ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_06

0
2281

ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_06
Ariyana Nur

রাত ১২বেজে ১৭মিনিট। নুহা রুমের মধ‍্যে পায়চারী করছে।তার মাথায় নানার দুশ্চিন্তা ভর করেছে।তার দুশ্চিন্তার কারন হল সাইফ।সে এখনও বাড়িতে ফিরে নি।এই দুই মাসে কখনও সাইফকে এতো রাত অব্দি নুহা বাড়ির বাহিরে থাকতে দেখে নি।খাবার টেবিলে মিসেস চৌধুরী সাইফ এর কথা জিগ্যেস করলে নীল বলে,ও নাকি ওর কোন বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছে।সেখান থেকেই ডিনার সেরে বাসায় আসবে।নীল এর কথার উপরে মিসেস চৌধুরী কিছু না বললেও নুহার বুঝতে বাকি নেই সাইফ কেনো বাড়িতে ফিরে নি।

নীল ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে আছে। আশুর ঐ রক্তাত্ব হাত বার বার চোখে ভাসছে।চোখের সামনে আশুর এই অবস্থা হলো অথচ নিজে কিছুই করতে পারলো না তার জন‍্য নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে।আশুকে এক পলক দেখার জন‍্য অস্থির হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কোন ভাবেই তা সম্ভব না।কেননা মিসেস চৌধুরী আশু অসুস্থ দেখে আজ আশুর কাছে ঘুমিয়েছে।

দরজা খোলার শব্দে নুহার ধ‍্যান ভাঙে।সামনে দিকে তাকাতেই দেখে সাইফ রুমে ঢুকেছে।নুহা সাইফকে দেখে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।সাইফ এর অগোছালো চুল,শার্টের এক হাতা কনুই পযর্ন্ত ফোল্ড করা,আরেক হাতা কিছুটা উপরে উঠানো।চোখ, মুখ প্রচন্ড লাল হয়ে রয়েছে।চোখ গুলোও ফোলা ফোলা।সাইফ এর এই রুপে নুহা বড় সড় একটা ক্রাশ খেলো সাইফ এর উপর।সাইফ কোন কথা না বলে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো।ওয়াসরুমের দরজা লাগানোর শব্দে নুহার হুস এলো।নুহা নিজেকে গালাগাল করতে করতে বলল…

—ছিহ্…নুহু।তোর এতো অধোপতন হয়েছে।নিজের বরের দিকেই লুচু মেয়েদের মত তাকিয়ে ছিলি।আবার বড়সড় একটা ক্রাশও খালি।তাও আবার এই রাগি লুক দেখে।ছিহ্.. তোর উপরে।তোকে টিনের চশমা পরাতে হবে।নুহা কতক্ষন নিজেকে গালাগাল করে আবার নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো….

—দেখেছি বেশ করেছি।আমার বর আমি দেখবো কার কি হুহ।তার উপর শুধু আমার অধিকার।যেই লুকেই ক্রাশ খাই না কেনো তাতে কার বউ এর কি হুহ।

নুহা কিছুক্ষন একা একাই বকর বকর করে নিজের মাথায় গাট্টা মেরে বলল….

—আজ হয়েছে কি আমার।কিছুক্ষন আগেও মাথায় কত শত চিন্তা ঘুরপাক করছিলো।সাহেব যে আমার উপর রেগে আছে সে খবর আছে আমার।তাকে কি ভাবে মানাবো তা না ভেবে আজাইরা চিন্তা ভাবনা শুরু করছি।আল্লাহ রহম করো।আর তার মান একটু তাড়াতাড়ি ভেঙে দিও।আমিন,ছুম্মা আমিন।

সাইফ ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে কোন কথা না বলে চুপচাপ বাম হাত কপালে দিয়ে শুয়ে রইল।নুহা কাচুমাচু করে সাইফ এর সামনে এসে আমতা আমতা করে বলল….

—আ-আপনার কি ম-মাথা ব‍্যথা করছে মলম লাগিয়ে দিব?

সাইফ কোন কথা না বলে চুপ করে শুয়ে রইল।নুহা অনেকটা সাহস সন্চয় করে আবার কিছু বলবে তার আগেই সাইফ এর ডান হাতের দিকে চোখ পরতেই তার আত্মা কেপে উঠল।সাইফ এর ডান হাত কেমন থেতলিয়ে গেছে।অনেক জায়গায় রক্ত জমাট বেধে আছে।মনে হচ্ছে কোন শক্ত কিছুতে অনবরত ঘুষি দেবার ফলে এমনটা হয়েছে।এটা দেখার সাথে সাথে নুহার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগলো।নুহা কাপা কাপা হাতে সাইফ এর হাতের উপর হাত রাখতেই সাইফ ঝাড়া দিয়ে নুহার হাত সরিয়ে ফেলল।নুহা অস্রু ভেজা চোখে সাইফ এর দিকে তাকিয়ে বলল….

—আ-আপনার হ-হাত এ-এমন হয়েছে কিভাবে?ঔষধ লাগাননি কেন?

সাইফ গম্ভীর গলায় বলল…

—ঔষধ লাগালেই যদি সব ক্ষত ভালো হয়ে যেত তাহলে তো ভালোই হত।

সাইফ এর কথার মানে বুঝতে নুহার ভুল হলো না।নুহা কথা না বাড়িয়ে মলম এনে সাইফ এর হাতে লাগাতে নিলেই সাইফ পুনরায় নুহার হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিয় রাগি গলায় বলল….

—কে বলেছে তোমাকে মলম লাগাতে?আমি বলেছি?আমার জন‍্য করুনা করতে হবে না।কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে না দিলেও চলবে।

শেষের কথাটা তাচ্ছিল্যের শুরে বলল সাইফ।

নুহা সাইফ এর কথা শুনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে বলল….

—স-সরি…
আসলে তখন আমি কথাগুলো আপনাকে ঐ ভাবে বলতে চাইনি।রাগের মাথায় বলে ফেলেছি।পারলে ক্ষমা করে দিবেন।

কথাগুলো বলে নুহা চুপচাপ লাইট অফ করে শুয়ে কান্না করতে লাগলো।

সাইফ কোন কথা না বলে চুপ করে শুয়ে রইল।নুহার এই কান্না সাইফকে আরো বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে।তারপরেও মুখ ফুটে কিছু বলছে না।

______________________

আজ ছুটির দিন।সবাই বাড়িতে।কিন্তু সাইফ সকাল বেলা কাজ আছে বলে বেড়িয়েছে।এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো তার পরেও আসার খবর নেই।

নীল আশুর হাতের ব‍্যন্ডেজ চেন্জ করে দিচ্ছে।আশু চোখমুখ খিচে চুপচাপ বসে বসে চোখের জল ফেলছে। আশুর এই অবস্থা দেখে নীলের কষ্ট হতে লাগলো।নীল আশুকে স্বাভাবিক করার জন‍্য বলল….

—তুমি যে এতো ডরপোক তা আগে জানতাম না তো।

আশু এক চোখ খুলে নীলের দিকে তাকিয়ে বলল….
—আপনি ডরপোকের কি দেখলেন?

—এই যে এতোটুকু একটু ব‍্যন্ডেজ করাতে গিয়ে কান্না কাটি করে অস্থির হয়ে যাচ্ছো।আসলে পিচ্ছি হলে যা হয় আর কি।(শুর টেনে)

আশু কপট রাগ দেখিয়ে বলল….

—এই খবরদার আমাকে পিচ্ছি বলবেন না।আমি অনেক বড় হয়ে গেছি।এবার টেনে উঠবো।সামনে এস এস সি দিব।এর পর কলেজে যাব।হুহ আসছে আমাকে পিচ্ছি বলতে।

নীল অবাক হওয়ার ভ‍ান করে বলল….
—ও এম জি!তুমি তো দেখছি অনেক বড় হয়ে গেছো পিচ্ছি।

—আপনি আবার আমাকে পিচ্ছি বলছেন?আমার এই পিচ্ছি পিচ্ছি শুনতে ভালো লাগে না।আমাকে শুধু পিচ্ছি ভাইয়া বলবে তার মুখেই ভালো লাগে বুঝেছেন।

নীল ব‍্যন্ডেজ করা শেষ করে ব‍্যন্ডেজের উপর আদর দিয়ে বলল….

—ওকে শুধু পিচ্ছি বলবো না।আমি তোমাকে পিচ্ছি বউ বলে ডাকবো।হ‍্যপি….

নীলের কথা আশুর মাথায় কিছুই ঢুকলো না।বেচারী শক্ড হয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।

—বেন্ডেজ চেন্জ করে দিয়েছো ভাইয়া?
নুহা ওদের সামনে এসে কথাটা বলল।

নুহার কথায় আশুর হুস এলো।আশু নীলের দিকে একবার তাকিয়ে নড়েচড়ে চুপ করে বসে রইল।নীল সব গুছিয়ে রাখতে রাখতে নিচু গলায় বলল….

—জ্বী বউমনি।

ওদের এমন ব‍্যবহারে নুহার মন খারাপ হয়ে গেলো।আসলে কালকের ঐ ঘটনার পর থেকে আশু নুহার সাথে কথা বলছে না।নীল টুকটাক কিছু বললেও গম্ভীর মুখে বলছে।নুহা মাথা নিচু করে বলল….

—সরি…..
তোমাদের ভাইয়াকে কষ্ট দেবার জন‍্য।তখন আমার মাথা ঠিক ছিলো না।তাই না হয় তখন উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছি।তাই বলে সবাই আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।তোমাদের ভাইয়াকেও অনেক বার সরি বলেছি।তার পরেও সে রাগ করে আছে।আমি না হয় একটা ভুল করেই ফেলেছি তার জন‍্য তো ক্ষমাও চাচ্ছি।তার পরেও তোমরা……
থাক আর তোমাদের কে ডিস্টাব করবো না।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।

কথাগুলো বলে নুহা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আশু আর নীল কিছু না বলে নুহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

______________________

সন্ধ্যার পর থেকে আশুর রুমে বসে আশু,নীল,নুহা গভীর চিন্তায় মগ্ন আছে।তাদের চিন্তার মূল কারন হলো কিভাবে সাইফ এর মান ভাঙাবে।

ও আপনাদেরকে তো বলাই হয়নি আশু আর নীল দুজন নুহার সাথে মান অভিমান সব শেষ করে এখন নুহাকে টিপর্স দিতে বসেছে সাইফ এর রাগ ভাঙানোর জন‍্য।

নীলঃবউমনি তুমি এক কাজ করো।একগুচ্ছো লাল গোলাপ নিয়ে ভাইয়ার সামনে হাটু গেড়ে বসে লাভ ইউ বলে দাও।তাহলেই দেখবে ভাইয়ার রাগ পানি হয়ে গেছে।গোলাপ নিয়ে চিন্তা করো না।আমি মেনেজ করবো।(ভাব দেখিয়ে)

আশুঃবুদ্ধি সুদ্ধি সব কি বিক্রি করে দিয়েছেন?আরে আমিও কি বলছি আপনি তো এমনেই মাথা মোটা।আপনার থেকে ভালো কিই বা আর আশা করা যায়।(রাগ দেখিয়ে)

নীলঃকেনো?এখানে খারাপ কোথায়?বউমনি তুমি এমনটা করেই দেখ একশতে একশ র্পাসেন্ট কাজে দিবে।

আশুঃঘোড়ার ডিম কাজে দিবে।আপি তুমি ভুলেও এমন করো না।

নীলঃএখানে খারাপ কোথায় তাই তো বুঝছিনা।

—জীবনে শুনেছেন মেয়েরা আগে প্রপোজ করে।আগে ভাইয়া প্রপোজ করবে তার পরে না হয় আপি করবে।

—কেন,কেন?তোমরা মেয়েরা সব সময় এটা কেন আশা করো ছেলেদেরকেই আগে প্রপোজ করতে হবে।মেয়েরা আগে করলে দোষের কি?

—নিয়ম বলে একটা কথা আছে।কিন্তু আপনার মত মাথামোটার মাথায় এসব ঢুকবে না।হুহ….

—তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।

—আপনার মান আছে যে আপমান করবো।মাথামোটা একটা।

ব‍্যস শুরু হয়ে গেলো তাদের যুদ্ধ।নুহা একবার নীলের দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার আশুর দিকে।নুহা মাথায় হাত দিয়ে ভাবছে এদের নিয়ে কি আমি আমার প্রবলেম স্লভ করার জন‍্য বসেছি নাকি তাদের ঝগড়া দেখার জন‍্য।

নুহা কিছুক্ষন মাথায় হাত দিয়ে বসে থেকে দাড়িয়ে জোরে ধমক দিয়ে বলল…..

—চুপ…..আর একটাও কথা না।

(আপনাদের কি মনে হয় আশু আর নীলের বুদ্ধি নুহার কাজে দিবে?নাকি নুহাকে আরো ফেসাদে ফেলবে?)

চলবে

(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন‍্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here