#ছদ্মবেশ (পর্ব ১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
১~ লোক ভর্তি বিয়ে বাড়িতে আরোহিকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে রক্তিম চক্ষু নিক্ষেপ করে আছে রাজ। ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগলো আরোহির। নিশ্বাস বার বার উঠা নামা করছে। আসে পাশের মানুষ গুলো চেয়ার ছেরে উঠে দাড়িয়ে চক্ষু জুগল বড় বড় করে নিক্ষেপ করে আছে তাদের দিকে। বর সহ বাকি সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
রাজ দুই আঙুলে আরোহির হলুদ মাখা হলদে গালটা চুয়ে দিয়ে বলে,
– বাহ্ সুন্দরই তো লাগছে খুব। বিয়ে করবে, তাই না? অথচ আমাকে দাওয়াত দিতেই ভুলে গেলে?
মাথায় হুডি পরা মুখে মাস্ক লাগানোয় কেও রাজকে না চিনলেও আরোহির চিনতে একটুও ভুল হলো না । টল মলে চোখের পানি নিয়ে রাজের বুকে ঝাপিয়ে পরে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে,
‘আমি করতে চাইনি এই বিয়ে। বিশ্বাস করুন আমাকে জোড় করে বাধ্য করা হয়েছে।’
কিন্তু তা আর বলা হলো না। এর আগেই রাজ আরোহির এক হাত চেপে ধরে চার দিকে চেয়ে হু’ঙ্কার দিয়ে বলে উঠে,
– এই কে? আমার সামনে দাড়িয়ে আরোহিকে বিয়ে করবি, কোন ছেলের এমন বুকের পাটা? এক বাপের জন্ম হলে সামনে এসে কথা বল।
পিন পতন নিরবতাময় বিশাল ক্লাব টি কেঁপে উঠলো রাজের হু’ঙ্কারে।
পিস্তল হাতে ভেতর থেকে বেড়িয়ে রাজের সামনে এসে দাড়ালো আরোহির বাবা, আদ্রিয়ান মাহমুদ নির্জন।
দেশের নাম করা মাফিয়া। তার এই ২৭ বছরের তিলে তিলে গড়ে তোলা অন্ধকার সম্রাজ্য সারা দেশ জুড়ে বিচরণ করে আছে। কিন্তু কোনো ক্রাইমেরই কোনো প্রমান রাখেনা সে।
পিস্তল হাতে এগিয়ে এসে রাজকে দেখেই থমকে দাড়িয়ে গেলো সে। আশে পাশে যারা এতোক্ষন রাজের দিকে ব’ন্দুক তাক করে ছিলো, তাদেরকেও ইশারায় বন্দুক সরিয়ে নিতে বললো সে।
রাজকে এর আগেও দেখেছিলো সে। তবে আজকের মতোই মাস্ক পড়া অবস্থায়। চেহারা দেখেনি কখনো।
আজ রাজ ও নির্জন দুজনই মুখোমুখি দাড়িয়ে। রাজ হাতের তুড়ি বাজাতেই গেস্টদের মাঝে ছদ্মবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার ছেলে গুলো পিস্তল হাতে দাড়িয়ে সকলকে জব্দ করে নিলো।
নির্জন চার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,
– ক্রা’ইমের জগতে তোর সাথে সাথে আমার কিসের শত্রুতা তা আমি জানিনা। অজান্তেই আমার এতো কিছু করেছিস আমার। কেন করেছিস, কি চাস তা জানতে চাইছিনা আপাতত। তবে এতে আমার মেয়ের বিয়েতে এসে কি সব বকছিস? আরোহিকে কিভাবে চিনিস তুই?
রাজের অক্টো হাসির শব্দ সারা ক্লাব জুড়ে বেজে উঠে। এর পর মাথা থেকে হুডি সরিয়ে, মুখের মাস্ক খুলে নির্জনের দিকে তাকাতেই নির্জন দুই পা পিছিয়ে গিয়ে বলে।
– রাজ তুমি?
~ ছদ্মবেশ,,,,,,,,,,,,
২, সূচনা-
বাস স্ট্যান্ডে এসে বাস থামলো। বাস থেকে ব্যাগ কাধে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে রাস্তার এক পাশে দাড়ালো রাজ। গায়ে সাদা-মাটা জামা কাপর, পায়ের জুতা জোড়া পুরোনো হয়ে গেছে কিছু।
কিছুটা এগিয়ে একটা দোকান থেকে পানির বোতল কিনে তা চোখে মুখে ছিটিয়ে নিলো সে। এর পর বাকিটা পান করার সময় হুট করে একটা ছেলে ব্যাগ টা টান দিয়ে নিয়ে দৌড় দিলো।
রাজ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো। কারণ এই শহরে পা রাখার পর, তার সব টাকা পয়সা এই ব্যাগের মাঝে।
সামনে থেকে একটা ছেলে ব্যাগটা উদ্ধার করে ওই ছেলেটাকে কয়েকটা থা’প্পর মে’রে ব্যাগ টা নিয়ে রাজের সামনে দাড়িয়ে বললো,
– আপনার ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছিলো। আর আপনি ব’লদের মতো দাড়িয়ে আছেন?
রাজ কিছু না বলে ছোট্ট করে বললো,
– থ্যাংক্স।
– ইটস ওকে, শহরে কি নতুন?
– জ্বি।
– হুম পোষাক আসাক দেখে তাই মনে হচ্ছে। শুনুন এতো হাবা হলে এই শহরে টিকতে পারবেন না। কোথায় এসেছেন?
– গ্রাম থেকে এসেছি। এখানে একটা ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছি।
– আত্মিয় স্বজনদের বাসায় উঠবেন নিশ্চই?
– না, এই শহরে আমার কেও নেই। ব্যাচেলর থাকতে হবে।
ছেলেটা এবার কিছুক্ষন উপর নিচে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে বললো,
– আমি রুশান।
রাজ একটু মুচকি হেসে বললো,
– আমি রাজ। এখানকার একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। **ভার্সিটি।
রুশান একটু মুচকি হেসে বললো,
– আমিও ওখানেই পড়ি। আর আমরাও ব্যাচেলর থাকি। আপনি চাইলে আমাদের সাথে উঠতে পারেন। চার জন আছি আমরা।
– তাহলে তো ভালোই হয়।
– হুম চলুন, অনেক জার্নি করেছেন। একটু বিশ্রাম নিয়ে শরির হালকা হলে পরে আপনার সব ব্যাপারে শুনবো।
– কোথায় বাসা?
– এইতো কাছেই।
বাড়িতে গিয়ে গেট পেরিয়ে ভেতরে গিয়ে রাজকে নিয়ে ফরিদা আন্টির কাছে গেলো রুশান। গিয়ে বললো,
– ফরিদা আন্টি ওর নাম রাজ, আমাদের ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়ে গ্রাম থেকে এসেছে। থাকার মতো জায়গা নেই। তাই নিয়ে এসেছি এখানে। আমাদের সাথে থাকলে আপনার কোনো আপত্তি নেই তো?
ফরিদা আন্টি কিচেন থেকে বেড়িয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে রেখে খুব সহজ সরল একটা ছেলে। শার্ট পরার স্টাইল একেবারে ভদ্র ছেলেদের মতোই। দেখে মনে হচ্ছে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেনা। চোখের চশমা টা ঠিক করে ফরিদা আন্টির দিকে চেয়ে হাসি মুখে সালাম দিলো। ফরিদা আন্টি সালামের উত্তর নিয়ে রুশানের দিকে চেয়ে বললো,
– যেহেতু তুমি বলছো, তাই আমি অমত করবো না। তবে আর কাউকে নিয়ে আসা যাবেনা। এই বাসার নিয়ম গুলো জানিয়ে দিবে তাকে। আর ফ্রেশ হয়ে বাকিদের নিয়ে খেতে আসো।
রুশান একটা হাসি দিয়ে বলে,
– আচ্ছা আন্টি।
বলেই রাজকে নিয়ে সিড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠতে থাকে। রাজ রুশানের দিকে চেয়ে বলে,
– ওনি কে?
– ওনি হলেন বাড়ি ওয়ালা। বছর খানেক আগে ওনার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। আর কোনো ছেলে মেয়েও নেই। তাই আমাদেরকেই নিজের ছেলে মেয়ের মতো দেখে। বলতে পারো একটা পরিবার আমরা। আমাদের থেকে ভাড়াও নেয় না। শুধু খাওয়া দাওয়া টুকটাক সারা মাসে যা খরচ হয় ওগুলোই দিলে হয়। আর তার নিয়ম গুলো হচ্ছে, তাকে নিজের মায়ের মতো শ্রদ্ধা করতে হবে। সবাইকে নিজের মানুষ ভেবে থাকতে হবে। ধরতে পারো আমরা একটা পরিবার। ফরিদা আন্টির মন জয় করতে পারলে দেখবে একধম নিজের ছেলের মতো কলিজায় ঢুকিয়ে নিবে।
বলতে বলতেই দ্বিতীয় তলায় পৌছে যায় তারা।
রুশানের সাথে নতুন কাওকে দেখে শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে তুশার। রুশানের দিকে চেয়ে বলে,
– আবার কাকে নিয়ে এলি ভাই? এটাকে কি একটা ক্লাব বানিয়ে ফেলবি নাকি?
রুশান স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– বাজে বকবি না। আমাদের আরেক রুম মেট। আজ থেকে তোর সাথেই থাকবে সে।
– অসম্ভব, আমার সাথে কাউকে রুম শেয়ার করতে দিবো না আমি।
রুশান একটু বিরক্ত হয়ে বলে,
– নিলয়,,,
নিলয়ও মাথা দুলিয়ে বললো,
– না ভাই, অপরিচিত কোনো ছেলেকে হুট করেই আমার রুমে রাখতে পারবো না। সরি,,
রুশান তারপর নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– নিবিড়, তোর সাথে থাকলে প্রব্লেম হবে?
নিবিড় একটু ভেবে বলে,
– আচ্ছা প্রব্লেম নাই। কোথায় পেলি এটাকে?
রুশান বলে,
– বলবো পরে, এখন ফ্রেশ হয়ে নিই। আর তোরা নিচে যা ফরিদা আন্টি খাওয়ার জন্য ডাকছে। আমি ফ্রেশ হয়ে রাজকে নিয়ে আসবো।
,
,
বিকেলে চুপচাপ নিজের জিনিস পত্র গুলো গোছাচ্ছে রাজ। নিবিড় তার পাশে এসে বলে,
– কিভাবে চলবে তুমি? কিছু ভেবেছো?
রাজ গুছাতো গুছাতে বলে,
– দেখি কোনো একটা ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।
– টিউশনি করাতে পারবে?
– হুম অবশ্যই,,,
– ইন্টারের একটা মেয়েকে। আমাকে বলেছিলো অবশ্য। আমার না করার দুইটা কারণ আছে। প্রথমটা হলো, আমার অলরেডি দুইটা টিউশনি করাতে হয়। আর দ্বিতীয়’ত, সব মেয়েই আমার উপর দুর্বল হয়ে যায়। আর যেই মেয়েটার কথা বলছি, ওর নাম আরোহি। খুব বড় লোক ফ্যামিলির মেয়ে। বিশাল বাড়ি, বাড়ির চার পাশ জুড়ে সিকিউরিটি গার্ডে ঘেরা। তাই রিস্ক নিতে চাচ্ছি না। ওই মেয়ের সাথে কিছু হয়ে গেলে আমাকে আর ওই বাড়ি থেকে জে’ন্ত বের হতে দিবে না ভাই। তাই তুমি চাইলে ওই টিউশনিটা করতে পারো। শুধু ওই মেয়েটার সাথে কোনো কিছু যেন না হয়। পড়াবে, তারপর সুন্দর ভাবে চলে আসবে। পারবে?
রাজ এতোক্ষন ধরে নিবিড়ের কথা গুলো শুনে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
– হুম অবশ্যই পারবো। আর এসব কোনো বিষয় না।
– ওকে আমি কথা বলবো তাহলে।
– হুম, খুব উপকার হবে ভাই।
নিবিড় চলে গেলে রাজ একটা রহস্য জনক হাসি দিয়ে আবার নিজের জিনিস পত্র গুছাতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো। মেয়েটার নাম তাহলে আরোহি।
To be continue,,,,,