনে হয় নিজেকে। আর আজ সেই পাখি টি মুক্তি পেয়ে উড়ে উড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে শহরের বুকে। তাই কোথাও যাবো না। রিক্সায় করে আজ অনেক জায়গায় ঘুরবো। প্লিজ আপনি আবার কোনো অজুহাত দেখাবেন না। আজকেই বের হওয়ার সুজুগ পেয়েছি। আর কবে পাবো কোনো নিশ্চয়তা নেই।
রাজ কিছু বললো না। চুপচাপ সামনের দিকে এগিয়ে একটা রিক্সা ডেকে নিলো। রিক্সায় উঠার আগে রাজ আরোহিকে বলে,
– তোমার অনুরুধেই শুধু আজকের দিনটায় তোমাকে সময় দিচ্ছি। তাই বলে নিজের ফ্রেন্ড ভাবা শুরু করবে না। কালকে থেকে আবার আগের মতোই থাকবে।
আরোহি একটু হেসে বলে,
– ওকে মাষ্টার মশাই।
রিক্সা চলছে রাস্তা ধরে। আরোহি ছোট্ট একটা কাগজ বের করে বলে,
– কিছু মনের কথা লিখেছি, শুনবেন? অন্য সময় তো পড়া পড়া করতে থাকেন। এতো কিছু শোনার টাইম নেই আপনার।
রাজ কাগজার দিকে একবার চেয়ে বলে,
– কি এটা?
আরোহি একটু গলা ঝেড়ে কাগজটা সাননে মেলে ধরে বলে,
– শুনুন তাহলে,,,,
‘ইদানিং মন টা একটুও কথা শোনেনা। সারাক্ষন শুধু ভবিষৎ মানুষটাকে নিয়ে ভাবতে ব্যস্ত সে। কল্পনাতে আঁকি আবার কল্পনাতেই হারিয়ে যায়। তবে মানুষটা হবে খুবই সাদামাটা আর আগোছালো মানুষ। আহামরি হতে হবে না তাকে। ছোট্ট একটা সংসার হবে আমাদের। বেশি কিছু চাইনা। শুধু মানুষটা ভালো হলেই হবে। আমার কেয়ার করবে, আমাকে সময় দিবে, আমার সাথে দুষ্টুমি করবে। মাঝে মাঝে আমার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলবে, একধম পাগলির মতো লাগছে তোমায়। আমি রাগ করবো। সে আমার রাগ ভাঙাবে। সামনে বসিয়ে আবার যত্ন করে চুল গুছিয়ে বেধে দিবে। আবার আমি জ্বালাবো তাকে। পতচুর জ্বালাবো। সে বিরক্ত হবে। আমি বিরক্ত করবো। আরো বেশি করে করবো। মাঝে মাঝে অভিমান করবো, রাগ করবো, তার সাথে কথা বলবো না, দুরে দুরে থাকবো। সে রাগ অভিমান সব মুহুর্তেই ঠিক করে নিতে পারবে। এমনই একজন মানুষ চাই। যে খুব স্বাধারণ একজন মানুষ হবে। কারণ সাধারণ মানুষদের অনেক শুন্যস্থান থাকে। যেগুলো তারা ভালোবাসা দিয়ে পুরণ করতে চায়। সে এমনই হবে সাধারণ। আমার মনে মতো, আমার কল্পনায় আঁকা সেই মানুষটার মতো।’
এতটুকু পরেই আরোহি রাজের দিকে চেয়ে একটু হেসে বলে,
– কেমন হয়েছে?
রাজ জোড় পূর্বক হেসে বলে,
– সুন্দর। তবে সারা দিন কি এসব নিয়েই পরে থাকো? নিজের ফিউচার নিয়ে কিছু ভাবো না? মানে কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখো না?
আরোহি সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,
– কিছু হয়েই বা কি করবো? একদিন তো বিয়েই করতে হবে। আর তখন মানুষটা যদি ভালো না হয়, তাহলে তো আমার আম্মুর মতো আমারও জীবনটাই বৃথা। তাই না?
রাজ আর কিছু বললো না। টপিক অন্য দিকে নেওয়ার জন্য বলে,
– এমন জোৎস্না ভরা তার নিয়ে তোমার অনুভূতি কেমন?
আর যাই হোক, কেন জানি মনে হলো আরোহির মন টা বিষণ্ন হয়ে গেছে। তা ভালো করতে হবে।
,
,
ফ্রেন্ড রা মিলে গ্রুপ স্টাডি করছে এক সাথে। রাজ, রুশান, নিবিড় আর অরিন সহ কিছু মেয়ে ফ্রেন্ড। মেয়েরা আছে দেখে দুরে অন্য একটা বেঞ্চিতে বসে আছে নিলয়। কারণ তার ভাষ্য মতে মেয়েদের সাথে কথা বলা বা তাদের বন্ধু বানানো এসব শুধুই গুনাহের কাজ। আর কিছু না। তাই মেয়েদের থেকে দুড়ে দুড়ে থাকে সে।
আর বাকি রইলো তুষার।
তেমন একটা কলেজে আসে না সে। মাঝে মাঝে আসে। একটা রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের জব করে সে। আর সময় পেলে মাঝে মাঝে অন্যান্য কাজও করে। যখন যা পায় তা। এভাবেই চলছে তার জীবন। ফ্যামিলির বড় ছেলেরা প্রায়ই দায়িত্ববান হয়। অনেক কষ্টের পর ফ্যামিলির মুখে হাসি দেখলেই কষ্ট দুর হয় এমন আরো অনেক তুষারের।
,
,
কলেজ থেকে ফেরার পরই লেপটপ নিয়ে বসে রুশান। দরজা জানালা সব বন্ধ করে রুমে একা একা। কানে এয়ার ফোন গুজে লেপটপের দিকে চেয়ে কাকে যেন বলতে লাগলো,
– ইমিডিয়েট লি পোর্স নিয়ে ওই জায়গাটায় পৌছে যাও। ওদের নাম্বার ওখানেই ট্রেস হচ্ছে। যত জন পাবেন সবাইকে আ’টক করবে, একটাও যেন পালাতে না পারে।
ওপাশ থেকে বলে,
– ওকে স্যার, আমরা লোকেশন অনুযায়ি এগিয়ে যাচ্ছি।
এর মাঝেই রুশানের ফোনে বার বার ফোন দিচ্ছে রিমা। এক হাতে এই নিয়ে তিন বার কল কে’টে দিলো রুশান। তাও রিমা ফোন করেই যাচ্ছে।
রুশান এবার রেগে এয়ারফোন খুলে ফোন রিসিভ করে রিমাকে উচু গলায় বলে,
– এই তোর সমস্যা কি হ্যা?দেখছিস বার বার ফোন কে’টে দিচ্ছি তার মানে তো বুঝতে পারছিস যে আমি বিজি আছি তাই না?
রুশানের ধমকে রিমা চুপসে গিয়ে বলে,
– আমার সাথে কিসের ব্যাস্ততা আপনার? আচ্ছা ভালো কথা, কোনো মেয়েকে নিয়ে বিজি নয়তো আপনি? যে আমার সাথে ব্যাস্ততা দেখাচ্ছেন?
রুশান এবার রেগে বলে,
– আরেক একটা কথা বলবি তো ফোনের মাঝেই থা’প্পর খাবি।
বলেই ফোন কে’টে দেয় রুশান। বির বির করে বলে,
– গুরুত্বপূর্ণ টাইমে ফোন দিয়ে আবার বলে অন্য মেয়ে পেয়েছি। কাজ করেই কুল পাই না আর অন্য মেয়ের কথা ভাবার সময় আছে? আজাইরা প্যাচাল।
তারপর আবার এয়ারফোন কানে নিয়ে নিজের টিম মেম্বারদের সাথে যোগাযোগ রাখে আর লোক গুলোর লোকেশন ট্রেগ করে রাখে।
আর ঐ দিকে রিমা কাঁদু ভাব নিয়ে বলে,
– নিশ্চই সে নতুন কাউকে পেয়েছে। তাই এখন আর আমাকে ভালো লাগে না। ব্যস্ততা দেখায় আমার সাথে। বাজে ব্যাবহার করে। থাকুক সে অন্যদের নিয়ে, আমি আর কখনোই ফোন দিবো না তাকে। কখনো কথা বলবো না আর। কাউকে দরকার নেই আমার। সবাই সবার মতো ভালো থাকুক।
To be continue…….
#ছদ্মবেশ (পর্ব ৯)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
সন্ধার পর নির্জন রাস্তা দিয়ে ছুটছে একটা এম্বুলেন্স। কিছু দুর যাওয়ার পর রাস্তায় একটা গাছ পরে থাকায় ব্রেক চাপলো গাড়ি। সামনে কতো জন মানুষ গাছটা কা’টছে রাস্তা থেকে সরানোর জন্য।
ড্রাইভার মাথা বের করে সামনে তাকালো। ঝড় নেই তুফান নেই, গাছ পরলো কথায় থেকে? এম্বুলেন্স থেকে একজন বেড়িয়ে এসে লোক গুলোর কাছে গিয়ে বলে,
– ভাই কতোক্ষন লাগবে আর?
ওদের মাঝে একজন গাছ টা কা’টতে কা’টতে বলে,
– ভাই আর ১০-১৫ মিনিটের মতো লাগবে। একটু অপেক্ষা করুন।
তখন এম্বুলেন্সের ড্রাইভার মাথা বের করে বলে,
– ভাই গাড়িতে রোগী আছে। ইমার্জেন্সি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। একটু তারাতারি করুন৷
পেছন থেকে আরেকটা গাড়ি এসে হর্ণ বাজিয়ে যাচ্ছে। এম্বুলেন্সের ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে বলে,
– অন্ধ নাকি আপনি? দেখছেন সামনে একটু প্রব্লেম হয়েছে। আর এটাও জানেন গাড়িতে রোগি আছে। তাহলে আহম্মকের মতো হর্ণ দিয়ে যাচ্ছেন কেন বার বার?
রুশান গাড়ি থেকে নেমে বলে,
– সরি ভাই। আমি জানতাম না বিষয় টা। আ’ম রিয়েলি সরি।
লোকটা একটা সিগারেট ধরিয়ে আর কিছু না বলে আবার গাড়িতে গিয়ে বসে। রুশান এবার এগিয়ে এসে গাড়ির জানালায় ভর দিয়ে বলে,
– ভাইয়া সিগারেট যে ধরালেন, তাও আবার গাড়িতে উঠলেন, পেছনে যে রোগী আছে সেই খবর কি ভুলে গেছেন? ধোয়ার গন্ধে রোগীর সমস্যাও তো হতে পারে তাই না। বলেই একটা হাসি দেয় রুশান।
লোকটা তর্ক করলো না। চুপচাপ গাড়ি থেকে নামলো একটু দুড়ে গিয়ে সিগারেট শেষ করবে এই উদ্দেশ্যে।
রুশান এক হাতে লোকটাকে থামিয়ে বলে,
– দাড়ান কথা শেষ হয় নি। গাড়ি চেক করবো আমরা।
লোকটার চোখে মুখে এবার ভয়ের ছাপ ফুটে উঠে। এবার গাছ কা’টার লোক গুলো একটা একটা পিস্তল বের করে ঘিরে ধরলো এম্বুলেন্সের ড্রাইভার সহ বাকি দুজনকে। ভেতর থেকে আরেক জনকে বের করলো, মোট চার জন মানুষ তারা।
দুজন এম্বুলেন্স চেক করে ভেতরে দেখে ৭ টা ছেলে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে ভেতরে। সবাইকে ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছে। সব গুলোই স্টুডেন্ড। বয়স ১২ থেকে ১৮ এর মাঝে হবে। এদেরকে ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। হয়তো আজকের রাত পার হলে ছেলেগুলোর কোনো হদিসও পাওয়া যেত না।
যেই চারজনকে আটক করেছে তাদের মাঝে একজন সুজুগ পেয়ে দৌড়ে অনেকটা পথ পার হয়ে গেলো। কিন্তু বেশি দুর যেতে পারলো না। রুশান লোকটার মাথার পেছনে শু’ট করতেই চিটকে রাস্তার পাশে জমিনে গিয়ে পরলো লোকটা। বাকি তিনজনকে গারিতে উঠিয়ে নিলো। আর লা’শটাকে সরিয়ে নিয়ে সব কিছু স্বাভাবিক করে চলে গেলো তারা। কয়েকজন এম্বুলেন্সটা নিয়ে ছুটলো আর রুশান কয়েকজন বাকি তিনজনকে নিয়ে ছুটলো।
রাত তখন ১২ টা। অন্ধকার একটা ঘরে একটা লাইটের নিচে লোক গুলোকে বেধে সামনে বসে আছে রুশান। রুশানের পাশের লোকটা ঢক ঢক করে ঠান্ডা পানি গিলছে। সারা শরিরে ঘাম তার। এই তিনজনের উপর অলরেডি দুইটা লা’ঠি ভেঙেছে সে। তবুও লোক গুলোর কিছু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। রুশান অনেক্ষন যাবৎ প্রশ্ন করেও কোনো টু শব্দ বের করতে পারেনি।
শেষে রুশান একটু বাকা হেসে বলে,
– জীবনের মায়া নেই তোদের?
লোক গুলো এখনো নিশ্চুপ। এর মাঝেই অন্য একটা লোক রুশানের দিকে এগিয়ে এসে মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বলে,
– স্যার আপনার ফোন।
রুশান ফোন নিয়ে কিছুটা দুরে চলে যায়। ওপাশ থেকে কেও বলে,
– স্যার ছেলে গুলোর জ্ঞান ফিরেছে। তবে এখনো কিছু বলতে পারছে না ঠিক ভাবে।
রুশান ঠান্ডা মাথায় বলে,
– ওদেরকে এখন কোনো প্রেশার দিবে না। আগে ভালো ভাবে সুস্থ হোক তার পর কথা বলার চেষ্টা করবে। এটা জানতে হবে যে, ওদেরকে কি কিড’নাফ করা হয়েছে? নাকি কোনো ফাদে ফেলে এমন টা করেছে। ফাদে ফেলে এমনটা করে থাকলে কারা ওদের সাথে মিশে ফাদে ফেলেছিলো তাদের সম্পর্কে জানা যাবে। মনে রেখো প্রত্যেক টা তথ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যেই তিনজনের কাছ থেকে কথা বের করার চেষ্টা করছি, মনে হয় না ওদের থেকে কিছু জানতে পারবো। কারণ এর আগেও যত জনকে ধরেছিলাম কেওই মুখ খোলে নি। সো, তুমি ওদিক থেকে কিছু তথ্য কালেক্ট করার চেষ্টা করো।
– ওকে স্যার,,,,
,
,
পর দিন কলেজ থেকে ফিরছে রাজ, নিবিড়, নিলয় ও তুষার। এর মাঝে তুষার বলে,
– চল আজ বাইরে কোথাও খাই।
সাথে নিলয়ও তাল মিলায়। পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
– হ্যা দোস্ত তাই করি চল। ক্ষুদাও লাগছে খুব।
নিবিড় ফোন টিপতে টিপতে বলে,
– বুদ্ধিটা যেহেতু তুষারের, তাই তুষারই খাওয়াবে আজ।
তুষার দাড়িয়ে বলে,
– ভাই বিশ্বাস কর পকেট একেবারে খালি।
নিলয় বলে,
– নিবিড়ের তো ব্যবসা ভালোই চলে। ওর বাবুরাই ওকে চালায়। তাই আজ নিবিড়ই খাওয়াবে।
নিবিড় কিছুটা দুরে তাকিয়ে তারপর বলে,
– ওকে ফাইন, আজকে আমিই খাওয়াবো। তবে কোথা থেকে খাওয়াবো, বা কিভাবে খাওয়াবো তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবি না কেও। তোদেরকে খাওয়ালেই হলো।
নিলয় বলে,
– আমাদের তো এতো কিছু জানার দরকার নেই। আমরা খেতে পারলেই হলো।
নিবিড় আবার বলে,
– ওখানে গিয়ে কিন্তু কেও কোনো কথা বলতে পারবি না যে, খাবোনা এখান থেকে চল। একধম চুপ থাকবি সবাই।
তুষার হেসে বলে,
– ভাই আমরা কখনোই খাওয়াকে না বলিনি।
– তাহলে আয় আমার সাথে।
কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে একটা বিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেলো নিবিড়। বাকিরা অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলেও নিবিড়ের ইশারায় নিরুপায় হয়ে ঢুকে গেলো তারাও। কারণ আশে পাশের মানুষ গুলো তাকিয়ে ছিলো তাদের দিকে।
নিবিড়ের পেছন পেছন বাড়িতে ঢুকে গেলো তারাও। দেখে বর স্টেইডে বসে আছে। আর বৌ মনে হয় এখনো ঘরে। নিবিড় পকেটে হাত ঢুকিয়ে বরের পাশে গিয়ে বসে বলে,
– কেমন আছেন দুলাভাই? আমরা চারজনই কিন্তু সম্পড়কে আপনার শালা হই। আপু মানে মানে যিনি কনে, তার কাজিন হই আমরা।
বরও একটু চালাক ছিলো। আস্তে করে বলে,
– কিন্তু আমার বৌ এর তো কোনো কাজিন নেই। আমি যত দুর জানি।
নিবিড় একটু হেসে বলে,
– আরে আপন না, দুঃসম্পর্কের কাজিন হই। আচ্ছা থাকেন হ্যা, পরে কথা হবে। বলেই সেখান থেকে উঠে গেলো নিবিড়।
নিলয় ভয়ে কাপতে কাপতে বলে,
– ভাই তুই কি আজ আমাদের সবাইকে মা’র খাওয়াবি?
নিবিড় হাত দিয়ে থামিয়ে বলে,
– চুপচাপ থাক, আর আমি কি করি দেখতে থাক শুধু।
নিলয় আবার বলে,
– ভাই আমার ভয় হচ্ছে খুব, বৌ এর কাজিন বলে পরিচয় দিলি, আমরা তো বৌ কে তাও জানিনা। তারচেয়ে ভালো চল, সময় থাকতে কে’টে পরি।
– আরে আমরা ঢুকে পরেছি। ভয় পাস না, আমার উপর ভরসা রাখ।
বলেই ঘরের ভেতরে চলে গেলো নিবিড়। ওখেনে একটা মেয়ে তাকে থামিয়ে বলে,
– আপনাকে তো চিনলাম না। আপনি কোন পক্ষের?
নিবিড় ভাবলো এটা হয়তো এই বাড়ির মেয়ে তাই নিবিড় বুক ফুলিয়ে বললো,
– আমি বর পক্ষের। কনে দেখতে যাচ্ছি।
মেয়েটা বলে,
– আমি বরের বোন হই, কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না।
নিবিড় এবার আমতা আমতা করে বলে,
– বরের সব বন্ধুদেরকে আপনি চিনেন নাকি আজিব।
বলেই তাকে সরিয়ে হাটতে লাগলো। সবাই বরের বন্ধুরা কনে দেখতে এসেছে বলে বলে পথ ফাকা করে দিলো। নিবির কনের পাশে গিয়ে বলে,
– কেমন আছেন ভাবি? আমি কিন্তু সম্পর্কে আপনার দেবর হই।
বৌ লজ্জায় কথা না বলে চুপ করে আছে। নিবিড় হেসে বলে,
– বাহ্ ভাবি তো দেখি খুবই লজ্জাবতি।
বর পক্ষের সাথে দেখা হলে বলে আমরা কনে পক্ষের। আর কনে পক্ষের কাছে গিয়ে বললো, আমরা বর পক্ষের। এভাবে সবার সাথে পরিচিত হয়ে খাবার টেবিলে বসলো নিবিড়। পাশে বাকি তিনজনও বসলো। পেট পুরে খাওয়া শুরু করলো সবাই। খাওয়া শেষে উঠে দাড়ালো নিবিড়।
যাওয়ার সময় কনে পক্ষের একজনের সাথে দেখা হলে নিবিড় বলে,
– আমরা একটু বাইরে থেকে হেটে আসি।
বলেই চুপচাপ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো তারা। বের হতেই নিলয় বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো। তারপর বলে,
– ভাই আরেকটু বলে আমার জানটা বেড়িয়ে যেত। ধরা খেলে আজ একটা মা’রও মাটিতে পারতো না।
নিবিড় হেসে বলো,
– বললাম না, আমার উপর ভরসা রাখলে কিছু হবে না।
তখন তুষার বলে,
– ভাই নীল জামা পড়া মেয়েটা দেখেলি? মারাত্মক সুন্দরি। আমি তো যাওয়ার পর চোখই সরাতে পারিনি। ইশ তার সাথে যদি একবার কথা বলতে পারতাম?
তখনই নিবিড় হেসে দিলো। হাসতে হাসতে নিজের ফোনটা বের করে তাদেরকে দেখিয়ে বলে,
– তোর দেখা সেই সুন্দরি থেকে অলরেডি আমি নাম্বারও নিয়ে ফেলেছি।
নিলয় মাথায় হাত দিয়ে বলে,
– ভাই কেমনে পারিস তুই?
নিবির হেসে হেসে হাটা ধরলো। নিলয় পেছন পেছন হেটে বলে,
– ভাই বল না কিভাবে নাম্বার নিলি? মেয়েটাকে সত্যিই আমারও ভালো লাগছিলো।
নাম্বার নেওয়ার মুহুর্ত টা,,,
এমনিতেই নিবিড়কে দেখলে অনেক মেয়েই ফিদা হয়ে তাকিয়ে থাকে। ওদের ফ্রেন্ড মহলে সবচেয়ে ডেশিং ও স্মার্ট ছেলেটা হলো নিবিড়। যেটা তার মেয়ে পটানো টা অনেকটাই ইজি করে দেয়।
ওখানে যখন তুষার নিলয় এরা বরের সাথে ছবি তুলছিলো, নিবিড় তাকিয়ে ছিলো ওই মেয়েটার দিকে। মেয়েটাও বার বার নিবিড়ের দিকে তাকাচ্ছিলো। আবার চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাই নিবিড়ের কনফিডেন্স টা আরো বেড়ে গেলো।
কিছুক্ষন পর মেয়েটার সামনে গিয়ে বলে,
– বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত আপু। আপনার ফোনে কি টাকা আছে?
মেয়েটা একটু ভ্রু-কুচকে নিবিড়ের দিকে তাকালে নিবিড় অসহায় ভঙ্গিতে বলে,
– আসলে আপু আমার ফোন টা খুজে পাচ্ছি না। একটা কল দিয়ে দেখতাম। আমার ফোনটা হারালে অনেক সর্বনাশ হয়ে যাবে আপু। প্লিজ হেল্পটা করুন,,,,
মেয়েটা এবার নিবিড়ের দিকে একটু ভালো ভাবে তাকিয়ে ফোন টা এগিয়ে দিয়ে বলে,
– এতো বড় ছেলে, নিজের ফোন সামলে রাখতে পারেন না? এই নিন, তারাতারি করুন।
নিবিড় ফোন পেয়েই নিজের নাম্বারে ফোন দিয়ে দিলো। কিন্তু নিবিড়ের ফোন অন্য কোথাও না তার পকেটেই বাজতে লাগলো। মেয়েটা এবার রেগে নিজের ফোন কেড়ে নিয়ে বলে,
– ফাজলামি করেন আমার সাথে?
নিবিড় এবার পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করতে করতে বলে,
– আসলে আপু সব কেমন যানি এলোমেলো হয়ে গেছে আপনাকে দেখার পর থেকে। এতো সুন্দর ও মায়ার অধিকারি আপনি যা আমার চোখে দ্বিতীয় টা ধরা পরেনি। তাই নিজেকে গুলিয়ে ফেলেছিলাম। সত্যিই আপু আপনার চোখের দিকে তাকালে আমার মতো যে কোনো ছেলেই ওই চোখে নিজেকে হারিয়ে ফেলবে মুহুর্তেই। যেন ওটা চোখ নয়, এক স্পষ্ট মায়াজাল। একটুও বাড়িয়ে বলছি না। আপনি এই প্রশংসারই যোগ্য।
To be continue…….