ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_05
Ariyana Nur
মুহূর্তের মধ্যে কি থেকে কি হয়ে গেলো কারোর মাথাই কিছু ঢুকছে না।নুহা আশুকে ধরে কান্না করছে।মনে হচ্ছে আঘাত আশুর না নুহার শরীরেই লেগেছে।
নুহা আর সাইফ যখন আশুদের অনেকটা সামনে চলে এসেছিলো তখনি ফুল স্পিটে একটা বাইক নুহাদের পাশ কেটে এসে আশুর সমনে দিয়ে যাওয়ার সময় আশুর হাতে নাইফ দিয়ে আঘাত করে চলে গেলো।যেতে যেতে একটা মোড়ানো কাগজ ওদের দিকে ছুড়ে ফেলে গেলো।আশু হাত ধরে আহ্ শব্দ করতেই নুহা চিৎকার করে আশুর নাম নিয়ে দৌড়ে চলে আসলো আশুর কাছে।
আশুর হাত দিয়ে গরগর রক্ত বের হচ্ছে।নীল তাড়াতাড়ি রুমাল বের করে আশুর হাত বেধে দিল।কিন্তু তাতে কোন কাজ হলো না।রক্ততে রুমাল ভিজে চুপচুপা হয়ে গেলো।নুহা আশুর হাতে আঘাত দেখে পাগলের মত করছে।নুহাকে কেউ সামলাতে পারছে না।আশু নিজের হাত এমন তাজা রক্তে চুপচুপ করতে দেখে তার মাথা ঘুরতে লাগলো।মুহূর্তের মধ্যে সব অন্ধকার দেখতে লাগলো।
আশু সেন্সলেস হয়ে পরে যাওয়ার আগেই নীল আশুকে ধরে ফেলল।এক মুহূর্ত দেরি না করে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়ির দিকে পা বাড়ালো।নুহাও সে দিকে ছুটলো।সাইফ সেদিকে পা বাড়াতে গিয়ে আশেপাশে চোখ বুলাল।কেননা সাইফ তখন স্পষ্ট দেখেছে বাইকের থেকে কিছু একটা তারা এদিকে ছুড়ে মেরেছিল।আশেপাশে চোখ বুলাতেই একটা মোড়ানো কাগজ দেখতে পেল।কাগজটা তুলে নিয়ে সে সামনের দিকে পা বাড়ালো।
____________________________
কিছুক্ষন হল আশুর জ্ঞান ফিরেছে।আশু হাসপাতালের বেডে হেলান দিয়ে শুয়ে রয়েছে।পাশে নুহা নাক টেনে কান্না করে যাচ্ছে।পাশেই সাইফ আর নীল দাড়িয়ে আছে।তাদের মুখে রয়েছে চিন্তার ছাপ।আশু নুহার হাত ধরে বলল…..
—আপি….
এভাবে কান্না কেন করছো বল?দেখ আমি ঠিক আছি।আর ডাঃ ও তো বলেছে কিছুদিনের মধ্যেই হাত ঠিক হয়ে যাবে।তাহলে এমন কান্না কেন করছো তুমি?
নুহা চোখ মুছে ধরা গলায় বলল….
—বেশি কথা কম বল।দেখেছিস হাতে কতক্ষানি চোট লেগেছে।আবার বলে ঠিক আছি।আমি বুঝত পারছিনা কেন ঐ লোকগুলো এমন করলো।তুই কি ক্ষতি করেছিলি তাদেও।
সাইফ পকেট থেকে কাগজটা বের করে বলল….
—তা তো এটা পড়লেই জানা যাবে।
নীল অবাক হয়ে বলল….
—মানে!
সাইফঃঐ লোকগুলো পিচ্ছিকে আঘাত করার পর এই কাগজটা ওর দিকে ছুড়ে মেরেছিল।তা আসার সময় আমি নিয়ে এসেছিলাম।
নুহা কাপা কাপা গলায় বলল….
—ক-কি লিখা আছে কাগজে?
নীল সাইফ এর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে পড়তে শুরু করল।
কাগজটাটে লাল কালি দিয়ে লিখা….
“ভালোই তো আছিস আমাকে কস্টে রেখে।তুই কি ভেবেছিস,আমার ভাইকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিজে স্বামী,সংসার নিয়ে সুখে থাকবি।তা তো আমি হতে দিব না।তুই আমার ভাইকে সরিয়েছিস আমি না হয় তোর বোনকে সরালাম।ভাববি না নিশানা মিস হয়েছে।আজ এইটুকু ট্রেলার ছিল।পুরো শো না হয় পরেই দেখিস।আমাকে চিনতে পেরেছিস তো?”
কাগজের লেখাটুকু পরে নীল হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইল।সবাই চুপ করে আছে কারো মুখে কোন কথা নেই।কাজটা যে কার হতে পারে কারো আর বুঝতে বাকি নেই।নুহার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।আশু কিছুক্ষন থ’মেরে বসে থেকে ডুকরে কান্না করতে লাগল।সাইফ আশুর মাথায় হাত রেখে আশুকে সান্তনা দিয়ে বলল….
—পিচ্ছি!এভাবে কান্না করছিস কেন?আমি আছি তো।আমি থাকতে কারো সাধ্য নেই আমার পিচ্ছি বোনটাকে কেউ কিছু করবে।আজকের জন্য সরি।সামনে থেকেও কিছু করতে পারলাম না।পারলে এই আপরাধী ভাইটাকে ক্ষমা করে দিস।
নুহা কাপা কাপা গলায় বলল….
—মা-মামাকে ছে-ছেড়ে দি-দিন।
নুহার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে নুহার দিকে তাকালো।
আশুঃআপি তুমি এগুলো কি বলছো?মাথা ঠিক আছে তোমার?
নীলঃবউমনি তুমি কি বলছো একবার ভেবে দেখেছো?
সাইফঃসব ঠিক হয়ে যাবে। আমি থাকতে আর কোন সমস্যা হবে না।
নুহা চেচিয়ে বলল….
—আপনিই তো পুরো সমস্যা।নতুন করে আর কোন সমস্যা কি হবে।কে বলেছিল আমাদের জীবনে আসতে।মামা আমাকে পাচার করে দিতে চেয়েছিল দিত।কে বলছিল আপনাকে তখন মহান হয়ে আমাকে বাচাতে।আমার জন্য দয়া দেখাতে।আমার জন্য আজ আশুর এই অবস্থা।দুদিন পরে আপনাদেরও ক্ষতি হবে।তাও আমার জন্য।সেদিন যদি আপনারা আমাদেকে ঐ ভাবে বিয়ে না করতেন তাহলে এই দিন আসতো না।আমি ভালো না থাকলেও আমার বোনটাতো ভালো থাকতো।আর আপনারাও ভালো থাকতেন।আপনি প্লিজ মামাকে ছেড়ে দিন।আমি চাইনা কোন ঝামেলা।প্লিজ….
কথাগুলো বলে নুহা আবার কান্না করতে লাগলো।নুহা উল্টা-পাল্টা কি বলছে তা নুহাও জানে না।তার মাথায় যা আসছে তাই বলে যাচ্ছে।
(আশুঃতোমারা অনেকেই কালকে আমাকে দোষ দিয়েছো,বকেছো।আমি না হয় একটু তিড়িং বিড়িং বেশিই করি।কিন্তু এখানে আমার দোষ কোথায়??)
সাইফ এর পুরো চেহারা লাল হয়ে রয়েছে।সাইফ কিছুক্ষন থ’মেরে দাড়িয়ে থেকে কোন কথা না বলেই কেবিনের বাহিরে চলে গেলো।আশু আর নীল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নুহার দিকে।কারো মুখেই কোন কথা নেই।নুহা কান্না করতে করতে সেন্সলেস হয়ে গেলো।
বাড়িতে এসে নুহা কারো সাথে কোন কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।জ্ঞান ফেরার পরে সাইফ কে দেখেনি নুহা।এমন কি তাদের সাথে বাড়িতেও আসে নি সাইফ।তখন নুহা ভয়,রাগের মাথায় সইফকে ঐ সব কথা বললেও এখন নিজের কাছেই খারাপ লাগছে।মনের মাঝে অপরাধ বোধ কাজ করছে।নুহার চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। নিজের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখতে না পেরে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো।
(অনেক সময় আমরা রাগের মাথায় উল্টাপাল্টা অনেক কিছুই বলে থাকি।তখন আমরা কি বলছি বুঝতে না পারলেও পরে ঠিকই বুঝতে পারি আসলে আমাদের এই কথাগুলো বলা ঠিক হয়নি।আর আমাদের ঐ কথার আঘাতে যে কারো হৃদয় রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে তা তখন না বুঝলেও পরে বুঝতে পারি।তখন যতই সরি বলি না কেন তাদের মনে যে দাগ লেগেছে তা কি সহজেই মোছা যাবে?)
বর্তমানঃ
ড্রিইংরুমের সোফায় বসে একের পর এক মদের গ্লাস খালি করছে একজন।নাহিদ ভয়ে ভয়ে বলল….
—স্যার!অনেক তো ড্রিঙ্কস করলের।আর করলে তো নিজেকে আপনি আর কন্ট্রোল করতে পারবেন না।এবার তো রাখুন।
লোকটি মাতাল গলায় বলল….
—আজ তো আমি নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে চাচ্ছি না নাহিদ।আজ আমি খুশি ভীষন খুশি।আচ্ছা নাহিদ একটা কথা বলো তো,আমার সবাইকে কষ্ট পেতে দেখলে এতো খুশি কেনো লাগে?তোমারও কি আমার মত অন্যের কষ্ট দেখলে খুশি লাগে?
নাহিদ বিরবির করে বলল….
—আমি কি তোর মত আধ পাগল,সাইকো নাকি।যে অন্যের কষ্ট দেখলে খুশি লাগবে।
লোকটা নিভুনিভু চোখে নাহিদ এর দিকে তাকিয়ে বলল….
—তুমি আমার মত অন্যের কষ্ট দেখল সান্তি পাও।তাই না?
নাহিদ মদের বোতল গুলো অন্য জায়গায় সরিয়ে বলল….
—স্যার।আপনার নেশা ধরে গেছে।আর খেতে হবে না এবার রেখে দিন।
—হোক নেশা।আমিও তো চাই তার নেশায় ডুব দিতে।কিন্তু পারি না,পারি না।আমি চাই…..
আর কিছু বলার আগেই লোকটা চোখ বুজে নিল।ভাড়ি নিশ্বাসের আওয়াজ শুনতেই নাহিদ বলল…..
—মর তুই।এই নেশাই ডুইবা মর।কোন সাধে যে তোর চাকরি আমি নিছিলাম।দাড়া তুই খালি বিয়াডা কইরা লই।তারপরে তোর এই চাকরিরে আমি লাথি মাইরা চইলা যামু।বড়লোক হওয়নের শখ আমার মিট্টা গেছে।আগেই ভালো ছিলাম সারাদিন কাজ কইরা চাইড্ডা ডাল ভাত খাইয়া তো নিস্চিন্তে ঘুমাইতে পারতাম।তার পরেও তো তোর এই গোলামি করতে হইতো না।আল্লাহ্ আমারে আমার লোভের ফল হাড়ে হাড়ে পাওয়াইয়া দিতাছে।তওবা করলাম মনের মত কাউরে পাইলেই আমি ফুরুৎ হমু।তখন তোর এই চাকরিরে সালাম।
নাহিদ এতিম একজন ছেলে।ছোটবেলায় বাবা মা মারা যাবার পর চাচার কাছেই বড় হয়েছে।পড়ালেখা কোন রকম একটু করেছে।সারাদিন কাজ করে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে তার দিন ভালই চলতো।আস্তে আস্তে খারাপ লোকদের চক্করে পরে তার মনে লোভ চলে আসে।লোভে পরেই সে তাদের কাছ থেকে খবর নিয়ে বহুত কষ্ট করে এই চাকরিটা পায়।পড়াশুনা না জানা নিয়ে তেমন কোন সমস্যা হয় না।কেননা তাদের কাজে পড়াশুনা না হিসাবটা ঠিক করে করতে পারলেই চলে।আর নাহিদের কাজ হলো সারাদিন ওর স্যারের পিছনে ঘুরে বেড়ানো।প্রথম প্রথম এই কাজ ভালো লাগলেও এখন সে নিজের উপর প্রচন্ড বিরক্ত।সব সমই নিজেকে গালাগাল করে।সব সময়ই চায় এখান থেকে পালিয়ে যেতে।কিন্তু খারাপ পথে একবার ঢুকলেই কি সহছে বের হওয়া যায়?
(লোভ মানুষকে কি না করাতে পারে।লোভে পরে মানুষ ছিনতাই,চুরি,ডাকাতি,দু নম্বরি ব্যবস্যা কত কিছুই না করে।এমনি লোভে পরে মানুষ খুন করতেও তাদের হাত কাপে না। “লোভে পাপ পাপে মৃত্যু” এক কথাটা সব সময় আমাদের মনে রাখতে হবে।যদিও কখন শয়তানের ধোকায় পরে আমাদের মনের মাঝে বিন্দু মাএ লোভ চলে আসে।তাহলে যেন আমরা সাথে সাথেই আল্লাহ্ এর কাছে তওবা করে তার থেকে বাচার পানাহার চাই।)
চলবে