ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_10

0
2300

ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_10
Ariyana Nur

সূয‍‍্যী মামা তার রক্তিম আভা চারোপাশে ছড়িয়ে দিয়ে ডুবু ডুবু করছে।পাখিরা দল বেধে বেধে তাদের নীড়ে চলে যাচ্ছে।পার্কের মানুষজনের সোড়গোড় আস্তে আস্তে কমতে লাগছে।সবাই হয়তো পাখিদের মত সন্ধ্যায় আগেই তাদের নীড়ে ফিরতে ব‍্যস্ত।

আশু মিঃখান এর মুখে সব শোনার পর থেকে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে।মিঃখান এর বাসা থেকে আশু কিছু না বলেই বেড়িয়ে যায়।গাড়িতে উঠেও আশু নীলের সাথে কোন কথা না বলে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে।নীল আশুর অবস্থা বুঝতে পেরে আশুকে সাভাবিক করার জন‍্য একটা পার্কে নিয়ে আসে।পার্কের সামনে গাড়ি থামার পরেও আশুর মধ‍্যে কোন কৌতূহল দেখা দিল না।সে একবার চোখ খুলে চারোপাশ দেখে আবার চোখ বন্ধ করে বসে রইল।নীল গাড়ি থেকে নেমে আশুকেও গাড়ি থেকে নামিয়ে ওর হাত ধরে হাটা ধরল।একটু নিড়িবিলি জায়গা দেখে সেখানে গিয়ে একটা টুলে বসল।

কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর নীল বলল….

—দেখো আমরা কিন্তু আমাদের অতীতকে পরিবর্তন করতে পারবো না। সবার অতীত তো আর সুন্দর হয় না।অতীতের ঐ তিক্ততা মনে করে নিজের সুন্দর বর্তমান আর ভবিষ্যত নষ্ট করার কোন মানে হয় না।আমাদের উচিত আমাদের পিছনের অতীতকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া।

কথাগুলো বলে নীল কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আশুর মাথাটা নিজের কাধে রেখে বলল….

—নিজের কষ্ট গুলোকে নিজের মধ‍্যে ধরে না রেখে তাদেরকে অস্রু হয়ে বের হয়ে যেতে দাও।জানি তোমার কষ্টের ভাগ নিতে পারবো না।কিন্তু বন্ধু হয়ে তোমার কষ্টের কথা শুনতে তো পারবো।তোমাকে যদি বউমনি এভাবে দেখে তাহলে সে ভীষন কষ্ট পাবে।

কথাগুলো বলে নীল চুপ করে বসে রইল।কিছুক্ষন পর কাধে ভেজা অনুভব করলো।আশু যে কাদছে তা বুঝতে পারলো।তার পরেও নীল কিছু বলল না।নীল মনে মনে বলল,কাদুক না একটু।কান্না করে মনটাকে হালকা করুক। আশু কিছুক্ষন নিরবে কান্না করার পর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।নীল এতোক্ষন চুপ করে থাকলেও আশুকে ফুপিয়ে কান্না করতে দেখে তার কষ্ট হতে লাগলো।আশুকে এভাবে কান্না করতে দেখে নীলের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে লাগলো।নীল অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে চুপ করে বসে থাকলো।কিছুক্ষন পর নিজেকে আর সামলিয়ে রাখতে না পেরে নীল আশুকে জরিয়ে ধরে আশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে করুন কন্ঠে বলল….

—আশু….প্লিজ আর কান্না করো না।যা হয়েছে ভুলে যাও।জানি ভুলা সম্ভব না।কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি কি।দেখো আমার কিন্তু তোমার এই কান্না সহ‍্য হচ্ছে না।আমি তোমাকে এভাবে দেখতে পারছি না।তুমি যদি এখন কান্না না থামাও তাহলে কিন্তু আমিই এখন কান্না শুরু করব।তাও আবার যেন তেন কান্না না।একেবারে হাত পা ছড়িয়ে কান্না।তখন কিন্তু তুমি আমাকে সামলাতে পারবে না বলে দিলাম।কান্নাকাটি করে এখানে কিন্তু খাল-বিল বানিয়ে ফেলবো।

নীলের এই অদ্ভুত কথা শুনে আশু কান্না বন্ধ করে নীলের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।নীল আশুকে ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে বলল….

—বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা?করে দেখাবো?

________________________

নীল আশুকে অনেক কষ্ট করে সাভাবিক করে বাসায় নিয়ে আসে।বাসায় আসার পর আশু সোজা নুহার রুমে চলে যায়।নুহা তার বিছানা গুছাচ্ছিল।আশু নুহাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে দাড়িয়ে রইল।নুহা আশুর হাতের উপর হাত রেখে বলল….

—কোথায় গিয়েছিলি?ফিরতে এতো দেড়ি হল কেন?

আশু নুহার কথায় উওর না দিয়ে বলল…
—লাভ ইউ এন্ড মিস ইউ আপি।

নুহা মুচকি হেসে বলল…..

—লাভ ইউ টু, থ্রী, ফোর, ফাইভ আর মিস ইউ এত্তোগুলো।(দু হাত দুই দিকে ছড়িয়ে)

নুহার কথা শুনে আশু নুহাকে ছেড়ে দিয়ে হাসতে লাগলো।নুহা ও আশুর সাথে তাল মিলিয়ে হাসতে লাগলো।আশু হাসতে হাসতে নুহাকে জরিয়ে ধরে বলল….

—লাভ ইউ আপি….

নুহা এক হাতে আশুকে জরিয়ে ধরে আরেক হাতে আশুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল….
—লাভ ইউ টু।

এতোক্ষন বেলকনির দরজার সামনের থেকে সাইফ আর রুমের দরজার সামনের থেকে নীলাভ ওদের দুই বোনের কাহিনী দেখছিলো।নীল ওদের সামনে এসে সাইফকে উদ্দেশ্য করে বলল…..

—দেখ!এদের থেকে শিখ কিছু।জীবনেও তো আমাকে লাভ ইউ বলো নি।আর দেখ বউমনি আশুকে লাভ ইউ টু, থ্রী, ফোর এমনকি ফাইভ ও বলছে।(মুখ গোমরা করে)

সাইফ ওদের সামনে এসে পকেটে হাত গুজে দাড়িয়ে বলল….

—তুই কোনদিন আশুর মত সুইট করে আমাকে লাভ ইউ বলেছিস?যে আমি বলবো।বলবি কেন দিন দিন তো বাদর হচ্ছিস।

নীল নালিশের শুরে নুহাকে বলল….

—দেখো বউমনি!ভাইয়া আমাকে বাদর বলছে।তুমি কিছু বল।

কথাটা বলেই সাইফ, নুহার চোখেরে আড়ালে আশুকে একটা চিমটি কাটলো।আশু নীলের দিকে কটমট করে তাকাতেই নীল চোখের ইশারায় কিছু একটা বলতেই আশু সুর টেনে বলল….

—আপি কি বলবে,ভাইয়া যা বলেছে একদম ঠিক বলেছে।হুহ….

নীল কিছু বলার জন‍্য মুখ খোলার আগেই সাইফ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল….

—আর একটা কথা বলার চেষ্টা করবি তাহলেই মুখে টেপ লাগাবো।আমাদের সামনে ঝগড়া করো, একজন আরেকজনকে দেখতে পারো না।আর আমাদের অগোচরে যে কি কর সেই খবর কি আমরা রাখি না। এদিকে যে সারা বিকেল পার্কে একে অপরের হাত ধরে ঘুরে এলে তা কি মনে করেছো জানি না আমরা।বাকি গুলো না হয় আর নাই বললাম।

সাইফ এর এমন কথা শুনে আশু আর নীল একে অপরের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইল।ওরা যে পার্কে গিয়েছিল সাইফ কিভাবে জানতে পারলো তাই ওদের মাথায় আসছে না।

ওদের অসহায় ফেস দেখে নুহা সাইফ এর দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলল….

—শেখো ওদের থেকে।তোমার মত কি আমার ভাই নিরামিষ নাকি।তুমি তো শুধু পারো রাগ দেখাতে আর তো কিছুই পারো না।হুহ….

সাইফ হাত ভাজ করে বলল….
—আমি নিরামিষ?তাহলে তুমি কি?

নুহা তেজী গলায় বলল…..

—আমি কি মানে?তোমার মান ভাঙানোর জন‍্য আমি কি কি করেছি ভুলে গেছো?ভুলবেই তো। মন ভোলা মানুষ একটা।

সাইফঃমন ভোলা,নিরামিষ আর কি কি নাম দিবে আমার?একটা কথা কি জানো?তোমার মুখে না এসব শুনতে খারাপ লাগছে না।বরং ভালোই লাগছে।বউ যে নামেই ডাকুক না কেন সেটাতে আলাদা একটা ফিলিংস মেশানোই থাকে।

নুহা চোখ রাঙিয়ে বলল…

—ছি…কথার কি ছিড়ি।ছোট ভাই বোনদের সামনে কি সব বলছো?

সাইফঃএখন ছি বলছো কেন?একটু আগেই না তুমি বললে আমি নিরামিষ।

ওদের কথাশুনে নীলাভ আর আশু একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠলো….

—তোমাদের মান-অভিমান ভেঙেছে তাহলে।আর আপনি থেকে তুমিতে চলে গেছো।আমিন,ছুম্মা আমিন।

চলবে,

(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গল্প শেষের দিকে।সাইফ কি করে জানলো আশুনীল পার্কে গিয়েছিল?ধন‍্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here