ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_02

0
2611

ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_02
Ariyana Nur

বিকেলের হলদেটে রোদ জানালার কাচ ভেদ করে উপচে পরছে আশুর মুখে।আশু গাড়ির জানালার দিকে মুখ করে বাহিরের দিকে চেয়ে চেয়ে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।আর মনে মনে নিজেকে গালাগাল করছে।কেন যে তখন রেগে গিয়ে ঐ রকম একটা কান্ড করে বসলো তা ওর মাথায় আসছে না।

ফ্লাসব‍্যাকঃ
আশু ছুটির পর গেটের দিকে আসতেই দেখল নীলাভ হিরোদের মত স্টাইল করে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আর হাতের ঘড়ির দিকে বার বার তাকাচ্ছে।আশেপাশের কিছু মেয়েরা যে ওর দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে তার খেয়াল নেই।কেউ নিজের মন মত নীলাভের তারিফ করছে।আশুর ক্লাসমেট জেমি যাকে আশু দেখতেই পারে না সে নীলাভের দিকে তাকিয়ে তার সাথিদেরকে বলছে….

—দেখ দেখ ছেলাটি কি হ‍্যন্ডসাম।পুরোই মাখন।দেখ কিভাবে দাড়িয়ে আছে।আমি তো ফিদা হয়ে গেছিরে তার উপর।দেখ কি সুন্দর চুলগুলো বার বার তার কপাল ছুয়ে দিচ্ছে।হায়!যদি আমি হাওয়া হতাম আর তার চুল গুলো ছুয়ে দিতে পারতাম।

জেমির কথা শুনেই আশু রেগে বোম হয়ে গেলো।গটগট করে হেটে নীলাভের সামনে গিয়ে নীলাভের কলার ধরে মাথা নিচু করে ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দিল।শার্টের হাতা কনুই পযর্ন্ত ফোল্ড করা ছিল তা টেনে নামিয়ে ফেলল।আশুর এমন উদ্ভুত কাজে নীলাভ আশুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

আশু নীলাভকে এভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হয়ে রাগি গলায় বলল….

—এভাবে হা করে তাকিয়ে না থেকে গাড়িতে উঠুন।প্রতিদিন তো গাড়িতেই বসে থাকেন।আজ গাড়ি থেকে নামতে কে বলেছে।যত্তসব।উঠুন গাড়িতে।(ঝারি মেরে)

কথাটা বলেই আশু গটগট করে গাড়িতে উঠে গেলো।নীলাভ কিছুক্ষন বোকার মত তাকিয়ে থেকে গাড়িতে উঠে গেলো।সব জেন নীলাভের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

_____________________

সাইফ তাড়াতাড়ি অফিসের কাজ গুছিয়ে বাসায় এসে পরেছে।কাজের ফাকে ফাকে নুহার খবর নিলেও তার অফিসের কাজে মন বসছিলো না।তাই তাড়াতাড়িই বাড়িতে চলে এসেছে।

সাইফ বাড়িতে এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।রুমে এসে নুহাকে না দেখেই সাইফ এর মাথা গরম হয়ে গেল।সাইফ রেগে বিরবির করে বলল….

—এই মেয়েকে আমার কথা আমি কিছুতে শুনাতেই পারি না।বলেছি রুম থেকে বের হতে না।আর সে রুমেই নেই।এদিকে আমি তার চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি আর সে দিব্বি ঘুড়ে বেরাচ্ছে।

সাইফ চেন্জ না করেই আশুকে খুজতে গেলো।

নুহা আর রুনা কিচেনে কাজ করছে আর গল্প করছে।
সাইফ কিচেনের দরজার সামনে গিয়ে নুহাকে কাজ করতে দেখে গম্ভীর গলায় বলল….

—এখানে কি করছো?

নুহা কফি বানানোর জন‍্য গরম পানি মগে ঢালছিলো।সাইফ এর গলার আওয়াজ পেয়ে নুহা ঘাবড়ে গিয়ে ওদিকে তাকাতেই গরম পানি হাতের উপর পরল।

সাইফ তাড়াতাড়ি করে সামনে গিয়ে নুহার হাত ধরে টেপ ছেড়ে বেসিনের নিচে ধরল।

নুহা চোখ খিচে বন্ধ করে ব‍্যথা সহ‍্য করছে।রুনা তাড়াতাড়ি ফার্স্ট এইড বক্স থেকে বার্ন মলম বের করে সাইফ এর সামনে ধরে ভয়ে ভয়ে বলল….

—বড় দাদা!মলমডা লাগাইয়া দেন জলদি জলদি নাইলে ফোসকা পইড়া যাইবো।

সাইফ কোন কথা না বলে টেপের নিচ থেকে নুহার হাত সরিয়ে রুনার থেকে মলমটা নিয়ে নুহাকে কোলে তুলে নিল।সাইফ এর কাজে নুহা চোখ বড় বড় করে বলল….

—আমার হাত পুড়েছে পা না।আমি হেটে যেতে পারবো।

সাইফ কোন কথা না বলে ওর দিকে রাগি চোখে তাকাতেই নুহা সাইফ এর চোখ দেখে ভয়ে আর কোন কথা বলল না।কেননা সাইফ এর চোখ,মুখ অসম্ভব লাল হয়ে হয়েছে।নুহা মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলো এর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন‍‍্য।

সাইফ রুমে এসে নুহাকে বেডে বসিয়ে ওর সামনে বসে নুহার হাতে মলম লাগাতে লাগলো।মলম লাগানো শেষ করে কিছুক্ষন নুহার হাত ধরে বসে থেকে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো।নুহা ভয়ে কিছু বলার আর সাহস পেলো না।চুপচাপ সেখানেই কাচুমাচু করে বসে রইল।

________________________

বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই আশু গাড়ি থেকে নেমে তাড়াতাড়ি চলে গেলো।আশু ডোর বেল বাজাতেই রুনা দরজা খুলে দিলে।আশুকে দেখেই রুনা গড়গড় করে বলতে লাগল…..

—ছোড বউমনি জানো বড় বউমনির না হাত পুইড়া গেছে।বড় দাদায় দেইখা মেলা রাগ কইরা তারে উপরে নিয়া গেছে।

আশু উওেজিত হয়ে বলল…..
—কি!কখন,কিভাবে আপির হাত পুড়লো?

রুনা গড়গড় করে আবার সব বলতে লাগলো।আশু আর দেরি না করে উপরের দিকে পা বাড়ালো।নীল গাড়ি পার্ক করে এসে দরজার সামনে দাড়াতেই রুনার সব কথা শুনতে পেল।সেও আর দেরি না করে সেদিকে পা বাড়ালো।

আশু নুহার রুমে ঢুকে দেখে নুহা চুপচাপ বসে আছে।আশু ওর সামনে বসে ওর হাত ধরে হাত উলট পালট করে নেড়ে দেখতে দেখতে উত্তেজিত হয়ে বলল…..

—দেখে কাজ করতে পারো না।কাজের সময় ধ‍্যান কোথায় থাকে তোমার?দেখেছো কতক্ষানি পুড়ে গেছে?

আশুর কথার মাঝেই সাইফ ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বলল….

—এদের বলে লাভ নেই পিচ্ছি।এদের বলা যা না বলাও তা।কেয়ারলেস মানুষ।নিজের কোন কেয়ার করতেই জানে না।

—এটা কিন্তু ঠিক না ভাইয়া!শুধু শুধু তুমি আমার বউমনিকে বকছো কেন?বউমনি কি ইচ্ছে করে করেছে নাকি?
নীলাভ রুমের ভিতরে এসে কথা গুলো বলল।

আশু নীলাভের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল….

—হুহ আসছে বউমনির হয়ে ওকালতি করতে।তার বউমনি যে কি সব কান্ড করে বেরায় তার কোন খবর নেই?

নীল অবাক হয়ে বলল….
—এখানে ওকালতির কি হল?

আশু ভেঙচি কেটে বলল….
—ওকালতির বহুত কিছুই হয়েছে।

নীলঃ তাহলে তো তুমিও ভাইয়ার হয়ে ওকালতি করছো।

আশুঃআমার ভাইয়া।আমি তার জন‍্য করতেই পারি।আপনার কোন সমস‍্যা?

—আমার বউমনি।আমিও তার হয়ে কথা বলতেই পারি তোমার কোন সমস‍্যা?

—আপনার বউমনির জন‍্য আপনি ওকালতি করুন বা কথা বলুন তাতে আমার কোন সমস‍্যা নেই।কিন্তু আমার ভাইয়াকে কিছু বলতে পারবেন না।বুঝেছেন।

—আপনারা ভাই বোনও আমার বউ মনিকে কিছু বলতে পারবেন না।কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নিন।

এক কথায় দু কথায় লেগে গেলো দুজনের মধ‍্যে বিশ্ব যুদ্ধ।ওদের ঝগড়া দেখে সাইফ ওদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আর নুহা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।আশু নীলাভ এর সাথে কথায় না পেরে গাল ফুলিয়ে নুহাকে বলল….

—দেখো আপি!তোমার ভাই আমার সাথে কিভাবে ঝগড়া করছে।তাকে কিছু বল।

নুহাঃও ঝগড়া করছিলো আর তুমি কি করছিলে?একটা কথাও তো মাটিতে পরতে দাও নি এখন এসেছো নালিশ করতে।

নীল হাসতে হাসতে বলল….

—এই না হলে আমার বউমনি।দেখলে আমার বউমনি আমার পক্ষে।আর এই বাচ্চাদের মত নালিশ করা বাদ দাও।

আশুঃলাগবে না আপনার বউমনিকে আমার পক্ষে।আমার পক্ষে আমার ভাইয়া আছে।ভাইয়া তুমি আমার পক্ষে না?
(সাইফ এর দিকে ইনোসেন্ট ফেস করে তাকিয়ে)

সাইফঃআমি সব সময় আমার পিচ্ছি বোনটার পক্ষে।ঐ বাদরের পক্ষ নেওয়ার কোন মানেই হয় না।

সাইফ এর কথা শুনে আশু খুশি হয়ে বলল….

—ইয়াহু…..
ভাইয়া আমার পক্ষে।এখন আর আমার কোন চিন্তা নাই।যে আমার সাথে তিড়িং বিড়িং করতে আসবে তাকেই ভাইয়াকে দিয়ে ধোলাই খাওয়াবো।

_______________________

অন্ধকার এক রুমে চেয়ারে বসে একেক পর এক সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে একজন।একটু পর লোকটার এসিস্টেন্ট এসে কাপা কাপা হাতে দরজায় নক করে বলল….
—স‍্যার….

লোকটি সিগারেট এর ধোয়া উড়িয়ে বলল….
—সব খবর এনেছো ?

—জ্বী স‍্যার।

—গুড।ভেরি গুড।তুমি এবার আসতে পারো।

এসিস্ট‍েন্ট লোকটি চলে যেতে নিলেই লোকটা বলল….
—নাহিদ….

লোকটার ডাকে নাহিদ ঘুড়ে ঘাবড়ে গিয়ে বলল….
—জ্বী স‍্যার।

—কাউকে কষ্ট পেতে দেখলে তোমার কেমন লাগে।আমার না অনেক ভালো লাগে।তাই তো ঠিক করেছি তাদেরকে এমন কষ্ট দিব যাতে তাদের কষ্ট দেখে আমি আনন্দ নিতে পারি।
কথাগুলো বলে সে বিশ্রি ভাবে হাসতে লাগলো।

নাহিদ বোকার মত দাড়িয়ে রইল।ওর বস যে খারাপ কিছু করার পরিকল্পনা করছে তা তার বুঝতে বাকি রইল না।

চলবে

(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন‍্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here