ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_13
Ariyana Nur
চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে রয়েছে নিলয়।নিজের এমন বোকামোর জন্য নিজের উপর এখন নিজেরি রাগ হচ্ছে।কেন যে তখন আগ বাড়িয়ে স্যার কে বলতে গিয়েছিল আশুকে দেখেছি।আর কেনই বা ঐ বিচ্ছু মেয়ের ফাদে পা দিয়েছিল।
আশু যে তাকে এভাবে বোকা বানিয়ে চলে যাবে তা সে ভাবতেও পারেনি।নিলয় মনে মনে ঠিক করতে লাগলো,তার ঐ সাইকো স্যার আসার পর আশুর কথা জিগ্যেস করলে কি বলবে।কিন্তু বরাবরই সব গোলমাল পাকিয়ে জগা খিচুরি করে ফেলছে।
ফ্লাসব্যাকঃ
আশু ওয়েটারকে ডাক দিয়ে হচ্ছে মত খাবারের অর্ডার দিল।ওয়েটার খাবার দিয়ে যেতেই আশু আর রুনা সব খাবারের থেকে একটু একটু করে খেয়ে খাবারগুলোর দোষ বলতে লাগলো।কোনটা ইয়াম্মি হয় নাই,কোনটা স্পাইসি,কোনটায় লবন হয় নাই,কোনটায় লবন বেশি ইত্যাদি। নিয়ল ওদের মুখে সব খাবারের দোষ শুনে নিজে সব গুলোর থেকে একটু একটু খেয়ে বলল….
—কই সব খাবার তো ঠিক আছে।আমার কাছে তো কোনটাও খারাপ লাগছে না।
আশু খুশি হয়ে বলল….
—সত্যি আপনার ভালো লেগেছে।তাহলে আপনিই সব ফিনিস করুন।
নিলয় চোখ বড় বড় করে বলল….
—কিহহহ….
আমি এতোগুলো খাবার শেষ করবো?
আশুঃসমস্যা কোথায়।আপনার খাবার যেহেতু ভালো লেগেছে তাহলে খেতে তো আপনার কোন সমস্যা নেই।
নিলয়ঃএতো খাবার একসাথে আমি জীবনেও খাই নি।
আশুঃতো কি হয়েছে।আজ খাবেন।যদি আপনি এই সব খাবার ১৫মিনিটের মধ্যে শেষ করতে পারেন তাহলে আপনি আপুকে যেখানে খুশি সেখানে বেড়াতে নিয়ে যেতে পারবেন।
নিলয়ঃঅসম্ভব।এতো খাবার এক সাথে খাবো তাও আবার ১৫মিনিটে। আমি পারবো না।
রুনা কাদো কাদো মুখ করে বলল….
—আপনি আমার জন্য একটুকু করতে পারবেন না।মজনু তো শিরিনের লিগা কত কিছু করছে।তাজমহল পযর্ন্ত বানাইছে আর আপনি সমান্য একটু খাবার খাইতে পারবেন না।
আশু মনে মনে বলল….
—আল্লাহ্ এই মহিলাতো আমাকে ঢুবাবে।কি শিখিয়ে এনেছি আর কি বলছে।এর মুখ বন্ধ করতে হবে।তা না হলে সব প্লান ভেস্তে যাবে।
নিলয়ঃআমি তো শুনছি মজনু লাইলির জন্য পাগল ছিলো।এই শিরিনটা আবার কে?আর আমার জানা মতে তাজমহল তো শাহ্জাহান বানিয়েছে।
আশুঃআরে জিজু আপু বেশি ইমোশনাল হয়ে গেছে তো তাই এমন বলেছে।কে কি করেছে সেটা দেখুন না।নামে কি আসে যায়।আর সবাইতো তাদের প্রেয়সীর মুখের হাসির জন্যই সব করেছে।ভালোবেসে করেছে তাই না।হে…হে….
আশু মনে মনে বলল….
—আশুরে কি থেকে কি বলছিস।এই গাধাটায় ধরতে না পারলেই হয়।
রুনা নিলয় এর দিকে করুন চোখে তাকিয়ে কাদো কাদো হয়ে বলল….
—আপনি আমার জন্য এতোটুকু করতে পারবেন না?
নিলয় ফট করেই বলে দিল….
—পারবোনা কেন।তোমার মুখের হাসির জন্য আমি সব করতে পারবো।
রুনা খুশি হয়ে বলল….
—আমার কিউটু….
২০মিনিটে বহু কষ্ট করেও নিলয় সব শেষ করতে পারে নি।পারবে কি ভাবে এতো এতো খাবার কি এক সাথে খাওয়া যায় নাকি।তার পরেও গপাগপ করে যা খেয়েছে অনেক।পেট পুরো হাউজ ফুল হয়ে গেছে।নিলয় আর খেতে না পেরে রুনার দিকে তাকিয়ে অসহায় ভাবে বলল….
—আমার পেট পুরো ভরে গেছে।আমি আর খেতে পারছিনা।
রুনা মিছে মিছে রাগ করে গাল ফুলিয়ে বসে রইল।কিছুক্ষন গাল ফুলিয়ে বসে থাকার পর যখন দেখলো নিলয় ওর মান না ভাঙিয়ে চেয়ারে আয়েশ করে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।রুনা আশুর দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিগ্যেস করল কি করবে।আশুও ইশারায় কিছু শিখিয়ে দিল।
নিলয় কারো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার অওয়াজ পেয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো রুনা কান্না করছে।
নিলয়ঃকি হয়েছে আপনার?আপনি কান্না করছেন কেন?
আশু নিলয় এর দিকে একটু ঝুকে ফিসফিস করে বলল….
—আপু খুব কষ্ট পেয়েছে।রাগ-অভিমান হয়েছে আপনার উপর।এখন এই অভিমান শুধু আপনিই ভাঙাতে পারবেন।
নিলয় সন্দহর চোখে তাকিয়ে বলল….
—কিভাবে?
আশুঃআপু না মুভি বেশি দেখে।মুভির হিরোদের মত যদি আপনি গান গেয়ে নেচে আপুর মান ভাঙাতে চান তাহলেই খুব সহজে তার মান ভাঙাতে পারবেন।
নিলয় মনে মনে ফন্দি একে বলল….
—ঠিক আছে।তার আগে আমি একটু ওয়াসরুম থেকে আসছি তোমরা বস।
নিলয় চলে যাওয়ার আগেই আশু ওয়েটার ডেকে নিলয়ের থেকে বিলটা আদায় করে নিল।সাথে একটা কেকের ওর্ডার ও করলো।
নিলয় ওয়াসরুমের নাম করে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাবার ফন্দি একে সেখান থেকে কেটে পরলো।নিলয় যেতে যেতে বিরবির করে বলতে লাগলো….
—তুই একটা গাধা আসলেই গাধা।তা না হলে এই মেয়ে যে বিচ্ছু তা জানা শর্তেও কেউ এই মেয়ের ফাদে পা দেয়।আমার কতগুলো টাকা গোল্লায় গেলো।কেন যে ঐ মেয়ের পাতা ফাদে পা দিলাম।
নিলয় বিরবির করে সেখান থেকে বের হওয়ার আগেই তার স্যার ফোন করলো।নিলয় ফোন রিসিভ করে কিছু বলার আগেই অপর পাশ থেকে ওর স্যার বলল….
—১৫মিনিট যেভাবেই হোক মেয়েটাকে আটকে রাখো।আমি আসছি।
কথাটা বলেই সে লাইন কেটে দিল।নিলয় কাদো কাদো হয়ে বলল….
—আল্লাহ্ আমি কই জামু।একদিকে সিংহ আরেক দিকে বান্দর।সিংহের খপ্পর থেকে বাচতে হইলে বান্দরের হাতে পইরা নাচতে হইবো।
নিলয় কিছুক্ষন ভেবে গেডের দিকে আর পা না বাড়িয়ে বলি কা বকরা হতে আশুদের কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
আশুর কথা মত নিলয় নেচে গেয়ে রুনার মান ভাঙানোর চেষ্টা করল।নিলয়ের আর কি করার ছিল।তাদের আটকে রাখতে হলে তো তাদের কথামতই কাজ করতে হবে।নিলয় এর হাত পা ছোড়াছুড়ি বেশুরার মত গান শুনে রুনা বেশিক্ষন নিজের হাসি আটকিয়ে রাখতে পারেনি।রুনাকে হাসতে দেখে নিলয় নিজের হাত,পা নড়ানো বন্ধ করে রুনার সামনে এসে বসার সাথে সাথেই রুনা নিলয় এর পুরো মুখে কেক লাগিয়ে দিল।নিলয় চোখ বন্ধ করে কয়েকবার ওদের কাছে মুখ পরিষ্কার করার জন্য টিসু চেয়ে যখন পেল না তখন কোন মত চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে সামনের থেকে টিসু নিয়ে মুখ মুছে পাশে তাকাতেই দেখে আশু,রুনা নেই।
আশেপাশে তাকিয়েও যখন ওদের দেখতে পেলো না তখন হাল ছেড়ে দিয়ে চুপ করে বসে রইল।
আশু রুনা নিলয়ের চোখ ফাকি দিয়ে কেটে পরে তাড়াতাড়ি করে একটা সি এন জি নিয়ে তাতে উঠে পরল।সি এন জি তে উঠে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।ওদের এভাবে পাগলের মত হাসতে দেখে সি এন জি চালক ও বোকার মত ওদের দিকে তাকিয়ে রইল।
_____________________________
মিঃখান এক মনে অফিসের কাজ করছে।এমন সময় পিয়ন এসে তাকে একটা চিঠি দিয়ে গেলো।চিঠিটা দেখে তিনি কিছুটা অবাক হলেন।তার পরে আবার কাজে মন দিলেন।
মিঃখান হাতের কাজটা শেষ করে চিঠিটা খাম থেকে বের করে খুলতেই তার চেহারার রং পাল্টে গেলো।লেখাগুলোর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।এতো বছর পর প্রিয় মানুষটার লেখা দেখে তার একটুও চিনতে ভুল হল না।মিঃখান কাপা হাতে চিঠিটা ধরে পড়তে লাগলো….
প্রিয় বলে সম্মোধন করার অধিকার হাড়িয়ে ফেলেছি তাই এভাবেই লিখা শুরু করলাম।তোমাদের সাথে আমি যা করেছি তার জন্য তোমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার অধিকার আমার নেই।এতোদিন মনের মধ্যে যে জেদ,রাগ,অভিমান ছিলো তা মন থেকে উধাও হয়ে গেছে।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।লোকে বলে না,অমূল্য রত্ন যখন নিজের কাছে থাকে তখন তার কদর থাকে না।হাড়িয়ে যাবার পর বুঝতে পারে সে যে কত মূল্যবান ছিল।যাই হোক,তোমার সামনে তো আসতে পারলাম না।এমনকি মেয়েদের সামনে যাবার সাহস ও আমার নেই।আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইবো না।আমি চাই তুমি আমাকে ঘৃনা কর সারাজীবন।তোমার ঘৃনার মধ্যেও যদি থাকতে পারি তাতেই আমার চলবে।আমি চলে যাচ্ছি।কোথায় যাচ্ছি জানি না।আর একটা কথা! তোমাকে যে চিঠিটা দিয়েছি তা মেয়েদেরকে বলবে না।ওদের অভিমানেই আমি বেচে থাকতে চাই।ভালো থেকো।
ইতি
আসফিয়া
চিঠিটা পড়া শেষ করে মিঃখান মূর্তির মত বসে রইল।না চাইতেই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরলো দু’ফটো নোনা জল।
____________________________
আশু আর রুনা হাসাহাসি করতে করতে বাড়িতে ঢুকল।সামনে তাকাতেই আশু আর রুনার চেহারার রং পাল্টে গেলো।কাদো কাদো মুখ করে একে অপরের দিকে তাকালো।কেননা সামনে নীল দাড়িয়ে আছে।আর পাশেই মিসেস চৌধুরী অসহায় ফেস করে ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।তিনি মনে মনে বলছেন, আজ আমি কিছুই করতে পারবো না।
—কোথায় গিয়েছিলে?
নীলের মুখে এমন গম্ভীর কথা শুনে আশু কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।
আশুকে চুপ থাকতে দেখে নীল পাশের সোফায় লাথি মেরে চেচিয়ে বলল…..
—এন্সার মি…..
নীলের এমন রুপ দেখে আশু কাপতে লাগলো।যে সারাদিন হাসি-মজাতে দিন পার করে সে যে এমন রাগ করতে পারে তা আশু কল্পনাতেও ভাবেনি।
চলবে,
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)