ছদ্মবেশ (পর্ব ৮২)

0
1393

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৮২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

ফারিহাকে ফোন হাতে সোফায় বসে থাকতে দেখে তুষার চার পাশে একবার চেয়ে ধীরে পায়ে ফারিহার পাশে গিয়ে বসে। ফারিহা আড় চোখে তুষারের দিকে তাকালে গাল টেনে একটা হাসি দেয় তুষার। ফারিহা আমার এক মনে ফোনের দিকে নজর দেয়।
পাশ থেকে তুষার কথা বলার জন্য বলে,
– কি করছেন?
ফারিহার তার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলে,
– লুডু খেলছি। আপনি খেলবেন?
যদিও তুষারের এমন আহম্মকি প্রশ্নে ফারিহা বিরক্তি প্রকাশ করতে কথাটা বলেছিলো। তবুও তুষার সিরিয়াস মনে করে বলে,
– লুডু খেলতে পারেন? যদিও আমি শুনেছি মেয়েরা অনেক ভালো লুডু খেলে।
ফারিহা এবার বিরক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে কিছুটা হেসে দিয়ে বলে,
– হুম পারি।
ফারিহার হাসি দেখে তুষার তৎক্ষনাৎ বলে,
– আমাকে হারাতে পারবেন? যদিও আপনাকে দেখে এতোটাও বুদ্ধিমান মনে হচ্ছে না। তবে হারে যাওয়ার ভয় পেলে খেলার দরকার নেই।

তুষার কথাটা এমন ভাবে বললো, এখন না খেলেও ভেবে নিবে ভয় পেয়েছি। এমনিতেও ইনি ডিরেক্টলি বুদ্ধিহীন বললো।
নিজের মাঝে এই ভাবনার উদ্বয় হলে ফারিহার মাথায়ও জেদ চেপে বসে। ফোন এক পাশে রেখে এবার জেদ ধরে ডিলে আসে। তুষারের দিকে চেয়ে ফারিহা শক্ত গলায় বলে,
– জিতলে লাভ কি? যদি আমি জিতে যাই তাহলে কি দিবেন আমায়।
তুষার কিছুটা ভেবে বলে,
– সেটা পরে দেখা যাবে। তবে দিবো মুল্যবান কিছু একটা।
ফারিহা তুষারের দিকে আঙুল ধরে বলে,
– শিউর তো?
তুষারও ভাব নিয়ে বলে,
– হুম শিউর। তবে আমি জিতলে কি দিবেন?
ফারিহা বলে,
– যদি আপনি জিততে পারেন তাহলে আপনার সবচেয়ে পছন্দের খাবার আমি নিজে আপনাকে রান্না করে খাওয়াবো।
তুষার হাতের তুড়ি বাজিয়ে বলে,
– ওকে ডিল ফাইনাল।

ফারিহা এবার ফোনে লুডুর এ্যাপ্সটা ওপেন করে। সোফায় দুইজনের মাঝখানে ফোন রেখে দুজন দুই পাশে বসে খুব মনোযোগ সহকারে খেলায় মন দিলো।
খেলার মাঝ পথে তুষার অনেকটাই এগিয়ে। ফারিহার দিকে চেয়ে বলে,
– আমার পছন্দর খাবার হলো বিরিয়ানি। আমার জন্য কিন্তু স্পেশাল ভাবে রান্না করতে হবে।
ফারিহা গুটির দিকে চেয়ে থেকে বলে,
– খেলার এখোনো অনেকটা বাকি আছে। আগে শেষ হোক, দেখি কে জিতে।

দেখতে দেখতে আরো কিছুক্ষন কেটে গেলো। হুট করে ফারিহা ফোন হাতে জিতার খুশিতে লাফিয়ে উঠে। অপর দিকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে তুষার। খেলার মোড় তার দিক পরিবর্তন করেছে।
ফারিয়া হাস্যজ্জল মুখে তুষারের দিকে চেয়ে বলে,
– দেন এবার আপনার মুল্যবান জিনিস টা দেন।
তুষার কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে অতঃপর উঠে দাড়িয়ে ফারিহার দিকে চেয়ে বলে,
– আল্লাহ আপনার ভাগ্যে আমার মতো একটা ভালো মনের ছেলেকে স্বামী হিসেবে কবুল করুক।

ফারিহাও জয়ের উত্তেজনা বসত বলে উঠে,
– আমিন, এখন আমার পাওনাটা দেন।
তুষার ভ্রু কুচকে বলে,
– দিলাম তো।
ফারিহাও অবাক হয়ে বলে,
– কোথায়?
তুষার স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
– এই যে দোয়া করে দিলাম।
ফারিহা মুহুর্তেই হ্যাপি মুড থেকে বেড়িয়ে রাগী মুডে তুষারের দিকে চেয়ে বলে,
– এসব চিটিং এর কোনো মানে হয়?
তুষারও যুক্তি দেখিয়ে বলে,
– আপনিই বলুন, দোয়ার উপর কোনো মুল্যবান উপহার আছে? সেই হিসেবে আমি তো একটা মুল্যবান উপহারই দিলাম আপনাকে।
ফারিহা এবার রাগে কটমট করতে করতে বলে,
– এমন চিটিং করবেন জানলে কখনোই আপনার সাথে খেলতে বসতাম না। শুধু ভাইয়ার বন্ধু দেখে আপনাকে কিছু বললাম না। নয়তো ধরে নিয়ে খালের পানিতে চুবাতাম। খবিশ একটা।
তুষার বলে,
– মেহমান হওয়ার স্বত্বেও আমাকে বার বার অপমান করা হচ্ছে এখানে আসার পর থেকে। আমিও শুধু নিবিড়ের বোন দেখে কিছু বললাম না। নয়তো,,,,
ফারিহা এবার দুই হাত কোমড়ে রেখে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
– নয়তো কি করতেন হুম?
তুষার এবার শান্ত হয়ে ফারিহার দিয়ে চেয়ে বলে,
– ভালোই তো গায়ে পরে ঝগড়া করতে পারেন। তবে রাগলেও কিন্তু আপনাকে সুন্দরই লাগে।

একে তো চিটিং করলো, এখন আবার ঝগড়াটে বললো। ফারিহা এবার রাগে ফোঁস ফোঁস করে হাটা ধরে সেখান থেকে। তুষার অনেক কষ্টে নিজের হাসিটা চাপিয়ে রেখে ফারিহার দিকে চেয়ে বলে,
– রাজ-রুশান এরা কিছুক্ষন আগে বাইরে গেলো। আমিও একটু বাইরে যাচ্ছি, দরজাটা লক করুন।
বলেই ঘর থেকে বের হওয়া মাত্রই ফারিহা এসে দরজা লাগিয়ে চলে গেলো ভেতরে।
বাইরএসে হুট করে শরির ঝাঁকিয়ে হেসে উঠে তুষার। অনেক্ষন হাসি আটকিয়ে রাখার পর হুট করে যেভাবে আচমকাই হেসে উঠে মানুষ। হাসতে হাসতে অস্থির অবস্থা তার।
,
,
এদিকে ছাদের দোলনাটায় বসে রাতের আকাশে চন্দ্র বিলাশ করতে ব্যাস্ত নিবিড় ও নীলা। নিবিড় বসে আছে হেলান দিয়ে। তার কাধে নীলার মাথা। চুপটি মেরে বসে বসে নিবিড়ের বকবক শুনছে। সাথে চাঁদের আলো ছড়িয়ে আছে তাদের মাঝে। চাঁদের আলোয় মানুষকে স্বাভাবিক আলোর চেয়ে কিছুটা ভিন্ন দেখায়। সেটা আবার নির্ভর করে বিপরিত মানুষটা কতটা প্রিয় বা তার সাথে ঘনিষ্ঠতা কতটুকু। মানুষটা যত প্রিয় হয়, মুহুর্তটাও ততো মন-মুগ্ধকর হয়ে উঠে।

এর মাঝে বিরিয়ানিতে এলাচির মতো করে নিবিড়ের ফোনে টুং করে একটা মেসেজ ভেষে আসে। দেখে তুষারের মেসেজ। নীলার সাথে একটু শান্তিতে একাকি কথা বলার সময় প্রতিবারই এই তুষার কোনো না কোনো ভাবে তাদের মাঝখানে এসে ঢুকে পরে। হোক সরাসরি বা হোক ফোনে।
“তোদের বাসায় নিয়ে এসেছিস। তো এখন গার্লফ্রেন্ডের কোল থেকে উঠে এসে আমাদেরও তো সময় দিতে পারিস ভাই। একটা গার্লফ্রেন্ড আছে বলে কতো রং তামাশা দেখাবি আর?”
মেসেজ পড়ে নিবিড়ের হাসি আসলেও তা থামিয়ে রিপ্লাই দিলো,
– ছাদে আয়, আমা ছাদেই আছি।
তুষার রিপ্লাই দেয়,
– আমি একটু মার্কেটে আসছি।
– কেন?
– একটু দরকার ছিলো তাই।
– এই রাতের বেলায় মার্কেটে কখন গেলি, আমাকে তো বললিও না।
– তোকে বলবো কিভাবে? তুই তো তোর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে তোদের সাংসারিক ডিমে ‘তা’ দিচ্ছিস।
– হা হা, প্রেমে পরলে বা বিয়ে করলে তখন বুঝবি। আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয় বাসায়।

নিবিড় ফোন অফ করে আবার রেখে দিলে নীলা বলে,
– কে ছিলো।
– তুষার।
নীলা মুখে একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,
– তার কি খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই? সেই আমাদের পরিচয়ের প্রথম থেকেই খেয়াল করছি সব সময় আমাদের মাঝখানে পরে থাকে। এমন কেন সে?
নিবিড় একটু মুচকি হেসে বলে,
– তুষার কেমন তা ব্যাখ্যা করে বলতে পারবো না আমি। তবে সে আর বাকিরা না থাকলে হয়তো জীবন থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলতাম আমি। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই তুষারের কারণেই তুমি আর আমি পুনরায় একসাথে এভাবে বসে কথা বলতে পারছি। সো কখনো আমার বন্ধুদের কোনো কিছু নিয়ে আমার কাছে বিরক্তি প্রকাশ না করলেই আমি খুশি হবো। আমার ফ্যামিলি ও তোমার মতো তারাও আমার জীবনের একটি অংশ। কাউকেই বিন্দু মাত্রও কম করে ভাবতে পারবো না আমি। সকলেই আমার লাইফের ইম্পর্টেন্ট পার্সন।
,
,
রাতের খাবার শেষে সকলে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজ-রুশান এক জয়গায়, নিবিড় ও তুষার এক জায়গায়, ফরিদা আন্টি ও নীলা অন্য জায়গায়। তাদের সাথে আবার ফারিহাও এড হয়েছে। আজ হবু ভাবির সাথে থাকবে সে।

রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতির মুহুর্তে ফারিহাকে আড়ালে ডেকে একটা ছোট গিফ্ট বক্স হাতে তুলে দিলো তার। সাথে মুচকি হেসে বলে,
– আমি কথা দিলে কখনো সেই কথার বরখেলাপ করি না।

এই মুহুর্তে নেওয়ার জন্য মোটেও ইচ্ছে নেই ফারিহার। কারণ গিফ্টের মুড টা সন্ধা বেলার ঝগড়াতেই নষ্ট হয়ে গেছে। তাই তুষারকে কিছু বলতে গেলে তুষার তার আগেই ফারিহার হাতে সেটা ধরিয়ে দিয়ে বলে,
– রাগলে সুন্দর লাগে আপনাকে। প্রথম দিন উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম তা। তাইতো অজথাই আপনাকে রাগিয়ে দিতে ভালো লাগে। ভাববেন না বাড়িয়ে বলছি। আপনি যতটুকু ডিজার্ব করেন ততটুকুই বলছি। এখন এটা হাতে নিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিলে এর চেয়েও বেশি কিউট দেখাবে।

বলেই একটু মুচকি হেসে চলে গেলো তুষার। সাথে যেন প্রথম নতুন কাউকে কেন্দ্র করে অকারণেই হেসে উঠে ফারিহাও।

তুষারের দেওয়া গিফ্ট টা হাতে নিয়ে রুমে যাওয়ার সময় ফরিদা আন্টি সামনে পরলে চট করে তা লুকিয়ে ফেলে ফারিহা। খেলায় জিতে গিফ্ট পেলেও তা কাউকে দেখাতে প্রচুর লজ্জাবোধ করছে সে। কিন্তু ফরিদা আন্টির চোখের আড়াল হলো না তা।
একটু মুচকি হেসে ফারিহাকে বিষয়টা জিজ্ঞেস করলে সত্যটাই বলে সে। ফরিদা আন্টি একটু ভ্রু-কুচকে ফারিহার দিকে চেয়ে বলে,
– তুষার আমাদের সাথে কতোদিন একসাথে ছিলো। তুষারকে তো জীবনেও কাউকে গিফ্ট দিতে দেখলাম না। তুমি কিভাবে কিছু আদায় করলে তার থেকে? কাহিনি কি?
,
,
সকালে নাস্তা শেষে নিজ হাতে বিরিয়ানি তৈরি করে ফারিহা। সকাল সকাল গরম গরম বিরিয়ানির তাদের সামনে রাখা হলে নিবিড়ের পাশের চেয়ারে বসে তুষার। নিবিড়ের কানে কানে বলে,
– ভাই, তুই তো জানিস বিরিয়ানি আমার কতো পছন্দের। তার উপর তোদের বাড়িতে এসেছি। চাইলেও মন মতো খেতে পারবো না। তাই এক কাজ করবি তুই, আমার প্লেটে শেষ হলেই শুধু দিতে থাকবি। আমি তোকে বলবো, ভাই আর দিস না, আমি খেতে পারবো না। তবুও তুই জোড় করে আমার প্লেটে তুলে দিবি। আর বিশেষ করে মাংসের দিকটা খেয়াল রাখবি।

খাওয়া শুরু হলে নিজেদের মতো খাচ্ছে সবাই। তুষারের প্লেট খালি হতেই নিবিড় চামচ নিয়ে তার প্লেটে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে তুষার বলে,
– বেশি খেতে পারবো না অল্প করে দে।
নিবিড়ও হেসে বলে,
– আরে চুপচাপ খা, লজ্জা পাওয়ার কি আছে?

এরপর ঐটাও শেষ হলে পা দিয়ে নিবিড়ের পায়ে টাচ করলে নিবিড় আবার দিতে প্রস্তুত হলে তুষার বলে,
– ভাই আর খেতে পারবো। প্লিজ আর দিস না।
নিবিড় আবারও বলে,
– চুপচাপ খা, লজ্জা পাওয়ার কি আছে?

পরপর তিন প্লিট শেষ হলে এবার সত্যিই পেট ভরে যায় তুষারের। চাইলেও আর খেতে পারবে না। তবুও তার প্লেটে বিরিয়ানি তুলে দিতে লাগলো নিবিড়। তুষার নিবিড়ের দিকে চেয়ে বলে,
– ভাই, পেটে আর একটু জায়গা অবশিষ্ট নেই। আর খেতে পারবো না।
নিবিড় আবারও একই কথা বলে,
– আরে সবাই আমরা আমরাই তো। এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? তুই শুধু চুপচাপ খেয়ে যা।

এই মুহুর্তে তুষার কি করে নিবিড়কে বুঝাবে যে, এবার আর সত্যিই খেতে পারবে না সে। কিন্তু বললেও তো নিবিড় সেই প্রথম বারের মতোই বুঝে নিচ্ছে। খাওয়ার সাথে সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। এদিকে নিবিড় পুনরায় তার প্লেট ভর্তি করে দিলো। পাশ থেকে ফারহাও বলে,
– দিয়েই যখন ফেলেছে, কষ্ট করে এটাও খেয়ে নাও বাবা। খাবার অপচয় করতে নেই।

এদিকে তুষারেরও কিছু বলার নেই। ছল ছল নয়নে শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে নিবিড়ের দিকে।

খাওয়া শেষে সোফায় বসে আছে তুষার। হেটে রুম অব্দি যাওয়ার শক্তি নেই তার। জীবনের মতো বিরিয়ানি খাওয়ার স্বাদ মিটে গেছে আজ। সেই মুহুর্তে ফারিহা তার পাশে এসে বলে,
– দুই জনের খাবার তো একাই খেয়ে ফেললেন। যাই হোক, আপনার প্রিয় খাবার বলে কথা। আর হ্যা, আমিও আবার কাউকে কথা দিলে তার বরখেলাপ করার মতো মেয়ে না। রান্না করে খাওয়াবো বলেছিলাম, এখন খাইয়েছি। মেহমান মানুষকে খাওয়াবো বলে, না খাওয়ালেও কেমন দেখায় বলুন তো।
তুষার জোড় পূর্বক একটু হেসে বলে,
– রান্না অনেক ভালো হয়েছে। খেয়েও অনেক মজা পেয়েছি। আমিও অনেক খুশি হয়েছি। আল্লাহ্ আপনার ভালো করুক।
কথাটা বলেই আবার মনে মনে বিরবির করে বলে,
“তোর ভাই আমাকে জীবনের মতো বিরিয়ানি খাওয়ার স্বাধ মিটিয়ে দিছে বোন।”

খাওয়া শেষে কিছু সময় কাটিয়ে নিজেদের ব্যাস্ততার জন্য বেড়িয়ে পরতে হয় রুশান ও রাজ দুজনকেই। বাকিরাও তাদের ব্যাস্ততার দিকটা বুঝতে পেরে খুব একটা জোড় করলো না। ফরিদা আন্টি, নীলা ও তুষার হয়তো দু’একদিন থাকবে এখানে।
,
,
বিকেলে রাজকে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়িতে তুলে নিলো অরিণ। দুর থেকে রাজের গার্ড গুলো কিছু বলতে চাইলে হাতের ইশারায় তাদের থামিয়ে দেয় রাজ।

ড্রাইবিং করতে করতে অরিণ বলে,
– এখন সিট বেল্ট বাধা শিখেছো নাকি এখনো আগের মতো ক্ষেতই আছো?
রাজ একটু মুচকি হেসে বলে,
– ঐ দিন শিখিয়ে দিয়েছিলে না? মনে আছে।
অরিণ একটু হেসে রাজের দিকে কয়েকটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বলে,
– আমার বিয়ের কার্ড। তোমাদের সব বন্ধুদের ইনভাইট করলাম। এর মাঝে রুশান তো দেখলাম অনেক বড় মাপের লোক। ইনভাইট করেও নিয়ে আসা যাবেনা এখন। হয়তো তমরা বললে অবশ্যই আসবে।
রাজ বলে,
– বর কি করে? আমার মতো ছোট লোক না নিশ্চই?
অরিণ একটু ভাব নিয়ে বলে,
– দেশে নাম করা RJ Cowdhury Group and Ind. এ জব করে। নাম শুনেছো কখনো? শুনবেই বা কি করে? গ্রামেই তো বড় হয়েছো। শহরে আসলে কয়দিন হলো?
অরিণের কথায় অহংকারের ছাপ স্পষ্ট। তার ইন-ডিরেক্টলি অপমান টা রাজ এক সাইডে ফেলে দিয়ে বলে,
– তোমার এবারের গাড়িটা কিন্তু খুব সুন্দর। নতুন নিয়েছো নাকি?
অরিণ হেসে বলে,
– এটা সাজিদ মানে আমার হবু বরের গাড়ি। এমন দুইটা আছে তার। একটা আমি নিয়ে এসেছি। তাকে অফিস থেকে গিফ্ট করেছে ব্যবহারের জন্য।

অরিণের এতো অহংকার ভাব দেখে একটু হাসলো রাজ। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে এক হাত বের করে আঙুলের ইশারা করলে পেছন থেকে লম্বা সারিবদ্ধ ভাবে এক এক করে গাড়ি আসতে শুরু করে। একের পর এক গাড়ি গুলো সারিবদ্ধ ভাবে রাস্তা দখল করে চলছে। রাজের বাবা, রাজের ভাই ও এখন রাজ। সবাই একসাথে বের হওয়ায় কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে রাখা হয়েছে এই রাস্তায় গাড়ি চলাচল। অরিণও বিষয়টা জানে যে, নাম করা পলিটিসিয়ান রাজু চৌধুরি ও তার বাবা সাথে ঐ কম্পানির অর্নার, সবাই বের হওয়ায় আজ কিছু সময়ের জন্য এই রাস্তায় যান চলাচল নিষিদ্ধ।

এর মাঝে অরিণ লুকিং গ্লাসে পেছন পেছন আসা কালো কালারের অনেক গুলো গাড়ি দেখে কিছুটা আতঙ্কিত হলেও মনে মনে ভাবে, হয়তো সাজিদ পাঠিয়েছে অরিণকে সিকিউরিটি দেওয়ার জন্য। তবুও বার বার লুকিং গ্লাসে তাকালে পাশ থেকে রাজ বলে,
– ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ওটা তোমার সেই বিখ্যাত RJ Cowdhury Group and Ind. এর মালিকের পার্সোনাল সিকিউরিটি।
বলেই সিটে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলো রাজ। আর অরিণ গাড়ি থামিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে।
অবাক ভঙ্গিতে বলে,
– তুমি কিভাবে জানো?
রাজ স্বাভাবিক থেকে একটা হাসি দিয়ে বলে,
– আরো কিছুটা সামনে চলো। তখন তোমার হবু স্বামী সাজিদের কাছ থেকেই জেনে নিও।

To be continue………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here