ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_07
Ariyana Nur
—চুপ….আর একটাও কথা না।দুটোকে মন চাচ্ছে পচা পানিতে ফেলে হাবুডুবু খাওয়াতে।দিন দিন বড় হচ্ছে না বাচ্চা হচ্ছে।
নুহার ধমক শুনে আশু আর নীল দুজন মুখে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাড়িয়ে রইল।ওদের দেখে মনে হচ্ছে ক্লাসের মধ্যে দুষ্টুমি করার জন্য স্যার বকেছে।নুহা বড় করে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে বলল….
—কি শুরু করেছো তোমরা?তোমরা কি আমার প্রবলেম স্লভ করতে এসেছো নাকি তোমাদের এই টম এন্ড জেরির ঝগড়া দেখাতে?
নীল নিচু শুরে বলল….
—বউ মনি আমি তো তোমাকে আইডিয়া দিচ্ছিলাম।কিন্তু ওই তো….(আশুকে দেখিয়ে)
আশুঃহুহ কি যে আমার আইডিয়া দিচ্ছিলেন তা তো দেখলাম।একেবারে বেকার আইডিয়া।
নুহাঃআচ্ছা ওর আইডিয়া তো বেকার।তাহলে তুই একটা ভালো আইডিয়া দে তো….(রাগি গলায়)
আশু এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলল…..
—ভাইয়াকে দু’বক্স চকলেট কিনে দিয়ে সরি বল।তাহলেই দেখবে ভাইয়ার রাগ পানি হয়ে গেছে।(খুশি হয়ে)
নুহা দাতে দাত চেপে বলল….
—তোর ভাইয়াকে কি তোর মত পিচ্ছি পোলাপান মনে করেছিস।যে চকলেট পেয়ে ধ্যেই ধ্যেই করে আমাকে মাফ করে দিবে।
নুহার কথা শুনে আশু মুখটা একটু খানি করে দাড়িয়ে রইল। লীন কিছুক্ষন আশুর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে হু হা করে হাসতে লাগলো।কোন রকম হাসি থামিয়ে বলল….
—বউ মনি তুমি এই পিচ্ছিদের কাছে কেন আইডিয়া চাচ্ছো।পিচ্ছি মানুষ এর থেকে ভালো কিই বা আইডিয়া দিবে।
নুহা নীল এর দিকে রাগি চোখে তাকাতেই নীল হাসি থামিয়ে আবার গুড বয় এর মত চুপচাপ দাড়িয়ে রইল।
তিন জন আবার সেই গভীর চিন্তায় ডুব দিন।আশু রুম জুরে পায়চারী করছে আর আইডিয়া বের করছে।হঠাৎ আশু উওেজিত হয়ে বলল….
—পেয়ে গেছি হান্ডেটে হান্ডেট র্পাসেন্ট কাজে দেয়ার আইডিয়া।
নীল আর নুহা আশুর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালেই আশু বলল…
—তুমি এক কাজ করো, ভাইয়াকে পিছন থেকে টাইট করে জরিয়ে ধরে সরি বলে দিবে।ব্যস ভাইয়ার রাগ পানি হয়ে যাবে।
নুহা আমতা আমতা করে বলল….
—ত-তোর এই বুদ্ধি তোর কাছে রাখ তা কাজে দিবে না।
আশুঃ কেন কাজে দিবে না।তুমি একবার ট্রাই তো করে দেখ।
নুহা কাচুমাচু করে বলল….
—লাগবে না ট্রাই করা।আমি এমনেই জানি।
আশুঃকেন এতে সমস্যা কোথায়?
নুহা আমতা আমতা করে বলল….
—আ-আমি এ-এটা করতে পারবো না।তাছাড়া এটা কাজেও দিবে না।
আশুঃ কেন পারবে না।আরে ভাই একবার ট্রাই করেই তো দেখো।দেখতে সম্যসা কোথায়।যদি কাজে লেগে যায়।
নীলঃহ্যা বউমনি এটা করে দেখতে পারো।আইডিয়া টা খারাপ না।আমি আবার ভালোকে ভালো বলে উৎসাহ দিতে জানি।কারো মত ভালোকে খারাপ বলে উল্টিয়ে ফেলে দেই না।(ভাব নিয়ে)
আশু কটমট করে নীলের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল….
—আপনাকে আমি পরে দেখে নিব।
নীল বাকা হেসে ফিসফিস করে বলল….
—ওকে নো প্রবলেম বেবি।যখন দেখার ইচ্ছে হবে চলে এসো আমার কাছে।(চোখ মেরে)
আশু নীলের দিকে একবার রাগি চোখে তাকিয়ে বলল….
—তাহলে এটাই ফাইনাল আপি।পরে যদি এই আইডিয়া কাজে না দেয় তখন না হয় অন্য আইডিয়া বের করা যাবে।
নুহা কাচুমাচু করে বলল…
—এটা কাজে দিবে না।অন্য আইডিয়া বের করো।
আশুঃআন্তাজেই কাজে দিবে না।একবার করে তো দেখো।সম্যসা কোথায় তাই তো বুঝছিনা।(বিরক্ত হয়ে)
নুহা মনে মনে বলল….
—সম্যসা তোর ভাইয়ের মাথায়।আমি তোদের কিভাবে বলি যে,আজ কত কষ্ট করে লজ্জা-শরম সব বিক্রি করে তাকে জরিয়ে ধরে সরি বললাম। ঘাড়ত্যেড়া কিছু না বলেই চলে গেলো।হুহ ভাব বেশি।নেহাত ভুলটা আমার। তা না হলে তার রাগ ভাঙাতে আমার বয়েই গেছে।
রুনা এতোক্ষন বাহিরে দাড়িয়ে সব কথা শুনছিলো।এবার আর চুপ করে থাকতে না পেরে রুমে এসে বলল….
—আরে ছোড বউ মনি বড় বউমনি তো আজ সকালেই বড় দাদারে জরাইয়া ধইরা কাইন্ডা কাইট্টা সেরি কইছে।কিন্তু বড় দাদায় তো কিছু না কইয়াই গেছে গা।
রুনার কথা শুনে আশু আর নীল গোল গোল চোখ করে নুহার দিকে তাকিয়ে রইল।নুহা নিচের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল….
—এরে…এতো এবার আমার হাটে হাড়ি ভেঙে দিল।এখন এ দুটোর থেকে কিভাবে বাজবো।
নুহা কপট রাগ দেখিয়ে রুনাকে বলল….
—তুমি আমাদের রুমে উকি দিতে গিয়েছিলে কেন?জানোনা কারো রুমে উকি দেওয়া ভালো না।
রুনাঃ উকি দিতে যামু ক্যান।দরজা খোলা ছিলো আমি দেখছি।তুমি লজ্জা পাইয়ো না।আমিই তো।আর চিন্তা কইরো না আমি কাউরে কমু না।আমি কিন্তু তোমারে একটা জব্বর বুদ্ধি দিতে পারি।
নুহাঃসবাইকে বলে দিয়ে এখন বলছো বলবে না।ভালো বেশ ভালো।আর তোমার ঐ জব্বর বুদ্ধি না তোমার কাছেই রাখো।লাগবেনা কারো বুদ্ধি আমার।
নুহা রাগ দেখিয়ে হনহন করে সেখান থেকে চলে গেলো।রুনা,আশু,নীল একে অপরের দিকে তাকিয়ে হু-হা হাসতে লাগলো।
নুহা রুমে এসে সোফায় মুখ গোমরা করে বসে সকালের কথা ভাবতে লাগলো।
ফ্লাসব্যাকঃ
আজ সকালে সাইফ যখন বাহিরে যাবার জন্য রেডি হচ্ছিল।তখন নুহা গুটিগুটি পায়ে সাইফ এর পিছনে দাড়িয়ে কাপাকাপা হাতে সাইফকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল…
—সরি….
আমার ভুল হয়ে গেছে।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন।আমি প্রমিস করছি আর কখনো এমন হবে না।আর রাগ করে থাকবেন না প্লিজ।
কথাগুলো বলার সময় নুহার চোখ দিয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরল।
সাইফ শক্ড হয়ে দাড়িয়ে নুহার কথা শুনছিলো।একটু পর সাইফ নুহাকে ছাড়িয়ে নুহার দিকে ঘুড়ে নুহার চোখের জল মুছে দিল।কিছু বলবে তার আগেই পাশের মিররে বাহিরে রুনাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কিছু না বলেই চলে গেলো।নুহা সাইফ এর এমন ব্যবহারে সাইফ এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
_____________________
সাইফ বাহিরের থেকে এসে পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিল।কিন্তু কোথাও নুহাকে দেখতে না পেয়ে মনে মনে বলল….
—নিচেও দেখলাম না।রুমেও নাই।গেলো কোথায়?মনে হয় আশুর রুমে।
বেশি কিছু না ভেবে ওয়াসরুমে দিকে পা বাড়ালো।সাইফ ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসলো।
এদিকে নুহা দোয়া দুরুদ পরে ওদের বুদ্ধি মত রুমে প্রবেশ করলো।আস্তে আস্তে সাইফ এর সামনে গিয়ে কাপা কাপা হাতে সাইফ এর দিকে কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বলল…
—আন্নের কাইল্লা চা।
সাইফ মনে করেছে নুহা রুমে ঢুকেছে।তাই সে এতোক্ষন চোখ বন্ধ করেই ছিলো।কিন্তু এমন একটা কথা শুনে সাইফ ফট করে চোখ খুলে তাকালো।সামনের বাংলা কাপড় পরা,লম্বা করে ঘোমটা দেওয়া একজন মহিলাকে দেখে গম্ভীর গলায় বলল….
—এই কে আপনি?কোন সাহসে আপনি আমার রুমে ঢুকেছেন?
—কথা পরে কইয়েন।আগে আন্নের এই কাইল্লা চা ধরেন।মোর হাত পুইড়া যাইতাছে আন্নের এই চা ধইরা রাখতে রাখতে।আর আন্নে মোর লগে এভা কইরা কতা কইতাছেন ক্যান।(শুর পাল্টিয়ে)
সাইফ রাগি গলায় বলল….
—কফির মগ ধরবো মানে?আপনি ভাবলেন কি করে বলা নেই কওয়া নেই আপনি কফি নিয়ে আসবেন আর আমি সেই কফি খাব।আগে বলুন কে আপনি?
নুহা কফির মগটা টেবিলের উপর রেখে নেকা কান্না করে বলল….
—এ-হা মোর আল্লাহ্ মুই কই যামু গো….মোরে উঠাইয়া নাও গো..মোর শোয়ামী মোরে চিনে না গো…
প্রথম বার নুহার কন্ঠ সাইফ চিনতে না পারলেও এবার ঠিকি চিনতে পেরেছে।সাইফ কিছুক্ষন নুহার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে নুহাকে পর্যবেক্ষণ করে মিটমিট করে হাসতে লাগলো।নুহার এই সব কান্ড দেখে মনের মধ্যে ইচ্ছে জাগলো নুহা তার মান ভাঙানোর জন্য আর কি কি করতে পারে তা দেখার।
সাইফ গম্ভীর গলায় বলল….
—আশ্চর্য তো।ভদ্রতা জানেন না।এখানে এভাবে কান্না করছেন কেন?
—না কাইন্দা কই যামু।মোর শোয়ামী মোরে চিনে না।এই দুক্কু আমি কারে দেখামু গো….এহন আমার কি হবে।আল্লাহ্ গো….মোরে পথ দেহাও গো…..
নুহা ন্যেকা কান্না করছে আর মনে মনে বলছে….
—নুহুরে তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না।শিখলি এক অন্চলের ভাষা।আর এখানে এসে সব গুলিয়ে ফেলেছিস।দুই তিন অন্চলের ভাষা এক সাথে মিশিয়ে জগা খিচুড়ি পাকাচ্ছিস।
রুমের বাহিরে আড়াল থেকে রুনা,আশু,নীল তিন জন নুহার এই কাহিনী দেখে মিটমিট করে হাসছে।আর এদিকে সাইফ বহুত কষ্টে হাসি লুকিয়ে মুখে গম্ভীর্য বজায় রেখেছে।
চলবে,
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)