ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_08
Ariyana Nur
সাইফ ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকাতেই তার চোখ কপালে।ঘড়িতে ৮:১৫বাজে।এতোক্ষন পযর্ন্ত ও পরে পরে ঘুমালো অথচ নুহা তাকে একবারও ডেকে দিলো না তার জন্য মনে মনে একটু রাগ করল।পুনরায় ঘড়ির দিকে চোখ পরতেই ফ্রেস হতে ওয়াসরুমের দিকে চলে গেল।
ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে সাইফ এর রাগ আরো দ্বিগুন হয়ে গেলো।কেননা প্রতিদিন নুহা সাইফ অফিসে যাওয়ার আগে সাইফ এর কাপড় কাবাড থেকে বের করে রাখে।আর দরকারি সব কিছু গুছিয়ে বেডের এক কোনে রেখে দেয়।আজ কোন কিছুই রাখা নেই।সাইফ কাবাড থেকে কাপড় বের করতে গিয়ে কাবাডের অর্ধেক কাপড় এলোমেলো করে ফেলল।নুহাকে ডাক দিতে গিয়েও থেমে গেল।সাইফ নিজের উপর বিরক্ত হয়ে বলল….
—আগেতো নিজের সব কিছু নিজের হাতেই গুছিয়ে রাখতাম।এই দুই মাসে এমন আগোছালো কি করে হলাম?
সাইফ ছোট খাটো একটা যুদ্ধ করে রেডি হয়ে নিচে গেলো।নিচে এসে নুহাকে না দেখে তার মেজাজ আরো চওড়া হয়ে গেলো।কোন রকম নাস্তা করে আফিসের জন্য বের হয়ে গেলো।
এতোক্ষন আড়াল থেকে নুহা সাইফকে পর্যবেক্ষণ করছিল।সাইফ চলে যেতেই নুহার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল।কালকের ঐ অদ্ভুত কান্ড কারখানা করেও নুহা সাইফ এর মান ভাঙাতে পারেনি।তাই আজ ও ইচ্ছে করেই সাইফকে ডেকে উঠায়নি।আর কাবাডে সাইফ এর কাপড় এলোমেলো করে রেখেছে।যাতে কাপড় না পেয়ে সাইফ নিজের থেকে নুহাকে ডাকে।কিন্তু না….সাইফ নুহার আসায় এক বালতি পানি ফেলে চলে গেলো।
__________________________
আশুর স্কুলের সামনে নীলাভ গাড়ি পার্ক করে আশু দিকে তাকায়ি দেখে আশু গাল ফুলিয়ে বসে আছে।আশু আজ স্কুলের জন্য বাড়ি থেকে নীল এর সাথে বের হওয়ার পর স্কুলে না এসে অন্য এক জায়গায় যাওয়ার কথা বলেছিলো নীলকে।কিন্তু নীল আশুকে সরাসরি না বলে দিয়ে আশুকে নিয়ে স্কুলে চলে আসে।তাতেই বেচারী রাগ করে গাল ফুলিয়ে বসে রয়েছে। নীলাভ আশুর গাল টেনে দিয়ে বলল….
—এভাবে গাল ফুলিয়ে রেখেছো কেন?ক্লাস করার কি ইচ্ছে নেই নাকি এখানে এভাবেই বসে থাকবে?
আশু গালে হাত বুলিয়ে কটমট করে নীলাভের দিকে তাকিয়ে বলল….
—আপনি খুব খারাপ,ভীষন পচা।কথা বলবো না আমি আপনার সাথে।
কথাটা বলে আবার গাল ফুলিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে রইল।
নীলাভ মুচকি হেসে বলল….
—বুঝেছি আমার পিচ্ছি বউটা আমার উপর রাগ করেছে।তা আমি কি জানতে পারি তার এই রাগের কারন কি?
আশু কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে চুপচাপ বসে রইল।
—কথা বলবে না আমার সাথে?
আশু মাথা নাড়িয়ে না বলল।
—তুমি যেখানে যেতে চাও সেখানে নিয়ে গেলোও না?
আশু ফট করে ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলল….
—সত্যি আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন?
নীল আশুর নাক টেনে দিয়ে বলল….
—হুম নিয়ে যাব।
আশু খুশি হয়ে বলল….
—তাহলে চলুন।দেরি করছেন কেন?
—জ্বি-না ম্যাম।এখন না।আপনার ছুটির পরে আপনি যেখানে যেতে চাইবেন আমি আপনাকে সেখানেই নিয়ে যাব।
আশু ঠোট ফুলিয়ে বলল….
—একদিন ক্লাস বন্ধ দিলে কিছু হবে না।
—একদিন!কদিন ধরে ক্লাস বন্ধ করছো সেই খবর আছে তোমার?তাছাড়া আমার একটা জরুরী কাজ আছে।তোমার ছুটি হতে হতে আমি আমার কাজ শেষ করে চলে আসতে পারবো।
আশু মন খারাপ করে বলল….
—ঠিক আছে।আসি…..
আশু গাড়ির ডোর খুলতে নিলে নীল আশুর হাত ধরে বলল….
—মন খারাপ?
আশু মাথা নিচু করে গম্ভীর গলায় বলল….
—না…
—সাবধানে থাকবে।কারো সাথে কোন ঝামেলায় জড়াবে না।আর হ্যা পড়াশুনায় ফাকিবাজি দিয়ো না।আর বাদরের মত বেশি নাচানাচি করবে না।(নীল আশুকে রাগানোর জন্য শেষের কথাটা বলল)
আশু নীলের হাত থেকে নিজের হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বলল….
—বাদরের মত নাচানাচি আপনি করেন আমি না।ঠিক টাইমে চলে আসবেন।আর এসে গাড়ি থেকে নামবেন না। মনে থাকে যেন।যদি ঊনিশ বিশ হয় তাহলে আপনার একদিন আমার যেই কয়দিন লাগে।
আশু রাগি গলায় কথাগুলো বলে গাড়ি থেকে নেমে গটগট করে গেডের ভিতরে চলে গেলো।আশুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নীল মিটমিট করে হাসতে লাগলো।
_______________________________
সাইফ অফিসে আসার পর থেকেই সবার সাথে রাগ দেখাচ্ছে।কেন এমন করছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না।সব কিছুতেই তার বিরক্ত লাগছে।ফোন হাতে নিয়ে বাড়ির নাম্বারে ডায়েল করল।কিন্তু কয়েকবার ফোন দেবার পর ফোন না ধরায় বিরক্ত হয়ে শব্দ করে ফোনটা রেখে দিল।সাইফ দুহাত দিয়ে চুলগুলো টেনে চোখ বন্ধ করে সামনে ফাইলগুলো উপর মাথা রাখলো।
কিছুক্ষন পর মাথায় কারো কোমল হাতের ছোয়া পেতেই সাইফ ঝটপট মাথা উঠিয়ে সামনে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।কেননা সামনে নুহা দাড়িয়ে আছে।নুহা সাইফ এর চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে বলল….
—এতো কাজের পেশার নিজের উপর কেনো নাও। যদি নিজে ঠিক না থাকো তাহলে কিভাবে সবাইকে হিটলার গিড়ি রুপ দেখাবে। অসুস্থ হলে তো এতোগুলো কর্মচারীর সবাই ফাকিবাজি শুরু করবে।বলবে আমাদেরর হিটলার বস অসুস্থ এখন আমরা ইচ্ছে মত ফাকিবাজি দিতে পারবো।কেউ আমাদের উপর কাজের জন্য আর হিটলার গিড়ি করতে পারবে না।বুঝেছো….
চুলগুলো আবার কিছুটা এলোমেলো করে দিয়ে।
সাইফ অবাক হয়ে বলল….
—তুমি এখানে??
নুহা মুচকি হেসে সাইফ এর সামনের টেবিলের উপর বসে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল…..
—বাহ্ অফিস তো ভালোই পরিপাটি করে রেখেছেন।তা সাহেব আমার রুমটাকে এমন গরুঘড় বানিয়ে এসেছেন কেন?
সাইফ গম্ভীর গলায় বলল….
—রুমটাকি তোমার একার নাকি?
নুহা এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল…..
—হুম।রুমটাও আমার রুমের মানুষটাও।
—এখানে কিভাবে এলে।তোমাকে আমার কেবিনে কে ঢুকতে দিয়েছে?
—দরজার বাহিরের একজন লোক তো আমাকে ঢুকতেই দিতে চাচ্ছিল না।বলে কি স্যার এখন ভীষন রেগে আছে।আগে স্যার এর পারমিশন নিয়ে আসি তারপরে না হয় স্যার এর সাথে দেখা করবেন।বিনা পারমিশনে স্যার এর কেবিনে ঢুকরে স্যার রাগ করবে।আমিও বলে এসেছি আপনার স্যার এর বস আমি।আমি তার কেবিনে গেলে তিনি রাগ করবেন না।উল্টো তার সব রাগ হাওয়া হয়ে যাবে।
সাইফ নুহার কথাশুনে ভ্রু কুচকে নুহার দিকে তাকিয়ে বলল….
—জ্বর টর বাধিয়েছো নাকি উল্টাপাল্টা কিছু খেয়েছো?
নুহা গাল ফুলিয়ে বলল….
—সরাদিনে তো কিছুই খাইনি উল্টাপাল্টা আবার কি খাব।
সাইফ রেগে বলল…..
—কটা বাজে দেখেছো?সারাদিনে কিছু খাওনি কেন?নিজের একটু কেয়ার করলে কি এমন ক্ষতি হয় তোমার?এতো কেয়ারলেস কেন তুমি?
নুহা ছলছল চোখে সাইফ এর দিকে তাকিয়ে বলল….
—তুমি আছো তো…..
সাইফ নুহাকে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো।উল্টো দিকে ঘুরে বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে লাগল।
নুহা গুটিগুটি পায়ে সাইফ এর সামনে এসে সাইফকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল….
—আর কত অভিমান করে থাকবে?সরি তো….
ভুল না হয় করেই ফেলেছি তাই বলে কি একটুও ক্ষমা করা যায় না।সাস্তি দিলে তো আর কত দিবে?প্লিজ আর রাগ করে থেকো না।তোমার মায়াবী পরিকে ক্ষমা করে দাও।
কথাগুলো বলে নুহা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।
সাইফ কিছু না বলে নুহাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নুহার চোখের জল মুছে দিয়ে নুহাকে জরিয়ে ধরল।
(আল্লাহ্ গো মান-আভিমান শেষ হইছে)
________________________
পাশাপাশি সোফায় বসে আছে মিঃখান,নীল আর আশু।মিঃখান আর নীল কথা বলছে।আশু চুপ করে বসে আছে।তাদের কথার মাঝেই আশু বলল….
—বাবা…..
মিঃখান কথা থামিয়ে বলল….
—হ্যা মা বল,কিছু বলবি?
আশু নিজেকে শক্ত করে বলল…..
—আমি আমাদের অতীত জানতে চাই।কেনো আর পাচটা পরিবারের মত আমাদের পরিবারটা না।কেনো তোমরা এক সাথে থাকো না।আর কেনই বা মা আপির সাথে এমন ব্যবহার করে।আমি সব জানতে চাই বাবা।
চলবে,
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আগামী পর্বে অতীত ক্লিয়ার করার চেষ্টা করবো।ধন্যবাদ)