ছদ্মবেশ (শেষ পর্বের শেষ অংশ)

1
2152

#ছদ্মবেশ (শেষ পর্বের শেষ অংশ)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

শীতের সকালে বেলকনিতে বসে এক মনে কুয়াশায় ঢাকা প্রকৃতির দিকে চেয়ে আছে রাজ। ঠান্ডার শরিরটা বার বার কেপে উঠলে চাদরটা আরো ভালো করে পেচিয়ে নেয় সে। রুম থেকে বেড়িয়ে বেলকনিতে পা রাখে আরোহি।
বিয়ের আজ দুই মাস পার হলো তাদের। তবুও প্রতিটা সকালই যেন নতুন মনে হয় তার কাছে। মনে হয়, এই যে আজই তো তার সাথে প্রথম দিন। আমাদের নতুন জীবনের সূচনা।

আরোহি কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাতে চেয়েও পারলো না। ঠান্ডায় রাজকে এভাবে বসে থাকতে দেখে অনেকটা অধীকার নিয়ে বলে উঠে,
– এভাবে ঠান্ডায় বসে আছেন কেন? ঠান্ডা ধরে যাবে তো। ভেতরে এসে বসুন।
আরোহির কথায় রাজ চুপচাপ তার দিকে চেয়ে বলে,
– ভালো লাগছে খুব।
আরোহি আবার বলে,
– ঠান্ডা ধরলে তখন সব ভালো লাগা বের হয়ে যাবে।
রাজ পূনরায় বলে,
– এমন বৌ থাকতে ঠান্ডায় ধরার চান্স নাই।
আরোহি কিছুটা ভ্রু-কুচকে বলে,
– কিভাবে?

আরোহির এমন প্রতিক্রিয়া দেখে মৃদু হাসলো রাজ। মুখে হাসির ভাবটা রেখে বলে,
– এক কাপ চা নিয়ে আসতো বলো। তারপর বলছি।
আরোহি যাচ্ছি বলে পা বাড়ালে রাজ আবার পিছু ডেকে বলে,
– শুনো, তুমি বরং আজ নিজ হাতেই ভালো করে বানিয়ে নিয়ে আসো।
আরোহি মুখে কিছুটা হাসির আভাস ফুটিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। রাজ পূনরায় নিশ্চুপ হয়ে কুয়াশা ভরা প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে রইলো রাজ।

কিছুক্ষণ পর এক কাপ চা হাতে বেলকনিতে পা রাখে আরোহি। রাজের হাতে এক কাপ দিয়ে বলে,
– এবার ভেতরে চলুন। এখানে প্রচুর ঠান্ডা।
রাজ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
– বেশি ঠান্ডা লাগছে?
আরোহি মাথা নাড়িয়ে বলে,
– কিছুটা।

বিয়ে হলেও বাচ্চামো এখনো ছাড়েনি আরোহিকে। রাজ কাপটা এক পাশে রেখে বলে,
– কাছে এসো, তোমার ঠান্ডা দুর করে দিই।
বলেই গায়ের চাদরটা খুলে দু’হাতে মেলে ধরলো সে। বিষয়টা কিছুটা বুঝতে পেরে কিছুটা লজ্জার ছাপ ফুটে উঠে আরোহির মাঝে। কিছুটা না চাইতেই প্রকাশ হয়ে গেলেও ভেতরটায় একরাশ লাজুজতা নিয়ে রাজের খুব কাছে গিয়ে ধাড়ালো। পরিচিতি যতই পুরোনে হোক, অনুভূতি গুলো যেন মাঝে মাঝে নতুনত্বের ছোয়া পায়।

আরোহিয়ে এক হাতে কাছে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো রাজ। লাজুকতা পুরোপুরি ঘিরে ধরলে রাজের বুকে মিশে কিছুক্ষণ চোখ দুটু বুঝে থাকে সে।
এই শীতল সকালটায় একই চাদরের মাঝে লুকিয়ে আছে দুজন। সেই সাথে একে অপরের এক কাপ চায়ের ভাগিদার।
চায়ের কাপ এক পাশে রেখে একই চাদরে লুকিয়ে কুয়াশায় আচ্ছন্ন প্রকৃতিকে উপভোগ করছে দুজন।
আরোহির ঘারে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালে শরির জুড়ে কিছুটা শিহরণ বয়ে যায় তার। তবুও চোখ বুজে চুপ করে আছে সে। অনুভব করতে ব্যাস্ত এই সুন্দর সকালটাকে।

রাজ কিছুটা স্বাভাবিক গলায় ডেকে উঠে,
– আরোহি।
আরোহিও তৎক্ষনাৎ বলে,
– হুম।
রাজ ট্রাউজারের পকেট হয়ে একটা কাগজ বের করে তা আরোহির দৃষ্টির আড়ালে রেখে বলে,
– আমাকে দেওয়া তোমার সেই প্রথম গিফ্ট-এর কথা মনে আছে?
আরোহি মাথা ঘুড়িয়ে রাজের দিকে দৃষ্টি রেখে ভ্রু-কুচকে বলে,
– কোন গিফ্ট!
রাজ বলে,
– যেই গিফ্টের জন্য তোমাকে কাঁদতেও হয়েছিলো। দেখোতো মনে করতে পারো কিনা?

আরোহির এবার কিছুটা গোমড়া মুখে বলে,
– হুম মনে পরেছে। অনেক যত্ন করে আঁকা সেই ছবিটা সেদিন ছিড়ে ফেলে দিয়েছিলেন আপনি।
রাজ কিছুটা আদুরে গলায় বলে,
– খুব যত্ন করে এঁকেছিলে, তাই না?
আরোহি মাথা নাড়িয়ে বলে,
– হুম।
রাজ কিছুটা মৃদু হেসে আরোহির দিকে সেই ছবিটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– তাহলে তোমার যত্ন করে তৈরি করা উপহারটা আমি কিভাবে অযত্ন করে ছিড়তে পারি বলো। আমারও যত্ন করে রাখা উচিৎ নয় কি? তাছাড়া ভালোবাসা কি অযত্ন করে রাখার জিনিস?

আরোহি এক পলক ছবিটার দিকে তাকিয়ে পূণরায় মুগ্ধ নয়নে তাকায় রাজের মুখের পানে। একরাশ মুগ্ধতা ঘিরে আছে দুজনকে। সময়টা সুন্দর, তবে মানুষটা অদ্ভুত।
,
,
এদিকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই পড়তে বসলো রিমা। ভার্সিটি ভর্তির জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছে সে। সকাল ৯ টার পর আবার কোচিং-এর উদ্দেশ্য বের হতে হয় তাকে।
সবে বাজে সকাল সাড়ে ৭ টা। ওদিকে কাজের মেয়েটে ও আরশি মিলে নাস্তা তৈরি করায় ব্যস্ত।
এই শীতের সকালটা তাদের সাথে মিলেমিশে কাজ করলেও সুন্দর কাটতো। নয়তো কম্বল মুড়িয়ে শান্তিতে একটু ঘুমাতে পারলে। কোনোটাই হচ্ছে না তার। যেটা হচ্ছে, তা হলো বই সামনে রেখে এক রাশ বিরক্তি প্রকাশ।

তার পাশেই খাটে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে নিশ্চিন্তে ফোন টিপছে রুশান। আর একটু পর পর আড়-চোখে রিমার দিকে তাকাচ্ছে। ফাকি দেওয়ারও সুজুগ নেই।
এই মুহুর্তে রিমার প্রচুর ইচ্ছে হচ্ছে কম্বলের নিচে গিয়ে নিশ্চিন্তে একটা ঘুম দিতে। তাও হচ্ছেনা এই রুশানের জন্য।
রিমা কিছুটা সুজুগ খুজতে বলে,
– এই শুনেছেন? আন্টি মনে হয় আমায় ডেকেছে। আমি একটু দেখে আসি কেন ডাকছে।
রুশান তার দিকে চেয়ে বলে,
– কই আমি তো শুনতে পাই নি।
রিমা তৎক্ষনাৎ বলে,
– এই মাত্র ডেকেছে আপনি বোধ হয় ফোনের দিকে মনোযোগ থাকায় শুনতে পান নি।

রুশান এবার দরজার দিকে উকি দিয়ে মাকে ডেক দিলে আরশি এসে হাজির হয় কিছুক্ষনের মাঝে। রুশান মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
– রিমাকে ডেকেছিলে?
আরশি বলে,
– কই না তো? আর এভাবে ডাকছিলি কেন?
রুশান আর কিছু না বলে একবার রিমার দিকে তাকালো। ছোটখাটো একটা ঢোক গিলে বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে লাগলো রিমা। রুশান পূনরায় মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
– এটাই জানতে ডেকেছিলাম।

মনে মনে রুশানোর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে রিমা। তার কয়েকজন বান্ধবিকে বিয়ে দেওয়ার পর তারা এখন কতো সুন্দরে পড়াশুনা বাদ দিয়ে নিজের সংসার সামলাচ্ছে।
যা দেখে মা বাবার এক কথাতেই বিয়েতে রাজি হয়েছিলো সে। যে অন্তত পড়াশুনা থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু হলো তার উল্টোটা।
নতুন বিয়ের পর কই ভেবেছিলো শীতের সকালে রুশানের বুকে মাথা রেখে শান্তির ঘুম ঘুমাবে। রুশানের কি আবেগ অনুভূতি কিছু নেই। শীতের সকালে কই একটু রোমেন্স করবে তা না। পড়ার প্যারা নিয়ে আসছে আরামের ঘুমটা হারাম করতে। এমনটা হবে জানলে বিয়েই করতাম না তাকে।
নিজের মাঝে বিরবির করতে করতে বইয়ের দিকে তাকায় রিমা।
রিমার বিরবির একটু একটু কানে আসলেও কি বলছে তা পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছেনা রুশান। ভেতর ভেতর মুচকি হাসলেও তা প্রকাশ না করে চুপচাপ ফোন হাতে শুয়ে আছে সে।
,
,
ফোন কলের শব্দে ঘুম ভাঙে তুষারের। ফোন হাতে দেখে পরপর ৩ টা কল দিয়েছিলো ফারিহা। জ্বিভে কামড় কেটে পুনরায় কল ব্যাক করে তুষার। মনে একটা ভয় সব সময় কাজ করে তার। অনেক বছর অপেক্ষা করে একটা গার্লফ্রেন্ড জুটলো তার। এখন কোনো ভুল করে এটা হারানো যাবে না কোনো ভাবে।

পূনরায় কল ব্যাক করে টানা ১০-১২ বার একের পর স্যরি বলে গেলো তুষার। ওপাশ থেকে ফারিহা কিছুটা রাগি ভাব নিয়ে বলে,
– কয়বার ফোন দিয়েছি তোমায়?
তুষার আবার বলে,
– আমি সত্যিই দেখতে পাইনি। সকাল বেলার ঘুম বুঝোই তো। প্লিজ রাগ করোনা তুমি।
ফারিহা আবার বলে,
– বিয়ের আগেই তুমি আমাকে ইগনোর করে চলছো, তাহলে বিয়ের পর কি করবে?
তুষার আবার বলে,
– আমি সত্যিই যেনে শুনে তোমায় ইগনোর করিনি।
ফারিহা রেগে বলে,
– তার মানে, না যেনে ইগনোর করছো?
তুষার জ্বিব কামড়ে বলে,
– এই না না, কি বলি আর কি বুঝো। আমি তোমাকে ইগনোরই করিনি। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তাই ধরতে পারিনি ফোন।
ফারিহা এবার বিরক্তি নিয়ে বলে,
– আচ্ছা বায়, রাখি আমি।
তুষার অস্থিরতা দেখিয়ে বলে,
– এই শুনো শুনো প্লিজ। রাগ করেছো তাই তো? ওকে ফাইন। এখন কি করলে তোমার রাগ ভাঙবে তা বলো। আমি সেটাই করবো।
ফারিহা এবার স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– যা বলবো তাই করবে তো? তাহলে খাট থেকে নেমে নিচে দাড়াও। এরপর ভিডিও কল দিয়ে ফোনটা সামনের একটা টেবিলে কিছুর সাথে হেলান দিয়ে লম্বালম্বি ভাবে রেখে ১০ বার কা’ন ধরে উটবস করবে। তাহলেই আমার রাগ ভাঙবে।
তুষার কিছুটা আহত গলায় বলে,
– প্লিজ এই কা’ন ধরার টা বাদ দিয়ে অন্য কিছু দাও।
ফারিহা বলে,
– ওকে ফাইন, আমি গেলাম। আল্লাহ হাফেজ।
তুষার আবারো অস্থির হয়ে বলে,
– আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, এই যে আমি ১০ বার কা’ন ধরে উট-বস করছি।
বলেই কল কেটে ভিডিও কল দেয় তুষার। ফোনটা সামনে রেখে একে একে কান ধরে উটবস করছে সে। ওপাশ থেকে ফারিহা এক দুই করে গননা করছে। আর পাশে নীলাকে ইশারায় দেখাচ্ছে। দেখো ভাবি তোমার দেবরকে কিভাবে নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছি আমি।
নীলা তা দেখে বলে,
– বেচারাকে এই সাজ-সকালে এভাবে কা’ন ধরানোটা কি ঠিক হচ্ছে বলো।
ফারিহা হেসে বলে,
– একটু টাইট দিয়ে না রাকলে আবার অন্য মেয়ের দিকে মোড় কাটতে পারে। তাই মাঝে মাঝে এমন পানিসমেন্ট দিই তাকে।

এর মাঝে তুষারের রুমে এসে প্রবেশ করে তার ছোটবোন তীসা। তুষারকে এভাবে কান ধরে উটবস করতে দেখে কিছুটা অবাক হলো সে। পেছন থেকে বলে উঠে,
– ভাইয়া তুমি এভাবে কা’ন ধরে উটবস করছো কেনো?
তুষার থেমে গিয়ে পেছন ফিরে তীসাকে দেখে কিছুক্ষন কথা খুজে আচমকাই বলে উঠে,
– তোকে কে বললো কা’ন ধরছি? আমি তো সকাল সকাল উঠে ব্যায়াম করছি। একবার উঠি একবার বসি এটাই ব্যায়াম। তুই ছোট মানুষ এগুলো বুঝবি না।
তীসা এবার সামনে টেবিলে থাকা ফোনটার দিকে তাকিয়ে বলে,
– তাহলে ফোনে ঐ মেয়েটা কে? যে প্রতিবার এক দুই করে গুনছিলো।
তুষার আবার কিছুটা কথা সাজিয়ে বলে,
– আরো ওটাতো আমাদের টিচার। তোদেরকে যেমন টিচাররা পড়ায়, আমাদেরকেও তেমন টিচাররা ব্যায়াম করায়।

এর মাঝে তুষারের মা আসলো রুমে। টেবিলে নাস্তা রেখে অনেক্ষন আগে তীসাকে পাঠিয়েছিলো তুষারকে ডেকে দিতে। এখন তীসারও খবর নেই তাই তিনি নিজেও আসলেন রুমে।
ভাই বোন দুজনকে এমন কথা বলতে দেখে তিনি কারণ জিজ্ঞেস করলে তীসা বলে উঠে,
– ভাইয়া কা’ন ধরে উটবস করছিলো। আর একটা মেয়ে ফোনে এক দুই করে গুনছিলো।
তুষার জ্বিভ কামড়ে বলে,
– না না মা, ও আসলে বুঝেনি বিষয়টা। আমি আসলে ব্যায়াম করছিলাম। সকাল বেলা তো ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তাই না?
তুষারের মা বলে,
– তাহলে কোন মেয়ের কথা বললো?
তুষার বলে,
– মা সে হলো আমাদের অনলাইন টিচার।
তুষারের মা কিছু না বুঝে বলে,
– অনলানে যে কিভাবে পড়াশুনা করিস এতোকিছু বুঝিনা আমি। এখন নাস্তা করতে আয়।
বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো সে। একটা স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়লো তুষার। পাশ থেকে তীসা মুচকি হেসে বলে,
– ভাইয়া আমি কিন্তু বুঝে গেছি সব।
,
,
সুন্দর সময় গুলো কেটে গেলো এক এক করে। সেই ব্যাচেলর লাইফের ইতি টেনে একে একে কেটে গেলো পাঁচটা বছর। আজ সবাই নিজেদের মতো জীবন নিয়ে ভাবতে ব্যাস্ত সময় পার করছে। সেই সাথে নিজেদের পরিবারকে স্ত্রী-সন্তানদের হাসি খুশি রাখতে ব্যস্ত।

তাদেরও একটা সুন্দর ব্যাচেলর লাইফ ছিলো তা আজ জীবনের এই পর্যায়ে এসে এক কাপ চায়ের সাথে দীর্ঘশ্বাসের একটা গল্প হয়ে দাড়ালো।
সেই মুহুর্ত গুলো জীবন থেকে চলে গেলেও রয়ে গেলো স্মৃতি হয়ে। ভালোবাসা আর বন্ধুত্বটা রয়ে গেলো এখনো আগের মতো।

আজ একটা বিশেষ দিন। রাজ তার তিন বছরের ছেলেকে কোলে নিয়ে আদর করে খাইয়ে দিতে ব্যস্ত। অপর দিকে রুশানের মেয়ের বয়স আজ দুই বছর। তুষার পড়াশুনা শেষে বিয়ে করেছে সবে দেড় বছর হলো। সন্তান নিয়ে তারা এখনো তেমন মাথা ঘামাচ্ছে না।
রাজ তার ছেলেকে খাইয়ে দিয়ে রুশানকে ফোন দিয়ে বলে,
– বের হয়েছিস?
রুশান ওপাশ থেকে বলে,
– হুম, নিবিড়, তুষার তারা কতটুকু প্রস্তুতি নিলো?
রাজ বলে,
– তারাও বের হচ্ছে।
বলেই ফোন কেটে দিলো তারা। আজ যে খুব একটা বিশেষ দিন।

নিবিড় বের হওয়ার আগে আলতো করে চুমু এঁকে দিলো নীলার কপালে। হাটু গড়ে বসে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নীলার পেটেও একটা চুমু এঁকে দিলো। মাঝে মাঝে যাকে নিয়ে পাগলামিতে মেতে উঠে সে। কখনো নিশ্চুপ হয়ে অনাগত সন্তানের সাথে কথা বলে সে,
‘খুব জলদি বাবার কাছে চলে আসো সোনা। বাবা তোমায় খুব ভালোবাসে।’
সেই মুহুর্তে নীলাও হেসে বলে,
– বাবু একটা উত্তর দিয়েছে সেটা শুনেছেন তো?
নিবিড় বলে,
– কই না তো।
নীলা বলে,
– বলেছে, আমি শিগ্রই তোমার কাছে আসছি। তুমি শুধু মাকে দেখে রেখো। আর মায়ের কেয়ার করো।
বলেই এক সাথে হেসে উঠে নিবিড়-নীলা দুজনই।

সকাল ৮ টায় এক জায়গায় এসে একত্রিত হলো তারা চারজন। আজ দিনটা হলো নিলয়ের পঞ্চম মৃত্যু বার্ষিকি। রক্তের সম্পর্ক ব্যাতিত অন্য কোনো সম্পর্ক হারিয়ে যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তাকে ভুলে যায় মানুষ। তবে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তো কোনো রক্তের সম্পর্ক না। তবুও কেন তার কথা আজ পাঁচ বছরেও একটু ভুলেনি কেউ?
চারজন একসাথে নিলয়ের ক’বর জিয়ারত শেষে কিছু সময় চুপচাপ কাটিয়ে দিলো সেখানে।
প্রতি বছর আজকের এই দিনটায় এই জায়গায় এসে দাড়ালে প্রতিবারই মনটা বিষণ্ন হয়ে উঠে তাদের। অতিতের স্মৃতি যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠে নতুন করে।

তারা চারজন বিষণ্ন মনে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে এক পাশে। অন্য পাশে চিরতরে ঘুমিয়ে আছে নিলয়। খুবই নিরবতা এই জায়গায়। একাকি ঘুমিয়ে আছে সে। মাখে মাঝে মনে হয় সে, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছে,
– এই জায়গায় আসলে প্রতিবারই তোরা এমন বিষণ্ন হয়ে থাকিস কেন বল তো। সব সময় তোরা আমার সামনে বিষণ্ন থাকলে আমার কি তা ভালো লাগে বলতো। আমি না হর দুরে চলে গেলাম। ভালোবাসাটা তো তোদের প্রতি আগের মতোই রয়ে গেছে। এভাবে বিষনণ্নতায় নয়, তোদের হাসি মুখে দেখতেই আমার খুবই ভালো লাগে। দুনিয়াতে আপন বলতে শুধু তোরাই ছিলি। তোরা এমন বিষণ্ন থাকলে আমি কি করে ভালো থাকি?

এমনটা মনে হলেও কবরটা নিশ্চুপ। হাজার চেষ্টা করেও প্রিয় বন্ধুটার মুখ দিয়ে আর একটু শব্দও বের হবে না। যা হবে তা শুধুই কল্পনার জগতে। তার অস্তিত্ব টাও এতো দিনে বিলিন হয়ে গেছে। শুধু রয়ে গেছে স্মৃতি আর ভালোবাসা।
নিরবতা ভেঙে রাজ বলে উঠে,
– আমরা এখানে কয়জন আছি?
পাশ থেকে তুষার বলে,
– চার জন।
রাজ একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে,
– নিলয় তো এই মুহুর্তেও আমাদের খুব কাছেই ঘুমিয়ে আছে। তো আমাদের সেই পুরোনো ছদ্মবেশী বন্ধুমহল আজ পরিপূর্ণ নয় কি?

-সমাপ্ত……………..

1 COMMENT

  1. Ohhhh what a friendship story ! I want story like this. Full of comedy, friendship, Mistry , Action,cute love story it was mind blowing. I loved the story .

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here